Thursday, 21 July 2022

স্মরণীয় প্রয়াণ দিবস। প্রাণতোষ ঘটক। মাসিক বসুমতী পত্রিকার সম্পাদক। Vol -805. Dt -22.07.2022. ৫ শ্রাবণ, ১৪২৯. শুক্রবার। The blogger in literature e-magazine

প্রাণতোষ ঘটক
 (২৪-৫-১৯২৩ – ২২-৭-১৯৭০)। 

কলিকাতার টাউন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করেন। এম.এ. ও আইন পড়তে পড়তে বসুমতী’ পত্রিকায় যোগ দেন। এই সময় গল্প ও উপন্যাস লিখতে শুরু করেন। রচিত ‘পঙ্গপাল’ গ্ৰন্থটি তাকে লেখকসমাজে প্ৰতিষ্ঠা দেয়।

 ‘মাসিক বসুমতী’র ভার নিয়ে তিনি পত্রিকাটির সম্পূর্ণ নূতন রূপ দেন এবং ঐ পত্রিকায় বাঙলাদেশের আধুনিক ও প্রতিষ্ঠিত অনেক লেখক ও শিল্পীদের আমন্ত্রণ করে আনেন। 


সতীশচন্দ্র ছিলেন একজন গোড়া হিন্দু ও রামকৃষ্ণ ভক্ত| স্বাভাবিক ভাবেই শাস্ত্র ও ধর্ম সম্বন্ধীয় বহু নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে 'মাসিক বসুমতী'তে| সতীশচন্দ্রের মৃত্যু হয় ১৩৫১-এর ১৩ই বৈশাখ| তার মৃত্যুর পর সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন সাহিত্যিক অধ্যাপক যামিনীমোহন কর| সহযোগী হিসাবে পেয়েছিলেন সতীশচন্দ্রের জামাতা প্রাণতোষ ঘটককে| এই সময়ে পত্রিকার একটি দিক পরিবর্তন ঘটে| নতুন যুগের লেখকদের লেখা অনেক বেশী সংখ্যায় ছাপা হতে থাকে|

কবিতা লিখেছেন জীবনানন্দ, বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সজনীকান্ত দাস, অমিয় চক্রবর্তী, বিষ্ণু দে এবং আরও অনেকে| উপন্যাস বেরিয়েছে গজেন্দ্রকুমার মিত্রের 'রাত্রির তপস্যা' ; সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের 'স্রোত বহে যায়' ; প্রতিভা বসুর 'সেতুবন্ধ' ; বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের 'স্বর্গাদপি গরিয়সী' ; তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ঝড় ও ঝরাপাতা' ; পঞ্চানন ঘোষালের 'রক্তনদীর ধারা' ; মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'নগরবাসী', 'মাটি' ; রঞ্জনের (নিরঞ্জন মজুমদার) 'শীতে উপেক্ষিতা' ও 'অন্তরা' ; বিক্রমাদিত্যের (অশোক গুপ্ত) 'দেশে দেশে' ; আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের 'পঞ্চতপা' ও 'নার্স মিত্র' ; সতীনাথ ভাদুড়ীর 'মীনাকুমারী' প্রভৃতি| যাযাবরের (বিনয় মুখোপাধ্যায়) বিখ্যাত উপন্যাস 'দৃষ্টিপাত' প্রকাশিত হতে থাকে ১৩৫২-এর শ্রাবণ সংখ্যা থেকে| গল্প লিখেছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, খগেন্দ্রনাথ মিত্র, অন্নদাশঙ্কর রায়, নরেন্দ্র মিত্র, হেমেন্দ্রকুমার রায়, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ| প্রবন্ধ লিখেছেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈয়দ মুজতবা আলী, মেঘনাদ সাহা ও অন্যান্য বহু বিশিষ্ট লেখক| সুভাষচন্দ্র বসুর কিছু মূল্যবান লেখা স্থান পেয়েছে ১৩৫২-এর শ্রাবণ সংখ্যায়|

কিছু কিছু অনুবাদও বেরিয়েছে, যেমন 'দি গুড আর্থ'-এর অনুবাদ করেছেন শিশিরকুমার সেনগুপ্ত ও জয়ন্ত কুমার ভাদুড়ী; লু রচিত 'কুঙ ই-চি' অনুবাদ করেছেন পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়; এডগার এলেন পো-র 'একটি অদ্ভুত ঘটনা' -অনুবাদক অজিত কুমার গঙ্গোপাধ্যায়; নিখিল সেন অনূদিত জেমস জয়েসের লেখা অবলম্বনে 'প্রথম প্রেম'; উইলিয়ম ফকনারের 'সন্ধ্যাসূর্য্য'-অনুবাদক মৃণালকান্তি মুখোপাধ্যায়|

যামিনীমোহনের সম্পাদনাকালে কিছু নতুন বিভাগের সূচনা হয়েছে, যেমন 'রঙ্গপট', 'অঙ্গন ও প্রাঙ্গণ', 'পত্রগুচ্ছ' ইত্যাদি| যে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ‘মাসিক বসুমতী’-র এক সময়ে দূরত্ব তৈরী হয়েছিল; যামিনীমোহন কর ও প্রাণতোষ ঘটকের সম্পাদনার শেষের দিকে রবীন্দ্রনাথের রচনা আবার পত্রিকায় স্থান পেয়েছে| ১৩৫৪-এর বৈশাখে ছাপা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের গান ‘আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণ ধূলার তলে’, রবীন্দ্রনাথের প্রদত্ত ভাষণের অমিয় চক্রবর্ত্তী কর্ত্তৃক শ্রুতিলিখিত অপ্রকাশিত রচনা ‘মানব সাধনা’| বৈশাখ সংখ্যাতেই প্রকাশিত হয়েছে ক্ষিতিমোহন সেনের প্রবন্ধ ‘মানবতা-ধর্ম্ম ও রবীন্দ্রনাথ’| জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় বেরিয়েছে প্যারীমোহন সেনগুপ্তের প্রবন্ধ ‘রবীন্দ্রনাথ মহাকবি কি না’, আষাঢ় সংখ্যায় ‘অঙ্গন ও প্রাঙ্গণ’ বিভাগে প্রকাশিত হয়েছে কিরণশশী দে’র রচনা ‘রবীন্দ্রনাথের গান’; শ্রাবণ সংখ্যায় লেখা হয়েছে নৃপেন্দ্রগোপাল মিত্রের রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কবিতা ‘রবীন্দ্রনাথ’|

১৩৫৭ বঙ্গাব্দের আশ্বিন সংখ্যা থেকে প্রাণতোষ ঘটক একাই সম্পাদনার ভার গ্রহণ করেন| এই সময়ে কয়েকটি নাম করা ধারাবাহিক রচনা 'মাসিক বসুমতী'তে প্রকাশিত হয়| এর মধ্যে রয়েছে অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের 'পরমপুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ' ও 'পরমাপ্রকৃতি শ্রীশ্রীসারদামণি', 'অখণ্ড অমিয় শ্রীগৌরাঙ্গ' ; মনোজ বসুর 'চীন দেখে এলাম' ও 'সোবিয়েতের দেশে দেশে' ; সজনীকান্ত দাসের 'আত্মস্মৃতি' ; রাহুল সাংকৃত্যায়নের 'ভলগা থেকে গঙ্গা' (অনুবাদ) ; পরিমল গোস্বামীর 'স্মৃতিচিত্র' ; সম্পাদক প্রাণতোষ ঘটকের 'আকাশ পাতাল'|
১৩৬০-এর ভাদ্র সংখ্যা থেকে চালু হয় একটি অধ্যায় 'চারজন'| এর মাধ্যমে একটি প্রচেষ্টা ছিল চারজন কৃতী বাঙালীর সঙ্গে পাঠকবর্গের পরিচয় ঘটানো, যাদের সম্বন্ধে অনেকেরই হয় ত জানা নেই| আর একটি বিভাগ 'ছোটদের আসর' ছোট ছেলেমেযেদের কাছে খুবই প্রিয় ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল| এতে লিখতেন যাদুকর পি.সি.সরকার, হেমেন্দ্রকুমার রায়, ইন্দিরা দেবী, শৈল চক্রবর্ত্তী, হরিনারায়ন চট্টোপাধ্যায়, মণীন্দ্র দত্ত, যামিনীমোহন কর প্রমুখ|

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বেশ কিছু প্রবন্ধ এই সময়ে প্রকাশিত হয়েছে; যেমন জয়দেব রায়ের 'রবীন্দ্রনাথ ও পাশ্চাত্ত্য সঙ্গীত' (চৈত্র, ১৩৫৭) ; তারাপদ মুখোপাধ্যায়ের 'রবীন্দ্রনাথ ও সাহিত্যের বাস্তবতা' (ভাদ্র, ১৩৬০) ; সুধাকর চট্টোপাধ্যায়ের 'রবীন্দ্রনাথ ও অসমীয়া সাহিত্য' (চৈত্র, ১৩৬৭) ; শশীভূষণ দাশগুপ্তের 'টলস্টয়, গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ' (আষাঢ়, শ্রাবণ, ১৩৬৮) ; ডঃ নরেশচন্দ্র ঘোষের 'রবীন্দ্রনাথের স্বদেশচিন্তা' (কার্ত্তিক, ১৩৬৮) ; চিত্তরঞ্জন দেবের ''য়েট্‌স ও রবীন্দ্রনাথ' (মাঘ, ১৩৭২) প্রভৃতি|

'মাসিক বসুমতী'র কয়েকটি বিভাগের উল্লেখ করতেই হয়| একটির উল্লেখ আগেই করা হয়েছে, সেটি হল 'অঙ্গন ও প্রাঙ্গণ'| এখানে শুধু মহিলা লেখকেরাই বিভিন্ন বিষয়ে তাদের লেখা প্রকাশ করতেন| লেখিকাদের মধ্যে রয়েছেন - আশা দেবী, বেলারাণী দেবী, অমিয়া দেবী, ক্ষণপ্রভা ভাদুরী, সুলতা সেনগুপ্তা, কিরণশশী দে, রুচিরা বসু, আশাপূর্ণা দেবী, শান্তি দেবী, বিভাবতী বসু প্রমুখ| অবশ্য এরা পরবর্তী কালে সবাই যে সাহিত্যক্ষেত্রে খুব প্রাসঙ্গিক ছিলেন এমন নয়| অন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হল 'আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি' ও 'সাময়িক প্রসঙ্গ'| 'সাময়িক প্রসঙ্গে' সমসাময়িক উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পরিবেশিত হত| বিখ্যাত ব্যক্তিদের পরলোক গমনের খবরও সংযোজিত হত মাঝে মাঝে, সঙ্গে থাকত সংক্ষিপ্ত পরিচিতি| শোক সংবাদ পরিবেশনের জন্য 'অশ্রু-অর্ঘ্য' নামে একটি বিভাগ তৈরী হয়েছিল পরে| 'আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি'তে থাকত সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আলোচনা| অনেক মাসিক পত্রিকা তখন রাজনৈতিক-প্রসঙ্গ এড়িয়ে চলত, সম্ভবত সাহিত্য-পত্রিকার বিশুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য| হয় ত এ কারণেই 'মাসিক বসুমতী' বিশুদ্ধ সাহিত্য-পত্র হিসাবে অনেকের কাছে মর্য্যদা লাভ করে নি| হতে পারে, তবে কোন পাঠক যদি সাহিত্যের বিষয় ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ের রসাস্বাদন করতে বা বিশ্ব পরিস্থিতি সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী হতেন তবে 'মাসিক বসুমতী' ছিল অবশ্য পঠনীয় ও সংগ্রহযোগ্য| দৃষ্টান্ত স্বরূপ ‘সাময়িক প্রসঙ্গ’ ও ‘আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি’ - এই দুটি বিভাগে আলোচিত কিছু বিষয়ের উল্লেখ করা যেতে পারে| 'সাময়িক প্রসঙ্গে' আলোচিত কিছু বিষয় হল 'ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা' ; 'কলিকাতার মেয়র নির্ব্বাচন' ; ‘বোম্বাই ডকে বিস্ফোরণ’ ; ‘মংপুতে রবীন্দ্র স্মৃতিপূজা’ ; 'ফরিদপুর অনাথ আশ্রম' ; 'বাঙ্গালী-ছাত্রদের জন্য বৃত্তি' ; 'কাঁথি কলেজে সরকারী সাহায্য' ইত্যাদি| 'আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি'তে প্রকাশিত কিছু বিষয় হল 'আমেরিকা কোন পথে?' ; 'ইন্দোচীনের স্বাধীনতা সংগ্রাম' ; 'চীনের আর্থিক দুর্গতি' ; 'কোরিয়ার ভবিষ্যৎ' ; 'হিটলার কোথায়?' ; 'অর্থনীতিক দাসত্ব' ; 'পদানত ও অধিকৃত জার্মানী' ; 'কংগ্রেস ও গান্ধীজী' ইত্যাদি| সূচীপত্রে বিষয়-বিভাগের মাঝে মাঝেই পরিবর্তন ঘটত| 'আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি'র পরিবর্তে 'রাজনীতি প্রসঙ্গ' পরিবেশিত হয়েছে কোন কোন সময়ে| তবে প্রকাশনা কালের শেষের দিকে সূচীপত্র সম্বলিত পৃষ্ঠার মধ্যে বিজ্ঞাপনের উপস্থিতি পীড়াদায়ক।
বসুমতী সাহিত্য মন্দির'-এর প্রতিষ্ঠাতা উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় রামকৃষ্ণ ভক্তদের অন্যতম| ‘কথামৃত’তেও উপেন্দ্রনাথের নাম উল্লেখিত হয়েছে| তার পুত্র সতীশচন্দ্রও ছিলেন রামকৃষ্ণ ভক্ত| সঙ্গত ভাবেই ঠাকুর রামকৃষ্ণ বিষয়ক বহু রচনা পত্রিকাতে স্থান পেয়েছে| প্রাণতোষ ঘটকের সম্পাদনাকালে যেমন 'বসুমতী'র উল্লেখযোগ্য মানোন্নয়ন ঘটে, পত্রিকার জনপ্রিয়তা অধোগতি শুরু হয় কিন্তু তার সময় থেকেই| ১৩৭০ বঙ্গাব্দের কাছাকাছি সময়ে পত্রিকার উৎকর্ষও নিম্নমুখী হয়েছিল| এক সময়ে জনপ্রিয় লেখকেরা তাদের রচনা-সম্ভার দিয়ে যে পত্রিকাটি অলঙ্কৃত করেছিলেন - ছাপা হয়েছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আজকাল পরশুর গল্প' ; শৈলজানন্দের 'কয়লাকুঠি' ; যাযাবরের 'দৃষ্টিপাত' ; অচিন্ত্যকুমারের ‘পরমপুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ' ; শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'চুয়াচন্দন', 'রক্তসন্ধ্যা', 'সীমান্ত হীরা' এবং অন্যান্য বহু খ্যাতিমান লেখকদের সাড়া জাগানো গল্প ও উপন্যাস - কালের গতিতে সেই পত্রিকাটিই ক্রমশঃ স্তিমিত হয়ে পড়ে| জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে 'মাসিক বসুমতী'তে সন্নিবেশিত হয়েছে 'মাসিক রাশিফল', 'সচিত্র বোম্বাই সমাচার' প্রভৃতি বিভাগ, এমন কি যৌন বিজ্ঞান বিভাগটিও| ১৩৭৭-এর শ্রাবণ মাসে সম্পাদক প্রাণতোষ ঘটকের মৃত্যু ঘটে| পরবর্তী সম্পাদক হন বিজনকুমার সেন, কিন্তু পত্রিকার প্রচার সংখ্যা আর ঊর্দ্ধমুখী করা যায় নি|

সতীশচন্দ্রের একক সম্পাদনা কালে 'মাসিক বসুমতী' পত্রিকার নাম পরিবর্তিত হয়ে হয়েছিল 'সচিত্র মাসিক বসুমতী'| তবে এই নাম বরাবর পত্রিকায় ছাপা হয় নি, কিন্তু বিপুল সংখ্যক ছবি স্থান পেয়েছে প্রতি সংখ্যায়| চিত্রসূচীও বিষয়ানুক্রমিক সাজানো হয়েছে, কিন্তু প্রতি সংখ্যাতেই একই রকম বিভাগে বিভক্ত হয় নি| 'মাসিক বসুমতী' প্রকাশিত হত বর্ষ সংখ্যা অনুসারে প্রতি বর্ষে দুটি খণ্ড হিসাবে| বৈশাখ থেকে আশ্বিন প্রথম খণ্ড এবং কার্ত্তিক থেকে চৈত্র দ্বিতীয় খণ্ড| একটি বর্ষের প্রথম খণ্ডে প্রকাশিত চিত্রের বিভাগগুলি ছিল এই রকম - 'সুরঞ্জিত চিত্র' (১৮) ; 'দেবদেবীর চিত্র' (৪) ; 'দেশনায়কগণের চিত্র' (২৯) ; 'বিশিষ্টগণের চিত্র' (২৭) ; 'ভারতীয় নারীচিত্র' (২) ; 'বিভিন্ন দেশের নর-নারী' (১০৪) ; 'কাহিনীর চিত্র' (৭) ; 'ঐতিহাসিক চিত্র (১০) ; 'অভিনয়-চিত্র' (৮) ; 'বৃক্ষলতা চিত্র' (৯) ; প্রাণী-চিত্র' (৭) ; 'ব্যঙ্গচিত্র' (১) ; 'সাময়িক চিত্র' (১৯) ; 'বৈজ্ঞানিক চিত্র' (৭৫) ; ‘দৃশ্য চিত্র’ (যেমন রামকৃষ্ণ মন্দির, কাটমুণ্ডু সহর ইত্যাদি) (১৪৬)| অর্থাৎ ছ'টি সংখ্যায় প্রকাশিত চিত্র সংখ্যা ৪৬৬, তবে অধিকাংশই ফটোগ্রাফ| ছবি এঁকেছেন মিঃ টমাস, পূর্ণচন্দ্র চক্রবর্তী, কমলাকান্ত ঠাকুর, ইন্দুভূষণ সেন, হেমেন্দ্রকুমার মজুমদার, অতুল বসু, দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গোপাল ঘোষ, ঠাকুর সিং প্রমুখ চিত্রশিল্পী| মিঃ টমাস ও ঠাকুর সিং-এর অঙ্কিত কিছু চিত্র নিয়ে শালীনতা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে, যথারীতি 'শনিবারের চিঠি' প্রকাশ করেছে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য|

প্রাণতোষ ঘটকের মৃত্যুর পর অস্থায়ী সম্পাদক বিজনকুমার সেন অনেক চেষ্টা করেও 'মাসিক বসুমতী'র প্রকাশনা চালিয়ে যেতে পারেন নি| পত্রিকাটি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়| নানা বৈচিত্রের, বিভিন্ন ধরণের ও স্বাদের লেখা প্রকাশ করার জন্য মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় 'মাসিক বসুমতী'কে একটি 'অদ্ভুত সমন্বয় পত্রিকা' নামে চিহ্ণিত করেছেন; মনে হয় মূল্যায়নটি পত্রিকাটির চরিত্র বিশ্লেষণে যথার্থ| ধর্ম ও রাজনীতি, উদার ও রক্ষণশীল ইত্যাদি নানা বিপরীতধর্মী লেখা প্রকাশিত হয়েছে 'মাসিক বসুমতী'তে, যা সচরাচর দেখা যায় না| দীর্ঘ প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে বহু লেখকের সমাবেশ ঘটিয়ে নানা বিষয়ের রচনা প্রকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন রুচি ও মতাবলম্বী পাঠকদের মনোরঞ্জন করে 'মাসিক বসুমতী' সাময়িক পত্রের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে থাকবে। 


সম্পাদক প্রাণতোষ ঘটকের
রচিত উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ:
 ‘আকাশ পাতাল’, 
‘রাজায় রাজায়’, ‘
মুক্তাভস্ম’, 
‘খেলাঘর’, 
‘তিনপুরুষ’ প্রভৃতি।
 ‘রত্নমালা’ নামে একটি নূতন ধরনের অভিধানও তিনি প্ৰণয়ন করেছিলেন।

====={{{{{{{{{{{∆∆∆∆∆∆∆}}}}}}}}}}}}}=====

No comments: