প্রখ্যাত ৩ অসমীয় কবি রাজীব বরা, সুরেশ রঞ্জন গদুকা ও অনুপম বসুমতারী কবিতা অনুবাদ করেছেন বাসুদেব দাস।
জল সমাধি
রাজীব বরা
(একটি আত্মঘাতী পরিবারের স্মরণে)
ভরা ব্রহ্মপুত্রে ভরা নদী
ঢেউ ঠেলে ক্লান্ত অস্তায়মান সূর্য
জল প্রাণ এবং তীরের হাতের ইশারা
ফুলে ফেঁপে উঠা শিশুর বুক মালিশ করে
কেঁদে উঠল মায়ের প্রাণ –
তোর কলজের ফুটো দিয়ে কে বাজায় যন্ত্রণার বাঁশি
ও আমার প্রাণের পুতুল
কোল পেতে দিই বুক পেতে দিই
শীতের রাত কেবল ভালোবাসার উষ্ণতা
নিরীহ প্রাণের প্রতি সদাই মরণের হাতছানি
হাত পেতে পেতে শূন্যহাতে অবুঝ রহস্য
তারপরে স্রোত জড়িয়ে নিঃশ্বাসের যুদ্ধে পথ হারানো
মা বাবা পুতলীর আর্তনাদ
অবাক চোখে নদীটা দেখল
স্রোতের অন্ধকারে
চোখের জল ফেলা মাছ
কুণ্ডলি পাকানো মাছ
মৃতদেহের খোঁজ করা মানুষগুলি মাছগুলি পেল
ভারী বাতাস তীরের প্রাণগুলি স্পর্শ করল
তিনদিন পরে জলসমাধির দেহগুলি বলল
পরিকল্পনার বাতাসে শান্ত হয় না দুঃখ
একটি রূপকথার আরম্ভ
সুরেশ রঞ্জন গদুকা
কেউ ছিল না আমার
আকাশ আর অন্ধকার ছাড়া
আকাশটা না দেখেই
অন্ধকারে হারিয়ে যেতে চেয়েছিলাম
অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে
আকাশে উড়তে চেয়েছিলাম
অন্ধকারে জোনাকি পোকাগুলি হারিয়ে গিয়েছিল
আকাশে মেঘগুলি উড়ে বেড়াচ্ছিল
আমি জোনাকি পোকা এবং মেঘকে ঈর্ষা করেছিলাম
আমি জোনাকি পোকা হতে চেয়েছিলাম
তোমার হাতের মুঠিতে আসতে চেয়েছিলাম
হলদে রং হয়ে
আমি মেঘ হতে চেয়েছিলাম
বৃষ্টি হয়ে ভেজাতে চেয়েছিলাম
তোমার হৃদয়
তোমার হৃদয়ে ছিল অন্য এক আকাশ
আকাশে অনেক তারার আলো
দুটো আকাশ যখন একত্রিত হয়েছিল
তারাগুলি নিভে গিয়েছিল
আমি চোখদুটি বন্ধ করে নিয়েছিলাম
কেউ নেই আমার
আকাশ, অন্ধকার
আর তোমাকে ছাড়া
--+++++++---++++-----------
সম্পর্ক
সুরেশ রঞ্জন গদুকা
বাজারটা পার হয়ে এসেছিলাম
বাজারে ছিল তেতো এবং কষা ফল
দীর্ঘ পথে পা রেখেছিলাম
পথে ছিল অনেক গর্ত
এভাবেই আমরা
একে অপরের ছায়া পর্যন্ত এসে পৌঁছেছিলাম
ছোট ছোট আয়নার টুকরো
আমাদের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছিল।
বাইরের কত যে দৃশ্য
আয়নার টুকরোতে ছবি হয়ে উঠেছিল
টুকরোগুলিকে আমরা জোড়া দিতে চাইনি
নতুন সম্পর্কগুলি
বাজারের পথের অভিজ্ঞতা নয়
আয়নার টুকরোয় ছবি হয়ে উঠা অতীতও নয়
নতুন সম্পর্ক মানে
নতুন একজোড়া চোখ
যেখানে আমরা নিজেকে দেখি
আর নতুন করে পরিচিত হই
নিজের সঙ্গে
---+++++++++++++++++++
স্বাধীনতা
সুরেশ রঞ্জন গদুকা
অর্থগুলি একদিন বিদ্রোহ ঘোষণা করল
আর শব্দের কবল থেকে নিজেদের মুক্ত করল
শব্দগুলি এতদিন অর্থগুলিকে লুকিয়ে রেখেছিল
আমাদের জীবনে আর এই পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছিল
শব্দগুলি এখন থেকে অর্থহীন হয়ে পড়বে
এটাই ওদের শাস্তি
ওরা বন্দি হয়ে থাকুক অভিধানের কারাগারে
শব্দ থেকে স্বাধীন হওয়া অর্থ এখন রাজত্ব করবে
সবাই সমস্বরে বলবে অর্থ জিন্দাবাদ
এখন থেকে আমাদের জীবন আর এই পৃথিবী হয়ে পড়বে সত্যি অর্থে অর্থপূর্ণ
কিন্তু একি
শব্দের পোশাকহীন অর্থগুলি দেখছি উলঙ্গ হয়ে পড়েছে
চারপাশে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হল
সমগ্র পৃথিবীটাই হয়ে পড়ল নগ্ন...
---++++++++++++(+++(((((
মৃত শহরে
অনুপমা বসুমতারী
শহরটাতে তুমি নাই বলে
বড় খালি খালি লাগছে
কোনোকিছুতেই আজ
প্রাণচঞ্চলতা নেই
তোমার উপস্থিতিতে
রঙিন হয়ে উঠা বিকেল বেলা
উদাস হয়ে পড়েছে
তোমার সংগে অন্তরঙ্গতায়
কথা বলে বলে
উজ্জ্বল হয়ে পড়া পার্কটা
নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে
তুমি না থাকলে
শহরটার মৃত্যু হবে বলে তো
আমি জানতাম না
আমি কার সঙ্গে কোথায় যাব
কোথায় থাকব এই মৃত শহরে।
---++++++++++---++++++-+++++++
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদঃ বাসুদেব দাস
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment