Monday, 24 August 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
                 জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

সজনী কান্ত দাস
(২৫.৮.১৯০০- ১১.২.১৯৬২)
এবং

তসলিমা নাসরিন
(২৫.৮.১৯৬২ - )

!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!®®®®®®®®!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
               Doinik Sabder Methopath
              Vol -110. Dt - 25.8.2020
                ৮ ই ভাদ্র, ১৪২৭. মঙ্গলবার
¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶

 
             বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের বাংলা সাহিত্য আন্দোলনের অন্যতম প্রাণ পুরুষ ছিলেন সজনী কান্ত দাস। তাঁর শনিবারের চিঠি পত্রিকা     সম্পাদনা প্রধান পরিচিতি।   ব্যঙ্গবিদ্রূপাত্মক 
অথচ হাস্যরসাত্মক সমালোচনার মাধ্যমে তিনি সমকালীন সাহিত্য কর্মকাণ্ড কে প্রাণসঞ্চার করছিলেন। ১৯৪৬ এ তাঁর বিরচিত "বাঙ্গালা গদ্যের প্রথম যুগ" বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অন্যতম প্রধান সংযোজন।
ব্যক্তিজীবন  :
সজনীকান্ত
 দাস জন্ম ১৯০০ সালের ২৫ আগস্ট বর্ধমান জেলার বেতালবন গ্রামে।কোলকাতায় লেখাপড়া করেন।
‘প্রবাসী’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং সেখানে চাকরিও নেন। শনিবারের চিঠি ছাড়াও তিনি বঙ্গশ্রীশারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকাঅলকাবঙ্গীয়-পরিষৎ-পত্রিকা প্রভৃতি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। এছাড়াও চিত্রলেখাবিজলীযুগবাণীনূতন পত্রিকাযুগান্তর প্রভৃতি পত্রিকার প্রকাশনায় তার বড়ো ভূমিকা ছিলো। কবি হিসাবে তিনি আধুনিক ছিলেন ।
রচনকর্ম : প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ষাটের অধিক। সজনীকান্তের কবিতাগ্রন্থ এগারোটি । 
এগুলো হলে :
পথ চলতে ঘাসের ফুল (১৯২৯), বঙ্গরণভূমে (১৯৩১?),মনোদর্পণ (১৯৩১?),অঙ্গুষ্ঠ (১৯৩১?),রাজহংস (১৯৩৫),আলো-আঁধারি (১৯৩৬),কেডস ও স্যান্ডাল (১৯৪০),পঁচিশে বৈশাখ (১৯৪২),মানস-সরোবর (১৯৪২),ভাব ও ছন্দ (১৯৫২) এবং পান্থ-পাদপ (১৯৬০)।

শনিবারের চিঠি ও সজনী কান্ত দাস

                     শনিবারের চিঠি বাংলাভাষার অন্যতম বিখ্যাত সাহিত্য-সাময়িকী। যা বিংশ শতকের প্রথমার্ধে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়েছিল। এটি ছিল একটি সাপ্তাহিক কাগজ। যোগানন্দ দাস এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তবে আদ্যোপান্ত শনিবারের চিঠি'র প্রাণপুরুষ ছিলেন কবি-সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাস। শনিবারের চিঠি দু‌ই পর্যায়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এর প্রথম প্রকাশ ১০ই শ্রাবণ ১৩৩১ তথা ১৯২৪ খৃস্টাব্দ। প্রতিষ্ঠালগ্নে সম্পাদক ছিলেন যোগানন্দ দাস। তবে ভাদ্র ১৩৩৪ এবং ফাল্গুন ১৩৩৪ সংখ্যা থেকে সজনীকান্ত দাস সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এতে যারা লিখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম মোহিতলাল মজুমদার এবং নিরোদ সি চৌধুরী।, এঁদের ভাষা ছিল ব্যঙ্গময় ; সমালোচনার লক্ষ্য ছিল হৃদয় জ্বালিয়ে দেওয়া।

                এই সাপ্তাহিক সাহিত্যপত্রটি ১৯৩০-৪০-এর দশকে কোলকাতাকেন্দ্রিক বাঙলা সাহিত্যের জগতে বিশেষ সাড়া জাগিয়েছিল। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের পথিকৃৎ কল্লোল, প্রগতি, কালি-কলম, পরিচয়, পূর্বাশা, কবিতা, চতুরঙ্গ প্রভৃতি পত্রিকাসমূহের সঙ্গে শনিবারের চিঠি’র নাম জড়িত অবিচ্ছেদ্যভাবে। রবীন্দ্রনাথ-প্রমথ চৌধুরী-শরৎচন্দ্র থেকে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখকদের সংখ্যায় সংখ্যায় তুলোধোনা করে পত্রিকাটি সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে গিয়েছিল। এর সঙ্গে কল্লোল গোষ্ঠীর দ্বন্দ ছিল আক্রমণাত্মক ; পাশ্চাত্য আধুনিকতার স্পর্শে উদ্বেলিত কল্লোল যুগের চার পাশ ঘিরে ছিল শনি'র চক্র। তবে শনিবারের চিঠি সে সময়কার সাহিত্যচেতনাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।

                      শনিবারের চিঠি'র অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল এর "সংবাদ সাহিত্য"।, এই অংশে সমসাময়িক কালে প্রকাশিত কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদি সম্পর্কে খবরাদি প্রকাশ করা হতো। ভাষা ছিল রম্য, কার্যত: ব্যঙ্গার্থক। কবি জীবনানন্দ দাশ যখন ছিলেন স্বপ্লালোচিত তথন শনিবারের চিঠিতে তাঁর অন্তত ৩৩টি কবিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।

 এ কথা ভাবা অন্যায্য হবে যে, ব্যঙ্গবিদ্রূপেই শনিবারের চিঠি নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছিল। শনিবারের চিঠি’তে তৎকালীন প্রধান লেখদের রচনা বিপুল পরিমাণে প্রকাশিত হয়েছে।

এ কথা ভাবা অন্যায্য নয় যে, ব্যঙ্গবিদ্রূপেই শনিবারের চিঠি নিঃশেষিত নয় । শনিবারের চিঠি’তে তৎকালীন প্রধান লেখকদের রচনা বিপুল পরিমাণে প্রকাশিত হয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করে । 

শনিবারের চিঠি ও রবীন্দ্রনাথ

শনিবারের চিঠি ও নজরুল :

                                 নজরুল এসব বিষয়ে তাঁর স্বভাবসুলভ উদারতায় প্রথম প্রথম তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। কিন্তু ক্রমাগত আক্রমণ এবং সৌজন্য ও শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে গেলে,  তিনি রবীন্দ্রনাথের মতো সংযম ও সহিষ্ণুতা দেখিয়ে নীরব থাকতে পারেননি। তাই তিনি ‘শনিবারের চিঠি’র বিরুদ্ধে কলম ধরেন এবং কখনো কখনো ঝাঁঝালো জবাব দিতে ছাড়েননি। সাপ্তাহিক ‘আত্মশক্তি’ পত্রিকার সম্পাদককে একটি চিঠিতে ‘শনিবারের চিঠি’ সম্পর্কে নজরুল যা লিখে ছিলেন  -

                     ‘আত্মশক্তি’ পত্রিকার ১৯২৬-এর ২০ আগস্ট সংখ্যা -
                  ‘আপনার “অরসিক রায়” এবং প্রবাসীর অশোকবাবুতে যখন কথা কাটাকাটি চলছিল তখন ওটা ইয়ার্কির মতো অত হালকা বোধ হয় নাই…। ‘ফারেন পলিসি’ আমরা বুঝিনে, তবে আমার এক বন্ধু একদিন বলেছিলেন, এ লেখালেখির শিগগিরই একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাবে, কেননা অশোকবাবুর লেখার ক্ষমতা না থাকা, তাঁর ঘুষি লড়বার ক্ষমতা আছে। …অশোকবাবুর লেখার কসরত দেখে আমার তাই মনে হয়েছিল বটে, কিন্তু বক্সিং শিখলে যে শক্তিশালী লেখক হওয়া যায়, এ সন্ধান আগে আমায় কেউ দেননি। তাহলে আমি লেখার কায়দাটা অশোকবাবুর কাছে দেখেই শিখতাম। আর অশোকবাবু ও তাঁর চেলাচামুন্ডরা আমার লিখতে শেখাবার জন্য কিরূপ সমুৎসুক, তা তাঁদের আমার উদ্দেশ্যে বহু অর্থ ব্যয় ছাপা বিশেষ সংখ্যা ‘শনিবারের চিঠি’গুলো পড়লেই বুঝতে পারবেন। বাগদেবী যে আজকাল বাগদিনী হয়ে বীণা ফেলে সজনে কাঠের ঠেঙ্গা বাজাচ্ছেন, তাও দেখতে পাবেন।"

                                তথ্য সংগ্রাহক ও লেখক 

                                     ড. বিষ্ণুপদ জানা 

==============///////===============


                 বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে একজন উদীয়মান কবি হিসেবে সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন তসলিমা । পেশায় চিকিৎসক। এই শতকের শেষের দিকে নারীবাদী ও ধর্মীয় সমালোচনামূলক রচনার কারণে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন। তিনি তাঁর রচনা ও ভাষণের মাধ্যমে লিঙ্গসমতা, মুক্তচিন্তা, নাস্তিক্যবাদ এবং ধর্মবিরোধী উগ্র মতবাদ প্রচার করায় ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীদের রোষানলে পড়েন ।

 ব্যক্তি জীবন : 
১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে আগস্ট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের ময়মনসিংহ শহরে তসলিমা নাসরিনের জন্ম হয়। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তার মাতা ঈদুল ওয়ারা গৃহিণী এবং পিতা রজব আলী পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ময়মনসিংহ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পাস করেন। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আনন্দ মোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পাস করেন। এরপর তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে এমবিবিএস পাস করেন।১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সরকারী গ্রামীণ হাসপাতালে এবং ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মিটফোর্ড হাসপাতালে স্ত্রীরোগ বিভাগে ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেকহা) তে অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।    
মাত্র তের বছর থেকে তসলিমা কবিতা লেখা শুরু করেন। কলেজে পড়ার সময় ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সেঁজুতি নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তসলিমার কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে শিকড়ে বিপুল ক্ষুধা নামক তার প্রথম কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে ও ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে আমার কিছু যায় আসে না কাব্যগ্রন্থগুলি প্রকাশিত হয়। এই সময় তসলিমা ঢাকা হতে প্রকাশিত নঈমুল ইসলাম খান দ্বারা সম্পাদিত খবরের কাগজ নামক রাজনৈতিক সাপ্তাহিকীতে নারী অধিকার বিষয়ে লেখা শুরু করেন।তার কাব্যগ্রন্থ ও সংবাদপত্রের কলামে নারীদের প্রতি মুসলিম মৌলবাদীদের শোষণের কথা লেখায় ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের মৌলবাদীরা এই পত্রিকার অফিস ভাঙচুর করে। এই সময় নির্বাচিত কলাম নামক তার বিখ্যাত প্রবন্ধসংকলন প্রকাশিত হয়, যার জন্য ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে তসলিমা আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে অতলে অন্তরীণবালিকার গোল্লাছুট ও বেহুলা একা ভাসিয়েছিল ভেলা নামক আরো তিনটি কাব্যগ্রন্থ; যাবো না কেন? যাব ও নষ্ট মেয়ের নষ্ট গল্প নামক আরো দুইটি প্রবন্ধসংকলন এবং অপরপক্ষশোধনিমন্ত্রণ ও ফেরা নামক চারটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়।

১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে লজ্জা নামক তার পঞ্চম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসে বাংলাদেশের মুসলিমদের দ্বারা একটি সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের ওপর অত্যাচারের বর্ণনা করা হয়।এই উপন্যাসটি প্রকাশের পর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় মুসলিম মৌলবাদীরা তসলিমার ওপর শারীরিকভাবে নিগ্রহ করে ও তার এই উপন্যাস নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি জানায়। গ্রন্থমেলা কর্তৃপক্ষ তাকে মেলায় প্রবেশ করতে নিষেধ করেন। এই বছর অক্টোবর মাসে কাউন্সিল অব ইসলামিক সোলজার্স নামক এক মৌলবাদী সংগঠন তার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে।

তসলিমা নাসরিনের সাতটি আত্মজীবনী গ্রন্থের অধিকাংশ বাংলাদেশ ও ভারত সরকার দ্বারা নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষিত হয়। আমার মেয়েবেলা নামক তার প্রথম আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে ইসলাম ও মুহাম্মাদের প্রতি বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষিত হলেও ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে এই বইয়ের জন্য তসলিমা দ্বিতীয়বার আনন্দ পুরস্কার জয় করেন। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তার দ্বিতীয় আত্মজীবনী উতাল হাওয়া বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষিত হয়।২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে  নামক তার তৃতীয় আত্মজীবনী বাংলাদেশ উচ্চ আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে এই বইটি দ্বিখণ্ডিত নামে প্রকাশিত হলেও ভারতীয় মুসলিমদের একাংশের চাপে নত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে বইটি নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষিত হলে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত লেখক মহলে তীব্রভাবে সমালোচিত হয়।] এই নিষেধাজ্ঞা ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বলবৎ ছিল। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে সেই সব অন্ধকার নামক তার চতুর্থ আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

কবিতা

  • শিকড়ে বিপুল ক্ষুধা, ১৯৮১নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে, ১৯৮৯আমার কিছু যায় আসে না , ১৯৯০অতলে অন্তরীণ, ১৯৯১বালিকার গোল্লাছুট, ১৯৯২বেহুলা একা ভাসিয়েছিল ভেলা, ১৯৯৩আয় কষ্ট ঝেঁপে, জীবন দেবো মেপে, ১৯৯৪নির্বাসিত নারীর কবিতা, ১৯৯৬জলপদ্য, ২০০০খালি খালি লাগে, ২০০৪কিছুক্ষণ থাকো, ২০০৫ভালোবাসো? ছাই বাসো!, ২০০৭বন্দিনী, ২০০৮
প্রবন্ধ সংকলন
  • নির্বাচিত কলাম, ১৯৯০যাবো না কেন? যাব, ১৯৯১নষ্ট মেয়ের নষ্ট গল্প, ১৯৯২ছোট ছোট দুঃখ কথা, ১৯৯৪নারীর কোন দেশ নেই, ২০০৭নিষিদ্ধ, ২০১৪তসলিমা নাসরিনের গদ্য পদ্য, ২০১৫
উপন্যাস
  • অপরপক্ষ ১৯৯২শোধ, ১৯৯২নিমন্ত্রণ, ১৯৯৩ফেরা , ১৯৯৩লজ্জা, ১৯৯৩ভ্রমর কইও গিয়া, ১৯৯৪ফরাসি প্রেমিক ,২০০২শরম,২০০৯
ছোট গল্প
  • দু:খবতী মেয়ে, ১৯৯৪মিনু, ২০০৭
আত্মজীবনী
  • আমার মেয়েবেলা, ১৯৯৯উতাল হাওয়া, ২০০২, ২০০৩;(পশ্চিমবঙ্গে দ্বিখণ্ডিত নামে
  • প্রকাশিত, ২০০৩)সেই সব অন্ধকার, ২০০৪আমি ভালো নেই, তুমি ভালো থেকো প্রিয় দেশ, ২০০৬নেই, কিছু নেই, ২০১০নির্বাসন, ২০১০.

তসলিমা নাসরিনের জীবনভিত্তিক প্রথম চলচ্চিত্র নির্বাসিত ২০১৪ সালে মুম্বাই চলচ্চিত্র উৎসবে মুক্তি পায়।২০১৫ সালে এই চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ বাংলা চলচ্চিত্র বিভাগে ৬২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছে. 

সম্মান -তসলিমা তার উদার ও মুক্তচিন্তার মতবাদ প্রকাশ করায় দেশ-বিদেশ থেকে একগুচ্ছ পুরস্কার ও সম্মাননা গ্রহণ করেছেন। সেগুলো হলো -

আলোচনা : 

      লেখক তসলিমা নাসরিন
                                        
                                     ড. বাপ্পাদিত্য মাইতি 
                              প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক
                                  
                       ছাত্রাবস্থায় পড়তে হয়েছে বিস্তর ,
বুঝতে হয়েছে অল্প। নামকরণ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় একটা স্টিরিওটাইপ ব্যাপার একেবারে রেডিমেড থাকতো । যেকোনো নামকরণ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে সর্বঘটে কাঁঠালি কলার মত কয়েকটি বাক্য শুরুতেই লিখতাম। যেমন শিশুর নামকরণের পেছনে পিতা-মাতার স্নেহই কাজ করে শিশুর ব্যক্তিত্ব নয়। তাই কানা ছেলের নাম হয় পদ্মলোচন। রাস্তায় ঘোরা কুকুরের নাম হয় বাঘা। অর্থাৎ পিতৃ -মাতৃ -পরিবারদত্ত নাম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুখ ভেংচায়। শেক্সপিয়র তো বলেই ফেলেন - নামে কি আসে যায় ।কিন্তু এখন বুঝি সব ক্ষেত্রে তা হয় না , অন্তত তসলিমা নাসরিনের ক্ষেত্রে ।" তসলিমা " আরবি ফারসি শব্দের অর্থ হলো "অভিবাদন' । 'নাসরিন' অরণ্য গোলাপকে বোঝায়। অভিবাদন হে অরণ্য গোলাপ । এই হলেন তসলিমা নাসরিন। এবং আক্ষরিক অর্থে তিনি তাই। তিনি অরণ্যের মত প্রাণবন্ত,  বিরুদ্ধ আচরণে সহনশীল আবার যুক্তির কাঁটায় কিছু তীক্ষ্ণ ও বটেন।
         জন্ম তাঁর পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৬২ তে । ন'বছর পর স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। অবশ্য তা ক্ষণিক । বিশ্বনাগরিক আজীবন। অনিকেত শব্দের আভিধানিক অর্থকে বাস্তব রূপ দিয়েছেন এই বন্য গোলাপ। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হওয়ার রক্তাক্ত শ্বাপদ সংকুল পথ ভয়ার্ত চোখে দেখেছেন বালিকা বেলায়। কৈশোর যৌবনে দেখেছেন মুক্ত বুদ্ধির বাবা ডা: রজব আলিব ক্রমশ ধর্ম আর প্রাণহীন লোকাচারে আচ্ছন্ন হওয়ার ঘোলাটে দৃষ্টি। ধর্ম আচ্ছন্ন মায়ের আরো যুক্তিহীনতায় হারিয়ে যেতে থাকা "আমার মেয়েবেলা" তে জীবন বিমুখ সংস্কারের চোরাবালিতে ডুবে যেতে থাকা মায়ের অসাধারণ সব কোলাজ এঁকেছেন তিনি। মিশনারিদের কাছ থেকে তসলিমার ছোটদা রকেট নামের কুকুরকে বাড়ি নিয়ে এলে একেবারে হুলুস্থূল  পড়ে যায় । ট্রেন্ড কুকুরের আচরণ বাড়ি শুদ্ধ সবাইকে আপ্লুত করলে ও  মা যেন কেমন এক অনুভূতি চালিত হন । লেখিকার গোলাপি গদ্যে তা একেবারে পক্ষপাতহীন- 
" মা জায়নামাজে বসে চেঁচান  - কুত্তাটারে দূর কর। কুত্তা থাকলে বাড়িতে ফেরেসতা আয়ে না। "
   তসলিমা নাসরিন অকপট, মুক্ত বুদ্ধির চর্চায় ডর হীন । সমুদ্র শক্তিতে ধুয়ে দিতে চান কুশিক্ষার সৈকত। ধর্মের ক্ষয়াটে অনুশাসন ধর্মব্যবসায়ীদের অত্যাশ্চর্য ফতোয়া কোন কিছুই স্বভাবে যুক্তিবাদী লেখিকাকে কাত করতে পারে না।
      যখন বেশিরভাগ আত্মকথন মোড়কবেষ্টিত শীলিত মনোভঙ্গির বিজ্ঞাপন,  সেখানে এই সাহসিনী একেবারেই মুক্তকণ্ঠ। আমন কাকা সাত বছর বয়সী তসলিমাকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন তাকেই আবার নামাজ রোজায় আস্থাশীল মায়ের সঙ্গে অন্ধকার ঘরে অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখে তসলিমা লেখেন একেবারে মেদ হীন গদ্য -
" যে লোক সাত বছর বয়সী আমাকে ন্যাংটো করেছিল, সে লোক অন্ধকারে মা'কেও ন্যাংটো করেছে বলে আমার আশংকা হয়।"
      অশোক মিত্র "আমার মেয়েবেলা" তে মুগ্ধ বিমোহিত। তাঁর মেধাবী বিশ্লেষণের খন্ডাংশ -
    " এরকম দুঃসাহসী বই বাংলা সাহিত্যে এর আগের লেখা হয়েছে বলে মনে হয় না, আমার মেয়েবেলার প্রতিটি পৃষ্ঠায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এক আশ্চর্য সততা যা হৃদয়হীন অথচ যাতে আছে সেই সঙ্গে গভীর মমতার কমনীয় আশ্লেষ ".
                     শরাফ মামা, আমন কাকা, ফজলি খালা , ফুলবাহারী, মনি ,রুমি নানা চরিত্রের নানা কথা , নানা ফিকির,  অসহায়তা কী অসাধারণ শিল্পবোধের সাহায্যেই না উঠে এসেছে।    
                         ১৯৯২ সালে অযোধ্যার বিতর্কিত নির্মাণের ধ্বংসপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে হিংসার যে আগুন জ্বলে তা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের জীবনকে একেবারে বিধ্বস্ত করে।  হাসপাতালের ডাক্তার হিসেবে তসলিমা দেখেছিলেন অসহায় মানুষগুলির আর্তনাদ, লিখলেন "লজ্জা " ।উপন্যাসের শৈলী বিচারে তা অবশ্যই প্রথমশ্রেণীর শিল্প নয়,  কিন্তু বক্তব্যের বলিষ্ঠতায় লেখিকা পন্ত্পরা লেখক। ধর্ম কারাতে বজ্রাঘাতের সূচনা করার পরিনাম - আত্মগোপন, নির্বাসন । কঠিন কোমল গদ্য কে সঙ্গী করে তিনি আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর যে ভাষণ রচনা করলেন তা বিবেকী মানুষদের বিপুলভাবে আলোড়িত করে। তসলিমা বিতাড়িত হলেন নিজের দেশ থেকে। মৌলবাদের আস্ফালনে । 
                         সেই সব ঘটনা  তাঁর  "সেই সব অন্ধকার"  বইতে স্পষ্ট। সমসময়ের বাংলাদেশ তাঁকে নিয়ে যে আলোড়ন উঠেছিল- তার এক দলিল গ্রন্থটি। ধর্ম ,পুরুষকন্ঠ একেবারে খাপ খোলা তরবারি নিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা করতে প্রস্তুত। মূলত আন্তর্জাতিক চাপের জন্য, স্বদেশের মুক্তমনা অতি সামান্য মানুষদের সাহায্যে তাঁর স্বদেশ ত্যাগ । যে ত্যাগ সম্ভবত  চিরদিনের , যে নির্বাসন আত্ম অনিচ্ছার, রক্তক্ষরণের। সংবেদী হওয়ার দারুন মূল্যের। কিন্তু বিমানে যাত্রার সময় নিজের ক্ষুদ্র ধর্ম মোড়কে আক্রান্ত দেশকে  দেখে তাঁর যে বুক মচড়ানো আলোড়ন ওঠে তা যেন উতল হাওয়া ই হয় -
      " নিষ্ঠুর বিমানটি আরো মেঘ ফুঁড়ে মেঘের উপর উঠে যায়। আচমকা অদৃশ্য হয়ে যায় আমার দেশটি , বড় প্রিয় দেশটি । নিজের একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দে নিজেই চমকে উঠি । শ্বাস টা কি নিশ্চিতের ! স্বস্তির! জীবন ফিরে পাওয়ার. নাকি বেদনার! অনিশ্চয়তার! জীবন হারানোর।"
 
        অবাধ্য মেয়ের এই বাধ্য নির্বাসন যন্ত্রণার। যে মৌলবাদ মধ্যযুগীয় ধর্মবোধে আচ্ছন্ন হয়ে আধুনিক মুক্তচিন্তাকে হত্যা করতে চায় , তার প্রতিবাদী আজ অনিকেত। তসলিমার মুক্তচিন্তা , যুক্তির বেড়াজালে অর্থহীন অযুক্তিকে আটকে দেয়ার প্রয়াস,   যে কোনো অর্থেই মুক্তবুদ্ধির চর্চার ক্ষেত্রে তুলনারহিত। প্রতিপক্ষের কুযুক্তির ভয়ঙ্কর থাবাকে অসাধারণ গদ্য, স্বচ্ছ দৃষ্টি আর  বিশ্ববোধের সাহায্যে  ছিন্নভিন্ন করেছেন।
               পৃথিবীর নানা প্রান্তে ঘটে চলা অমানবিক কার্যকলাপ, ধর্মীয় উন্মাদনা তসলিমার চোখের এড়ায় না । অকপট ভাবে  নিজের অনুভূতির জগতকে অক্ষর আশ্রিত করেন। তাঁর গদ্য শুধু তীক্ষ্ম নয়, অতি সাবলীল।মেধার মিশ্রণে যে গদ্য অনেক  সুখপাঠ্য। নানা নেতিবাদী আক্রমণে জীবন যখন নীরস গদ্য , তখন মুক্তিবুদ্ধির অনেক সুখপাঠ্য। এই  গদ্য জীবনকে বাঁচার প্রেরণা ও দেয়। ধর্মতন্ত্রের জালে আচ্ছন্ন পৃথিবীর একাংশে তাঁর লেখনি এক  অন্য উচ্চতার কথা বলে। অভিবাদন, সে অরণ্য গোলাপ।


                                    
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
তথ্য ঋণ - 
- উইকিপিডিয়া
- বাংলা পিডিয়া।
============®®®®®®®®®====≠====





No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...