Monday, 16 November 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ।

###############################
                পবিত্র ভাইফোঁটা উপলক্ষ্যে
                  " অনুগল্প" বিশেষ সংখ্যা
**************!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!***************
           Doinik Sabder Methopath
           Vol -193. Dt -16.11.2020
            ৩০ কার্তিক,১৪২৭. সোমবার
===========@@@@@@@===========
"ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, 
যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, 
আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা."

ভাইফোঁটা ও 
তার সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত :

ভাইফোঁটা হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি চিরন্তন সম্প্রীতির উৎসব। এই উৎসবের পোষাকি নাম 'ভ্রাতৃদ্বিতীয়া'। ভাই-বোনের ভালবাসার বন্ধন অনন্তকাল অটুট রাখার জন্য বংশপরম্পরায় এই বিশেষ উৎসব পালিত হয়। ভাই-বোনের নিঃস্বার্থ ও স্বর্গীয় ভালবাসার প্রতীক এই ভাইফোঁটা আমাদের মনে শান্তি, সৌভাতৃত্ববোধ এবং ঐক্যের এক চমকপ্রদ আবেশ সৃষ্টি করে।

ভাইফোঁটার দিন-ক্ষণ:
বাঙ্গালী হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এই উৎসব কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ২য় দিন (কালীপুজোর দুদিন পরে) উদযাপিত হয়। মাঝে মধ্যে এটি শুক্লপক্ষের ১ম দিনেও উদযাপিত হয়ে থাকে।

ভাইফোঁটা যে যে নামে পরিচিত :-

পশ্চিম ভারতে এই উৎসব 'ভাইদুজ' নামেও পরিচিত। সেখানে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া পাঁচ-দিনব্যাপী দীপাবলি উৎসবের শেষদিন। আবার, মহারাষ্ট্র, গোয়া ও কর্ণাটকে ভাইফোঁটাকে বলে 'ভাইবিজ'। নেপালে ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে এই উৎসব পরিচিত 'ভাইটিকা' নামে। সেখানে বিজয়াদশমীর পর এটিই সবচেয়ে বড় উৎসব। এই উৎসবের আরও একটি নাম হল 'যমদ্বিতীয়া'। 

ভাইফোঁটা সম্পর্কিত বিভিন্ন মতবাদ -

“ভ্রাতৃদ্বিতীয়া” বা “ভাইফোঁটা” উৎসব কেন করা হয় তার পিছনে অনেক পৌরাণিক ব্যাখ্যা বা কাহিনী রয়েছে। 

* কথিত আছে সূর্যদেব ও তার পত্নী সংজ্ঞার যমুনা নামে কন্যা এবং যম নামে পুত্র সন্তান ছিল। পুত্র ও কন্যা সন্তানের জন্মদানের পর সূর্যের উত্তাপ স্ত্রী সংজ্ঞার কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে। তিনি কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজের প্রতিলিপি ছায়াকে দেবলোকে রেখে মর্তে প্রত্যাবর্তন করেন। সংজ্ঞার প্রতিরূপ হওয়াই কেউ ছায়াকে চিনতে পারেনা। বিমাতা ছায়া কালক্রমে যমুনা ও যমের প্রতি দুঃব্যবহার করতে থাকেন কিন্তু ছায়ার মোহে অন্ধ সূর্যদেব কোন প্রতিবাদ না করায় অত্যাচারের মাত্রা দিনের পর দিন বাড়তেই থাকে। এভবেই একদিন যমুনা তার বিমাতা কর্তৃক স্বর্গরাজ্য থেকে বিতারিত হয়। কালের নিয়ম মেনেই যমুনার বিবাহ হয় এক উচ্চ খানদানি পরিবারে। দীর্ঘকাল দিদিকে চোখের দেখাটাও যম দেখতে পায়নি তাই তার খুব মন খারাপ করছিল। তখন ঠিক করল যে করেই হোক দিদির সাথে দেখা করতেই হবে তাছাড়া মন শান্ত হবেনা। যম রাজদূত মার্ফত যমুনার নিকট বার্তা পাঠায়। ভায়ের আসার খবর পেয়ে যমনা যারপরনাই খুশি হয়। কালী পুজার দুদিন পরে অর্থাৎ ভাতৃদ্বিতীয়ার দিন যম যমুনার বাড়ি যাত্রা করে। দিদির বাড়ি পৌঁছে যম দিদির অতিথ্যে মুগ্ধ হয়। যম পৌঁছানোর আগেই যমুনা বিশাল খাবরের আয়োজন করেছিল। দিদি যমুনার আতিথ্য ও ব্যবহারে সুপ্রসন্ন যম যমুনাকে উপহার হিসেবে বরদান প্রার্থনা করতে বলে। দিদি যমুনা এমনই এক বর প্রার্থনা করেছিল যা একটা ভাই অন্তপ্রান দিদির চিরন্তন প্রার্থনা হওয়া উচিত। যমুনা বলেছিল "ভাতৃদ্বিতীয়ার দিন প্রত্যেক ভাই যেন তার বোনের কথা স্মরন করে আর প্রত্যেক বোন যেন তার ভায়ের মঙ্গলময় দীর্ঘ জীবন কামনা করে।" যম তার দিদি যমুনাকে তাই বর হিসেবে দান করে এবং পিতৃগৃহে ফিরে আসে। যমুনা তাঁর ভাই যমের মঙ্গল কামনায় আরাধনা করে যার পুণ্য প্রভাবে যম অমরত্ব লাভ করে। বোন যমুনার পুজার ফলে ভাই যমের এই অমরত্ব লাভের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বর্তমান কালের বোনেরাও এই সংস্কার বা ধর্মাচার পালন করে আসছে।

** অপর একটি সূত্রে জানা যায় যে একদা প্রবল পরাক্রমশালী বলির হাতে বিষ্ণু পাতালে বন্দি হন। দেবতারা পড়েলেন মহা বিপদে, কারন কোন মতেই তাঁরা নারায়ণকে বলির কবল থেকে মুক্ত করতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত এগিয়ে এলেন স্বয়ং লক্ষ্মী। তিনি বলিকে ভাই হিসেবে স্বীকার করেন। সেই উপলক্ষে তাঁর কপালে তিলক এঁকে দেন। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তখন স্বীকার করে বলি লক্ষ্মীকে উপহার দিতে চাইলে লক্ষ্মী চেয়ে নেন ভগবান বিষ্ণুকে। সেই থেকেই ভাইফোঁটা উৎসবের সূচনা
***  অন্য মতে, নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর যখন কৃষ্ণ তাঁর বোন সুভদ্রার কাছে আসেন, তখন সুভদ্রা তাঁর কপালে ফোঁটা দিয়ে তাঁকে মিষ্টি খেতে দেন। সেই থেকে ভাইফোঁটা উৎসবের প্রচলন হয়। 

ক্রান্তিকালের ভাঁইফোটা ও রাখীবন্ধন :

ভাইফোঁটার দিন ভাইয়ের হাতে রাখি পরিয়ে দেওয়ার সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক ঘটনার সম্পর্ক আছে। ১৩১২ বঙ্গাব্দে বা ১৯০৫ সালে গভর্নর জেনারেল লর্ড কার্জনের আমলে বঙ্গভঙ্গ আইন পাস হলে তার প্রতিবাদ এবং সৌভ্রাতৃত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে ৩০ আশ্বিন দুই বঙ্গের লোকদের হাতে হলুদ সুতার রাখি পরিয়ে দেওয়া হয়, যা ‘রাখিবন্ধন’ উৎসব নামে পরিচিতি লাভ করে। এর মন্ত্র হলো: ‘ভাই ভাই এক ঠাঁই।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এতে নেতৃত্ব দেন। তিনি রাখি বন্ধনের প্রেরণা লাভ করেছিলেন উত্তর ভারত থেকে। সেখানে হিন্দু ও জৈনসমাজে শ্রাবণী পূর্ণিমায় সৌহার্দ্য বা ভ্রাতৃত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে পরস্পরের হাতে রঙিন সুতা বেঁধে দেওয়া হয়। সুতা বাঁধার সময় তারা বলত "যার দ্বারা মহাবলী দৈত্যরাজ বলিকে বাঁধা হয়েছিল, তার দ্বারা আমি তোমাকে বাঁধলাম" অর্থাৎ এ বন্ধন যেন কখনও ছিন্ন না হয়। বাংলার গৃহবধূদের রাখিবন্ধন আন্দোলনে সামিল করার উদ্দেশ্যে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী 'বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা' নামক পুস্তক রচনা করেছিলেন।

ভাইফোঁটা উদযাপন :

পৌরাণিক ব্যাখ্যা বা কাহিনি যাই থাকুক না কেন, বর্তমানে ভাইফোঁটা একটি সামাজিক উৎসব। এই উৎসবে এক দিকে যেমন পারিবারিক সম্পর্কগুলো আরও পোক্ত হয়, অন্য দিকে সূচিত হয় নারীদের সামাজিক সম্মান। তাই, ভাইফোঁটার ধর্মীয় গুরুত্ব অপেক্ষা সামাজিক ও পারিবারিক গুরুত্ব অনেক বেশী, যেখানে ভাই-বোনের মধ্যেকার প্রীতি ও ভালোবাসার স্বর্গীয় সম্পর্কটিই মূখ্য।
        
ভাইফোঁটার দিন বোনেরা তাদের ভাইদের কপালে চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দিয়ে ছড়া কেটে বলে-

“ ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, 
                               যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, 
                   আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা॥
     যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে 
                                                 যম হল অমর।
আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে 
                                আমার ভাই হোক অমর॥”

এইভাবে বোনেরা ভাইয়ের দীর্ঘজীবন কামনা করে। তারপর ভাইকে মিষ্টি খাওয়ায়। ভাইও বোনকে কিছু উপহার বা টাকা দেয়।

অনেক সময় এই ছড়াটি বিভিন্ন পরিবারের রীতিনীতিভেদে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। অতঃপর, বোন তার ভাইএর মাথায় ধান এবং দুর্বা ঘাসের শীষ রাখে। এই সময় শঙ্খ্যবাজানো হয় এবং হিন্দু নারীরা উলুধ্বনি করেন। এরপর বোন তার ভাইকে আশীর্বাদ করে থাকে (যদি বোন তার ভাইয়ের তুলনায় বড় হয় অন্যথায় বোন ভাইকে প্রণাম করে আর ভাই বোনকে আশীর্বাদ করে থাকে)। তারপর বোন ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি দ্বারা ভাইকে মিষ্টিমুখ করায় এবং উপহার দিয়ে থাকে। ভাইও তার সাধ্যমত উক্ত বোনকে উপহার দিয়ে থাকে।

পশ্চিমবঙ্গে ভাইফোঁটা একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠান হলেও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পালিত হয়। পশ্চিম ভারতের ভাইবিজ একটি বর্ণময় অনুষ্ঠান। সেখানে এই উপলক্ষ্যে পারিবারিক সম্মেলনেরও আয়োজন করা হয়। মহারাষ্ট্রে মেয়েদের ভাইবিজ পালন অবশ্যকর্তব্য। এমনকি, যেসব মেয়েদের ভাই নেই, তাঁদেরও চন্দ্র দেবতাকে ভাই মনে করে ভাইবিজ পালন করতে হয়। এই রাজ্যে বাসুন্দি পুরী বা শ্রীখণ্ড পুরী নামে একটি বিশেষ খাবার ভাইবিজ অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করার রেওয়াজ আছে।

ভাইফোঁটার সামাজিক গুরুত:
আমরা সামাজিক জীব। আমাদের সমাজ তৈরী হয় প্রথমে ঘর থেকে। মা-বাবা, ভাই-বোন দিয়ে যে পরিবার শুরু হয়, সেই পরিবারটিই সময়ের সাথে সাথে আত্মীয়তার বন্ধন বিস্তৃত করে, ঘর থেকে বেরিয়ে প্রতিবেশী, প্রতিবেশী পেরিয়ে পাড়া, গ্রাম ছাড়িয়ে একদিন সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ে। আজ বাংলার যে নানা লোকাচার রয়েছে, যা দিয়ে বাঙালির সংস্কৃতির সতন্ত্রতাকে চিহ্নিত করা যায়, তারই অনিবার্য রূপ ভাইফোঁটা।
অতঃপর, বোন তার ভাইএর মাথায় ধান এবং দুর্বা ঘাসের শীষ রাখে। এই সময় শঙ্খ বাজানো হয় এবং হিন্দু নারীরা উলুধ্বনি করেন। এরপর বোন তার ভাইকে আশীর্বাদ করে থাকে (যদি বোন তার ভাইয়ের তুলনায় বড় হয় অন্যথায় বোন ভাইকে প্রণাম করে আর ভাই বোনকে আশীর্বাদ করে থাকে)। তারপর বোন ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি দ্বারা ভাইকে মিষ্টিমুখ করায় এবং উপহার দিয়ে থাকে। ভাইও তার সাধ্যমত উক্ত বোনকে উপহার দিয়ে থাকে।


============////================
অনুগল্প
===========////=================
১.
সিস্টার

ফটিক চৌধুরী

নীতিশ এখন করোনামুক্ত। নেগেটিভ। এবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেই হয়।আজ ভাইফোঁটা। সকাল থেকেই মনখারাপ। এবার বোনের কাছে ফোঁটা নিতে পারবে না। একটাই স্বস্তি ডাক্তার সিস্টারের যত্নে সে আজ বিপদমুক্ত। এসব ভাবতে ভাবতে সে আবার কখন ঘুমিয়ে পড়েছে।
-- দাদা,ওঠো। যাও ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসো
রমা সিস্টার বলে ওঠে।
-- যাই, সিস্টার
-- না, আজ কোনো সিস্টার নয়, আজ বোন
ওয়াসরুম থেকে ফিরে এসে নীতিশ দেখে হাসিমুখে সিস্টার রমা চন্দন ও মিষ্টির প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে।

----------------///---------------
২.
পুটুর ভাইফোঁটা 
                           গোবিন্দ মোদক
 
          চারিদিকে শাঁখ বাজছে, উলু-ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বোনেরা তাদের ভাইকে, দাদাকে ফোঁটা দিচ্ছে --- কেমন একটা খুশি খুশি পরিবেশ। পুটুর খুব মনখারাপ। এবার ওর আর বাপের বাড়ি যাওয়াও হলো না, ভাইফোঁটা দেওয়াও হলো না। ওর ভাইটা একা এতোটা পথ আসতে পারবে না।
          পুটুর বর একটা মুদিখানা দোকানে কাজ করে। কাজেই ওর সামর্থ্য নেই যে একা একখানা গাড়ি ভাড়া করে সাধনকে ফোঁটা দিতে যায় ! আর সাধনের পক্ষেও এতোটা রাস্তা .....।
         দিন গড়িয়ে বিকেল নামে, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। রাত আসে, রাত বাড়ে .... পুটুর মন-খারাপও বাড়তে থাকে .... ।
            *** *** *** ***
         দরজায় শব্দ হতেই ধড়মড়িয়ে উঠে বসে পুটু। এতো রাতে কে এলো ! দরজা খুলেই পুটু অবাক ---- সাধন এসেছে !
         --- দিদি রে ! মনটা এতোই খারাপ করলো যে সাইকেলে চড়েই চলে এলাম ! তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা কর দিদি, এখনও ভাইফোঁটার তিথি পেরিয়ে যায় নি !
          চোখের জল বাঁধ মানে না পুটুর।

------------------///---------------

৩.
মধুর সম্পর্ক

নীতা সরকার

পৃথিবীতে সব চেয়ে নিঃস্বার্থ, মধুর সম্পর্ক
হলো ভাই বোনের সম্পর্ক। আমি যখন পাঁচ
 বছরে তখন আমার একটি বোন হয়। বোনকে
দেখে আমি আনন্দে আত্মহারা। 
       যেদিন বোন বাড়িতে এল, সেদিন বোনের 
পাশে বসে সারাদিন কাটিয়ে দিলাম। বোন
কাঁদলে কাঁদতাম, হাসলে হাসতাম। কখনও
কাঁথাও পালটে দিতাম। তিন বছরে যখন স্কুলে
ভর্ত্তি হলো, সেদিন আমি সারাদিন স্কুলের বাইরে ছিলাম। আর যেদিন বোন আমায় প্রথম ভাইফোঁটা দিল, সেদিন যে কি আনন্দ আমার 
হয়েছিল। নিজের টিফিনের পয়সা জমা করে
ওর পছন্দের জাপানি পুতুল কিনে দিলাম। 
       আদরের বোনটি যখন শ্বশুড় বাড়ী গেল,
তখন সাতদিন আমি খাইনি।ওকে ছেড়ে থাকতে ভীষণ কষ্ট হয়। তবুও ভাই বোনের মধুর সম্পর্ক
এতটুকু ম্লান হয়নি। 

---------------///--------------------
৪.
আকাশ দেবো

সুবীর ঘোষ

হাসি তাতা। দিদি আর ভাই। তাতা অল্পেই রেগে যায়। তখন তাকে সামলায় দিদি হাসি। মাত্র দু বছরের বড়ো। তাদের মা পারেন না। অল্পতেই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। তখন হাসি এগিয়ে এসে বলে -- মা তুমি সরে যাও, আমি দেখছি। হাসি তখন তার ছোট্ট বুদ্ধি আর কল্পনা দিয়ে ঠিক ভুলিয়ে দেয় তাতাকে। তাতা তারপরই মায়ের কাছে একগাল হেসে বলে --মা ওই যে সাদা সাদা নাড়ুগুলো বানালে আমাকে একটা দেবে ? মা ওকে দুটো নাড়ু দেন ---একটা তোর। একটা দিদিকে দিবি। তাতা ঠিক এসে দিদিকে একটা দেয়। 
শীত পড়লে মায়ের বন্ধুরা ময়ূরাক্ষী নদীর ধারে চড়ুইভাতি করতে গেল। দশ বছরের মধ্যে যাদের বয়স সেই ছেলেমেয়েরা সঙ্গে যেতে পারবে। সবাই যাচ্ছে ছোট ছোট দল বেঁধে। হাসি তাতাদের একটা দল। তাতার মতো ছোটরা ছুটে ছুটে ঝোপঝাড়ের দিকে চলে যাচ্ছিল। তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনতে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছিল হাসির মতো দিদিরা। 
হঠাৎ তাতা এসে বলল--দিদি একবার বাড়ি যাবি? 
---কেন রে, পটি পেয়েছে বুঝি ? 
---না না, ওসব নয়। ছাদের গাছে কাঁচালঙ্কা ধরেছে না, মা বলেছিল পিকনিকে নিয়ে আসবে। মা তো ভুলে গেছে। চল্ আমরা গিয়ে নিয়ে আসি। 
---দুর পাগলা, ওখানে ঠিক লঙ্কা থাকবে। আমাদের নিয়ে যাবার দরকার নেই। 
---যাবি না তো ? তাহলে আমিও পিকনিকে যাব না। 
এই বলে তাতা মাটিতেই বসে পড়ল। সে আর যাবে না। হাসি কত তার হাত ধরে টানল। কিন্তু বৃথা। তাতাকে ওঠানোই গেল না। মায়ের জন্য লঙ্কা না নিয়ে সে যাবে না। 
হাসি তাকে ভয় দেখায় ---তাহলে তুই একা থাক্। শেয়াল এসে তোকে কামড়াবে। 
তাতা তখন চিৎকার করতে থাকে। হাসি বলে --দাঁড়া মাকে ডেকে আনি। মা এসে মারুক। তাতা তখন কাঁদতে থাকে। হাসি এবার বলে --তুই চল্ , পিকনিক থেকে ফিরে তোকে একটা সুন্দর জিনিস দেব। 
--কী জিনিস আগে বল্ ? 
--একটা লাল বল
---ও আমার আছে 
--তাহলে একটা লালিপপ
--দুর, পিকনিক থেকে ফিরে কেউ খেতে পারে না কী ? 
সে সময় নীল আকাশে দুটো নাম না জানা পাখি ট্যা ট্যা করতে করতে উড়ে গেল। হাসি বলল --তাহলে তোকে একটা সুন্দর নীল আকাশ দেব। 
---নীল আকাশ। এই রকম নীল? 
--ওর থেকেও বেশি নীল। আরো আরো নীল। 
তাতা এবার ময়ূরাক্ষী নদীর দিকে যেতে লাগল। বাকি সবাই তখন পৌঁছে গেছে। 

-----------------///------------------
,৫.
ভুলের মাশুল


 দুর্গাদাস মিদ্দা


উনিশশো অষ্টাশি। পুরুলিয়ার আড়শা ব্রাঞ্চ থেকে কলকাতার চেতলা ব্রাঞ্চে বদলী হয়ে এল দেবু। অনেকদিনের ইচ্ছে ভাইফোঁটায় বোনেদের কলকাতার নামী দোকান থেকে দামি শাড়ি দেবে। কিনেছে। আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয় থেকে। 
৬/২০মি ব্ল্যাক ধরে বাড়ি যাচ্ছে। আনন্দে মেজাজ ফুরফুরে। কতদিনের ইচ্ছে পূরণ হবে 
কাঁধে ঝোলা ব্যাগ আর শাড়ি ও হাল্কা গরমের জামা কাপড় ভর্তি ব্যাগ বাঙ্কে রেখে গল্প করতে করতে আসা। 
দুর্গাপুর স্টেশন আসতেই নেমে দৌড়ে বাঁকুড়ার 
বাস ধরতে যাওয়া। মনেই নেই যে বাঙ্কে রয়ে গেল সেই বোনেদের ইচ্ছে পূরণের ব্যাগটা। 
বাসে উঠতে গিয়ে মনে পড়ল ব্যাগের কথা। 
ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বোনেদের বলল সব কথা। 
দুঃখে ভাইফোঁটাটটা কপালে চড়চড় করতে থাকল লেবুর। আর বোনেদের চোখের কোণে 
জল। 

-----------------///-----------------------
৬.
শূন্যতা ছেয়ে এলে

খুকু ভূঞ্যা

ভাঙা পাখির নীড়ের মতো চোখ। কখনও স্বপ্নের অংকুর দেখিনি। দেখিনি মইটানা জমির মতো কপাল। তবু সেই ছেলেটিকে যখন মেরুদন্ড সোজা করে ঋষির মতো বসার ভঙ্গি দেখি, আমি নির্বাক বিহ্বল।

ভাইফোঁটা রাখীর সঙ্গে ভাইবোনের সম্পর্ক ঠিক কতটা নিবিড় আমি জানিনা। কতটা ছুঁয়ে থাকে তাও জানি না।
আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক গুরু শিষ্যের মতো। সে শুধু আমার নয়, বাড়ির সবাইকে কিছু না কিছু বোঝানোর চেষ্টা করে।তার মনের অজ্ঞানতা দূর করে।গহ্বন স্থানে দীপ জ্বেলে দিতে চায়। ভুল করলে শাসন করে।

অভাবের সমুদ্রে সাঁতার কেটে কেটে তিরিশের সেই যুবক কি করে এতোবড়ো অন্তর পেল ভেবে পাথর।

শূন্যতা ছেয়ে এলে ভায়ের কাছে যাই। সূর্য জয়ের গল্প চলে সারারাত---

--------------------///----------------
৭.
মমতাময়ী ভগিনী

      চন্দন মাইতি

সবে মাত্র কালীপুজা শেষ হয়েছে পরশু। শীতের সকাল। কুয়াশার ঘন চাদর ভেদ করে সূর্য রশ্মি এখনো মাটিকে চুমু দিতে পারেনি। নিত্য দিনের মত বাজারের থলি হাতে এগোচ্ছি পাকা রাস্তা বরাবর হাঁটতে হাঁটতে। সব চায়ের দোকান প্রায় খুলে গেছে কুয়াশার চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে। আমার মত বাজার যাত্রী গনের সিংহভাগ গরম পানীয়ে চুমুক দিতে ব‍্যস্ত। হঠাৎ অদূরেই এক হট্টগোল। কৌতূহলী উৎসুক ভদ্রমহোদয়গন কাপ হাতেই ছুট। কারণ টা কী? যদি গবেষণার বিষয় পাওয়া যায়। তর্ক টা জমে যাবে। আমিও যোগ দিলাম।
           
কিছুটা এগিয়ে দেখতে পেলাম বছর চৌদ্দ পনেরোর একটি মেয়েকে ঘিরে ধরেছে জনা কয়েক লোক। এদের মধ্যে সব থেকে ক্ষিপ্ত ও হিংস্র ব‍্যাক্তিটি এক চায়ের দোকানের মালিক। মেয়েটির হাতে একটি রুটি। শক্ত করে ধরা। তার নোংরা হাতের তালু রুটির অগ্রভাগকে প্রায় ঢেকে ফেলেছে। সে রুটিটি চুরি করেছে। এটাই তার অপরাধ। কিছু জন দোকানদারের পক্ষ নিয়ে তাকে প্রহারেও উদ‍্যত হয়। কিছু সুচিন্তক ব‍্যাক্তি তাদের আটকায়। ব‍্যাপার বেগতিক দেখে আমি রুটির দাম মেটাই। এতে অবশ‍্য দোকানদার ও তার সমর্থকদের মাথা ঠাণ্ডা হয়। একে একে সে ফিরে যায়। সবার নেশা জল। সব ঠান্ডা।
         এরপর মেয়েটি আমার দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকায়। আমার জিঞ্জাসু মুখ দেখে সে বুঝতে পারে, আমি জানতে চাই। কেন? তারপর সে তার কষ্টার্জিত ফল বুকে চেপে রেখে অস্পষ্ট ভাবে আঙুল বাড়ায় যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের দিকে। একগাদা অপরিচ্ছন্ন কাপড়ের স্তুপের নীচ থেকে বেরিয়ে থাকতে দেখি এক ছোট্ট মুখকে। জানতে পারি সে তার ভাই। বুকের ভেতর টা মোচড় দিয়ে ওঠে। যে সামান্য রুটি আমরা অবলিলায় পথ চলতি কুকুরের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ি, সেই রুটিই কত মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
           ওরা অনাথ। বাপটা আগেই গেছে। করোনা কেড়েছে পাগলী মা কে। তার কোমল কাঁধে এখন ভাইকে মানুষ করার সংগ্রামী দায়িত্ব। এটা কি এখন আর শুধুই ভাই বোনের সম্পর্ক? হয়তো বা তার থেকেও বেশি।
      ততক্ষণে সূর্যকে স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে আকাশে। আমি ওকে আরও কিছু শুকনো খাবার কিনে দিয়ে এগিয়ে চললাম এই সম্পর্কের গভীরতা খুঁজতে খুঁজতে। আমাকে বাজার করে বাড়ি ফিরতে হবে। আজ যে ভাইফোঁটা. 

------------------///--------------------
৮.
ভ্রাতৃদ্বিতীয়া


সমরেশ সুবোধ পড়িয়া

মেজো দিদির বিয়ের বছর তিনেক পর থেকেই দিদিরা সব্বাই আমাদের বাড়িতেই এসে আমাদের তিন ভায়ের কপালে ভাইফোঁটা দিতো৷

অনেকবছর পূর্বে প্রত্যেক বারের মতো বড়দিদিই মাংস রান্না করারই উদ্যোগ নিয়েছিল৷ কিন্তু মেজোদিদির বাড়িতে অনেক গুলো সুস্বাদু তরকারি ও মাংস খেয়ে আসার পর আমিই জিদ ধরে বসলাম এবারের মাংস মেজোদিদিই রান্না করবে৷

বড়দিদি মাংস রান্না করতে না পেয়ে মন ভীষণ খারাপ করে ফেললো৷ বাবা বললো; 'লক্ষ্মী, আগামীকাল একটি বড় মোরগ নিয়ে আসবো, তখন তুই রান্না করিস'৷ সহজে রাজি হলো বড়দিদি, মুহূর্তে মন খারাপ চলে গিয়েছিল৷

গত পঁচিশ বছর ধরে তার মুখের শ্লোকটি মনে করি - "ভায়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়লো কাঁটা".....

আমাদের জন্য যমের দুয়ারে কাঁটাতার দিয়ে চলে গেছে আর তারজন্য দিতে পারি নি ...!

============///================
৯.
সময়ের সেরা উপহার 

কলমে - শ্রীলিম 
রচনা - ২৯ কার্তিক ১৪২৭, ১৫ নভেম্বর ২০২০।
স্থান - বালিয়াপুর, আসানসোল। 
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
     মধু, ও মধু, কোথায় গেলি রে? ভাইকে ডেকে ডেকে মিতা কেমন ঝিমিয়ে পড়ল। এইরকম এখন প্রায়‌ই হয় মিতার। নিজেকে তার খুব দুর্বল লাগে। মা বাপ মরা নিজের থেকে বছর চারেক ছোট ভাইটাকে নিয়ে মোহনপুর কোলিয়ারির এক ঝুপড়িতে বাস করে মিতা। মিতা এখন কুড়ি আর মধু ষোলো। 

     বছর চারেক আগে মা বাবা মারা যাবার পর এই কোলিয়ারি এলাকায় কয়লা কুড়িয়ে ভাইটাকে মানুষ করার কঠিন সংগ্রামে নেমেছে সে। কোলিয়ারি এলাকার জীবন যাপন সহজ ব্যাপার নয়, পদে পদে বিপদ। তাও আসে অতর্কিতে। তবু নিজের মান ইজ্জত তুচ্ছ করে হিংস্র শিক্ষিত আর অশিক্ষিত হায়েনাদের মধ্যে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নেমেছে সে। তবুও ভালো মানুষের অভাব নেই, তাই রক্ষে। তারাই চোখে চোখে ভাইবোনের খেয়াল রাখে। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নিজের সখ আহ্লাদ দমিয়ে রেখে ভাইয়ের জন্যই তার এই প্রাণ পণ করা। 

     মধুও দিদির বড় ন্যাওটা। দিদির কথা মেনে চলে। সে এমনিতে শান্ত শিষ্ট নিরীহ, তবে শরীরে দম আছে। কিছু করার ক্ষমতা তার আছে। পড়াশুনায় ভাল, মন‌ও আছে। ভবিষ্যতের মধুসূদনের দেখা পাওয়া যায় এর‌ই মধ্যে তার হাবেভাবে। 

     আজ ভাইফোঁটা তাই মিতা ভাইকে খুঁজে বেড়ায়। এই দিনটার জন্য তারা দুজনেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে বছরভর। ঝুপড়ির ঘরে সব আয়োজন তার শেষ। মধু এলেই তাকে ফোঁটা দেবে। ঘণ্টা খানেক পরে মধু ঝুপড়িতে ঢুকে। দিদির সামনে বসে পড়ে। মিতা আর রাগ অভিমান করে না থেকে তাকে ফোঁটা দেয়। দিদির কপালে পাল্টা ফোঁটা দেয় মধুও। যথাসাধ্য চেষ্টা করে মিতা আজকে ভাইয়ের জন্য লুচি, চালের পায়েস করেছে। ভাইয়ের হাতের কব্জিতে পরিয়ে দেয় টাইটানের ঘড়ি। বছরভর জমানোর টাকায় যেটা সে কিনতে পেরেছে। মধুর পড়াশুনায় কাজে লাগবে ঘড়ি। সময়ের কদর তাকে বুঝতে হবে। অপর দিকে মধুও দিদির পায়ের কাছে রূপার তোড়া জোড়া নামিয়ে দিদিকে প্রণাম করে। সেও দিদির সখ মেটাতে বদ্ধপরিকর। সময় বুঝিয়ে দেয় কখন কি করণীয়!

=================///==========
১০.
         ভাই-বোন 


 জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় 

-- ভাইরে -- ও ভাই! কুথায় গেলি! এত করে বললম,দুয়ার থেকে নামবিনি, আর তুই ?! 
-- এইতো দিদি,আমি ইখানে।তুই এসে গেছু? 
-- হঁ রে।তুই কুথায় গেললি? 
-- কাকার দকানে।
-- লজেন কিনতে? 
ভাই উত্তর দেয় না।ছোট্ট দিদি দেখে ছোট্ট ভাই কিছু লুকোচ্ছে।
-- তোর হাতে উটা কী? 
-- কই কিছু লয় তো! 
দিদি আর কিছু বলে না।তার অনেক কাজ।ছাগলগুলো মাঠে বেঁধে এসেছে।এবার রাতের বাসনগুলো মাজতে হবে।বাবা-মা কোন ভোরে বাবুদের আলুখেতে কাজে গ্যাছে।
বাসনগুলো রেখে দিদি দেখে ঘরের কোণে ভাই কিছু করছে।হাতেনাতে ধরে দেখে কাগজে মোড়া বড়ো কিছু আছে ভাইয়ের হাতে।কাড়াকাড়ি শুরু হয়।সেটা একটা ক্যাডবেরি চকলেট যার দাম দশটাকা।
-- এত দামি লজেন কিনেচু তুই ?
-- উটা ক্যাডবি লজেন।দিদার টাকায় কিনেচি।
-- এত দামি ক্যাডবি ক্যানে কিনেচু বল! 
ধমক খেয়ে ভ্যাঁ করে কেঁদে ভাই বলে ওঠে, -- আজ যে ভাইফোঁটা। তোর জন্যেই তো কিনেচি! 

============///=============
১১.
প্রদীপ 

অমিত কাশ‍্যপ

শান্তিপুর। সত্যিই শান্তিপুর। শৈলেনবাবু গ্রামের নিষ্ঠাবান ব্রাক্ষ্মণ। শিক্ষকতা করেই সংসার নির্বাহ করেন। গ্রামের মানুষ মান্নি করে। স্ত্রীবিয়োগের পর ছাত্র অন্ত প্রাণ। এক ছেলে, এক মেয়ে। আদর করে নাম রেখেছিলেন প্রতিমা আর প্রদীপ।
দীপাবলির পরেই ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। প্রতিমা দীপাবলির প্রদীপ সারা বাড়ি জুড়ে দেয়। আনন্দে সারা বাড়ি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। কী এক শক্তি যেন কাজ করে।
ভাই প্রদীপের আর্দশ ছিলেন নেতাজি। ইচ্ছে ছিল আর্মি হবে। ভাবনার সঙ্গে কাজ হবে ভাবেনি কেউ। কিন্তু হল এবং পোস্টিং বর্ডার। তারপর...তারপর
একদিন দেওয়ালে উঠে গেল বাবার ছবির পাশে। ভ্রাতৃদ্বিতীয়া এলে প্রতিমা ছবিতে ফোঁটা দিয়ে বলে, আমার কোনো দুঃখ নেই ভাই, গর্ব হয় তোর জন্য। অম্লান হয়ে থাক এই ভালোবাসা।

============≠=///============
১২.
বড় মধুর সেদিন 

লোপামুদ্রা ভট্টাচার্য
          
ভাইফোঁটা .....এক স্বর্গীয় আনন্দের ডালি।আজ এই ক্রান্তিকালে যা শুধুই স্মৃতি রোমন্থনের দিন।নয়ন ভরে দেখছি ---শিশির বিন্দুতে ঘাসের শিষের উজ্জ্বলতা।আর মন মুকুরে ---- ভাই তোর কপালে জ্বলজ্বল করছে চন্দনের ফোঁটা।

ছেলেবেলায় আসন পেতে চুপটি করে বসে প্রদীপশিখার কাজল পড়তিস আমার হাতে। সযত্নে মাথায় ধানদুব্বো ছুঁয়েই তড়িঘড়ি বাড়িয়ে দিতাম পা টা।ওই একটা দিন তোর প্রণাম পাবার আনন্দ আর উচ্ছাস ,সেকি কম কিছু! সেদিনের খুনসুটি আর উপহার সামগ্রী যেন জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।

বয়সের সাথে আবেগ ও উচ্ছাস খানিকটা ম্লান হলেও এই বিশেষ দিনটির জন্য প্রতীক্ষা ও দিনটি পালনে অন্যথা হয়নি কখনও।

আজকের ভাইফোঁটার মন্ত্র ধ্বনিত হবে ভিডিও কলে ,গিফট পৌঁছে যাবে পার্সেলে ,কেবল আদরের স্পর্শ স্পন্দিত হবে অন্তরের অন্তস্থলে......

===========///=========≠≠≠
১৩
যম দুয়ারে পড়লো কাঁটা

বীথিকা পড়ুয়া মহাপাত্র

"আমায় ফোঁটা দিবি না দিদি? তোর প্রিয় মধু এনেছি!এই দ্যাখ্ মৌমাছি গুলো আমার কেমন হাল করেছে"!কোনো সাড়া নেই! স্বামী বিজন দাস চিন্তিত মুখে বসে!ছ-বছরের মেয়ে কেঁদেই চলেছে অবিরাম!এবার আর কোনো বাধাই আটকাতে পারেনি শ্রীময়ীকে!গত দু'বছর ভাইফোঁটা দিতে পারেনি সে বাপ মা মরা ভাইটিকে, এবার মরিয়া! তাই সকাল সকাল সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছিল! কতো শৈশব স্মৃতি! বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ দিয়ে যা পায় তাই দিয়ে শ্রীমন্ত কলেজের বই কেনে! দিদি ফোনে আশ্বস্ত করেছে ! মৌমাছি কামড়ের যন্ত্রনা ও দিদির স্নেহের স্মৃতি আজ বড়ো উদভ্রান্ত ও অসহায় করে তুললো শ্রীমন্তকে!! স্থান কাল পাত্র ভুলে সে চিৎকার করে উঠলো" ফোঁটা দিবি না দিদি? নইলে আমি ও যে বাঁচবো না রে!" "শ্রীময়ীর অজ্ঞানতার চিমনি ফাটিয়ে কল্লোলিত হয়ে উঠলো সে ডাক!ডাক্তার বললেন ফাঁড়া কাটলো!মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা শ্রীময়ীর কাঁপা হাতের ইঙ্গিতে আঁচলের গিঁট খুলে ধান, দুর্বা হাতে দিলেন নার্স! হাসপাতালে বেজে উঠলো ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার মঙ্গলশঙ্খ ধ্বনি! আজ যে ভাইফোঁটা!
=================///===========
১৪.
সিদ্ধান্ত

শ্রাবণী বসু


সম্পর্কের মধ্যে কোনো তৃতীয় ব্যক্তির অনুপ্রবেশ ঘটলে সেটা বহু ক্ষেত্রেই অশান্তি ও অবসানের কারণ ঘটে। 
ঋত্বিকের ক্ষেত্রে যেটা ঘটেছে। মায়ের মৃত্যুর পর বড়দি মায়ের ভূমিকা নিয়েছিল। তখন ঋত্ত্বিক ক্লাস নাইন।চোদ্দ বছরের। দিদি ভাইকে মানুষ করার জন্য বিয়ে করেনি। ঋত্বিকের চাকরী পাবার পরে দিদির প্রেমিক বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল কিন্তু বয়সের অজুহাত দিয়ে দিদি এ বাড়িতেই থেকে গেল।
ভাইকে সময়ে বিয়ে দিলো। বিয়ের পর থেকে ক্রমশ দিদির সাথে ঋত্বিকের স্ত্রীর বনিবনা হচ্ছিল না। প্রথমে টুকটাক মতের অমিল। পরে পরে সেটা বাড়লো।শুধু তাই নয় তিক্ততা এবং স্বামী-স্ত্রীর সম্পকে তিক্ততা ঢুকে পড়তে লাগলো।
অফিসের এক বন্ধু তাকে অন্যত্র ট্রান্সফার নিয়ে চলে যাবার পরামর্শ দিল।
ওষুধটা ধরলো। যাবার সময় দিদি কান্নাকাটি করেছিল।কিন্তু তাকে বাধা দেয় নি।এবং ঋত্বিক দিদিকে সাথে নিয়ে যাবার প্রস্তাব দিলে সেই প্রস্তাব ফিরিয়েও দেয়।
         নতুন জায়গার জল ঋত্বিকের স্ত্রীর সহ্য হলোনা। এসেই তার জন্ডিস।শুধু তাই নয় বেশ বাড়াবাড়ি হলো। দিদি খবরটা জানতে পেরেই ছুটে চলে এলো। ভাইয়ের বউকে ছোটো বোনের মত পরম মমতায় যত্ন আত্তি করে সুস্থ্য করে তুললো।
সুস্থ্য হয়ে যাবার পর দিদি ফেরার তোড়জোড় করতে লাগলো। ঋত্বিকের মন না চাইলেও মুখ বুজে দিদির প্রস্তাব মেনে নিল।
যাবার দিন দিদি ভাই ও ভাই বউকে আশীর্বাদ করে বেরোতে যাবে। তখন ঋত্বিকের স্ত্রী দিদির কাছে এসে বললো, আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। তুমি তো চলে যাবেই ।আমি যদি তোমার আপন বোন হতাম,তাহলে তুমি চলে যেতে না। কি আর বলবো,যাও - আর কোনোদিন এসোনা, আমরা খুব খারাপ।

দিদি ব্যাগটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ভাইয়ের বউকে জড়িয়ে আদর করে বললো, ধুর পাগলী তোদের ছেড়ে কার কাছে যাবো? আমার আর আছেটা কে?
ঋত্ত্বিক যেন বেঁচে গেল! দি-দি- বলে জাপটে ধরে বলল, আমার কান মূলে দ

=============///==============
১৫.
মুক্তমনা ভাইফোঁটা
     বিষ্ণুপদ জানা

হেমন্তের কুয়াশা ভেজা সকাল। পাকা ধানের মিষ্টি মধুর গন্ধে হিমেল বাতাস ভারী আজ। কিছুদিন পরেই নবান্ন উৎসব। তার আগে কার্তিকী আমাবস্যায় শ্যামা মায়ের পুজো। ঠিক দু'দিন পরে পবিত্র ভাই বোনের মধুর সম্পর্কের ভাতৃ দ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা।

চুমকির মনটা হু হু করছে, পাড়ার সঙ্গীরা আজ পাশে নেই। সবাইকে নিয়ে প্রতিদিন যেমন তার দিন কাটতো খেলাধুলা -গাছে চড়ে , সাঁতার কেটে। বিশ্বব্যাপী করোনার আবহে সামাজিক দূরত্ব।  কেউ আসছে না কারোর কাছে। কিন্তু নানান সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে চুমকির দল সকলের সিমপ্যাথি পেয়েছে। গেল বছর তাদের ভাইফোঁটার দিনে অভিনব উদ্যোগের জন্য

              বাপি পাড়ার বোঝকার ছেলে। পড়াশোনা ও জানে। সবাই তাকে সমীহ করে। পাড়ায় পাড়ায় চোরাচালানকারী মদের ঠেক ভাঙতে গিয়ে গন্ডগোলে জড়িয়ে পড়ে। খামোখা সমস্ত কিছু ছেড়ে সংশোধনাগারে এখন সে। একমাত্র বোন ক্ষেন্তি চুমকিদের দলে। ভাইফোঁটার দিন। ক্ষেন্তির মনে আনন্দ ফোটাতে তারা  সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাড়িতে ভাইদের ফোঁটা দিয়ে সংশোধনাগারে যাবে - ভাইফোঁটা দেবে। বাপি সহ সবাইকে। 

এ বছরও একই উদ্যোগ। তারা মনে করে সামাজিক কোন কাজ কর্মে - সৎ কি অসৎ -
সংশোধনাগারে যারা আছেন প্রত্যেক -
কারোর না কারোর ভাই -দাদা। সংশোধনের সংযুক্তি মেনে কপালে ফোঁটা দেওয়া যেতেই পারে। ভাইয়ের দাদার স্নেহ ভালবাসায় বোন দিদিরা যে দিনটির জন্য অপেক্ষা করে। একটা মধুর সম্পর্কের মাধুর্য সমস্ত কিছু ছেড়ে ....

প্রকৃত মুক্তমনের ভাইফোঁটা। শাঁখ বাজে.. বোনেদের হাতে উপহারসহ প্রদীপ ... আঙ্গুলে চন্দনের ...সংশোধনাগারে আয়োজন। 

 মনের দিক  সমাজের মূল স্রোত থেকে কেন দূরে থাকবে !  সম্পর্কের আদুড় মাধুর্য । 

সত্যিই অভিনব উদ্যোগ। ওখানকার সবাই সাধুবাদ জানিয়েছেন।
 চুমকি আজ বেজায় খুশি। কারন সে সর্বদা সকলের কথা ভাবে। মনটা বড়। এক আকাশ  সংস্কারমুক্ত মন নিয়ে ডানায় উড়ে চলে নীল সমুদ্রের দিকে।
"ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা....

¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶¶






            

No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। পশুপতি ভট্টাচার্য । খ্যাতনামা চিকিৎসক ও সাহিত্যিক। Dt -15.11.2024. Vol -1053. Friday. The blogger post in literary e magazine

পশুপতি ভট্টাচার্য  ১৫ নভেম্বর ১৮৯১ -  ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৮   একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক ও সাহিত্যিক। জন্ম  বিহার রাজ্যে পিতার কর্মস্থল আরায়। তাদ...