ছড়া বিষয়ক সংখ্যা।
পর্ব - ২
=================================
Doinik Sabder Methopath
Vol -93. Dt - 08.08.2020
২৩ শ্রাবণ ১৪২৭. শনিবার
@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@
ইচ্ছেডানা
সুকান্ত আচার্য
ইচ্ছে ছিল ইচ্ছে মতন 'ইচ্ছেগুলো' করবো পূরণ,
ইচ্ছে করেই 'ইচ্ছেগুলো' দিল আমায় ফাঁকি।
তাই তো আজ ফন্দি করে, 'ইচ্ছেগুলো'র কানটা ধরে,
হৃদয়ের সেই চিলেকোঠায় নিলাম তাদের ডাকি।
তারপর ঠিক জব্দ করে, আস্তে করে ঘাড়টা ধরে
'ইচ্ছেগুলো'র দুই দিকে লাগিয়ে দিলেম ডানা।
তখন দেখি অবাক চোখে, মনের বন্দি খাঁচা থেকে-
আকাশ পানে দিয়েছে পাড়ি আমার 'ইচ্ছেডানা'।
ইচ্ছে আছে তোমার আমার, ইচ্ছে আছে সবার,
শুধু ইচ্ছে গুলোয় ডানা লাগাও, সুযোগ দাও ওড়ার।
---------------+++++------------
বুলবুলি
শ্যামাপ্রসাদ ঘোষ
একটা ছড়া লিখব বলে
পেনটাকে যেই খুলি,
সামনে এসে ঘুরতে থাকে
একখানা বুলবুলি।
তাকে বলি, আচ্ছা আচ্ছা
লিখব তোকেই নিয়ে,
তার আগে তুই আমার খাতায়
ঠোঁটখানা দে বুলিয়ে।
বোলাস বলেই বুলবুলি তুই
সেইটা আমি বুঝি,
তাই আমি তোর ঠোঁটের মাঝেই
নামের মানে খুঁজি।
শুনেই পাজি বুলবুলিটা
হঠাৎ উড়ে যায়,
ওকে নিয়ে ছড়া লেখা
আমার হলো দায়।
মনটা রেখো ছোট্ট বেলায়।
অঞ্জনকুমার দাস
লিখব বল্লেই যায় কি লেখা ছোটদের জন্য ছড়া?
যেথায় সেথায় যায় না পাওয়া মোহর ঘড়া ঘড়া
রূপকথার সেই পক্ষীরাজ কি রাক্ষস বা খোক্ষস,
তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে রূপনগরের জৌলুস ।
লিখতে যদি চাও ছড়া নিয়ে ওসব কথা ,
বূঝতে যদি চাও গো তুমি দুয়োরানীর ব্যথা ,
রাজকন্যা সোনার খাটে রূপোর খাটে পা,
লিখতে কি চাও তুমি নিয়ে ওসব কথা ?
মজতে যদি চাও গো তুমি এ সব কল্পকথায়,
মনটা তবে রাখতেই হবে সেই ছোট্ট বেলায়।।
+++++++++++++---------++++++++++
ছড়ানো ছিটোনো
নন্দিনী সরকার
দিন গুলো হায় কাটছে বড়ই
ইকির মিকির চামচিকে,
মন গুলো আজ টানছে দুরে
ডাইনে বাঁয়ে সব দিকে।
মরা বাঁচার লড়াইটা যে
লড়ছে মানুষ এগিয়ে গিয়ে,
তারই মাঝে ব্যবসা করে
পশু কিছু মুখোশ নিয়ে।
ভেতর থেকে শক্তিশালী
থাকতে হবে সবাইকে,
প্রকৃতি মাঝে খুঁজতে হবে
মূল্যবান সে রতনকে।
দুরে থেকেও যেও না দুরে
বাঁচাও বৃদ্ধ আর্তজন ,
রুগী নয় , রোগ যে শত্রু
বুঝবে কবে জনগণ?
+++++++++------++++++++++++
শৈশব ভার
অজিত জানা
খুদে কাঁধে চেপেছে ভার
শৈশব অন্ধকার
অসহনীয় পড়ার ভার
জীবনের হার
শিরদাঁড়া যায় বেঁকে
অন্ধ চেয়ে দেখে
মা-বাবা বলে হেঁকে
তাক না বেঁকে
পড়াশোনায় হোক কষ্ট
জীবনটা হবে স্পষ্ট
অমূল্য সময় না হোক নষ্ট
বই হোক ঘনিষ্ঠ
সহ্যের নাই বিকল্প
খুশি থাকে অল্প
লেখাপড়া মহৎ প্রকল্প
শিশুশিক্ষা এক শিল্প।
+++++++++++++--------+++++++++++
বর্ষা মেঘ
র জ ত দা স
রঙ বাহারে মেঘলা আকাশ
খোঁপায় গুঁজে ফুল
দিনের আলোয় সন্ধ্যা নামে
চমক বিলকুল।
মেঘের মুলুক বৃষ্টি ভেজায়
মাথায় তুলি ছাতা
ঝাপসা চোখে টইটম্বুর
রাস্তা আঁকাবাঁকা।
গুঁড়ো গুঁড়ো জলের দাগ
ভিজিয়ে দিল মাটি
গন্ধে স্বাদে মুখরোচক
রাঁধুন পরিপাটি।
মেঘের শুধু ফ্যাসফ্যাসানি
উড়ন্ত হাঁস ছানা
মুষলধারায় আঁকতে থাকি
মেঘদূতের ডানা।
+++++++++++++++++++++++++
তোদের জন্যে
গৌতম হাজরা
তোদের জন্যে লিখছি ছড়া
তোদের জন্যে ছবি,
তোদের জন্যে আনছি ভোর
তোদের জন্যে রবি।
তোদের জন্যে লিখছি ছুটি
তোদের জন্যে হাসি,
তোদের জন্যে নীলাকাশে
জোনাক রাশি রাশি।
তোদের জন্যে স্নিগ্ধ বাতাস
তোদের জন্যে ছন্দ,
তোদের জন্যে গানের ছন্দে
আনছি যে আনন্দ।
তোদের জন্যে এই তো নদী
তোদের জন্যে নৌকো,
তোদের জন্যে পাতায় ভরা
লাল নীল গোল চৌকো।
++++++++++++++++++++++++++
অরুচির ওষুধ
তপনকান্তি মুখার্জি
রাজা বললেন , অরুচি আমার
মুখেতে নেই স্বাদ ,
খাচ্ছি শুধু খেতে হয় তাই
জিভেতে বিস্বাদ ।
কবরেজমশায় , তোমার কাছে
নিদান কিছুই নাই ?
পাঁচনবড়ি , তেঁতো ওষুধ
সব খাব রে ভাই । '
রাজবদ্যি বলেন হেসে ,
' আমিষ করুন বন্ধ ,
অচিরেতেই ফিরবে স্বাদ
নেইকো আমার সন্দ । '
' তার চে' যারা প্রতিবাদী
তাদের মাংস খেলে ,'
রাজা বললেন , তাড়াতাড়িই
সুফলটুকু মেলে । '
++++++++++++++++++++++++
ব্যাধি মহারাজ"
কুমার আশিস রায়
এক যে এল মহামারী, অতি বদের ধাড়ী
ছাড়ছে না সে বাচ্চা-বুড়ো হোক না
পুরুষ নারী দেখতে তারে পাচ্ছে না
কেউ চশমা দিয়েও চোখে,কারণ,
সেতো সুক্ষ্ম বড়, বলছে নাকি লোকে ।
ইনি নাকি বর্তমানে সকল রোগের রাজা,
বেয়াদপি করলে তারে দিচ্ছে এমন সাজা ।
সকল দেশের শাসন এখন, এনার নিজের হাতে,
তোয়াজ ক'রে চলছে সবাই -ক্ষেপে না যান যাতে ।
মেলামেশায় আছে বাধা, থাকছে সবাই দূরে,দিচ্ছে সবাই ধরলে তাকে হাসপাতালে পুরে ।
ছেলেপুলের পড়াশোনা সবই উঠলো লাটে,
মানা আছে বুক ফুলিয়ে চলা রাস্তা ঘাটে ।
লেগে পড়ে উঠেছে সব বিজ্ঞানীদের দল,
বলছে নাকি পড়বে ধরা মহামারীর ছল ।
এনার স্বভাব দোষেই জ্বর, ব্যথা, কাশি হাঁচি,
ছাড়ুন "ব্যাধি মহারাজ" --- এবার কেঁদে বাঁচি ।
+++++++++++++++++++++++++++
মনের অসুখ
অনিমেষ মন্ডল
বিদ্যাবতীর মনের অসুখ চুপটি করে বসে
গান ছেড়েছে,নাচ ভুলেছে,বই উঠেছে লাটে,
বাবা মায়ের কড়া হুকুম,"শুধুই ঘরে থেকো
এক্কা দোক্কা যাই খেলো, যেও না আর মাঠে"।
স্কুলের পড়া হৈ হুল্লোড় বন্ধুরা সব দূরে
বিদ্যাবতীর মনে এখন সেই ছবি সব ভাসে,
উদাস চোখে দৃষ্টি আঁকে দূর আকাশের বুকে
ঘুড়ির মতো ভেসেই চলে মেঘ রাণীদের দেশে।
আবোল তাবোল মাথায় জাগে, হারিয়ে গেছে কোথা
পাখির মতো উঠবে ভোরে, ঘাসের মতো দুলে,
অসীম আকাশ,বাউল বাতাস, প্রজাপতির ডানা,
ভাটির টানে সুর ধরেছে মাতলা নদীর কূলে।
পক্ষীরাজের ঘোড়ায় চেপে দুঃখী মায়ের দোরে
এক নিমেষে ছুঁ মন্তর দুঃখ ঘোচায় হেসে,
সবার কাছে এমন শত ভাবনা যখন বলে
ধমক খেয়ে একাএকা এসব ভেবেই হাসে।
+++++++++++++++++++++++++++++++++
নালিশ
কৃপাণ মৈত্র
নালিশটা এই দিলাম ঠুকে
জজ সাহেবের দরবারে
পুবেতে যে সূর্য উঠে
পশ্চিমে যায় কার দ্বারে?
জোয়ার-জলে ফুলে সাগর
ভাটায় কেন রুগ্নকায়
শীতের সময় উত্তরবায়ু
গ্রীষ্মে কেন বিরুধ বায়?
ডানা নেই তো মেঘ গুলো সব
কেম্ নে উড়ে আকাশে
কি উপাদান আছে এমন
মানুষ বাঁচে বাতাসে ?
প্রশ্ন আমার অনেক আছে
সাজিয়ে ফেলা চাই
শুনবো না তো বাহানা কোন
সদুত্তর চাই চাই।
+++++++++++++++++++++++
চিনা মেয়ে
শোভন বিশ্বাস
চিন থেকে এল মেয়ে
যেন কত চেনা
মুখখানা গোলগাল
চোখ টানাটানা
অচেনা ভাষায় বলে
ফিন ফান ফোন
আমার বুকের মধ্যে
বাজে রিং টোন
ঠোঁটে তার তিল ছিল
চুলে ছিল খোঁপা
গোধূলির রঙে তাকে
লাগছিল তোফা
ভাবলাম তাকে এক
শুভেচ্ছা জানাই
পিছনে তাকিয়ে দেখি
সে তো আর নাই।
+++++++++++++++++++++++
মানুষখেকো ভাইরাস
শ্রাবণী বসু
উধো বলে -হ্যাঁ রে বুধো ,
একথা কি ঠিক?
করোনা মানুষখেকো
আছে চারদিক?
বুধো বলে , মাথা নেড়ে-
ঠিক-ঠিক-ঠিক-
ভাইরাসে ভরে গেছে
দশখানা দিক।
উধো বলে, উপায় কী
কী শর্তে বাঁচা?
বুধো বলে, চারপাশে,
গড়ে তোলো খাঁচা।
বিজ্ঞান,গবেষণা -
ঘেমে হলো চান,
বুধো বলে ,ঘরে থাকো
বাঁচাবে তো প্রাণ।
+++++++++++++++++++++++
টাক ডুমা ডুম্ !!
গোবিন্দ মোদক
টাকের 'পরে ডুম্ লাগিয়ে
বাজাচ্ছে টাকডুম্,
এতোল-বেতোল নাচন-কোঁদন
বারো বাজছে ঘুম !
ভাতের পরে ঘুম লাগিয়ে
ভাতঘুমটা আনো ,
নিজে বাঁচলে বাপের নাম
কথাটা তো মানো !
চালের 'পরে বাজ পড়ে নি
তবু ওরা চালবাজ,
ছল-ছুতো করে ঠকিয়ে দেবে
এটাই ওদের কাজ !
তাই যতোই ওরা তেলটা মাখাক
হিসাবটা করে চলো,
ফেলো করি মাখো রে তেল
এই কথাটাই বলো !!
++++++++++++++++++
বৃষ্টি এলে
জয়দেব মাইতি
ঝির ঝির ঝির বৃষ্টি এলে
আকাশ বলে গান
গাছেরা সব মেতে ওঠে
ফেরায় অভিমান।
চাতক আবার ডেকে ওঠে
ডাহুক চড়ায় সুর
চুনোর দলে দারুণ মজা
আনন্দে ভরপুর।
কৃষকবন্ধু বেজায় খুশি
বৃষ্টি এলো বলে
ভাটিয়ালি গাইবে তারা
রোপণ করার কালে।
স্মৃতি এমন জেগে ওঠে
বৃষ্টি আসার ছলে
দু'ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে
ভালোবাসার ভুলে।
-------------+++++++----------------
বর্ষার সাতকাহন
ডাঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
চারদিকে ঝোপঝাড়, বৃষ্টির ধারাপাত -
শ্রাবণের আকাশটা কেঁদে গেলো সারারাত।।
রাস্তায় থইথই জল টইটম্বুর
ব্যাঙের গলায় শুনি সমধুর সুর ।।
ইস্কুলে ঢং ঢং বেজে যায় ঘন্টা,
আকাশের তান্ডবে পড়া লবডঙ্কা।
রেনি ডের খুশীতে ছেলে বুড়ো হল খুশী,
খিচুড়ির ভোজে পাতে ইলিশের দেখো হাসি।।
শাপলা আর কলমীতে ভাব, ভালবাসা, বন্ধন-
মাছেদের আখড়াতে শুনি আনন্দের কুহুতান।
ও পাড়ার জেলেনী মাছ ধরে নদীতে
জঙ্গল পেরিয়ে আসে মাছ নিয়ে হাটেতে।।
শহরের রাজপথ জলে ভাসে হয়ে যায় এক নদী,
সওয়ারী নেই তবু ঘন্টা বাজিয়ে ট্রাম যায় নিরবধি।
রাত নামে বিজলির বাতিতে, জোনাকির পাখায় -
বর্ষায় সাজে প্রকৃতি, স্পন্দন শঙ্খচিলের ডানায় ।।
------------------++++++----------------
শ্রাবণ দিনে
দেবাশিস চক্রবর্ত্তী
আজকে শ্রাবণ অন্যরকম
আজকে শ্রাবণ ফিঁকে ,
আজ শ্রাবণের অশ্রুধারা
ঝরছে দিকে দিকে !
কেউ ভালো নেই, এই শ্রাবণে
সবাই বড়ো একা,
ঝর ঝর বাদল রাতেও
প্রেম দিলোনা দেখা !
শ্রাবণ আসে প্লাবন নিয়ে
হৃদয় হয় বিভোর ,
আজ পৃথিবীর মন ভালো নেই
অসুখ ঘনঘোর !
আকাশ জুড়ে শ্রাবণ মেঘে
বিষাক্ত ভাইরাস ,
সবাই দূরে যাচ্ছে সরে
সবার মনে ত্রাস !
-------------++++++---------------
খুকুর অভিমান
বিপুল কুমার ঘোষ
সাত সকালে মায়ের কাছে
খুকুমণির বায়না,
পরীর মতন পুতুল নেবে
আর কিছু সে চায় না ।
ঘুমের মাঝে ফুলপরীরা
আসে ভানা মেলে ।
আবার তারা যায় যে চলে
খুকুর সাথে খেলে ।
বায়না খুকুর পুতুল পরী
মা তাকে দিক কিনে,
মা হেসে কয় , --রাতের পরী
আসে না যে দিনে ।
ঠোঁট ফুলিয়ে তাইতো বসে
অভিমানী মেয়ে,
টাপুর টুপুর বৃষ্টি ঝরে
খুকুর দু'চোখ বেয়ে ।।
----------------+++++----------------
মধুমিতা
কাজী সামসুল আলম
গান করে মধুমালা
ভাল নাচে মিতা
দুজনে সুপারহিট
জুটি মধুমিতা
রোজ রোজ ওরা করে
নাচ গান মস্তি
ডাক পড়ে প্রতিদিন
গলি থেকে বস্তি
সাদাসিধে মধুমালা
নাক উঁচু মিতা রায়
এনেছে স্বপ্না দেকে
খুব ভালো গান গায়
মিতা রায় সুন্দরী
সজ্জা ও চেহারায়
মনে মনে ভালবাসে
স্বপ্নার ছোট ভাই
অবশেষে রাজি হল
সুন্দরী মিতা রায়
বর তার গিটারিষ্ট
সেও ভাল গান গায় ||
খোকার মুখটি ভার
বিষ্ণুপদ জানা
রাতে বিরেতে যখন খুশি
মুখে খোকার বেজায় হাসি।
কথা বললে ঠোঁটটি লাল
আড্ডা মারলে মায়ের গাল।
খেতে বসলে মুখটি ভার
যেন কতক মনের হার।
গান বাজনা হয়না ভালো
পাড়া পড়শি খুবযে কালো।
পড়া শোনায় নাইক ফাঁকি
অংক কষে মুখটি ঝাঁকি।
খেলা ধূলায় বিকেল বেলা
নদী-নালায় ভাসায় ভেলা।
খোকা এখন ঘরের বন্দি
চলে না আর শাসন ফন্দি।
কবে আবার ফিরবে দেশ
খোকা ভাবে সময় শেষ।।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment