Sunday, 20 September 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

$$$$$$$$$$$$$$ ∆∆∆∆∆ $$$$$$$$$$$$
                         অনু নাটক সংখ্যা
                           পর্ব -৪

££££££££££££££££££££££££££££££££
                Doinik Sabder Methopath
              Vol-137. Dt - 21.9.2020
              ৪ঠা আশ্বিন, ১৪২৭, সোমবার
=============πππππ==============


মোবাইল


 দুর্গাদাস মিদ্যা
 চরিত্র:----মোবাইল, বিষ্ণু ও আমি।

 মোবাইল----দাদা, আমার চার্জ হয়ে গেছে। এবার তুমি ফোন করতে পারো। তুমি বলছিলে না একটা ইম্পট্যান্ট একটা ফোন ছিল। আর সেই সময়েই আমার দম শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে তুমি রাগে ছুঁড়ে দিলে বিছানার উপর, একটু এদিক ওদিক হলেই প্রাণবায়ু বেরিয়ে যেত। 
 আমি:---হ্যাঁ, আমি সাহিত্যিক ও শব্দের মেঠো পথের সম্পাদক বিষ্ণুকে ফোন করবো বলেছিলাম এমন সময় তোর দম আটকে গেল।
 বিষ্ণু:---হ্যালো! কি হল দাদা, ফোন করলেন না তো? বলছিলেন কী একটা দরকার? 
 আমি:----আরে ভাই! তোমার সাথে কথা বলতে যাবো এমন সময় মোবাইল বাবার দম শেষ!
 বিষ্ণু:----যন্ত্র তো হতেই পারে। যা দিনকাল পড়েছে মানুষের ই দম শেষ হবার জোগাড়! তা বলুন কি বলছিলেন?
 আমি:----বলছিলাম তুমি তো বেশ মজায় আছো এই লকডাউনে। একটার পর একটা ইস্যু নিয়ে আছো। কখনো ঘুড়ি, কখনো মুড়ি, কখনো বিদ্যাসাগর, কখনো শরৎচন্দ্র, এবারে আবার অণু নাটক! তাও ১০০শব্দের মধ্যে। সত্যি ভাই তোমার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। ভালো থেকো একটা অণূনাটক পাঠালাম। 
 বিষ্ণু, :--ঠিক আছে দাদা আপনিও ভালো থাকবেন। সাবধানে থাকবেন। ছাড়াও।
-----------------////----------------


স্বপ্নফেরি

ফটিক চৌধুরী

বিচারক কবি-- হ্যাঁ। এককালীন টাকা দিয়ে কিনে নিতে পারো। দারুণ লেখা। বাজারে চলবে।
ব্যাবসায়ী--- বলছ?
(কবিকে বাড়িতে ডেকে পাঠালেন)
ব্যাবসায়ী-- তোমার পান্ডুলিপি দেখলাম, তোমার সাংসারিক দুরাবস্থার কথা ভেবেই ছাপব।
কবি-- দাম দিতে পারবে? আমার সৃষ্টি, স্বপ্নফেরি। অমূল্য।
ব্যাবসায়ী-- হা হা, যাও। কবিতার বই ক'জন ছাপবে? বল, কত চাও? তোমার তো সংসার ঠিকমতো চলে না। এককালীন দেব, কোন রয়্যালিটি নয়। তোমার মত কবিরা নিজের পয়সায় বই ছাপে। সেখানে এত নাম করা পাবলিকেশন? কি, কত দেব বলো?
কবি-- না না, আমার পান্ডুলিপি ফিরিয়ে দাও। আমার টাকার দরকার নেই।
ব্যাবসায়ী-- এই নাও খামটা। ওতে পান্ডুলিপি নয়, আছে দশহাজার টাকা। রাজি?
(কবি দ্বিধান্বিত, একটু ভেবে)
কবি--দাও।
(বেশ কিছুদিন পর বিচারক কবি ব্যাবসায়ীকে বলল)
বিচারক কবি-- দেখলে তো? কি বলেছিলাম। " স্বপ্নফেরি" শেষ পর্যন্ত আকাদেমি পেলো তো!

-------------------////---------------

প্রাপ্তি 


নন্দিনী সরকার 

বিষয়---উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠান।
স্থান--- স্কুলের মাঠ প্রাঙ্গন।
চরিত্র - শিক্ষিকা তনয়া ও
 ছাত্র কুমার( ভলেন্টিয়ার, 12 এ পড়ে)

কুমার - দিদি আর কটা প্রোগ্রাম বাকি আছে? অনেক বেলা হয়ে গেল তো। দরজা দিয়ে সব পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। কিছুতেই আটকে রাখতে পারছি না। যতো বোলছি দাঁড়া, টিফিন আছে, আর একটু পরেই দেওয়া হবে, কিছুতেই শুনছে না। আপনি একটু বলুন না দিদি মাইকে।তবে সবাই শুনবে।

তনয়া- ঠিক আছে, আমি বলে দিচ্ছি মাইকে। আর দরজায় তালাও দেওয়া হচ্ছে। আর মাত্র একটা নাচ আছে,
 তার পরেই হেড স্যার অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করবেন। 

কুমার -- ঠিক আছে দিদি। আমি ওদিকটায় সামলাচ্ছি। 
স্যারেরা ওদিকে সব টিফিন দেওয়া শুরু করে দিয়েছেন। 

কিছুক্ষণ পরে,

তনয়া-- হা, রে কুমার সবাই টিফিন পেয়েছে?? তোরা যারা ভলেন্টিয়ার ছিলি তোরা বেশি করে টিফিন খেয়েছিস তো? মুখ গুলো তো সব শুকিয়ে গেছে তোদের।


কুমার তবু চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।


তনয়া-- কি রে আমার কাছে এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কি হলো বল? আমার এখনো কাজ বাকি আছে রে। তবলা, হারমোনিয়াম সব ঠিক করে রাখা হলো কি না দেখি। নাচের মেয়েরা সব সাজ পোষাক ছাড়ল কি না কে জানে?

কুমার- দিদি একটা কথা বলবো, শুনবেন তো? আমরা সবাই খেয়েছি। আপনি সেই কখন থেকে সব কিছু করে যাচ্ছেন।কিচ্ছু খান নি। আপনার জন্য এই প্যাকেট টা নিয়ে এলাম। আপনি আগে খেয়ে নিন। না হলে----

তনয়া-- ( কিছুক্ষণ চুপ করে, চোখে জল নিয়ে) এই যে তুই আমার কথা ভেবে খাবারটা নিয়ে এলি এতেই আমার মন ভরে গেলো রে। পেট টাও ভরে গেলো বুঝলি??এটুকুই তো প্রাপ্তি। এর জন্য আরো অনেক কষ্ট করতে পারবো আমি তোদেরকে নিয়ে।

---------------/////---------------
প্রেম ও পণ
 (কৌতুক নাটিকা)

সমরেশ সুবোধ পড়িয়া

চরিত্র: ভোম্বল ও এক মর্ত্যবাসী, 
স্থান: কৈলাশ ধাম,  সময়: সকাল

ভোম্বল: শুনলাম মেদিনীপুরেই নাকি বেশি বধু নির্যাতন হচ্ছে ?
মর্ত্যবাসী : কে বলছে এসব ? ধরে নিয়ে এস এমন ধোলাই দেব না! আর জন্ম নেওয়ার বায়না করবে না৷ যত্তসব পেপার বাজি আর রংবাজ টেলিভিশন! 
ভোম্বল : কাকে তুমি ধোলাই দেবে? আর কাকে নিয়ে আসবো। 
মর্ত্যবাসী : কেন ? তুমি যে বললে; আমরা বধু নির্যাতন করি। বেশ করেছি! আবার করব৷ স্বাধীনতা লাভ করেছি। আর লাভ করব না, সে কি হয়? প্রথমে আমরা টোপ দিয়ে কচি ফুটফুটে মেয়ে দেখে প্রেম করি। ভালো ভালো কথা বলি। সিনেমা দেখাই। ফুচকা খাওয়াই। দীঘা নিয়ে যাই। এসবে কত খরচ জানো ? এগুলো ইনভেস্টমেন্ট ! ভায়া ইনভেস্টমেন্ট! তারপর খালি হাতে নিয়ে চলে আসি, তাওএক কাপড়ে ! পরে একটু একটু যন্ত্রণা দেই - বাবার মাল কে খাবে? 
ভোম্বল: এ মা! এসব কি গো!
মর্ত্যবাসী: বেশতো দিনরাত টেলিভিশনে বকর বকর করো আর এটা জানো না ! ন্যাকা! ব্যাটা জ্ঞান দিচ্ছে রে ! বের করতো ১০ টাকা, পান খাই !
~~~~~~~~~~~~

ম্যাসাকার

দেবাশিস চক্রবর্ত্তী
চরিত্র :- মহেশ্বর, ব্রহ্মা , বিষ্ণু, বিশ্বকর্মা, পার্বতী ।

মহেশ্বর : কৈ হে বিষ্ণু দেব, এইভাবে অনন্ত সজ্জায় কাত হয়ে শুয়ে থাকলে হবে ? ওদিকে মর্তে যে মহামারি লেগেছে, সে খবর জানো কি ?
বিষ্ণু :- সে কি মহাদেব !
মহেশ্বর :- তবে আর বলছি কি ? কদিন পর পার্বতীর ওখানে পাঁচ দিনের ভিজিট আছে । কি যে করি !
বিষ্ণু :- চলো মহাদেব, ব্রহ্মা কি বলে দেখি ।
মহেশ্বর :- বেশ, চলো তবে -
(ব্রহ্মার সাথে বিশ্বকর্মার প্রবেশ)
ব্রহ্মা :- থাক আর যেতে হবে না, আমিই সব শুনে দৌড়ে এলুম । 
মহেশ্বর :- এখন আর বুড়ো বয়সে দৌড়াদৌড়ি করে কি লাভ ? তোমার আস্কারা পেয়ে যত গোল বাধিয়ে রেখেছে তো বিশ্বকর্মা ।
ব্রহ্মা :- কৈ রে বাবা বিশ্ব , ঘুরে তো এলি, সব ঠিক করতে আর কদিন নিবি ? 
বিশ্বকর্মা :- হয়ে যাবে ।
মহেশ্বর :- কি হয়েযাবে ?
বিষ্ণু :- আর মাত্র কদিন পরেই
শাশুড়ি মা দূর্গার সাথে আমার মিসেস লক্ষী যাবে মর্তে । ফিরে এসে যদি সংক্রমণ ছড়ায় তবে তোমায় আমি দেখে নেবো বিশ্বকর্মা ।
(দূর্গা মায়ের প্রবেশ)
দূর্গা :- বাবাজীবন বিষ্ণু নারায়ন - ,
বিষ্ণু :- মা -- !
দূর্গা :- চিন্তা কোরো না , যা করার আমিই করে দিয়ে আসবো । 
মহেশ্বর :- পারো - এ বছর কি না গেলেই নয় ?
দূর্গা : - চিন্তা করোনা দেব দা , 
এ বছর আমার শ্লোগান হলো - 'ভয়ে মরোনা,যাবে করোনা' ।
মহেশ্বর :- এ্যাঁ --- !
দূর্গা :- হ্যা গো দেবাদীদেব দা,
একবার আমি মর্তে নামার পর জানি সব ঘেঁটে 'ঘ' হয়ে যাবে , তবু আমি আউটিং এ যাবই । 
বিষ্ণু :- এ বছর তবে লক্ষী কে রেখে যাও মা । 
দূর্গা :- না বাবাজীবন বিষ্ণু, এমনিতেই মর্তবাসী এবছর লক্ষী ছাড়া অবস্থায় আছে, 
লক্ষী না গেলে যে ওরা সর্বহারা হবে ।
ব্রহ্মা :- ঠিক - ঠিক ।
বিশ্বকর্মা :- কিচ্ছু চিন্তা করবেন না মা , নির্ভয়ে যান , আমি সব ঠিক করে রেখেছি । উপর নিচ সব জায়গা থেকে শুধু স্যানিটাইজার মারবো ।
 মর্তে এবারের দূর্গা পূজা হবে ,হয় বারবার - নয় ম্যাসাকার ।
-------------***--------------

সদাচার

অজিত জানা

(চরিত্র-ছাত্র, শিক্ষক।স্হান-পথ।সময়-সকালবেলা)

ছাত্র-স্যার ভালো আছেন? অনেক দিন পর দেখা হয়নি,একটু প্রণাম করবো স্যার।
শিক্ষক-আরে না ,না। করোনা, করোনা।প্রণামে কাজ নেই।
ছাত্র-কেন স্যার?
শিক্ষক-করোনা করোনা, দেখছিস না চারদিকে করোনা। সামাজিক দূরত্ব মেনে চল্।
ছাত্র-আমাদের লেখা পড়া।
শিক্ষক - আগে তো বাঁচ, তারপর তো লেখা পড়া।
ছাত্র- করোনা তো শুনছি মহামারি।
শিক্ষক-করোনার চেয়ে ও আরো ভয়ঙ্কর মহামারি সমাজ ছেয়ে গেছে।
ছাত্র-কী স্যার?
শিক্ষক-তবে শোন। আত্মহত্যা, নেশা- ভাণগ্রস্ততা,ব্যাভিচারপ্রিয়তা, অপরাধ প্রবণতা, মানসিক অবসাদগ্রস্থতা কি কম ভয়ঙ্কর মহামারি!
ছাত্র-উপায় কী স্যার?
শিক্ষক-সদাচারপ্রিয়তা,বুঝলি সদাচারপ্রিয়তা।

-----------------------/////--------------
ধান শুনতে কান
 সুবীর ঘোষ

 দৃশ্য-১ (ডোরবেলা)

--বোবোমামা ! কোত্থেকে ?
--মাশাইমারা ।
--মাশাইমারা না গরুমারা ? যা ঢপ দাও ।
--চান না করে কোনো কথা নয় ।

 দৃশ্য-২
--বোবোমামা , রাতে কী খাবে ?
-- মুরগিই কর ।

দৃশ্য-৩
(রান্নাঘর)

 --মামা এসেছে । জিজ্ঞেস করতে গেলাম রাতে কী খাবে, ভাত না রুটি ।

বলল চিকেন খাবে । মাসি চিকেনটা করে দিয়ে যাও ।
-- মুরগি ফ্রিজে আছে ?
--আনতে পাঠাচ্ছি ।
এখন রাত ন”টা । আরো দু’ঘণ্টার ধাক্কা !
দৃশ্য-৪
( স্বামী তমাল ও স্ত্রী রিমা )
--শোনো বোবোমামা এসেছে । রাতে মুরগি খেতে চাইছে ।
নিয়ে এসো তো ।
(তমাল বেরুচ্ছে )

--হ্যাঁ গো ঠিকমতন শুনেছ তো ? তোমার কানে তো হিয়ারিংএডটা নেই ।
দৃশ্য-৫

 তমালকে এক প্যাকেট মুড়ি হাতে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখা যাচ্ছে ।

--------------///-----+----+-
সময় 

জয়দেব মাইতি 


গ্রামের রাস্তা।কোন এক কাকভোরে হঠাৎ দুজনের দেখা -
বল্টু - -আরে পলাশ না? কেমন আছিস! 
পলাশ-- আরে বল্টু তুই। কেমন আছিস! 
বল্টু- আমার তো ভাই বিন্দাস চলে যাচ্ছে। সব ঠিকঠাক
পলাশ--আমিও মোটামুটি। কিন্তু কি করছিস এখন? এত খুশ লাগছে।
বল্টু - -ঐ আর কি।তোদের মতো তো পড়াশোনা করতে পারে নি--বখাটে ছেলেদের যা হয় আর কি---
পলাশ- -বলবি তো কি করছিস?
বল্টু - -আরে যাকে বলে-Loading and unloading labour.একেবারে Full time 
পলাশ -- মানে!!!
বল্টু- -মানে খালাসি! আমাদের এ অঞ্চলে যত লরী টেম্পো বালী মোরাম স্টোন চিপ নিয়ে আসে - সবটাই আমরা আনলোড করি।আমাদের ইউনিয়ন আছে। 
পলাশ- -প্রচুর পরিশ্রম হয় না রে?
বল্টু -- তা তো হয় বইকি। তোদের মতো পড়াশোনা করলে কি আর এগুলো করতে হতো? এই দেখনা রাতে গাড়ি লেগেছে - ভোর ভোর যেতে হচ্ছে। 
পলাশ- -কি রকম পাস? মানে সংসার ---
বল্টু - -তোদের মতো বেতন পাইনা। তবে যা পাই- ঔ ধর গড়ে ৫০০ তো থাকেই--
পলাশ - -পাঁ চ শ......
বল্টু - -কি রে চমকে উঠলি যে।তা ঠিক তোদের মাসিক বেতনের কাছে এ তো কিছুই নয়!
হ্যাঁ রে তুই কত পাস? মানে মাসে কত------
পলাশ - -(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে) ---- আর মাসে!! 
বল্টু-- কি রে!!! কিছু বললি---
পলাশ -- আরে না না। যেখানে কাজ নেই সেখানে বেতন ---
বল্টু - -মানে!!! 
পলাশ-- মানেটা হল -এখন আমার কাজ নেই। 
সেই করনার পর থেকে কোম্পানি দুমাস বেতন দিচ্ছিল। তারপর সাফ জানিয়ে দিয়েছে - আর কোন বেতন নয়।মানে এখনও পুরোপুরি বেকার -সংসার চালাতে অপারগ হয়ে যাচ্ছি 
বল্টু -- তাহলে এখন? 
পলাশ - -এখন আর কি-সারদিন কাজের খোঁজ করা। ব্যবসা যে করব সে মূলধন ও নেই। 
এই বল্টু দেখনা তোদের ওখানে - ইউনিয়নে বলে টলে
বল্টু -- তুই ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে - এই কাজ করবি????
পলাশ -- না হলে যে আমাকে --------
(তৃতীয় জন আসে) 
রামু-- কি রে বল্টু তুই এখনও যাসনি? অনেক বেলা হলো যে-
বল্টু - -সত্যি তো, অনেক বেলা হয়ে গেল। আসি ভাই ---
আজ আবার তিনটে গাড়ি আনলোড আছে ----
(পলাশ বিষ্ময়ে তাকিয়ে থাকে) 

************************************
মুখাগ্নি

কোয়েলী বসু

 বিমান - কিরে সুজয় কেমন আছিস?মেয়ে কত বড় হলো,বাবা ডাকছে ?
 সুজয়- ও বিমান দা,আর করোনার দাপটে ভালো থাকা যায়? মেয়ে ভালো আছে , খুব দুষ্টু হয়েছে।বাবা বলতে অস্থির।সামনের মাসে মুখেভাত দেবো ভাবছি। ঘটা করে করার ইচ্ছে থাকলেও করোনার উপদ্রপে উপায় নেই।
বিমান- ঠিক বলেছিস,তবে মেয়ে তো অত খরচা করবি কেন?ছেলে হলে করিস।মরলে মেয়ে মুখাগ্নি করবে কি করে?তোর ছেলেই করবে, স্বর্গে যেতে পারবি রে বুঝলি?

দশদিন পর পাড়ায় খবর এলো বিমান করোনার বলি হয়েছে ।দেহ বাড়িতে আসে নি।কিন্তু সুজয়ের মনে প্রশ্ন জাগে "বিমান দার মুখাগ্নি তো তার ছেলে করতে পারল না,তবে তার স্বর্গ প্রাপ্তি ঘটবে কি করে?"
------------------///----------------


ঠাকুমা কোথায় ? জবাব চাই !

                          গোবিন্দ মোদক 

( কুশীলব : খোকা ও বাবা )

--- বাবা, তুমি আজই ঠাকুমাকে নিয়ে এসো ! 
--- কেন ?
--- আমি অনেকদিন ঠাকুমার কোলে বসিনা, আদর খাইনা ! অনেকদিন ঠাকুমার কাছে রাজা-রানির গল্প শুনিনা ! 
--- তাই বুঝি ? ঠিক আছে বাবা, আর একটু সবুর করো ।
--- কেন সবুর করবো ? তোমরা সেদিন ঠাকুমাকে ফুল দিয়ে সাজিয়ে নিয়ে গেলে --- বললে ঠাকুমা বাপের বাড়ি যাচ্ছে ! এতোদিন হয়ে গেলো, এখনও আসছে না !
--- আসবে ।
--- আসবে বললে শুনবো না ! এক্ষুনি আমার ঠাকুমাকে চাই, ব্যস ! আর তুমি জামা-প্যান্ট না প'রে এই ধুতিটা প'রে থাকো কেন ? দাড়ি কামাও না কেন ? যাও, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে ঠাকুমাকে নিয়ে এসো।
--- ওরে, ঠাকুমা যে ঈশ্বরের কাছে চলে গেছেন !
--- তা হোক বাবা ! তুমি এক্ষুনি ঈশ্বরকে ফোন করে বলে দাও, আজই যেন ঠাকুমাকে পাঠিয়ে দেয় !
(খোকাকে কোলে জড়িয়ে হু-হু করে কেঁদে ওঠে বাবা)

-------------------/////--------------

সুদ 

পার্থ সারথি চক্রবর্তী 

হন্তদন্ত হয়ে পোস্ট অফিস পৌছল দাসবাবু। ছাতাটা গুটিয়ে কাউন্টারের দিকে যাচ্ছে। প্রথম সপ্তাহের শেষেও বেশ ভীড়। ইতিমধ্যেই অনেকগুলো বই জমা পড়ে গেছে। তিনিও জমা দিয়ে বসলেন বেঞ্চে। রাতে ভালো ঘুম হয়নি, বসেই ঢুলছিলেন। নাম শুনে ধড়ফড়িয়ে কাউন্টারের সামনে দাঁড়ালেন।
' সই মিলছে না '' বললেন কর্মী ছেলেটি ।
' না, একই তো আছে। '
'উঁহু, আরেকটা করুন তো দেখি ' ছেলেটি স্লিপটি এগিয়ে দিল।
'MIS টি করার পর থেকে ক'বার সুদ বদলে কমেছে, তার ঠিক নেই! আর.....' গজগজ করছেন দাসবাবু।
ছেলেটি মুচকি হেসে টাকাটা দেয়। গুণে পকেটে পুরে বেরোল দাসবাবু।
সিঁড়ি দিয়ে নেমে ছাতাটা খুলবে, তখনই সামনে চোখ যায় তার। আরে ওই ঠগবাজ ছেলেটা না! কি যেন নাম.....এর ফাঁদে পড়েই অবসরকালীন পাওয়া তিন লক্ষ টাকা হারিয়েছিল ।
ভাবতেই ছাতাটা হাতে নিয়ে দৌড় ' ধর ব্যাটাকে......'।
---------------/--------------

অনলাইন ক্লাস 

বিমল মণ্ডল 

চরিত্রচিত্রন-
মঞ্জু -স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী 
স্কুলের হেডমাস্টার 
অনুপ- স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র


মঞ্জু- হ্যালো । হ্যালো স্যার। শুনতে পাচ্ছেন? 
(ফোন টা বেজে যায়)

অনুপ- হ্যালো স্যার । হ্যালো । হ্যালো 
হেডমাস্টার - আজ অনলাইন ক্লাস । কিন্তু ফোনেও নেট নেই। (বলতে বলতে পায়চারি করতে থাকেন) 
হেড়মাস্টার - হ্যালো । হ্যালো মঞ্জু, অনুপ শুনতে পাচ্ছিস। গুগুল মিটে? 
অঞ্জু- হ্যাঁ স্যার। অনেকে তো ঢুকতে পারেনি স্যার। 
অনুপ- এবার পড়ান স্যার। আপনা কে দেখতে পাচ্ছি।
হেডমাস্টার - শুরু তো করবো। তবে কেউ কেউ তো ক্লাসে না ঢুকে ফোনে গেম খেলছে। 

মঞ্জু,অনুপ(এক সাথে)- স্যার এটাই তো অনলাইন ক্লাস স্যার । 
(হেডমাস্টার মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন। আর ফোন কেটে যায়)

----------/------------------

দহন

বিষ্ণুপদ জানা
     চরিত্র - গরাই, রমা ও বকু । সময় -মধ্যাহ্নবেলা
      স্খান - বাড়ির উঠোনে অস্থায়ী রান্নাঘর।

বকু - (নীল সমুদ্রের অযুত ঢেউ ভাঙা দেখতে দেখতে বলে ) মা ,আর একটা ইলিশের ভাজা
 হবে ? বেশ মুচমুচে ও টেস্টি ...
        রিংটোনে ......ও নদী রে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে.
রমা -( উনুন থেকে গরম কড়াই নামিয়ে, তেল বিহীন মাছ এপিঠ-ওপিঠ করতে করতে বলে) দ্যখো, ছেলের কান্ড। বাবাকে দেবো যে .
 গরাই - (আজ তিন দিন হল বাড়িতে এক টুকরো মাছের .....….। বছরের প্রতিদিন মাছ দিয়ে ভাত মাকে .....। ছোট্ট ডিঙি নৌকোটা ভেঙ্গে দুমড়ে-মুচড়ে উঠোনের এক কোণে...... পড়ে)
      আরে, দাও না। ছেলেটা ভাত মেখে বসে ...
রমা - ( বুকের ভেতর যেন ঢেউ ভাঙে, দু চোখ গড়িয়ে নোনা জল ) 
    ধীরে ধীরে এগিয়ে দেয়.…. ছেলের দিকে
(জোগাড় করা শাক সবজি দিয়ে, ত্রাণের চাল ডালে আর ক'দিন চলবে ..… এভাবে)
গরাই - (৫৫ বছর বয়সে এমন ঝড়.… ভয়ঙ্কর ক্ষয়ক্ষতি .. স্ত্রী-পুত্রকে বুকে আগলে.... লড়াই ...দোচালা খড়ের ঘরসহ রান্নাঘর .. উপায়ের ডিঙি নৌকো .…সব.. সব ই..... মনটা বিষাদে ভরে যায়)
    - ত্রাণের ত্রিপলটা পেয়েছিলাম বলে। কত লাইন দিয়ে ছবি তুলে পঞ্চায়েতের কাছে জমা দিলাম।
ঘরটা মেরামত করার আশায় ...
রমা - হ্যাঁ,গো । আজ যে গিয়েছিলে.. ওরা কি বলল.
গরাই - আর বলো না। সর্ষের মধ্যে ভূত। রাজনীতি ..রাজনীতি... বলে কিনা, তোরা ভোট দিস নে....যা।
রমা - সে কি গো ! যাদের কিছুই হয়নি, একাউন্টে টাকা ঢুকে গেল। আমাদের বেলা যত সব !
 (শেষ আশাটুকু নিভে যাওয়ার কথা ভেবে, আনমনে বসে থাকে, মুখে আর ভাত ওঠেন)
       রিংটোনে ---আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে....
        --------------০---------------
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆






No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...