"ও কেন এত সুন্দরী হলো
তুমি অনেক যত্ন করে
সবাই তো সুখী হতে চায়
ক ফোটা চোখের জল ফেলেছ
খুব জানতে ইচ্ছে করে
যদি কাগজে লিখ নাম
দ্বীপ ছিল শিখা ছিল
কতদিন দেখিনি তোমায়
'কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই', 'এই কুলে আমি,
'সেই তো আবার কাছে এলে,
'ললিতা, ওকে আজ চলে যেতে বল না',
'আমার ভালবাসার রাজপ্রাসাদে',
'যখন কেউ আমাকে পাগল বলে',
আমি যামিনী তুমি শশী হে',
কাহারবা নয় দাদরা বাজাও',
শাওন রাতে যদি',
আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না',
আমার ভালবাসার রাজপ্রাসাদে'
'আমি যে জলসাঘরে'
আবার হবে তো দেখা .............."
কালজয়ী বাংলা গানের ডালি ভারতবাসীর মনে প্রাণে যে সাড়া আজও জাগায় তিনি সকলে প্রিয় সংগীতশিল্পী মান্না দে।
প্রায় সাত দশকের সঙ্গীতজীবনে মান্না দে বাংলা ছাড়াও বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার গান গেয়েছেন। এর মধ্যে যেমন রয়েছে অসংখ্য সিনেমার গান, তেমনই রয়েছে ধ্রুপদী সঙ্গীত, আধুনিক গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত আর নজরুলগীতি।
বাবা পূর্ণচন্দ্র দে আর মা মহামায়া দের সন্তান মান্না দের জন্ম ১৯১৯ সালের পয়লা মে। তাঁর আসল নাম প্রবোধ চন্দ্র দে। পড়াশোনা কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ আর বিদ্যাসাগর কলেজে।
দুই মেয়ে সুরমা আর সুমিতাকে রেখে গেলেন মান্না দে। স্ত্রী সুলোচনা কুমারণ গতবছর মারা গেছেন।
মান্না দে'র গান শেখা শুরু তার কাকা - ১৯২০ ও ৩০-এর দশকের বিখ্যাত গায়ক কৃষ্ণচন্দ্র দে'র কাছে। কৃষ্ণচন্দ্র দে ছিলেন অন্ধ এবং ভ্রাতুষ্পুত্র মান্না দে ছিলেন একাধারে তার শিষ্য ও সহকারী।
‘তামান্না’ (১৯৪৩) চলচ্চিত্রে গায়ক হিসেবে মান্না দে‘র অভিষেক ঘটে। সুরাইয়া’র সাথে দ্বৈত সঙ্গীতে গান এবং সুরকার ছিলেন কৃষ্ণ চন্দ্র দে। ঐ সময়ে গানটি ভীষণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। 'মশাল' (১৯৫০) ছবিতে শচীন দেব বর্মণের গীত রচনায় ‘ওপার গগন বিশাল’ নামে একক গান গেয়েছিলেন। এর গানের কথা লিখেছিলেন কবি প্রদীপ। ১৯৫২ সালে মান্না দে বাংলা এবং মারাঠী ছবিতে একই নামে এবং গল্পে ‘আমার ভূপালী’ গান গান। এরফলেই তিনি প্রতিষ্ঠিত ও পাকাপোক্ত করেন এবং জনপ্রিয় গায়ক হিসেবে সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছ থেকে স্বীকৃতি পান।
মান্না দে ভীমসেন জোসি’র সাথে একটি জনপ্রিয় দ্বৈত গান ‘কেতকী গুলাব জুহি’ গান। এছাড়াও, তিনি কিশোর কুমারের সাথে আলাদা গোত্রের দ্বৈত গান হিসেবে ‘ইয়ে দোস্তী হাম নেহী তোড়েঙ্গে (শোলে)’ এবং ‘এক চতুর নার (পডোসন)’ গান। এছাড়াও, মান্না দে শিল্পী ও গীতিকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (হেমন্ত কুমার)সহ আরো বেশকিছু গীতিকারের সাথে বাংলা ছবিতে গান গেয়েছিলেন। দ্বৈত সঙ্গীতে লতা মঙ্গেশকরের সাথে ‘কে প্রথম কাছে এসেছি (শঙ্খবেলা)’ গান করেছেন। রবীন্দ্র সঙ্গীতসহ প্রায় ৩৫০০ গান গেয়েছেন মান্না দে। তিনি অসংখ্য শ্যামাসংগীত গান করেছেন
কেরলর মেয়ে সুলোচনা কুমারনকে ১৮ ডিসেম্বর ১৯৫৩ সালে বিয়ে করেন। তাদের দুই কন্যা রয়েছে: সুরমা (জন্মঃ ১৯ অক্টোবর ১৯৫৬ সালে) এবং সুমিতা (জন্মঃ ২০ জুন ১৯৫৮ সালে)। মান্না দে পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় মুম্বাইয়ে কাটানোর পর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বেঙ্গালুরুর কালিয়ানগর শহরে বাস করেছেন। এছাড়াও, তিনি কলকাতায়ও বাস করেছেন। মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বেও তিনি বিভিন্ন সঙ্গীতবিষয়ক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেছিলেন।
উস্তাদ দবির খানের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নিয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে, যখন সিনেমায় প্লেব্যাক গাইছেন, তখনও উস্তাদ আমান আলি খান ও উস্তাদ রহমান খানের কাছে গান শিখেছেন।
কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে-র সঙ্গে গান গাওয়ার জন্য মান্না দে মুম্বইতে পাড়ি দেন ১৯৪২ সালে। কিছুকাল পরই সিনেসায় প্লেব্যাকের সুযোগ পান। 'তামান্না' ছবিতে সুরাইয়ার সাথে দ্বৈতকণ্ঠে 'জাগো এয় ঊষা' গানটি প্লেব্যাকে তার প্রথম গান। তবে হিন্দি সিনেমায় তার প্রথম একক হিট গান ১৯৪৩ সালে 'উপর গগন বিশাল'।
শচীন দেব বর্মণ এবং অন্যন্য সঙ্গীত পরিচালকদের সুরে ১৯৪০, ৫০ ও ৬০-এর দশকে প্রচুর কালজয়ী সিনেমার গান উপহার দিয়েছেন তিনি।
১৯৫৩ সালে 'কতদূরে আর নিয়ে যাবে বলো' গানটি তার রেকর্ড করা প্রথম বাংলা গান। ১৯৬০-এর দশক থেকে বাংলা সিনেমায় প্লেব্যাকেও তিনি ছিলেন অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কণ্ঠশিল্পী।
বাংলা আর হিন্দী ছাড়াও অসমীয়া, মারাঠি, মালয়ালম, কন্নড় প্রভৃতি ভাষাতেও প্রচুর গান গেয়েছেন মান্না দে। আর সব ভাষাভাষী মানুষের কাছেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। পেয়েছেন দেশ বিদেশের অজস্র পুরস্কার।
হিন্দি সিনেমায় মান্না দে'র কণ্ঠে শ্রী ৪২০ ছবির 'পেয়ার হুয়া ইকরার হুয়া', ওয়াক্ত ছায়াছবির 'এয় মেরি জোহরা জবি', পড়োসান ছবির 'এক চতুরনার'-এর মতো কালজয়ী গান এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
১৯৭১ সালে পদ্মশ্রী
১৯৭২ সালে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার
২০০৫ সালে পদ্মবিভূষণ
২০০৭ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন।
২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান বঙ্গবিভূষণ
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (ভারত) - (২ বার) - (১৯৬৮ এবং ১৯৭০ সালে)
১৯৬৯ হিন্দী চলচ্চিত্র মেরে হুজুর ছবির গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতশিল্পী (পুরুষ)
১৯৬৯ জাতীয় ছায়াছবি পূরস্কার Renaissance Sanskritik Parishadএর মধ্যে মধ্যপ্রদেশ
১৯৭১ বাংলা চলচ্চিত্র নিশি পদ্মে ছবির গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতশিল্পী (পুরুষ)
১৯৭১ ভারত সরকার পদ্মশ্রী পুরস্কার দেয়।
১৯৮৫ মধ্য প্রদেশ সরকার লতা মঙ্গেশকার পদক প্রদান করে।
১৯৮৮ রেনেঁসা সাংস্কৃতিক পরিষদ, ঢাকা থেকে মাইকেল সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে।
১৯৯০ মিঠুন ফ্যানস এসোসিয়েশনের তরফ থেকে শ্যামল মিত্র পুরস্কার।
১৯৯১ শ্রী ক্ষেত্র কলা প্রকাশিকা, পুরী থেকে সঙ্গীত স্বর্ণচূড় পুরস্কার প্রদান।
১৯৯৩ পি.সি চন্দ্র গ্রুপ ও অন্যান্যদের পক্ষ থেকে পি.সি. চন্দ্র পুরস্কার।
১৯৯৯ কমলা দেবী গ্রুপ কমলা দেবী রায় পুরস্কার প্রদান করে।
২০০১ আনন্দবাজার গ্রুপ আনন্দলোক আজীবন সম্মাননা প্রদান করে।
২০০২ বিশেষ জুরী বোর্ড কর্তৃক সঙ্গীতে অবদানের জন্য সারল্য যশোদাস পুরস্কার প্রদান করে।
২০০৩ পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক আলাউদ্দিন খান পুরস্কারে ভূষিত।
২০০৪ রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডি.লিট সম্মাননা প্রদান।
২০০৪ কেরালা সরকার গায়ক হিসেবে জাতীয় পুরস্কার প্রদান করে।
২০০৫ ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মবিভূষণ খেতাব প্রদান।
২০০৫ মহারাষ্ট্রের সরকার কর্তৃক আজীবনকাল সম্মান প্রদান।
২০০৭ ওড়িষ্যা সরকার “প্রথম অক্ষয়” পুরস্কার প্রদান।
২০০৮ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডি.লিট সম্মান প্রদান।
২০১১- ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মান প্রদান ২০১১- পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক বঙ্গবিভূষণ প্রদান। ২০১২- তার কৃতিত্বের জন্য ২৪ ঘণ্টা টিভি চ্যানেল আজীবন অনন্যা সম্মান প্রদান করে।
২০১৩ সালের ৮ই জুন ফুসফুসের জটিলতা দেখা দেওয়ায় মান্না দে কে বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালের আইসিইউ তে ভর্তি করা হয়।
৯ই জুন, ২০১৩ সালে তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে ডাক্তাররা এই গুজবের অবসান ঘটান এবং নিশ্চিত করেন যে তিনি তখনও বেচে আছেন তবে তার অবস্থার বেশ অবনতি হয়েছে এবং আরও কিছু নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে। পরবর্তিতে ডাক্তাররা তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানান।[৯] মান্না দে ২৪শে অক্টোবর ২০১৩ সালে বেঙ্গালুরুতে মৃত্যুবরণ করেন।
§§§§§§§§§§§§§§§§§§§§§§§§§§§§§§§