(২৮ অক্টোবর, ১৮৬৬ - ২৬ জুন, ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দ) বা (১২ কার্তিক, ১২৭৩ - ১২ আষাঢ়, ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ)
একজন খ্যাতনামা ভারতীয় বাঙালি
শিশুসাহিত্যিক। ছোটোদের অক্ষর পরিচয় থেকে সাহিত্যরস পরিবেশনের এক আকর্ষণীয় ও অভিনব কৌশল অবলম্বন করে তিনি বাংলা শিশুসাহিত্যে পথিকৃতের সম্মান লাভ করেন। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একজন কট্টর সমালোচক। বাংলা শিশুসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছড়াকার বলে সম্মানিত হন.
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার নেতড়াতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার আদি নিবাস যশোহর। তার পিতার নাম নন্দলাল সরকার । নন্দলাল সরকার যশোরের একটি দরিদ্র কায়স্থ পরিবারের মানুষ ছিলেন। তিনি পরবর্তী কালে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগরে থাকতে আরম্ভ করেন। বিখ্যাত চিকিৎসক ও শিক্ষাবিদ নীলরতন সরকার যোগীন্দ্রনাথ সরকারের দাদা অর্থাৎ জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। যোগীন্দ্রনাথ সরকার ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী ছিলেন। দেওঘর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি কলকাতা সিটি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু তিনি নিজের প্রথাগত পড়াশোনা শেষ করতে পারেন নি।
কর্মজীবন ও সাহিত্যপ্রতিভা
সিটি কলেজিয়েট স্কুলে তিনি শিক্ষকতা করতে আরম্ভ করেন মাত্র পনের টাকা বেতনে। এ সময় থেকেই তিনি শিশু সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী হন এবং শিশুসাহিত্য রচনা আরম্ভ করেন। আজগুবী ছড়া রচনায় তিনি খুব দক্ষ ছিলেন। তার সঙ্কলিত বই হাসি ও খেলা ১৮৯১ সালে প্রকাশিত হয় । তিনি সখা, সখী, মুকুল, বালকবন্ধু, বালক, সন্দেশ প্রভৃতি ছোটদের পত্রিকায় লিখতেন। তিনি মুকুল পত্রিকাটি সম্পাদনাও করেছিলেন ।
তিনি ছবির সাহায্য অক্ষর চেনাতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। তার কবিতাগুলির সাথে সুন্দর ছবি থাকত যা ছোটদের মনে এক কল্পনার জগৎ সৃষ্টি করত। ছোটদের জন্য লেখা বিদেশী উদ্ভট ছন্দ ও ছড়ার অনুসরনে তিনি হাসি রাশি নামে একটি সচিত্র বই প্রকাশ করেন। এর সাথে সাথেই ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তার সংগৃহিত খুকুমনির ছড়া প্রকাশিত হয়। তার রচিত হাসিখুসি (১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত) বইটিই সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছিল। তার রচিত ও সঙ্কলিত ৩০টি ছোটদের গল্প ও ছড়ার বইয়ের মধ্যে ছড়া ও ছবি, রাঙাছবি, হাসির গল্প, পশুপক্ষী, বনে জঙ্গলে, গল্পসঞ্চয়, শিশু চয়নিকা, হিজিবিজি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তার সম্বন্ধে বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন, “বাংলার মাটিতে এমন একজন মানুষ অন্ততঃ জন্মেছেন, যিনি একান্তভাবে ছোটদের লেখক, সেই সব ছোটদের, যারা কেঁদে কেঁদে পড়তে শিখে, পরে হেসে হেসে বই পড়ে।”
ছোটদের উপযোগী ২১টি পৌরানিক বই এইসময় তিনি রচনা করেছিলেন। সেগুলি হল, ‘কুরুক্ষেত্র’ (১৯০৯), ‘শকুন্তলা’, ‘সাবিত্রী সত্যবান’, ‘সীতা’ (১৯১০), ‘ধ্রুব’ (১৯১৫), ‘ছোটদের রামায়ণ’ (১৯১৮), ‘ছোটদের মহাভারত’ (১৯১৯), ‘দৈত্য ও দানব’ (১৯২০) প্রভৃতি। এছাড়াও জ্ঞানমুকুল, সাহিত্য, চারুপাঠ, শিক্ষাসঞ্চয় প্রভৃতি ১৩-১৪টি স্কুলপাঠ্য বই তিনি রচনা করেছিলেন। ৫ সেপ্টেম্বর ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বন্দেমাতরম্ বলে একটি জাতীয় সঙ্গীত সংগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে যোগীন্দ্রনাথ সিটি বুক সোসাইটি নামে প্রকাশনা সংস্থা স্থাপন করেন। এই প্রকাশনা সংস্থা থেকেই উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর প্রথম বই ছেলেদের রামায়ণ প্রকাশিত হয়েছিল। নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যর শিশুদের বই ‘টুকটুকে রামায়ণ’ এবং কুলদারঞ্জন রায়ের লেখা ‘ইলিয়াড’ এই পাবলিকেশন থেকেই প্রকাশিত হয়।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রবল কর্মব্যস্ততার ফলে উচ্চরক্তচাপজনিত কারণে মস্তিষ্কের শিরা ছিঁড়ে জ্ঞান হারান তিনি। বহু চিকিৎসার পর প্রাণরক্ষা পেলেও শরীরের ডান ভাগ পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়। কিন্তু অসুস্থতার মধ্যেও তিনি তাঁর রচনা ও প্রকাশনার কাজ চালিয়ে যান। এই পরিস্থিতির মধ্যেই ১৯৩৬ সালে তাঁর শেষ সংকলন 'গল্প সঞ্চয়' প্রকাশিত হয়। তাঁর রচিত মোট গ্রন্থের সংখ্যা ৭৮টি।
১৯৩৭ সালের ২৭শে জুন (মতান্তরে ২৬শে জুন) ৭১ বছর বয়সে মৃত্যু হয় যোগীন্দ্রনাথ সরকারের
মৃত্যু হয়।
=========={{{{{{∆∆∆∆∆}}}}}}==========
No comments:
Post a Comment