Sunday, 11 July 2021

জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য। পাবলো নেরুদা। ১২.০৭.২০২১. (রথযাত্রা). VOl -431. The blogger in literature e-magazine


রিকার্ডো এলীসার নেফতালি রিয়েস বাসোয়ালতো


""আমি কখনো মনে করিনি আমার জীবন কবিতা ও রাজনীতি—এই দুই ভাগে বিভক্ত, আমি চিলির একজন নাগরিক, যে কয়েক দশক ধরে আমাদের রাষ্ট্রীয় অস্ত্বিত্বের সঙ্গে জড়িত দুর্ভাগ্য ও বিগ্রহকে জেনেছে এবং এ দেশের মানুষের প্রতিটা আনন্দ ও বেদনার অংশীদার হয়েছে। তাদের কাছে আমি অপরিচিত নই, তাদের ভেতর থেকেই এসেছি, আমি জনগণের অংশ। আমি শ্রমজীবী পরিবার থেকে এসেছি...এবং কখনো ক্ষমতাধরদের দলে ছিলাম না, সব সময় আমি অনুভব করেছি, আমার পেশা হলো কাজ ও কবিতার মাধ্যমে চিলির মানুষের সেবা করা। আমি বেঁচে আছি তাদের রক্ষা করার গান গেয়ে।""

পাবলো নেরুদা সান্তিয়াগোর ৩৫০ কি.মি দক্ষিণে চিলির লিনারেস প্রদেশের অন্তর্গত পারাল -এ ১৯০৪ সালের ১২ই জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। মোরেলসের মতে, একজন রেলওয়ে কর্মী, রোজা অপ্যাজো ও একজন স্কুল শিক্ষক যিনি তাঁর জন্মের দুমাস পর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর পরই রিয়েস তিমুকোতে পাড়ি জমান। তিনি সেখানে মালভারদে নামক একটি মহিলাকে বিয়ে করেন, যার কাছে তাঁর পূর্বে নয় বছর বয়েসি রোদোলফো নামক একজন ছেলে ছিল। নেরুদা তিমুকোতে রোদোলফো ও তাঁর বোন লরিতার সাথে বেড়ে ওঠেন। লরিতা ছিল তাঁর বাবার বিয়েবহির্ভূত প্রেমিকা অরেলার মেয়ে। নেরুদা একজন নাস্তিক। তিনি তাঁর প্রথম দিকের কবিতাগুলি ১৯১৪ সালের শীতকালে রচনা করেছিলেন।

নেরুদা ব্যক্তিগত জীবনে পরপর মারজিকে এন্টোনিতা, ডেলিয়া ডেল ও মাতিলদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের সবার-ই বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তাঁর একমাত্র কন্যাসন্তান ছিলেন মালভা ম্যারিনা।

"আগ্নেয়গিরির নিচে, তুষার আচ্ছাদিত পাহাড়ের পাশে, বিশাল হ্রদগুলোর মাঝে, সুগন্ধি, নিশ্চুপ, জটিল চিলির জঙ্গল...ঝরা পাতায় আমার পা ডুবে যায়, গাছের ভঙ্গুর ডাল আমার পায়ের তলায় চড়চড় করে ওঠে, অতিকায় রাউলিগাছগুলো সর্বশক্তিতে অভ্যুত্থিত হয়। হিমশীতল জঙ্গলের ভেতর থেকে একটা পাখি উড়ে এসে ডানা ঝাপটায়, সূর্যহীন গাছের ডালগুলোতে বসে। তারপর তার লুকানো জায়গা থেকে সানাইয়ের মতো গেয়ে ওঠে...লতাগুল্মের বনজ গন্ধ, ঔষধির গাঢ় গন্ধ আমার নাকের ভেতরে ঢুকে অস্তিত্ব ভাসিয়ে নিয়ে যায়...।

নেরুদা তাঁর জীবদ্দশায় বিভিন্ন দেশে বহু কুটনৈতিক পদে বহাল ছিলেন এবং চিলিয় সাম্যবাদী দল -এর সিনেটর হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। রাষ্ট্রপতি গ্যাব্রিয়েল ভিদেলা যখন চিলিতে ১৯৪৮ সালে সাম্যবাদী বন্ধের ডাক দিয়ে নেরুদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। বন্ধুরা তাঁকে ভালপারাইসোর বন্ধর শহরে একটি ঘরের ভিতর লুকিয়ে রাখেন। সেখান থেকে নেরুদা পাহাড়ের উপর দিয়ে মাইহু হ্রদ অতিক্রম করে আর্জেন্টিনায় পালিয়ে যান। বছর কয়েক পর নেরুদা চিলির সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি সালভাদর আলেন্দের সাহচর্যে আসেন। নেরুদা নোবেল পুরস্কার গ্রহণের পর যখন তিনি চিলিতে ফেরত আসেন, তখন আলেন্দে তাঁকে এস্টাডিও নেশনালে সত্তর হাজার লোকের সম্মুখে বক্তব্য রাখার আমন্ত্রণ জানান। অগাস্টো পিনোচের শাসনামলে নেরুদা ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তাঁর মনে হয়েছিল কোনো এক ডাক্তার পিনোচেটের আদেশে তাঁকে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছেন। নেরুদা ১৯৭৩ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর তাঁর নিজ বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অনেকে মনে করেন, তাঁকে স্পষ্টত হত্যা করা হয়েছে। কিংবদন্তি নেরুদার মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। পিনোচেট তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া জনসমক্ষে করার অনুমতি দেননি। কিন্তু হাজারও শোকার্ত চিলিয়রা তাঁর আদেশ অমান্য করে পথে ভিড় জমান। নেরুদাকে প্রায়ই চিলির জাতীয় কবি হিসেবে ধরা হয় এবং তাঁর সাহিত্যকর্মগুলি বিশ্বজুড়ে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। কলম্বিয়ার ঔপন্যাসিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ একদা তাঁকে বিংশ শতাব্দীর সকল ভাষার মহান কবি হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

নেরুদার বাবা তাঁর লেখালিখি ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনার বিরোধিতা করলেও নোবেল পুরস্কার বিজয়ী গ্যাব্রিয়েলা মিস্ট্রালদের মতো আরও অনেকজন থেকে সহযোগিতা পেয়েছে। ১৯১৭ সালের ১৮ই জুলাই তাঁর প্রথম লিখা আন্তরিকতা ও অধ্যবসায় মাত্র তেরো বছর বয়েসে দৈনিক সংবাদপত্র লা মানানা-তে প্রকাশিত হয়। ১৯১৮ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত তাঁর বহু কবিতা প্রকাশ পায়। ১৯১৯ সালে তিনি সাহিত্য প্রতিযোগিতায় যোগ দেন আর সেখানে তিনি তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। ১৯২১ সালে শিক্ষক হওয়ার অভিপ্রায়ে নেরুদা চিলি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরাসি পড়তে যান। দিন-রাত এক করে তিনি সাহিত্য ও কবিতা লিখায় মন দেন। পরে তিনি একজন সফল আন্তর্জাতিক কবি হওয়ার খ্যাতি অর্জন করেন।

উল্লেখযোগ্য পুরস্কার

আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার (১৯৫০)
লেনিন শান্তি পুরস্কার (১৯৫৩)
সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (১৯৭১)

পিনোচের শাসনামলে নেরুদা ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তাঁর মনে হয়েছিল কোনো এক ডাক্তার পিনোচেটের আদেশে তাঁকে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছেন। নেরুদা ১৯৭৩ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর তাঁর নিজ বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অনেকে মনে করেন, তাঁকে স্পষ্টত হত্যা করা হয়েছে।

১৯৭১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজেতা একজন চিলিয় কবি, কুটনীতিবিদ ও রাজনী ছিলেন।বিদ। নেরুদা মাত্র তেরো বছর বয়েসে কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন যখন তিনি বিভিন্ন ধরণের কবিতা লিখতে শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল পরাবাস্তববাদী কবিতা, ঐতিহাসিক মহাকাব্য, প্রকাশ্য রাজনৈতিক ইশতেহার, গদ্য আত্নজীবনী এবং ভালোবাসার কবিতা যা তাঁর ১৯২৪ সালে প্রকাশিত বিশটি ভালোবাসার কবিতা ও একটি মন খারাপের গান শীর্ষক কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহীত।এগুলো লেখনীর

পাবলো নেরুদার, ‘আই অ্যাম এক্সপ্লেইনিং আ ফিউ থিংস’ (আমি কিছু কৈফিয়ত দিচ্ছি)। কবিতাটা ছিল:

আর এক সকালে, সেই সবকিছু পুড়ছিল

এক সকালের বনফায়ার

মাটি থেকে সটান লাফিয়ে

গ্রাস করল মানুষকে,

আর তারপর থেকে আগুনকে,

বারুদকে তারপর থেকে, এবং অতঃপর রক্ত।

উড়োজাহাজ আর বিস্তীর্ণ জলাভূমির মালিক দস্যুরা,

অঙ্গুরি আর রাজকন্যাদের প্রভু দস্যুরা,

কালো ধর্মভাইদের নিয়ে দস্যুরা এল আকাশপথে

আশীর্বাদ ছিটাতে ছিটাতে শিশুহত্যার জন্য।

আর শিশুদের রক্ত গড়াল রাস্তায় গোলমাল ছাড়াই,

শিশুর রক্তের মতন।

শেয়াল যাদের শেয়ালও ঘৃণা করবে

পাথর যাতে শুকনো কাঁটাগাছও পারে না 

দাঁত বসাতে,

কালসাপ যারা কালসাপের কাছেও ঘৃণ্য।

তোমার সঙ্গে মুখোমুখি আমি দেখেছি

স্পেনের রক্ত জলোচ্ছ্বাসের মতোই উথলে উঠছে

একটা ঢেউই তোমায় ডোবাবে

ছুরি-চাকু এবং অহংসমেত।

বিশ্বাসঘাতক সেনানায়কেরা;

দেখো আমার মরা বাড়ি; ভাঙা স্পেনকে দেখো:

প্রতিটা ঘর থেকে বইছে পোড়া ধাতুর নালা

ফুলের বদলে স্পেনের প্রতিটা রন্ধ্র থেকে স্পেন

আবির্ভূত হয় আর

প্রতিটা মৃত শিশুর থেকে চক্ষুষ্মাণ রাইফেল

আর প্রতিটা অপরাধ থেকে জন্মায় বুলেট

যারা একদিন খুঁজে নেবে তোমার

বুকের ঠিক মাঝখানটিকে।

এবং তোমরা জানতে চাইবে: কেন তার কবিতা

স্বপ্ন আর পাতার কথা বলে না

আর বলে না তার দেশজ আগ্নেয়গিরির কথা।

এসো আর রাস্তাগুলোয় রক্ত গড়ায় দেখো।

এসো আর দেখো

রাস্তায় রক্ত গড়ায়।

এসো আর দেখো রক্ত

গড়ায় রাস্তায়!

চে গুয়েভারা ১৭ বছর বয়সে তাঁর প্রথম প্রেমিকাকে নেরুদার কবিতা শুনিয়েছিলেন।

তবু শিশিরের মতো হৃদয়ে ঝরে পড়ে তাঁর কবিতা আর মনের ভেতর গুনগুনিয়ে ওঠে:
 ‘আমি তাকে আর ভালোবাসি না সত্যি, তবে হয়তো তাকে ভালোবাসি। প্রেম কত সাময়িক আর ভুলে যাওয়া অসীম।

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। প্রবোধচন্দ্র বাগচী । বিংশ শতাব্দীর ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম পণ্ডিত, সাহিত্যের গবেষক এবং শিক্ষাবিদ। তিনি ছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য। Dt -18.11.2024. Vol -1055 .Monday. The blogger post in literary e magazine.

প্রবোধচন্দ্র বাগচী    (১৮ নভেম্বর ১৮৯৮ - ১৯ জানুয়ারি ১৯৫৬)  বিংশ শতাব্দীর ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম পণ্ডিত, সাহিত্যের গবেষক এবং শিক্ষাবিদ। ...