∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
কবিগণেশ বসু
============✓✓✓✓===============
Doinik Sabder Methopath
Vol -207. Dt -01/12/2020
১৫ অগ্রহায়ণ, ১৪২৭. মঙ্গলবার।
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷®®®®÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
সমাজ সচেতন কবি গণেশ বসু ষাটের দশকের উল্লেখযোগ্য শক্তিমান ব্যক্তিত্ব। প্রেমের কবিতায় সমাজ রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক বাস্তব প্রেক্ষাপট নিয়ে কবিতা রচনায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। পেশায় অধ্যাপক তিনি সাংবাদিকতায় সংগঠনে মিছিলে হাঁটায় অনন্য স্বাক্ষর রেখেছেন।
কবি গণেশ বসু ১৯৪০ সালে ১ লা ডিসেম্বর জন্মগ্রহন করেন অবিভক্ত বাংলার বরিশাল জেলার দেহেরগতি গ্রামে, মামার বাড়িতে। পৈতৃক নিবাস বরিশালেরই চাঁদশি গ্রাম। গণেশ বসুর ঠাকুরদা অন্নদাচরণ বসু মজুমদার ছিলেন জমিদার। তাঁর পঞ্চম পুত্র সুমন্তনাথ বসু মজুমদার হলেন কবির পিতা। মাতার নাম পারুলদেবী। দেশভাগের পর সুমন্তনাথ বসু মজুমদার সপরিবারে ভিটেমাটি ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন। শরণার্থী হিসেবে দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে তাঁদের দিন কাটে। পরিবারের কিছুটা আর্থিক সুরাহা করতে কবিও ছেলেবেলা থেকেই কাজে নেমে পড়েন। প্রথমদিকে ঠোঙা বানিয়ে দোকানে বিক্রি করতেন, তারপর টিউশন পড়ানো শুরু করেন।
শিক্ষা ও কর্মজীবন :
গণেশবসুর পড়াশোনা শুরু হয় দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশনে। তারপর চারুচন্দ্র কলেজে। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. পাস করেন। তিনি কিছুকাল 'অমৃত' সাপ্তাহিকে কাজ করেছেন। পরে ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন।
মতাদর্শ ও সাহিত্যাদর্শ
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি মার্কসীয় দর্শনে বিশ্বাসী। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যও হয়েছিলেন। কবিতায় তাঁর এই মতাদর্শের ছাপ লক্ষ্য করা যায়। খাদ্য আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা 'সমুদ্রমহিষ' কবিতাটি তাঁকে বিপুল খ্যাতি এনে দেয়।
" ছুটে চলে, কেউ খোঁজে কঙ্কালের কঠিন বিবর
বিমিশ্র হৃদয়ে শুধু অসহায় আর্তনাদ, আর
ঊর্ণাজাল উত্তর-দক্ষিণে -
এখন রক্তের মধ্যে শ্বাস ফেলে দুরন্ত মহিষ."
এই কবিতাটি পড়ে স্বয়ং বিষ্ণু দে একটি আস্ত কবিতা লিখে কবিকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।
" মাঝে মাঝে ক্ষেপে ওঠে শিরাস্ফীত সমুদ্রমহিষ
তোমার কবিতা উঠে জ্বলে জ্বলে ফসফরাস রাশি
রক্তে টান প্রবণতা, বিস্ফোরণ ঘটে যায় যেন ..."
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত 'স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতীয় কবিতা'(১৯৭৩) শীর্ষক কাব্য সংকলনে কবিতাটি স্থান পেয়েছিল। এমনকি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের পাঠক্রমেও এটি ছিল একসময়।
সাহিত্যকর্ম :
গণেশ বসুর মোট কাব্যগ্রন্থ ১২টি।
- বনানীকে কবিতাগুচ্ছ (প্রথম কাব্যগ্রন্থ: ১৯৬৪)
- নিজের মুখোমুখি (১৯৬৭)
- রক্তের ভিতরে রৌদ্র (১৯৬৯)
- অধিকার রক্তের কবিতার (১৯৭০)
- অমৃত আস্বাদে মৃত্যু বাংলাদেশ (১৯৭১)
- বাঘের থাবার নিচে (১৯৮২)
- নীরব সন্ত্রাস (১৯৯৯)
- অন্ন অশ্রু ভায়োলিন (২০০৫)
- ভাসান দরিয়া (২০০৮)
- ভাঙা বইঠার গান (২০১১)
- বর্ণময় পৃথিবী (২০১৩)
- বলগা হরিণের শিং (২০১৫)
- নরকরোটিতে প্রজাপতি (প্রবন্ধগ্রন্থ, ২০১১
- পুরস্কার ও সম্মাননা :
- গণেশ বসু ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে মঙ্গলাচরণ স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন। - কবির সামগ্রিক মূল্যায়নে কবি তরুণ সান্যাল লিখেছেন " সব কবিতাই যেহেতু প্রেমের আর্তিতে মুখর, বলা যেতে পারে এই তরুণ কবি নতুন কবিতার গড্ডল ধারায় হারিয়ে যাননি। অন্য বহু তরুণ যখন রমণীর প্রতারণাকে মুখ্য করে পৃথিবীর দিকে তাকান, তখন গণেশ বসু পৃথিবী ও সমাজের ম্লনতার জন্যই প্রেমের পরাজয় দেখেন। কবি প্রেম ও শিল্পীকে এক কেন্দ্রে আনতে চেয়েছেন। শিল্প ই প্রেম এবং প্রেমই শিল্প।"
- আবার আলোচক পবিত্র মুখোপাধ্যায় বলেছেন " গণেশ বসুর কবিতার প্রাণশক্তি এইখানে বিশ্বাস ও আচরণে তিনি সৎ নিজের সঙ্গে তার বোঝাপড়া এতই বিবেক সংগত সেই মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য লড়াই করতে তিনি পিছপা নন এই বিশ্বাস তাঁর কবিতার অন্তর শক্তি, সৃষ্টির ও সমৃদ্ধির অন্তর্গত প্রেরণা এবং প্রাণশক্তি।"। আজীবন প্রশ্ন রেখে যান, সহৃদয় পাঠকের কাছে -। "এভাবে কি বাঁচা যায় ? একে কি জীবন বলো তুমি ? নীরব সন্ত্রাস চলে চরাচরে , মাথার ভিতরে দ্রোহ জ্বালা গুঢ়তর অভিমান পায়ে পায়ে শিকলের শব্দ জাগে , পরতে পরতে ভালোবাসা ভেঙে ভেঙে মেঘের বিষাদ বাজে। কাঁদে একা একা হাহাকার দিনগুলি বান্ধব বিহীন। "। বোধে - বিশ্বাসে ,অন্তর শক্তিতে, সমৃদ্ধিতে অধ্যাপক কবি সম্পাদক সংগঠক আজও জীবন সংগ্রামে বেঁচে আছেন. লেলিনের যুগে প্রথম শতবর্ষে কাজ করেছেন পূর্ণেন্দু পত্রীর সঙ্গে. প্রখ্যাত দিয়া প্রকাশনী তাঁর সাহিত্যকর্ম সুন্দরভাবে মুদ্রণ করেছেন। বহু ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এই কবি বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান অনন্য প্রতিভা। আজীবন সংগ্রামের পথে চলেছেন।
- ∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment