কৃষ্ণদাস পাল রায়বাহাদুর
(((প্রয়াণে লর্ড রিপন এর শোকবার্তা))
১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে জুলাই ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন।
১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে লর্ড এলগিন কলকাতায় তার পূর্ণাবয়ব মর্মর মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন।
জীবন
কলকাতার কাঁসারিপাড়ায় এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র পাল। কৃষ্ণদাস কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারীতে পাঁচ বছর ও তৎকালীন হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজে তিন বৎসর (১৮৫৪ - ৫৭) পড়াশোনা করেন এবং সেসময়ে তাাঁর সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহ জন্মে। ডি.এল. রিচার্ডসনের ছাত্র হিসাবে ইংরাজী সাহিত্যে তিনি বিশেষ দক্ষতা লাভ করেন।
কলেজে ছাত্রাবস্থায়
"ক্যালকাটা লিটারারি ফ্রি ডিবেটিং ক্লাব" প্রতিষ্ঠা করেন।
১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে তাাঁর রচিত 'দি ইয়ং বেঙ্গল ভিন্ডিকেটেড' প্রবন্ধ সে যুগে বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
হরিশচন্দ্র মুখার্জি সম্পাদিত হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার আদর্শে 'দি ক্যালকাটা মান্থলি' ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন।সহযোগী ছিলেন শম্ভুচন্দ্র মুখার্জি।
১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে তিনি মুষ্টিমেয় কিছু উচ্চ সংস্কৃতিবান ব্যক্তিত্ব ও মনীষীদের ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক হন।
ঠিক সেই সময়ই হিন্দু প্যাট্রিয়টের হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের অকাল প্রয়াণের কয়েক মাস পর তিনি ওই পত্রিকার সম্পাদক হন।
একাদিক্রমে ২৩ বৎসর সম্পাদনায় তৎকালীন রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব বিস্তার লাভ করে। 'ইমিগ্রেশন বিল ',
'ইলবার্ট বিল', '
ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট' ইত্যাদি আইন প্রনয়ণের সময় হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায় চা-শ্রমিকদের পক্ষে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়ে ও দেশীয় ডেপুটি ম্যাজিসেট্রটদের সপক্ষে বিস্তর প্রবন্ধ রচনা করে জনপ্রিয় হয়েছিলেন।
চা-শ্রমিকদের নির্যাতন-ব্যবস্থা র প্রতিবাদে কৃষ্ণদাস 'ইমিগ্রেশন বিল'কে 'দ্য স্লেভ ল' অব ইন্ডিয়া' বলে অভিহিত করেন।
ক্রমে তিনি সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও রাজনীতি হিসাবে পরিচিত হয়ে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক থেকে স্থায়ী সম্পাদক হন।
১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি 'জাস্টিস অফ দ্য পিস' নিযুক্ত হন এবং কলকাতা পুরসভার কমিশনার হন।
১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য হন এবং এখানেই তাঁর ব্যবহারিক জ্ঞান ও সংযম পরবর্তী লেফটেনান্ট গভর্নর দ্বারা উচ্চ প্রশংসিত হয়েছিল।
১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভাইসরয়ের লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য নিযুক্ত হন।
'বেঙ্গল টেন্যান্সি বিল' নিয়ে বিতর্কের সময় কৃষ্ণদাস জমিদার-শ্রেণীর প্রতিভূরূপে ভারতবর্ষীয় ব্যবস্থাপক সভা'র সদস্য মনোনীত হন।
১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে রায়বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করা হয় এবং তিনি "রায় কৃষ্ণদাস পাল বাহাদুর" হিসাবে পরিচিত হন।
১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি কমান্ডার অব ইন্ডিয়ান এম্পায়ার (সি আই ই) হন।
হিন্দু প্যাট্রিয়ট ও কৃষ্ণদাস পাল:
১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের ৬ ই জানুয়ারি গিরিশচন্দ্র ঘোষের সম্পাদনায় মধুসূদন রায় প্রকাশ করেন এবং এটি প্রতি বৃহস্পতিবার তার কলাকার স্ট্রিটস্থিত প্রেস হতে প্রকাশ হতে থাকে। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে কিছুদিন কাশীতলা হতে মুদ্রিত হয়। সেসময়ের 'বেঙ্গল রেকর্ডার' -এর সংবাদদাতা হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় হিন্দু প্যাট্রিয়টে যোগদেন এবং ক্রমে সম্পাদকীয় বোর্ডে উন্নীত হন। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি হিন্দু প্যাট্রিয়টের মুখ্য সম্পাদক হন। এক বছর পর তিনি তার দাদা হারাণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের নামে স্বত্ব কেনেন ও সংবাদপত্রটির পূর্ণ মালিকানা গিরিশচন্দ্র ঘোষের থেকে তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হারানচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের নামে পরিবর্তিত হয়। কিন্তু গিরিশচন্দ্র ঘোষ ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত লিখতে থাকেন। তারপর হিন্দু প্যাট্রিয়ট ছেড়ে "দি বেঙ্গলি" নামে ইংরাজী সংবাদপত্র শুরু করেন।
১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই জুন হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের অকাল মৃত্যুতে হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা আর্থিক দুরবস্থায় পড়ে। কালীপ্রসন্ন সিংহের আর্থিক সহায়তায় রক্ষা পায়। গিরিশচন্দ্র ঘোষ তিন বৎসর আগে হিন্দু প্যাট্রিয়টের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করলেও, তিনি হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের শোকাহত মা ও অসহায় বিধবা পত্নীর জন্য পুনরায় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পুনরায় ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে তিনি হিন্দু প্যাট্রিয়ট ত্যাগ করলে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সংবাদপত্রের মালিকানা নেন এবং কৃষ্ণদাস পাল (১৮৩৮ - ১৮৮৪) সম্পাদক হন।
১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে কিশোরীচাঁদ মিত্র প্রতিষ্ঠিত "ইন্ডিয়ান ফিল্ড" নামের ইংরাজী সংবাদ সাপ্তাহিকটি ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে "হিন্দু প্যাট্রিয়ট" এর সাথে মিশে যায় ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণদাস পালের মৃত্যুর পর লখনউ-এর দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত লখনউ টাইমস্-এর সম্পাদক রায়বাহাদুর রাজকুমার সর্বাধিকারী (১৮৩৯-১৯১১) এর সম্পাদক হন। পত্রিকাটি ৭১ বৎসর চলেছিল। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে এর প্রকাশনা বন্ধ হয়।
==================================
No comments:
Post a Comment