"" ডেকো না গো আমায় তোমার পথে মনের দুয়ার খুলে,
আমি আসবো না আর ও পথে আমায় যেয়ো ভুলে।
গেঁথো নাকো মালা আমার লাগি ঝরা বকুল ফুলে, আমি পরবো না আর সে মালা ভাসবে চোখের জলে।
ভেবো না আমারে আর নিশিদিন দু’চোখের জল ফেলে,
স্বপনে হেরিয়া কেঁদো না প্রভাতে,রাত গেলে। দিন ফুরানোর বেলা যে হলো মোর থাকবো না ফুরালে,পথপানে যেন চেয়ো না আর আমি হারালে। ""
জহির রায়হান।
তাঁর রচিত প্রথম উপন্যাস শেষ বিকেলের মেয়ে ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয়। তার রচিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো হাজার বছর ধরে ও আরেক ফাল্গুন। হাজার বছর ধরে উপন্যাসের জন্য ১৯৬৪ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।[২] তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র কখনো আসেনি (১৯৬১)। ১৯৬৪ সালে কাঁচের দেয়াল চলচ্চিত্রের জন্য তিনি নিগার পুরস্কার লাভ করেন। ] তার নির্মিত অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলোহলো বেহুলা, সঙ্গম, আনোয়ারা এবং জীবন থেকে নেয়া। স্টপজেনোসাইড প্রামাণ্যচিত্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে প্রশংসিত হন।
জহির রায়হান ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার সোনাগাজি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি তার পরিবারের সাথে কলকাতা হতে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্থানান্তরিত হন। তিনি ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে দু'বার বিয়ে করেন: ১৯৬১ সালে সুমিতা দেবীকে এবং ১৯৬৬ সালে তিনি সুচন্দাকে বিয়ে করেন, দুজনেই ছিলেন সে সময়কার বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।
জহির রায়হান বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তার সাহিত্যিক ও সাংবাদিক জীবন শুরু হয়। ১৯৫০ সালে তিনি যুগের আলো পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতেও কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবে প্রবাহ পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ সূর্যগ্রহণ প্রকাশিত হয়। চলচ্চিত্র জগতে তার পদার্পণ ঘটে ১৯৫৭ সালে, জাগো হুয়া সাভেরা ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে। তিনি সালাউদ্দীনের ছবি যে নদী মরুপথেতেও সহকারী হিসেবে কাজ করেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম তাকে এ দেশ তোমার আমার এ কাজ করার আমন্ত্রণ জানান; জহির এ ছবির নামসঙ্গীত রচনা করেছিলেন। ১৯৬১ সালে তিনি রূপালী জগতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কখনো আসেনি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র সঙ্গম নির্মাণ করেন (উর্দু ভাষার ছবি) এবং পরের বছর তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র বাহানা মুক্তি দেন।
জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। ভাষা আন্দোলন তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যার ছাপ দেখতে পাওয়া যায় তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেয়াতে। তিনি ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন।[৪] কলকাতায় তার নির্মিত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়ার বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা এবং ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। সে সময়ে তিনি চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তার চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন।
. রচনা কর্ম :
উপন্যাস
- শেষ বিকেলের মেয়ে (১৯৬০) প্রথম উপন্যাস। প্রকাশক: সন্ধানী প্রকাশনী (রোমান্টিক প্রেমের উপাখ্যান)
- হাজার বছর ধরে (১৯৬৪) আবহমান বাংলার গ্রামীণ জীবনের পটভূমিতে রচিত আখ্যান। (চলচ্চিত্ররূপ (২০০৫)
- আরেক ফাল্গুন (১৯৬৯) বায়ান্নর রক্তস্নাত ভাষা-আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত কথামালা।
- বরফ গলা নদী (১৯৬৯) প্রথম প্রকাশ: 'উত্তরণ' সাময়িকী। অর্থনৈতিক কারণে বিপর্যস্ত ক্ষয়িষ্ণু মধ্যবিত্ত পরিবারের অসহায়ত্ব গাথা।
- আর কতদিন (১৯৭০) অবরুদ্ধ ও পদদলিত মানবাত্নার আন্তর্জাতিক রূপ এবং সংগ্রাম ও স্বপ্নের আত্মকথা।
- কয়েকটি মৃত্যু
- একুশে ফেব্রুয়ারি (১৯৭০)
- তৃষ্ণা (১৯৬২)
গল্পসমগ্র
- সূর্যগ্রহণ প্রথম গল্পগ্রন্থ (১৩৬২ বঙ্গাব্দ)'সোনার হরিণ"সময়ের প্রয়োজনেএকটি জিজ্ঞাসাহারানো বলয়বাঁধনয়াপত্তনমহামৃত্যুভাঙাচোরাঅপরাধস্বীকৃতঅতি পরিচিতইচ্ছা অনিচ্ছাজন্মান্তর
- পোস্টারইচ্ছার আগুনে জ্বলছিকতকগুলো কুকুরের আর্তনাদকয়েকটি সংলাপ (১৯৭১)
- দেমাকম্যাসাকারএকুশের গল্প
অন্যান্য রচনা
- পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ (প্রবন্ধ), কলকাতার ঐতিহ্যবাহী 'পরিচয়' সাহিত্যপত্রের বাংলাদেশ সংখ্যায় (জুলাই ১৯৭১) এ প্রকাশিত হয়।
- অক্টোবর বিপ্লব ও সোভিয়েত চলচ্চিত্র (প্রবন্ধ), সোভিয়েত বিপ্লবের ৫০ তম বার্ষিকী উপলক্ষে অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক মহাবিপ্লব উদ্যাপন কমিটির (ঢাকা) স্মরণিকা 'তরঙ্গ'-এ (নভেম্বর, ১৯৬৭) প্রকাশিত হয়।
- ওদের জানিয়ে দাও (কবিতা)
- জহির রায়হান রচনাবলি ১ম খণ্ড
- জহির রায়হান রচনাবলি ২য় খণ্ড
পত্রিকা সম্পাদনা
- এক্সপ্রেস (ইংরেজি সাপ্তাহিক)
- প্রবাহ (বাংলা মাসিক)
চলচ্চিত্র
- সহকারী পরিচালক হিসেবে
- জাগো হুয়া সাভেরা (১৯৫৯)
- এদেশ তোমার আমার (১৯৫৯)
- নবারুণ (১৯৬০)
- যে নদী মরুপথে (১৯৬১)
- পরিচালক, প্রযোজক, লেখক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে।
বছর | চলচ্চিত্র | ভূমিকা | ভাষা | নো | |||
---|---|---|---|---|---|---|---|
পরিচালক | প্রযোজক | চিত্রনাট্য | লেখক | ||||
১৯৬১ | কখনো আসেনি | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | বাংলা | পরিচালক হিসেবে প্রথম চলচ্চিত্র | |
১৯৬২ | সোনার কাজল | হ্যাঁ | বাংলা | কলিম শরাফী এর সাথে যৌথভাবে পরিচালনায় নির্মিত। | |||
১৯৬৩ | কাচের দেয়াল | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | বাংলা | |
১৯৬৪ | সঙ্গম | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | উর্দু | সমগ্র পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নির্মিত প্রথম রঙ্গীন চলচ্চিত্র। |
১৯৬৫ | বাহানা | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | উর্দু | সমগ্র পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নির্মিত প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র। |
১৯৬৬ | বেহুলা | হ্যাঁ | হ্যাঁ | বাংলা | |||
১৯৬৭ | আনোয়ারা | হ্যাঁ | হ্যাঁ | বাংলা | |||
১৯৬৮ | দুই ভাই | হ্যাঁ | হ্যাঁ | বাংলা | |||
১৯৬৮ | কুচবরণ কন্যা | হ্যাঁ | বাংলা | ||||
১৯৬৮ | জুলেখা | হ্যাঁ | বাংলা | ||||
১৯৬৮ | সুয়োরাণী-দুয়োরাণী | হ্যাঁ | বাংলা | ||||
১৯৬৮ | সংসার | হ্যাঁ | হ্যাঁ | বাংলা | |||
১৯৬৯ | মনের মত বউ | হ্যাঁ | বাংলা | ||||
১৯৬৯ | শেষ পর্যন্ত | হ্যাঁ | বাংলা | ||||
১৯৬৫ | একুশে ফেব্রুয়ারি | হ্যাঁ | বাংলা | অপ্রকাশিত | |||
১৯৭০ | জীবন থেকে নেয়া | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | বাংলা | |
১৯৭০ | টাকা আনা পাই | হ্যাঁ | বাংলা | ||||
১৯৭০ | লেট দেয়ার বি লাইট | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ইংরেজি, বাংলা, উর্দু, রুশ | অসমাপ্ত। চলচ্চিত্রটি সমাপ্ত হবার আগেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। |
১৯৭১ | জলতে সুরজ কে নিচে | হ্যাঁ | উর্দু | ||||
১৯৭১ | স্টপ জেনোসাইড | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ইংরেজি | তথ্যচিত্র | ||
১৯৭১ | বার্থ অব আ নেশন / এ স্টেট ইজ বর্ন | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ইংরেজি | তথ্যচিত্র | |
১৯৭১ | চিলড্রেন অব বাংলাদেশ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ইংরেজি | তথ্যচিত্র | |
১৯৭১ | সারেন্ডার | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ইংরেজি | তথ্যচিত্র | |
১৯৭২ | প্রতিশোধ | হ্যাঁ | বাংলা | ||||
১৯৭৩ | ধীরে বহে মেঘনা | বাংলা | মূল পরিকল্পনা | ||||
২০০৫ | হাজার বছর ধরে | হ্যাঁ | বাংলা | ||||
২০১৪ | পোস্টার | হ্যাঁ | বাংলা | স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র |
পুরস্কার ও সম্মানন
- ১৯৬৪: হাজার বছর ধরে উপন্যাসের জন্য আদমজী সাহিত্য পুরস্কার
- ১৯৬৫: কাচের দেয়াল চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ বাংলা চলচ্চিত্র বিভাগে নিগার পুরস্কার[২]
- ১৯৭২: গল্প সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি প্রদত্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭১) (মরণোত্তর)[২]
- ১৯৭৭: শিল্পকলায় (চলচ্চিত্র) অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক (মরণোত্তর)
- ১৯৯২: সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (মরণোত্তর)
- ২০০৫: হাজার বছর ধরে চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (মরণোত্তর)
No comments:
Post a Comment