Saturday, 12 September 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶∆∆∆∆∆∆∆∆¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶
               জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

  সৈয়দ মুজতবা আলী
============!!!!!!!!!!================
    Doinik sabder methopath
     Vol -  127  .Dt - 13.09.2020
         ২৭ ভাদ্র, ১৪২৭. রবিবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷√√√√√√÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
          কথাশিল্পী সৈয়দ মুজতবা আলী
                                            শ্রাবণী বসু


                 
রবীন্দ্রোত্তর বাংলা সাহিত্যিকদের মধ্যে সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন একজন প্রচন্ড ব্যতিক্রমী লেখক।
চিরাচরিত রচনাভঙ্গিতে না লিখে তিনি একটি নতুন ধারায় বা ভঙ্গিতে সাহিত্য রচনা করেন। 

তাঁর জন্ম ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই সেপ্টেম্বর ,অবিভক্ত বাংলাদেশের শ্রীহট্টে।

১৯২১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন।বিশ্ব ভারতীতে পড়ার সময় তিনি রবীন্দ্রনাথের স্নেহ সান্নিধ্য লাভ করেন।তিনি ও বাচ্চু ভাই শুক্লা বিশ্ব ভারতীর প্রথম স্নাতক ছিলেন।
 
তিনি মহা পন্ডিত মানুষ ছিলেন।
গীতা থেকে গীতবিতান তাঁর সম্পূর্ণ মুখস্ত ছিল।
১৫টি ভাষা তিনি বলতে ,লিখতে ও পড়তে পারতেন।কিন্তু তিনি কারো কাছে তাঁর পারদর্শিতা প্রদর্শন না করে তিনি তাঁর সৃষ্টিতে জ্ঞানের প্রসাদ রেখেছেন।

তিনি ঈষৎ খেয়ালী ও মজলিসী মেজাজের মানুষ ছিলেন। কথায় কথায় ব্যঙ্গ কৌতূক করতেন ।তাঁর হালকা মেজাজের আড়ালে একটি সংবেদনশীল মন ছিল।

শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিকে তিনি যেমন শ্রদ্ধা করতেন তেমনি আবার অবজ্ঞার পাত্রকে অবজ্ঞা করতেও তিনি বিন্দুমাত্র দ্বিধা করতেন না।


তাঁর  কথা বলার অন্যতম জোরালো মাধ্যম ছিল কলম। তাঁর রচনায় তাঁর প্রগাঢ় পান্ডিত্যের প্রতিফলন ঘটেছে।

                কবিতা ,প্রবন্ধ-নিবন্ধ,গল্প-উপন্যাস,এ সবের গতানুগতিক প্রথা থেকে বেরিয়ে এসে তিনি  সম্পূর্ন নিজস্ব একটি পথ নির্মাণ করে সাহিত্যিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন।

বিশ্বভারতীতে অধ্যয়নকালে 'বিশ্বভারতী  হস্তলিখিত ম্যাগাজিনে' প্রথম তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়।

তিনি 'ওমর খৈয়াম', 'মুসাফির', ' প্রিয়দর্শী ',
'সত্যপির','টেকচাঁদ রায়' প্রভৃতি ছদ্মনামে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালিখি করতেন।

দেশ, বসুমতী, সত্যযুগ,আনন্দবাজার,মোহাম্মদী প্রভৃতিতে তিনি লেখালিখি করেন।লেখালেখি সম্পাদনা
 বিবিধ ভাষা থেকে শ্লোক ও রূপকের যথার্থ ব্যবহার, হাস্যরস সৃষ্টিতে পারদর্শিতা এবং এর মধ্য দিয়ে গভীর জীবনবোধ ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা তাঁকে বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। অনেকের মতে, ১৯৫০-৬০ দশকে মুজতবা আলী ছিলেন বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক।তাঁর একটি বিখ্যাত উক্তি হলো:

“ বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। ”
তুলনাত্মক ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক মুজতবার ধর্মদর্শন নিয়ে বড় ভাই সৈয়দ মুর্তাজা আলী মন্তব্য করেন:

তাঁর (মুজতবা আলীর) সাহিত্যে বিন্দুমাত্র ধর্মীয় সংকীর্ণতা ছিল না। কিন্তু তাঁর এই উদারতার জন্য গোঁড়া স্বধর্মীরা তাঁকে কোনোদিন ক্ষমা করেননি

তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা ৩০।

অবিশ্বাস্য (১৯৫৪)
শবনম (১৯৬০)
শহর-ইয়ার (১৯৬৯)
ভ্রমণকাহিনী সম্পাদনা
দেশে বিদেশে (১৯৪৯) (কাবুল শহরের কাহিনী নিয়ে লেখা।)
জলে ডাঙ্গায় (১৯৬০)
ছোটগল্প সম্পাদনা
চাচা কাহিনী (১৯৫২)
টুনি মেম (১৯৬৪)
পঞ্চতন্ত্র (১৯৫২)
ময়ূরকন্ঠী (১৯৫৭)
রম্যরচনা সম্পাদনা
পঞ্চতন্ত্র (১৯৫২)
ময়ূরকন্ঠী (১৯৫৭)
গল্পমালা সম্পাদনা
রাজা উজির
ধূপছায়া
বেঁচে থাক সর্দি-কাশি
পুনশ্চ
পাদটীকা
তীর্থহীনা
কর্ণেল
রাক্ষসী
বিধবা বিবাহ
ক্যাফে-দে-জেনি
মা জননী
বেল তুলে দু-দু'বার
স্বয়ংবরা
শবনম
রস-গোল্লা (ইংরেজি)



অনেকের মতে কথাশিল্পীদের সৃষ্টির মধ্যে নিজের প্রতিফলন ঘটে কিন্তু তিনি যে বিভিন্ন ধরণের সাহিত্য সৃষ্টি করে গেছেন তার মধ্যে আসল মানুষটিকে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব।

তিনি দিনলিপি লিখতেন কিন্তু তা অনিয়মিতভাবে এবং তাঁর স্বভাব ঔদাসীন্যের কারণে সেগুলির প্রতি তিনি যত্নবান ছিলেন না।সেই কারণে তাঁর সম্পূর্ণ দিনলিপি পাওয়া যায়নি।তবে যত টুকু পাওয়া গেছে তা মুদ্রিত করা হয়েছে এবং সেখান থেকেই তাঁর ব্যক্তিমানসের একটি দিক ফুটে উঠেছে।

এ ছাড়াও তিনি দীর্ঘ পত্র লিখতেন। সেই  পত্রগুলি সুচিন্তিত আলোচনা ,তত্ব ও তথ্য সমৃদ্ধ।

প্রবন্ধের মত গুরুগম্ভীর বিষয়কে তিনি রম্যের আঙ্গিকে লিখে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।
অনেক সমালোচকের মতে ,'দেশে বিদেশে'নামক তাঁর প্রথম  ভ্রমনকাহিনি মূলকগ্রন্থখানি সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ।  এই গ্রন্থে তাঁর বর্ণিল অভিজ্ঞতার কথা 'দেশ'পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে।

তাঁর রচনাবলীগুলিতে পাঠক তাঁর বর্ণাঢ্য বিচিত্র বিভিন্ন রসের ও জ্ঞানের সব ভান্ড থেকে পানীয় সংগ্রহ করে তৃপ্ত হন।

তিনি ছিলেন হাস্য রসের রঙিন ফোয়ারা।তাঁর রচনা পড়লে জীবনের এক ঘেয়েমি দূর হয়ে যায়।অমর কথাশিল্পী,ভাষাবিদ ও প্রখ্যাত এই সাহিত্যিক ছিলেন বাংলা সাহিত্যের রসিক কারিগর।

তাঁকে নিয়ে যে সব গবেষণা হয়েছে, তাঁর নানা গ্রন্থের উপর প্রাজ্ঞজনের যে সব ভূমিকা রচিত হয়েছে সেখানেও একরোখা বা একরৈখিক ,যাই বলি না কেন,শব্দে তাঁকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

বিবিধ ভাষা থেকে শ্লোক ও রূপকের যথার্থ ব্যবহার ,হাস্যরস সৃষ্টির পারদর্শীতার মধ্যে দিয়ে গভীর জীবনবোধ ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা তাঁকে বাংলা সাহিত্যে একটি বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে।

১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি বিশ্ব বিদ্যালয় তাঁকে 'নরসিংহ দাশ পুরস্কার'এ প্রদান করেন।১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে তিনি 'আনন্দ পুরস্কার' লাভ করেন।
 বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য২০০৫খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মরণোত্তর'একুশে পদকে' ভূষিত করেন।
তিনি,'তাফাফাৎ-উল-হিন্দ,'সাকায়-তুল-হিন্দ' -পত্রিকার সম্পাদনা করতেন।

তাঁর সম্পর্কে সাহিত্যিক প্রমথনাথ বিশীর গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য,"নতুন পথ প্রদর্শক হিসাবে মুজতবাই শান্তিনিকেতনের প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ গদ্য লেখক'"।

 বিশ্ব মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা ,ও অননুকরণীয় রচনা শৈলীর জন্য অসামান্য খ্যাতিলাভ করেছেন।


 বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ঔপন্যাসিক,
অনুবাদক,ছোটগল্পকার,রম্য রচয়িতা,অমর কথাশিল্পী সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কিন্তু তাঁর সাহিত্যসৃষ্টির মধ্যে তিনি অমর হয়ে আছেন,ছিলেন ,থাকবেন।


----------  ** **  --------------****------------
=========©==©==©==©==©=≠=======

No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। পশুপতি ভট্টাচার্য । খ্যাতনামা চিকিৎসক ও সাহিত্যিক। Dt -15.11.2024. Vol -1053. Friday. The blogger post in literary e magazine

পশুপতি ভট্টাচার্য  ১৫ নভেম্বর ১৮৯১ -  ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৮   একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক ও সাহিত্যিক। জন্ম  বিহার রাজ্যে পিতার কর্মস্থল আরায়। তাদ...