Wednesday, 6 January 2021

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
     জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
  ড. বিমানবিহারী মজুমদার
=================================
     Doinik Sabder Methopath
     Vol -244. Dt - 07.01.2020
       ২৩ পৌষ, ১৪২৭. বৃহস্পতিবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

সাহিত্যিক শ্রীশচন্দ্র মজুমদারের পুত্র বিমানবিহারী একাধিক ভাষায় ব্যুৎপন্ন ছিলেন, তেমনি বিভিন্ন বিষয়ে ধর্ম রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইতিহাস অর্থনীতির আলোচনায় পণ্ডিত প্রবর  প্রতিভার প্রকাশ রেখেছেন।

ড.বিমানবিহারী মজুমদার ৭ই জানুয়ারি ১৯০০ তে জন্মগ্রহণ করেন নদীয়ার কুমারখালিতে। পিতা শ্রীশচন্দ্র মজুমদার।

 তিনি নবদ্বীপ হিন্দু স্কুল থেকে ১৯১৭ খ্রী. ম্যাট্রিক, বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ইতিহাসে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে বি. এ. এবং ১৯২৩ খ্রী. ইতিহাসে এম-এ পরীক্ষায় প্ৰথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন ও পরে অর্থনীতিতেও এমএ পাশ করেন। এরপর পাটনা বি. এন. কলেজে ইতিহাস ও অর্থনীতির অধ্যাপক হন এবং এখানে অধ্যাপনাকালে -
‘History of Political Thought: From Rammohun to Dayananda: 1821–84’ এবং এইসঙ্গে এর সহায়ক গ্ৰন্থ ‘History of Religious Reformatinion in India in the Nineteenth century’ 
History of Political Thought: From Rammohun to Dayananda: 1821–84'
‘History of Religious Reformatinion in India in the Nineteenth century’
'চৈতন্যচরিতের উপাদান'(১৯৫৯)
‘চণ্ডীদাসের পদাবলী’ (১৯৬০)

‘ষোড়শ শতাব্দীর পদাবলী সাহিত্য’ (১৯৬১)
   - গ্রন্থটি পদাবলী সাহিত্যের রস আস্বাদনে সহায়ক একটি বিশিষ্ট গ্রন্থ তিনটি প্রধান ভাগে বিন্যস্ত ঐতিহাসিক পটভূমি পটভূমির বিবরণ এবং বিভিন্ন পর্যায়ে পদসংকলন। ষোড়শ শতাব্দী বৈষ্ণব পদাবলীর সুবর্ণ যুগ সেই মূল্যায়নে গ্রন্থটির দৃষ্টিকোণ অভিনব ও দার্শনিক।

‘পাঁচশত বৎসরের পদাবলী’(১৯৬১)
  - পাঁচশত বছরের পদাবলী সংকলন করে প্রত্যেক শতাব্দীর দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করেছেন তিনি।

'জ্ঞানদাস ও তাঁহার পদাবলী' (১৩৮২ ব)
'রবীন্দ্রসাহিত্যে পদাবলীর স্থান' (১৯৬১)
   - তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। এখানে তিনি যুগপৎ তুলনামূলক আলোচনা করেছেন এবং রবীন্দ্র দৃষ্টিতে পদাবলীর মূল্যায়ন কেমন ছিল সে বিষয়ে বিস্তর জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় প্রবৃত্ত হয়েছেন।

'গোবিন্দদাসের পদাবলী ও তাঁহার যুগ' (১৯৬১)
'ভারতের শাসন পদ্ধতি' (১৯৬৩)
‘শ্ৰীশ্ৰীক্ষণদাগীতচিন্তামণি’
'রাষ্ট্রবিজ্ঞান' প্রভৃতি
গ্ৰন্থ রচনা করে ।

১৯৩২ খ্রী. প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন। ‘চৈতন্যচরিতের উপাদান’ গবেষণা-গ্ৰন্থ বাংলায় রচনা করে ১৯৩৭ খ্রী. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পি-এইচডি, হন। গ্রন্থটির সম্পর্কে তিনি বলেছেন -
" বাঙালাদেশে ব্রিটিশ অধিকার স্থাপিত হওয়ার পূর্বে সংস্কৃত বাঙালা উড়িয়া হিন্দি অসমীয়া ভাষায় শ্রীচৈতন্য ও তাঁর সমসাময়িক পরিকরগণ সম্বন্ধে যা কিছু লিখিত আছে তাহাদের তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক বিচার করাই এই গ্রন্থের উদ্দেশ্য।"বাংলায় রচিত গবেষণা-গ্ৰন্থ এই প্ৰথম সম্মান লাভ করে।প্রাত্যহিক ব্যবহারিক  সমীক্ষা মূলক ইতিহাস ও অর্থনীতিতে পাণ্ডিত প্রবর মানুষ ছিলেন। এছাড়া বৈষ্ণব সাহিত্য-বিষয়ক বহু মূল্যবান গ্ৰন্থ তিনি রচনা করেন। বৈষ্ণব-সমাজে একজন শীর্ষস্থানীয় শ্ৰদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন। বৈষ্ণবধর্ম ছাড়া অন্যান্য বিষয়েও গ্ৰন্থ রচনা করেছেন। জীবনের অধিকাংশ সময় পাটনাতেই কাটান। ১৯৪৫ খ্রী. আরায় হরপ্রসাদ জৈন কলেজের অধ্যক্ষ হয়ে কলেজের যথেষ্ট উন্নতি করেন। ১৯৫২ খ্রী. বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ-পরিদর্শক নিযুক্ত হন। ১৯৫৯ খ্রী. অবসর নেন। ১৯৬৫ খ্রী. থেকে আমৃত্যু পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজিসি গবেষক অধ্যাপক ছিলেন। 

তিনি সমৃদ্ধিমান সম্ভোগ পর্যায়ে কুরুক্ষেত্রে রাধা কৃষ্ণের মিলন লীলার পদাবলী গীত রচনা করেছেন। মুখবন্ধ তিনি লিখেছেন -
" সমৃদ্ধ মান-সম্ভ্রম পর্যায়ে কুরুক্ষেত্রে রাধা কৃষ্ণের মিলন একটি বিশেষ লীলা। এটি গীত না হইলে চৌষট্টি রসের কীর্তন পূর্ণ হয়না । অথচ এ বিষয়ে কোন পথ নাই তাই নিতান্ত অক্ষম হইলেও সংকলিতা তাহার গুরুদত্ত নাম নিতাই ভনিতা দিয়া আধুনিক ভাষায় কয়েকটি পদ রচনা করিয়াছেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে সনাতন গোস্বামী মতে রাজসূয় যজ্ঞের পর শ্রীমদ্ভাগবতের বৃহদ্বৈষ্ণবীতোষণী টীকা-১০//৮২, 
শ্রীজীব গোস্বামী মতে রাজসূয় এর পূর্বে শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ ১৭৪. সূর্যগ্রহণ উপলক্ষে সমাগত শ্রীকৃষ্ণের সহিত  ব্রজের গোপগোপিনীদের দেখা সাক্ষাৎ হইয়াছিল ।""

রচিত পদাবলী

অনেকদিন পরে হেরিবে বন্ধুকে
 কবি বিমানবিহারী মজুমদার
(পাঁচশতবৎসরের পদাবলী গ্রন্থের পরিশিষ্ট পর্যায়ে কুরুক্ষেত্রে রাধা কৃষ্ণের মিলন লীলা । )

কুরুক্ষেত্রে মিলন
শ্রীরাধার প্রতি ললিতা

"অনেক দিনের পর হেরিবে বন্ধুকে
 মিলন বসনে কেন চলিছ রাধিকে
কত সাজায়েছি তোমা অভিসার কালে
এবেশে দেখিতে হল এই ছিল ভালে
কানুর সন্দেশ শুনি তৃণগুল্মলতা
পুলক উজ্জ্বল হয়ে কহে কি বারতা
কত ফুলদল আজি উঠেছে ফুটিয়া
 বনমালা গাথিয়াছি পরাবে বলিয়া
বৃষেরা ধাইছে বেগে রথ দল নাহি
কখন জুড়াবে আঁখি শ্যামমুখ চাহি
ললিতা বচন শুনিরাধা অচেতন 
নিতাই কাঁদিয়া করে চামর ব্যজন "।।

ইতিহাস নিষ্ঠ , সূক্ষ্ম রসবোধ ও অনুসন্ধান লব্ধ অভিজ্ঞতাকে যুক্তিতর্কে সজ্জিত করে  যেভাবে পরিবেশনের দক্ষতা তিনি দেখিয়েছেন,  প্রাবন্ধিক হিসেবে কৃতিত্ব চিরস্মরণীয়। ভাগবতরত্ন উপাধি সেই কৃতিত্বের চিরভাস্বর রূপ।

মৃত্যু -১৮ ই নভেম্বর,১৯৬৯।

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...