এক ছাতা এক আকাশ। সিরিজ।
বিষ্ণু জানা।
১.
বৃষ্টির শব্দ কান পেতে শুনছি....
টুপটাপ ... ঝিমঝিম.....
কালো কালো কাড়ানের মেঘগুলো দৈত্যসম উড়ে চলেছে ---
মেঘমেদুর রোমান্টিক মন ..
বেশ লাগছে।
এক ছাতার নিচে
এমন বাদল দিনে ......
কলেজের করিডোর
বাইরে তখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামছে
মাঝে মাঝে ঝড়ো হাওয়া
বৃষ্টির ছাঁট দু'একবার গায়ে এসে লাগছে
যাই যাই করেও .....অপেক্ষমান
বিকেল আলোর মধুমালতী।
স্টাফ রুম থেকে ভেসে আসছে...
প্রিয় কণ্ঠস্বর।
যাব কি একবার দু'পা এগিয়ে দরজার ফাঁকে
উঁকি দিতে ...
সহসা পিছন থেকে টান .অর্চনা র
কিরে, বাড়ি ফিরবি না !
বাহিরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি ..
মন যে ....এক ছাতার নিচে .. দু'পা হাঁটছে।
যদি ছাতা না আজকের এনে থাকেন...
ভিজে ভিজে ফিরবেন।।
আনমনা হয়ে ভাবছে সে।।
সহসা সামনে এসে বললেন.. চলো,
আর দেরি নয়।
তোমার অনেকটা দেরি করে ফেললাম।
বেশ ভারী বৃষ্টি তো।
ভিজেছ অনেকটা।
সরি, আজ একটু বেশি দেরি হয়ে গেল।।
প্রত্যহ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে
এমন ঘটনাটা ঘটেছে অনেক বার....
তোমার ছাতায় একটু শেয়ার করবো।
যা ভাবনা তাই ঘটলো।।
মনে মনে খুব খুশিতে বললাম ..চলুন।
এক আকাশ ছাতা।
ছোট্ট দুটি মন।
গা বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা...
ঝমঝমিয়ে ভারী বৃষ্টি এলো
সহসা আলোর ঝলকানি ..
দু'পা পিছিয়ে , হাতে রাখলাম হাত.
শরীরের ছুঁয়েছে দু-একবারও।
ভিজে যাওয়া ঝুমকো লতার মতো কেঁপে ওঠে মন ....বৃষ্টির ছাঁট মুখে চোখে গায়ে লাগছে.
ভেজা চোখে তাকিয়ে দেখছি বার বার
আগে তো হয় নি এমন...
হাতটা তেমনি ধরা।
রাস্তার দু'পাশে বৃষ্টির শব্দ শুনছে মানুষজন
পাশ কাটিয়ে দু-একজন হনহন চলেছে
সহসা মৃদু স্বরে বললাম -
টেকার স্ট্যাণ্ড।
ফাঁকা, সিট নিয়ে বসেছি
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এলো।
ছাতা টা আজ আপনার হোক....
মনে মনে ভাবলাম ...আমার অনেক কিছুই তো আপনার হতে চায়।
বললাম- তুমি ফিরবে তো !
চলে যাব আমি।।।
বাবা নিয়ে যাবেন।
ভেজা গোধূলির রঙে আঁকা মুখ ম্লান হয়ে এলো
ক্ষণিকের এই ভালোলাগার স্মৃতিটুকু ....
মনে করতে করতে
পা চালিয়ে চললাম-
শক্ত করে ছাতাটি ধরা।
সময়ে বাড়ি ফিরে, ছাতাটি রাখলাম ...
শোবার ঘরে।
মাটি ভিজে গেছে, মনের সঙ্গে.
সারারাত বৃষ্টির কান্না নিয়ে.
বাহিরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি চললো।
বলা হল না .....
এ ..ঘোর ঘনঘটা বরিষায়।...
===========∆∆∆==============
"প্রাণের রাধার কোন ঠিকানা ...........!"
রিংটোন বেজে ওঠে, কানের পাশে থাকা মোবাইলে। গত দুদিনের জ্বরে কাৎ। দুর্বল শরীর ও মনে একটু তন্দ্রা, তাও ভেঙে গেল সুজি'র. এমন গান তো....একজনের রিংটনে ..।
বেশ কয়েকদিন কাজের চাপে, ওদের কথা হয় নি।
নিয়মিত দীর্ঘ কথালাপে কম্প্রোমাইজ। শর্ট ও ইরেগুলার । মেনে নিয়েছে দুটি মন। যে যখন সময় পাবে, দু'এক কথা। যদি তাও না হয়, মেসেজে ছোট্ট দুটো শব্দ- বেশ । ভালো আছি।
সুজি বিছানা ছেড়ে ওঠে। কি হলো আবার ! শরীর না চাইলেও, মনের জোরে ....
কি রে , ফোনটা ধরতে এত দেরি করলি ?
ঘুমিয়ে ছিলি বুঝি ! চিনুর গলায়..
বাইরে বৃষ্টির শব্দ। সুজি বৃষ্টির শব্দ শুনতে খুব ভালোবাসে। শব্দ শুনতে শুনতে সত্যিই কখন সে ঘুমিয়ে পড়েছিল...
হ্যাঁ রে। এই একটু....
তা তো ঘুমোবি, তোর আর কি বল ! বিন্দাস আছিস । হাজব্যান্ড বাহিরে ....আর আমি এমন বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গাড়ি চালিয়ে ফিরছি ... দেশের বাড়ি। দায়িত্ব কর্তব্য পালনে ... কপাল একে বলে....
চিনু ,সুজির স্কুল জীবনের প্রিয় বন্ধু। তার চেয়ে হয়তো বেশি কিছু মনে মনে । সে অনেক কিছু ভাবলেও ... সুজিকে মুখ ফুটে কোনদিন বলতে পারেনি। সুজির বিবাহিত সংসার। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে 30 বছর পর দেখা।
****তোমার সঙ্গে দেখা না হলে ভালোবাসার
দেশটা আমার দেখা হতো না....
বেশ কয়েকবার এসেছে বাড়িতে। দুটো হীরের টুকরো ছেলে। নিজের ছেলের মতো ভালোবাসে। ১৮ র রোমান্টিক প্রেম, গভীরতায় আপডেট।
বল, কি বলছিস !
তোর সঙ্গে দেখা করতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। প্যান্ডামিক সিচুয়েশন এ কতদিন সেভাবে দেখা হয় নি । মন টা মরুভূমি। এক পলকে একটু দেখবো বলে . সহজ রাস্তা ফেলে , ঘুর পথে চলেছি।
সে কি? তোর তো দেরি হবে না তো ।
হোক না। তাতে কি ?
শোন্ , তুই কি একটু বেরিয়ে আসতে পারবি? চৌমাথার মোড়। একঝলক দেখেই চলে যাব...
যাহ্, কী যে বলিস ! কত দূরে আছিস বল। আমি সেভাবেই রেডি হয়ে যাব।।।
বাইরে ঝিম ঝিম বৃষ্টি পড়ছে।
বৃষ্টির ফোঁটা সুজির গায়ে লাগলে বিষময়। তার ওপর জ্বর ঠিক মতো সেরে ওঠে নি।
আমি ঠিক জানিয়ে দেবো। তুই আসবি তো !
অসম্ভব এক টান উভয়ের মধ্যে। সুজি ঝটপট রেডি হতে থাকে। অভিসারিকার সাজে রাইকিশোরী ।
তেমন করে সাজতে হয় না সুজিকে। ৫০ বছরের লাবণ্য ২৫ বছর কে হার মানায়।
কল করে চিনু জানিয়ে দেয়, ওয়েট করছি।
এমনতর বরষাকে উপেক্ষা করেই ধীর পায়ে অভিসারিকার সাজে সুজি ছাতা মাথায় বেরিয়ে পড়ে প্রিয় মনের সঙ্গে এক পলক দেখা করবে সে
এই টো টো . টো টো। তুমি বাইপাস যাবে। চৌমাথার মোড়।
সহসা সূজি উঠে পড়ে। বৃষ্টি ভেজা রাস্তা । ফাঁকা। একা চলেছে টোটো তে। মনে স্বপ্নের অমরাবতী। কেমন করে দেখবে সে ? কি বলবে তাকে? কত কি ভাবতে থাকে. একা একা ....
দূরে চৌমাথার মোড়। একটি স্কাই কালারের অল্টো। দাঁড়িয়ে একা ভিজে যাচ্ছে কে !
কালো পাঞ্জাবি পরা ছিপছিপে গড়ন। আগের থেকে রোগা হয়েছে। ফোনে বলেছিল, বেশ কাজের চাপ। ঠিকঠাক খাওয়া নাওয়া হয়ে ওঠেনি প্রতিদিন।
সুজি দ্রুত পায়ে এগিয়ে চলে। মাথায় ছাতা। ভিজে যাচ্ছে যে ...। মুখোমুখি। থমকে দাঁড়ায়।
আকাশের কালো কাড়ানের মেঘগুলো অন্ধকার ঘনিয়ে আনে। ঝিরঝির বৃষ্টি ঝরে। একদা
একটি ছাতার নিচে দুটি প্রিয় মন।
আঁধারে আলোর মতো তোর চোখ মুখ চকচক করছে রে। ভালো আছিস তো। সত্যি ভালো করেছিস তুই।
একমনে সুজি কথাগুলো শুনতে থাকে। কত চেনা জানা এই কথাগুলো। রাতে বিরেতে তার কানে এখনো বাজে। ভেতর থেকে একটি কষ্ট যেন কুরে কুরে খায় তাকে। কিসে কষ্ট মুখ ফুটে বলতে পারে না।
আসতে আসতে বলে, হ্যাঁ ভালো আছি। তোকে দেখার পর আরো ভালো হয়ে গেছি। আরো ভালো হয়ে যাব।
আকাশে সহসা আলোর ঝিলিক। উজ্জ্বল মুখ দুটো একে অপরকে দেখে নেয় একবার। ফিরে যায় 30 বছর আগে স্কুল জীবনের ইতিহাস এ। রোমান্টিক আবেশ ঘনিয়ে আসে।
**"কতদিন পরে এলেন একটু বসুন।।।
আসি রে , ভালো থাকিস।
সুজি ক্ষণিকের জন্য ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।
গভীর মনের অনুভূতি নিয়ে ক্ষণিকের এই দেখা , জীবনের বিশেষ মুহূর্ত হয়ে ওঠে। সাক্ষী থাকে রিমঝিম বৃষ্টির ফোঁটা আর গোধূলির রঙ।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে সারা রাস্তায় সুজি স্মৃতিঘন উপলব্ধির গভীরে ডুবেছিলেন যেন।
বাড়ির দরজা। ছেলেরা ডেকে ওঠে- মা। ।
কেমন যেন একটা ঘোর পেয়েছে তাকে। সংসারের মায়ায় জড়িয়ে ও ভেতর থেকে সেই ঘোর আর ঘোরে হতে থাকে.... রাত বাড়ে। বাইরে ঝিম ঝিম বৃষ্টি। সারারাত সেই ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেনি সুজি। তার পরের কয়েকদিন ও।
এই বুঝি গভীর প্রেম ......
গান বেজে ওঠে ...
আমার স্বপন কিনতে পারে এমন আমীর কই।।।।
===============∆∆∆=============
No comments:
Post a Comment