Wednesday, 23 September 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ। অনু

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
                       অনুগল্প সংখ্যা

"ভালোবাসার দিগন্তে"
(পর্ব - ৪)
################################
                   Doinik Sabder Methopath
                   Vol -140. Dt - 24.9.2020
                    ৭ আশ্বিন,১৪২৭. বৃহস্পতিবার
===============√√√√√√============


আমি

অঞ্জনকুমার দাস

কি ভবেশবাবু অমন গম্ভীর মুখে বসে আছেন কেন?
এত দিনে বুঝলাম যাদের নিয়ে এতদিন বেঁচে থাকলাম তারা তো আমাকে আপন ভাবতে পারেনি।
আপনার অমন ধারণা হবার কারণ কি?
কাল আমার শরীর টা একটু খারাপ ছিল । না না সেবা শুশ্রূষার অভাব হয়নি । কিন্তু একটা ফলন্ত গাছ পাছে মরে যায় তাঁর ই চেষ্টা ।
ওটা আপনার মনের বিকার।
হতে পারে। তবে এটা আমার কাছে নিজেকে চেনার একটা উপায় । তাই সযত্নে ওটা বাঁচিয়ে রাখা ভালো।

********************

আদিত্য- ইজম 
আশিস মিশ্র 

-- দাদা, কী সব লেখেন, বোঝা যায় না।
--তোমার জন্য লিখিনি। আমার ম্যাওটির জন্যই লেখা। 
না, আর কথা বাড়াবার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। মঞ্চ ছেড়ে আদিত্য প্রকাশ বাসে উঠে পড়লো। প্রশ্ন কর্তার সঙ্গে আট বছর পরে দেখা। বললো, দাদা আদিত্য- ইজমের তুলনা নেই। 
আদিত্য ভাবলো, গান্ডু। কোনো ইজমই সে লেখেইনি।

*********************

ঠিক ঠাক 

নন্দিনী সরকার

"কি গো??কোথায় গেলে? আরে শুনতে পাচ্ছ না?বাজার টা ধরবে তো না কি?
দরজা খুলে রেখেছ? এখানে ফোন গুলো চুরি হলে তোমার শান্তি।
এদিকে লাইট জ্বলছে,দেখতে পাওনি? ঘরে আছো অথচ আলোটা নেবাতে পারো নি?
কথার কোনো উত্তর নেই কেনো? কানটা কি একেবারে গেলো? ""

"মা এদিকের দরজা বন্ধ করো নি কেনো? তোমরা কোন যুগে থাকো বলো তো??চোখ পাকাচ্ছ কাকে? তোমার ইচ্ছায় তো আমি চলব না!! পড়েছো তো ঐ বালি বৃন্দাবন স্কুলে আর পড়াও ধ্যাড়ধেড়ে গ্রামে। তুমি আর কবে ঠিক ঠাক হবে??"

""মা, ওমা, সবসময় মোবাইলটা স্ক্রিন অন করে রাখো কেনো?? এর পর নষ্ট হলে আমাকে ধরবে, কবে যে শিখবে ঠিকমতো মোবাইল ব্যবহার করতে কে জানে?""

সব কিছু শোনার পরেও মা কিছু উত্তর দেয় না। সে মনে হয় নীলকন্ঠ হয়ে গেছে। 

********************

 লাটিম
সুকান্ত আচার্য্য

মিস্টার এবং মিসেস বোসের আদরের মেয়ে লিসা। একটি নামী স্কুলে ক্লাস থ্রি তে পড়ে। মেয়ের কোনও কিছুতেই উনারা কোনও অভাব রাখেননি। পড়াশোনার পাশাপাশি নাচ, গান, আঁকার স্যারও আসেন নিয়মিত। এই তো সেদিন জন্মদিনে বাবা ওকে একটি দামি ভিডিও গেম গিফ্ট করলেন। 
       একদিন জানলা দিয়ে কি যেন দেখে লিসা সিঁড়ি দিয়ে নেমে পাশের গলির দিকে ছুটলো। পেছন থেকে ওর মা কিছু বুঝতে না পেরে ওর পিছু পিছু ছুটে গেলেন। গিয়ে দেখলেন, বস্তির একটি ছেলেকে ও বলছে, " তুমি যে লাটিম টা ঘোরাচ্ছিলে ওটা আমায় দাওনা, আমি তোমাকে এই ভিডিও গেম টা দেব"। মিসেস বোস অবাক হয়ে চেয়ে রইলেন, শুধু ওর চোখের কোন থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।

***********************
বৈচিত্র্য

    পার্থ সারথি চক্রবর্তী 

করিমের মাথায় হাত। যেভাবে বামনগোলায় এবার গঙ্গা ভাঙছে, কি হবে কে জানে! চাষের জমি যেতে বসেছে। খোকার স্কুলও প্রায় যায় যায় নদীগর্ভে।

পাশের বাড়ির টিভির আওয়াজ আসছে। ক্রিকেট খেলার। সব দলকে কোথায় যেন উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে খেলা হচ্ছে!

মানুষ হাতে বা ভাতে, কোন না কোন ভাবে মরছে! আর ভুলিয়ে রাখার, ঘুমপাড়ানির উৎসব চলছে।

বিচিত্র ..........

**************************
 নীল সাদা

     সুবীর ঘোষ

 মা কী যেন ঘাঁটছেন আর বালতির জল নীল হয়ে যাচ্ছে । খুকু দেখতে দেখতে জিগ্যেস করে -- মা ওটা কী ? মা বলেন—এটা নীল । বড় হলে পড়বে নীলকর সায়েবরা আমাদের ওপর খুব অত্যাচার করেছিলেন এই নীলচাষ নিয়ে । খুকু আবার জিগ্যেস করে--নীল কী করে মা ?

মা বললেন—নীল সাদা করে ।

**********************
পোড়া রুটি।


ফটিক চৌধুরী

শিবুর চাকরীজীবনটাই ট্রেনে ডেলিপেসেঞ্জারী।রিষড়ার এক কারখানায়। সকালে হাওয়াই চটি পরে দে দৌড়।আর একবছর বাকি। ইতিমধ্যেই লকডাউন। চোখে ভেসে ওঠে ট্রেনলাইন।কবে ট্রেন ও কারখানা খুলবে জানা নেই। শিবু ঘরে বসে টিভি দেখছিল।দেখছিল পরিযায়ী শ্রমিকের দুর্দশার কথা।ট্রেনলাইন, হাওয়াই চটি,পোড়ারুটি। 
হঠাৎ বউ ডাকল খাওয়ার জন্য।দেরি হয়ে গেছে।বউ বলে,আজ রুটিগুলো একটু পুড়ে গেছে।
শিবু বলে: আজ খিদে নেই।

*************************
চরৈবেতি

অজিত জানা

সততার পুরস্কার এভাবে মিলতে পারে মন্টু কল্পনাও করতে পারেনি।এবছরই সে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছে। বিশ্বাস ভালো ফল হবে।গত মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় টেষ্ট পরীক্ষার দু'মাস আগে তার জীবনে একটা ঘটনা তাকে আমূল পাল্টে দেয়।
"তাসপাশা,জুয়া নেশা সর্বনাশা"। কিন্তু সেই তাস কিংবা জুয়ার আসর যে কারো জীবনে আলোর দিশারী হয়ে উঠতে পারে, তার ভাবলে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে।
জেলা হাসপাতাল চত্বরে একটা মস্ত বট গাছ ছিল।তার চারদিকে শানবাঁধানো বৃত্তাকার চাতাল রয়েছে। সেই চাতালে বেশ কয়েকজন যুবক রোজকার মতো তাসের আড্ডায় মশগুল। রাতের অন্ধকারে জুয়ার আসরে তাদের দেখা যায়। পুলিশ কয়েকবার রেট্ করেও তাদের নাগাল পায়নি কিংবা টিকিটাও ছুঁতে পারেনি।তারা পেশায় অটো -ট্যাক্সি -রিক্সা চালক।আসলে বিপদে রোগী, রোগীর পরিবার-পরিজনদের নিরাপদে গন্তব্যস্হানে পৌঁছে দেন।
একদিন দিনমজুর বাবা এবং পরিচারিকা মায়ের একমাত্র খঞ্জ সন্তান মন্টু ঠিক পরীক্ষার আগে পা ও কাঁধের ভারী স্কুল ব্যাগটা মাটিতে ঘষটাতে ঘষটাতে তাসুড়েদের কাছে গিয়ে দু'হাত কচলে মাথা নিচু করে বলল, বাবুরা, একটা কথা বলবো।তারা তখন তাসের নেশায় মত্ত। একজন বলে উঠল-কে রে ব্যাটা?কী চাই?দেখছিস্ না আমরা এখন ইন্টারন্যাশন্যাল গেম খেলছি।-না বাবু মানে লেখা পড়ার জন্য একটু সাহায্য করুন। এই নেয় একশ টাকা। যা ব্যাটা যা।
ঘন্টা খানেক পরে মন্টু আবার এসে হাজির। আবার জ্বালাতে এসেছিস্। আমি এই বইটা কিনেছি, বাকি টাকা ফেরৎ দিতে এসেছি। শুনে তো তাস পার্টি একেবারে থ। খেলা বন্ধ করে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল -ভবিষ্যৎ জীবনে মন্টুর প্রতিষ্ঠার জন্য সমূহ খরচ তারাই বহন করবে। দুঃস্থ,অনাথ, প্রতিবন্ধী (সি,ডব্লিউ,এস,এন-Child with special needs)-দের জন্য তারা "চরৈবেতি" নামক একটি সংস্থার সূর্যোদয় ঘটালো।

************"********
দুগ্গা

কোয়েলী বসু

নীল আকাশ,সাদা মেঘ,সবুজ ক্ষেত, মাঠে কাশ ফুলের ঢেউ সব কিছুই আছে আগের মতো।দুগ্গা এইভবেই সময়ে অসময়ে গ্রামের বুকে ছুটে বেড়ায়,চোখ বোলায়,ভাবে এখন চারিদিক টা আরো বেশী নতুন নতুন,ঝকঝকে।ছুটে যায় বাঁধানো সেই বেদির দিকে,আট বছর ধরে যেখানে বাবাকে দেখছে ঢাক বাজিয়ে নাচতে।কিন্তু এবার কোথায় গেল? দুগ্গার চোখ খুঁজে বেড়ায় প্রতিবছরের মতো একটি রঙিন ঝকঝকে নতুন লাল জামা আর শূন্য বেদিতে মতি কাকার তৈরী মা দুগ্গার সেই লাল টুকটুকে রং এর শাড়িটা ।

**********************
মানবিক

দেবাশিস চক্রবর্ত্তী

অম্লান প্রায় দৌড়ে এসে বাসটা ধরার জন্য হাতল ধরে পাদানিতে একটা পা রাখতেই খেলো এক রামধাক্কা । তড়িঘড়ি নামতে থাকা এক সুন্দরী রমণীর সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ । ফল , ফুটপাতের গর্তে জমে থাকা জলকাদার মধ্যে অম্লান আপাতত চিৎপটাং ! চারিদিক থেকে হাসির শব্দে রাগে আর লজ্জায় তখন তার কানের পাতা লালে লাল ।
          চোখ বন্ধ করে একবার জোরে মাথা ঝাড়া মেরে তাকাতেই দেখলো , তাকে তোলার জন্য হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই সুন্দরী মহিলা । বললো সরি ! অম্লানের ভালো লাগলো । মুহুর্তে ভুলে গেলো সব কষ্ট , হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে উঠে দাঁড়ালো সে ।
  মেয়েটি সকলকে বললো - হাসি থামান । প্লিজ, আপনারা একটু মানবিক হোন ।

**********************
 হাওয়া

দুর্গাদাস মিদ্যা

          রমেন আমার পরিচিত। ব্যবহার সদাশয়। দিল খোলা মানুষ । কথা বলতে শুরু করলে থামত না। একসময় উগ্র রাজনীতি করত। সে কথা ওই বলেছিল না হলে আমি আর কী করে জানবো! সমাজ সংসার নিয়ে খুব ভাবত এটা আমি লক্ষ্য করেছি। আমার বাড়িতে কবিতার আড্ডায় নিয়মিত হাজির থাকত। ভালো কবিতা ও লিখত । সব মিলিয়ে জমা টি মানুষ। করোনায় আক্রান্ত হল! ভর্তি হল। সব হঠাৎ। জানলাম সেদিন যে
দিন ওর ডেডবডি টা হাওয়া হয়ে গেল। করোনার কারসাজিতে।

***********************
কম্পিউটার 


 গোবিন্দ মোদক 
 
          আট বন্ধু --- চিত্রা, অলি, মমতাজ, প্রিয়াঙ্কা, উর্বশী, তাথৈ, এষা এবং রাবেয়া। ওরা ঠিক করলো আট বন্ধু মিলে একটা ক্লাব তৈরি করবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ --- ক্লাব গঠিত হলো। কিন্তু নামকরণ নিয়ে বড্ড সমস্যা হলো --- শেষ পর্যন্ত সর্বসম্মতিক্রমে ক্লাবের নাম হলো 'COMPUTER' ! বলোতো নামকরণের রহস্যটা কি ? একটু ভাবলেই বলতে পারবে। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছো --- সবার নামের আদ্যক্ষর দিয়ে !

****************************
সাপোর্ট

বিষ্ণু পদ জানা

বর্ষণক্লান্ত শরতের সকাল মুখ ভারি । গোমড়া মুখো চিররুগী বীণা ও। ছ'মাস শরীর ও মনে, বিমল সঙ্গে থেকে সব.... সব‌ই করেছে। সাপোর্ট করেছে ... বেঁচে থাকার অর্থটাই ...
  রিংটোন - " আমার গর্ব শুধু এই ..আমার চেয়ে সুখী কেউ নেই .....

                 চাকুরী সূত্রে বিদেশ বিভূঁই সে । দু'মেরু দাম্পত্য জীবন ,....

     মৃত্যুর মহামিছিলে দাম্পত্য জীবন যখন বিরহ - একা । বীণার জীবনে সুখ ও স্বস্তি ....

        আবার সবকিছু ঠিকঠাক হলে , 
                  এমন করে সাপোর্ট করবে কে ! 
 
 রিংটোন - " যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে গো ....."
                
*************************

আলোছায়া

জয়দেব মাইতি 

পড়াশোনায় মোটামুটি হলেও মেয়েটা যে একটু বখাটে তা পরিবার থেকে বিদ্যালয়ের সকলে - একবাক্যে স্বীকার করত।
নাইনে কয়েকদিন ক্লাস করার পর একদিন হঠাৎই উধাও হয়ে গেল।নানান কানাঘুষো চলতেই থাকলো।  
F.I.R করার মাস খানেক পর, বাবাকে ফোন - বাড়ি ফিরছি।ফিরিয়ে দিও না-
আবার সে স্কুলমুখী।মেয়েদের আদর্শ।এখন জেলা নারী কল্যান দপ্তরের মুখ। স্কুলে স্কুলে সে মোবাইলের অপব্যবহার আর Early Marriage নিয়ে তার অভিঞ্জতা বলে।

*****-**--*****©©©©©©*******************




No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...