Monday, 27 July 2020

আঞ্চলিক সাহিত্য চর্চার ইতিহাস। পর্ব - ১

@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@
         আঞ্চলিক সাহিত্য চর্চার ইতিহাস
                     পর্ব - ১ 
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
                  Doinik Sabder Methopath
                  Vol - 82. Dt - 28.7.2020
¥¥¥¥¥$¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥$¥¥¥¥¥¥¥¥¥$¥¥¥¥¥¥¥¥
                       পূর্ব মেদিনীপুর জেলা
++++++++++++++++++++++++++++++++++
                       ১।    পটাশপুর থানা : 
 !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
                    
                      ** পটাশপুর দর্পণ **
                     

            " নিজের দেশকে ভালো করিয়া জানার চর্চা নিজের দেশকে যথার্থভাবে প্রীতির চর্চার অঙ্গ।"
                                 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

অখণ্ড মেদিনীপুর জেলার সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার প্রাচীন জনপদ পটাশপুর থানা। আঞ্চলিক সাহিত্য চর্চা ও সমানভাবে জেলায় সমাদৃত। থানার ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে বার্ষিক সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চা যেভাবে দিন দিন হয়ে আসছে। সেই ধারাকে অব্যাহত রেখে উৎসাহী অনেকে ভাবলেন এক অঞ্চলের খবর আরেক অঞ্চলে জেলায় রাজ্যে ছড়িয়ে দিতে গেলে পৌঁছে দিতে গেলে আমাদের এমন কিছু করা দরকার। এই চিন্তা কে সামনে রেখে সাহিত্য-সংস্কৃতির সংবাদ ঘরে ঘরে পৌঁছে একটি পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নাম রাখা হয় - পটাশপুর দর্পণ - দর্পণ তথা আয়না তে যেমন আমরা নিজেদের মুখ দেখেই ঠিক তেমনি সমগ্র পটাশপুর থানার মুখ - পটাশপুর দর্পণ। প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সমবায়় নেতা প্রসন্নকুমার ত্রিপাঠী মহোদয়ের সম্পাদনায় প্রথম পাক্ষিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হল ১৯৫৬ সালের আগস্ট মাসে। এলাকার সাহিত্য সংস্কৃতি ,উৎসব- অনুষ্ঠান খেলাধুলা, সমাজসেবা ,বৃক্ষরোপণ ,রক্তদান ,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ভালো-মন্দ ,গ্রামের কথাসহ নানান বিষয় নিয়ে প্রায় ১০ বছর পত্রিকাটি প্রকাশের পর বন্ধ হয়ে যায়। 
               প্রায় অর্ধশত পর পত্রিকাটি দ্বিতীয় পর্যায়ে আবার প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালের মার্চ মাসে,  কিছুটা রূপ পরিবর্তন করে। পাক্ষিক থেকে মাসিক এবং পৃষ্ঠাসংখ্যা ১২ অথবা ১৬ । বছরে দু'টি বিশেষ সংখ্যা - নববর্ষ ও পূজা ।  বিশেষ সংখ্যার পৃষ্ঠা ৩০/৪০. প্রসন্ন বাবুর অনুগামী সমবায় নেতা বরেন্দ্রনাথ পাত্র, প্রতাপদীঘি, পূর্ব মেদিনীপুর, পিন - ৭২১৪৪০. মহোদয় প্রকাশক ও স্বত্বাধিকারী হলেন আর সম্পাদনার দায়িত্বে এলেন প্রখ্যাত শিক্ষক ও সাহিত্যিক শ্রী মন্মথনাথ দাস। সহ সম্পাদনায় শ্রী বিনোদ বিহারী জানা ও শ্রী প্রভাত কুমার চন্দ। অফিস সেক্রেটারি শ্রী গোলোকেশ নন্দ গোস্বামী। মুদ্রণের দায়িত্ব নিউ অ্যাসেস্ট টেকনোলজি। প্রতাপদীঘি ।পূর্ব মেদিনীপুর। মূল্য - ৫ টাকা। 
RNI NO - WBBEN/2016/69278 .
               নতুন ভাবে এই পত্রিকায় পটাশপুর থানার নানান খবরাখবর এর পাশাপাশি জেলা ভত্তিক,  রাজ্যভিত্তিক নানান খবর ও ছাপা হতে লাগলো। পরিধি বিস্তৃত হল। গ্রাহক সংখ্যা ও অনেক বাড়তে লাগলো। এমন অবস্থায় ২৩.৬.২০১৯ তারিখ প্রকাশক মহোদয়ের অকাল প্রয়াণে সবাই মর্মাহত ‌ও শোকস্তব্ধ হলেন।
                 মাসিক পত্রিকা প্রকাশের নতুন দায়ভার গ্রহণ করলেন মাননীয় ভবেশ চন্দ্র বেরা, গোবর্ধনপুর , কাটরঙ্কা, পূর্ব মেদিনীপুর। সম্পাদকের দায়িত্বে এলেন মাননীয় সুমথ নাথ দাস, মঙ্গলচক , ইটাবেড়িয়া , পূর্ব মেদিনীপুর। মুদ্রণ - অমরাবতী প্রেস। প্রতাপ দীঘি,  পূর্ব মেদিনীপুর। বার্ষিক মূল্য - ৮০ টাকা। নবপর্যায় পটাশপুর দর্পণের প্রথম সংখ্যা - বরেন্দ্রনাথ স্মরণ সংখ্যা। 
        পত্রিকার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন - বাদল কুমার দিন্ডা,  গোলোকেশ নন্দ গোস্বামী, ধরণীধর গায়েন, পরমেশ্বর মহাপাত্র, বিনোদবিহারী জানা, প্রভাত কুমার চন্দ প্রমূখ। 
       সম্পাদক ছিলেন - প্রসন্নকুমার ত্রিপাঠী, মন্মথনাথ দাস । 
              মাননীয় মন্মথবাবু সময়কালে পত্রিকাটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল এলাকার মানুষজনের কাছে। ছাত্র-যুব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে গ্রহণীয় হয়ে উঠেছিল মাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন ধরনের খবরা খবর নিয়ে। সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার নানাবিধ ধারা সবিস্তারে উল্লিখিত হতো। পত্রিকার পাঠক সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছিল তেমনি মন্মথ বাবুর প্রেরণায় তরুণ ছাত্র ছাত্রীরা লেখালেখিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সবদিক থেকে পত্রিকাটির গুরুত্ব অপরিসীম।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
  ২। খেজুরী থানা 
#################################

                          ** খেজুরি দর্পণ **
হুগলি নদীর মোহনায় আজ থেকে প্রায় ৬০০ বছর আগে,  নদীর সঞ্চয় কাজের ফলে দুই                
বন্দর গড়ে ওঠে। নিচু অচাষযোগ্য জমিতে প্রায়  লবণ জলের জোয়ার-ভাটা খেলে বল , প্রাচীন  এই জায়গা " মালছি ঝিটা নামে  পরিচিত ছিল। পরে নানান সামুদ্রিক ঝড়ঝঞ্ঝাা ক্ষয়ক্ষতি সামলে হিজলি ও খেজুরী বন্দর পরাধীন ভারতবর্ষের অন্যতম বাণিজ্য বন্দর হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে নানান বিদেশিদের আগমন, জনজাতির বসত গড়ে ওঠা ,  চাষবাস,  ব্যবসা-বাণিজ্য চলতে থাকে। সুলতানী আমলে তাাঁঁজ খাঁ রাজত্ব হিজরী বন্দরের গতি প্রকৃতি পাল্টে। মসনদ-ই-আলা নাম নিয়ে এই বন্দর গড়ে ওঠে। দুই বন্দর এর মাঝে প্রবাহিত কাউখালী নদী ধীরে ধীরে মজে যায়। হিজলি ও খেজুরি একত্রে মিলিত হয়ে অধুনা খেজুরি থানা গঠিত। দীর্ঘদিন এই প্রাচীন জনপদ সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চায় অবদান রেখেছে। পাশাপাশি স্বাধীনতা আন্দোলন , ৪২ এর আন্দোলন প্রভৃতিতে পথ দেখিয়েছে। মোট ১৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও দুটি ব্ল্্ক্ নিয়ে এই জনপদের নানান সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক খবরা-খবর সম্মিলিত একটি পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয় ১লা বৈশাখ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দে। সম্পাদনাার দায়িত্বে প্রখ্যাত রবীন্দ্রর গবেষক ও সাহিত্যিক , শিক্ষক ড. প্রবাল কান্তি হাজরা, দেউলপোতা, খেজুরী , পূর্ব মেদিনীপুর। প্রকাশক শ্রী সুব্রত কুমার মাঝি। কামারদাা।  খেজুরী।  পূর্ব মেদিনীপুর। মাসিক এই পত্রিকা প্রতি বাংলা মাসের ১লা প্রকাশিত হয়। ১২/১৬ পৃষ্ঠা জুড়ে। মূল্য  - ৫ টাকা. পত্রিকা প্রকাশের সহযোগী যারাা আছেন -
     মুদ্রণের দায়িত্ব ও পত্রিকার স্বত্বাধিকারসহ ঠিকানা -
  বিশেষ করে প্রতিমাসে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে যারা অবদান রেখেছেন , তাদের যেমন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়, এমনি বিশেষ বিশেষ দিন সম্পর্কিত লেখাও ছাপা হয়। শুধুমাত্র খেজুরীর নানান বিষয়, নানান দিক তুলে ধরা,  এই পত্রিকার অন্যতম উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। দীর্ঘ চার বছরে একটিমাত্র বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে - খেজুরীর বিশেষ লোকশিল্প ও শিল্পী সংখ্যা।
খেজুরীর নানান গ্রামের কথা, প্রচলিত প্রবাদ প্রবচন, আঞ্চলিক শব্দ, খেজুরী নিয়ে কুইজ, খেজুরীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, খেজুরীর দর্শনীয় স্থান, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে খেজুরী,  খেজুরীতে বিদেশিদের আগমন, খেজুরীর স্বাধীনতা সংগ্রামী, খেজুরীর গুণী মানুষ, খেজুরীর সাহিত্য সংস্কৃতির নানান খবরা-খবর, খেজুরীর উৎসব-অনুষ্ঠান মেলা পার্বণ, খেজুরীর লৌকিক দেবদেবী, খেজুরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেজুরীর গবেষক, খেজুরীতে অনুষ্ঠিত বইমেলা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে খুব সুন্দর ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে প্রতিমাসে। খেজুরীবাসীর কাছে এই পত্রিকা যেন সাহিত্য সংস্কৃতির অন্যতম সংবাদমাধ্যম। গ্রাহক সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। নানান বিষয় নিয়ে খেজুরীকে জানার তে আগ্রহ ছাত্র-যুব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলের আগামীতে আরও বেড়ে উঠবে এই আশা রাখি।খেজুরীর আঞ্চলিক সাহিত্য চর্চার ইতিহাস যেভাবে এই পত্রিকাটি সুন্দরভাবে প্রকাশ করে চলেছে,  আগামী দিনে খেজুরীর অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠবে - এই বিশ্বাস রাখি।

=========|||||||||=======||||||||==========

No comments: