" আমি ছোটবেলায় প্রথম বাংলাতেই লেখা শুরু করি৷ কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ - সবই বাংলায় লিখতাম৷ আমাদের একটা বিরাট সুবিধে ছিল৷ যে যুগে আমি কলকাতায় লেখাপড়া শিখি, আমাদের স্কুলে ইংরেজি এবং বাংলা - দুটো ভাষাই খুব সুন্দর শেখানো হতো৷ শুধু ভাষা নয়, তার সাহিত্যিক গুণও আমাদের মধ্যে মাস্টারমশাইরা চারিয়ে দিয়েছিলেন৷ তাই ইংরেজিতে অনেকগুলো বই লেখার পর মনে হল ফিরে এসে বাংলায় একটা উপন্যাস লিখি৷ "
কুনাল বসু
১৯৫৬ সালে ৪ মে কলকাতায় সুনীল কুমার বসুু , একজন সাহিত্যিক ও প্রকাশক এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রথম সদস্য এবং ছবি বসুু, একজন লেখক ও অভিনেত্রীর সন্তান হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন। কমিউনিস্ট পরিবারে জন্ম হওয়ার দরুন তিনি বই পড়ায় উৎসাহিত ছিলেন। বাড়িতে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের যাতায়াতের ফলে সমৃদ্ধ কথোপকথন ছিল।এরই মধ্যে তিনি একটি বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ করেন, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতার, চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্যে ডাৱলেড, এবং ১৬ মাসের একটি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ১৯৮২ সালে তিনি সুস্মিতাদেবী কে বিবাহ করেন। একমাত্র কন্যা, অপরাজিতা। পরে গবেষণা সম্পন্ন করেন। ১৯৮৬-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত কানাডায় ম্যাকগ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। ম্যাকগিলের ১৩ বছর অধ্যাপনার মধ্যে তিনি ১৯৮৯ সালে কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট-এ সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ফিরে আসেন। ১৯৯৯ সাল থেকে, তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সৈদ বিজনেস স্কুলে শিক্ষাদান করছেন। তিনি ব্যবসায়িক প্রকাশনাগুলির জন্য ফাস্ট কোম্পানি এবং এমআইটি স্লওন ম্যানেজমেন্ট রিভিউ-এর মতো বিত্ত বিষয়ক নিবন্ধও লিখেছেন।
ইংরেজি কথাসাহিত্যের খুব অল্প সংখ্যক ভারতীয় লেখক বা অনুশীলনকারীদের মধ্যে তিনি একজন। প্রাচীন ইতিহাস ভালোবাসার পাশাপাশি তাঁর প্রিয় লেখক, বাঙালি ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-৯৪)-এর প্রভাব রয়েছে তাাঁর লেখনিতে। বঙ্কিমচন্দ্র ,নিজে প্রচন্ডভাবে ওয়াল্টার স্কট দ্বারা প্রভাবিত, ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখক ছিলেন, ১৯তম ও ২০তম শতাব্দিতে অন্যান্য অনেক বাংলা লেখকদের মধ্যে তিনি একজন শিশু হিসাবে রমেশ চন্দ্র দত্ত এবং শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়েরও পাঠক ছিলেন। কিন্তু তিনি বলেছেন "ঐতিহাসিক উপন্যাসে রোমান্টিক সম্ভাবনা" এই ধারাটি তাকে সবচেয়ে আকর্ষণ করে। কুনাল বসু আফিম ব্যবসায় নিয়ে প্রথম ভারতীয় উপন্যাস লেখক। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ইতিহাসের এই অংশটি আজকাল ব্রিটিশ ইতিহাস পাঠ্যবইগুলিতে উপেক্ষা করা হয়।
উপন্যাস :
দি ওপিয়াম ক্লার্ক (২০০১),
দি মিনিয়েচারিস্ট, ২০০৩
রেসিস্টস, ২০০৬
দি ইয়েলো এম্পেরর'স কিওর (২০১১)
কলকাতা, ২০১৫
ছোট গল্প :
জাপানি ওয়াইফ (২০০৮)
দা মিনিয়েচারিস্ট ভারতীয়-ইংরেজি কাহিনীতে মুঘল সাম্রাজ্যের আদালত প্রথমবারের মত উপস্থাপিত হয়। কুনাল বসুর মধ্যে সবসময় মুঘল ইতিহাসের প্রতি একটি দুর্দান্ত মোহ ছিল। সেই ঐতিহ্যবাহী স্বার্থে আগরা ও ফতেহপুর সিক্রীের কয়েকটি ভ্রমণের সাহায্যে তিনি ১৬ শতকের সংস্কারের পুনরাবৃত্তি করতে সাহায্য করে।
কুনাল বসু দ্বারা এই মুসলিম উপন্যাস অনুসরণ করা হয় রেসিস্টস'য়ে। এটি এমন একটি বই যেখানে একটি একক ভারতীয় চরিত্র ছিল না। এটি একটি অ-শ্বেতাঙ্গ দ্বারা লেখা প্রথম ভিক্টোরিয়ান উপন্যাস এবং ক্রসওয়ার্ড বুক অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছিল।
তিনি বলেছিলেন যে, তার কাজের মধ্যে 'গভীর' আত্মজীবনী অবশ্যই আছে, এবং ১৯ শতকের তরুণ বঙ্গের সদস্য মাহিম - এই চরিত্রটি তার নিকটতম এক ব্যক্তির। তাঁর প্রথম উপন্যাসের গল্প আংশিকভাবে তার জন্মের শহর নিয়ে গড়ে উঠেছে - যদিও তার উপন্যাসের গল্পটি তাঁর জন্মের ১০০ বছর পূর্বের কলকাতার ছিল।
কলকাতার আড্ডা নিয়ে বলেছেন -
"আগে যতগুলো ছিল ততগুলো আর দেখছি না৷ গোলপার্কে আড্ডা মেরে বড় হয়েছি৷ এখন চারদিকে বড্ড সিসিডি হয়ে গিয়েছে৷ দামটা এত বেশি যে কিরকম একটা ‘ডিসকানেক্ট’ লাগে৷ ভালো দিক হল, আগে একটা মনোভাব ছিল ‘ও বাবা উনি মহান সাহিত্যিক!’ - মানে কোনও কৃতি মানুষেকে দেখলে জিভ জড়িয়ে যেত৷ আজকের ছেলেমেয়েরা সরাসরি প্রশ্ন করে, ফেসবুকে বলে কোনটা তাদের ভালো লাগেনি৷ এই যে শিল্পীর সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্ত যোগাযোগ, এটা খুব ভালো পরিবর্তন৷ কলকাতায় এটা উপভোগ করি৷ আরেকটা ব্যাপার ‘কলকাতা হ্যাজ দ্য রিচেস্ট টারময়েল ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’৷ আপনি সাহিত্য করতে চাইলে কলকাতায় থাকা উচিত৷ কিন্ত্ত ইংল্যান্ড হল এসি চেম্বারের মতো৷ চারপাশে কিছুই ঘটে না৷ পুরোটাই মাথা দিয়ে ঘটাতে হয় সেখানে।"
রবিশংকর গল্প নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে জানান -
"দুটি চরিত্র - রবি এবং শঙ্কর - এদের সম্পর্ক নিয়ে গল্প৷ ২৮ বছর আগে এদের একটা পরিচিতি ছিল৷ রবি ছিল নকশাল৷ এবং শঙ্কর লালবাজার নকশাল-দমন বিভাগের হেড৷ কাজেই সম্পর্কটা মধুর ছিল না৷ রবি গ্রেফতার হয় একটা অ্যাকশনের পরে৷ এবং তাকে লালবাজারে অসম্ভব অত্যাচার করে শঙ্কর৷ কারণটা জানা যাবে উপন্যাস পড়লে৷ তারপর রবিকে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ এর ২৮ বছর পর এদের অবস্থান পালটে গিয়েছে৷ রবি ডাক্তারি পাশ করেছে, ইংল্যান্ডে প্র্যকটিস করেছে৷ এখন সে এনআরআই৷ ফেরত এসেছে কলকাতায়৷ এখন সে উচ্চমধ্যবিত্তেরও ওপরে৷ এবং উল্টোদিকে শঙ্কর, যে ন্যায়ের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল, সে সাধারণ পেনশনভোগী৷ এর মাঝে তাদের দেখা৷".
এই মুহূর্তে ইংরেজি ভাষার ভারতীয় লেখকদের অবস্থা কেমন প্রসঙ্গ আলোচনা করতে গিয়ে বলেন -"খুব ভালো৷ আমাদের ছোটবেলায় আর কে নারায়ণ ভাবতাম৷ তারপর সলমন রুশদি৷ যদিও রুশদিকে ভারতীয় লেখক ভাবা যায় না৷ লিখছেন হয়তো ভারতীয় পরিবেশ নিয়ে কিন্ত্ত ভাবভঙ্গী-কথাবার্তায় পুরোপুরি ব্রিটিশ৷ এখন কিন্ত্ত এটা স্বীকৃত যে পাণ্ডুলিপি যদি ভালো হয় তাহলে লেখক ক্রোয়েশিয়ান না ভারতীয় না চাইনিজ সেটা আর আলাদা করে গুরুত্ব পায় না৷"
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
দৈনিক শব্দের মেঠোপথ
Doinik sabder methopath
Vol -362. Dt -04.05.2021
২০ বৈশাখ,১৪২৮. মঙ্গলবার
=================================
No comments:
Post a Comment