নরেশ- ঠিক তাই । ঘরের কোণে ই জন্ম নেয় নতুন প্রাণ । আমিও সেই নতুনের জন্ম দিতে এসে ছিলাম। আমার প্রেয়সী তো এলো না । তাই জন্মালো না নতুন প্রাণ।
ডা: নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় (নাট্যকার)
--------প্রথম দৃশ্য --
একটি ফ্ল্যাটবাড়ির তিনতলার একটি ফ্ল্যাট। অবসরপ্রাপ্ত এক ভদ্রলোক ও তাঁর স্ত্রী লকডাউনের এই
সময়ে এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপে যাপন করছেন। দীপালি ও সুরঞ্জন। দুজনেই আজ একটু আগে টিভির একটা
খবর শুনে বিচলিত।
সুরঞ্জন-- আর ভাল লাগেনা। একে এই দেড়মাসের উপর গৃহবন্দী, করোনার ত্রাসে প্রাণ আজ ওষ্ঠাগত,
৷ ৷ ৷ ৷ তারপর কাল দুপুরে আসছে সুপার সাইক্লোন। কি যে হবে।
দীপালি - ওতো ভেবোনা তো, এই দুটো মাস তো কেটে গেলো, কালকেরটাও ঠিক কেটে যাবে।
সুরঞ্জন -- একশো আশি কিলোমিটার গতিবেগ, সেটাই ভয় পাওয়াচ্ছে। আর আমাদের এই অঞ্চলে গাছ
পালাও কম নেই, তাই
দীপালি - ছেলে দিল্লি থেকে ফোন করেছিল,মেয়েও গৌহাটি থেকে খোঁজ নিয়েছে, বাড়ি থেকে বেরোতে
বারন করেছে তোমাকে।
সুরঞ্জন - আমার চিন্তা হচ্ছে, মাঠে থাকে ঝুমা আর চয়ন কাঁচা বাড়ি, চারপাশে গাছপালা..
৷৷ কাল একবার তোমার ভাইপোর সাথে কথা বোলোতো, যদি আসতে পারে, সাংবাদিক, অসুবিধা হবেনা!
দীপালি - রাত হয়ে গেছে, খেতে দিচ্ছি, খেয়ে শুয়ে পড়ো তাড়াতাড়ি।
সুরঞ্জন - (উঠতে উঠতে) হু, চলো...
------------দ্বিতীয় দৃশ্য -----------
দীপালি - শুনছো, আমাদের হিমসাগর আমগাছ, কাঠাল গাছ পড়ে গেছে। লোডশেডিং, রাতে ঝুমা আর
চয়ন আসতে পারবেনা।
সুরঞ্জন- আসবে কি করে, ভাবছি কেমন আছে ওরা!
জল ভরে দিয়ে গেছে, মুড়ি আছে, দুধ আছে, রাতটা তাই খাবো
দীপালি- ফোনে ছেলে,বা মেয়ে কাউকেই পাচ্ছিনা। নেট নেই । আলো নেই।
কাল সকালে আমি বেরোবো, তাড়াতাড়ি ডেকে দিও।
_---------------তৃতীয় দৃশ্য --------_-
পাঁচদিন পর --
দীপালি - এই যে শুনছো, দেখো ঝুমা রাস্তার কল থেকে আজও আগের চারদিনের মতো জল তুলে, দুধ এনে, বাজার করে
৷৷৷ জল খাবার করতে রান্না ঘরে ঢুকে পড়েছে, আর চয়ন লোক ডেকে বাগান পরিস্কার করাচ্ছে।
সুরঞ্জন -- আমি যে ওদের মন টাকে চিনি দীপালি, তাই এত উতলা হই ওদের জন্য
দীপালি - ঠিক, বলেছো, ওরা আছে বলেই ছেলে মেয়ের অভাব বুঝিনা।
সুরঞ্জন -সম্পর্ক এভাবেই গড়ে, আর দুরত্ব এভাবেই কমে আসে।
দীপালি।- আমি আজ পাঁচদিন পর ছেলে আর মেয়ের সাথে কথা বলতে গিয়ে এই কথাই বললাম
৷ তোরা নেই, কিন্ত সব দুরত্ব মুছে আমরা আরেকটা ছেলে, মেয়ে পেয়েছিরে। আর এ কদিন
ওদের জন্যই খেতে, শুতে, পারলাম, সুস্থ হয়ে থাকতে পারলাম।
সুরঞ্জন - চোখে জল - চয়নের মা, মানে ঝুমার শাশুড়ী অসুস্থ, তাও ওরা এভাবে পড়ে থাকলো,
প্রান দিয়ে, করে গেলো। মাত্র সাত বছরের সম্পর্কের গভীরতায়।
দীপালি।- হুম, হয়তো, আগের জন্মে আমাদের সন্তান ছিল।।
---/----------/-----------------
বিষদাঁত
ডিএন প্রধান
(চরিত্র - সাবিত্রী, কামিনী. স্থান- রাস্তায়.
সময়- দুপুর বেলা)
কামিনী: এত জটলা কেন ?
সাবিত্রী : সাপুড়ে , পদ্ম গোখরা সাপ ধরেছে। এত বড় সাপ জীবনে দেখিনি !
কামিনী : তাই নাকি !
সাবিত্রী : সাপুড়ের কি সাহস, বিষাক্ত সাপটা কে খপ করে ধরে ওর বিষদাঁত ভেঙ্গে
ফেলল গা।
কামিনী : এ আর এমনকি সাবিত্রী ?
সাবিত্রী : বলিস কিরে কামিনী , এ সাহস নয় ?
কামিনী : আমি ওর চেয়ে ভয়ঙ্কর সাপের বিষদাঁত
নিজের হাতে ভেঙেছি।
সাবিত্রী : তাই নাকি, সাপটা কই ?
কামিনী : ঐ তো তোর সামনে দাঁড়িয়ে।
সাবিত্রী : উনি ত তোর শ্বশর।
কামিনী : শশুর নয়, ভয়ঙ্কর শঙ্খচূড় সাপ। উনার
সমস্ত সম্পত্তি আজ খেজুরি রেজিস্ট্রি
অফিসে উনাকে নিয়ে গিয়ে আমি
নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছি ।সাবিত্রী : বলিস কিরে কামিনী ?
কামিনী : তবে আর বলছি কি ?
---------------/---------------/-------
এডজাস্টমেন্ট
বিষ্ণুপদ জানা
চরিত্র : বিতান (স্বামী) ও বেবি (স্ত্রী, গ্রামীণ) এবং নীলা (পরস্ত্রী, অনিমেষের বউ, আধুনিক শহুরে)।স্থান : লঞ্চের ডাইনিং টেবিল । সময় : এক বর্ষণমুখর মধ্যাহ্ন। )
---- আমি তোমারও সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ, সুরের বাঁধনে …....
(কলিং বেল বেজে ওঠে , বেবি দরজা খোলে, ... গানটি মধুর সুরে বেজে চলেছে)
বেবি : কিগো তোমার আসতে এত দেরী হল !
বিতান : আর বলো না! যা অফিস হয়েছে ……
বেবি : এনলিস্টেড সব এনেছ ? । দেখি দাও ....
বিতান : মিলিয়ে দেখো। কি যে মনে করো, যতসব !
বেবি : রেগে যাচ্ছ কেন ? ফ্রেশ হয়ে নাও. লাঞ্চ রেডি করছি ।
বিতান : যাচ্ছি । ( টিং করে মোবাইলে ম্যাসেজ - বর্ষায় দিনে মন বসছে না , ডার্লিং তোমার কাছে যাচ্ছি ,নীলা)
# # # # # #
(বিতানের প্রিয় সব রান্না হয়েছে আজ, সাজানো টেবিল- সযত্নে পরিবেশন করছে বেবি)
বেবি : কি হলো ! শরীর খারাপ লাগছ ...
বিতান : (অন্যমনস্ক ভাবে বলে) এমন করছ কেন ? তুমি কি চিরকাল আনকালচারই থাকবে !
(হঠাৎ বাইরে কলিং)
বেবি দরজা খুলতে যাবে , বিতান বাধা দেয়। আরে দাঁড়াও , আমি দেখছি .….
বিতান : আরে , নীলা বৌদি যে । আসুন আসুন ।
( আনন্দে আপ্লুত হয়ে , হাসিমুখে বসতে বলেন ) বলুন , এমন বর্ষার দিনে মেঘপরী যেন , সো বিউটি ... । (চেয়ারটা আরো কাছাকাছি ----মুখোমুখি )
বেবি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, পূর্বের ঘটনাকে মনে করে । সভ্য যুগের পরকীয়া প্রেম কত মধুর .....
আধুনিক স্বাস্থ্য বিধান মেনে।
উভয়ের অজান্তে পরের গানটি বেজে ওঠে -
----- দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পরে
আমার সুরগুলো পায় চরণ
আমি পাই না তোমার ।।
-------------/------------------/_----------_
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
।
No comments:
Post a Comment