Friday, 31 July 2020

জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

££££££££££££££££££££££££££££££
 হেমন্তের তারাভরা রাতে একটি
 নক্ষত্র -আয়ু অম্বুজ বসু
                            ড. বিষ্ণু পদ জানা।
£££££££££££££££££££££££££££££££££
                 Doinik Sabder Methopath
                 Vol - 86 Dt - 01.8.2020
                 বাং - ১৬ ই শ্রাবণ, ১৪২৭ ।
££££££££££££££££££££££££££££££££

                            ১৯৩১ সালের ১লা অগাস্ট উত্তর 24 পরগনার এক মফ:স্বল শহরে তাঁর জন্ম। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা টাকি শহরের তাঁর বাল্য জীবন কাটে . পরে স্থানীয় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পড়াশোনা শেষ করে কলকাতার সেন্ট পলস কলেজে ভর্তি হন , পরে স্কটিশ চার্চ কলেজ এবং আরো পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ।ছাত্রজীবন থেকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সান্নিধ্যে এসে সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী হন । সেই মনোভাবের সার্থকতা বিবিধ গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনা মধ্য দিয়ে । পরে আরামবাগ কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং চার দশক ওখানে কর্মজীবন নির্বাহ করেন। নিম্ন দামোদর এলাকায় সাহিত্য-সংস্কৃতি ও লোকসংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়েন ।তিনি বিদ্যাসাগর, রামমোহন মনীষীদের সাহিত্য ও সমাজ কর্মের ওপর গবেষণামূলক জ্ঞানগর্ভ প্রবন্ধ রচনা করে বিখ্যাত হন। এইসব প্রকাশ, সম্পাদনা, পত্র-পত্রিকায় কবিতা ,গল্প, নিবন্ধ লেখা - তাঁর বিস্তৃত সাহিত্যিক জীবনের প্রসার ঘটে  । আজকের সমাজ -শিল্প-  সাহিত্যে  তাঁর সৃজনশীল গুণাবলী র  প্রভাব আমরা প্রত্যক্ষ করি । এদিক থেকে তিনি শক্তিমান কবি ,প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক ও গবেষক । তাঁর অন্যতম সাহিত্য কীর্তি -  রবীন্দ্র উত্তর আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশের আলোকময় প্রতিভার মূল্যায়ন ,ব্যাখ্যা বিশ্লেষণধর্মী অন্যতম আকর গ্রন্থ " একটি নক্ষত্র আসে"।

               তিনি আবার  আরামবাগ সাহিত্য পরিষদের একদা প্রাণপুরুষ ছিলেন।  অঞ্চলের ইতিহাস ছিল তাঁর নখদর্পণে। বাংলার মন্দির টেরাকোটা-র ইতিহাস রচয়িতা ডেভিড ম্যাককাচ্চন আরামবাগে কাজ করার সময় পেয়েছিলেন তাঁর প্রভূত সাহায্য। ব্যক্তিজীবনে লাজুক ও সংবেদনশীল মানুষটি আমাদের ছেড়ে পূব আকাশের সন্ধ্যাতারা হয়ে গেলেন। কিন্তু রেখে গেলেন - আর এক মহান নক্ষত্রকে ।  প্রায় চার দশক আগে জীবনানন্দ চর্চা যখন প্রত্যুষের অন্ধকারে অবচেতন মনের গভীরে আত্মমগ্ন তখন আধুনিক মনস্ক লেখক বিশ শতকের নির্জনতম কবি, জীবন থেকে পলায়ন বাদী কবি, মৃত্যু চেতনার কবি, পরাবাস্তবতার কবি জীবনানন্দের কবিতার ব্যাখ্যা - বিশ্লেষণে মনোনিবেশ করে, নতুন ভাবনার জন্ম দিলেন, এক আশ্চর্য দর্শনের জন্ম দিলেন। মনের গভীরে লালিত পালিত ভাব সহজ সরল ভাষায়  সৃজনে মর্মমূলে রচনা করে চলল 'আলো-আঁধারের চিত্রনাট্যের'- জীবনানন্দীয় আবেশ ও আবেগ নিয়ে । যার সবটাই এই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত । প্রথম বইতেই স্বনামধন্য যে লেখক , তিনি তো হেমন্তের তারাদের মধ্যে উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর মহানক্ষত্রের  ১৯৬৫-তে প্রকাশিত ।  "একটি নক্ষত্র আসে।"


প্রথম প্রকাশ - 
কার্তিক ১৩৭২ বঙ্গাব্দ।

প্রকাশক
অনুপ কুমার মাহিন্দার
পুস্তক বিপণি
২৭ বেনিয়াটোলা লেন
কলকাতা -    ৯

প্রচ্ছদ ও অলংকরণ
সোমনাথ ঘোষ

মুদ্রক
ডেজ অফ সেট
১৩ বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট
কলকাতা  - ৭৩

ISBN - 81-85741-64-9

মূল্য - ২০০ টাকা।

উৎসর্গ-
" মা ও বাবাকে"
                  
                আলোচ্য গ্রন্থের অন্তর্গত প্রবন্ধগুলি ১৯৫৭ - ১৯৬৪ সালের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে - পুনর্ণবা,  মানস, জয়শ্রী, ধ্রুপদী, পূর্বপত্র, সমীপেষু ও নতুন পরিবেশ প্রভৃতি পত্রিকায়। রবীন্দ্র উত্তর আধুনিক বাংলা কাব্য কবিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি  জীবনানন্দ চর্চার আদি পর্বের এই সুপরিচিত বইটির ১৯৮৩-তে  দ্বিতীয় সংস্করণ ও ১৯৯৯-এ তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়. 
                               প্রখ্যাত অধ্যাপক , সমালোচক ও জীবনানন্দের বিশেষ পরিচিত ড অমলেন্দু বসু গ্রন্থটির ১ম খন্ডের  ভূমিকায় যা লিখেছিলেন -

  
         গ্রন্থটির নামকরণ প্রসঙ্গে  নাম কবিতাটি একবার দেখে নেওয়া যাক -

                 "  একটি নক্ষত্র আসে "
                        জীবনানন্দ দাশ

একটি নক্ষত্র আসে; তারপর একা পায়ে চ'লে
ঝাউয়ের কিনার ঘেঁষে হেমন্তের তারাভরা রাতে

সে আসবে মনে হয়; - আমার দুয়ার অন্ধকারে
কখন খুলেছে তার সপ্রতিভ হাতে!
হঠাৎ কখন সন্ধ্যা মেয়েটির হাতের আঘাতে
সকল সমুদ্র সূর্য সত্বর তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাত্রি হতে পারে
সে এসে এগিয়ে দেয়;
শিয়রে আকাশ দূর দিকে
উজ্জ্বল ও নিরুজ্জ্বল নক্ষত্র গ্রহের আলোড়নে
অঘ্রানের রাত্রি হয়;
এ-রকম হিরন্ময় রাত্রি ইতিহাস ছাড়া আর কিছু রেখেছে কি মনে।

শেষ ট্রাম মুছে গেছে, শেষ শব্দ, কলকাতা এখন
জীবনের জগতের প্রকৃতির অন্তিম নিশীথ;
চারিদিকে ঘর বাড়ি পোড়ো-সাঁকো সমাধির ভিড়;
সে অনেক ক্লান্তি ক্ষয় অবিনশ্বর পথে ফিরে
যেন ঢের মহাসাগরের থেকে এসেছে নারীর
পুরোনো হৃদয় নব নিবিড় শরীরে।

 (সাতটি তারার তিমি ,রচনা কাল :১৩৩৫-  ১৩৫০ প্রথম প্রকাশ : অগ্রহায়ণ ১৩৫৫.)

                     লেখক  এই গ্রন্থে খুব সচেতনভাবে  জীবনানন্দের কবিতায় ব্যবহৃত ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও পুরাপ্রসঙ্গের একটি পরিচিতিমূলক তালিকা পেশ করেছেন যেন । বিষয়সূচির দিকে তাকালে আমরা সেই আলো দেখতে পাই - 


* প্রাগ্ ভাষ 

** বিকাশের ধারা -

উন্মেষ * বিকাশ * উত্তরণ* নব নিরীক্ষা * মাত্রা চেতনা

*** ইতিহাস চেতনা - 

নির্জনতা * ব্যাপ্তি * ইতিহাস চেতনা * গতিধারা * আলোকের পাখি

**** সমাজ চেতনা - 

স্বপ্নপ্রয়াণ  * সন্ধিকাল * গ্রন্থিমোচন * পথনির্দেশ

***** প্রেম - 

প্রেম ও মৃত্যু *  প্রেমিক * প্রেম * নায়িকা * নারী * শেষ পর্ব

****** প্রকৃতি -

প্রকৃতি *  দেশ *  বিচিত্র * ঋতু * প্রসঙ্গ * আলো * ইন্দ্রিয় চেতনা

******* প্রতীক ও বাক্ প্রতিমা -

বোধি * কবিতা * প্রতীক * সাররিয়ালিজম্ * বাকপ্রতিমা * চিত্রকল্প *  মায়াদর্পণ * রূপকল্প * উপমা * উত্তরণ

******** মরমিয়া - 

মরমিয়া *  আলো - কণা * আলো অন্ধকার * তিমির - পিপাসা *  সূর্যতামসী * মহাজিজ্ঞাসা

এছাড়া 

কাব্যস্মৃতি ( ১), কাব্যস্মৃতি (২) , হাস্যরস,  বর্ণবৈভব , বাক্ শিল্প , ছন্দোভাবনা,  বিক্ষিপ্ত চিন্তা , কথাশিল্পী -(কথাসাহিত্য,  উপন্যাস উপক্রম- পূর্ণিমা, কল্যাণী , জীবনযাপন, মৃণাল, বিভা, বিরাজ , পেতনীর রূপকথা,  জীবন প্রণালী , কারুবাসনা , বাসমতি উপাখ্যান , জলপাইহাটি , সুতীর্থ , ও মূল্যবান), 

 ** প্রবন্ধ সাহিত্য - 

কবিতার কথা  * এবং অন্যান্য

*** কবি কথা -

জীবন প্রসঙ্গ * জীবন বৃত্ত

  ** পরিশিষ্ট   ।    প্রভৃতি।

     একজন ব্যক্তি ও তাঁর সাহিত্যকর্ম কে সম্পূর্ণ ভাবে জানতে গেলে, সঠিকভাবে জানতে গেলে ,   অনুভূতির উপলব্ধিতে বুঝতে গেলে - যে জাতীয় বিষয়সূচি  কিংবা পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা ও  বিশ্লেষণ প্রয়োজন , লেখক সেদিকে নজর রেখে সবকিছু রচনা করেছেন। এদিক থেকে গ্রন্থটি জীবনানন্দীয় গবেষকদের আকর গ্রন্থ । 

        ব‌ইটিতে দুর্লভ কিছু ছবি আছে - যা পাশ্চাত্যের আধুনিক শিল্প- সহিত্য  আন্দোলনের প্রতীকী বিষয় ভাবনা সঙ্গে যুক্ত। ছবিগুলি সংযুক্ত করলাম। 












!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!¡!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

No comments: