Tuesday, 22 March 2022

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি। চারুচন্দ্র চক্রবর্তী (জরাসন্ধ) ২৩.০৩.২০২২. Vol -683 The blogger in literature e-magazine

চারুচন্দ্র চক্রবর্তী (জরাসন্ধ)

"কাঁচা আর পাকার মধ্যে ব্যাবধানটা কালগত। কাল পূর্ণ হলেই কাঁচা লঙ্কায় পাক ধরে, কাঁচা মাথা পাকা চুলে ভরে যায়। সংসারে একটি বস্তু আছে যার বেলায় এ নিয়ম চলে না। তার নাম চাকরি। সেখানেও কাঁচা পাকে; কিন্তু কালধর্মে নয়, তৈলধর্মে। সরকারী, আধা-সরকারী কিংবা সওদাগরি অফিসে গিয়ে দেখুন, পক্ক কেশ সিনিয়র যখন কাঁচা রাস্তায় হোঁচট খাচ্ছেন, তৈল সম্পদে বলীয়ান কোন ভাগ্যবান জুনিয়র তখন অনায়েসে পাড়ি দিচ্ছেন কনফার্মেশনের পাকা সড়ক। গিরীনদা বলতেন, চাকরি হচ্ছে পাশার ঘুটি। পাকবে কি পচবে, নির্ভর করছে তোমার চালের উপর। মূল্যবান কথা। চাল অবশ্যই চাই। কিন্তু তার সঙ্গে চাই প্রচুর তেল।"
আমার সহকর্মী রামজীবন বাবু তৈল প্রয়োগে অপটু ছিলেন; অদক্ষ ক্রিয়াতে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন নি। তাই কালপ্রভাবে তাঁর গুম্ফদেশে শ্বেতবর্ণের আভা দেখা দিল কিন্তু চাকরির কৃষ্ণত্ব ঘুচল না। সেজন্য রামজীবনের নিজের কোন ক্ষোভ ছিল না। কোন অভিযোগও কোনদিন করতে শুনিনি কতৃপক্ষের নামে।

‘ওরা কি করবে?’- কর্তাদের পক্ষ টেনেই বরং বলতেন রামজীবন; ‘জায়গা কোথায়? যক্ষের মতো যারা ঘাটি আগলে বসে আছেন, তাঁরা দয়া করে সরবেন, তবে তো? জেল সার্ভিসে পেনশন অতি বিরল ঘটনা। পঞ্চত্ব-প্রাপ্তির দুর্ঘটনা বরং শুনতে পাবে দু-একটা; কিন্তু পঞ্চান্নপ্রাপ্তির কোন বালাই নেই। অন্ততঃ পঁয়ষট্টি পেরোবার আগে। কালে-ভদ্রে দু-একটি পোস্ট যদিও বা পাওয়া গেলো, আগে বাবা জীবন, তারপরে তো রামজীবন।‘
 (লৌহ কপাট থেকে)।

জন্ম ১৯০২ সালের ২৩ মার্চ ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থানার ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করে ১৯২৬ সালে দার্জিলিংয়ে ডেপুটি জেলার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯৬০ সালে আলীপুর সেন্ট্রাল জেলের সুপারিন্টেনডেন্ট হিসেবে অবসরে যান। এই সময়ে বিভিন্ন জেলের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কয়েদীদের জীবনাচরণ তিনি অত্যন্ত গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। আর এই বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়েই ১৯৫২ সালে প্রকাশ হয় জরাসন্ধ ছন্দনামে সাড়াজাগানো গ্রন্থ লৌহ কপাটের ১ম খণ্ড। যদিও এর আগে তিনি তাঁর প্রকৃত নাম চারুচন্দ্র চক্রবর্তী নামেই কিশোর গল্প গ্রন্থ লিখে পরিচিতি অর্জন করেন। তাই “লৌহ কপাট” প্রকাশের পর জরাসন্ধ আর চারুচন্দ্র চক্রবর্তী যে একই ব্যাক্তি, অনেক পাঠকেরই তা বুঝতে অসুবিধা হয়। লৌহ কপাট-প্রথম খণ্ড পাঠক সমাজে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। চারখণ্ডের লৌহকপাটের তিনটি খণ্ডই তাঁর চাকরিজীবনে লেখা। চতুর্থ খণ্ডটি লেখেন অবসর নেওয়ার পরে এবং কারো কারো মতে সেটিই সর্বশ্রেষ্ঠ খণ্ড।


দীর্ঘ কর্মজীবনে জেলের লৌহকপাটের মধ্যে যে মানুষ গুলিকে দেখেছেন তাদের কথা ও কাহিনী তার উপন্যাসে মূর্ত হয়ে উঠেছে। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ১ লা মে 'লৌহকপাট' এর প্রথম পর্ব গ্রন্থের আকারে প্রকাশিত হয়। এরপর একে একে মোট চারটি পর্বে প্রকাশিত হয়েছে। তার কুড়ি একুশ খানি উপন্যাসের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল -

'তামসী' (১৯৫৮)
'পাড়ি'
'মসীরেখা'
'ন্যায়দণ্ড'( ১৯৬১)
'পরশমণি'
'উত্তরাধিকার'
'ছায়া' (১৯৭২)
'নিশানা' (১৯৭৭)
'তৃতীয় নয়ন'(১৯৭৯)
'হীরা চুনি পান্না' (১৯৮৩)
'আশ্রয়'
একুশ বছর'
'আবরণ'
'এ বাড়ি ও বাড়ি'
তার আত্মজীবনীমূলক রচনা হল, দুটি খণ্ডে 'নিঃসঙ্গ পথিক'। প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে। ছোট গল্প সংকলনও আছে ছ-খানা। এছাড়া ছোটদের জন্য কিছু লেখা আছে 'রঙচঙ', 'রবিবার' যমরাজের বিপদ' প্রভৃতি গ্রন্থে। সাহিত্যকীর্তির জন্য তিনি 'শরৎচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার' ও 'মতিলাল পুরস্কার' লাভ করেন। তার বহু রচনা দেশবিদেশের অন্তত ছয়টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে তার উপন্যাস 'তামসী' অবলম্বনে হিন্দিতে 'বন্দিনী' নামে চলচ্চিত্রায়িত করেন প্রখ্যাত বাঙালি চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক বিমল রায় এবং সেরা সম্মান লাভ করে।

মৃত্যু: ২৫ মে ১৯৮১ (বয়স ৭৯); কলকাতা, ভারত।

=={={{{{{{{{======={{{{{{{{{{{{====={{{{{{{{{{{

No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...