Tuesday, 22 September 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ।

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
             জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

কবি অজিত দত্ত

নাট্যকার বিভাস চক্রবর্তী
==========∆∆∆∆∆∆∆∆============
             Doinik Sabder Methopath
             Vol -139. Dt - 23.9.2020
               ৬ আশ্বিন,১৪২৭. বুধবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷||||||||||||÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

                      অজিত কুমার দত্ত বাঙালি সাহিত্যিক এবং অধ্যাপক। অজিত দত্ত ১৯০৭ সালের ২৩নভেম্বর ঢাকার বিক্রমপুরে (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলা) এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র চার বছর বয়সে তার পিতা অতুল কুমার দত্ত মারা যান। তাাঁর মা হেমালিনীদেবী ছিলেন সাহিত্য অনুরাগী।

শিক্ষাজীবন -

১৯২৪ সালে ঢাকার কিশোরীলাল জুবিলী স্কুল থেকে অজিত দত্ত প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করেন এবং জগন্নাথ কলেজে বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ১৯২৬ সালে তিনি কলকাতা চলে যান এবং বিদ্যাসাগর কলেজে ইংরেজি বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তার বড় ভাই মারা গেলো ঢাকায় ফিরে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগে ভর্তি হন। অজিত দত্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৮ সালে বি.এ এবং ১৯৩০ সালে এম.এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

কর্মজীবন-

অজিত দত্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অস্থায়ী পদে যোগদান করে তার কর্মজীবন শুরু করেন। কিছুদিন পরেই তিনি কলকাতায় রিপন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৩৪ সালে স্কুল ছেড়ে তিনি রিপন কলেজে যোগদান করেন। ১৯৩৬ সালে রিপন কলেজ ছেড়ে দিয়ে ইন্ডিয়ান টি মার্কেট এক্সপানশন বোর্ডে এসিস্ট্যান্ট পাবলিসিটি অফিসার পদে যোগ দেন এবং সেখানে তিনি ১০ বছর চাকরি করেন। এখানে পদোন্নতি না হওয়ায় চাকরি ছেড়ে ক্যালকাটা ন্যাশনাল ব্যাংকের অধিকর্তা শচীন ভট্টাচার্যের ১২/১৪টি কনসার্নের পাবলিসিটি অফিসার হন। এখানেও ১০ বছর চাকরি করে ১৯৫৬ সালের ২১শে আগস্ট তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপনায় যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি বিভাগীয় প্রধান হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেন।

সাহিত্যজীবন-

১৯৩০ সালে অজিত দত্তের প্রথম কাব্যগ্রন্থ কুসুমের মাস প্রকাশিত হয়। তিনি ছিলেন বুদ্ধদেব বসু সতীর্থ। তিনি বুদ্ধদেব বসুর সাথে যৌথভাবে প্রগতি নামের একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। পরে কল্লোল সাহিত্য গোষ্ঠী তে যোগ দেন। অজিত দত্ত নিয়মিত কল্লোল পত্রিকায় লেখালেখি করতেন, তিরিশের দশকে কল্লোল অন্যতম জনপ্রিয় বাংলা সাহিত্য পত্রিকা। ১৯৪৬ সালে তার নষ্ট চাঁদ প্রকাশের পরের বছর দেশ পত্রিকায় রৈবত ছন্দ নামে ধারাবাহিকভাবে তার মন পবনের নাও প্রকাশিত হয়। অজিত দত্ত সমসাময়িক বাংলা কবিতা, ছন্দ চিন্তা, রবীন্দ্র বিষয়ক ভাবনা, বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকের রচনার মূল্যায়ন, শিল্পসাহিত্য ভাবনা এবং শিশুসাহিত্য সম্পর্কিত ৫০টি প্রবন্ধ লেখেন। বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত জনপ্রিয় সাহিত্য পত্রিকা কবিতা গোড়াপত্তনেও অজিত দত্তের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।

রচিত গ্রন্থ :

অজিত দত্তের প্রকাশিত গ্রন্থ,

কাব্য গ্রন্থ
কুসুমের মাস (১৯৩০)
পাতাল কন্যা (১৯৩৮)
নষ্ট চাঁদ (১৯৪৫)
পূর্ণনবা (১৯৪৬)
ছড়ার বই (১৯৫০)
ছায়ার আলপনা (১৯৫১)
জানালা (১৯৫৯)
কবিতা-সংগ্রহ (১৯৫৯)
শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৭০)
সাদা মেঘ কালো পাহাড় (১৯৭১)
প্রবন্ধগ্রন্থ
জনান্তিকে (১৯৪৯)
মন পবনের নাও (১৯৫০)
সরস প্রবন্ধ (১৯৬৮)
বাংলা সাহিত্যে হাস্যরস (প্রবন্ধ, ১৯৬০)
কথা-ভারতী (অনুবাদ)
দুর্গাপূজার গল্প (অনুবাদ)

মৃত্যু 

১৯৭৯ সালে ৩০ ডিসেম্বর তিনি তার কলকাতার ২০ রাসবিহারী এভিনিউ এর বাড়িতে পরলোক গমন করেন।
                     (সংগৃহীত )

==============*!!!!!!!!!!!!*======≠====
কিংবদন্তী নাট্যপ্রতিভা বিভাস চক্রবর্তী
       
                                                 গৌর চাঁদ পাত্র

                          বাংলা নাট্যজগতের খ্যাতনামা অভিনেতা, গবেষণানিষ্ঠ পরিচালক ও বহুমাত্রিক নাট্যকার। বাংলা নাটকে যুক্ত করেছেন তাঁর গবেষণালব্ধ নতুন শৈলী ও ব্যতিক্রমী চিন্তাভাবনা।এই অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮৯ খ্রীষ্টাব্দে তিনি সংগীত নাটক অ্যাকাডেমী পুরস্কারে সম্মানিত।
          এই নাট্যপ্রতিভার জন্ম বাংলাদেশের সিলেটে ১৯৩৭ খ্রী ২৩ শে সেপ্টেম্বর।তাই তিনি বলতেন - "সিলেটের ফোক মিউজিকের গৌরবময় ঐতিহ্য আছে।ঐ সুর আমার রক্তে।নাটকে মিউজিক বা আবহ গুরুত্বপূর্ণ। ছোটবেলায় বলতাম -যাত্রা নাটক নয়, ঐ বাড়িতে গান শুনতে যাচ্ছি।গান নাটকের প্রাণ " ।
    " বহুরূপী" নাট্যদলে অভিনয় দিয়ে শুরু।তারপর " নান্দীকার" গ্রুপে(১৯৬০-১৯৬৬) । তারপর নিজের হাতে গড়া " থিয়েটার ওয়ার্কশপ " (১৯৬৬-১৯৮৫) । পরে তৈরি করেছেন " অন্য থিয়েটার" গ্রুপ (১৯৮৫- অদ্যাবধি) । বিখ্যাত নাট্যাভিনয় ও কোনক্ষেত্রে পরিচালনা করেছেন - ছায়া আলো (১৯৬৬),রাজরক্ত (১৯৭১), নরকগুলজার (১৯৭২), চাকভাঙা মধু (১৯৭২), বিসর্জন (১৯৮৪) ও মৃত্যু না হত্যা (১৯৯৯) ।
         পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অকাডেমীর সঙ্গে প্রথমাবধি দীর্ঘদিন যুক্ত থেকে তৈরী করেছেন অনেক নতুন নাট্যশিল্পী।তাঁর থিয়েটারঋদ্ধ পরিমিত  অভিনয়ে সিনেমার ছোট চরিত্রগুলো হয়েছে প্রাণবন্ত । উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হল- ছেঁড়া তমসুক (১৯৭৪), পরশুরাম (১৯৭৯), অমর পৃথিবী (১৯৯৫), পথ ও প্রাসাদ (১৯৯১) এবং আমার ভুবন (২০১৮) ইত্যাদি।

 
  নতুনত্বের সন্ধানী বিভাস চক্রবর্তী বলতে পারেন-"উন্নাসিকতা হয়তো ভালো নয়, কিন্তু তা না থাকলে বর্তমানকে অতিক্রম করে ভবিষ্যতের দিকে এগুনো যায় না" ।তাঁর সংযোজিত নতুন নাট্যভাবনা-
         ক) অন্তরঙ্গ পরিসর :-কোন আলাদা পেন্ট, পোশাক ও মঞ্চসজ্জা ছাড়াই নাটক উপস্থাপনা।কারন অভিনয়টাই আসল।এই ভাবনা থেকেই পথনাটকের সূত্রপাত।
        খ) দীর্ঘসময় ধরে মঞ্চে পূর্ণাঙ্গ নাটকের পরিবর্তে একাধিক ভিন্ন স্বাদের একাঙ্ক নাটক পরিচালনা।এইভাবে একাঙ্ক নাটকের জয়যাত্রা শুরু।
         গ) এলিয়েশান:-নাটকের বিশেষ পরিস্থিতি দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য হঠাৎ মিউজিক ও অভিনয় বন্ধ করা। কিছুক্ষণ পরে আবার শুরু করা।
         ঘ)  নাটকের সব উপাদানকে হতে হবে কৃত্রিমতাবর্জিত ও বাস্তব।তাই " চাকভাঙা মধু" র আবহ তৈরীর জন্য ছুটে গেছেন গ্রামের চড়কের মেলায়।রেকর্ড করে এনে কাঁচা ( র) অবস্থায় নাটকে প্রয়োগ করেছেন। এখানেই তাঁর বিশেষত্ব।
         ১৯৮৮ খ্রীষ্টাব্দে বাংলা নাট্যজগত আলোড়িত হল ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে তাঁর নাট্যরূপ দেওয়া ও পরিচালিত ৩০০ রজনী অতিক্রমী  মঞ্চসফল নাটক -" মাধব মালঞ্চী কইন্যা" । যেন "নাট্য আবহাওয়ার গুমোট গরমে দখিনা বাতাস" ।প্রখ্যাত কবি শংখ ঘোষ যথার্থ বলেছেন - " এই নাটক দেখে মনে হল অনেকদিন পর আমরা আমাদের সনাতন দেশটার মাঝে চলে এসেছি। --- বাস্তব বিন্যাস ও অবাস্তব কল্পলোক কী ছন্দময় ক্ষিপ্রতায় মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।"
          নাট্যজগতের এই অলোকসামান্য ব্যক্তিত্বকে তাঁর জন্মদিনে জানাই বিনম্র প্রণতি। নাট্য বিবর্তনের ইতিহাসে তাঁর কীর্তি অমর হয়ে থাকবে।

l
      

==============!!!!!!!!!!!!!=============




No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...