Monday, 19 April 2021

           এ সময়ের কবিতা যাপন
                         পর্ব -০২.


              মেদিনীপুরের কাব্য ভাবনা

=================================
শ্রাবণী বসু

১.
নববর্ষের গান



বৈশাখী ভোরে তুমি এসেছো - নতুন বছর।
মানুষ মহামারীর মারে - ক্লান্ত।
 নতুন প্রভাতে রক্তিম আশা নিয়ে এসো।
 দীর্ঘশ্বাস মুছে দিতে এসো।

স্মৃতির জাবর কেটে কেটে ক্লান্ত মগজ,
সত্তার কৌলিন্য খোয়াতে চাইনা।
দরজা ঠেলে এসেছো যখন
প্রাণের উত্তাপ জ্বেলে দাও ঘরে।
চৌকাঠে রাখো মঙ্গলঘট।

হে ১৪২৮ , সংখ্যার বল্কল খোলো
আটপৌরে পোশাক পরো
শুষ্ক প্রাণগুলি পাথর হয়ে আছে।
নববর্ষের গান গাও শুনি।

২.

মিলন অপেক্ষা

এবার বর্ষার জলধারে- 
ম্যালে বসে ভিজিনি সপাটে
যাইনি মেঘরাজ্য দার্জিলিং।

সেবার পুজোতে লিখিনি রম্য রচনা
তোমার আমার যৌবন সংহতি মেখে।
তবু বর্ষা এসেছে । বিপদসীমা ছুঁয়েছে
 অজয় আর কংসাবতী।

কালের গর্ভ থেকে প্রেমের ধাত্রী
 নতুন নতুন জন্ম তুলে আনে।
এক জন্মে আমি হংসমিথুন
অন্য জন্মে নরম নালিঘাস।

সব জন্মেই আমি হৃদয় করি কাৎ
যদি তোমাতে আমাতে আবার
দেখা হয়ে যায় দৈবাৎ।

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

বনশ্রী রায় দাস 
                
১.
          
 হিসেব মেলাতে 
                  
         
সমুদ্র ঢেউ খেলে যায় হেমন্তের মেঠো চাঁদে
শ্বেতহংস পালকে উড়ে উড়ে 
বেড়ায় আদুরে মেঘের খণ্ড ।
পড়ন্ত দিনের ডালে বসে পা দোলায় যুবতীওড়না আসমানি শরীরে চায় ফেরাতে কিশোরী কিশোরী গড়ন ।

এই মাঠ ফসলের ভারে কেঁপে কেঁপে
ওঠে বহু দিন পর 
বেজে ওঠে পাপড়ি ,রেণুসোহাগে ঝরে পড়ে 
রাবিন্দ্রীক ছন্দ ,যন্ত্র আর যন্ত্রীর 
এই মনোভূমি, সর্বক্ষণ আবাদের অনুরণন ।

বাকি সবটাই খরচের খাতায় 
ভালো, না ভালো , অনুরাগ বিরাগ, খুঁজে ফেরা 
কিছু খোলা জানালার ইতিহাস কিংবা প্রেম
কাহিনি
খাঁচায় পুরে রাখা কষ্ট যাপন ,অস্থিরতা
উড়িয়ে ছড়িয়ে দিই 
হুক খোলা জ্যোৎস্নার আধুনিকতায়।

           
২.

  নীড়চক্র
              

ঘাসের ঝুঁটি ছুঁয়ে যায় কাঁচপোকা
ডানা সাঁতরে সুদূরে মিলায় আদুরে পাখি ,
পৌষের শস্য ক্ষেতে আত্মমগ্ন সৌন্দর্য 
হাওয়া করতালির ভিতর শুয়ে আছে 
দুপুরের রোদ রঙা কবি ।
জল আগুনের সঙ্গমে পালক ধোয়া উৎসব 
যার কথায় আকাশ রং বদলায় বারংবার ।

ঋতুপাতায় লেপটে থাকা বালির গায়ে 
ভিনদেশি ভাষার ঘাম জমলে 
আমার চোখের পৃথিবী খুঁটে নেয় গাঙচিল
ঘোলা জলের যন্ত্রণা বয়ে যায় গঙ্গা পদ্মায় ।

শিরোনামহীন জাহাজ ফিরে এসেছে বন্দরে 
তার জন্য রাখতে নেই নির্দিষ্ট উঠোন ।
কষ্ট দিনের শস্যের গুঞ্জন ভাগ করে নেয় 
ভরত কাকা নির্মলা কাকি ,
গোগ্রাসে জল শুষে নেয় বিলের নাবাল ।

তোমার ছেঁড়া অশ্বত্থ পাতায় চাঁদ বসলে
অনন্ত সুরে আত্মার রিনিঝিনি শুনতে পাই 
কন্ঠে বয়ে যায় বৈদিক স্রোত ।
মেছো কুমিরের নামাবলি রং বদলায় 
কিন্তু স্বভাবের অভ্যাস টের পায় গণতন্ত্র ।
মাছের কানকোর তলা দিয়ে বয়ে যাওয়া 
হিমেল বাতাস নিরাময় বলে নক্ষত্রের কানে
কানে 
ভালোবাসার হৃদিখাম তখন মেঘপকেটে 
ঠিক পৌঁছে যাবে তোমার নীড়চক্রের মনবক্সে।

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆


খুকু ভূঞ্যা

১.
একটি অসম্পূর্ণ অভিমান 


সারা দুপুর হাতটা আগুনের ঠোঁটে যোগিয়ে গেল খড়
উনোনের মাথায় প্রবল জ্বর, ভাত ফোটার গন্ধ নিয়ে
সার্থক করতে চায় মাটিজীবন 
উত্তাপের দায়ভার বহন করতে করতে গেরস্ত নারীর মতো পূর্ণতা পেতে চায়

রোজ আগুন জ্বালে হাত
কখনো দীপের মুখ সাজিয়ে দেয় কখনো উনোন
ভেতরে কেন আগুন জ্বলেনি
হাজার বছরের ঘুম পাঁজরে শিরায়--
কেন একটিবার তার বুকে মাথা রেখে বলতে পারল না
হে আগুন শুদ্ধ করো,ধন্য করো

হাতটা হেরেই গেল,তালুভর্তি ফোস্কা,বিষম প্রদাহ--


২.
ভেসে যায় উইঢিবি


রাঁধতে গিয়ে আগুনের ভোজ দেখলাম
ঠিক যেন ঠা ঠা মাঠের ক্ষুধার্ত কৃষক
পেট ভরে খেয়ে নেয় আলুমাখা ডাল

আগুনের ঘরবাড়ি ছেড়ে কোথা আর যাই বলো
কোনোদিন নদী ছিল না আমার
রাতের ধ্রুবতারার দিকে তাকিয়ে চোখ ভিজে
ভেসে যায় উইঢিবি

সে আর কতটুকু জানে
কেন যে পাখি রাধে কৃষ্ণ গায় কেনই বা
 ঝড় কোণের দিকে তাকিয়ে আড়াল করে আঁচল
কেন একটি আলের গায়ে পড়ে থাকে জীবনের সব ক্রন্দন,অভিমান অভিযোগ
সেই জানে,যে কোঁচড়ে আগুন নিয়ে অক্ষরবীজ বোনে অনাবাদি মাঠে, দারুণ একা--

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆


  মোনালিসা পাহাড়ী    

১.
আমার মা ঈশ্বর নন


প্রতিটি দেবী আরাধনায় যাঁর পা ছুঁয়ে
দেবীর মুখ দেখি তিনি হলেন আমার মা।

আমাদের ছেঁড়াখোঁড়া সংসারের দূর্গা
একশো হাত দিয়ে সামলান যাপন যুদ্ধ
আগলে রাখেন প্রতিটি প্রাণ 
জাগতিক কুশক্তির কালো হাত থেকে

অভুক্তের যিনি অন্নপূর্ণা
বিনাশের সম্মুখে তিনি রক্ষাকালী
আবার অসময়ে তিনিই উগ্রচণ্ডা

একদিকে আকাশ,মাথার ওপর ছাতা
অন‍্যদিকে মাটি,চিরন্তন সহনশীল
হৃদয়ে বটবৃক্ষ, মনে শস‍্যক্ষেত্র 
বুকপাঁজরে তিতিক্ষা, রক্তে মায়া
দুচোখে দয়ার সাগ‍র বিছিয়ে রাখা আমার মা
শুধুমাত্র মা নন
একটা পৃথিবী কিংবা আরো বেশি কিছু

আমার মা ঈশ্বর নন
অজস্র ঈশ্বরের সম্মিলিত আধার
যাঁকে শ্রদ্ধা বা ভালোবাসতে গেলে
আগে অনুভব করতে হয়
অন্তর শহরে, মনের নিভৃত নির্জনে।

২.
পথিক 

পায়ের পাতায় পথ আঁকড়ায় যে মানুষ
তার কাছে পৃথিবীটা খোলা আকাশ কিংবা দিলদরিয়ার হাট।

যে পা চলতে জানে
পিছুটান নিংড়ে
ধুলোমাটির পৃথিবীতে সে খুঁজে নেয় স্বর্গ-
অথবা বেঁচে থাকা অম্লান।

পথ হারানো পথিক যেন মৃতপ্রায় গাছ

অথচ পথ হারাতে চাওয়া পথিক সঞ্জিবনী সুধার মতো
অসাধ‍্য দুর্গমতায় তার ব‍্যপ্তি
সময়ের সোনা তার হাতের মুঠোয়...


∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

মৌমিতা জানা মণ্ডল

১.
 ফেরিওয়ালা


নক্ষত্র ফেরি করতে করতে
       রাত শেষ হয়ে এলে
যৌনগ্রন্থির মতো প্রলম্বিত হয় ভোর....

নড়ে ওঠা অনিবার্য জেনেও, একসময় নাড়াতে চাইলে দম নিয়ে এগিয়ে আসে সময়....
মানচিত্রের প্রতিটা জায়গা রাত্রি নামলে মিশে যায় গায়ে গা লাগিয়ে...যেমন ফেরিওয়ালা মিশে যায় দুপুরের রোদের সাথে....

ক্রমে ছেড়ে যায় রাত, জেগে ওঠে ভোর....কখন যে নক্ষত্র ফেরি করতে করতে ফেরিওয়ালার চোখ বেয়ে নেমে আসে নক্ষত্রদল....

২.

শিল্পী


ঊরুর ভাঁজে আটকে শিল্পীর চোখ
নিমিষে মধ্যবয়সী মেঘদল উড়ে এলে, ছায়া জমা হয় উঠোনে
খোলা ঊরু চমকে চমকে উঠছে মেঘেদের শব্দে...

তোমার ঊরুতে বৃষ্টির মতো ঘাম ফুটে উঠলে, হরিণের চোখ নিয়ে জেগে ওঠে আলোকবর্ষ

তুলি দিয়ে রঙে রঙ গাঁথছে শিল্পী, গোপনীয়তা জেগে উঠছে ক্যানভাসে...
দুখানি স্পষ্ট পা নিবিড় হচ্ছে আরোও, শিল্পীও মিশে যাচ্ছে গোপনে...

=================================
দৈনিক শব্দের মেঠোপথ
Doinik Sabder Methopath
Vol - 346. Dt -18.04.2021
৪ বৈশাখ,১৪২৮. রবিবার
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆





No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। পশুপতি ভট্টাচার্য । খ্যাতনামা চিকিৎসক ও সাহিত্যিক। Dt -15.11.2024. Vol -1053. Friday. The blogger post in literary e magazine

পশুপতি ভট্টাচার্য  ১৫ নভেম্বর ১৮৯১ -  ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৮   একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক ও সাহিত্যিক। জন্ম  বিহার রাজ্যে পিতার কর্মস্থল আরায়। তাদ...