Saturday, 26 September 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
                 জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

                   নিকুঞ্জ বিহারী মাইতি
=================================
               Doinik Sabder Methopath
                Vol -142. Dt - 26.9.2020
                ৯  আশ্বিন, ১৪২৭. শনিবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

পশ্চিমবঙ্গের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ  
নিকুঞ্জবিহারী মাইতি।
                                    শ্রী জয়দেব মাইতি।
                               শিক্ষক, কবি ও সম্পাদক



জন্ম -২৬ শে সেপ্টেম্বর ১৮৯২
মৃত্যু -১৯ শে মে ১৯৭০)

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার খেজরী থানা সংগ্রামী থানা হিসাবে পরিচিত। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং তার পরবর্তী সময়েও এ জেলার নানা সংগ্রাম- ইতিহাসে স্থানলাভ করেছে। যেখানে বহু কৃতি সংগ্রামী মানুষ জন্মলাভ করেছেন।যাদের আজও খেজুরীর মানুষ সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করেন। 

এমন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং কৃতি শিক্ষক ছিলেন নিকুঞ্জবিহারী মাইতি।এ বছর তার জন্মের ১২৮ বছর পূর্ণ হল।
বর্তমান পূর্ব মেদিনীপুর জেলার খেজরী থানার কলাগেছিয়া গ্রামে ১৮৯২ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর নিকুঞ্জবিহারী মাইতি জন্মগ্রহন করেন। পিতা বিশ্বনাথ মাইতি ছিলেন স্বদেশসেবী এবং বিশিষ্ট শিক্ষক। মা সাবিত্রী দেবী ছিলেন সৎ নির্লোভী এবং পরোপকারী। ছোটবেলা থেকে পিতার পাণ্ডিত্য ও স্বদেশচেতনা - উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেন। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন কিশোর নিকুঞ্জবিহারী কে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। ১৯০৮ সালে কাঁথি হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯১১ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক এবং ১৯১৫ সালে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বি এ পাশ করেন।১৯১৬ সালে অহল্যা দেবীর সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন।একই সময় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী এম এ তে ভর্তি হন এবং পাশ করেন। 
১৯১৮ সালে নন্দীগ্রাম হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন।১৯২১ সালের ১লা মার্চ কলাগেছিয়া গ্রামে- অখণ্ড বাংলার প্রথম জাতীয় বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। উদ্বোধন করেন দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ শাসমল।জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হয়ে জাতীয় আন্দোলন কে জোরদার করতে বিশেষ উদ্যোগী হন।এবং ঐ সালের ডিসেম্বর থেকে জাতীয় কংগ্রেসের সবর্ক্ষনের কর্মী হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৯২৪ সালে তার কন্যা আভা মাইতির জন্ম হয়( পরবর্তী কালে বিখ্যাত নেত্রী ও মন্ত্রী)।
জাতীয় কংগ্রেসে তার আত্মনিয়োগ, কর্মোদ্যম,উৎসাহ - খেজুরী থানা সহ জেলায় বিশেষ উদ্দীপনার সঞ্চার করে। 
গান্ধীজির আহ্বানে ১৯৩০ সালে লবন সত্যাগ্রহ শুরু হলে,এই মেদিনীপুরের মাটিতে নিকুঞ্জবিহারী ও তার স্ত্রী অহল্যাদেবী সক্রিয় অংশ নেন। ১৯৩০ সালের ২৫ এপ্রিল থেকে তিন মাস এবং ১৯৩৩ সালের ২৬ শে জানুয়ারি ২য় বার আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহনের জন্য ৬ মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন। ৪২ এর আগষ্ট আন্দোলনে(২১ আগষ্ট) আবার কারাবরন করেন।
১৯৪৬ সালে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক পরিষদের নির্বাচনে নিকুঞ্জ বাবু উত্তর বর্ধমানের মিউনিসিপ্যাল নির্বাচন ক্ষেত্রে জয় লাভ করেন। 
১৯৪৭ সালে আসে দীর্ঘ প্রতিক্ষিত স্বাধীনতা। ডাঃ প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের নেতৃত্বে প্রাদেশিক সরকার গঠিত হলে, নিকুঞ্জবাবু সেই সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষামন্ত্রী হন।
১৯৪৮ এর ২৩ শে জানুয়ারি ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের মুখ্যমন্ত্রীত্বে নতুন সরকার গঠিত হলে নিকুঞ্জবাবু সেই মন্ত্রীসভায় উদ্বাস্তু -ত্রাণ- পূনর্বাসন মন্ত্রী হন।১৯৫২ সালে সাধারণ নির্বাচনে পরাজিত হলেও ১৯৫৭ সালে ঘাটাল লোকসভা থেকে নির্বাচিত হয় সাংসদ হন।এসময়ে কংগ্রেসের সাংগঠনিক কাজে বিশেষ তৎপরতা দেখান।বাঁকুড়া -মেদিনীপুর- ঝাড়গ্রাম -বীরভূমের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য তুলা চাষের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখেন এবং উদ্যোগ গ্রহন করেন। 
এত ব্যস্ততার ধকল সহ্য করতে না পেরে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৭০ সালের ১৯ শে মে প্রয়াত হন।
দেশের জন্য-স্বাধীনতার জন্য -নতুন ভারত গড়ার জন্য তিনি ৫বার জেল খেটেছেন। মন্ত্রী হয়ে দেশের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য আপ্রান চেষ্টা করেছেন।। নারীশিক্ষা কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে স্থাপন করেছেন দুটি বালিকা বিদ্যালয়। 
আজন্ম গান্ধীবাদী,অহিংসার পুজারী নিকুঞ্জবিহারীর যাবতীয় লক্ষ্য ছিল - দেশের মানুষ ও দেশ জননীর উন্নতি। 
দেশ ও মানুষ কে নিয়ে যে স্বপ্ন তিনি দেখতেন তার উত্তরসূরী আমরা। ১২৮ তম জন্মদিনে রইল আমাদের অন্তরের শ্রদ্ধা।
**********************************

No comments: