Friday, 9 April 2021

"Who among us has not dreamt, in moments of ambition, of the miracle of a poetic prose, musical without rhythm and rhyme, supple and staccato enough to adapt to the lyrical stirrings of the soul, the undulations of dreams, and sudden leaps of consciousness. This obsessive idea is above all a child of giant cities, of the intersecting of their myriad relations."

—( Dedication of Le Spleen de Paris)

             Charles Baudelaire

তাঁর বাবা আত্মভোলা, সৎ ও শিল্পীমনের অধিকারী জোসেফ-ফ্রাংকোজ বোদলেয়ারের পেশা ছিল শিক্ষকতা। মা ক্যারোলিন আর্চবিউৎ দুফেস। তাঁদের একমাত্র সন্তান বোদলেয়ার প্যারিসে ১৮২১ সালের ৯ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। বোদলেয়ারের মাত্র ছয় বছর বয়সে বাবা মারা যান। বোদলেয়ার মাকে গভীরভাবে ভালোবেসেছিলেন। ফলে বাবার মৃত্যুর পর মা দুফেস যখন মেজর অপিককে বিয়ে করলেন, তখন সেই শিশু বয়সেই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। ফলে কিশোর বয়স থেকেই বিষাদ দ্বারা আক্রান্ত ছিলেন বোদলেয়ার এবং সারা জীবন সেই বিষাদ তাঁকে ঘিরে ছিল।


১৮৩৩ সালে বোদলেয়ার একটি মিলিটারি বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি হন। স্নাতক হওয়ার কিছুদিন পরই আইন না মানার অভিযোগে তাঁকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরের দুই বছর প্যারিসের লাতিন কোয়ার্টারে একজন লেখক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন এবং ভীষণভাবে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ছেলের উন্নত ভবিষ্যতের আশায় বোদলেয়ারের মা ও বিপিতা তাঁকে ভারত ভ্রমণের উদ্দেশ্যে জাহাজে তুলে দিলেন, তাঁরা আশা করেছিলেন যে এই অভিজ্ঞতা বোদলেয়ারের বাউণ্ডুলে জীবনকে বদলে দেবে। ১৮৪১ সালের ৯ জুন বর্ডো থেকে ‘দক্ষিণ আকাশ’ নামক জাহাজে করে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হলেন। দুর্ভাগ্যবশত জাহাজটি উত্তমাশা অন্তরীপে এক ভয়াবহ ঝড়ের মুখে পড়ে তিন সপ্তাহের জন্য মরিশাস দ্বীপে আটকে থাকে। এ সময় বোদলেয়ার প্যারিসে ফিরে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। ফলে তিনি ভারত সমুদ্রের রেনুয়ার দ্বীপ থেকে অন্য জাহাজে করে প্যারিসের উদ্দেশে যাত্রা করলেন।

প্যারিসে ফিরে আসার পর তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে অগাধ সম্পত্তি লাভ করেন, যা দিয়ে পরবর্তী কয়েক বছর রাজার হালে জীবন কাটান। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘তেওদর দ্য বাভিলরে’ ১৮৪২ সালে প্রকাশ পায়। এ সময় তিনি পোশাক-আশাকের পেছনে যথেষ্ট সময় ব্যয় করেন এবং প্যারিসের আর্ট গ্যালারি এবং ক্যাফেগুলোতে দিন কাটাতে থাকেন। তিনি হাশিশ ও আফিমের নেশায় ডুবে থাকেন এবং জান দ্যুভালের প্রেমে পড়ে ‘ল্য ফ্ল্যর দ্যু মল’ সৃষ্টি করেন। জান দ্যুভালকে তিনি ‘ব্ল্যাক ভেনাস’ নামে ডাকতেন। পরবর্তী দুই বছরের মধ্যেই বোদলেয়ার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অর্থের প্রায় অর্ধেক টাকা খরচ করে ফেললেন। ফলে মাদাম অপিক তাঁকে মাসে মাসে শুধু প্রয়োজনীয় হাতখরচ পাওয়ার জন্য আইনজীবী নিযুক্ত করেন এবং তিনি বাকি জীবন সেখান থেকেই সামান্য কিছু ‘ভাতা’ পেতে থাকেন।



আয় কমে যাওয়ায় বোদলেয়ার শিল্প সমালোচনা, প্রবন্ধ ও বিভিন্ন পত্রিকার জন্য জার্নাল লেখতে শুরু করেন। প্রথম দিকের সমালোচনাগুলো ছিল ইউজিন ড্যালাক্রয়েক্স এবং গুস্তাভ কোরব্যেটের মতো সমসাময়িক ফরাসি চিত্রশিল্পীদের নিয়ে, যা তাঁকে পক্ষপাতমূলক শিল্প সমালোচক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ১৮৪৭ সালে তাঁর প্রথম ছোট উপন্যাস বা নভেলা ‘লা ফাঁফার্লো’ প্রকাশিত হলো। বোদলেয়ার ‘লে ফ্ল্যর দ্যু মাল’ বইটি প্রিন্টিংয়ের গুণগত মানের ব্যাপারে এতটাই চিন্তিত ছিলেন যে বইয়ের উত্পাদনের সময় তত্ত্বাবধানে সাহায্য করার জন্য প্রেসের কাছাকাছি একটি ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। নির্ঘুম নিরলসভাবে পাঁচ মাস ধরে একনাগাড়ে প্রুফ দেখার পর মোট ১০০টি বাছাইকৃত কবিতা নিয়ে ‘লে ফ্ল্যর দ্যু মাল’ ১৮৫৭ সালে বই আকারে প্রকাশিত হলো। গ্রন্থটি উত্সর্গ করলেন তেফোয়েল গোতিয়েকে। এর মধ্যকার ছয়টি কবিতা যাতে সমকামী প্রেম এবং ভ্যাম্পায়ারের বর্ণনা করা হয়েছে, সেগুলোকে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ের পাবলিক সেফটি সেকশন কর্তৃক অশ্লীল হিসেবে নিন্দা করা হয়।

১৯৪৯ সাল পর্যন্ত এই কবিতাগুলো ফ্রান্সের সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ছিল। ১৮৬১ সালে বোদলেয়ারের ‘লে ফ্ল্যর দ্যু মাল’-এর দ্বিতীয় সংগ্রহটিতে আরো ৩৫টি কবিতা যোগ করা হয়।

যদিও লে ফ্ল্যর দ্যু মাল ছিল উনিশ শতকের ইউরোপে প্রকাশিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী কবিতাগুচ্ছ, যা বোদলেয়ারকে সাহিত্যজগতে অনন্য এক খ্যাতি এনে দিয়েছিল। গুস্তাভ, ফ্লাবার্ট এবং ভিক্টর হুগোর মতো বিখ্যাত সব লেখক এই কবিতাগুলোর প্রশংসা করেন। ফ্লাবার্ট বোদলেয়ারকে লিখিতভাবে জানান যে ‘আপনি রোমান্টিকতাকে একটি নতুন মাত্রায় খুঁজে পেতে অনুপ্রাণিত করেছেন। আপনি অন্যদের চেয়ে আলাদা (যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ)।’

‘লে ফ্ল্যর দ্যু মাল’-এর বিষয়বস্তু সুস্পষ্ট যৌন উদ্দীপক বিষয় এবং শহুরে সৌন্দর্যের পাশাপাশি অবক্ষয় নিয়ে লেখা হওয়া সত্ত্বেও সে সময় ইউরোপের সাহিত্যজগতে বোদলেয়ারের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

 বোদলেয়ারের জীবনে এডগার অ্যালান পোর অবদান অনস্বীকার্য। নিজের সাহিত্যিক অসাফল্যে যখন চরম হতাশায় নিমজ্জিত, ঠিক তখনই পোর রচনা তাঁকে নতুনভাবে অনুপ্রাণিত করে। সাহিত্যের মাধ্যমে সে সময় পোর মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করার আবেগ ছিল অদম্য। ৫৬ ও ৫৭ সালে বোদলেয়ার ‘যমজ আত্মা’ নামে দুই খণ্ডে এডগার অ্যালান পোর গল্প ও প্রবন্ধের অনুবাদ প্রকাশ করেন। এরপর আরো তিন খণ্ড বের হয় ১৮৫৮, ১৮৬৩ ও ৬৫ সালে। এই পাঁচ খণ্ড অনুবাদই বোদলেয়ারের সাহিত্যিক জীবনের একটি বড় প্রাপ্তি বলে মনে করা হয়।

Works

Salon de 1845, 1845

Salon de 1846, 1846

La Fanfarlo, 1847

Les Fleurs du mal, 1857

Les paradis artificiels, 1860

Réflexions sur Quelques-uns de mes Contemporains, 1861

Le Peintre de la Vie Moderne, 1863

Curiosités Esthétiques, 1868

L'art romantique, 1868

Le Spleen de Paris, 1869. Paris Spleen (Contra Mundum Press: 2021)

Translations from Charles Baudelaire, 1869 (Early English translation of several of Baudelaire's poems, by Richard Herne Shepherd)

Oeuvres Posthumes et Correspondance Générale, 1887–1907

Fusées, 1897

Mon Coeur Mis à Nu, 1897. My Heart Laid Bare & Other Texts (Contra Mundum Press: 2017; 2020)

Oeuvres Complètes, 1922–53 (19 vols.)

Mirror of Art, 1955

The Essence of Laughter, 1956

Curiosités Esthétiques, 1962

The Painter of Modern Life and Other Essays, 1964

Baudelaire as a Literary Critic, 1964

Arts in Paris 1845–1862, 1965

Selected Writings on Art and Artist, 1972

Selected Letters of Charles Baudelaire, 1986

Twenty Prose Poems, 1988

Critique d'art; Critique musicale, 1992

Belgium Stripped Bare (Contra Mundum Press: 2019)

 ১৮৬২ সাল থেকে স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে এবং দুঃস্বপ্নে ভুগতে থাকেন। ১৮৬৩ সালে প্যারিস ছেড়ে সাহিত্যের বক্তৃতা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্রাসেলসে রওনা হন। কিন্তু স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে আংশিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ৬৬ সালে ব্রাসেলসেই প্রকাশ করলেন ‘বেওয়ারিশ মাল’ কাব্যগ্রন্থটি। তিনি এ বছরের মার্চে প্যারিসে একেবারে ফিরে যাওয়ার মনস্থির করলেন; কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জন্য  ব্রাসেলসেই থাকতে হলো। অবস্থার যখন চরম অবনতি হলো, তখন মাকে চিঠি লেখেন। সে সময় মাদাম ওপিক তাঁর দেখভাল করার জন্য প্রৌঢ় আইনজীবী আঁসেলকে পাঠালেন। আঁসেল বোদলেয়ারকে নার্সিংহোমে ভর্তি করালেন। সেখানে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে মাদাম ওপিক এসে ছেলেকে নিয়ে একটি আবাসিক হোটেলে উঠলেন। ১৮৬৬ সালের জুলাই মাসের ২ তারিখে আবারও প্যারিসে ফিরিয়ে আনলেন। চিকিত্সকরাও আশা করছেন, তিনি আস্তে আস্তে সেরে উঠবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ’৬৭ সালের মে মাসে অবস্থার চরম অবনতি হলো। জুনের প্রথম সপ্তাহে পুরোপুরি বিছানায় পড়ে গেলেন। এর পরের দুই মাস জ্ঞানহীন মুমূর্ষু অবস্থা কাটল। ৩১ আগস্ট ১৮৬৭ সালে সকাল ১১টায় ৪৬ বছর চার মাস বয়সে তিনি তাঁর মায়ের কোলে মাথা রেখে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।

আধুনিক নাগরিক জীবনের জটিলতাই ছিল ফরাসি কবি শার্ল বোদলেয়ারের কবিতার প্রধান বিষয়। যা কিছু কবিতা নয় তা থেকে তিনি কবিতাকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তাই তিনি তাঁর কবিতাগুলোকে অবান্তরতা বর্জন করে কবিতাসর্বস্ব করে তোলেন।

তাঁর কবিতার প্রতিটি পঙক্তি ও শব্দ, মিল ও অনুপ্রাস থেকেই পাঠক রস খুঁজে পান। আবেগের নিবিড়তম মুহূর্তেও উচ্ছ্বাসের হাতে ধরা না দিয়ে কবিতার গভীরতাকে মূল্যায়ন করাই ছিল বোদলেয়ারের মূল উদ্দেশ্য।

তাই বোদলেয়ারের সমগ্র কাব্যে যে বাণী নিরন্তর ধ্বনিত হয়েছে তা হচ্ছে, ‘সকলে জানবে না, জানতে পারবে না বা চাইবে না; কিন্তু কবিরা এসব জানেন।"I





শার্ল বোদলেয়ারের কবিতা

অনুবাদ – বুদ্ধদেব বসু

 

1.

লাল চুলের ভিখিরি মেয়েকে


লাল চুলের, ফর্সা, একমুঠো

বালিকা, তোর ঘাঘরা – ভরা ফুটো

দেখায় তোকে অকিঞ্চন অতি

এবং রূপবতী।

স্বাস্থ্যহীন তরুন তনু তোর

ছুলির দাগে চোখে লাগায় ঘোর,

আমাকে দেয় মধুরতার ছবি –

আমি গরিব কবি।

কাঠের জুতোর গরবে তোর, মানি,

লজ্জা পায় উপন্যাসের রানী;

চলুন তিনি কিংখাবের জুতোয়; –

ভঙ্গি তোকে জিতোয়।

ন্যাকড়া – কানি ঢাকে না তোর লাজ;

তার বদলে দরবারি এক সাজ

নিস্বনিত লম্বা ভাঁজে – ভাঁজে

পড়ুক পায়ের খাঁজে;

রন্ধ্রময়, ছিন্ন মোজা জোড়া,

তার বদলে সোনার এক ছোরা

জঙ্ঘা তোর যেন মোহন রেখায়

লম্পটেরে দেখায়;

হালকা গেরো উন্মোচন করুক

দুটি চোখের মতো রে তোর বুক

দীপ্তিময় – লাবণ্যের চাপে

আমরা জ্বলি পাপে;

নির্বাসনের সময় বাহুযুগল

যেন অনেক আরজিতে হয় উতল,

ফিরিয়ে দিতে না যেন হয় ভুল

দুর্জনের আঙুল,

যত সনেট লিখে গেছেন বেলো,

বাছাই – করা মুক্তো ঝলোমলো,

বান্দারা তোর বন্দনাতে দান

দিক না অফুরান,

হতচ্ছাড়া কবির দল, খাতায়

নামটি তোর লিখুক প্রথম পাতায়,

কুড়িয়ে নিতে খুঁজুক ছলছুতো

সিঁড়ির চটিজুতো;-

চটি তো নয়, কোমল এক নীড়,

তার লোভে যে বেয়ারাগুলোর ভিড়,

আড়ি পাতেন ওমরাহেরা নাচার,

এবং অনেক রঁসার!

ফুলের চেয়ে আরো অনেক বেশি

শয্যা তোর চুমোয় মেশামেশি,

তোর ক্ষমতার বিপুল পরিমাণে

ভালোয়া হার মানে!

অবশ্য তুই এখন ভিখারিণী

ঐ যেখানে চলছে বিকিকিনি,

হাত বাড়িয়ে দাঁড়াস চৌকাঠে

সস্তা মালের হাটে ;

আহা রে তোর চক্ষু ভরে জ্বালায়

চোদ্দ আনা দামের মোতির মালায়,

সেটাও তোকে – মাপ করো গো মিতে –

পারি না আজ দিতে।

তাহলে তুই এমনি চলে যা রে,

বিনা সাজে, গন্ধে, অলংকারে,

শীর্ণ দেহে নগ্নতাই শুধু

সাজাক তোকে বঁধু!

 2.

অচেনা মানুষ 


- বলো আমাকে, রহস্যময় মানুষ, কাকে তুমি সবচেয়ে বেশী ভালবাস:

তোমার পিতা, মাতা, ভ্রাতা অথবা ভগ্নীকে?

- পিতা, মাতা, ভ্রাতা, ভগ্নী - কিছুই নেই আমার।

- তোমার বন্ধরা?

- ঐ শব্দের অর্থ আমি কখনো জানিনি।

- তোমার দেশ?

- জানি না কোন দ্রাঘিমায় তার অবস্থান।

- সৌন্দর্য?

- পারতাম বটে তাকে ভালবাসতে- দেবী তিনি, অমরা।

- কাঞ্চন?

- ঘৃণা করি কাঞ্চন, যেমন তোমরা ঘৃণা করো ভগবানকে।

- বলো তবে, অদ্ভুত অচেনা মানুষ, কি ভালবাসো তুমি?

- আমি ভালবাসি মেঘ…চলিঞ্চু মেঘ…ঐ উঁচুতে….ঐ উঁচুতে….

আমি ভালবাসি আশ্চর্য মেঘদল!


(ঋণ – কালের কণ্ঠ)

3.

প্যাঁচারা

ইউ গাছের কালো ছায়ার খাপে

কোন বিদেশের দেবতা, প্যাচার দল,

ঘুরিয়ে লাল চক্ষু অবিরল

ফুলকি ছড়ায় । তারা কেবল ভাবে ।

নিথর তারা অসাড় হয়ে কাটায়,

যতক্ষণে বিষণ্ণ সেই যাম

হারিয়ে দিয়ে রবির সংগ্রাম

অন্ধকারের রাজত্ব না রটায় ।

জ্ঞানীর চোখ, তা দেখে যায় খুলে,

হাতের কাছে যা আছে নেয় তুলে,

থামায় গতি, অবুঝ আন্দোলন ;

হায় মানুষ, ছায়ার মোহে পাগল,

শাস্তি তার এ-ই তো চিরন্তন –

কেবল চায় বদল, বাসা – বদল !


4.

প্রেমিক-প্রেমিকার মৃত্যু

কবরের মতো গভীর ডিভানে লুটিয়ে

মৃদু বাসে ভরা রবে আমাদের শয্যা,

সুন্দরতর দুর আকাশেরে ফুটিয়ে

দেয়ালের তাকে অদ্ভুত ফুলসজ্জা ।

যুগল হৃদয়, চরম দহনে গলিত,

বিশাল যুগল- মশালের উল্লাসে

হবে মুখোমুখি – দর্পনে প্রতিফলিত

যুগ্ম প্রানের ভাস্বর উদ্ভাসে ।

গোলাপি এবং মায়াবী নীলের সৃষ্টি

এক সন্ধ্যায় মিলবে দুয়ের দৃষ্টি,

যেন বিদায়ের দীর্ণ দীর্ঘশ্বাস ;

পরে, দ্বার খুলে, মলিন মুকুরে রাঙাবে

এক দেবদূত, সুখী ও সবিশ্বাস ;

আমাদের মৃত আগুনের ঘুম ভাঙাবে ।


5.

রুগ্ন কবিতা

আহা রে, কবিতা,বল কোন ব্যাধি তোকেআজ দহে ?

নয়নকোটরে দেখি দলবদ্ধ নৈশ মতিভ্রম,

আর তোর গাত্রে খেলে, একান্তর, সমান আগ্রহে

মুঢ়, মুক অপস্মার, আতঙ্কের হিমেল বিক্রম ।

এলো কি সবুজ প্রেত, কিংবা কোনো লোহিত প্রমথ,

কটাহমন্থনে তোর লালসার সন্ত্রাসজ্বালাতে ?

অথবা দু:স্বপ্ন,এক বদ্ধমুষ্টি দানবের মতো,

তোরে কি ডুবিয়ে দিলো মিন্টার্ন-এর বিশ্রুত জলাতে ?

মনে হয় তোর বুকে ভাবনার উদ্ভাস

নিশ্বাসে বিলায়ে যদি একবার স্বাস্হ্যের সুবাস !

এবং সরল ছন্দে ডেউ তুলে খ্রিষ্টান শোণিত

শিখে নেয় সেই দূর অতীতের দীপক-সংগীত,

যখন ছিলেন প্রভু,একান্তর এবং স্বরাট,

ফীবাস,গানের পিতা,আর প্যান, শস্যের সম্রাট।



Cenotaph of Charles Baudelaire, Montparnasse Cemetery


Grave of Baudelaire in Cimetière du Montparnasse

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

Doinik Sabder Methopath

Vol -337. Dt -9.4.2021

২৫ চৈত্র,১৪২৭. শুক্রবার

{}}}}}}}}}}}}}}}}}}}}}}}}}}{{{{{{{{{{{{{{{{{{{{{{{{{{{{{



No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...