∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
আলোচনা পর্ব
সেকালের আশ্রমিক শিক্ষার ভালো-মন্দ।
===============$$$$$$============
Doinik Sabder Methopath
Vol -261. Dt -24.01.2021
১০ মাঘ, ১৪২৭. রবিবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷¥¥¥¥¥¥÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
সমাজের শিক্ষা সম্বন্ধীয় দায় দায়িত্ব হচ্ছে, জ্ঞানদান করা এবং অন্যান্য গুণাবলীকে শিক্ষার মাধ্যমে জাগ্রত করা। একজন ব্যক্তির প্রাথমিক কর্তব্য হচ্ছে শিক্ষা সমাপ্ত করা এবং শিক্ষা পদ্ধতির বহুল বিস্তার ঘটানো, সর্বোপরি শিক্ষিত সমাজে অপ্রতিরুদ্ধ ভাবে অবস্থান করা। এই পদ্ধতি ছিল জ্ঞান অর্জনের শুরু ও শেষ প্রয়াস এবং একজন আদর্শ গুরু অবশ্যই সবসময় সতর্ক ভাবে নিয়োজিত থাকত জ্ঞানের অগ্রসৈনিক হিসেবে।
শিক্ষার গুরুকুল পদ্ধতিটি দাঁড়িয়েছিল সরাসরি ছাত্র-শিক্ষক ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপর এবং এটি ব্যক্তিগত শিক্ষক পদ্ধতির উপর দারুণভাবে ঋণী ছিল। শিক্ষকদের অবিরত উপস্থিতি, তাদের বাস্তব জীবনযাপন পদ্ধতি এবং ছাত্রদের প্রতি অনুজ্ঞা ও আদেশাত্মক আচরণ, ছাত্রদের উন্নত চরিত্র ও আদর্শবান হিসেবে গড়ে তুলার জন্য সহায়ক ছিল।
প্রাচীন ভারতে ব্রাহ্মণ্য-শিক্ষা গড়ে উঠার কারণ ছিল গুরুগৃহ বা তপোবন আশ্রমের ভূমিকা। এই আশ্রমিক মডেলের কারণে গড়ে উঠেছিল ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষা। ফলে একজন শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগতভাবে অনেক কাজে অংশ নিতে হত।
"শিক্ষার্থীকে গুরুগৃহে অনেক কাজকর্ম করতে হত। গোপালন, ভিক্ষা সংগ্রহ, গৃহের কাজকর্ম ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষা লাভ করত। ফলে, স্বাবলম্বন, কর্মক্ষমতা, শ্রমের মর্যাদা, মনুষ্যত্ববোধ, আত্মত্যাগ, সেবামূলক মনোভাব ইত্যাদি গুণাবলী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিকশিত হত। আশ্রমের পরিবেশ শিক্ষার্থীদের আত্মবিকাশের অনুকূল ছিল। গৃহ পরিবেশ থেকে দূরে, প্রকৃতির নির্জন পরিবেশে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করত। ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার আশ্রমিক ব্যবস্থা ছিল অবৈতনিক। শিক্ষা গ্রহণের পর শিক্ষার্থীরা তাদের সাধ্যানুসারে গুরুদক্ষিণা দিত। শিক্ষার্থীরা ভিক্ষা করে আশ্রমের খরচ চালাতেন। ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে শিক্ষার্থীদের ভিক্ষা দিতেন।"
বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থায় সীমিত বিষয়ের উপর পাঠদান করা হত। ঋক, সাম, যজু, অথর্ব-এই ৪টি বেদ পড়ানো হত। ব্যাকরণ, ধ্বনিবিজ্ঞান, ছন্দ, নিরুক্ত, কল্প ও জ্যোতিষশাস্ত্র পড়ানো হত। এগুলো ছিল ৬টি বেদাঙ্গের অন্তর্ভুক্ত। উপনিষদও পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পাঠক্রমের মধ্যে আরও স্থান পেয়েছিল ইতিহাস, রাশি (গণিত), ব্যাকরণ, জ্যোতির্বিদ্যা, পুরাণ, ভূতবিদ্যা, ব্রহ্মবিদ্যা, সর্পবিদ্যা, অস্ত্রবিদ্যা, বাক্যাবাক্য (তর্কশাস্ত্র), একায়ন (নীতিশাস্ত্র) ইত্যাদি বিষয়।
প্রাচীন তপোবন ধারনাকে কেন্দ্র করে গুরুকুল বিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল শহরের মূল বসতি থেকে দূরে নিভৃতে। বেনারসের শহরতলিতে ও এধরনের পৃথক গুরুকুল গড়ে উঠেছিল। বৈদিক গুরুকুল পদ্ধতি ছিল সংস্কৃত শিক্ষার উপযুক্ত মাধ্যম। মধ্যযুগে ও এটি তার গোরবোজ্জ্বল ধারা অব্যাহত রেখেছিল। এর অনুকূলে কারণ ছিল স্থানীয় প্রশাসক ও ভূস্বামীদের বিপুল বদান্যতায় ভুমির অধিকার লাভ। এধরনের বিদ্যালয়গুলোর কাজ ছিল সাধারণত ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্রের তালিকাকরন। শিক্ষাদানের ঘর ছিল কাদায় নির্মিত কুঠির, যার চাল তৃণপত্রের দ্বারা ছাওয়া হত। সেখানে ব্যাকরণ, সাহিত্য (কবিতা), দর্শন এবং জ্যোতিষশাস্ত্র শিক্ষা দেয়া হত।
প্রাচীন ভারতবর্ষের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে সব বিশ্ববিদ্যালয় বহুল পরিচিতি পেয়েছিল তার তালিকাটি ছিল এরকম-
১। নালন্দা ২। তক্ষশীলা ৩। বিক্রমশীলা ৪। জগদলা৫। উদ্দন্ডপুর ৬। ভালাভি ৭। মিথিলা ৮। উজ্জয়িনি
৯। নদীয়া ১০। অমরাবতী ১১। কাঞ্চি ১২। মাধুরা
প্রাচীন ভারতে বিদ্যা দু’ভাগে বিভক্ত ছিল যথা- (১) পরা বিদ্যা ও (২) অপরা বিদ্যা। এখন বিদ্যার এই দুই বিভাগ সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নিই।
(১) পরা বিদ্যা : সাধারণত ব্রহ্মবিদ্যাকে পরা বিদ্যা বলা হতো। এই পরা বিদ্যার অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ঈশ্বরলাভ বা নিজের প্রকৃত স্বরূপ বা ‘আমি’কে উপলব্ধি করত। আর এই ব্রহ্মবিদ্যার অনুশীলনের ফলে শিক্ষার্থীরা পরম শান্তি ও অমৃতত্ব লাভ করত। এর থেকে বলতে পারি যে প্রাচীন ভারতে শিক্ষার্থীরা এখনকার মতো স্ট্রেস, টেনশন বা দুশ্চিন্তা নিয়ে চলত না, বরং তারা এক পরম শান্তিতে এবং আত্মপোলব্ধি লাভের মাধ্যমে শিক্ষালাভ করত। অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীরা পরাবিদ্যা লাভ করার জন্য ব্রহ্মচর্যাশ্রম বা শিক্ষার্থীজীবন থেকে সরাসরি সন্ন্যাসী হতো। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, প্রাচীন ভারতে বেশিরভাগ মানুষই গাহস্থ আশ্রম শেষ হলে ঈশ্বরলাভের সাধনায় ব্রতী হতেন। আসলে প্রাচীন ভারতে মানুষের জীবনের লক্ষ্যই ছিল। “ঈশ্বরলাভ করা আর সম্বল ছিল ত্যাগ। ভোগের জীবন তারা বর্জন করে সৃষ্টিকর্তাকে জানাই যে জীবনের পরম ব্রত তা তারা ভালোভাবেই জানতেন।
(২) অপর বিদ্যা :প্রাচীন ভারতে বৈদিক যুগে শিক্ষার্থীদের বেদ, বেদাঙ্গ, ষড়দর্শন এবং নানা সূত্র সাহিত্য অধ্যয়ন করতে হতো। তবে বৈদিক যুগের শেষে শিক্ষার্থীদের চতুর্বেদ ছাড়াও বিজ্ঞান, ব্যাকরণ, জ্যোতিষ, নক্ষত্রবিদ্যা, নীতিশাস্ত্র, যুদ্ধবিদ্যা, শিল্প, ব্রহ্মবিদ্যা, ইতিহাস, পুরাণ ইত্যাদি বিষয় পড়তে হতো। এই যে বিজ্ঞান, কলা, শিল্প প্রভৃতি ব্যবহারিক বা লৌকিক বিদ্যার অনুশীলন করাকে ‘অপরা বিদ্যা’ বলা হতো। এই অপরা বিদ্যা পাঠের মাধ্যমে সংসারে অর্থলাভ করার উপায় জানা যেত। অপরা বিদ্যালাভ করার পর বেশিরভাগ শিক্ষার্থী গার্হস্থ আশ্রম বা সংসারজীবনে প্রবেশ করত। প্রাচীন ভারতে প্রয়োগিক বা ব্যবহারিক বিদ্যাদান করা হতো শিক্ষার্থীকে যাতে সে তার বিদ্যাকে প্রয়োগ করে নিজে স্বাবলম্বী হতে পারে। তাই সে সময় শিক্ষার্থীরা যাতে সমাজের উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে সেই ভাবেই তাদের গড়ে তোলা হতো। এবার আমরা জানব শিক্ষার্থীরা বিদ্যার্জনের পরে কী করত সেই ব্যাপারে।
বিদ্যার্জন সমাপ্ত হলে শিষ্যরা স্নান করে এসে গুরুকে প্রণাম করতেন। গুরু তখন তার শিষ্যদের আশীর্বাদ করতেন এবং উপদেশ দিতেন যে তারা যা যা বিদ্যার্জন করেছে তা যেন যথাযথভাবে কাজে লাগায়। ছাত্ররা ওই বিশেষ দিনটিতে বিশেষ উদ্দেশ্যে স্নান করার পর ‘স্নাতক’
(১) পরা বিদ্যা : সাধারণত ব্রহ্মবিদ্যাকে পরা বিদ্যা বলা হতো। এই পরা বিদ্যার অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ঈশ্বরলাভ বা নিজের প্রকৃত স্বরূপ বা ‘আমি’কে উপলব্ধি করত। আর এই ব্রহ্মবিদ্যার অনুশীলনের ফলে শিক্ষার্থীরা পরম শান্তি ও অমৃতত্ব লাভ করত। এর থেকে বলতে পারি যে প্রাচীন ভারতে শিক্ষার্থীরা এখনকার মতো স্ট্রেস, টেনশন বা দুশ্চিন্তা নিয়ে চলত না, বরং তারা এক পরম শান্তিতে এবং আত্মপোলব্ধি লাভের মাধ্যমে শিক্ষালাভ করত। অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীরা পরাবিদ্যা লাভ করার জন্য ব্রহ্মচর্যাশ্রম বা শিক্ষার্থীজীবন থেকে সরাসরি সন্ন্যাসী হতো। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, প্রাচীন ভারতে বেশিরভাগ মানুষই গাহস্থ আশ্রম শেষ হলে ঈশ্বরলাভের সাধনায় ব্রতী হতেন। আসলে প্রাচীন ভারতে মানুষের জীবনের লক্ষ্যই ছিল। “ঈশ্বরলাভ করা আর সম্বল ছিল ত্যাগ। ভোগের জীবন তারা বর্জন করে সৃষ্টিকর্তাকে জানাই যে জীবনের পরম ব্রত তা তারা ভালোভাবেই জানতেন।
(২) অপর বিদ্যা :প্রাচীন ভারতে বৈদিক যুগে শিক্ষার্থীদের বেদ, বেদাঙ্গ, ষড়দর্শন এবং নানা সূত্র সাহিত্য অধ্যয়ন করতে হতো। তবে বৈদিক যুগের শেষে শিক্ষার্থীদের চতুর্বেদ ছাড়াও বিজ্ঞান, ব্যাকরণ, জ্যোতিষ, নক্ষত্রবিদ্যা, নীতিশাস্ত্র, যুদ্ধবিদ্যা, শিল্প, ব্রহ্মবিদ্যা, ইতিহাস, পুরাণ ইত্যাদি বিষয় পড়তে হতো। এই যে বিজ্ঞান, কলা, শিল্প প্রভৃতি ব্যবহারিক বা লৌকিক বিদ্যার অনুশীলন করাকে ‘অপরা বিদ্যা’ বলা হতো। এই অপরা বিদ্যা পাঠের মাধ্যমে সংসারে অর্থলাভ করার উপায় জানা যেত। অপরা বিদ্যালাভ করার পর বেশিরভাগ শিক্ষার্থী গার্হস্থ আশ্রম বা সংসারজীবনে প্রবেশ করত। প্রাচীন ভারতে প্রয়োগিক বা ব্যবহারিক বিদ্যাদান করা হতো শিক্ষার্থীকে যাতে সে তার বিদ্যাকে প্রয়োগ করে নিজে স্বাবলম্বী হতে পারে। তাই সে সময় শিক্ষার্থীরা যাতে সমাজের উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে সেই ভাবেই তাদের গড়ে তোলা হতো। এবার আমরা জানব শিক্ষার্থীরা বিদ্যার্জনের পরে কী করত সেই ব্যাপারে।
বিদ্যার্জন সমাপ্ত হলে শিষ্যরা স্নান করে এসে গুরুকে প্রণাম করতেন। গুরু তখন তার শিষ্যদের আশীর্বাদ করতেন এবং উপদেশ দিতেন যে তারা যা যা বিদ্যার্জন করেছে তা যেন যথাযথভাবে কাজে লাগায়। ছাত্ররা ওই বিশেষ দিনটিতে বিশেষ উদ্দেশ্যে স্নান করার পর ‘স্নাতক’
আজকের দিনে ইংরেজিতে যাকে বলে গ্র্যাজুয়েশন’আর স্নান করার পরে গুরুর দ্বারা ছাত্রদের ওই বিশেষ আশীর্বাদ প্রাপ্তির অনুষ্ঠানকে বলা হতো ‘সমাবর্তন’ (আজকের দিনে ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ‘কনভোকেশন)। তবে, বর্তমান ভারতের স্নাতক ও সমাবর্তন অনুষ্ঠান প্রাচীন আমলের স্নাতক ও অনুষ্ঠানের একেবারেই অমিল।
এবার আসি প্রাচীন ভারতের নারী শিক্ষা প্রসঙ্গে। প্রথমেই বলে নিই, যে যাই বলুন না কেন প্রাচীন ভারতে নারী ও পুরুষের সম-অধিকার ছিল এবং লিঙ্গ-বৈষম্য বা নারী-পুরুষ ভেদাভেদ বলে কিছু ছিল না, বরঞ্চ প্রাচীন ভারতে নারীদের অতি উচ্চস্থান ছিল। সংগীত, নৃত্যে ও বাদ্যে প্রাচীন ভারতীয় নারীরা অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। নারীরা বয়ন, সূচিশিল্প ও চারুশিল্প নিয়ে অধ্যয়ন করতেন। ছাত্রীরা গুরুগৃহ থেকে বেদ, বেদান্ত, উপনিষদ ইত্যাদি পাঠ করত। ভবভূতি তার উত্তররামচরিত’-এ লিখেছেন যে আত্রেয়ী বাল্মীকির আশ্রমে লব কুশের সঙ্গে বেদান্ত পড়েছিলেন। তৎকালীন নারীরা অধ্যাপনা এবং পুস্তক রচনাও করতেন এমনকী যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করতেন। আসলে, বৈদিক সমাজে বাল্যবিবাহ বলে কিছু ছিল না। আর অথর্ববেদ থেকে তথ্য পাই যে ছাত্রজীবন শেষ না হলে কুমারীদের বিবাহ করার অধিকার ছিল না। জানা যায় যে, প্রাচীন ভারতে নারীরা ব্রহ্মবিদ্যা সম্পর্কিত গৃঢ় আলোচনা ও বিতর্কসভায় অংশ নিতেন এমনকী কেউ কেউ মন্ত্রদ্রষ্টাও ছিলেন অর্থাৎ তারা মন্ত্রের পরম তত্ত্ব প্রত্যক্ষলাভ করেছিলেন। এতটাই উন্নত ছিল প্রাচীন ভারতের নারী সমাজ ও নারী শিক্ষা। আর প্রাচীন ভারতে গার্গী, মৈত্রী, আত্রেয়ীর মতো বিদুষীদের আমরা দেখতে পাই।
নীরস নোটস লিখিয়ে শিক্ষার্থীদের ‘তোতাপাখি’তৈরি করা প্রাচীন ভারতের শিক্ষা ধারার উদ্দেশ্য ছিল না। বরং প্রকৃত শিক্ষার্জনের সঙ্গে সঙ্গে যাতে শিক্ষার্থীরা সঠিক চরিত্র গঠন লাভ করে, আত্মসংযম ও আত্মবিশ্বাস যাতে বৃদ্ধিলাভ করে, সামাজিক কর্তব্যবোধ যাতে তারা পালন করতে পারে এবং শিল্প-সংস্কৃতির ধারাকে যাতে অব্যাহত রাখতে পারে বা শিল্প-সংস্কৃতি যাতে তাদের হাতে অক্ষুন্ন থাকে ইত্যাদি সব বিষয় নজর দেওয়াও শিক্ষারই নিরবচ্ছিন্ন অংশ হিসেবে ধরা হতো। প্রাচীন ভারতের শিক্ষা পদ্ধতির ফলে শিক্ষার্থীরা যে মনুষ্যত্বলাভ এবং সুচরিত্র লাভ করেছিল তা ভারতের নানা পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক কাহিনিতে তো পাওয়াই যায় এমনকী বিদেশি পর্যটকদের রচনাতেও তা প্রতিফলিত হয়। উদাহরণ হিসেবে দেখতে পাই যে, খ্রিস্টপূর্বাব্দে যেসব স্বনামধন্য বিদেশি পর্যটকরা এসেছিলেন। যেমন মেগাস্থিনিস, পিলনি, স্টাবো তাদের কথায় ভারতীয়রা সাধারণত মিথ্যা কথা বলতো না, ওই সময় চোর-ডাকাতের উপদ্রব ছিল না বললেই হয়, একে অপরের প্রতি ছিল অটুট বিশ্বাস আর এসবের জন্যই হয়তো কোনোরূপ মামলা-মোকদ্দমার বিষয় ছিল না। পরবর্তীকালে সপ্তম শতাব্দীতে বিখ্যাত চৈনিক পর্যটক হিউয়েন সাঙ এবং তারও পরের ই-ভসি দুজনেই ভারতীয়দের নৈতিকতার বা নৈতিক জীবন-যাপনের প্রশংসা করে গেছেন। শতাব্দীর আগে পর্যন্ত সমস্ত বিদেশি পর্যটকরা ভারতীয়দের নীতিবোধ, আচার-আচরণ ও চরিত্র সম্পর্কে প্রশংসা করেছিলেন। এমনকী ঊনবিংশ শতাব্দীতে লর্ড মেকলে ১৮৩৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারী ব্রিটিশ পার্লামেন্টে 1661126614, “I have travelled across the length and breadth of India and I have not seen one person who is a beggar, who is a thief such wealth I have seen in this country, such high moral values, people of such caliber, that I do not think we would ever conquer this country, unless we break the very backbone of this nation, which is her spiritual and cultural heritage and therefore, I propose that we replace her old and ancient education system, her culture, for if the Indians think that all that is foreign and English is good and greater than their own, they will lose their selfesteem, their native culture and they will become what we want them, a truly dominated nation”
ইতিহাস ঘেঁটে আমরা বলতে পারি
এবার আসি প্রাচীন ভারতের নারী শিক্ষা প্রসঙ্গে। প্রথমেই বলে নিই, যে যাই বলুন না কেন প্রাচীন ভারতে নারী ও পুরুষের সম-অধিকার ছিল এবং লিঙ্গ-বৈষম্য বা নারী-পুরুষ ভেদাভেদ বলে কিছু ছিল না, বরঞ্চ প্রাচীন ভারতে নারীদের অতি উচ্চস্থান ছিল। সংগীত, নৃত্যে ও বাদ্যে প্রাচীন ভারতীয় নারীরা অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। নারীরা বয়ন, সূচিশিল্প ও চারুশিল্প নিয়ে অধ্যয়ন করতেন। ছাত্রীরা গুরুগৃহ থেকে বেদ, বেদান্ত, উপনিষদ ইত্যাদি পাঠ করত। ভবভূতি তার উত্তররামচরিত’-এ লিখেছেন যে আত্রেয়ী বাল্মীকির আশ্রমে লব কুশের সঙ্গে বেদান্ত পড়েছিলেন। তৎকালীন নারীরা অধ্যাপনা এবং পুস্তক রচনাও করতেন এমনকী যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করতেন। আসলে, বৈদিক সমাজে বাল্যবিবাহ বলে কিছু ছিল না। আর অথর্ববেদ থেকে তথ্য পাই যে ছাত্রজীবন শেষ না হলে কুমারীদের বিবাহ করার অধিকার ছিল না। জানা যায় যে, প্রাচীন ভারতে নারীরা ব্রহ্মবিদ্যা সম্পর্কিত গৃঢ় আলোচনা ও বিতর্কসভায় অংশ নিতেন এমনকী কেউ কেউ মন্ত্রদ্রষ্টাও ছিলেন অর্থাৎ তারা মন্ত্রের পরম তত্ত্ব প্রত্যক্ষলাভ করেছিলেন। এতটাই উন্নত ছিল প্রাচীন ভারতের নারী সমাজ ও নারী শিক্ষা। আর প্রাচীন ভারতে গার্গী, মৈত্রী, আত্রেয়ীর মতো বিদুষীদের আমরা দেখতে পাই।
নীরস নোটস লিখিয়ে শিক্ষার্থীদের ‘তোতাপাখি’তৈরি করা প্রাচীন ভারতের শিক্ষা ধারার উদ্দেশ্য ছিল না। বরং প্রকৃত শিক্ষার্জনের সঙ্গে সঙ্গে যাতে শিক্ষার্থীরা সঠিক চরিত্র গঠন লাভ করে, আত্মসংযম ও আত্মবিশ্বাস যাতে বৃদ্ধিলাভ করে, সামাজিক কর্তব্যবোধ যাতে তারা পালন করতে পারে এবং শিল্প-সংস্কৃতির ধারাকে যাতে অব্যাহত রাখতে পারে বা শিল্প-সংস্কৃতি যাতে তাদের হাতে অক্ষুন্ন থাকে ইত্যাদি সব বিষয় নজর দেওয়াও শিক্ষারই নিরবচ্ছিন্ন অংশ হিসেবে ধরা হতো। প্রাচীন ভারতের শিক্ষা পদ্ধতির ফলে শিক্ষার্থীরা যে মনুষ্যত্বলাভ এবং সুচরিত্র লাভ করেছিল তা ভারতের নানা পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক কাহিনিতে তো পাওয়াই যায় এমনকী বিদেশি পর্যটকদের রচনাতেও তা প্রতিফলিত হয়। উদাহরণ হিসেবে দেখতে পাই যে, খ্রিস্টপূর্বাব্দে যেসব স্বনামধন্য বিদেশি পর্যটকরা এসেছিলেন। যেমন মেগাস্থিনিস, পিলনি, স্টাবো তাদের কথায় ভারতীয়রা সাধারণত মিথ্যা কথা বলতো না, ওই সময় চোর-ডাকাতের উপদ্রব ছিল না বললেই হয়, একে অপরের প্রতি ছিল অটুট বিশ্বাস আর এসবের জন্যই হয়তো কোনোরূপ মামলা-মোকদ্দমার বিষয় ছিল না। পরবর্তীকালে সপ্তম শতাব্দীতে বিখ্যাত চৈনিক পর্যটক হিউয়েন সাঙ এবং তারও পরের ই-ভসি দুজনেই ভারতীয়দের নৈতিকতার বা নৈতিক জীবন-যাপনের প্রশংসা করে গেছেন। শতাব্দীর আগে পর্যন্ত সমস্ত বিদেশি পর্যটকরা ভারতীয়দের নীতিবোধ, আচার-আচরণ ও চরিত্র সম্পর্কে প্রশংসা করেছিলেন। এমনকী ঊনবিংশ শতাব্দীতে লর্ড মেকলে ১৮৩৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারী ব্রিটিশ পার্লামেন্টে 1661126614, “I have travelled across the length and breadth of India and I have not seen one person who is a beggar, who is a thief such wealth I have seen in this country, such high moral values, people of such caliber, that I do not think we would ever conquer this country, unless we break the very backbone of this nation, which is her spiritual and cultural heritage and therefore, I propose that we replace her old and ancient education system, her culture, for if the Indians think that all that is foreign and English is good and greater than their own, they will lose their selfesteem, their native culture and they will become what we want them, a truly dominated nation”
ইতিহাস ঘেঁটে আমরা বলতে পারি
প্রাচীন এথেন্সে সক্রেটিস গুরুশিষ্য পদ্ধতির মাধ্যমে যে ব্যক্তিগত শিক্ষা পদ্ধতি চালু করেছিলেন,এরই হাজার বছর পূর্বে বৈদিকযুগে এই পদ্ধতির বিকাশ ঘটেছিল। চিত্রকলা ও লিখন উপকরণ সামগ্রি প্রচলনের প্রারম্ভিক সময়ে আর্য ঋষিগণ উদ্ভব করেছিলেন গুরুর মাধ্যমে শিক্ষাদান পদ্ধতি। এটির উদ্দেশ্য ছিল গুরু ও শিষ্যের মধ্যে একটি আদর্শ সম্পর্ক সৃষ্টি এবং পরিমিত পারিবারিক বোধের মাধ্যমে শিষ্যদের নতুন জীবন দান।প্রাচীন ভারতবর্ষ বিজ্ঞান, গণিত, চিকিৎসাবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন এবং সাহিত্য-সহ বিদ্যার সমস্ত বিভাগে যে বিপুল উন্নতিলাভ করেছিল তা সত্যিই বিস্ময়কর। প্রাচীন ভারতে এমন সব বিজ্ঞানী, দার্শনিক, চিকিৎসক, যোদ্ধা, সাহিত্যিক ইত্যাদি দিকপালদের পেয়েছিলাম যা সত্যিই আমাদের তাক লাগিয়ে দেয় এবং এটা স্পষ্টভাবে বোঝাই যায় যে পৃথিবীর কোনো দেশই প্রাচীন ভারতের মতো এত উন্নত ছিল না। যতগুলি প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল ভারতীয় সভ্যতা ছিল তাদের মধ্যে উন্নত। বিভিন্ন বিষয় বা শাস্ত্রে প্রাচীন ভারতীয়দের কৃতিত্ব বা অবদান সম্পর্কে বলতে গেলে গোটা একটা বৃহৎ পুস্তক রচিত হলেও তা হয়তো শেষ হবে না। একাধিক বিষয়ে অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তিও বিরল নয় প্রাচীন ভারতে। এই প্রাচীন ভারতবর্ষেই আমরা দেখেছি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় , বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় , তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি বিশ্বের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এইসব শিক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলি, বলাবাহুল্য, বর্তমান দেশের এমনকী বিশ্বেরও তাবড় তাবড় নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়কেও হার মানাতে পারে। প্রাচীন ভারতের এই সর্বিক উন্নয়নের পেছনে নিঃসন্দেহে রয়েছে সেসময়ের শিক্ষাপদ্ধতি যা এতই সুপরিকাঠামো যুক্ত, সুচিন্তিত ছিল যে পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে তা দেখা যায়নি এবং আজও হয়তো দুর্লভ। আর এই প্রাচীন ভারতীয় আশ্রমভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থাই গত শতাব্দীর গোড়ায় রবীন্দ্রনাথ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তার শান্তিনিকেতনে। এখানে উল্লেখ্য যে, রবীন্দ্রনাথ ছিলেন প্রবলভাবে প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি মনে-প্রাণে চাইতেন শহরের রুক্ষ চার দেওয়ালের আবদ্ধে শিক্ষাদান নয়, এবং প্রাচীন ভারতবর্ষের মতো প্রকৃতির সঙ্গে শিক্ষার্থীর মনের এক মিলন ঘটানো।
¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥
No comments:
Post a Comment