Monday, 26 October 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ। বিজয়া

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
                     সম্প্রীতির কবিতা
 বিজয়াদশমীর প্রণাম প্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন
=================================
                Doinik Sabder Methopath
                Vol -171. Dt -26.10.20
              ৮ কার্তিক, ১৪২৭.সোমবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
বিন্দু বিন্দু 
মহাদেব চক্রবর্তী 

শিকড় থেকে উপড়ে ফেলা চারাগাছ 
এখানে সেখানে নিতান্ত অবহেলায় 
খুঁজে যায় মাটির সন্ধান ।
মাটি যদিও পাওয়া গেল অভাব 
খাদ্য পানীয় আর নির্মল বাতাস 
প্রতিকূলতার মধ্যে বেড়ে ওঠা জীবন 
বার বার আছড়ে পড়েছে প্রবল ঝড়
মোচড় দিয়ে গেছে প্রত্যেক বার
স্থির লক্ষ্যে ছাড়েনি কখনও হাল 
এক থেকে দুই চার আট অগুনন 
ছোট মাঝারি বড় বীজ থেকে গাছ 
ডাল পালা মাথা নুইয়ে জানায় সেলাম ।


+++++++++++++++++++


বার্তা ছড়ায় বাতাস
     চন্দনা ঘাঁটী।

পেঁজা তুলোর মেঘ ছাওয়া গগন খুশিতে ভরা
কাশ শিউলির ঝরা আভাষ -মা আসছে ত্বরা।
এবার এসে দেখবি কি মা,অতিমারি করোনা ঝড়?
ছোঁয়াছুঁয়ির বিধিনিষেধ আর এই আনন্দহীন ঘর!
তবু সন্তানেরা সাজায় মণ্ডপ ,ষষ্ঠী বোধনে ডাকবে
সপ্তমীতে কলাবৌ-স্নান,পূজায় গণেশ পাশে থাকবে।
ঝাঁঝ কাঁসর ঢাকে পূজা সপ্তমীতে,পূজকের মুখে মাক্স
করুণ আঁখিতে তাকিয়ে মা,ফেলছে ভয়ে   দীর্ঘশ্বাস।

দুরত্ব বিধি মানতে গিয়ে চঞ্চল -মন যায় দূরে
অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি পায় না মা,অন‍্য চরণে ঘুরে!
নিশি অবসানে আসিবে নবমী সন্ধিপূজার সমাপনে
ভক্ত প্রাণ আকুলি বিকুলি যেয়ো না,থেকো আলাপনে।

ভরা‌ সংসারে এসে মা তুই,কি দেখলি এই ধরায়
ভয় ভক্তি ভরা মণ্ডপে-সন্তানেরা কেন অশ্রু ঝরায়?
দানধ‍্যান মেলা উৎসব সবকিছু কেমন ফাঁকা
অন্ন বস্ত্র‍ বিতরণ নেই সবে ক্ষতের চিহ্ণ আঁকা!

আর ক"টা দিন থেকে যা মা,নিওনা বিদায় দশমীতে
রাবণ পুড়ানো দেখব না আজ কোলাকুলি সারি নিভৃতে।
আশায় আশায় রই ,পুরাবে বাসনা প্রকৃতি আবার হাসবে
রাম রাবণের যুদ্ধ শেষে,করোনা যুদ্ধ থামবে।


---------০-------০------০--------০-------০-------০

সম্প্রীতির বন্ধন 
   গোবিন্দ মোদক 

মনে পড়ে ছোটোবেলার সেই সে গ্রামের কথা,
সবাই মিলে একই সাথে থাকার ব্যাকুলতা !
রাম আর রহিম একই সাথে পাঠশালাতে যেতো, 
একটা আম কুড়িয়ে পেলে দুই ভাইয়েতে খেতো ! 
ভোরের মধুর আজান-ধ্বনিতে ভাঙতো সবার ঘুম, 
চাষের মাঠে, মাছ ধরাতে কাজের বড়ই ধুম !
সন্ধ্যাবেলায় মন্দিরেতে বাজতো কাঁসর-ঘন্টা, 
রাম, রহিম আর জনসনের উদাস হতো মনটা !
রবিবার এসে গেলেই গির্জায় উপাসনা, 
সেসব কথা মনে পড়লেই মন হয় আনমনা !
ঈদ, মহরম হলেই আমন্ত্রণ পেতো হিন্দু ভাই, 
পুজোর ঠাকুর দেখতো সবাই বাছ-বিচারটা নাই !
সত্যনারায়ণের শিন্নি পেতো আমিনা, জাহানারা,
পীর-দরগায় করতো মানত সারা হিন্দুপাড়া !
থাকতো সবাই মিলেমিশে যেন ভাই ভাই, 
সম্প্রীতির এই বন্ধনেতে দিন যে কেটে যায় !
রাম, রহিম, জনসন ----- সবার রক্তই লাল ,
সম্প্রীতির এই স্নেহবন্ধন থাকুক চিরকাল !!ঞ

+++++++++++++++++++




প্রতীকি
প্রসাদ সিং


মোমবাতির দিকে তাকিয়েছিলাম একমনে 
রাষ্ট্রের কথা মনে পড়লো 
আসলে সব খেলা কেনা সংখ্যাগরিষ্ঠতার 
এদেশের কিস্যু হবে না বলে আপনি ঘুমোন 
ওদিকে রাষ্ট্রই আপনার বালিশে তুলো গুঁজে দেয় 
নাকের তেল টা আপনার নিজের পায়ের

কাশ্মীরের তুলো বগলের চুলে মিশে যায় এখানে 
মোমবাতির নীচের অন্ধকারটা গাঢ় হচ্ছে রোজ 
রাষ্ট্র শুধু প্রতীকি উন্নয়ন করে চলেছে 

-+++++++++++++++++++++++

সম্প্রীতি
নন্দিনী সরকার

বন্ধন শুধু কথায় হয় না মনেতে বাঁধতে হয়,
হৃদয় মিলনে মানুষের কাছে সম্প্রীতি ধরা দেয়।

"সবার উপর মানুষ সত্য " সবচেয়ে দামী কথা,
মুচি ,মেথর ,দলিত ,বেনে ,সবার একই ব্যাথা।

দুর্গা ,কালী ,নানক ,কবীর , মহম্মদের তরজা
জন্ম থেকে এগুলো দিয়েই মানুষকে করে কব্জা।

মনের মিলনে পরের তরে যদি কেউ ঝাঁপ দেয়,
শাসকের তবে ভয় বেড়ে যায়, বুক দুরু দুরু হয়। 

বিজ্ঞাপনের ভুল বুঝিয়ে শত্রু খাড়া ক'রে--
হাত পা কাটলে একই রক্ত ক্ষত থেকে ঝরে পরে!!

ফুল ,লতা পাতা ,আকাশ, বাতাস, ঝর্নার গান গাও-মানুষের তরে আমরা মানুষ এটা যদি ভুলে যাও

কিসের সমাজ কিসের শিক্ষা কোথায় বিবেক বলো ??
তার চেয়ে ভাই হাতে হাত রেখে মিলনের পথে চলো 
সীমানা, আইন, যুদ্ধ, বিভেদ যাতে হানাহানি চলে---
অস্ত্র বেচে মুনাফা লোটা আসলে একেই বলে।

সভ্য মানুষ সামনে বাড়ো ,হিংসা দ্বেষ ভুলে,
মানবতা দিয়ে গোঁড়ামিকে আজ সাগরেই ছুঁড়ে ফেলে।

+++++++++++++++++++++

মানুষ পরিচয় 
 পার্থ সারথি চক্রবর্তী 

শরতের কাশফুল আর শিউলির সমাহার।
আকাশের সাদা মেঘেরা নরম ইশারায় 
কানে কানে বলে, ভেজাও-
আমায় ভেজাও ভালবাসার শান্তিধারায় ।
মিটিয়ে দাও মানুষে মানুষে দূরত্ব, 
বেঁধে দাও এক বিশ্বাসের সুতো দিয়ে,
গড়ে দাও এক চিরস্থায়ী সাঁকো ।

মানবতার বন্ধন যেন ভুলিয়ে দেয়-
                                     সব ভেদাভেদ।
একটাই পরিচয়ে যেন বাঁচি সবাই-
                                     মানুষ, শুধু মানুষ।
আমায় মানুষ করে দাও, মা-
                                       শুধুই মানুষ ।

++++++++++++++++++++

 বিজয়া দশমী
নীতা সরকার

শেষ হলো নবমী
আজ বিঁজয়া দশমী। 

মা দুর্গা আজ মর্ত্য ছেড়ে
যাবেন কৈলাসে গজে চড়ে। 

আকাশে বাতাশে
বিষাদের সুর ভাসে। 

সকলের হ্নদয় ভারাক্রান্ত
নয়ণও অশ্রু ভারাক্রান্ত। 

বিদায় জানাই মাকে
বরণ করে তাঁকে। 

শঙ্খ ঘন্টা বাজিয়ে
উলুধ্বনি দেয় ভরিয়ে। 

সিঁদুর পরাণ কপালে
মিষ্টান্ন দেন মুখে। 

জয় মা দুর্গা বলে 
বলেন কানে কানে--

সবাইকে সুস্থ রেখো
আবার তুমি এসো। 

সবশেষে কোলাকুলি, প্রণাম
মিষ্টান্ন দিয়ে বিঁজয়া করলাম।

+++++++++++++++++++±+

খিদে
ফটিক চৌধুরী

দিন এভাবে যাপিত হলে
                               খিদে পাবে না কোনদিন
খিদে পাওয়ার জন্য মানুষ অনেক পথ হাঁটবে
                       রাস্তা খুঁজে পাবে না কোনদিন
খিদে কে কোথায় লুকিয়ে রেখেছে
                          কেউ জানে না। কাকে বলি ?
কেউ আছে মন্দির মসজিদ নিয়ে
                 কেউ এগোচ্ছে চেয়ারের অঙ্ক কষে।
নাকি নীরব মোদি? বিজয় মাল্য?
                            তারাই তো আসল পরিযায়ী
বরং আম্বানীদের বলি : তোমরা তো
                                       সব কিছু তৈরি করো
একটু খিদে তৈরি করে দাও না।

+++++++++++++++++++++++++++++++++
মানুষের কথা।
দুর্গাদাস মিদ্যা।

না কোনো দেবতার কথা বলবো না
          বলবো মানুষের কথা
             যে মানুষ বাড়িয়েছে
                পৃথিবীর সম্মান।
        অচল অটল পৃথিবীর বুকে
      যে বা যারা দিয়েছে প্রাণের সন্ধান
              সেই মানুষের কথা শোনাতে চায় প্রাণ।
               ভালোবেসে যারা ফলিয়েছে ফসল
                  সোনার মাটিতে
               ঘাঁটিতে ঘাঁটিতে শুধু সৈন্য সমাবেশ
                নয় উড়িয়েছে যাঁরা শান্তির পারাবত
                  এই সুনীল আকাশে আমি
                  তাঁদের কথা বলতে চাই ভালোবেসে।  
                 বুদ্ধ চৈতন্য অথবা যীশু
                   মানব শিশুকে যাঁরা দেবত্ব করেছেন
                     দান আমি আজ তাঁদের কথা
                     বলবো। না কোনো দেবতার কথা
                       নয় মানুষ হয়ে আমি পেতে
                         চাই মানুষের পরিচয়।  
+++++++++++++++++++++++++

বিভূতি 
লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল 

বায়ুর সাথে নিশ্বাস মিশে গেলেই বৃষ্টিপাত ঝমঝম , 
অতীব সঙ্গমে এই চোখে থাকে অচিন্ত্য অবস্থান ; 
জোরে জোরে শ্বাস নিলে সে দূর থেকে সুদূরে - 
অতল মন্ত্রে শূন্য নামে পৃথিবীময় হৃদয়গুহায়  

যত চন্দন ও শালুকের রিয়েলিজম তার ভেতরেই 
সন্ধিকাল , নিয়মিত শুদ্ধতা ও ক্রমে সাদা -  
রূপ তার নিঝুম আর সুক্ষতর ফসফরাস -সে অন্তি :  
পাখিটির নিরাশ্রয় আকাশ নিয়ে দেখে নেয় দীপ্তির গুণিতক - 

++++++++++++++++++++++





No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...