সংগ্রহযোগ্য গ্রন্থ
এবং
আলোচনা
=================================
Doinik Sabder Methopath
Vol -230.Dt - 23.12.2020
৭ পৌষ,১৪২৭. বুধবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
১.
নকশাল-আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সমকালে ও পরবর্তীকালেও অসংখ্য বাংলা ছোটোগল্প রচিত হয়েছে। কোনও আন্দোলন ইত্যাদিকে মাথায় রেখেই লেখা গল্প অনেকসময় তেমন শিল্প-সফল হয় না। উদ্দেশ্যমূলকতা, প্রচারধর্মিতা গল্পের শিল্প-রসকে ক্ষুন্ন করে কখনও-কখনও।
কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে এই শ্রেণীর গল্প-সন্ধান ও পঠন-পাঠনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখতে পাচ্ছি, নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অসংখ্য ভালো গল্প বাংলা সাহিত্যে লেখা হয়েছে। ঐ বিশেষ প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরেও শিল্পোত্তীর্ণ বেশ কিছু ভালো গল্প লিখেছেন খ্যাত, কমখ্যাত ও অখ্যাত-জনও।
সত্তরের স্বপ্ন, মুক্তির আকাঙক্ষা, ঘরে ফেরা-না-ফেরার সেই উথাল-পাথাল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ দিনগুলিব জীবন্ত ছবি উঠে এসেছে এই গল্পগুলিতে।
এই সঙ্কলনে নির্বাচিত গল্পগুলি গল্প হিসেবে কতখানি সার্থক এবং নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটেই লেখা কিনা, সেটাই ছিল আমার একমাত্র বিচার্য বিষয়। ফলে স্বভাবতই ঐ আন্দোলনের নেতিবাচক ও ইতিবাচক উভয়দিকই গল্পগুলিতে এসেছে। এই দুই মলাটের মধ্যেকার গল্পগুলোর গাঁথা মালা থেকে সেই উত্তাল সময়ের সামগ্রিক, পরিপূর্ণ একটা ছবি এখানে তুলে ধরতে পেরেছি বলে মনে করি।
সঙ্কলনটিতে গল্পগুলি সাজিয়েছি গল্পকারদের বয়সের ক্রম মেনেই।
এই সঙ্কলনে বিভিন্ন লেখকের মোট ৮০টি নকশাল-আন্দোলন সংক্রান্ত গল্প সংকলিত হয়েছে।
-------------------------/--------------
২.
বর্তমান যুগে ভারতীয় নারী অন্তঃপুর থেকে বাহির হয়ে সমস্ত কাজ পুরুষের সাথে সমানভাবে করে যাচ্ছে। শুধু বর্তমান সময়ে নয়, প্রাচীনকালে নারীর সামাজিক স্থান ঠিক এমনি ছিল। দানে, ধর্মে অথবা জমিদারী বা শাসন কার্যে - ভারতের নারীরা এক বিশিষ্ট স্থান দখল করেছিল। সংযুক্তা, পদ্মিনী, মীরাবাঈ, রাণী ভবানী, অহল্যা বাঈ, লক্ষীবাঈ, রাণী রাসমণি - সমাজের বিভিন্ন পরিমন্ডলে বিশিষ্ট এই সাতজন নারীর জীবন দৃষ্টান্ত দেখে বর্তমান যুগের পুরুষরা নারীকে উপযুক্ত সন্মান দিতে শিখবেন, আর নারীরা পাবে জীবনে চলার প্রেরণা। সংগ্রহ করুন জনশিক্ষা গ্রন্থমালা'র এই বইটি।
সংযুক্তা (সংযোগিত)- ১১৭০—১১৯৩ খ্র:। জয়চন্দ্রের কন্যা, পৃথ্বীরাজের মহিষী।
পদ্মিনী- ১৩শ শতক! পিতা হামির শঙ্খ, স্বামী ভীমসিংহ।
মীরাবাঈ— ১৫শ শতক। রাণা কুম্ভের পত্নী। মীরাবাঈয়ের ভজন ভারতবিখ্যাত।
রাণী ভবানী- ১৮শ শতক। স্বামী নাটোরের রামকান্ত। দানের জন্য বিখ্যাত।
অহল্যাবাঈ— ১৭৩৫–১৭৯৫ খ্রী:। দানশীলা মারাঠী রমণী। পিতা আনন্দরাও সিদ্ধে, স্বামী খাণ্ডেরাও।
লক্ষ্মীবাঈ— শাসনকাল ১৮৫৩-১৮৫৮ খ্রীঃ। ঝাঁসির বীর রাণী। স্বামী গঙ্গাধর রাও।
রাণী রাসমণি— মৃত্যু ১৮৬১ খ্র:। দানশীলা রমণী। স্বামী রাজচন্দ্র মাড়
-------------------------/----------------
৩.
অনুবাদক-কাননবিহারী মুখোপাধ্যায় যিনি বিশ্বভাবতীর বাংলা সাহিত্যের প্রাক্তন অধ্যাপক ও মহাজাতি সদনের প্রথম কর্মসচিব। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদর্শশালার প্রাক্তন অধ্যক্ষ। “মানুষ রবীন্দ্রনাথ” প্রভৃতি গ্রন্থের লেখক।
যেসকল অনুবাদ গল্পগুলি এই বইতে রয়েছে-
জন গলওয়ারদি-র লেখা: আপেল গাছটি
অ্যালফনস দদে এর লেখা : বারলিনের অবরোধ
হান্স ক্রিসটিয়ান অ্যানডারসন-এর লেখা: ছোট্ট জলকুমারী
“সাকি”-র লেখা : খোলা জানালা।
অনরা দ্য বালজাক-এর লেখা : মরুর দেশে মোহিনী মায়া
কনরাড বারকোভিচি-র লেখা : ভালুকশিকারীর মেয়ে
লিও নিকোলায়েভিচ টলসটয়-এর লেখা: ককেশাসের বন্দী
এই অনুবাদ বইটির সাত আটটি কাহিনীর বিষয়বস্তু সম্বন্ধে বেশ একটি মিল রয়েছে। সকল ক্ষেত্রেই বিষয়বস্তু ঘনীভূত হয়েছে এক-একজন কিশোরীকে কেন্দ্র করে। প্লট গুলির প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে কিশোর হৃদয়ে বিচিত্র রূপের রঙিন আলপনা। “আপেল গাছটি”, “ছোট্ট জলকুমারী”, “ভালুকশিকারীর মেয়ে” এবং “ককেশাসের বন্দী” এই চারটি গল্প ত প্রত্যক্ষভাবে কিশোরী-নারীর প্রথম প্রেমের কড়চা। কিশোরী চিত্তের আর-একটি ভিন্ন স্তরের রূপ হচ্ছে অমেয় ভক্তি এবং নিবিড় মমতা। এ কথা ত আমাদের অজানা নয় যে, যৌবনকাল থেকে শেষের দিন পর্যন্ত নারীজীবন প্রবাহিত হয় প্রধান দুটি আবেগকে আশ্রয় করে—প্রেম ও বাৎসল্য। নারীর প্রকৃত রূপ হচ্ছে সে একদিকে প্রিয়া আর একদিকে মা। স্বভাবতঃ কৈশোরই এই দুটি আবেগের উন্মেষ-ঋতু।
“বাবলিনের অবরোধ” গল্পটিকে বঙে-বসে সার্থক কবে তুলেছে বৃদ্ধ ঠাকুরদামশাই-এর প্রতি প্রণোজ্জ্বল একজন কিশশোরী কন্যার ভক্তিপূর্ণ মমতা। বৈষ্ণব সাহিত্যে মানব হৃদয়ের যে চরম আর্তিকে কৃষ্ণপ্রেম আখ্যা দেওয়া হয়েছে, সেই কষ্টিপাথরে বিচার করে এ ইঙ্গিত করা যেতে পাবে যে, এই ঠাকুরদামশাই এর নাতনীর হৃদয়ের স্বভাবজাত সুনিবিড় আকর্ষণ হচ্ছে প্রেমেরই আর-এক স্তরের রূপান্তর। আর “মরুর দেশে মোহিনী মায়া” কাহিনীর নায়িকা কিশোরীবাঘিনীর যে ছবি বালজাক এঁকেছেন, তা যে পুরোপুরি মানুষের প্রেমের সমগোত্রায়—এ কথা ত প্লটের অগ্রগতির নানা সুযোগে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কিন্তু ‘সাকী’র লেখা “খোলা জানালা”র নায়িকার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সম্পূর্ণ আলাদা। এর মধ্যে প্রেম, ভক্তি, ভালবাসার কোন সম্পর্ক নেই। আছে কিশোর হৃদয়ের সম্পূর্ণ অন্যজাতের আর-এক আত্মপ্রকাশ। যে পদ্মকুঁড়িটির মধ্যে সবেমাত্র জীবনের পাপড়ি উন্মোচন আরম্ভ হয়েছে, নব-চেতনার বন্যায় উচ্ছল সেই সত্তার কৈশোর-লীলার এক অতি আকর্ষণীয় চটুলতার ছবি।
প্রধান চরিত্র হিসাবে যে চারজন কিশোরীকে আমরা পাই, তারা এক দেশের মেয়ে নয়—ইংল্যাণ্ড, ডেনমারক, পোলাও, রাশিয়া প্রভৃতি ভিন্ন ভিন্ন দেশের মেয়ে। তাদের চরিত্র আঁকা হয়েছে বিভিন্ন জাতির মহাশিল্পীদের তুলির সাহায্যে। তবু চরম বিশ্লেষণে মনে হয়, তারা যেন সকলে মূলতঃ একই ধরনের সত্তার অধিকারিণী । অবশ্য, পরস্পরের মধ্যে বয়সের কিছু তারতম্য আছে, ভালবাসা প্রকাশের ভঙ্গীতে এবং আচরণে বেশ কিছু জাতিগত এবং শ্রেণীগত স্বাতন্ত্রও রয়েছে। তবু এদের চরিত্রে ফুটে উঠেছে ভালবাসার আদিতম যে রূপ, তার মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কিনা সন্দেহ।
বিশেষভাবে বিচার করলে বোঝা যায়, এই কিশোরী কন্যা গুলির হৃদয়ে আছে একটা সাংসারিকতাহীন সরলতা। সে সরলতা কিন্তু বোধশূন্য অবুঝের সারল্য নয়। বাস্তবের প্রতি এদের চেতনা বেশ তীক্ষ্ণ অথচ এরা নিজেদের
অজ্ঞাতে পরমের স্বপ্নে বিভোর। কৈশোরের আবির্ভাবে এদের জীবনের ভেতরে বাইরে ঘটল ঋতুবদল। এরা হয়ে পড়ল যেন “অকারণে চঞ্চল”। অবচেতন মনে এল স্বতঃস্ফুর্ত প্রেমের অনুভব। তেমনি এদের প্রথম প্রেম নিবেদনের মধ্যে নেই কোন প্রচ্ছন্ন কৃত্রিম ছলাকলার খেলা। দেখা যায়, পল্লীবাসিনী কিসান কন্যা মেগান, লণ্ডন শহরে প্রতিপালিত স্টেলা আর জিপসী-কিশোরী সাংস্কৃতিক সূক্ষ্মতাহীন, স্কুল-পরিবেশে লালিতা মার্গারিটার চরিত্রে কৈশোর রহস্যের এক মৌলিক রূপ প্রতিফলিত হয়েছে। প্রত্যেকেই নিঃশেষে নিজেকে দিতে চায় কিন্তু এদের নেবার আগ্রহে প্রখরতা নেই। এরা সকলেই ত্যাগে যত উদ্যত,
প্রাপ্তির জন্যে তত লালায়িত নয়। মেগানকে যখন অসহাবস্ট বললে, 'মেগান, আমি তোমাকে বিয়ে করব’, মেগান তখন যা উত্তর দিয়েছিল তার মর্ম হচ্ছে, সে শুধু অ্যাসহারস্টের কাছে থাকতে চায়, তার বেশি কিছু নয়। কাছে থাকতে না পেলে ও যে মারা যাবে ! এই ওর সবচেয়ে বড় ভয়।
জলকুমারীর রূপকে মানবসমাজের একজন কিশোরীর ভালবাসাই প্রচ্ছন্নভাবে আঁকা হয়েছে। অ্যানডারসনের জলকুমারীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ ছিল সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর। সেই কণ্ঠস্বর সমূলে ডাইনীকে উপহার দিয়ে ও লাভ করেছিল মানুষের দুটি পা
যাতে ও রাজকুমারের সঙ্গলাভ করতে পারে। তারপর পায়ের দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করেও রাজকুমারের সঙ্গলাভে যেটুকু চরম স্তরের পরিতৃপ্তি পেয়েছিল, তাতে নিজেকে ধন্য মনে করেছিল।
“ককেশাসের বন্দী” গল্পের নায়িকা তাতারী-কিশোরী দীনা ভালবাসার পাত্রকে কেবলই দিয়েছে। পরিস্থিতি, স্থান ও কালের কথা মনে রাখলে নিশ্চয়ই বলা যায় যে, তার ক্ষুদ্র হৃদয়ের সেই দানগুলো ক্ষুদ্র এবং সামান্য ছিল না। দীনা প্রেমাস্পদের কাছ থেকে কখনো কিছু চায় নি, হয়ত কিছু পাবার জন্যে দুঃসহ কোনো প্রত্যাশাও ওর হয় নি।
এই প্রসঙ্গে একটা কথা উল্লেখযোগ্য, এইসব কিশোরীদের মহিমা-ভরা-প্রেম কাহিনী পড়তে পড়তে আমার মনে জেগে উঠেছিল বাংলা সাহিতের চিরকিশোরী অভাগী রতনের কথা। বোধ হয়েছিল, অন্তরের অন্তস্থলে সে যে এদেরই সমগোত্রীয় । তার গভীর আকর্ষণে, তার পরম সারল্যে, অকুন্ঠিত সেবার মধ্যে দিয়ে তার বেহিসেবী আত্মনিবেদনের আগ্রহে। মেগানের মত সেও তার কলকাতায় ফিরতি-মুখী মনিব পোস্টমাস্টারকে জিজ্ঞাসা করেছিল, “দাদাবাবু, আমাকে তোমাদের বাড়ি নিয়ে যাবে?” তার এই প্রশ্নের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছিল এই কামনা যে, সে তার দাদাবাবুব কাছে থাকতে চায় তার সেবা করতে চায়। মাত্র এইটুকুই তার চাওয়া, এই চাওয়ার মধ্যে বেশি কিছু দুরাশা ছিল না।
এ বিষয়ে সন্দেহ নেই, যে কয়জন মহাশিল্পীর সেরা রচনা বইখানিতে সংকলিত হয়েছে, তাঁরা সাহিত্যরসিক বিশ্বমানুষের অন্তরের তৃষ্ণাকে পরম পরিতৃপ্তিতে ভরিয়ে দেবার উদ্দেশেই এই সৃষ্টি কাজে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন।
-------------------------/-----------------
৪.
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই দেখা যাচ্ছে যে, মানুষ দৈহিক মৃত্যুর পরও একটি সূক্ষ্ম অস্তিত্বে বিশ্বাস করত। সেইজন্য মৃত্যুর পর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন দেশে নানা নরগোষ্ঠীর মধ্যে বিচিত্র ধরনের পারলৌকিক ক্রিয়া ছিল- যে ক্রিয়াগুলি আধুনিক মানসের কাছে যে-কোন রোমহর্ষক উপন্যাসের কাহিনী অপেক্ষাও চমকপ্রদ। সেই জন্য বর্তমান গ্রন্থের প্রথমভাগে পৃথিবীর সকল নরগোষ্ঠীর ও ধর্মের মানুষের মৃত্যু ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা দেওয়া গেল।
*এছাড়াও আপনারা এই বিষয়ের উপর আররো বই সংগ্রহ করিতে পারেন, যেমন-
> পরলোকের বিচিত্র কাহিনী- সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়
মৃত্যুর পর কোন সূক্ষ্ম অস্তিত্ব থাকে কিনা তা নিয়ে মানুষের মনে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সেইজন্য আধুনিক বিজ্ঞান ও অধিমনোবিজ্ঞান এ সম্পর্কে অনুসন্ধান করে যে সূক্ষ্ম অস্তিত্বের সন্ধান পেয়েছে, বর্তমান গ্রন্থের দ্বিতীয় অংশে সেই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের বিস্তৃত আলোচনাও সন্নিবেশিত হল। তৃতীয় অংশে এ বিষয়ে ভারতীয় যোগীরা যা প্রত্যক্ষ করেছিলেন লেখক স্বীয় যোগবললব্ধ অভিজ্ঞতা থেকে সেই কাহিনীও ব্যক্ত করেছেন। দেখা যাচ্ছে যে, প্রাচীন মানুষের সূক্ষ্ম আত্মা সম্পর্কিত চিন্তা এবং ভারতীয় যোগীদের অভিজ্ঞতা লব্ধ সত্যজ্ঞান বর্তমান বিজ্ঞান স্বীকার করে নিয়েছে। মৃত্যু ও পরলোক নিয়ে এমন বিস্তৃত আলোচনা বঙ্গ সাহিত্যে ইতিপূর্বে আর কখনও হয়নি। পাঠকের ত্রিমাত্রিক চিন্তাধারায় এই গ্রন্থ সুনিশ্চিতভাবে নতুন ভাবনা যুক্ত করবে সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। পরলোক সম্পর্কিত এক চিরন্তন সত্যকে তুলে ধরার দায়িত্ববোধ থেকেই বর্তমান গ্রন্থের প্রকাশনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
------------------------/-------------
৫.
দৃষ্টিকোণ-
“শ্রীকৃষ্ণ পুরুষোত্তম”এর অগণিত পাঠক-পাঠিকা কৃষ্ণের উপর আরোপিত ঈশ্বরত্ব নিয়ে অনেককাল ধরে চিঠিপত্রে নানা প্রশ্ন ও অনুরোধ করে আসছেন। তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রকাশিত হলঃ “কৃষ্ণস্তু ভগবান”।
ভগবান আছেন কি নেই, তা নিয়ে নানান সংশয়। কারণ, ভগবানকে চোখে দেখা যায় না। তিনি প্রত্যক্ষ নন। তিনি শূন্য নিরাকার। তবু অনাদি, অনন্তকাল ধরে মানুষের মনের মধ্যে, তার বিশ্বাসের মধ্যে তিনি ভীষণভাবে আছেন। আজও আছেন। জাতি, বর্ণ, ধর্ম, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল মানুষের তিনি পরম আশ্রয়।
মানুষের চোখে ভগবান পরম করুণাময়, মঙ্গলময়, প্রেমময়। তিনি কোন বিভেদ জানেন না। সকলকেই তিনি কোল দেন। দুঃখী, দুর্গত, অসহায় মানুষের প্রতি তাঁর দরদ ও সহানুভূতির অন্ত নেই। ক্ষমতায়, প্রেমে, মহত্বে, ত্যাগে তিনি সুন্দর। ভগবান হল ভালবাসার আর এক নাম। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় “দেবতারে যাহা দিতে পারি তাই দিই প্রিয়জনে/ প্রিয়জনে যাহা দিতে পারি, তাই দিই দেবতারে।/ দেবতারে প্রিয় করি, প্রিয়েরে দেবতা।” অথাৎ কিনা, ভগবানের কাছে মানুষ যা প্রত্যাশা করে, মর্তের মানুষের মধ্যে হঠাৎ কালেভদ্রে যখন তা পায় তখন সাক্ষাৎ ভগবান হয়ে উঠে সে। ভগবান অলৌকিক, কিন্তু মানুষরূপী ভগবান প্রত্যক্ষ এবং লৌকিক !
কোন কোন মানুষ বিশেষ গুণ, কর্ম এবং আদর্শের জন্য শ্রদ্ধেয় হয়ে উঠেন। শ্রদ্ধা ও অনুরাগের পূজাঞ্জলি দিয়ে ভগবানের মত তাকে পূজা না করলে আমরা স্বস্তি পাই না। এইভাবেই রক্ত-মাংসের বরণীয় মহান মানুষ স্মণীয় হয়ে যুগ-যুগান্তর ধরে পূজিত হন। রামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ, বুদ্ধদেব, চৈতন্য, রামকৃষ্ণ, সারদা, প্রমূখ মানব-মানবী তিরোধানের অব্যবহিত পরেই ভগবানরূপে বন্দিত হলেন। একালে সুভাষ বসু, গান্ধীজী, লেনিন প্রমুখ মনীষীরা গুণ ও কর্মের জোরে পূজার পাত্র হয়ে উঠলেন।
এই গ্রন্থে আমি বোঝাতে চেয়েছি, ভগবান হয় না, ভগবানের গুণগুলি নিয়ে মানুষ ভগবান হয়ে যায়। একদিন মহাভারতের প্রাণপুরুষ শ্রীকৃষ্ণ একইভাবে ভগবানের গুণ ও কর্মগুলি নিয়ে মানুষের ভগবান হয়ে গেলেন। কৃষ্ণ একদিনে ভগবান হয়ে যাননি। বহু শতাব্দী ধরে ভগবান হওয়ার জন্যে প্রতীক্ষা করতে হয়েছে তাঁকে। এবং একটু একটু করে তাঁর উপর ঈশ্বরত্ব আরোপিত হয়েছে।
মহাভারতের প্রথম অবস্থায় কৃষ্ণ দেবতা নন। তিনি একজন অসাধারণ প্রজ্ঞাবান রাজনৈতিক নেতা। এক আশ্চর্য সুন্দর মানুষ। পরহিতার্থে তাঁর জীবন উৎসর্গীকৃত। নিজের জন্য কিছুই আকাক্ষা নেই তাঁর। তিনি নির্লোভ। বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হয়েও ভোগে নিষ্পৃহ। পরিবর্তে অপরের দুঃখ দুর্দশাকে আপন ভেবে প্রতিকারে যত্নবান হয়েছেন। তার পরহিতৈষণা, মহত্ত্ব, ত্যাগ শত্রুকেও অবাক করেছে। প্রেমে এবং মহত্বে তাদের বশ করেছেন। তাঁর অসাধারণ পৌরুষ, চরিত্র মাধুর্য, নম্র স্বভাব, স্নিগ্ধ আচরণ, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সকলের প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় হয়েছে। তাই শ্রীকৃষ্ণ চরিত্র মানুষের অন্তরকে বিকশিত করল। শ্রদ্ধার স্বণ সিংহাসনে বসিয়ে ভক্তির শতদলে পূজা করল শত্রুমিত্র নির্বিশেষে। মানুষের হৃদয়ের পূজা পেয়ে শ্রীকৃষ্ণ হলেন ভগবান, মানুষের প্রাণের ঠাকুর। শ্রীকৃষ্ণের ঈশ্বরত্ব মানুষের সৃষ্টি। ভক্ত ও প্রেমিক মানুষের পুজাঞ্জলি। এই পূজা পেয়ে শ্রীকৃষ্ণ হয়ে উঠলেন মানুষের প্রাণের ঠাকুর।
ভক্তির এই অর্ঘ্য নিবেদিত হল মহাভারতের দ্বিতীয় স্তরে। তৃতীয় ও তার পরবর্তী স্তরে সেই ভক্তি ও পূজা এক পারমার্থিক দার্শনিক স্তরে পেীঁছল। ভক্তিই কৃষ্ণপ্রাপ্তির উপায় । মহাভারতের কর্মমার্গের উপর ভক্তিমার্গ প্রতিষ্ঠিত হল। এই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অমানুষী লীলা ও তাঁর দিব্যকর্ম বর্ণিত হল, হরিবংশে, বিষ্ণুপুরাণে, ও শ্রীমদ্ভাগবতে, আর শ্রীমতী রাধিকার তত্ত্ব বিখ্যাত হল ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে |
“শ্রীকৃষ্ণ পরষোত্তম”-এ যেসব কাহিনী অলৌকিক বলে বর্জিত হয়েছিল, আলোচ্য উপন্যাসে সেই অলৌকিক কাহিনীগুলির ক্যানভাসে কৃষ্ণের ঈশ্বরত্ব নিরূপণ করেছি। কারণ যে চরিত্রগুণে ও ব্যক্তিত্বের জোরে কৃষ্ণ ধীরে ধীরে মানবসন্তান থেকে এক অলৌকিক শক্তিধর লীলাময় ভগবানে উত্তীর্ণ হলেন, তার জ্যোতি বিকীর্ণ হয়েছে এই কাহিনীগুলিতে। তাই এগুলি এড়িয়ে যাইনি। বরং কীভাবে, কেমন করে জীবনের ঘটনা অলৌকিক হয়ে উঠল তার একটা পরিবেশ অঙ্কন করেছি। আধুনিক ধর্মপ্রাণ মানুষের শিক্ষা, চিন্তা, রুচি ও মেজাজের প্রতি লক্ষ্য রেখে সেগুলির সঙ্গে কৃষ্ণের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিবল, মনোরঞ্জনক্ষমতা, পরহিতৈষণা, করুণা, মমতার এক আশ্চর্য সমীকরণ হয়েছে উপন্যাসের আঙ্গিকে.
-------------/------------------------
*# বই নিয়ে মজার কিছু তথ্য #*
১.হার্ভার্ড
বিশ্ববিদ্যালয়ের
লাইব্রেরীতে ৪ খানা
বই আছে যা মানুষের
চামড়া দিয়ে বাঁধাই
করা।
২.মাথা পিছু বই পাঠের
দিকে শীর্ষে হলো
আইসল্যান্ড।
৩.বই পড়া মানুষের
অ্যালজাইমার রোগে
আক্রান্ত হবার
সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত
কম।
৪.ব্রাজিলের কারাগারে
প্রতি একটি বই
পাঠের জন্য ৪ দিন
সাজা মওকুফ হয়।
৫.ভার্জিনিয়া উলফ
তাঁর সব বই দাঁড়িয়ে
লিখেছিলেন।
৬.সবচেয়ে চুরি হয় যে
বইটি সেটা হলো
বাইবেল।
৭.রুজভেল্ট প্রতিদিন
গড়ে ১ টি বই
পড়তেন।
৮.শুধুমাত্র দাবা খেলার
উপরই ২০০০০+ বই
আছে।
৯.ভিক্টর গুগোর লা
মিজারেবল বইয়ে
একটি বাক্য আছে
যেখানে ৮২৩টি শব্দ।
১০.হারি (Hurry),
এডিকশন
(Addiction) এসব
শব্দ শেক্সপিয়ারের
আবিস্কার।
১১.নিউইয়র্ক পাবলিক
লাইব্রেরীর সব বই
একসাথে লাইন
করে রাখলে ৮
মাইল লম্বা হবে।
১২.লেভ তলস্টয়ের
বিশাল উপন্যাস
ওয়ার এন্ড পিসের
পান্ডুলিপি তাঁর স্ত্রী
হাতে লিখে ৭ বার
কপি করেছিলেন।
১৩.নোয়াহ ওয়েবস্টার
তাঁর প্রথম
ডিকশনারী লিখতে
সময় নিয়েছিলেন
মাত্র ৩৬ বছর।
১৪.আর 'বঙ্গীয়
শব্দকোষ' নামক
অভিধানটি তৈরি
করতে হরিচরণ
বন্দ্যোপাধ্যায়ের
কতদিন লেগেছিল?
প্রায় গোটা জীবন।
সেইসঙ্গে ছিল
প্রতিকূলতার
বিরুদ্ধে লড়াই।
*১৫. পৃথিবীতে*
*একটি মাত্রা বই*
*আছে যেটা*
*কোনো ভাষাতে*
*অনুবাদ করা*
*যায়নি বহু চেষ্টা*
*করেও, বইটির*
*নাম - সুকুমার*
*রায় এর "*
*আবোল*
*তাবোল"*
১৬ . মহাভারত পৃথিবীর
মধ্যে এক মাত্রা বই
বা মহাকাব্য যার
মধ্যে ১২০০ শোর
বেশি চরিত্র আছে
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment