সৈয়দ মুজতবা আলী
সবচেয়ে বিখ্যাত ও তাঁর প্রথম বই, দেশে বিদেশে রচনার নেপথ্যে দুটি ঘটনা নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছিল । ১.ভ্রাতুষ্পুত্রী জাহানারার প্রেরণা ও ২.বন্ধু বীরভদ্র রাও-এর প্ররোচনা।
একবার ঘটনাক্রমে সিলেটে মুজতবা আলীর সঙ্গে আবু সয়ীদ আইয়ুবের প্রথম পরিচয় হয়েছিল। তখন দুজনেই বয়সের দিক থেকে নিতান্ত কিশোর। ১৯৪৫ সালে কাবুল-জার্মানি ফেরতা ও বরোদার চাকরি ছেড়ে আসা মুজতবা আলী শুধু লেখালেখি করে জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে কলকাতায় খানিক থিতু হওয়াতে দুজনের মধ্যে ফের একটি যোগাযোগ তৈরি হলো। বরোদা থেকে কলকাতায় আসার পর আইয়ুবের ৫ নম্বর পার্ল রোডের বাড়িতেই আশ্রয় নিলেন মুজতবা। তবে আইয়ুবের নিজের স্বাস্থ্যও তখন খুব ভালো যাচ্ছিল না। এর মধ্যে ছেচল্লিশের দাঙ্গা কলকাতা শহরকে তছনছ করে দিয়ে গেছে। এমন সময় আইয়ুবের দেহে যক্ষ্মা ধরা পড়লো। অতএব আইয়ুবের চিকিৎসার জন্য ছোটাছুটি আরম্ভ করতে হলো মুজতবাকেই। চিকিৎসকরা একসময় সুস্থতার জন্য হাওয়া বদলের পরামর্শ দিলেন। অস্থির পরিস্থিতির মধ্যেই মুজতবা বন্ধু আইয়ুবকে নিয়ে ছুটলেন দাক্ষিণাত্যের মদনপল্লীর বিখ্যাত স্যানেটোরিয়ামে। আইয়ুব সেখানকার উত্তম পরিবেশে কয়েকমাস থেকে আরোগ্য লাভ করলেন বেশ দ্রুততার সাথেই। সুস্থ হয়ে আইয়ুব কলকাতায় ফিরে গেলেও মুজতবা দক্ষিণ ভারত ভ্রমণের জন্য সেখানেই থেকে গেলেন। চললেন রমণ মহর্ষির অরুণাচল আশ্রমে। সেখানে বেশকিছু দিন থাকবার পর যান তাঁর আরেক বন্ধু, অন্ধ্রপ্রদেশের বীরভদ্র রাওয়ের বাড়িতে। তৎকালীন মাদ্রাজের এক সমুদ্রসৈকতের ধারে ছিল বীরভদ্রের গৃহ। সমুদ্রতটের চিত্র দেখে তাঁর দিন মন্দ কাটছিল না। ওই সময়ের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি এভাবে: ‘মাদ্রাজের বেলাভূমিতে…সমুদ্রের ওপারে চমৎকার সূর্যোদয় হয়। সূর্যাস্ত অবশ্য সমুদ্রগর্ভে হয় না। অর্থাৎ পূর্বাকাশে যে রঙে রঙে রঙিন চিত্রলেখা অঙ্কিত হয় সেটি কারো দৃষ্টি এড়াতে পারে না। আমি মাঝে মাঝে তারই বর্ণনা আপন ডাইরিতে লিখি। বীরভদ্র রাওকে মাঝে মধ্যে পড়ে শোনাই…।’
বীরভদ্র রাওকে সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর আপন খাতার লেখালেখি পড়ে শোনাচ্ছেন অগ্রপশ্চাৎ না ভেবেই– এই ঘটনার পরম্পরা থেকেই যে একদিন বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য রত্ন প্রকাশের মুখ দেখবে তা কি কেউ জানতো? সমুদ্রতটের দৃশ্য পাশে রেখে একদিন মুজতবা ডায়েরি থেকে পাঠ করছিলেন, বীরভদ্র তা শুনতে শুনতে হঠাৎ একটি সুদৃশ্য খাতা ও একটি কলম তাঁকে এনে দিয়ে বললেন, ‘সূর্যোদয় সূর্যাস্তের স্কেচ অর্থাৎ বর্ণনা তো এঁকেছো বিস্তর; এবার একটি পূর্ণাঙ্গ কেতাব লেখো।’
মুজতবা তখনই তাঁর প্রথম বাংলা বই, মূলত তাঁর কাবুলবাসের স্মৃতি, দেশে বিদেশে লেখা আরম্ভ করলেন। লিখতে গিয়ে তাঁর মনে পড়লো ভাতিজি জাহানারার কথা। তাঁর বড়ভাইয়ের প্রথম সন্তান। তিনি নাকি বলতেন, তাঁর ছোট চাচা শুধু কথা বলাতেই ওস্তাদ, ‘মুখে হাই জাম্প আর লং জাম্প’ কিন্তু পারলে একখানা আস্ত বই লিখে যদি দেখাতেন! তাহলে না হয় বলা যেতো চাচা কিছু একটা করেছেন জীবনে। এই ভাতিজিটি মুজতবার বড় স্নেহের পাত্রী ছিলেন। তাঁর মেধার কদর করতেন তিনি। পাণ্ডুলিপি সমাপ্ত হবার পর তাঁকে দেখাবেন এই ভেবে সেটা সাথে নিয়ে চললেন সিলেট। কিন্তু ১৯৪৭-এর ২২ অক্টোবর সিলেটে পৌঁছানোর পর শুনলেন জাহানারা সেখানে এখন নেই। তাঁর স্বামী হামিদ আলী চৌধুরী সরকারি ম্যাজিস্ট্রেট, বদলির চাকরি, এবারে যেতে হবে কক্সবাজারে। চট্টগ্রাম থেকে জাহাজে যাবার বন্দোবস্ত। দুদিন পর এলো এক ভয়াবহতম দুঃসংবাদ। কক্সবাজারে স্টিমার ডুবে গিয়ে জাহান আরা ও তাঁর স্বামী মৃত্যুবরণ করেছেন, সঙ্গে থাকা দুই শিশুপুত্রও প্রাণে বাঁচেনি। এমনকি তাঁদের মরদেহের সন্ধানও পাওয়া যায়নি। এই শোকে সৈয়দ মুজতবা আলী পাগলের মতো হয়ে পড়েছিলেন। পরে মুজতবা লিখেছিলেন, এই শোক তাঁর ‘কলিজায় এখনো তাজা দগদগে ঘা হয়ে আছে’। পরে বই আকারে প্রকাশিত হলে দেশে বিদেশে উৎসর্গিত হয় ‘জিন্নতবাসিনী জাহান-আরার স্মরণে’।
পরে কথাপ্রসঙ্গে তিনি জাহানারা ও দেশে বিদেশে প্রসঙ্গে দীর্ঘ স্মৃতিচারণ করেছিলেন গোলাম মোস্তাকীমের নিকট, সেই আলাপের কিছু অংশ এরকম:
‘সাহিত্যের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে তার সঙ্গে আমার আলাপ-আলোচনা হতো। তার সঙ্গে তর্ক করে আমি কখনোই জিততে পারিনি। আমি সারা দুনিয়ায় দেশি-বিদেশি অনেক বুদ্ধিমতী মহিলা দেখেছি। কিন্তু তোমাকে আমি হলফ করে বলতে পারি জাহানারার মতো বুদ্ধিমতী মহিলা আমি জীবনে দুটি দেখিনি। ওর যদি অল্প বয়সে বিয়ে না হতো এবং তার যদি ঐরকম অকাল মৃত্যু না হতো তাহলে সে জীবনে অনেক কিছুই করতে পারতো। …আমার ভাইবোনদের মধ্যে কেউ কেউ বললেন, সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র দুর্ভাগ্যের কারণে জাহানারা কোনো কীর্তি রেখে যেতে পারল না। সবাই হয়তো একদিন তাকে ভুলে যাবে। কাজেই ‘দেশে বিদেশে ’ জাহানারাকে উৎসর্গ করলে এর পাঠক-পাঠিকারা অন্তত জাহানারাকে মনে রাখবে। কথাটা আমার মনে খুব লাগলো। ‘দেশে বিদেশে ’ জাহানারাকে উৎসর্গ করতে আমি সম্মতি দিলাম। কিন্তু মোটের উপর ইট ওয়াজ আ ফ্যামিলি ডিসিশান। …তবে আমার বলতে কোনো দ্বিধা কিংবা সংকোচ নেই যে, ‘দেশে বিদেশে’ লেখার পেছনে জাহানারা আমাকে খুব প্রেরণা জুগিয়েছিল। …কাজেই জাহানারা বেঁচে থাকলে বইটা লিখেই আমি দেশে ছুটে গিয়ে তাকে বলতাম, ‘এই দেখ আমি একটা বই লিখেছি। এবার দেখি তুই কী বলিস?’ কিন্তু জাহানারার অকাল মৃত্যু আমাকে সে সুযোগ দিলো না। জীবিতাবস্থায় আমি সবসময় তার কাছে হারতাম, মরেও সে আমাকে হারিয়ে দিয়ে গেল। এবং আমার বিশ্বাস ছোট চাচার বই ছাপা হতে দেখলে সে খুবই খুশি হতো।’
অন্তরে একরাশ শোক নিয়েই মুজতবা কলকাতা ফিরলেন। ফিরে দেশে বিদেশে র পাণ্ডুলিপি গুছিয়ে আনলেন অনেকটা। মাঝেমধ্যে পার্ল রোডের বাড়িতে আগত বন্ধু-সুহৃদ অনুজদের অংশবিশেষ পড়েও শোনাতেন। আবার প্রতিবেশী লেখিকা সুস্মিতা ইসলামকে ডেকে এনে তাঁকে অনুরোধ করতেন, দেশে বিদেশে থেকে পাঠ করে তাঁকে শোনাতে। কারণ তিনি মনে করতেন, অন্যের কণ্ঠে নিজের লেখা শুনলে নাকি পাণ্ডুলিপি সম্পাদনার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়। পরে প্রস্তুত পাণ্ডুলিপি একদিন বন্ধু-সতীর্থ-শুভানুধ্যায়ীদের সবাইকে ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পড়ে শোনানোর আয়োজন করলেন ওই বাড়িতে, আবু সয়ীদ আইয়ুবের ফ্ল্যাটে। পাণ্ডুলিপি পড়ে শোনাবার পর বন্ধুরা যারপরনাই মুগ্ধ হয়েছিলেন।
এছাড়া এর আগেই তিনি পূর্ণাঙ্গ পাণ্ডুলিপি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর দুই বন্ধু–আবু সয়ীদ আইয়ুব ও ফজলুল হককে(৩৩ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন, মুজতবা তাঁর এই বন্ধুর প্রতিভার কদর করতেন খুব) পড়তে দিয়েছিলেন। এই দুজনের মতামতের ওপর মুজতবার খুব আস্থা ছিল। দুজনই পাণ্ডুলিপি পড়ে খুশি হয়েছিলেন, এবং তা দ্রুত ছাপানোর ব্যবস্থা করার জন্য তাগাদা দিয়েছিলেন । দেশে বিদেশে রচনা ও পাণ্ডুলিপি প্রস্তুতের এই সময়কাল নিয়ে কথাসাহিত্যিক রশীদ করীমের ভাষ্য এখানে উদ্ধৃত করা যেতে পারে(উল্লেখ্য, তিনি তখন কলকাতাতেই থাকতেন):
“দেশে বিদেশে লিখছেন মুজতবা সাহেব। প্রতিদিন কিছু লেখেন তিনি আর আমরা গোল হয়ে বসে শুনি। আইয়ুবও তাঁর সুনির্বাচিত গ্রন্থলোকের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে সেই পাঠসভায় বসতেন। বইয়ে পড়েছি, চার্লস ডিকেন্স স্বকণ্ঠে তাঁর উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি শোনাতেন এবং শ্রোতাদের জন্য তাই হয়ে থাকতো এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। কথাটা যে বিশ্বাসযোগ্য, মুজতবা সাহেবের শ্রোতারা তা জানেন।”
কানাইলাল সরকার এবারে বললেন, পাণ্ডুলিপিটি দেশ পত্রিকায়, সাগরময় ঘোষের কাছে পাঠাতে। পরে তিনি নিজ হাতে সাগরময় ঘোষের কাছে এই পাণ্ডুলিপি পৌঁছে দিয়েছিলেন। সাথে এই অনুরোধ জানিয়েছিলেন, যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধারাবাহিক রচনা হিসেবে লেখাটি ছাপতে দেওয়া হয়।
যেদিন দেশে বিদেশে র পাণ্ডুলিপি পৌঁছায় সাগরময় ঘোষের হাতে, সময়টা ১৯৪৮ সালের মার্চ মাস, সেদিন তিনি লেখার গুণে মুগ্ধ হয়ে আক্ষরিক অর্থেই হুমড়ি খেয়ে সেটি পড়ছিলেন। তাতে করে আশেপাশের অভ্যাগতদের দিকে তেমন একটা মনোযোগ দিতে পারছিলেন না। এই দৃশ্য দেখে তখন তাঁর দপ্তরে উপস্থিত লেখক সুশীল রায় কিঞ্চিৎ শ্লেষোক্তি করে বলেছিলেন, ‘রাবীন্দ্রিক ধাঁচের হাতের লেখার পাণ্ডুলিপি কিনা, তাই এত মনোযোগ। আমাদের দিকে আর চোখ তুলে তাকাবার ফুরসত হচ্ছে না।’ তারপর এ কথা সে কথার মাঝে কথাশিল্পী বিমল মিত্র সাগরময় ঘোষের কাছে জানতে চাইলেন, ‘রাবীন্দ্রিক হাতের লেখার যে বিরাট পাণ্ডুলিপিটার উপর আপনি এতক্ষণ হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন সে বস্তুটি কী জানতে পারি?’ সাগরময় চটজলদি উত্তর দিলেন এক শব্দে, ‘ভ্রমণকাহিনি’। সুশীল রায় তথ্যটি জেনে ফের ফুট কাটলেন, মূলত উপন্যাস-লেখক বিমল মিত্রের চিন্তা তাহলে কমলো, তাঁর অন্তত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী-প্রাপ্তির শঙ্কা নেই! সাগরময় ঘোষ এ কথা শুনে বললেন, ‘এ লেখার জাতি-পাঁতি স্বতন্ত্র। উপন্যাস এর ধারে কাছে লাগে না।’ এই কথা শুনে উপস্থিত সকলের বড় বড় চোখে একরাশ বিস্ময়ভরা প্রশ্ন জেগে উঠলো, লেখকটি কে?’ সাগরময় ঘোষ লেখকের পরিচয় জানালেন, এরপর আরো বললেন, মুজতবা শান্তিনিকেতনসূত্রে তাঁর অগ্রজ, তাই ‘সৈয়দদা’ বলে তাঁকে সম্বোধন করে থাকেন। সুশীল রায় ফের খোঁচা মারলেন, ‘তা হলে তো আর কিছু বলা যাবে না। একে রাবীন্দ্রিক হস্তাক্ষর তদুপরি শান্তিনিকেতনিক। এ লেখা তো অবশ্য প্রকাশিতব্য।’ সাগরময় ঘোষ চটে না গিয়ে জবাব দিলেন, ‘আগামী সপ্তাহ থেকেই লেখাটি প্রকাশিত হবে। আপনারাই তখন বিচার করবেন লেখাটি প্রকাশিতব্য কিনা। তবে এটুকু আপনাদের বলে রাখছি, এই এক বই লিখেই ইনি বাংলা সাহিত্যে পাঠকচিত্ত জয় করবেন। …এ লেখায় পাণ্ডিত্যের সঙ্গে সাহিত্যরসের অপূর্ব যোগাযোগ দেখতে পাবেন..।’
বলাই বাহুল্য, সাগরময় ঘোষের কথা সত্যি হয়েছিল বর্ণে বর্ণে। দেশ পত্রিকায় দেশে বিদেশে র প্রথম কিস্তি প্রকাশিত হয় ১৯৪৮-এর ১৩ মার্চ তারিখে। প্রকাশের সাথে সাথে বাঙালি পাঠকমহলের দৃষ্টি গিয়ে পড়লো মুজতবা আলীর ওপর। সাগরময় ঘোষের কথায়, ‘এই এক লেখাতেই বাংলা সাহিত্যজগতে সৈয়দ মুজতবা আলীর আসন পাকা হয়ে গেল।’ আর এর শেষ কিস্তি প্রকাশ পায় একই বছরে, দেশ-এর ১৮ সেপ্টেম্বর সংখ্যায়। সম্পূর্ণ রচনাটি প্রকাশ হতে মোট ২৮ কিস্তি লেগেছিল। লেখাটির প্রকাশ সমাপ্ত হওয়াতে নিজের বেদনার কথা জানিয়ে এক পাঠক তাঁকে চিঠিও লিখেছিলেন, সেটি এরকম: ‘আপনার ‘দেশে বিদেশে ’ ‘দেশ’-এ শেষ হয়ে গেল দেখে অকস্মাৎ একটা শূন্যতা অনুভব করলাম। এরপর কয়েক সংখ্যা ‘দেশ’-এ আর আগ্রহ থাকবে কিনা সন্দেহ।…আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, আপনি রচনাটিকে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করুন। তাতে বাংলা সাহিত্যের গৌরব বাড়বে বৈ কমবে না।’
গ্রন্থাকারে দেশে বিদেশে প্রকাশের প্রাথমিক উদ্যোগ নেন পুনরায় সেই কানাইলাল সরকারই। মুজতবা প্রথমদিকে নিজের লেখা বই আকারে বের করতে খুব আগ্রহী ছিলেন না। মূলত কানাইলাল সরকারের নাছোড়বান্দা অনুরোধই তিনি শেষমেশ গ্রন্থ প্রকাশে সম্মতি দেন। ১৯৪৯ সালের এপ্রিলে কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের নিউ এজ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড থেকে প্রায় চারশ পাতার বইটি প্রকাশ পায়।
তবে দেশে বিদেশে প্রকাশ করতে গিয়ে পারিপার্শ্বিক কিছু ক্লেদাক্ত কারণে নিউ এজ প্রকাশনার কর্ণধার জানকীনাথ সিংহরায়কে মুশকিলে পড়তে হয়েছিল। পাণ্ডুলিপি তাঁর যারপরনাই পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু দেশভাগের প্রায় পর পর কলকাতার পরিস্থিতি অত্যন্ত উতপ্ত, দাঙ্গার রক্তাক্ত স্মৃতি জনমনে তখনও টাটকা, সাম্প্রদায়িক বিভাজনের অশুভ ছায়া চারদিকে। এমন অবস্থায় বইটি ছাপার পর কলেজ স্ট্রিটের বই-ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ এসে তাঁকে শাসিয়ে যান। তাঁর কথিত ‘দোষ’ একটিই, তিনি কেন ‘কোথাকার কোন এক মুসলমানের লেখা বই’ প্রকাশ করেছেন! তবে শত হুমকি সত্ত্বেও জানকীনাথ সিংহরায় অবিচল ছিলেন। আর ওই সময় পাশে থেকে তাঁকে ভরসা জুগিয়েছিলেন কথাশিল্পী-কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘যতদিন পৃথিবীর কোথাও বাংলা ভাষায় মানুষ বই পড়বে, ততদিন এই বইয়ের মৃত্যু নেই।’ প্রকাশক অবিচল থাকায় প্রথম প্রথম বইটি সেভাবে বিক্রি না হলেও কিছুদিন ঘুরতেই তা বেস্টসেলারে পরিণত হয়। এবং এখনও, প্রথম প্রকাশের প্রায় আশি বছর পার হবার পর, দেশে বিদেশে বছরে হাজার হাজার কপি বিক্রি হয় ঢাকা-কলকাতা মিলিয়ে।
(সংগৃহীত)
========{{{{{{{{{{{{{{{==={{{{{{{===={{{===
No comments:
Post a Comment