¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢¢
বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষ্যে.
$$$$$$$$$$$$$$$$$$$$$$$$$$$$$$$$$
Doinik Sabder Methopath
Vol -133 /s. Dt -17/9/20
৩১ ভাদ্র,১৪২৭. বৃহস্পতিবার
€€€€€€€€€€€€€€€€€€€€€€€€€€€€€€€€€
পর্ব : ১
বিশ্বজুড়েই ঘুড়ি ওড়ানো একটি মজার খেলা। এছাড়াও বহু দেশে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশে ঘুড়ি ওড়ানো একটি বিনোদনমূলক অবসর বিনোদন। বাংলাদেশে, বিশেষ করে পুরনো ঢাকায় পৌষ মাসের শেষ দিন, অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব পালন করা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিশ্বকর্মা পূজার দিন ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথা রয়েছে।প্রায় ২,৮০০ বছর পূর্বে চীন দেশে ঘুড়ির সর্বপ্রথম ঘুড়ির উৎপত্তি ঘটেছে। পরবর্তীকালে এটি এশিয়ার অন্যান্য দেশ - বাংলাদেশ, ভারত, জাপান এবং কোরিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও, ইউরোপে ঘুড়ি খেলাটির প্রচলন ঘটে প্রায় ১,৬০০ বছর পূর্বে। প্রথমদিকে ঘুড়ি কাগজ অথবা হাল্কা তন্তুজাতীয় সিল্কের কাপড় দিয়ে উড়ানো হতো। ব্যবহৃত অন্যান্য উপাদানের অংশ হিসেবে ঘুড়িতে বাঁশের কঞ্চি কিংবা অন্যান্য শক্ত অথচ নমনীয় কাঠ দিয়ে তৈরী করা হয়। এছাড়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে সুতা কিংবা পাতলা দড়ি ব্যবহৃত হয়।
আধুনিককালের ঘুড়িগুলোয় সিনথেটিক জাতীয় পদার্থের প্রচলন রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত। কোনটি আকারে খুব বড় ও দেখতে নয়ন মনোহর। আবার কোনটি আকারে খুবই ছোট যা দ্রুত উড়তে কিংবা প্রতিযোগিতায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
২০১১ সালে অনুষ্ঠিত ব্রিষ্টল ঘুড়ি উৎসব শেষে সবচেয়ে বড় ঘুড়িটি প্রায় ২০ মিনিট আকাশে অবস্থান করে। এটি ভূমির প্রায় ১০,৯৭১ বর্গফুট জায়গা দখল করেছিল।
অন্য ঘুড়ির সুতা কাটার উদ্দেশ্যে কাচের গুঁড়ো, আঠা ইত্যাদি মিশ্রিত বিশেষ মশলা যা সুতায় মাখিয়ে রোদে শুকানো হয়। ঘুড়ির লড়াই ,
ঘুড়ি কাটাকাটির লড়াই সারা বছরই দেখা গেলেও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান প্রভৃতি ভারতবর্ষীয় অঞ্চলগুলোতে ঘুড়ি উড়ানোর বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ঘুড়ির লড়াইয়ে সাধারণত একাধিক লড়াকু মাঞ্জা দেওয়া সূতা দিয়ে ঘুড়ি উড়িয়ে একজন আরেকজনের ঘুড়িকে টানে অথবা ছেড়ে (ঢিল পদ্ধতিতে) কাটার চেষ্টা করেন। বিজয়ী ঘুড়ি আকাশে উড়তে থাকে আর হেরে যাওয়া অর্থাৎ কেটে যাওয়া ঘুড়ি বাতাসে দুলতে দুলতে ভুপাতিত হয়। ভুপাতিত ঘুড়ি কুড়িয়ে নেয়ার জন্য কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ চেষ্টা করেন।
দেশ বিদেশের ঘুড়ি :
১) ডায়মন্ড ঘুড়ি (Diamond Kite):
বিশেষ করে এই ঘুড়ি বিশ্বকর্মা পূজার দিন আকাশে দেখা যায়। বাচ্চারা এই ধরনের ঘুড়িগুলি আকাশে উড়াতে বেশি পছন্দ করে থাকে। কোথাও কোথাও এই ডায়মন্ড ঘুড়ি এডি ঘুড়ি হিসাবে পরিচিত। সঠিকভাবে তৈরি আধুনিক উপকরণ দিয়ে, ডায়মন্ড ঘুড়ি খুব ভাল বাতাসের পরিসীমায় থাকতে পারে। যার জন্য ডায়মন্ড ঘুড়ি বিশেষ করে রেইনবো ডায়মন্ড ঘুড়ি এত জনপ্রিয়।
ডায়মন্ড ঘুড়ি
Diamond Kite : ১৮৫০ এর দশকের জন্মগ্রহণ করা মানুষদের মধ্যে ডায়মন্ড ঘুড়ি ওড়ানোর প্রচলন ছিল। ডায়মন্ড ঘুড়িটি দেখতে খুব সুন্দর এবং আকাশে ওড়ানোও খুব সহজ। এই ধরনের ঘুড়ি কিন্তু এখনও বিলুপ্ত হয়নি। এই ডায়মন্ড ঘুড়ি এখনও সর্বত্রেই পাওয়া যায়।
২) বার্ন ডোর ঘুড়ি (Barn Door Kite):
বার্ন ডোরের ঘুড়ি ফ্ল্যাট এবং বেশ কয়েকটি বিভিন্ন অনুপাতের সাথে তৈরি করা হয়, তাই বাতাসে তাদের স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। যার জন্য এটি খুব একটি জনপ্রিয় নয়। কিছু কিছু লোকজন ট্রেনগুলিতে প্রচুর সংখ্যক বার্ন ডোর ঘুড়ি বেঁধে মজা পান।
বার্ন ডোর ঘুড়ি
Barn Door Kite: এই ধরনের ঘুড়ি বড় আকৃতির এবং আয়তক্ষেত্র আকারে। বার্ন ডোর ঘুড়ি বা আমেরিকান থ্রি-স্টিকের উৎপত্তি ১৮০০ এর দশকের মাঝামাঝি থেকে। কিছু কিছু বার্ন ডোর ঘুড়ি খুব বড় দক্ষ ফ্লাইয়ার বলা যেতে পারে। কারণ এগুলি বেশ উচ্চ লাইন কোণ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।
৩). ডোপিরো ঘুড়ি (Dopero Kite):
ডোপিরোর ঘুড়ির দুটি ডানা থাকে এবং কোনও লেজ থাকে না। অসাধারণ বলা যেতে পারে। আপনি কি জানেন এই ঘুড়িটি কিসের উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল? অনেকেই আমরা জানি না। এই ঘুড়ি মূলত ছবি তোলা উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল।
ডোপিরো ঘুড়ি
Dopero Kite: Dopero Kite 2 পিয়ারসন রোলারদের আচ্ছাদন করে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। অতএব ডুবল পিয়ারসন রোলার বা Dopero। এই ধরণের ঘুড়ি সাধারণত পেছনের প্রান্তের নীচে দিকে থেকে টানতে হয়। এই ঘুড়িগুলি একটু ব্যয়বহুল
৪) রোলার ঘুড়ি (Roller Kite):
রোলার ঘুড়ির নকশা সুপার জনপ্রিয় না হলেও কিন্তু এমন কয়েকজন রয়েছেন যারা এই রোলার নকশাগুলি সত্যিই পছন্দ করেন। এটি একটি দক্ষ হালকা বায়ু ঘুড়ি যা শক্তিশালী বাতাসে উড়ানোর জন্য সামঞ্জস্য করা যেতে পারে।
রোলার ঘুড়ি
Roller Kite: রোলার ঘুড়িটি ১৯৩০ এর দশক থেকে দেখা যায় তবে তখন এই নকশাটিকে রোলার বলা হত না বরং রোলোপ্লান নামে পরিচিত ছিল। রোলার ঘুড়ির লেজের দিকটি ডিজাইন কম এবং এই ঘুড়িটি সীমাবদ্ধ অঞ্চলে উড়ানোর জন্য কার্যকর।
৫) স্লেড ঘুড়ি (Sled Kite):
ডায়মন্ড এবং ডেল্টা ঘুড়ির মতো এর জনপ্রিয়তাও অনেক। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে এই ঘুড়ি প্রায়ই উড়তে দেখা যায়। দেখতে অনেকটা প্যারাসুট আকৃতি।
kite 12
Sled Kite: আমেরিকান উইলিয়াম অ্যালিসন 1950 এর দশকে স্লেড ঘুড়ি আবিষ্কার করেছিলেন। স্লেড ঘুড়িগুলি বেশিরভাগ ঘুড়ির বিপরীতে সমর্থনকারী ফ্রেম ছাড়াই উড়তে পারে। প্যারাসুটের মতোই বায়ুর চাপে এই ঘুড়ির আকৃতি বজায় থাকে।
৬) বক্স ঘুড়ি (Box Kite)
বক্স ঘুড়ি (Box Kite)
আপনি যদি বক্স আকৃতি কোন ঘুড়ি ওড়াতে চান বিশ্বকর্মা পূজার দিন। তাহলে বক্স ঘুড়ি ওড়াতে পারেন। এগুলি ডিজাইন বেশ সুন্দর এবং দেখতে অবিকল বক্সের মতো।
৭) অক্টোপাস ঘুড়ি (Octopus Kite)
অক্টোপাস ঘুড়ি (Octopus Kite)
একটু সমুদ্র সৈকতের দিকে গেলে আমাদের সবারই নজরে পড়ে অক্টোপাস ঘুড়ি। এই ধরণের ঘুড়িগুলি হুবহু অক্টোপাসের মতো আকৃতি এবং সাইজ। বাচ্চারা এই ধরণের ঘুড়িগুলি বেশ পছন্দ করে। আকাশে ওড়ার সময় দেখতে বেশ লাগে।
৮) ডেল্টা কাইট বা ঘুড়ি ( Delta Kite):
ডেল্টা ঘুড়ি সবচেয়ে অন্যতম এবং সেরা ঘুড়ি। কখনও কখনও এটিকে স্টান্ট ঘুড়ি বলা হয়, ডেল্টা ঘুড়িটি গতি এবং চক্রের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ডেল্টা ওড়ানো খুব সহজ এবং হালকা যা সহজেই বাতাসে অনেক দূর পর্যন্ত উড়তে পারে এবং প্রায় সর্বদা একটি ভাল খাড়া রেখার কোণে উড়তে পারে। বিশ্বকর্মা পূজার দিন এই ঘুড়ির জনপ্রিয়তা প্রচুর।
ডেল্টা কাইট বা ঘুড়ি
Delta Kite: Delta Kite সম্ভবত ঘুড়ি বানানোর মধ্যে প্রথম ঘুড়ি। যা ১৯৭৪ সালে ডিজাইন করা হয়েছিল। ডেল্টা ঘুড়ি যেহেতু খুব পাতলা এবং আকাশে অনেক উঁচুতে ওড়াতে খুব সহজ যার জন্য এটি অন্যান্য ঘুড়িগুলিকে অনায়াসে মাটিতে ফেলে দিতে পারে। হালকা বাতাসে ডেল্টা দুর্দান্ত ফ্লাইয়ার।
-------------------////-----------------
ভারতে ঘুড়ির লড়াই :
ভারতে ঘুড়ির লড়াই (Kite Fighting In India)
ভারতে উৎসবের দিনগুলিতে ঘুড়ি ওড়ানোর মজাই আলাদা। সারা বছর ধরেই এখানে চলে ঘুড়ি কাটাকাটির লড়াই। মাঞ্জা দেওয়া সূতা দিয়ে অন্যের ঘুড়ির প্যাঁচ কাটার চেষ্টা এক আলাদা অনুভূতি। আকাশে ঘুড়ি কাটা গেলেই ভেসে ওঠে ‘ভো কাট্টা” ধ্বনি। বিভিন্ন দেশে নানা উৎসবে পালন করা হয় ঘুড়ির লড়াই।
গুজরাটে আন্তর্জাতিক ঘুড়ি লড়াই (Gujarat’s International Kite Fight)
ভারতে আন্তর্জাতিক উদযাপিত এক বৃহত্তম ঘুড়ি উৎসব উত্তরায়ণ, যা গুজরাটে উদযাপিত করা হয়, এটি প্রতিবছর মকর সংক্রান্তির দিন প্রধানত পালিত হয় গুজরাট , কিন্তু মধ্যে শহরগুলো তেলেঙ্গানা এবং রাজস্থান।
মূল অনুষ্ঠান, আয়োজিত হয় গুজরাটের ঘুড়ির রাজধানী আহমেদাবাদে। ভোর ৫ টা ৫০ মিনিট থেকে স্পন্দিত রঙের ঘুড়ি প্লাবিত হয়। আট থেকে দশ মিলিয়ন মানুষ এই উৎসবে যোগ দেয়।
তেলেঙ্গানা আন্তর্জাতিক ঘুড়ি লড়াই (Telangana International Kite Fight)
তেলেঙ্গানা আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসব একটি তুলনামূলকভাবে নতুন ঘুড়ি উত্সব যা আহমেদাবাদের মতো সুন্দর। 2016 সালে শুরু হয় এই উৎসব এবং প্রতিবছর জানুয়ারী হায়দরাবাদের প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়। ঘুড়ি তৈরির বিষয়ে ইন্টারেক্টিভ ওয়ার্কশপ এবং আরও অনেকগুলি সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এছাড়াও গুজরাত ছাড়াও এই উৎসবটি রাজস্থান, দিল্লি, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু রাজ্যেও পালিত হয়। দিল্লির অনেক জায়গায় এই দিনটির জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ঘুড়ি উৎসবের হাইলাইট (Highlight Of The Festival Of Kites)
বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসবটি শুধুমাত্র রঙিন ঘুড়ি দেখা হাইলাইট নয় বরং বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে চমৎকার ঘুড়ি যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যানার ঘুড়ি, জাপানি ওয়াউ-বালং ঘুড়ি, চাইনিজ ফ্লাইং ড্রাগনের ঘুড়ি এবং অন্যান্য ধরণের ঘুড়ি। গুজরাটের ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ গ্রহণ।
==============©©©©=============
পর্ব :২
ঘুড়ি ওড়ানো
দেবাংশু শেখর পড়িয়া (ষষ্ঠ শ্রেণি)
লকডাউনে একটা কথা খুবই মনে পড়ছে,
সেই অধ্যায় যেটা সাধারণত সবার জীবন।
সেটা হলো ঘুড়ি ওড়ানো। ঘুড়ি ওড়ানোটা যেন অংক।বেশি সুতো ছাড়তাম পরে সময় এলে
হওয়া বেশি হচ্ছে না কম, একদম ভেবেচিন্তে ভালো করে ঘুড়ি ছাড়তাম। অবশ্যই লাটাই কোনদিন আমার হাতে থাকতো না। থাকতো আমার দাদার হাতে। আমার কাজ
ঘুড়ি ছাড়া ও দেখা।
==============©©©©=============
ঘুড়ি
দুর্গাদাস মিদ্যা
বাঙালি জীবনে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে রাজা রাজড়াদের ইচ্ছা অনুসারে। প্রভাবিত হয়েছে বলা যেতে পারে। এই যেমন দুর্গাপূজা।তেমনি ঘুড়ি ওড়ানো টাই এসেছে মূলত:। এই খেলাটির উৎস স্থল চীন। ওখানে ঘুড়ি লড়াই একটি জাতীয় খেলা। আমাদের এই দেশে ওই খেলা বেশ জনপ্রিয় একটি বিনোদন। আর এই খেলার আধিক্য দেখা যায় বিশ্বকর্মা পূজো এলে। শারদীয়া আবহাওয়ায় বেশ অনুকূল ঘুড়ি ওড়ানোর পক্ষে ।আকাশ পরিষ্কার মেঘের সম্ভাবনা কম. তাই বিপদের সম্ভাবনা কম।
ঘুড়ি পরিভাষায় kite, kite মানে চিল, kite মানে ঘুড়ি। দুটোই আকাশে ওড়ে। অর্থাৎ মানুষের সুপ্ত বাসনা পাখির মত আকাশে ওড়ে। তাই ঘুড়ির আনন্দ। ঘুড়ি কে হিন্দিতে বলে ঘুড্ডি। ঘুড়ি তৈরি হয়-পাতলা কাগজে বাঁশের শলাকা এঁটে । আকাশে ওড়ার খেলনা বিশেষ। খুব সহজ কাজ নয় ঘুড়ি ওড়ানো। ঘুড়ি ওড়াতে কত কি জানতে হয়। নানা কসরত আছে। নানা রকমের ঘুড়ি ও আছে গোত্তা, ড্রাইভ, প্যাচ , ভোকাট্টা, মাজ্ঞা, সুতো, লাটাই এসব জানতে হয়। লাখ, লখকাটা, লখলাইন। ঘুড়ি কাটার সঙ্গে জীবনের তুলনা হয় - বলে জীবনটা একটা ভোকাট্টা ঘুড়ি ।খুব উত্তম বিনোদনের খেলা। ঘুড়ির নাম চাঁদিয়াল , দোভাজ, পেটকাট্টি এইসব।
=================©©©©============
কবিতার নাম - মনঘুড়ি
কলমে - শ্রীলিম
রচনা - ৩১ ভাদ্র ১৪২৭, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০।
স্থান - বালিয়াপুর, আসানসোল।
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
স্মৃতির পাতা উল্টে দেখি মনের আকাশে,
উড়ছে কত রং বেরঙের ঘুড়ি।
ঘুড়ি মানেই তো স্বপ্নের উড়ান,
দূর দিগন্তে পাখা মেলে উড়ে যাবার বাসনা।
এখন আর আমি ঘুড়ি ওড়াই না, মনকে ঘুড়ি বানিয়ে নিই,
তারপর লাটাইয়ের সুতো ছেড়ে দিই দিগন্তে...
মহামারী করোনার বিভীষিকায় রয়েছি গৃহবন্ধী,
তবুও আজ জানালার শিক ধরে দেখি,
নীল আকাশের নিচে তুলোর মতো সাদা মেঘের ভেলা ভাসে,
কানে আসে বিশ্বকর্মা পুজোর মন্ত্র, ঢাকের শব্দ আর
আমার শরীরে আর মনে জাগে চিরপরিচিত এক রোমাঞ্চ।
=================©©©============
ভোকাট্টা
সত্যব্রত মিশ্র
জীবনটা ঠিক যেন হাওয়ায় ওড়া ঘুড়ির মতো ---
ডানা মেলে দেখো হাওয়ার বুকে
উড়তে উড়তে স্বাধীনতা খুঁজে পাবে।
যদি না অদৃশ্য হাতে নাচতে থাকো
তবে এ জীবন মুক্ত বিহঙ্গের মতো।
অনেকটা পথ পরিক্রমা শেষে
ক্লান্ত মন করে শুধু আনচান
অদৃশ্য সুতোটা না হয় থাক তোমার হাতে ।
ভোকাট্টা না হয় না হলেম তোমার তরে।
================®®®®===========
ভো-কাট্টা
জন্মেজয় সাহু
শিশুবয়স থেকে বিয়ের আগে পর্যন্ত সাত্যকির জীবনযাত্রা নির্বাহ হত তার মায়ের ইচ্ছেমতোই। বিয়ের পর তার স্ত্রী চাইল সাত্যকি তার ইচ্ছেমতোই চলুক। তখনও তার মা কিন্তু মায়ের অধিকার ছাড়তে নারাজ। দুজনেই চায়, সাত্যকির জীবন-ঘুড়ির লাটাইটা তারই হাতে থাকুক। বিবাদ একসময় চরমে উঠল। সাত্যকি অত্যন্ত সংবেদনশীল মনের মানুষ। মা ও স্ত্রীর টাগ-অব ওয়ারের মাঝে পড়ে তার বিষণ্ণ মন শান্তির খোঁজে নীল আকাশে উদভ্রান্তের মত উড়ে বেড়াতে লাগল। ক'দিন পর দেখা গেল বাড়ির বাগানে আমগাছের ডাল থেকে তার ঘুড়ি-শরীরটা ভো-কাট্টা হয়ে ঝুলছে। তার মা ও স্ত্রী শূন্য দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রইল। লাটাইটা তখনও তাদের হাতে ধরা রয়েছে কিন্তু ঘুড়িটা ভো-কাট্টা হয়ে গেছে।
==============©©©©=============
স্মৃতির ঘুড়ি
জয়দেব মাইতি
দক্ষিণা বাতাস শুরু হলেই আমার দাদু আর বড় কাকু ঘুড়ি তৈরি শুরু করে দিত।তারপর প্রতিদিন বিকেলবেলা ঢাউস একটি ঘুড়ি নিয়ে মাঠে যেতাম।সঙ্গী আমার বড় কাকু। স্কুল থেকে ফিরলেই দাদু সোজা মাঠে আমাদের সঙ্গে।
শনি রবিবার শুরু হত অনেক তাড়াতাড়ি।আবহাওয়া বুঝে উড়িয়ে রাখা হতো একটানা কয়েকদিন।সারাক্ষণ এই ঘুড়ি নিয়ে তিনজনের মধ্যে কত কিছুই আলোচনা হতো। যেন যুদ্ধ জয়ের শলাপরামর্শ।
বিরাট ভোমরাঘুড়ি, নিয়ে মনে মনে একটা গর্ব কাজ করতো। একদিন, প্রথমে কাকু তারপর দাদু ঘুড়ি হয়ে মহাকাশে উড়ে গেলে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম।
এখনো নিয়ম করে ঘুড়ি বানাই - উড়াই।কিন্তু অতি ব্যাস্ততায় অতীতের সেই স্বাদ আর পাইনা।
নিজের কিশোরবেলা মনে করে এখন প্রতিবছর ক্লাস ভিত্তিক ঘুড়ি ওড়ানোর আয়োজন করি।উৎসাহিত করার চেষ্টা করি সামান্য উপহারে।
আর লাটাই হাতে তখনই মনে হয় আবার ছুট্টে ফিরে যাই সেই কৈশোরের আলপথে-
***----******------**-*****------*******------++
ঘুড়িমন
বীথিকা পড়ুয়া মহাপাত্র।
ভোকাট্টা হয়ে গেছে কবে সেই ঘুড়িগুলো!কাশের শুভ্র সজ্জ্বায়, শিউলির সুমিষ্ট মন মাতানো গন্ধে,বিশ্বকারিগর বিশ্বকর্মার আবাহনে আগমনীর পূর্বাভাসে ঢাকের তালে তালে উড়ে যেতো আকাশে অসংখ্য খুশির রঙিন ঘুড়ি!গ্ৰামের মাঠে ঘাটে , শহরের ছাদে,অলিতে গলিতে উজ্জ্বল মুখে হৈচৈ বাহারি ফোয়ারা!আজ সব ভোকাট্টা! দাগী আসামীর মতো 2020 সালের একহাতে হাত কড়ার মতো মৃত্যুর লম্বা পরোয়ানা ও অন্য হাতে ভালো থাকার স্বপ্ন ! এবারে একই দিনে উৎসবের সমাহার -অরন্ধন,বিশ্বকর্মা পুজো ও মহালয়া। ঘুড়ি ভোকাট্টা হয়ে ছিঁড়ে পড়লেও ঘুড়িমনটা রয়ে গেছে মনের দেওয়ালে!মহাবীর দয়াদি অষ্টগুন যুক্ত সৃষ্টি নির্মাতা মহাশিল্পী ,মহাচিত্রকর, মহান সাহিত্যিক সহস্র শিল্পের অধিকর্তা!বিশ্বকর্মা একটা দলিত সম্প্রদায়ের নাম! পিছিয়ে পড়া জনজাতিক ঐতিহাসিক অপ্রতিরোধ্য বিরল প্রতিভা!
জ্ঞান ও কর্মের মধ্যে সমতা বজায় রেখে চলেছেন দাঁড়িপাল্লার নিত্যি বাটখারায়!তাঁরই রচিত ইন্দ্রপ্রস্থ মায়ানগরীর মায়াজাল বুঝতে না পেরে জলে পড়ে যান দুর্যোধন !অন্ধপিতার অন্ধ ছেলে বলে দ্রৌপদীর রসিকতা করার নামান্তর হলো কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ!অর্থাৎ অশুভের বিনাশ! বিশ্বব্রহ্মান্ডের নকশা ও উন্নতি হাতে করে বসে আছেন এই নিরুপদ্রব গ্ৰন্থকার!যিনি বাস্তু বিদ্যা ও স্থাপত্যবিদ্যার রচয়িতা।আজ ও ঘুড়িমনটা আকাশ গাঙে নৌকা বাইতে বাইতে মানসচক্ষুতে দেখে চলে শুভ শক্তির হাতে অশুভ শক্তির বিনাশ!
================©©©©=============
রঙিন আকাশে মনের রং খুঁজি
পার্থ সারথি চক্রবর্তী
হিন্দু শাস্ত্রে বিশ্বকর্মা দেবশিল্পী। ব্রহ্মার নাভিমূল থেকে জন্মানো দেবতা নাকি বিশ্বের সব নির্মানের জন্য দায়ী! সব তার অঙ্গুলিহেলনে। এককথায় প্ল্যানার,আর্কিটেক্ট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার। ঋগ্বেদের মতে তিনি সর্বদর্শী ও সর্বজ্ঞ। ছেলেবেলার বিশ্বকর্মা পুজোর আনন্দ আজো মনে অমলিন। ক'দিন আগে থেকেই শুরু ঘুড়ি বানানো,মান্জা দেওয়া। আর কাঙ্ক্ষিত দিনে আকাশজুড়ে- পেটকাটি, চাঁদিয়ালের ভীড়। রঙের বাহার। লড়াইয়ে 'ভোকাট্টা ' ঘুড়ি নীচে পড়ার আগেই অসামান্য দক্ষতায় ছিনতাই! সঙ্গে চলে বাড়িতে বাড়িতে অরন্ধন। খিচুড়ি ও চাটনিতে মাখামাখি বিকেল। ঘুড়ির লড়াই আজ কমলেও একেবারে উঠে যায়নি। বিশ্বকর্মার কৃপায় 'কোমায় যাওয়া কর্মসংস্কৃতি ও কর্মসংস্থান' দুই'ই ফিরবে! শিল্পস্হাপন হয়ে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য ঘুচবে! তবেই না মনের আকাশে রঙবেরঙের ঘুড়ি প্রজাপতি হয়ে উড়বে! এই আশাতেই আকাশে রং খুঁজি ।
==================©©©©===========
বিশ্বকর্মা পূজা ও ঘুড়ি
কাজী সামসুল আলম
ক্লাস টুয়েলভে পড়ার সময় বিশ্বকর্মা পূজার দিন সকালে স্টেশনের কাছে রেল লাইনের ধারে স্যারের বাড়িতে টিউশন পড়তে এসেছিলাম, সকালের হলদিয়া লোকালে লোকে পরিপূর্ণ, প্রতিটি দরজা থেকে মানুষ ঝুলছে আর আনন্দে চিৎকার করছে | সেদিনই জানলাম, হলদিয়াতে খুব মহা ধুমধাম করে বিশ্বকর্মা পূজা হয়, লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়, কল কারখানা জাহাজ বন্দরের গেট খুলে দেওয়া হয় |পরের বছর দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের ডাকে বিশ্বকর্মাপূজা কী জিনিস তা নিজের চোখে দেখলাম, রাস্তায় জনসমুদ্র, সাইকেল, বাইক পর্যন্ত ঢুকতে পারে নি, সেবার প্রায় আট কিমি হেঁটে কারখানা বন্দর দেখেছিলাম | এখন আর মানুষের মনে সেই উৎসাহ ও উদ্যম দেখি না | ছোট বেলায় গ্রামে বেড়ে উঠা, এই দিনে ঘুড়ি উড়ানোর চল আমাদের গ্রামে ছিল না | তবে আমন ধান মাঠ থেকে তুলে নিলে মাঠ ফাঁকা হয়ে যেত, সেই সময় ডিসেম্বর মাসে পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে সবাই মিলে ঘুড়ি উড়াতাম | লাল নীল বেগুন সবুজ হলুদ, এছাড়া দু রং, তিন রঙের কাগজ দিয়ে সুন্দর সুন্দর ঘুড়িতে মাঠ ভরে যেত | চিলা ঘুড়ি, লেজ ঘুড়ি কত রকমের | ক্লাস নাইনে পড়ার সময় বাবা একটা চার ফুট বাই দেড় ফুট সাইজের এক বাক্স ঘুড়ি বানিয়ে দিয়েছিলেন, দারুন উড়ত, রাতেও | পাশের গ্রামের লোকেরা ভাবত আকাশে কোনো উপগ্রহ নেমেছে | সেই সব দিন ফিরে পেলে খুব মজা হত |
================©=================
*প্রসঙ্গ : ঘুড়ি*
-সুদর্শন সেন
বাঙালির শ্রমিক দিবস ' বিশ্বকর্মা পূজা ' আর এই বিশ্বকর্মা পূজার অন্যতম আকর্ষণ হলো ঘুড়ি ওড়ানো। বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ঘুড়ির তাই রয়েছে আত্মিক যোগ।
ইতিহাস বলে, প্রাচীনকালে বৃক্ষপূজার জন্য মানুষ জড়ো হতো । বাতাসের বেগে গাছের পাতা ভেসে বেড়ানো দেখেই নাকি প্রথম ঘুড়ি তৈরির ভাবনা আসে প্রাচীন চীনাদের মনে। সে যাই হোক, চীনে প্রথম ঘুড়ি তৈরি হলেও পরবর্তীকালে এই ঘুড়ি সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে ও খুবই জনপ্রিয়তা পায় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ প্রাচ্যে ও পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশগুলিতেও।
ভারতেই ঘুড়িকে কত নামে ডাকা হয়ে থাকে। গুজরাট আর রাজস্থানে ' পতং', হিন্দি ভাষাভাষীদের কাছে ' ঘুড্ডি ' , তামিলনাড়ুতে ' পত্তম ' ইত্যাদি। এছাড়াও, ঘুড়ির রয়েছে অনেক ধরন । যেমন - চৌউখুপ্পি, বলমার্কা, দোভাজ,পেটকাটি, চাঁদিয়াল, মোমবাতি, মুখপোড়া,বগ্গা, ময়ূরপঙ্খী ইত্যাদি আরও কত কত নাম। ক্লাইভ হার্ট নামে এক ঘুড়িয়াল প্রথম ' কাইট ' শব্দটি ব্যবহার করেন বলে জানা যায়। উনিশ ও বিশ শতকে বাঙালি ধনীদের মধ্যে ঘুড়ি ওড়ানোর রেসারেসি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ঘুড়ি নিয়ে নানান জানা অজানা তথ্য জানতে উৎসাহীরা আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত রথীন পালের ' ঘুড়ির কথা ' পুস্তকটি দেখতে পারেন।
=============©©©©================
খিচুড়ি আর ঘুড়ি
সমরেশ সুবোধ পড়িয়া
খিচুড়ি আর ভোকাট্টা মানে বিশ্বকর্মা এসে গেছে৷ দীর্ঘ অবিরাম বর্ষার পরে সাদা সাদা মেঘগুলো যখন পেঁজা তুলোর পাহাড় আকার ধারণ করে মেঘের দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায়, ঠিক সেইসময় মনে হয় যেন আকাশে দূরদেশের নানা রঙের ফ্লাইট গুলো ধীরে ধীরে ঘুড়ি হয়ে ল্যান্ড করছে৷ ছেলেবেলায় ছাদে বসে লাটাই হাতে ভীষণ মজা হতো৷
রামুদা কাঁচের গুঁড়ো মিশিয়ে লাটাইয়ের সুতোতে মাঞ্জা দেওয়ার কাজটি করে দিত নিপুণভাবে৷ তাতেই কাহিল হতো কত শত ঘুড়ি৷ এখন আকাশে আর তেমন রঙিন ঘুড়ি দেখতে পাওয়া যায় না৷ কিশোরদের হাতে এখন দামী মোবাইল, পাবজি, ফ্রি-ফায়ার, ফৌজ গেমের রমরমা৷ সময় কোথায় ঘুড়ি ওড়ানোর৷
বিশ্বকর্মা পূজার বিকেলে ঘুড়ি ওড়ানোর পর খিচুড়ি খাওয়ার মজা৷ বন্ধুরা সবাই দলে দলে বেরিয়ে পড়তাম ঠাকুর দেখা ও খিচুড়ি খাওয়ার জন্য সে যেন "রথ দেখা আর কলা বেচা'র মতো৷
================©©©©=============
বাঙালি
কোয়েলী বসু
অরন্ধন ও ঘুড়িমন নিয়ে বিশ্বকর্মা পুজো-
বারো মাসে তেরো পার্বণ নিয়েই বাঙালীর বেঁচে থাকা ।আর দুর্গাপুজো তো সেরা উৎসব অতএব তার সূচনা ও সমাপ্তিপর্বেও থেকে যায় উৎসবের রেশ। শৈশব থেকে উৎসবের যে চিত্রকল্প নিয়ে বড়ো হওয়া আজ সেই ছবির ব্যতিক্রম।মহালয়ার চিরন্তন সুরে বেজে ওঠে আজকের সুপ্রভাতের ধ্বনি, অন্দরে অরন্ধন ও বাহিরে ঘুড়িমন নিয়ে ভোকাট্টার উল্লাস রবে বিশ্বকর্মা পুজোর আনন্দে মন চঞ্চল হতে চায়।
কিন্তু অনেকদিন ধরেই কর্মব্যস্ত উন্নতমানের চমকপ্রদ জীবনের কাছে মলিন সাবেকী প্রথার একটা অভাব বোধ থেকেই যাচ্ছে। সেই সঙ্গে এইবছরের উপরি পাওনা অতিমারীর চোখ রাঙানো ।তাই আতঙ্কে বাঙালীর উৎসব মুখর মন যে ভারাক্রান্ত।বিধ্বস্ত জীবনে এখন তৃষিত মনে শৈশবের দিনের আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে।নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় এক গুচ্ছ কাশ ফুল ,বাতাসে ঢাকের আওয়াজ,শিউলির গন্ধ,হালকা হিমের পরশ নিয়ে আনন্দে বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পেতে চাই ।
=============©©©=================
ঘুড়ি মন
বিষ্ণুপদ জানা
গোধূলির ঘন আবির রং আকাশের গায়ে গায়ে , গাছের পাতায়, নদীর জলে, জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। নীলুদের তাল গাছের মাথায় বিট্টুর ভোকাট্টা ঘুড়িটা আটকে .., লাটাই হাতে বন্ধুরা উদ্ধারের চেষ্টা করতে করতে শিশিরের ঘ্রাণ মেখে আলোকময় বিশ্বকর্মা পুজোর শিউলি সন্ধ্যা নেমে এলো।
অভাব অনটনের সংসারে বিট্টু পড়াশোনার
হাতখরচ বাঁচিয়ে, মেলা থেকে ঘুড়িটি কিনেছিল , বাবার চোখ এড়িয়ে। বাবা পড়াশুনা বাদে এসব পছন্দ করেন না। মায়ের সস্নেহে ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে এসব করে থাকে।
স্কুল ছুটির পর বা ছুটির দিনে বিকেলগুলো আজ শিশুসুলভ কোমলমতি মন থেকে হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে নানান দেশজ খেলাধুলা । বেশ মজা করে খালি ধানের মাঠে, নাড়ার আচড় খেতে খেতে ঘড়ির পেছনে যে দৌড় এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তর....মনটা পাখির মত উড়ে বেড়ানো, নীল আকাশের বুকে পেঁজা তুলোর মেঘকে ভর করে অজানা দেশে পাড়ি - কোন এক অজানার দেশ ! মজার দেশ! মনটা উদাস হয়ে গাইতো -
" মন মোর মেঘেরও সঙ্গী ......"
স্কুল পালিয়ে, বাবার বকুনি খেয়ে, মায়ের আদরে খুব জমে উঠতো।
যান্ত্রিক জীবনের অভিঘাতে আজ সব যেন কোথায় হারিয়ে .....,সেই সব বাল্যকালের স্মৃতি - মেঘমেদুর মহুয়ার দেশ , রূপকথার জগৎ ,অজানা কল্পনা......!
" মন রে, ভালো মন্দ যাহাই আসুক...।"
ইহজীবনে বাল্যকাল আর ফিরে আসবেনা, স্মৃতির সরণি জুড়ে যা বয়ে আসে মন ঘুড়ির হাওয়ায়।
================®®®®®==========
উল্লেখযোগ্য সংগৃহীত ছবি
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment