Friday, 1 November 2024

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। সমীর রায়চৌধুরী । বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি, ছোট-গল্পকার । হাংরি আন্দোলন-এর শতাধিক বুলেটিনের অধিকাংশ তারই খরচে প্রকাশিত হয়েছিল। হাংরি আন্দোলন-এর কারণে ১৯৬৪ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন। Dt -01.11.2024. Vol -1042. Friday. The blogger post in literary e magazine.


সমীর রায়চৌধুরী
 
(নভেম্বর ১, ১৯৩৩ - জুন ২২, ২০১৬) 


বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি, ছোট-গল্পকার । জন্ম মামারবাড়ি পাণিহাটিতে ( ২৪ পরগণা )। তিনি কলকাতার আদি নিবাসী সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের উত্তরপাড়া শাখার সন্তান। বিদ্যাধর রায়চৌধুরী, যিনি জোব চার্ণককে কলকাতা-সুতানুটি-গোবিন্দপুর গ্রামের ইজারা দিয়েছিলেন, তার ৩৯তম বংশধর তিনি। তার ঠাকুর্দা লক্ষ্মীনারায়ণ রায়চৌধুরী ছিলেন ভারতবর্ষের প্রথম ভ্রাম্যমাণ ফোটোগ্রাফার-আর্টিস্ট, যিনি নোবেলজয়ী সাহিত্যিক রুডিয়ার্ড কিপিং-এর বাবা, তৎকালীন লাহোর মিউজিয়াম-এর অধক্ষ জন লকউড কিপলিং-এর কাছে ব্রোমাইড-কাগজ আলোকচিত্র তৈরির কৌশল শিখেছিলেন। তার বাবা রঞ্জিত (১৯০৯-১৯৯১)-ও পাটনা শহরের প্রচীনতম ফোটোগ্রাফি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি জ্যাঠামশায় পাটনা শহরের জাদুঘরের চিত্র এবং ভাস্কর্য রক্ষক ছিলেন। সে-কারণে শৈশব থেকে সমীর শিল্প-সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হন। স্কুল জীবন পাটনায় কাটিয়ে তিনি কলকাতার সিটি কলেজে গিয়ে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হন, এবং সেই সূত্রে কৃত্তিবাস গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা কবি দীপক মজুমদারের সঙ্গে পরিচিত হন। তাঁর মা অমিতা (১৯১৬-১৯৮২) ছিলেন ১৯ শতকের বাঙালির রেনেসঁস-প্রভাবিত পরিবারের মেয়ে।

কলেজ জীবনে কৃত্তিবাস গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, ১৯৬১ সালের নভেম্বরে তিনি ছোট ভাই মলয় রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও দেবী রায় (প্রকৃত নাম হারাধন ধাড়া )-এর সঙ্গে হাংরি আন্দোলন শুরু করে সাড়া ফেলে দেন । হাংরি আন্দোলন-এর শতাধিক বুলেটিনের অধিকাংশ তারই খরচে প্রকাশিত হয়েছিল। হাংরি আন্দোলন-এর কারণে ১৯৬৪ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন, যদিও তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ না থাকায় অচিরে মুক্তি পান। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তিনি তরুণদের বিপথগামী করছেন (ভারতীয় দণ্ড সংহিতার ২৯৪ ধারা)।

সাহিত্যকর্ম
কৃত্তিবাস গোষ্ঠিতে যুক্ত থাকার সময়ে তার দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল: ঝর্ণার পাশে শুয়ে আছি এবং আমার ভিয়েৎনাম । এই সময়ে নিজ অর্থে তিনি কৃত্তিবাস পত্রিকার সম্পাদক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর প্রথম কাব্যগ্রন্থ একা এবং কয়েকজন প্রকাশ করে কবিমহলে বিশেস সম্মান অর্জন করেন। কৃত্তিবাস গোষ্ঠী ত্যাগের পর, হাংরি আন্দোলন-এর কারণে তার কবিতায় লক্ষণীয় বাঁকবদল ঘটে, এবং তা প্রতিফলিত হয় তার পরবর্তী কাব্যগ্রন্থ জানোয়ার-এ। সেই সময়ে তার চাইবাসার বাড়িটি, নিমডি নামের সাঁওতাল গ্রামের পাহাড়চূড়ায়, হয়ে উঠেছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকেন্দ্র। ৫০ ও ৬০-এর দশকের বহু কবি ও লেখকের রচনায় চাইবাসার কথা বারবার উচ্চারিত হয়েছে। গ্রেপ্তারির আপমানের কারণে, এবং ১৯৬৫ সালে হাংরি আন্দোলন প্রকৃত অর্থে ফুরিয়ে যাওয়ায়, সমীর প্রায় তিন দশক লেখালিখি থেকে দূরে সরে ছিলেন। ৯০ দশকে কলকাতায় নিজের বাড়ি তৈরি করার পর তিনি আবার লেখালিখিতে ফিরে আসেন, এবং তা ছোট-গল্পকার ও ভাবুক রূপে।

নব্বই দশকের শুরুতে গল্পকার ও ঔপন্যাসিক মুর্শিদ এ এম -এর সঙ্গে সমীর হাওয়া ৪৯ নামে একটি ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। সাহিত্য ও বিজ্ঞানকে একটি মঞ্চে একত্রিত করে তিনি নবতর একটি সাহিত্যচিন্তা প্রণয়ন করেন যার নাম তিনি দেন "অধুনান্তিক"। পরবর্তীকালে পত্রিকাটি সাহিত্যতত্ব ও ভাষাতত্বের পত্রিকা হয়ে ওঠে, এবং তাকে আলোচকরা পোস্টমডার্ন মঞ্চ বলে স্বীকৃতি দেন। এই ধারায় রচিত তার ছোটগল্পের সংকলন খুল যা সিমসিম সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার বাংলা সন্দর্ভ হিসাবে সম্মান করে নিতে পেরেছে। অন্যান্য তরুণ কবি ও লেখক, যাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আগ্রহী, তাদের রচনা হাওয়া ৪৯-এ প্রকাশ ও তাদের গ্রন্থ প্রকাশের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন সমীর।

গ্রন্থতালিকা

ছোটগল্পের বই:— 
সিগারেটের তিরোভাব ও অন্যান্য, ছাতা হারানোর বর্ষাকালীন দুঃখ, পোস্টমডার্ন গল্পগুচ্ছ, খুল যা সিমসিম।

কাব্যগ্রন্থ:—
 ঝর্নার পাশে শুয়ে আছি, আমার ভিয়েতনাম, জানোয়ার, মাংসের কস্তুরীকল্প, পোস্টমডার্ন কবিতাগুচ্ছ, বিদুরের খড়ম, নির্বাচিত কবিতা।

প্রবন্ধের বই:— 
কবিতার আলো অন্ধকার, পোস্টমডার্ন কবিতা বিচার, পোস্টমডার্ন বিড়ালের সন্ধানে, উত্তরাধুনিক প্রবন্ধ সংগ্রহ।

সম্পাদিত বই:— 
পোস্টমডার্ন: অধুনান্তিক, পোস্টকলোনিয়ালিজম: উত্তরঔপনিবেশিকতা, পোস্টমডার্ন কি ও কেন, পরমাপ্রকৃতি: ইকোফেমিনিজম, সীমা, কমপলেক্সিটি:জটিলতা, ডায়াসপোরা, অনিল করঞ্জাই আলোচনাসমগ্র, ফালগুনী রায় আলোচনাসমগ্র, ভুখী পীঢ়ি (নেপালি), জীবনানন্দ (কন্নড়), Postmodern Bangla Poetry Volume I & II, Postmodern Bangla Short Stories Volume I & II, অধুনান্তিক বাংলা কবিতায়েঁ (হিন্দি)।

সম্পাদিত পত্রিকা:— 
কৃত্তিবাস (ফণীশ্বরনাথ রেণু সংখ্যা), হাংরি বুলেটিন, শাশ্বত (বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় সংখ্যা), সংক্রামক (হিন্দি), হাওয়া ৪৯। 


সমীর রায়চৌধুরী বলেছেন, “আমার নিজের এই বৃদ্ধ বয়সে অনেকেই বলেন যে, অনেক তো হলো, এখন কিছুটা ঢিমেতালে লেখালেখি করা দরকার এবং বিশ্রামের প্রয়োজন অনেক বেশি। অথচ আমার সৃজনশীল মন জানে, লেখালেখিতেই আমি আমার যৌবন ফিরে পাই। কেননা, আমি আজও নীরবতার রহস্যসন্ধানী।”



সংস্কৃতি

ফার্নিচারের দোকানে চেয়ারের হাজিরা ছিল সরাসরি ব্যবসাদারির

খদ্দের আর দোকানদারের গজিয়ে-ওঠা দরদাম

এক অপেক্ষমাণ পণ্য

ছিল মালিকানার অন্বেষণ

অর্থময়তার তাগিদ

আটমাত্রা ছিল দোকানির

ছমাত্রা যোগ করলেন ক্রেতাবিশেষ

বেচাকেনা-কাটতি প্রথক শব্দমালার অধীন

প্রতিমূহূর্ত ক্রয়লেখায় প্রদর্শনযোগ্য

যেমন ক্যাশমেমো নেই কালানুক্রমিকতায় চেয়ারের সমর্থক

তারো আগে কাঠ শ্রম পালিশ সময় সংখ্যা

বা তোরে আগে কেবল অনিশ্চয়তায় সম্ভাবনার প্রস্ফুট

এখন এই রেস্তোঁরায় ক্যাশমেমো বলতে চা টোস্ট ওমলেট

আপ্যায়নের সাময়িকতায় বিশিষ্ট

খদ্দের খুঁজছে অথচ নিজের জন্য নয়

যেভাবে সম্ভাবনা অনিশ্চয়তায় প্রস্ফুট

যেভাবে আরামকেদারা হয়ে উঠেছিল রক্ষণকামী

স্বপ্নের চেয়ে স্মৃতি রোমন্হনে পটু

যেভাবে প্রতিমুহূর্তে জৈবিক হয়ে উঠতে চায় সাংস্কৃতিক !

হাতলওলা চেয়ারে পেয়ে বসে অহংকার.


খেলনা-বাঁশি

নীরব আর কোলাহলের মাঝখানে মানুষের আলো…

অরা ফটোগ্রাফি আত্মপরিচিতির নতুন চিহ্ণ…

খেলনা-বাঁশি বায়না ধরেছে বাল;গোপাল…

পুরোনো বাড়ির আনাচে-কানাচে বুড়ি মাকড়সার রাজ্যপাট…

নৈঃশব্দ্যের থ… ওতপেতে আছে নগপদবাচ্য শব্দগুলি…

আদ্রতার উল্লোল… প্রত্যেক বেলুনের স্বপনএ মহাকাশ…

নদীর বাঁক তার ইচ্ছাকৃত নয়…

হলুদ হয়ে যে পাতা ঝরে গেল তাকে ভয়…

যে জানে নদীর স্বভাবে পরাজিত…

ধাতুগর্ভজল শব্দে, ছড়ালে বাঁশি বেজে ওঠে…

খেলনা-বাঁশির কোনো নিজস্ব আঙ্গিক নেই…

কেবল নিজস্ব আঙ্গিক জন্মান্তর মানে…

পূর্বপুরুষকে জল দেয়…

অক্ষর নিয়ে খেলি নিরঙ্কুশ মূর্ছনায়…

জীবন ও মৃত্যর মাঝখানে

শুধু ঐ খেলনা-বাঁশি

অচেনা মেয়েমানুষের গোপন

খেলনা-মুখোশ নিয়ে শিশুদের খেলা

নৈর্ব্যাক্তিক যামলসাধনায় মায়া…











=========∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆============



No comments: