Saturday, 1 August 2020

জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় 

             এবং

ভূমেন্দ্র গুহ 

££££££££££££££££££££££££££££££££

Doinik Sabder Methopath

Vol - 87. Dt - 02.8.2020

বাংলা - ১৭ ই শ্রাবণ, ১৪২৭. রবিবার।

£££££££££££££££££££££££££££££££

                 আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়।

                 (০২.৮.১৮৬১ - ১৬.৬.১৯৪৪)

                   " বিজ্ঞান জগতের বাইরে প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের বিশেষ আগ্রহ ছিল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে। তিনি মাতৃভাষার মাধ্যমে শিল্পকলা ও বিজ্ঞান চর্চায় অনুরাগী ছিলেন। তিনি বাংলা ভাষায় প্রচুর লিখেছেন এবং অন্যদেরকেও মাতৃভাষায় লেখার জন্য উৎসাহিত করেছেন। অনেক স্কুল ও কলেজ তাঁর কাছ থেকে আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্য পেয়েছে। একজন জাতীয়তাবাদী হিসেবে তিনি আরও চেয়েছিলেন যে, শিল্প-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ক্ষেত্রে বাঙালিরা আরও এগিয়ে আসুক। তিনি নিজে ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস’ নামক একটা কেমিক্যাল ফার্ম প্রতিষ্ঠা করে (১৯০১) দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এটি ছিল বাঙালিদের দ্বারা স্থাপিত ও পরিচালিত অগ্রগামী শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের একটি। " আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের সামগ্রিক অবদান এবং মূল্যায়নে প্ররসঙ্স্্স্ উপরিউক্ত কথাগুলি বলা হলেও তার ব্যক্তি জীবন অনেক বেশি আলোকময় ও প্রভাব বিস্তারকারী।                    
        তিনি ওপারবাংলা খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাডুলি গ্রামে ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি ভুবনমোহিনী দেবী এবং হরিশচন্দ্র রায়ের পুত্র। 
হরিশচন্দ্র রায় স্থানীয় জমিদার ছিলেন। বনেদি পরিবারের সন্তান প্রফুল্লচন্দ্র ছেলেবেলা থেকেই সব বিষয়ে অত্যন্ত প্রত্যুৎপন্নমতি ছিলেন। তার পড়াশোনা শুরু হয় বাবার প্রতিষ্ঠিত এম ই স্কুলে। ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতার হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন, কিন্তু রক্ত আমাশায় রোগের কারণে তার পড়ালেখায় ব্যাপক বিঘ্নের সৃষ্টি হয়। বাধ্য হয়ে তিনি নিজ গ্রামে ফিরে যান। গ্রামে থাকার এই সময়টা তার জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনে সাহায্য করেছে। বাবার গ্রন্থাগারে প্রচুর বই পান তিনি এবং বইপাঠ তার জ্ঞানমানসের বিকাশসাধনে প্রভূত সহযোগিতা করে।১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রফুল্লচন্দ্র কলকাতায় পুনরায় ফিরে অ্যালবার্ট স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকেই ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি স্কুল ফাইনাল তথা প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত
মেট্রোপলিটন কলেজে (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ) ভর্তি হন। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে সেখান থেকে কলেজ ফাইনাল তথা এফ এ পরীক্ষায় (ইন্টারমিডিয়েট বা এইচএসসি) দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজে বি এ ক্লাসে ভর্তি হন। প্রেসিডেন্সী থেকে গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যান। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বি এসসি পাশ করেন।
পরবর্তীকালে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়েই ডি এসসি ডিগ্রী লাভের জন্য গবেষণা শুরু করেন। তার সেই গবেষণার বিষয় ছিল কপার ম্যাগনেসিয়াম শ্রেণীর সম্মিলিত সংযুক্তি পর্যবেক্ষণ (Conjugated Sulphates of Copper Magnesium Group: A Study of Isomorphous Mixtures and Molecular Combination)। দুই বছরের কঠোর সাধনায় তিনি এই গবেষণা সমাপ্ত করেন এবং পিএইচ ডি ও ডি এসসি ডিগ্রী লাভ করেন। এমনকি তার এই গবেষণাপত্রটি শ্রেষ্ঠ মনোনীত হওয়ায় তাকে হোপ প্রাইজে ভূষিত করা হয়। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহের আগে ও পরে (India Before and After the Sepoy Mutiny) এবং ভারতবিষয়ক বিভিন্ন নিবন্ধ লিখে ভারতবর্ষ এবং ইংল্যান্ড ফেলো হন। 
            ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রফুল্লচন্দ্র রায় স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরে প্রেসিডেন্সী কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। প্রায় ২৪ বছর তিনি এই কলেজে অধ্যাপনা করেছিলেন। অধ্যাপনাকালে তার প্রিয় বিষয় রসায়ন নিয়ে তিনি নিত্য নতুন অনেক গবেষণাও চালিয়ে যান। তার উদ্যোগে তার নিজস্ব গবেষণাগার থেকেই বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানা সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীকালে ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে তা কলকাতার মানিকতলায় ৪৫ একর জমিতে স্থানান্তরিত করা হয়। তখন এর নতুন নাম রাখা হয় বেঙ্গল কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড
  • নিজের বাসভবনে দেশীয় ভেষজ নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে তিনি তার গবেষণাকর্ম আরম্ভ করেন। তার এই গবেষণাস্থল থেকেই পরবর্তীকালে বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানার সৃষ্টি হয় যা ভারতবর্ষের শিল্পায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যায় বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পায়নে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
  • ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারকিউরাস নাইট্রাইট (HgNO2) আবিষ্কার করেন যা বিশ্বব্যাপী আলোড়নের সৃষ্টি করে। এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। তিনি তার সমগ্র জীবনে মোট ১২টি যৌগিক লবণ এবং ৫টি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন।
  • সমবায়ের পুরোধা স্যার পিসি রায় ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে নিজ জন্মভূমিতে একটি কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী পি সি রায় পিতার নামে আর,কে,বি,কে হরিশ্চন্দ্র স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
  • বাগেরহাট জেলায় ১৯১৮ সালে তিনি পি, সি কলেজ নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। যা আজ বাংলাদেশের শিক্ষা বিস্তারে বিশাল ভূমিকা রাখছে।           
               রচনা কর্ম :
        বাংলা গ্রন্থ :
              মিথ্যার সহিত আপোস ও শান্তিক্রয় (গ্রন্থ); খাদ্য বিজ্ঞান (গ্রন্থ); জাতিগঠনে বাধা ভিতরে ও বাহিরে (গ্রন্থ); জাতিভেদ ও পাতিত্য সমস্যা (গ্রন্থ); প্রাচীন ভারতে রসায়ন চর্চা (গ্রন্থ); রাসায়নিক পরিভাষা (গ্রন্থ) (বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে ১৯১৯ সালে পরিভাষা গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়), অধ্যয়ন ও সাধনা (গ্রন্থ); অন্নসমস্যা (গ্রন্থ); অন্নসমস্যায় বাঙালির পরাজয় ও তাহার প্রতিকার (গ্রন্থ); আচার্য বাণীচয়ন (গ্রন্থ); জাতীয় মুক্তির পথে অন্তরায় (১৯৩৬ সালে প্রকাশিত), বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট ও শিল্প ব্যবসায়ে কৃতিত্ব লাভ (গ্রন্থ); মিথ্যার সহিত আপোস ও শান্তিক্রয় (১৯২৫ গ্রন্থ); সমাজ সংস্কার সমস্যা (গ্রন্থ), হিন্দু রসায়নী বিদ্যা (গ্রন্থ); সরল প্রাণিবিজ্ঞান; বাঙালির মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার (১৯১০) (গ্রন্থ) প্রভৃতি
     অন্যান্য -
  • India Before and After the Sepoy Mutiny (ভারত : সিপাহী বিদ্রোহের আগে ও পরে)
  • সরল প্রাণিবিজ্ঞান, বাঙ্গালী মস্তিষ্ক ও তার অপব্যবহার
  • হিন্দু রসায়নী বিদ্যা
  • মোট গবেষণাপত্রের সংখ্যা ১৪৫ ট
  • শিক্ষকতার জন্য তিনি সাধারণ্যে ‘‘আচার্য’’ হিসেবে আখ্যায়িত।  
      সম্মাননা -
  • সি আই ই: ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে তৃতীয়বারের মত তিনি ইংল্যান্ড যান এবং সেখান থেকেই সি আই ই লাভ করেন।
  • সম্মানসূচক ডক্টরেট: ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় তাকে এই ডিগ্রী দেয়। এছাড়া ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরবর্তীকালে মহীশুর ও বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তিনি ডক্টরেট পান।
  • নাইট: ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ব নাইট উপাধি লাভ করেন । 

  • বিবেকানন্দের দেশপ্রেম তাকে ইউরোপে থেকে ফিরিয়ে এনেছিল। দেশে এসেও তিনি তার সেই স্বদেশপ্রীতির পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ক্লাসে বাংলায় লেকচার দিতেন। বাংলা ভাষা তার অস্তিত্বের সাথে মিশে ছিল। তার বাচনভঙ্গী ছিল অসাধারণ যার দ্বারা তিনি ছাত্রদের মন জয় করে নিতেন খুব সহজেই। তিনি সকল ক্ষেত্রেই ছিলেন উদারপন্থী ছিলেন। কিছু সূত্র মতে, তিনি অসাম্প্রদায়িকই শুধু ছিলেন না বরং সাম্প্রদায়িক চিন্তাধারার মূলোৎপাটনের জন্যও চেষ্টা করেছেন সবসময়। বাঙ্গালীদের কাছে তিনি বিজ্ঞানী, ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের কাছে তিনি বিপ্লবী। তাঁর নিজের ভাষায়- ‘আমি বৈজ্ঞানিক, গবেষণাগারেই আমার কাজ, কিন্তু এমন সময় আসে যখন বৈজ্ঞানিককেও দেশের আহ্বানে সাড়া দিতে হয়।’  সাধারণ বেশভূষায় ও সাদাসিধে জীবন-যাপনে অভ্যন্ত এই স্বদেশি দেশসেবক, বিদগ্ধ পণ্ডিত, ছাত্রবৎসল অধ্যাপক, আবিষ্কারক বিজ্ঞানী, অগ্রজ সমবায়ী, দরদি সমাজকর্মী এই ব্যক্তির নাম প্রফুল্লচন্দ্র রায়। বাংলাদেশের খুলনার মানুষ এই মনীষী তৎকালীন ভারতবর্ষের সেরা রসায়ন বিজ্ঞানী ও সার্থক শিল্পোদ্যোগী হিসেবে সম্মানিত।

===========================

ভূমেন্দ্র গুহ

          ( ০২.৮.১৯৩৩ - ২০.১২.২০১৫)

                   " ২২ অক্টোবর১৯৫৪ সালের রাতে জীবনানন্দ মারা গেলেন শম্ভুনাথ  হাসপাতালে, শেষকৃত্য হয়ে গেল পরদিন, পুরো পরিবার চলে গেলন মেজদা অশোকানন্দের শ্বশুরবাড়িতে – ত্রিকোণ পার্কের কাছে; জীবনানন্দের সবকিছু পড়ে থাকলো ল্যান্সডাউন রোডের বাড়িতে। আমার ওপরই দায়িত্বটা পড়লো জীবনানন্দের জিনিসপত্তরগুলো নিয়ে আসবার। পাঁচ-ছয়টা ট্রাঙ্ক, দু-তিনশ বইতে ঠাসা। তিনটিতে লেখার খাতা বেশ সাজিয়ে রাখা। পত্রিকার সম্পাদকদের কাছ থেকে মেজদা অশোকানন্দের কাছে অপ্রকাশিত লেখার তাগাদা আসে, তিনি আমাকে ডেকে পাঠান; ত্রিকোণ পার্কের বাসায় গিয়ে আমি ট্রাঙ্ক খুলে মেঝেতে উবু হয়ে বসে কপি করি। বেশ উত্তেজনা নিয়ে কাজটা করি। জীবনানন্দের লেখার ধাঁচটা চিনে ফেলার পর কাজটা আমার জন্য খুব কঠিন আর ছিল না। … মেজদা, রিতাদি (জীবনানন্দের ছোট বোন) এঁরা খুব স্নেহ করতেন। এভাবে চললো কয়েক বছর। " ডা: ভূমেন্দ্র গুহ রায় ওরফে ভূমেন্দ্র গুহ মুক্তকণ্ঠ ঘোষণা করেলেন উপরের উদ্ধৃতিতে, তিনি কিভাবে জীবনানন্দীয় অপ্রকাশিত সামগ্রিক সবকিছুর সংরক্ষণের দায়িত্ব এবং পরবর্তীতে প্রকাশের উপযুক্ত ব্যবস্থা করে দেওয়ায়-  আগ্রহী ছিলেন। তিনি জীবনানন্দের আলেখ্যকার হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন। অর্থাৎ যে বিপুল জীবনানন্দের রচনা সম্ভার ট্রাংকের তালাচাবির মধ্যে সযত্নে রক্ষিত ছিল অনতিস্পষ্ট হস্তাক্ষরে , ভারী কাল পাওয়ারের চশমা এবং কখনো আতস কাঁচ ব্যবহার করে সেগুলিকে প্রকাশের আলোকে এনেছিলেন যে রূপকার,  যে রূপকার মৃত্যুর পর জীবনানন্দীয় আলোয়  সমগ্র বিশ্বকে আলোকিত করেছিলেন - তিনি ভূমেন্দ্র গুহ। 

                ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসের ২ তারিখ ভারতের মধ্য প্রদেশে বিলাসপুর-এ তাঁর জন্ম হয়েছিল। জীবনানন্দেরই মতো পৈত্রিক সূত্রে তিনি বরিশালেরই মানুষ। পিতামহ সতীশচন্দ্র গুহরায়ের আদিনিবাস ছিল অবিভক্ত ভারতের বরিশাল জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার মৈষাণী গ্রামে। তিনি ছিলেন মুনিনাগ গ্রামের জমিদার পুত্র। ভূমেন্দ্র গুহ’র বাবা নগেন্দ্রনাথ গুহরায় রেল কোম্পানিতে চাকুরি করতেন। বদলির চাকুরি, ফলে নানা স্কুলে পড়তে হয়েছে ভূমেন্দ্র গুহকে, তবে ম্যাট্রিক পাশ করেছেন কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনে। পরে বঙ্গবাসী কলেজ থেকে ISC পাস করার পর ডাক্তারি পড়েছিলেন ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজে। ১৯৫৭’য় ডাক্তারি পাশের পর তিনি শল্যচিকিৎসায় মাস্টার্স করেছেন; পরে সার্জারিতে MCH হন।এরপর তিনি অনেক গবেষণা করেছেন; তাঁর দেড়শরও বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নালে। যুক্তভাবে একটি ডাক্তারির বই-ও প্রকাশ করেছিলেন। কলকাতা মেডিকেল কলেজ-এর থোরাসিক সার্জারি বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন চৌদ্দ বছর। লিভার সিরোসিস রোগটি অপরেশন ক’রে সারানোর পদ্ধতিটিও তাঁরই আবিষ্কার: এটি বিশ্বব্যাপী চিকিৎসাশাস্ত্রে গুহরায়-বাসু শান্ট অপারেশন নামে খ্যাত।

               তাঁর পদ্য লেখার শুরু উত্তর কৈশোরে  সঞ্জয় ভট্টাচার্যের “পূর্বাশা” পত্রিকায় ১৯৫২’র মাঝামাঝিতে।  পঞ্চাশ দশকের শুরুতে তাঁর কবিতা লেখার গোড়াপত্তন হলেও প্রথম কবিতা সংকলন “যম” প্রকাশিত হয়েছিল অনেক পরে, ১৯৯৪-এ। শ্রেষ্ঠ কবিতা’র কবিতাগুলোর রচনাকাল : ১৯৫৫-৫৮ খ্রিস্টাব্দ এবং ১৯৯০-২০০৪ খ্রিস্টাব্দ।  অর্থাৎ ১৯৫৯ থেকে ১৯৮৯ - তিরিশ বছর হয়তো জীবন-জীবিকা বড় ছিল , তিনি বিশ্ব বিখ্যাত ডাক্তার ছিলেন বলে শুধু নয় রোগ এবং রোগী প্রতি তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য আমরা নিরলসভাবে প্রত্যক্ষ করেছি।  তবে ইত্যবসরে তিনি একটি কাব্যভাষা খুঁজে পেয়েছিলেন যাকে উত্তর-জীবনানন্দীয় কাব্যভাষা বলে চিহ্নিত করা যায়। অন্যদিকে বিষয়বস্তুর নির্বাচনে তিনি উত্তর-জীবনানন্দীয় কবিদের মতই নিবিড় আত্মজৈবনিকতার মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলেন স্বস্তিময় আরাধনা: “ভেবে দেখেছি কী হতে চেয়েছিলুম, কী হতে পারতুম, কী হতে পারতুম না, অর্থাৎ আকাঙ্ক্ষা, আকাঙ্ক্ষাতেই বানিয়ে নিচ্ছিলুম নিজেকে, নৌকার দাঁড়ে অভিভাবিকা ছিল--তার শীতল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নামে-নামে যে-সব ডাকনাম-- পুড়ে-যাওয়া মরুভূমিটি বুদ্বুদে-বুদ্বুদে ষোলো-আনা গর্ভবতী হবে; তখনও সে থাকবে সেখানে সেই জলের মতন যে অপরাধী পাপী কিন্তু অচ্ছোদ।” 


  কাব্যগ্রন্থ : 

              যম”, “ঋতুচক্র”, “পিতামহ”, “উত্তরপুরুষ”, “এই সব দিনাতিপাত”, “এই মাত্র”, “ভালো থাকুন”,“ঢের দিন বেঁচে থাকা হল”, “এককালের বসতবাড়িটি”, “বেলা-শেষের অতি-কথন”, ও “অন্ত-কবিতা” “শ্রেষ্ঠ কবিতা”। ২০১৫ সালে "কবিতাসমগ্র" সম্পাদনায় রাহুল পুরকায়স্থ।শ্রেষ্ঠ কবিতা”র জন্য তিনি "রবীন্দ্রপুরস্কার" পেয়েছেন ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে ।

গদ্য রচনা  :

১৯৫৮ সালে তিনি স্যাফোর কাব্য অনুবাদ করেন। তিনিই প্রথম স্যাফোর কবিতা অনুবাদক।পরে হেনরী মিলারের “ঘাতকদের সময়” অনুবাদ করেন । জীবনানন্দের  উপন্যাস “সফলতা-নিষ্ফলতা”,“সমরেশ ও অন্যান্য গল্প” এবং “অপ্রকাশিত শেষ ১৮টি গল্প ও ২টি উপন্যাস”।  জীবনানন্দ বিষয়ক গ্রন্থ “আলেখ্য : জীবনাননদ দাশ”। 

 ক্যান্সারে রোগে আক্রান্ত হয়ে ভূমেন্দ্র গুহ প্রয়াত হন- ২০ ডিসেম্বর ২০১৫সালে।

            তিনি যে বিশেষ ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন, দৃষ্টান্তমূলক একটি রচনাশৈলী এখানে তুলে ধরলাম। 

             " তুমি আমাকে প্রেমের কথা বলবে, আমি কামনা করতে থাকি, এবং গোপন অপরাধে নিঃশেষিত হয়ে যাই। পরিবর্তে তোমার দেবীর মতো দু’টি হাত আমার উদ্বুদ্ধ শরীরটিকে খুঁজে নেয়, আমি দেখি। তুমি তোমার অনাগত একমাত্র সমত্মানটির কথা গভীর উদ্বেগের ভিতর উচ্চারণ করো। তার জন্য পূজাবেদীটির সর্বাঙ্গে ধান রাখো, ফুল রাখো, বিল্বপত্র রাখো, কদলীখ- রাখো, ততোধিক রাখো প্রচুর নবীন দূর্বাঘাসের আচ্ছাদন, যাতে আমি তোমার তৃণাসত্মীর্ণ মৌল বেদীটিকে পদ্মপাতার ভঙ্গিমায় ঠিক চিনে নিতে পারি। তুমি আমার জন্য সমুদ্রমন্থনের আনুষঙ্গিক বিষপানের স্মৃতি পুনর্জীবিত ক’রে তোলো।’

        ( শ্রেষ্ঠ কবিতার ,৩৫ নম্বর কবিতা। )

                            ড. বিষ্ণু পদ জানা

তথ্য ঋণ :-

----- বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস - ড. দেবেশ কুমার আচার্য.

------ উইকিপিডিয়া

-_------বিবিধ.

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

No comments: