"সুন্দর পান করুন, হৃদয় তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে গান গাইবে।" আরাবল্লী পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট আবুতে আরোহণ করে, জোশী নাকি হ্রদে চাঁদ এবং এর প্রতিফলন দেখেছিলেন। শারদীয় পূর্ণিমা এবং হ্রদ পাহাড়ের চূড়ায় একটি মনোরম ভ্রমণের পরে জোশীকে তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতা রচনা করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। এই ভ্রমণের পরে, তাঁর কলম পাঠকদের বিস্মিত করে আর কখনও থামেনি......
(গুজরাতি: ઉમાશંકર જોશી)
(২১ জুলাই ১৯১১ - ১৯শে ডিসেম্বর ১৯৮৮)
একজন বিখ্যাত বিদ্বজ্জন, কবি এবং ঔপন্যাসিক। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে গুজরাতি সাহিত্য তথা ভারতীয় সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে ভূষিত হন.
গুজরাতের সাবরকাঁঠা অঞ্চলে ইডর তালুকায় অবস্থিত বামনা নামক একটি ছোট গ্রামে উমাশঙ্করের জন্ম হয়। তিনি জন্মসূত্রে ত্রিবেদী মেওয়াড় গোত্রের ব্রাহ্মণ ছিলেন। তার পিতা জেঠালাল কমলজি কতকগুলি 'জাগির'-এর অধিকারী ক্ষুদ্র শাসক বা 'করভারী' ছিলেন। মা ছিলেন নভল বাঈ। উমাশঙ্করেরা ছিলেন ছয় ভাই ও দুই বোন। পাহাড়ি এলাকা ও গ্রামজীবনের সৌন্দর্য, মেলা ও অন্যান্য উৎসবের মধ্য থেকে উমাশঙ্কর সাহিত্য সৃষ্টির অনুপ্রেরণা পান।
১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে বামনা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উমাশঙ্করের শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ১৯২১ এ ইডর বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১৯২৭ খ্রিঃ পর্যন্ত তিনি ইডরের প্রতাপ উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। এই বিদ্যালয়ে স্থানীয় ভাষা ও ইংরেজিতে শিক্ষাদান করা হত। ১৯২৭ এ আমেদাবাদের প্রোপ্রাইটরি উচ্চবিদ্যালয় থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯২৮ এ গুজরাত কলেজে ভর্তি হন ও সেখানে ১৯৩০ পর্যন্ত ছাত্রাবস্থায় অতিবাহিত করেন। এর পর মুম্বাইয়ের এলফিনস্টোন কলেজে তিনি স্নাতক স্তরের পাঠক্রমে ভর্তি হন। সেখান থেকে অর্থনীতি ও ইতিহাস বিষয়ে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এর পর মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত ও গুজরাতি ভাষায় প্রথম শ্রেণীতে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন।
উমাশঙ্কর যোশী মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে চলমান স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করেন। ১৯২৯ এর জানুয়ারি মাসে গুজরাত কলেজের ছাত্রদের অনুষ্ঠিত ৩৪ দিন ব্যাপী অনশন আন্দোলনেও তিনি অংশ নেন। ১৯৩০ এ তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন এবং ঐ বছর এপ্রিলের প্রথম দিকে সত্যাগ্রহী হিসেবে বিরামগাম সমিতির সদস্য হন। এর পর চোদ্দ সপ্তাহের জন্য তাকে কারাবরণ করতে হয়; ১৯৩০ এর নভেম্বরে সবরমতী জেলে শুরু হয়ে তার কারাবাস শেষ হয় পরের বছর ইয়েরওয়াড়ায়। এর পর ১৯৩১ খ্রিঃ তিনি করাচিতে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের জাতীয় অধিবেশনে যোগ দেন এবং জুলাই থেকে ছয় মাস গুজরাত বিদ্যাপীঠে অবস্থান করেন। ১৯৩২ খ্রিঃ সবরমতী ও বিসাপুর জেলে তাকে দ্বিতীয়বার আট মাসের জন্য কারাবাস করতে হয়।
১৯৩৭ খ্রিঃ মুম্বাইয়ের ভিলে পার্লে-তে অবস্থিত গোকলিবাঈ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে উমাশঙ্করের কর্মজীবন শুরু হয়। স্নাতকোত্তর স্তরের পঠনপাঠন শেষ করে তিনি ১৯৩৯ পর্যন্ত মুম্বাইয়েরই সিডেনহ্যাম কলেজ অব কমার্সে আংশিক সময়ের অধ্যাপক নিযুক্ত থাকেন। এর পর গুজরাত বিদ্যাসভা বা গুজরাত মাতৃভাষা সমিতির স্নাতকোত্তর গবেষণা বিভাগের অধিকর্তা নিযুক্ত হন। ১৯৪৬ পর্যন্ত এই পদে আসীন থেকে তিনি স্বেচ্ছাবসর নেন। ১৯৪৮ এ মুম্বাই সরকার তাকে গুজরাতি পাঠ্যপুস্তক কমিটিতে নিয়োগ করে। ১৯৫৩-তে লোকভারতী শিক্ষণ সংস্থায় আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে কাজ করেন। এটি ছিল গুজরাতের ভাবনগর জেলায় অবস্থিত একটি শিক্ষামূলক সংস্থা। ১৯৫৪ এর জুন মাসে তিনি গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ে গুজরাতি সাহিত্যের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগেরও প্রধান ছিলেন তিনি। মার্কিন ও কিছুসংখ্যক ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে 'সাধারণ শিক্ষা'র মান সংক্রান্ত খোঁজখবর করার জন্য ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডে একটি কমিটি প্রেরণ করেন। উমাশঙ্কর যোশী ছিলেন এর অন্যতম সদস্য। ১৯৬৪ তে গুজরাত সরকার সৌরাষ্ট্র ও দক্ষিণ গুজরাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ভাবনাচিন্তা শুরু করলে তিনি সেই সংক্রান্ত একটি কমিটির সদস্য হন। ৩০শে নভেম্বর ১৯৬৬ থেকে তিনি গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। ১৯৭২ এর ১৭ই নভেম্বর তিনি এই পদ থেকে অবসর নেন।
১৯৩৪ এ উমাশঙ্করের পিতৃবিয়োগ হয়। ১৯৩৭ এর ২৫শে মে তিনি আমেদাবাদের জ্যোৎস্না এন. যোশীকে বিবাহ করেন। নন্দিনী এবং স্বাতী নামে তাঁর দুই মেয়ে । ১৯৫৭ তে তিনি সপরিবার আমেদাবাদের সর্দার পটেল নগরের 'সেতু' নামক বাড়িতে বসবাস আরম্ভ করেন। ১৯৬৬ তে তাঁর মাতৃবিয়োগ হয়।
১৯৮৮ খ্রিঃ ফুসফুসের ক্যানসারের জন্য উমাশঙ্কর মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি হন। ১৯৮৮ খ্রিঃ ১৯শে ডিসেম্বর ৭৭ বছর বয়সে তাঁর দেহাবসান হয়।
উমাশঙ্কের স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব তার পরিমার্জন এবং কাব্যিক প্রতিভার বিরল সংমিশ্রণে একটি চিহ্ন রেখে গেছে। সমসাময়িক সাহিত্য জগতে, বিশ্বের বিশৃঙ্খলতার মধ্যে তিনি নিরন্তর শান্তি ও সম্প্রীতির সন্ধান করেছেন। মানবতা তার জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং তিনি প্রায়শই মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন।
যোশী সাহিত্যের অনেক ক্ষেত্রেই পারদর্শী ছিলেন কিন্তু তাঁর কাজ নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন, অনুভব করেছিলেন যে তিনি এখনও মানবতার অদেখা কোণ স্পর্শ করতে পারেননি। তিনি নিজেকে "গুর্জর ভারতবাসী" হিসাবে উল্লেখ করেছেন, "সর্বজনীন মানুষ" হওয়ার আকাঙ্খা। তার প্রথম দিকের একটি কবিতায় তিনি লিখেছেন:
"আমি কি আমার (নমিত) মাথায় পৃথিবীর পবিত্র ধুলো দিয়ে একজন ব্যক্তি হওয়া বন্ধ করে সর্বজনীন মানুষ হয়ে উঠব।"
জাত-পাত, ধর্ম, দেশের বাধা অতিক্রম করে তিনি প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষ ও কবি হিসেবে মাতৃভূমির সত্যিকারের সন্তান ছিলেন। যখন গান্ধীবাদী চিন্তাধারা গুজরাট এবং ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় ছিল, তখন উমাশঙ্কর সাহিত্যের অঙ্গনে পা রাখার সময় এর প্রকৃত প্রভাব অনুভূত হয়েছিল। শুধু উমাশঙ্করই নয়, সুন্দরম নামে আরেকজন কবিও গান্ধীবাদী আদর্শের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেছেন।
গুজরাটি লেখক মিলান বা লেখকদের সভার প্রথম সম্মেলনে, উমাশঙ্কর মন্তব্য করেছিলেন: "আমরা যমজ ভাই। আমাদের সৃজনশীল তাগিদ পূরণ করতে, গুজরাটি ভাষা সম্ভবত আমাদের অজান্তেই এর মূলে আমাদের একত্রিত করার ষড়যন্ত্র করেছে।"
উমাশঙ্কর জেঠালাল যোশী একজন সাহিত্যিক ছিলেন, কিন্তু যখন তিনি প্রথম গুজরাট কলেজের ছাত্রদের দ্বারা আয়োজিত ধর্মঘটে অংশ নিয়েছিলেন তখন তিনি তার ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করেছিলেন। ইন্ডিয়াম ন্যাশনাল আন্দোলনের সাথে এটিই ছিল তার প্রথম যোগ। পরবর্তীতে, জোশী সত্যাগ্রহ আন্দোলনের অংশ হয়ে উঠলে, ব্রিটিশ কর্মকর্তারা তাকে গ্রেফতার করে এবং চৌদ্দ সপ্তাহের জন্য সবরমতি জেলে বন্দী করে। গান্ধী-আরউইন চুক্তির কারণে পরে তিনি মুক্তি পান।
1931 সালে বন্দী থাকাকালীন, জোশী তাঁর প্রথম কবিতা বিশ্ব শান্তি লিখেছিলেন। বিশ্বশান্তি। এই দীর্ঘ কবিতাটি "গান্ধীর শিক্ষা ও জীবনকর্মের প্রতি ইঙ্গিত দেয়," এবং কবির বিশ্বাসকে চিত্রিত করে যে "যদিও বাপুর পশ্চিমে সফর ভারতীয় স্বাধীনতার লক্ষ্যে,
এটি [ভারতীয়] জাতির কাছে স্বাধীনতার চেয়ে পশ্চিমে শান্তির বার্তা আরও সফলভাবে বহন করবে।" গান্ধীর জীবন ও শিক্ষার দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হওয়া সত্ত্বেও, যোশী কখনোই ব্যক্তিগতভাবে বা পেশাগতভাবে মহাত্মা গান্ধীর সাথে যুক্ত হতে চাননি।
যোশী প্রগতিশীল সাহিত্য আন্দোলনের অগ্রদূত ছিলেন, যা তিনি 1940-এর দশকে শুরু করেছিলেন। যাইহোক, পরে তিনি প্রগতিবাদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন এবং তা করার জন্য অনেক কারণ দেন, যার মধ্যে রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে রাজনৈতিক উদ্বেগের পরিবর্তন, তরুণ কবিদের নেতৃত্বে গুজরাটি ভাষায় প্রগতিশীল কবিতার ফলে শৈলী এবং নান্দনিক গুণাবলীর অবক্ষয়।
¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥
No comments:
Post a Comment