Monday, 21 September 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
                   আলোচনা পর্ব
    
বিদ্যাসাগর মহাশয় ও রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব
===============!!!!!!!!!!=============
            Doinik Sabder Methopath
            Vol- 138 . Dt -22.9.2020
               ৫ আশ্বিন,১৪২৭. মঙ্গলবার
===============!!!!¡!!!!!!========≠===

                       ১৮৮২ সালের ৫ অগস্ট (শনিবার) বিদ্যাসাগরের সঙ্গে রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রথম ও শেষ সাক্ষাৎ হয়। শ্রীম রচিত শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ
কথামৃতের বিবরণে আছে এই সাক্ষাৎকারের সময় রামকৃষ্ণ পরমহংসের সঙ্গে ছিলেন ভবনাথ চট্টোপাধ্যায়, প্রতাপ হাজরা এবং মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত ওরফে মাস্টার ওরফে শ্রীম, যিনি লেখক। এই বিবরণ অনুযায়ী ওই সাক্ষাৎকার ৫ ঘন্টা ধরে চলেছিল। কিন্তু বিবরণ পড়লে তা মনে হয় না। একথা অনীস্বকার্য যে সাক্ষাৎকারের বর্ণনার Detailing সত্যিই প্রশংসনীয়। শ্রীম অর্থাৎ মহেন্দ্রনাথ গুপ্তর মধ্যস্ততায় বাদুড়বাগানের বিদ্যাসাগরের বাড়িতে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেখা করতে যান।
 (১) বিদ্যাসাগরের সাথে রামকৃষ্ণর আগ্রহী বেশি ছিলেন, বিদ্যাসাগরের যে এই সাক্ষাতে বিশেষ আগ্রহ ছিল না তা এই বিবরণী পড়লেই বোঝা যায়। রামকৃষ্ণ পরমহংস যখন বাদুড় বাগানের বাড়িতে পৌঁছান তখন বিদ্যাসাগর দোতলার ঘরে ছিলেন। এই আগমনে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের অভ্যর্থনা ছিল নেহাতই সাদামাটা। বিদ্যাসাগরের বাড়িতে পৌঁছে রামকৃষ্ণদেবেরা একতলার বাইরের ঘরে অপেক্ষা করছিলেন। শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণকথামৃতে প্রথম দিকেই এই বাইরে ঘরে তার বর্ণনা আছে।
“টেবিলের উপর যে পত্রগুলি রহিয়াছে – তাহাতে কি লেখা রহিয়াছে? কোন বিধবা হয়ত লিখিয়াছে আমার অপগোন্ড শিশু অনাথ, দেখিবার কেহ নাই, আপনাকে দেখিতে হবে। কেহ লিখিয়াছেন আপনি খরমাতায় চলিয়া গিয়াছেন তাই আমরা মাসোহার ঠিক মত পাই নাই, বড় কষ্ট হইয়াছে। কোন গরীব লিখিয়াছে, আপনার স্কুলে ফ্রী ভর্তি হইয়াছি, কিন্তু আমার বই কিনিবার পয়সা নাই। কেহ লিখিয়াছেন আমার পরিবারবর্গ খেতে পারছেন না – আমাকে একটা চাকরি করিয়া দিতে হবে। ...”
 (২)আর এই প্রশংসনীয় বিবরণী থেকে যে সন্দেহ জাগে তা হলো বিদ্যাসাগরের বিনা অনুমতিতে ও কারো অনুপস্থিতিতে রামকৃষ্ণদেবের ভক্তরা ওই ঘরে বিদ্যাসাগরের কাজের টেবিলে রাখা কাগজপত্র নেড়ে ঘেঁটে দেখেছিলেন। যা অনৈতিক, একথা নিশ্চয় পাঠকেরা স্বীকার করবেন।
আমরা সবাই জানি রামকৃষ্ণ পরমহংস বিদ্যাসাগরকে সাক্ষাতেই বলেছিলেন। “আজ সাগরে এসে মিললাম। এতদিন খাল বিল হ্রদ নদী দেখেছি, এইবার সাগর দেখছি”। (৩)
সম্ভবত বাকপটু রামকৃষ্ণদেব বিদ্যাসাগরকে একটু তোল্লা দেবার জন্যই বলেছিলেন। বিদ্যাসাগর এটা বুঝতে পেরেছিলেন। আসলে রামকৃষ্ণদেবের আসল উদ্দ্যেশ্য ছিল বিদ্যাসাগরকে তার ভক্ত বানানোর জন্য। তাই তিনি একটু কৌতুক করে রামকৃষ্ণদেবকে উত্তর দেন,
“তবে খানিকটা নোনা জল নিয়ে যান”। (৪)
রামকৃষ্ণদেব এই শ্লেষ গায়ে না মেখে চমৎকার উত্তর দিয়েছিলেন,
“না গো। তুমি তো অবিদ্যার সাগর নও, তুমি যে বিদ্যার সাগর। তুমি ক্ষীর সাগর”। (৫)

বিদ্যাসাগর এই প্রসঙ্গে আর তেমন কথা বলেন নি। তেমন কিছু শ্রীমর লেখায় নেই। কিন্তু এরপরও রামকৃষ্ণদেব আরো কিছুটা তোল্লা দেবার বিদ্যাসাগরকে সিদ্ধ পুরুষ বানিয়ে ছাড়েন। বিদ্যাসাগর জিগেস করেন কেমন করে? এইখানেই রামকৃষ্ণদেব অনান্য ভক্তদের সাথে বিদ্যাসাগরকে গুলিয়ে এক কাঁচা উত্তর দিয়ে ফেলেন। তিনি উত্তর দেন,
“আলু, পটল, সিদ্ধ হলে নরম হয়ে নরম হয়, তা তুমি তো খুব নরম, তোমার এত দয়া”। (৬)
এই শুনে বিদ্যাসাগর উত্তর দেয়,
“কলাই বাটা সিদ্ধ হলে তো শক্তই হয়”। (৭)
এই জবাবে রামকৃষ্ণদেব একটু দিশেহারা হয়ে বলেন,
“তুমি তা নয় গো, শুধু পণ্ডিতগুলো দরকাচা পড়া। না এদিক ওদিক। শকুনি খুব উঁচুতে ওঠে, তার নজরে ভাগাড়ে। যারা শুধু পণ্ডিত শুনতেই, কিন্তু তাদের কামিনী-কাঞ্চনে আসক্তি। শকুনের মতো মড়া খুঁজছে। আসক্তি অবিদ্যার সংসারে। দয়া, ভক্তি, বৈরাগ্য বিদ্যার ঐশ্বর্য”। (৮)।
যদি এইটুকু পড়ি তাহলে বা জানি তাহলে তার মানে একরকম দাঁড়াবে। কিন্তু এই বিষয়ে যদি আমরা একটু তত্ত্বতলাশ করি, তবে চিত্রটা আমূল বদলে যাবে। এইজন্য অন্য কোন সমালোচকের লেখা পড়ার প্রয়োজন নেই, শ্রীম-র শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃতই যথেষ্ট।
রামকৃষ্ণদেবের সাথে বিদ্যাসাগরের এই একবারই সাক্ষাৎ হয়েছিল। রামকৃষ্ণদেবের আরো কয়েকবার সাক্ষাতের ইচ্ছে থাকলেও তা হয় নি। আর তখন বিদ্যাসাগরের বিদ্যে বুদ্ধি নিয়ে কটাক্ষ করতে কসুর করেন নি রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব। ধীরে ধীরে তা প্রকাশে আনবো।
এই সাক্ষাৎকারে বিদ্যাসাগর মোট ১০টি বাক্য বলেছেন। যার বেশির ভাগই নেহাতই সাদামাটা। প্রাথমিক কিছু কথার পর রামকৃষ্ণদেব বিদ্যাসাগরকে ব্রহ্ম সম্পর্কে বলতে থাকেন। বিদ্যাসাগর চুপ করে তা শুনতে থাকেন। বেশ কিছুক্ষণ বলার পর রামকৃষ্ণদেব এক মজার উক্তি করেন। তিনি বলেন,
“ব্রহ্ম যে কি মুখে বলা যায় না। সব জিনিষ উছিষ্ট হয়ে গেছে। বেদ, পুরাণ, তন্ত্র, ষড় দর্শণ সব এঁটো হয়ে গেছে। মুখে পড়া হয়েছে, মুখে উচ্চারণ হয়েছে, তাই এঁটো হয়েছে। কিন্তু একটি জিনিস কেবল উচ্ছিষ্ট হয় নাই, সে জিনিসটি ব্রহ্ম। ব্রহ্ম যে কি, আজ পর্যন্ত কেহ মুখে বলতে পারেন নাই”। (৯)
স্বাভাবিক কারণেই তাঁর এই কথায় মজা পান কৌতুকপ্রিয় বিদ্যাসাগর। তাই উনার ঘরে থাকা বন্ধুদের বলেন,
“বা! এটি তো বেশ কথা। আজ একটা নতুন কথা শিখলাম”। (১০)
একথা নিশ্চিত করে বলা যেতে পারে, বিদ্যাসাগরের এই রসিকতা রামকৃষ্ণদেব বুঝতে পারেন নি। তাই এই কথার পরও রামকৃষ্ণদেব ব্রহ্ম সম্পর্কে বলে চলেন। আর কোন কথা না বলে বিদ্যাসাগরও শুনতে থাকেন।
দীর্ঘক্ষণ রামকৃষ্ণদেবের কথা শোনার পর বিদ্যাসাগর মহাশয় প্রশ্ন করেন,
“তিনি (ঈশ্বর কি কাউকে বেশি শক্তি, কারুকে কম শক্তি দিয়েছেন”? (১১)
রামকৃষ্ণদেব এর উত্তরে বলেন,
“তিনি বিভূরূপে সর্বভূতে আছেন। পিঁপড়েতে পর্যন্ত। কিন্তু শক্তি বিশেষ। তা না হলে একজন লোকে দশজনকে হারিয়ে দেয়, আবার কেউ একজনের কাছ থেকে পালায়, আর তা না হলে তোমাকেই বা সবাই মানে কেন? তোমার কি শিং বেরিয়েছে দুটো? তোমার দয়া, তোমার বিদ্যা আছে অন্যের চেয়ে বেশি তাই তোমাকে মানে, দেখতে আসে। তুমি একথা মানো কিনা”? (১২)
এর পালটা কোন কথা বিদ্যাসারর দেন নি। শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণকথামৃতেই এই ধরণের বর্ণনা আছে। (১৩)
রামকৃষ্ণদেব যখন বুঝতে পেরেছিলেন উনার কথায় বিদ্যাসাগর বশীভূত হচ্ছেন না। তখনই তাঁর বিদ্বেষ তাঁর কথায় প্রকাশ পেয়েছে। বিদ্যাসাগরের ওই প্রশ্নকে অত্যন্ত কাঁচা বলে অভিহিত করেছেন এবং বিদ্যাসাগরের বিদ্যার দৌড় বা পাণ্ডিত্য নেহাতই ফাঁপা বোঝাতেও দ্বিধা করেন নি। (১৪) আবার শশধর তর্কচূড়ামণির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় রামকৃষ্ণদেব বিদ্যাসাগর সম্পর্কে বলেন, “যে পণ্ডিতের বিবেক নাই, সে পণ্ডিতের বিবেক নাই। সে পণ্ডিতই নয়”। (১৫)

দক্ষিণেশ্বরে ভক্তদের সঙ্গে আলাপচারিতায় রামকৃষ্ণদেব বিদ্যাসাগর সম্পর্কে বলেন,
“বিদ্যাসাগরের পাণ্ডিত্য আছে, দয়া আছে, কিন্তু অন্তদৃষ্টি নাই। অন্তরে সোনা চাপা আছে, যদি সেই সোনার সন্ধান পেত, এত বাহিরের কাজ যা কচ্ছে সে-সব কম পড়ে যেত, শেষে একেবারে ত্যাগ হয়ে যেত। (১৬)
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন, শুধু বলা যেতে পারে রামকৃষ্ণের ‘ঈশ্বর’ এই কাজটা ভালোই করেছেন, নইলে বিদ্যাসাগরকে আমরা অন্যভাবে পেতাম।
“ঈশ্বর কি কাউকে বেশি শক্তি, কারুকে কম শক্তি দিয়েছেন” এই প্রশ্নের সম্মুখীন রামকৃষ্ণদেব শুধুমাত্র বিদ্যাসাগরের থেকে নন ভক্তদের কাছ থেকেও হয়েছেন। এইখানেও তিনি ভক্তদের কাছে যথাযথ যুক্তির উত্তর না দিতে পেরে মিথ্যাচারিতার আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি প্রশনকারী ভক্তদের কাছে যুক্তি হিসেবে হাজির করেছেন এইভাবে যে বিদ্যাসাগর পর্যন্ত মেনে নিয়েছেন অর্থাৎ বিদ্যাসাগরের মতো জ্ঞানী মেনে নিয়েছেন যখন তখন তাঁড় বক্তব্য সর্বৈব সত্য। (১৭)। তাঁর যুক্তি স্থাপনের জন্য বিদ্যাসাগরের মুখে ‘হ্যাঁ মানি’ বলিয়ে ছেড়েছন। (১৮) কিন্তু কথামৃতের সাক্ষাৎকার পর্বে বিদ্যাসাগর এমন বলেছেন তার কোন হদিশ নেই। বরঞ্চ যা আছে তা এইরকম। রামকৃষ্ণদেব যখন দ্বিতীয়বারের জন্য বিদ্যাসাগরকে জিজ্ঞাসা করেন ঈশ্বর বা ব্রহ্ম সম্পর্কে তার ধারণা কী? (১৯) বিদ্যাসাগর সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “আচ্ছা, সেকথা আপনাকে একলা একলা বলব”। (২০) আশা করবো এই নিয়ে পাঠকদের বিশদে ব্যাখা দিতে হবে না। ঈশ্বর সম্পর্কে বিদ্যাসাগরের ধারণা কিরূপ ছিল তা নিয়ে নানা ধারণা আছে। তবুও শ্রীমর শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণকথামৃতর পাতা ওলটালেই একটা ধারণা তৈরি হতে বাধ্য। বিদ্যাসাগর মাস্টার অর্থাৎ শ্রীমকে প্রশ্ন করেছিলেন,
“ঈশ্বরকে ডাকবার আর কি দরকার? দেখ চেঙ্গিস খাঁ যখন লুঠপাঠ আরম্ভ করলেন তখন অনেক লোককে বন্দি করলেন ক্রমে ক্রমে প্রায় এক লক্ষ বন্দি জমে গেল। তখন সেনাপতিরা এসে বললেন মহাশয় এদের খাওয়াবে কে? সঙ্গে এদের রাখলে আমাদের বিপদ। কি করা যায়? ছেড়ে দিলেও বিপদ। তখন চেঙ্গিস খাঁ বললেন, তাহলে কি করা যায়; ওদের সব বধ কর। তাই কচাকচ করে কাটাবার হুকুম হয়ে গেল। এই হত্যাকান্ড ঈশ্বর দেখলেন, কই একটু নিবারণ তো করলেন না। তা তিনি থাকেন থাকুন, আমার দরকার বোধ হচ্ছে না। আমার তো কোনও উপকার হল না”। (২১)
কিন্তু শ্রীমর কাছে রামকৃষ্ণদেব এই কথা শুনে বলেছিলেন,
“ঈশ্বরের কার্য কি বুঝা যায়, তিনি উদ্দেশ্যে কি করেন? তিনি সৃষ্টি, পালন সংহার, সবই করেছেন আমরা কি বুঝতে পারি? আমি বলি, মা, আমার বোঝাবারও দরকার নেই, তোমার পাদপদ্মে ভক্তি দিও। মানুষ জীবনের উদ্দেশ্য এই ভক্তিলাভ। আর মা সব জানেন। বাগানে আম খেতে এসেছি, কত গাছ, কত ডাল, কত কোটি পাতা –এসব বসে বসে হিসেব করবার আমার কি দরকার। আমি খাই, গাছ-পাতার হিসেবে আমার দরকার নেই”।
সত্যিই কি অদ্ভুত উত্তর। বাবা-মার সামনে তার মেয়ে ধর্ষিতা হয়, তবে ধর্ষিতার বাবা-মা আম খাবেন আর বলবেন, সবই তেনার কর্ম আমার কাম নাই। তাই তো? আশা রাখি এই প্রসঙ্গে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
একথা বলতে কোনও সংকোচ নেই যে প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ ও দর্শনে গভীর জ্ঞানী বিদ্যাসাগরের কোনও স্পৃহা ছিল না রামকৃষ্ণর ওই অসাড় ধর্মতত্ত্ব শোনার। তাই তিনি ভদ্রতার খাতিরে সাক্ষাতের প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি রামকৃষ্ণদেবের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রয়োজন মনে করেন নি।
এই সাক্ষাৎকার নিয়ে নানাধরণের গালগপ্প চালু আছে। বিদ্যাসাগরকে রামকৃষ্ণর ভাবশিষ্যও বানিয়ে ছাড়িয়েছেন। সাক্ষাৎকার পর্বটি একটু ভালো করে পড়লেই এটা স্পষ্ট হয় যে রামকৃষ্ণদেব বিদ্যাসাগর সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকলেও বিদ্যাসাগর রামকৃষ্ণ সম্পর্কে কোন খোঁজই রাখতেন না। তাই, মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত অর্থাৎ শ্রীম যখন বিদ্যাসাগরকে জানান রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব উনার সাথে দেখা করতে চান, তখন বিদ্যাসাগর শ্রীমকে বলেন, “কি রকম ‘পরমহংস’ গেরুয়া পরে থাকেন”? (২৩)
এটাই সত্যি যে সেই সময় রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নিজের খ্যাতি বাড়ানোর জন্য কিছু গণমান্য ভক্তের প্রয়োজন ছিল। তাই তিনি ভক্তদের কাছ থেকে বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্রসহ সমাজের তৎকালীন বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের খোঁজ রাখতেন। শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণকথামৃতে বঙ্কিমচন্দ্র সঙ্গে সাক্ষাৎকার নিয়েও একই কথা খাটে। বঙ্কিমচন্দ্রের সাথেও রামকৃষ্ণদেবেরও একবারই সাক্ষাৎ হয়, কলিকাতা বিনিয়াটোলা নিবাসী রামকৃষ্ণভক্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীঅধরলাল সেনের বাড়িতে। রামকৃষ্ণদেব এই সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে ভক্তদের বলেন,
“বঙ্কিম তোমাদের একজন পণ্ডিত। বঙ্কিম সঙ্গে দেখা হয়েছিল – আমি জিজ্ঞাসা করলুম মানুষের কর্তব্য কি? তা বলে, ‘আহার, নিদ্রা আর মৈথুন’। এই সকল কথা শুনে আমার ঘৃণা হল। বললুম যে তোমার এ কিরকম কথা! তুমি তো বড় ছ্যাঁচড়া। যা রাতদিন চিন্তা করছো, তাই আবার মুখ দিয়ে বেরুচ্চে। মূলো খেলেই মূলোর ঢেঁকুর ওঠে। ...” (২৪) এর কোন উত্তর বঙ্কিমচন্দ্র দিয়েছেন কিনা তা লেখা নেই।
পরিশেষে, একটা মর্মান্তিক সত্যি কথা জানাই যে শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণকথামৃতের কথা কতদূর সত্যি তাই নিয়েই প্রশ্ন আছে। না, এই প্রশ্ন আমার নয়। প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং নরেন্দ্রনাথ দত্ত তথা স্বামী বিবেকানন্দর ভাই ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত। উনার লেখা ‘স্বামী বিবেকানন্দ’ (নবভারত পাবলিশার্স) পড়লেই পাবেন।
                (সংগৃহীত )
----------------&&&&&&&-----_----------_------_--------
(

No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...