Wednesday, 19 August 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ


##############################                        জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

                 আচার্য রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী
                 ( ২০.৮.১৮৬৪ - ৬.৬.১৯১৯)
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
           Doinik Sabder Methopath
           Vol - 105. Dt - 20.8.2020
       ৩ রা শ্রাবণ , ১৪২৭. বৃহস্পতিবার
 ¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥


" তোমার হৃদয় সুন্দর, তোমার বাক্য সুন্দর, তোমার হাস্য সুন্দর, হে রামেন্দ্রসুন্দর আমি তোমাকে সাদরে অভিবাদন করিতেছি।" 
রামেন্দ্রসুন্দর ৫০ বছর পূর্তি জন্মদিনে রবীন্দ্রনাথ এই অভিবাদন জানিয়ে ছিলেন। সমসাময়িক দুই
উচ্চ প্রতিভার মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর ছিল বিশেষ করে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে রামেন্দ্রসুন্দর রবীন্দ্র অনুসারী ছিলেন। উভয়ের মধ্যে ঐক্য থাকলেও অনৈক্য যথেষ্ট বেশি। বিজ্ঞান সাধক রামেন্দ্রসুন্দর পূর্ববর্তী অক্ষয় কুমার বঙ্কিমচন্দ্র স্বর্ণকুমারী দেবীর মত বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচনা করলেও তার বিস্তৃতি ছিল দর্শন ধর্ম সমাজ ও সাহিত্য বিষয়ে। তার প্রতিভার যথার্থ মূল্যায়ন প্রসঙ্গে সুরেশচন্দ্র সমাজপতি বলেছেন - "দর্শনের গঙ্গা, বিজ্ঞানের সরস্বতী ও সাহিত্যের যমুনা-  ত্রিবেণী সঙ্গম তিনি।"
                                         বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিজ্ঞান ও দর্শন বিষয়ক একজন স্বনামধন্য প্রাবন্ধিক ছিলেন রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী। তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার জেমো গ্রামে ১৮৬৪ সালের ২০শে আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম গোবিন্দসুন্দর ও মাতা চন্দ্রকামিনী। 

শিক্ষা --- 
    শৈশবকাল থেকেই রামেন্দ্রসুন্দর মেধাবী ছিলেন। তিনি ১৮৮১সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ট্রান্স পরিক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৮৮৩ সালে বিঞ্জানে অনার্সসহ বি.এ পরিক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৮৮৭সালে এম.এ পরিক্ষায় স্বর্নপদক লাভ করেন। ১৮৮৮ সালে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নে প্রেমচাঁদ ও রায়চাঁদ বৃত্তি পান।


কর্মজীবন --- 
    রামেন্দ্রসুন্দর কলকাতার রিপন কলেজে প্রথম অধ্যাপক হন এবং ক্রমে এই কলেজের অধ্যক্ষ হন।

সাহিত্যজীবন ---
          রামেন্দ্রসুন্দরকে সঠিকভাবে জানতে গেলে বাংলা গদ্যভাষা ও বাংলার বিজ্ঞান শিক্ষার প্রচলন ও প্রসারের ইতিহাসকে জানতে হবে। সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ -পরিস্থিতি বিজ্ঞানচর্চাকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করেছিল। সাধনা,নবজীবন ও ভারতী প্রবন্ধ প্রকাশের মধ্য দিয়ে রামেন্দ্রসুন্দরের সাহিত্যিক জীবনের সূচনা হয়।ভাষাতত্ত্ব, প্র‍্যাচ্য-প্রতীচ্য দর্শন, বিজ্ঞান বেদবিদ্যা,লোকসাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে তাঁর অসাধারণ জ্ঞান ছিল। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও দর্শনের জটিল তত্ত্ব প্রাঞ্জল ভাষায় তিনি বিশ্লেষণ করেছেন। মাতৃভাষায় মাধ্যমে বিজ্ঞানচর্চাকে তিনি প্রাধান্য দিতেন। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলো --প্রকৃতি(১৮৯৬),জিজ্ঞাসা (১৯০৩),কর্মকথা(১৯১৩),চরিতকথা (১৯১৩),শব্দকথা(১৯১৭),বিচিত্র জগৎ (১৯২০),নানাকথা(১৯২৪)প্রভৃতি। তাঁর বেদচর্চার প্রমাণ পাওয়া যায় ঐতরেয় ব্রাহ্মণের বঙ্গানুবাদ (১৯১১)ও যজ্ঞকথা (১৯২০) এই বইগুলিতে।


তার রচিত গ্রন্থগুলি কে বিষয় বিন্যাসে আলোচনা করলে আমরা চারটি উপবিভাগ লক্ষ্য করি। 
১) রাস্ট্র ইতিহাস ও সমাজ ভাবনা মূলক। ২)
শিক্ষা চিন্তা বিষয়ক। ৩) স্বদেশ চিন্তা মূলক ও ৪) 
সাহিত্য বিষয়ক।
গদ্যশৈলী :
তিনি তার রচিত গদ্যের মধ্যে সর্বদা নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি র প্রকাশ ঘটিয়েছেন। সর্বত্রই একটা লজিক্যাল সিকুয়েন্স প্রতিস্থাপন করেছেন রচনা র ভারসাম্য রক্ষার্থে। তিনি গভীর তত্ত্ব বিশ্লেষণ করেছেন সহজাত গ্রহণযোগ্য উদাহরনের মধ্য 
দিয়ে , বাক ভঙ্গিতে পরিহাস রসিকতা, নেতি নেতি করে অস্তির দিকে পৌঁছানো যার লক্ষ্য তিনি অতিকথন দোষে রচনাকে ভারাক্রান্ত করেননি। তাই তিনি রথীন্দ্রনাথ রায়ের মত - " বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ও দার্শনিক গভীরতাকে সাহিত্যের অমৃত রসে পরিণত করার দুর্লভ শিল্প কুশলতার তার ছিল । "

তার মৃত্যুর পর মুর্শিদাবাদে বহরমপুরে গঙ্গা নদীর উপর নির্মিত সেতু -" রমেন্দ্রসুন্দর সেতু  " নামে আজ ও পরিচিত। 
স্মৃতি বিজড়িত সেই সেতুর এখন বেহাল অবস্থা । পারাপারের নানান অসুবিধা । দুর্ঘটনা প্রায় লেগেই আছে। এমন কোনো দুর্ঘটনা নয় ,  পরিণত বয়সে দীর্ঘ জীবনের সব সঞ্চয় রেখে তিনি ৬ ই জুন , ১৯১৯ সালে মারা যান।
জন্ম দিনে আমরা পরম শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি । 


শ্রী কানাইলাল জানা
গবেষণারত মেধাবী ছাত্র।
¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶§¶§¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶


No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...