Thursday, 19 November 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

*****************************************
                ছট পুজো উপলক্ষ্যে
                 ছড়ার সংখ্যা  পর্ব- ৫

################################
              Doinik Sabder Methopath
              Vol -197. Dt - 20.11.2020
               ৪ অগ্রহায়ণ,১৪২৭. শুক্রবার
=================================
             প্রতি বছর কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে আয়োজিত হয় ছট পুজো। সূর্য ষষ্ঠী ব্রত । দীপাবলির পর হিন্দুদের মধ্যে অন্যতম বড় উৎসব ছট পুজো এবার বাংলা মতে অগ্রহায়ণ মাসে পড়েছে। উত্তর ভারত বিশেষ করে বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং ঝাড়খন্ডে এই উৎসবটি বিশেষ ভাবে পালন করা হয়ে থাকে। শুক্লপক্ষের চতুর্থী থেকে ছট পুজো শুরু হয়ে যায়। ২০ নভেম্বর পালিত হবে এই বছরের ছট পুজো। অনুপম লৌকিক উৎসব পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ এবং নেপালের তরাই অঞ্চলে পালিত হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে এই পার্বণ প্রবাসী ভারতীয়দের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত হয়েছে। ছট পূজা সূর্য্য ও তার পত্নী ঊষার (ছটী মাঈ) প্রতি সমর্পিত হয়, যেখানে তাকে পৃথিবীতে জীবনের স্রোত বহাল রাখার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও আশীর্বাদ প্রদানের কামনা করা হয়। ছটে কোনও মূর্তি পূজা করা হয় না।

ঋগ্বেদের শ্লোকসমূহে সূর্য্যবন্দনার স্পষ্ট নিদর্শন আছে। ভারতীয় সভ্যতার সঙ্গে গ্রীক, রোমান, মিশরীয় ইত্যাদির সভ্যতাসমূহেও সূর্য্য মূখ্য দেবতা ছিলেন। সেভাবে ঊষাও বৈদিক দেবী। বেদে উল্লেখ থাকা মতে, তিনি হলেন পূর্বের দেবী এবং অশ্বিনীকুমারদের মাতা। অগ্নি, সোম এবং ইন্দ্র ইত্যাদি দেবতা সকলের পরে তিনি হলেন অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈদিক দেবী। রাত্রি হল তার ভগ্নী যাকে হয়তো পরে পৌরাণিক যুগে সন্ধ্যা এবং ছায়ারূপে কল্পিত করা হয়েছে। রামায়ণ এবং মহাভারত দুয়েতেই ছট পুজোর উল্লেখ রয়েছে। সূর্য বংশের সন্তান হওয়ার কারণে শ্রীরামচন্দ্র নিয়মিত ছট পুজো করতেন। বনবাস কাটিয়ে অযোধ্যা ফেরার সময় রাম ও সীতা সূর্য দেবের উদ্দেশ্যে পুজো ও উপবাস করেন। সেই থেকেই ছট পুজোর সূচনা বলে মনে করা হয়। আবার মহাভারত অনুযায়ী সূর্যদেব ও কুন্তীর পুত্র কর্ণ। কথিত, কর্ণ এই সময় সূর্যের আলোয় আবক্ষ জলে দাঁড়িয়ে দরিদ্রদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করেছিলেন। আবার নিজেদের রাজ্য ফিরে পাওয়ার জন্য দ্রৌপদী ও পাণ্ডবরাও এই পুজো করেছিলেন বলেও কথিত রয়েছে।

ইন্দিরা গান্ধী ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর ডিরেক্টর এনআর বিশ্বাস জানিয়েছেন যে ছট পুজোর বিভিন্ন আচার আচরণের সঙ্গে আমাদের শরীরের রক্তচাপ, ব্লাড সুগার এবং ত্বকের সম্পর্ক রয়েছে। উপবাস করার ফলে পেটের নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন তিনি। ছট পুজোর সব বিধি পালন করলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হবে। মানসিক স্বাস্থ্য ঝরঝরে হবে। উন্নত হবে হজম ক্ষমতা। ছট পুজো স্ট্রেস মুক্তিতেও সহায়ক বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কোনও জলাশয়ে দাঁড়িয়ে উদীয়মান এবং অস্তগামী সূর্যের প্রতি অর্ঘ্য নিবেদনের ফলে শরীরে ভিটামিন ডি শোষিত হয়। ছট পুজোর আগে পুজোর যে প্রস্তুতি তার ফলে হাইজিন ব্যবস্থাও অনেকটা উন্নত হয়। শীতের মুখে ছট পুজো উদযাপনে শরীরের শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থাও অনেকটা উন্নত হয়।
সূর্যে দিকে তাকিয়ে নদী বা পুকুরের জলে ডুব দিয়ে স্নান করার ফলে শরীরে সৌর বায়োইলেকট্রিসিটি বেশি মাত্রায় প্রবাহিত হয়। এর ফলে আমাদের শরীর অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এছাড়া ছট পুজোর প্রসাদ বলতে প্রথমেই যে নামটা চোখে ভেসে ওঠে তা হল ঠেকুয়া। ঠেকুয়া তৈরিতে যা যা উপকরণ ব্যবহার করা হয়, তাও অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। এছাড়া ছটের প্রসাদে থাকে কলা, নারকেল, লেবু। এর প্রতিটিই স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ছটের শেষ দিনে সূর্যোদয়ের অর্ঘ্য দেওয়ার আগে যে ৪৮ ঘণ্টার উপবাস রাখা হয়, তার আগে বিশেষ ভাবে তৈরি একটি ক্ষীর খাওয়ার প্রথা আছে। এই ক্ষীর খরনা নামে পরিচিত। এটিও শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেতে সাহায্য করে।

=================================
      বিশেষ ছড়া সংখ্যা

১.
বারো মাসে তেরো পার্বণ
ফটিক চৌধুরী

বারো মাসে তেরো পার্বণ
সবাইতো তা জানি
তেরো কেন? তারও বেশি
আমরা সবাই মানি।
পুজো মেলা পার্বণেতে
পয়সা কতো নষ্ট
এসব দেখে আমি যে পাই
ভীষণ মনে কষ্ট।
গরীব যারা তাদের জন্য
কিছু তো ভাবো সব
পুজো মেলা পার্বণেতে
করছো কলরব।
পুজো হোক পার্বণ হোক
করো না বাড়াবাড়ি
দেখছো তো? ধর্মের নামে
চলছে মারামারি।
পুজো নিয়ে বাড়াবাড়িটা
করতে চাই বারণ
কুড়ি-লাইন ছড়া লেখাটা
সেটাই একটা কারণ।


২.
মোদের পরব মোদের পাবন
চন্দন মাইতি

আমরা বাঙালি 
মজার কাঙালি।
সারা বছর যত পরব
পালনেতেই মোদের গরব।
দূর্গা বলো কালী বলো
ইদল ফেতর? তাও ভালো।
পূজো-পাবন যত রীতি 
বাড়ায় মোদের সংস্কৃতি।
এক-এক ঋতু এক-এক মেলা 
রাম-রহিমের সঙ্গে চলা।
বিভেদ ভুলেই মঞ্চ 'পরে 
সাইরা-রীতা নাটক করে। 
অনুষ্ঠানের তরেই সবাই 
এক ঠোঙাতে ঝালমুড়ি খাই।
পরব মোদের কাছে টানে 
তর্ক-বিবাদ ইতি টানে।
পাবন্ মোদের বাঁচিয়ে রাখে
একঘেঁয়ে এই জীবন থেকে।।


৩.
উৎসব 
অমিত কাশ‍্যপ

পুজো আসে পুজো যায় 
ছড়া যায় ছড়িয়ে 
মনেতে খুশির বান
বার বার ভরিয়ে

টুসু পরব ভাদু পরব
হাজারো খুশি 
বাঙলার ঘরে ঘরে 
পিঠে পুলি চুষি

দিন যায় মাস যায় 
ঘুরে ঘুরে আসে 
আনন্দ লহরী ওঠে 
আগমনী কাশে

নবান্ন নবান্ন বল
কেন বাদ যায় 
বাঙলার গ্রামে গ্রামে 
উৎসব ছড়ায়।



৪.
বারো মাসে তেরো পার্বণ
গোবিন্দ মোদক 

বারো মাসে তেরো পার্বণ,
অনুষ্ঠান আর পূজা, 
গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, 
কার্তিক, দশভূজা !!
আছেন কালী, জগদ্ধাত্রী 
বিশ্বকর্মা, শনি ,
ভক্তি-ভরে পূজা-পার্বণ
আনন্দেরই খনি !! 
সঙ্গে আছে হরেক পরব
নবান্ন, টুসু, ভাদু ,
ঈদ, মহরম, বড়দিনের
হরেক রকম জাদু !!
পূজা পার্বণ অনুষ্ঠান
দেয় রাঙিয়ে মন,
প্রাণে আনে নতুন জোয়ার
আনন্দেরই ক্ষণ !! 
উৎসবের এই মেলবন্ধন 
প্রাণের আরাম ভাই,
আত্মার এই আত্মীয়তা 
আর কোত্থাও নাই !!


৫.
উৎসব 
পার্থ সারথি চক্রবর্তী 

শরতকালের মিষ্টি রোদ, আকাশ নীলে নীল
পেঁজা তুলো ভেসে বেড়ায়, মনে খুশির মিল।
শিউলি ফুলের মিষ্টি গন্ধ, ভাসে আকাশে বাতাসে 
যদ্দূর চোখ যায়, চারদিকে মাঠ ভরেছে কাশে।
বোধন ও বিসর্জন, দুর্গাপূজায় সবাই আনন্দ করে
কোজাগরী পূর্ণিমায় মা লক্ষ্মী আসেন সবার ঘরে।
আলো জ্বালাই আনন্দের, শুভ দীপাবলিতে
ভাইয়ের কপালে বোনের ফোঁটা পড়ে দ্বিতীয়াতে।
হেমন্তের নবান্নে নতুন ফসলে চাষীর মুখে হাসি
ছটপূজাতে সবাই মিলে ঘাটের কাছে আসি।
উৎসব হোক সবার প্রাণের, সবার আনন্দের,
নতুন করে বাঁচা শিখুক, স্বপ্ন নতুন জীবনের।



পার্বণপর্ব
সুবীর ঘোষ


অঘ্রান নিয়ে এল
সুঘ্রাণ কত
নবান্ন হবে তাই
ব্যস্ততা শত।

হলুদ রঙের রোদ
যেন কামরাঙা
ঘুরে ঘুরে গান করে
বুড়ো ভিখমাঙা।

পৌষে হিমেল হাওয়া
মাঠে ধানকাটা
তেল মেখে চান করা
তবু ঠোঁট ফাটা।

পৌষমেলা যাবো সবে
হৈ হৈ করে
রবি ঠাকুরের দেশে
মন ওঠে ভরে।

শীতকালে কত মেলা
কত উৎসব
খেলাধুলা পিকনিক
কত কলরব।



৭.
পার্বণে বাংলা
দেবাশিস চক্রবর্তী।


পাল পাবণে দেশটা আমার
উৎসবেতে ঠাসা ,
শতেক পুজোয় আমোদ করে
জীবন কাটে খাসা ।

নানান জাতি - উপজাতি
একসাথে বাস করি ,
মানুষ হয়ে জন্মে, যেন
মানুষ হয়েই মরি ।

সুখ দুঃখ ভাগ করে নিই
আমরা সবার সাথে,
পুজোর প্রসাদ ভাগকরে খাই
রাখি পরাই হাতে ।

একই ক্ষেতে ফসল ফলাই
এক নদীতে স্নান,
একই মঞ্চে আমরা সবাই
এক সুরে গাই গান ।

কর্ম করি একই সাথে
ধর্ম যে যার মতো,
বাংলা মায়ের রাখবো যে মান
এই আমাদের ব্রত ।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆






No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...