জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
সুবোধ ঘোষ
(জন্ম: ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯০৯ -
মৃত্যু: ১০ মার্চ, ১৯৮০)
===========///////////////===============
Doinik sabder methopath
Vol - 128 .Dt -13.09.2020
২৮ ভাদ্র,১৪২৭. সোমবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷||||||||||||÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক ও বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক। বিহারের হাজারিবাগে ১৯০৯ সালে ১৪ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। আদি নিবাস বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বহর গ্রামে। হাজারিবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজের ছাত্র ছিলেন। বিশিষ্ট দার্শনিক ও গবেষক মহেশ ঘোষের লাইব্রেরীতে পড়াশোনা করতেন। প্রত্নতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব, এমনকি সামরিক বিদ্যায়ও তাঁর যথেষ্ট দক্ষতা ছিল। গত শতকের চল্লিশ দশকের প্রায় প্রারম্ভিক কাল ঘেঁষা বাংলা সাহিত্যের কাল পর্বের জীবন শিল্পী সুবোধ ঘোষ।
আদি নিবাস বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বহর গ্রামে। তার লেখালেখির কালপর্ব ১৯৪০ থেকে ১৯৮০। বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে একটু বেশি বয়সে যোগদান করেও নিজস্ব মেধা মনন চিন্তা চেতনা আর লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে সুবোধ ঘোষ তাঁর অসাধারণ রচনা সম্ভাবের মাধ্যমে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হন।
বিচিত্র জীবিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলো তাঁর জীবন। কর্মজীবন শুরু করেন বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে। এছাড়াও, ট্যুইশন, ট্রাক ড্রাইভার, সার্কাস পার্টিতে ক্লাউনের ভূমিকায় ছিলেন। বহু পথ ঘুরে ত্রিশ দশকের শেষে আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয় বিভাগে সহকারী। ক্রমে সিনিয়ার এসিস্ট্যান্ট এডিটর, অন্যতম সম্পাদকীয় লেখক।
কর্মজীবনের সুবোধ ঘোষ -
হাজারীবাগের কুলি বস্তিতে টিকা দেওয়ার কাজ নিয়ে কর্ম জগতে প্রবেশ করেন।
লাল মোটর কোম্পানির বাসের কন্ডাক্টর এর কাজ করেন।
সার্কাস দলে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে ক্লিয়েছেন ভূমিকায় কাজ করা।
মুম্বাই পৌরসভার ঝাড়ুদার এর কাজ নেওয়া।
মহামারী প্রতিরোধে টিকা দেওয়ার জন্য পূর্ব আফ্রিকাতেও গিয়েছেন।
অভ্র খনিতে বিপদ থাকা সত্ত্বেও ওভারশিয়ার এর কাজ নিয়েছেন।
স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে জেল খেটেছেন।
গৌরাঙ্গ প্রেসে প্রুফ রিডার কাজ করেছেন।
আনন্দবাজার পত্রিকার কাজে যোগদান করেন। লেখক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে দীর্ঘদিন এই পত্রিকায় রবিবাসরীয় বিভাগের সিনিয়র অডিটর ছিলেন।
রচনা সমূহ :
গল্প -
ফসিল (১৯৪০) গ্রাম যমুনা(১৯৪৪) কুসুমেষু(১৯৫৬) পলাশের নেশা (১৯৫৭) মনোবাসিতা (১৯৫৭)নিত সিন্দুর (১৯৫৮)জতুগৃহ (১৯৬২)নিকষিত হেম (১৯৬৩)
রূপ নগর (১৯৬৪)
উপন্যাস -
তিলাঞ্জলি (১৯৪৪), গঙ্গোত্রী, ত্রিযামা ,শ্রেয়শী ,শতকিয়া, নাগলতা, সুজাতা ,একটি নমস্কারে , শুন বরনারী প্রভৃতি
নাটক -
অভ্যুদয়, শ্রেয়শী, সুজাতা, বারবধু প্রভৃতি
প্রবন্ধ গ্রন্থ
ভারতের আদিবাসী, সিগমুন্ড ফ্রয়েড, ভারতের ইতিহাস, কাগজের নৌকা, ভারতপ্রেম কথা প্রভৃতি।
তাঁর একটি প্রখ্যাত ছোটগল্প 'জতুগৃহ'। ছোটগল্পটি অবলম্বনে একাধিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে তপন সিংহ ঐ নামে এবং বোম্বেতে হিন্দীতে একটি ছবি নির্মিত হয় 'ইজাজাত' নামে যার পরিচালনায় ছিলান গুলজার। এ ছাড়াও তাঁর লেখা'পরশুরামের কুঠার' ও জনপ্রিয়।অনামী সঙ্ঘ (বা চক্র) নামে তরুণ সাহিত্যিকদের বৈঠকে বন্ধুদের অনুরোধে সুবোধ ঘোষ পর পর দুটি গল্প 'অযান্ত্রিক' এবং 'ফসিল' লেখেন যা বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। গল্প লেখার ইতিবৃত্ত সম্বন্ধে স্বয়ং সুবোধ ঘোষ কী বলেন তা এখানে উদ্ধৃত করা যেতে পারে।
"- সন্ধ্যা বেলাতে বৈঠক, আমি দুপুর বেলাতে অর্থাৎ বিকেল হবার আগেই মরিয়া হয়ে সাততাড়াতাড়ি গল্প দুটি লিখে ফেলেছিলাম। আশা ছিল, এইবার অনামীদের কেউ আর আমার সম্পর্কে রীতি ভঙ্গের অভিযোগ আনতে পারবেন না। কিন্তু একটুও আশা করিনি যে বন্ধু অনামীরা আমার লেখা ওই দুই গল্প শুনে প্রীত হতে পারেন। অনামী বন্ধুদের আন্তরিক আনন্দের প্রকাশ ও উৎসাহবাণী আমার সাহিত্যিক কৃতার্থতার প্রথম মাঙ্গলিক ধান দূর্বা।"
শিল্পী সুবোধ ঘোষ ১৯৪৪ এ গড়া কংগ্রেস সাহিত্য সংঘ এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৬ এর ১৬ আগস্ট উত্তর দাঙ্গা বিধ্বস্ত নোয়াখালী থেকে তিনি গান্ধীজির সহচর থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন দাঙ্গা এবং দাঙ্গাউত্তর কালপর্বে সাম্প্রদায়িকতার হিংস্রতাকে।
প্রথম গল্প 'অযান্ত্রিক', এরপর 'ফসিল'। তার আর একটি বিখ্যাত গল্প 'থির বিজুরি'। এছাড়াও, জতুগৃহ, ভারত প্রেমকথা (মহাভারতের গল্প অবলম্বনে রচিত), তিলাঞ্জলি (১৯৪৪), গঙ্গোত্রী (১৯৪৭), ত্রিযামা (১৯৫০), ভালোবাসার গল্প, শতকিয়া (১৯৫৮) প্রমুখ।
বাঙালী পাঠকসমাজে সুবোধ ঘোষ এখনও প্রাসঙ্গিক। বিশেষ করে তার 'অযান্ত্রিক' এবং 'ফসিল'-এর মত বাংলা সাহিত্যের যুগান্তকারী গল্প। ভাষার ওপর অনায়াস দক্ষতার প্রমাণ মেলে ওঁর বিভিন্ন স্বাদের গল্পে। মহাভারতের গল্পগুলি বলার জন্যে তিনি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তার সঙ্গে অযান্ত্রিক বা ফসিলের গল্পে ব্যবহৃত ভাষার কোনও মিল নেই। বিহারের হাজারিবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। বিশিষ্ট দার্শনিক ও গবেষক মহেশ ঘোষের লাইব্রেরীতে পড়াশোনা করতেন। প্রত্নতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব, এমনকি সামরিক বিদ্যায়ও তাঁর যথেষ্ট দক্ষতা ছিল। ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করে হাজারিবাগ সেন্ট কলম্বাস কলেজে ভর্তি হয়েও অভাব অনটনের জন্য পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে জীবন জীবিকার তাগিদে কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় তাকে। বিচিত্র জীবিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলো তাঁর জীবন। হেন কাজ নেই তাকে করতে হয়নি সংসারের ঘানি টানার প্রয়োজনে। পড়াশোনা ছেড়ে কলেরা মহামারি আকার নিলে বস্তিতে টিকা দেবার কাজ নেন। কর্মজীবন শুরু করেন বিহারের আদিবাসী অঞ্চলে বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে। এরপর সার্কাসের ক্লাউন, বোম্বাই পৌরসভার চতুর্থ শ্রেণীর কাজ, চায়ের ব্যবসা, বেকারির ব্যবসা, মালগুদামের স্টোর কিপার ইত্যাদি কাজে তিনি তার প্রথম জীবনের যতটা অংশ ব্যয় করেন। বহু পথ ঘুরে ত্রিশ দশকের শেষে আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয় বিভাগে সহকারী। ১৯৪৬ এর ১৬ আগস্ট উত্তর দাঙ্গা বিধ্বস্ত নোয়াখালী থেকে তিনি গান্ধীজির সহচর থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন দাঙ্গা এবং দাঙ্গাউত্তর কালপর্বে সাম্প্রদায়িকতার হিংস্রতাকে। অনামী সঙ্ঘ (বা চক্র) নামে তরুণ সাহিত্যিকদের বৈঠকে বন্ধুদের অনুরোধে সুবোধ ঘোষ পর পর দুটি গল্প অযান্ত্রিক, এবং ফসিল লেখেন যা বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। সুবোধ ঘোষের প্রথম গল্প অযান্ত্রিক, এরপর ফসিল। তাঁর আর একটি বিখ্যাত গল্প 'থির বিজুরি'। শুধুমাত্র গল্পকার হিসাবেই সুবোধ ঘোষ অণ্বেষু শিল্পী ছিলেন না। সুবোধ ঘোষ উপন্যাস রচনাও ঋদ্ধ তার যথার্থ প্রমাণ তিলাঞ্জলি (১৯৪৪) সুবোধ ঘোষের ঔপন্যাসিক হিসাবে প্রথম প্রভিভার স্বাক্ষর ’তিলাঞ্জলি’। এ উপন্যাসে তিনি রাজনৈতিক মতাদর্শকে উপস্থাপনে প্রয়াসী হয়েছেন। কংগ্রেস সাহিত্য সংঘের মতাদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে এই উপন্যাসে। মন্বন্তরের পটভূমিকায় রচিত এ উপন্যাসে তৎকালীন কংগ্রেসের প্রতিপক্ষ ’জাগৃতি সংঘ’র জাতীয়তা বিরোধী চরিত্রের মতবিরোধের রূপরেখা অঙ্কনে সচেষ্ট হয়েছেন তিনি এই উপন্যাসে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদক পান।
আনন্দবাজার গোষ্ঠী থেকে তিনি আনন্দ পুরস্কারে ভূষিত হন।
১০ মার্চ, ১৯৮০ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন ।
=============®®®®®®============
No comments:
Post a Comment