জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
ড. প্রবাল কান্তি হাজরা
==============√√√√√√√√===========
Doinik sabder methopath
Vol -163. Dt -17.10.2020
৩০ আশ্বিন,১৪২৭.শনিবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷✓✓✓✓✓÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷ বিশিষ্ট শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্র গবেষক-
অতি সাধারণ ড. প্রবালকান্তি হাজরা.
"ভোগবাদের ছোবলে গত সাত আট দশকে গ্রামজীবনের, সমাজ জীবনের বহু কিছু হারিয়ে গেছে। আমাদের বাল্য- কৈশোর- যৌবন এর নানা ঘটনা এখন স্বপ্নের মতো মনে হয়।"
১৯৪৫ সালে ১৭ ই অক্টোবর পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত খেজুরি থানার দেউলপোতা গ্রামে এক গ্রামীণ কৃষক পরিবারে
প্রবালবাবুর জন্ম। পিতা -প্রফুল্ল কুমার হাজরা এবং মাতা কমলাদেবী.
পরিবারের বড়ছেলে প্রবাল বাবু। এছাড়া দুই ভাই শৈবাল ও মৃণাল। তিন বোন ছবি সুষমা ও পূর্ণিমা। অভাব-অনটন এর মধ্য দিয়ে বড় হতে থাকেন,গ্রামীণ পরিবেশে প্রকৃতির সঙ্গে।
বাল্যকালে র পড়াশোনা দেউলপোতা প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরপর কামারদা জুনিয়র হাই স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে অজয় অন্নদা বিদ্যামন্দির এ ভর্তি হন। সেখান থেকে মেদিনীপুর কলেজ। ওরে মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর মহাবিদ্যালয় পড়াশোনা। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগে এম. এ পাস করেন। পালপাড়া যোগদানন্দ সৎসঙ্গ মহাবিদ্যালয় থেকে বি এড ডিগ্রী অর্জন করেন. ১৯৮১ সালে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে ড.সুখেন্দু শেখর গাঙ্গুলি'র তত্ত্বাবধানে গবেষণা করেন। গবেষণার বিষয় - "রবীন্দ্রনাথের সমাজ ভাবনা".১৯৮২ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। বৈবাহিক সূত্রে সম্পর্ক নীলিমা দেবীর সঙ্গে। আজীবন সঙ্গে থেকে এখনো নিরলস সংসার প্রতিপালন করছেন। তিন কন্যা রিঙ্কু, পুপু ও কাঁকন । বৈবাহিক সূত্রে রিঙ্কু কৃষ্ণনগরের একদা জমিদার মান্না পরিবারের পুত্রবধূ, স্বামী সঞ্জীব কুমার মান্না দুই কন্যা শ্রেয়াও স্নেহা। পুপু বৈবাহিক সূত্রে কলাগাছিয়ার বিখ্যাত ব্যবসায়ী উত্তম ভূঁইয়া পত্নী। এখন হলুদবাড়ী হাই স্কুলের বাংলা বিষয়ের সহ শিক্ষিকা। আর ছোট কন্যা কাকন বৈবাহিক সূত্রে দাঁতনের
শুভ্রকান্তি পট্টনায়কের পত্নী। ছোটজামাই অর্জুনি হাইস্কুলের শিক্ষক ।একমাত্র ছেলে ঋজু। এমনই পারিবারিক ঘরানার মধ্যে সাদামাটা জীবন যাপন করে চলেছেন ৭৬ বছরের মানবিক মানুষটি। সদা হাসিমুখে, মিষ্টভাষী। নিপাট ভদ্রলোক। যাকে দেখে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যায়।
রচনা কর্ম -
১) গ্রামীণ সংস্কৃতির ঝাঁপি
২) গ্রামীণ ঐতিহ্যের ঝলক
৩) খেজুরির কথা
৪) গুণীজন সান্নিধ্যে
৫) কথার পাঁচ কাহন
৬) রবীন্দ্র ভাবনায় কৃষি বাণিজ্য ও শিল্প
৭) গ্রামীণ জীবন রাগের ঝিলিক
৮) চরিত কথামালা
৯) রবীন্দ্রনাথের গ্রামোন্নয়ন ভাবনার আলোকে আজকের গ্রামোন্নয়ন
১০) বিতত মনন
১১) রবীন্দ্র অনুধ্যান
১২) সংস্কৃতি চারণা
১৩) বিবেকানন্দ অনুধ্যান
১৪) রবীন্দ্র ভাবনার নানা দিক
১৫) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৬) পদ্মাবটের কবি রবীন্দ্রনাথ
১৭) মননে শিক্ষা ও সংস্কৃতি
১৮) আত্মার সুঘ্রাণ
১৯) গ্রামীণ সংস্কৃতির ঝুলি
২০) নানা অনুভবে রবীন্দ্রনাথ
২১) সমকালীন ভাবনা
২২) বিদ্যাসাগর অনুধ্যান ( যন্ত্রস্থ)
এছাড়া নিয়মিত জেলা সহ কলকাতাকেন্দ্রিক বহু পত্রপত্রিকায় প্রবন্ধ লিখে চলেছেন। সম্পাদনা করছেন মাসিক "খেজুরি দর্পণ" পত্রিকা - ৪র্থ বর্ষ । এছাড়াও খেজুরী থেকে প্রকাশিত খেজুরী, দক্ষনাবিক,চর্যা প্রভৃতি পত্রিকায় সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন।খেজুরির সাহিত্য-সংস্কৃতি ইতিহাস গবেষণা লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি লোকভাষা প্রবাদ প্রবচন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুণীজনের প্রকাশিত বই সহ নানান খবরা খবর নিয়ে এটি খেজুরির দলিল হয়ে আছে। খেজুরের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন।
জীবনের কৃতকর্মের জন্য বহুবিধ সম্মাননা ও স্বীকৃতি পেয়েছেন প্রায় ৩৫ টি। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য - টেলিগ্রাফ পত্রিকা কর্তৃক "জীবনকৃতি" সম্মাননা, কলকাতা সাইন্সসিটি হলে।এছাড়া পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ থেকে রবীন্দ্রনাথের উপর গবেষণার জন্য শ্রেষ্ঠ সম্মান পেয়েছেন। রবীন্দ্র অনুরাগী মানুষদের কাছে প্রিয় নাম প্রবাল বাবু। এমন মানুষ কে সকলেই চেনেন জানেন।
যার ৭০ তম জন্মদিনে মহিষাদল 'লোককৃতি'পত্রিকা বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। আনন্দবাজার পত্রিকা বিশেষ ক্রোড়পত্র তাঁর জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোকপাত করেছে।
কর্মজীবনে তিনি দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন মনসাদ্বীপ রামকৃষ্ণ মিশন হাইস্কুলে সহ- শিক্ষকের পদে. ওই সময় ওখানে বহুগুণী মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে । "ওগো সত্য সুন্দর মঙ্গলম্ ' পত্রিকা ৩৬ বছর ধরে প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত থেকে নিজেকে মেলে ধরেন। এছাড়া ও "কুসুমিকা " নামে ফুল সংক্রান্ত পত্রিকাও প্রকাশ করেছেন ৭ বছর।
পরে তিনি খেজুরি থানার অন্তর্গত কৃষ্ণনগর মনীন্দ্রনাথ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই পদে থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
ছোটবেলা থেকে প্রকৃতিপ্রেমিক নিরলস মনটি আজীবন প্রকৃতির কোলে আশ্রয় খুঁজে নেন। বাড়িতে এখনো সুন্দর বাগান চর্চার মধ্য দিয়ে নিজেকে ব্যাপ্ত রাখেন। রকমারি ফল-ফুল সহ নানান প্রজাতির ও রেয়ার কালেকশন আমরা খুঁজে পাই, তাঁর বাগানে। সুন্দর একটি দোলনা আছে বাগানের মধ্যস্থলে। দোলনায় দোল খেতে খেতে খুঁজে পাই সেই মানুষটির মন ও মেজ আজকে। বাগান থেকে আমাকেও কয়েকটি গাছ উপহার দিয়েছেন সময় অন্তরে।
খেজুরির বিভিন্ন সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অতোপ্রোত ভাবে যুক্ত হয়ে খেজুরির সামগ্রিক উন্নয়ন কে পাখির চোখ করে এগিয়ে চলেছেন। খেজুরি ইতিহাস সংরক্ষণ সমিতি, খেজুরি হেরিটেজ সুরক্ষা সমিতি, খেজুরি সাহিত্য সম্মেলনী, খেজুরি বইমেলা তাদের মধ্যে অন্যতম। এছাড়া দুটি বড় স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান - অজয় সর্বোদয় সংঘ এবং নেতাজি পাঠচক্র - যুক্ত থেকে নানান সামাজিক কাজকর্ম ও মানব সেবা করে চলেছেন। নিপাট ভদ্র মানুষ , সকলের হিত কামনায় সদা ব্যস্ত থাকেন। তরুণ-তরুণীদের উৎসাহ প্রদান ও ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ সৃষ্টি করে প্রকৃত সংস্কৃতি ও সাহিত্যের অভিমুখ রচনায় জীবনের একমাত্র ব্রত বলে মনে করেন
৭৬ তম জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানাতে পেরে আমরা সত্যিই গর্বিত আনন্দিত. উনার সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন কামনা করি.
গুণমুগ্ধ প্রিয় ছাত্র ও ছাত্রী
বিভাস জানা ও বিনীতা জানা।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment