Wednesday, 25 August 2021

জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য। সজনীকান্ত দাশ ও তসলিমা নাসরিন। ২৫.০৮.২০২১. Vol -475. The blogger in literature e-magazine.

 

শনিবারের চিঠি ও সজনীকান্ত দাশ।



সেকালের ব্যতিক্রমধর্মী এক বাংলা সাহিত্য সাময়িকী পত্রিকার নাম ‘শনিবারের চিঠি’। বাংলা সাহিত্যে বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল এক ব্যতিক্রমধর্মী সমালোচনামূলক সাহিত্য সৃষ্টিতে ‘শনিবারের চিঠি’ সমহিমায় ভাস্বর। ‘শনিবারের চিঠি’র অবদান বাংলা সাহিত্যে মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

যোগানন্দ দাসের সম্পাদনায় ১৯২৪ সালে সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসাবে ‘শনিবারের চিঠি’র আত্মপ্রকাশ। বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখক ও সম্পাদক রামানন্দ চট্রোপাধ্যায়ের পুত্র অশোক চট্রোপাধ্যায় ছিলেন সাপ্তাহিক ‘শনিবারের চিঠি’র অন্যতম সংগঠক। প্রথমাবস্থায় মাত্র সাতাশটি সংখ্যা প্রকাশের পর ‘শনিবারের চিঠি’র প্রকাশ বন্ধ হয়ে গেলেও ১৯২৮ সালে নীরোদ সি চৌধুরীর (যিনি পরবর্তীকালে ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় ব্যতিক্রমধর্মী লেখক হিসেবে বিশেষভাবে নন্দিত ও নিন্দিত হন) সম্পাদনায় মাসিক হিসাবে ‘শনিবারের চিঠি’ আবার বের হয়। ওই সালেই ‘শনিবারের চিঠি’ সম্পাদনায় দায়িত্ব, সজনীকান্তের ওপর অর্পিত হয়। প্রথম পর্যায়ে এই দায়িত্ব তিনি ১৯৩১ সাল পর্যন্ত পালন করেন। ১৯৩২ সালে সাহিত্যিক পরিমল গোস্বামী সাপ্তাহিক ‘শনিবারের চিঠি’র সম্পাদক হয়ে একটানা ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত বহাল থাকেন। ১৯৩৮ সালে সজনীকান্ত দাস পুনরায় মাসিক ‘শনিবারের চিঠি’র সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং একটানা ওই দায়িত্বে ব্রতী থাকেন। দীর্ঘকাল সজনীকান্তের সম্পাদনায় ‘শনিবারের চিঠি’ প্রকাশিত হওয়ায় বাংলা সাহিত্যের শস্ত্র স্বরূপ ‘শনিবারের চিঠি’র সম্পাদক হিসাবে তিনিই মূলত বিবেচিত হয়ে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে সাপ্তাহিক হিসাবে ‘শনিবারের চিঠি’র আত্মপ্রকাশের পর পরই সজনীকান্ত ‘শনিবারের চিঠি’র সঙ্গে যুক্ত হন। অষ্টম সংখ্যায় ভাবকুমার ছদ্মনামে সজনী কান্তের কবিতা প্রকাশিত হয়। কবিতার শিরোনাম ‘আবাহন’। ‘শনিবারের চিঠি’ সম্পর্কে বলতে গেলে সজনীকান্তের কথা বেশি এসে যায়। পত্রিকাটি প্রকাশের প্রথম পর্যায় থেকে তিনি পত্রিকাটির সঙ্গে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে পরেন।

শনিবারের চিঠিপ্রকাশের উদ্দেশ্য ছিল দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স¦রাজ্য দলের সমালোচনা করা। কিন্তু এক পর্যায়ে উদ্দেশ্যের পরিবর্তন ঘটে যে সময় কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। শনিবারের চিঠি প্রকাশের প্রারম্ভকাল থেকেই নজরুলের কাব্য প্রতিভাকে ব্যঙ্গ করে বিভিন্ন ছদ্মনামে তার বিরুদ্ধে ব্যঙ্গাত্মক লেখা প্রকাশ করতে শুরু করেন। কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ প্রকাশিত হলে বাংলা সাহিত্য জগতে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ঠিক ওই সময় সজনীকান্ত শনিবারের চিঠিতে কামকাটকীয় ছন্দে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার  প্যারডি লিখলেন ‘ব্যাঙ’ শিরোনামে। কবি নজরুলের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গাত্মক লেখার মাধ্যমেই সজনীকান্ত জায়গা করে নিলেন শনিবারের চিঠিতে। সজনীকান্তের লেখা এই ব্যঙ্গ কবিতাকে নিয়ে নজরুলের সাহিত্য গুরু কবি মোহিতলাল মজুমদারের সঙ্গে নজরুলের ভুল বোঝাবুঝির কথা এখানে প্রসঙ্গক্রমে তুলে ধরা যেতে পারে। সজনীকান্তের জন্ম  ১৩০৭ সালের ৯ ভাদ্র শনিবার বর্ধমান জেলার বেতালবন গ্রামে মামাবাড়িতে। পিতার নাম হরেন্দ্রলাল দাস এবং মাতার নাম তুঙ্গলতা। সজনীকান্তের হওয়ার কথা ছিল ডাক্তার কিংবা বিজ্ঞানী। কিন্তু তিনি হলেন সাহিত্যিক তথা ব্যঙ্গবিশারদ সাহিত্য সম্পাদক। বিএসসি পাস করার পর মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়ার জন্য নির্বাচিত হয়েও নিজে ভর্তি না হয়ে মামাতো ভাইয়ের ভর্তির ব্যবস্থা করে দিলেন। এমএসসি পড়াকালে স্বগ্রামবাসী ও তখন কলকাতা প্রবাসী পশুপতিনাথ চৌধুরীর প্রথমা কন্যা সুধাকে সজনীকান্ত বিয়ে করলেন। বকেয়া বেতন ও পরীক্ষার ফি জমা দিতে না পারায় এমএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ সম্ভব না হলে সজনীকান্ত তার নিজের দায়-দায়িত্ব থেকে অভিভাবকদেরকে অব্যাহিত দিয়ে গৃহশিক্ষকতা ও সাহিত্য সাধনা করে যৎসামান্য উর্পাজনের দ¦ারা জীবিকা নির্বাহে সচেষ্ট হলেন এবং এক পর্যায়ে সম্পাদক হিসেবে শনিবারের চিঠিতে পাকাপোক্তভাবে আসন লাভ করেন। ‘কল্লোল’ মাসিক পত্রিকাকে ঘিরে একদল তরুণ সাহিত্যিক নতুন ধারার সাহিত্য সৃষ্টিতে মাতোয়ারা।

এক সময় দীনেশরঞ্জন দাশের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘কল্লোল’ পত্রিকার তরুণ লেখকবৃন্দ কল্লোলগোষ্ঠী নামে আখ্যায়িত হতে শুরু করেছে। সুসাহিত্যিক ও গবেষক অবন বসু এ সম্পর্কে বলেন, ‘বাংলাদেশের সেই কালপর্ব ততদিনে পরবর্তী যুগের কাছে কল্লোলের কাল নামে চিহ্নিত হতে চলছে। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ তার সমসামরিক ও পূর্বসুরীদের সাহিত্যে ঐতিহ্যবাহী রক্ষণশীল যে মাত্রা বিশেষিত রবীন্দ্রনাথের একারই বহুমুখী প্রতিভার পক্ষ ছায়ায় বাংলা সাহিত্যে যে একমুখী প্রবাহের প্রাবল্য, সেই বৃত্তপথে থেকে বেড়িয়ে ধারাবাহিকতাকে তছনছ করার  জন্যে মাথা তুলে দাড়িয়েছে মূলত দরিদ্র কিংবা স্বল্পবিত্ত পরিবারের কাঠামো থেকে আসা উদ্ধত প্রতিভাবান এক যুব সম্পদায়। যাদের সৃষ্ট প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণার নাম ছিল ‘কল্লোল’ তরুণ লেখকদের মুদ্রিত আত্মপ্রকাশের প্রথম মুখপাত্র।

     অচেনা তরুণদের মধ্যে ছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, নজরুল ইসলাম, মুরলীধর বসু, নীলিমা বসু, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, নৃপেন্দ্র কৃষ্ণ, মণীশ ঘটক, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, বিভূতিভূষণ, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়, অন্নদাশঙ্কর রায়, জগদীশ গুপ্ত, তারাশঙ্কর প্রমুখ।                                                                                                                   ‘শনিবারের চিঠি’ র ‘মণিমুক্ত’ ও ‘সংবাদ সাহিত্য’-এই দু’টি বিভাগের অতি আধুনিক সাহিত্যিক গোষ্ঠী বিশেষ করে কল্লোলধারার লেখকদের প্রকাশিত গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা  ইত্যাদির ওপর স্বনামে ও বেনামে নিরন্তর ব্যঙ্গ ও বিদ্রƒপাত্মক লেখা প্রকাশ করে চলে। ‘শনিবারের চিঠি’র লেখকগোষ্ঠীর সজনীকান্ত প্রথম ভাবকুমার ছদ্মনাম ‘শনিবারের চিঠি’র পাতায় আত্মপ্রকাশ করলেও পরবর্তীকালে তিনি একটার পর একটা নতুন ছদ্মনাম ধারণ করেন। সজনীকান্তের ছদ্মনামগুলো হলো, রাম গাজনদার, গোলকচন্দ্র ধাঁধা, ক্ষীণেন্দ্র ধ্রæপদ রায়, অনুপ্রাস রঞ্জন  সেন, কুডুল বাম, অরসিক রায়, গনদাস বনিক, নিখিল প্রিয়া সেন, নববিষ্ণুশর্মা, বটুকলাল ভট্ট, বন্তি সুন্দর ব্যথিক প্রভৃতি। এছাড়া গাজী আব্বাস বিটকেল ছদ্মনামে সজনীকান্ত সহ ‘শনিবারের চিঠি’র অন্যান্য লেখকরাও লিখেছেন। প্রসঙ্গত ‘শনিবারের চিঠি’ র লেখকদের ব্যঙ্গবিদ্রƒপের দু’একটা নমুনা এখানে তুলে ধরা যেতে পারে। ১৩৩৩ সালের জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা মাসিক ‘কালিকলম’ এ কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘মাধবী প্রলাপ’ নামে একটি কবিতা প্রকাশিত হলে সাহিত্যে শুচিতাকামী পাঠকদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় উঠে। নজরুল ইসলামের ওই কবিতাটি প্রথম স্তবক ছিল এরূপ: ‘আজ লালসা-আলস-মদে বিবসা রাত/ শুয়ে অপরাজিতায় ধনী স্মরিছে পাত/ তার নিধুবন উন্মন/ঠোটে কাঁপে চুম্বন/ বুকে পীন যৌবন/ উঠিছে ফুড়ি,/ মনে কাম-কণ্ঠ ব্রণ মহুয়া-কুঁড়ি।’

‘শনিবারের চিঠি’র নজরুলের বিরুদ্ধে সমালোচনাকে শুচিতাকামী পাঠকরা লুফে নেয়। ব্যঙ্গ বিদ্রƒপবিশারদ সজনীকান্ত ‘শনিবারের চিঠি’র পাতায় নজরুল ইসলামকে বিদ্রƒপাত্মক ভাষায় ব্যঙ্গ করে তুলোধোনা করেন। ‘শনিবারের চিঠি’ সম্পাদক সজনীকান্ত দাস তার ‘আত্মস্মৃতি’ গ্রন্থে এ কবিতা সম্পর্কে বিরূপ সমালোচনা করে নজরুল ইসলামকে ব্যঙ্গ করে ছিলেন বলে  স্বীকার করেন। তিনি তার ‘আত্মস্মৃৃতি’ গ্রন্থে লেখেন ‘কালি কলম’  হাবিলদারী ‘কামকণ্ঠক ব্রণ’ দুষ্টতার জন্য আমাদের আক্রমণের বিষয়ে হইয়াছিল। ‘শনিবারের চিঠি’র সম্পাদক সজনীকান্ত পরিহাস প্রিয়তায় এতই ওস্তাদ যে নজরুলের প্রথম জীবনের পেশা নিয়ে পরিহাস করতেও তিনি দ্বিধা করেননি। কবি মোহিতলাল মজুমদারের সঙ্গে নজরুল ইসলামের বিরোধকে যোগদানের কেন্দ্র করে তিক্ততার জন্য মোহিতলাল ‘শনিবারের চিঠি’র দলে মোহিতলাল মজুমদারের ‘নারী বন্দনা’ কবিতা কালি কলমে প্রকাশিত হলে তিনি ‘শনিবারের চিঠি’ র সমালোচনার মুখে পড়েন।  মোহিতলালের ‘নারী বন্দনা’ কবিতার একাংশ ছিল এরূপ : ‘তবুও চুম্বন মোহন মন্দ্রে শিশু জাগে উল্লাসে/ অধর চষকে মধুপান করি যুবজন চিত হারা।’                                                                                   কবি বুদ্ধদেব বসুর লেখা কবিতা ‘রজনী হল উতলা’ ‘কল্লোলে’ প্রকাশিত হলে ‘শনিবারের চিঠি’ তে সজনীকান্ত উক্ত কবিতার বিরূপ সমালোচনা করে লিখলেন, ‘নতুন বছরের গোড়া হইবেই জল কল্লোল হঠাৎ যৌন কল্লোল হইবার সাধনায় মগ্ন হইল’। সজনীকান্ত ‘শনিবারের চিঠি’র মাধ্যমে সেকালের অন্যতম তরুণ লেখক অন্নদাশঙ্কর রায়কে নাস্তানাবুদ করেন কালি কলমের ফাল্গুন ১৩৩৫ এর সংখ্যায় ‘নতুন’ নামের প্রবন্ধে সমাজের প্রচলিত নানা সংজ্ঞাকে তছনছ করে দিয়ে লেখেন-‘প্রেম একটা কথার কথা, সতীত্ব একটা ন্যাকামী, দয়া একটা দুর্বলতা, ক্ষমা একটা ভÐামী, বীরত্ব একটা ভড়ং, পরোপকার একটা নিগূঢ় স্বার্থপরতা ...।’  অন্নদাশঙ্কর সদ্য বিলেত প্রত্যাগত। তাঁর দেওয়া সংজ্ঞা সম্বন্ধে সজনীকান্ত ‘শনিবারের চিঠির’ পাতায় কড়া সমালোচনা করে নিবন্ধ লেখেন। প্রাবন্ধিক প্রভাত কুমার দাস ‘শনিবারের চিঠি’র সজনীকান্ত প্রসঙ্গে লেখেন, ‘একটা সময় দেখা গেল, আধুনিকদের প্রধান ও দুর্বিষহ প্রতিপক্ষ সজনীকান্তকে সন্তষ্ট রাখতে রবীন্দ্রনাথও বিশেষভাবে সতর্ক থেকেছেন, সাহিত্যের ইতিহাসে এ প্রায় নজরবিহীন ঘটনা।’ এরও কারণ আছে, ‘শনিবারের চিঠি’র সম্পাদক সজনীকান্ত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকেও ব্যঙ্গ বিদ্রƒপ করতে দ্বিধাবোধ করেননি। রবীন্দ্রনাথ সজনীকান্তের ব্যবহারে অসন্তষ্ট হয়েছিলেন এবং এক পর্যায়ে ডাকযোগে প্রান্ত ‘শনিবারের চিঠি’ অগ্রাহ্য করে ফেরত পাঠিয়ে দিতেও কুণ্ঠিত হননি। এমন সিদ্ধান্তও ‘প্রবাসী’র সম্পাদককে জানিয়েছিলেন যে তারা যেন প্রবাসী প্রেস থেকে ‘শনিবারের চিঠি’ ছাপানো বন্ধ করে দেয়। তা না হলে তিনি প্রবাসীতে লেখা পাঠানো বন্ধের কথা ভাবলেন। ‘শনিবারের চিঠি’তে অন্যান্য পত্রপত্রিকার লেখা ও লেখকদের নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রƒপ সম্পর্কে ‘শনিবারের চিঠি’র অন্যতম সম্পাদক সজনীকান্তের নিজের কথা থেকে আমরা দেখতে পারি  তিনি লেখেন, ‘শনিবারের চিঠি’র চরিত্র উৎঘাটিত হয়েছে এই কালের ‘শনিবারের চিঠি’ যাহারা দেখিবার সুযোগ পাইবেন তাহারাই লক্ষ করিবেন, কী প্রচÐ বিস্ফোরণই না আমরা মাত্র তিন চার জনে ঘটাইয়াছিলাম। আমরা কয়েকজন একক ‘শনিবারের চিঠি’ একা বিরুদ্ধ পক্ষ বড় বড় মহারথী সাতাশটি মাসিক ও সাপ্তহিক পত্র। চারিদিকে ‘এাহি এাহি রব উঠিয়াছিল।’ সজনীকান্ত দাস ব্যঙ্গ বিদ্রƒপ বিশারদ ছিলেন একথার প্রমাণ মেলে ‘শনিবারের চিঠি’র এককালের সম্পাদক নীরোদচন্দ্র চৌধুরীর স্মৃতিকথা থেকে। সজনীকান্তবাবুই তাহাদের বেশি আক্রমণ করিতেন, কিন্তু তাহারা সজনীবাবুকে গালি দিতে ভরসা পাইত না, কারণ তাহাদের এ রকম পাকা খিস্তি আয়ত্তে ছিল না যে সেই অর্বাচীন বালকদের মধ্যেও ছিল না যে তাহার সঙ্গে খেউড়ে টেক্কা দেয়। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায় যে নীরোধচন্দ্র চেীধুরীকে ‘শনিবারের চিঠি’র সম্পাদকের দায়িত্ব ছেড়ে দিতি হয়েছিল সজনীকান্ত রচিত রম্য কথা নকুড় ঠাকুরের আশ্রম স্থগিত করার বিষয়ে তাঁর নির্দেশ পালিত হয়নি, সেই বিরোধে। মজার কথা সজনীকান্ত অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন লেখকের লেখার উপর বিদ্রƒপাত্মক লেখা লিখে খিস্তি করলেও একশ্রেণির পাঠকের কাছে তার ওই ধরনের লেখাগুলো জনপ্রিয় ছিল।

প্রখ্যাত নিবন্ধকার ও গবেষক প্রভাতকুমার দাস এ প্রসঙ্গে বলেন, যারা গাল খেতেন তারা যেমন জুলতেন, যাঁরা খাননি তারা নিজেদের মনে করতেন দুর্ভাগা। প্রসঙ্গক্রমে প্রভাতকুমার দাস শনিবারের চিঠি পৃষ্ঠায় লাঞ্ছিত একজন আধুনিক কবি সমর সেনের উক্তি ‘সাহিত্যের শস্ত্র  ও সজনীকান্ত’ নিবন্ধে তুলে ধরেনে। কবি সমর সেন বলেন, আধুনিকদের শ্রাদ্ধ করতো বলে ‘শনিবারের চিঠি’ সবাই পড়তাম। এর একটি সংখ্যা পেলে এখনো পড়ি, মেঘনাদবধ কাব্যের প্রথম কয়েকটি লাইন বিভিন্ন আধুনিক কবিরা কীভাবে লিখবেন তার প্যারোডি।

কবি সমর সেনের প্রসঙ্গ যখন এলো তখন তাঁর একটি কবিতার ব্যঙ্গোক্তি ‘শনিবারের চিঠিতে কীভাবে প্রকাশিত হয়েছিল দেখা যেতে পারে। মাঝের হাট ব্রিজের উপর (ব্রিজটা বেহলার পথে) ‘শুনি লম্পটের গুষ্ঠির  পদধ্বনি। সজনীকান্তের খিস্তি খেউড় জাতীয় প্যারোডির জন্য অনেক লেখক তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মোকদ্দমার কথাও ভেবেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের একান্ত সচিব কবি অমিয় চক্রবর্তীর লাঞ্ছনার কথা শুনে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ নাকি সজনীন্তের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেকালের রস ¯্রষ্টা লেখক দাদা ঠাকুর শরৎচন্দ্র পÐিত সজনীকান্তকে রসিকতা করে নিপাতনে সিদ্ধ নামে অভিহিত করেছিলেন বিখ্যাত লেখকরা তার কলমের খোঁচায় নাস্তানাবুদ হওয়ার পর।      

সজনীকান্ত ও মোহিতলাল মজুমদার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার বিষয়টা বড়ই কৌতুকপ্রদ। কবি নজরুল ইসলামের সঙ্গে বিরোধের কারণে মোহিতলাল ‘শনিবারের চিঠি’র দলে ভিড়ে সজনীকান্ত প্রেরণাদাতা হিসাবে অবতীর্ণ হন। কিন্তু মজার ব্যাপার এই মোহিতলাল মজুমদার সজনীকান্তের প্রতি বিরূপ হয়ে উঠেন। আমৃত্যু পর্যন্ত তিনি ক্ষমা করতে পারেনি তার প্রাণাধিক প্রিয় সজনীকে। অপর পক্ষে সজনীকান্ত বাংলা সাহিত্য বিশিষ্ট পÐিত ব্যক্তি ড.দীনেশচন্দ্রকে ‘শনিবারের চিঠি’ ‘দীনেশ নামা’ প্রকাশ করে নানাভাবে লাঞ্ছিত করলেও সজনীকান্তের এই স্বীকারোক্তি থেকে অনুশোচনা ব্যক্ত হয়েছিল পরে তা বোঝা যায়। যৌবনের উদ্ধত চাপল্যে একদিন ‘শনিবারের চিঠি’তে ‘দীনেশ নামা’ লিখিয়াছিলাম উদার হৃদয় দীনেশচন্দ্র শেষ বয়সে আন্তরিক আর্শীবাদও করিয়াছিলেন। দুঃখের বিষয়, তাঁহার জীবিতকালে আমার অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করিতে পারি নাই, আজ করিলাম। সজনীকান্ত তাঁর লেখা ‘বাংলা গদ্য সাহিত্যের ইতিহাস’ গ্রন্থটি দীনেশচন্দ্র সেনকে উৎসর্গ করেন। কল্লোল, কালি কলম, প্রগতি প্রভৃতি পত্রিকার নতুন ধারার ‘শনিবারের চিঠি’র যত অভিযোগ থাকুক না কেন, সজনীকান্ত যতই নিন্দায় পারঙ্গম হিসাবে খ্যাত কিংবা অখ্যাত হোক না কেন বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধির মূলে ‘শনিবারের চিঠি’র অবদানের কথা কোনোক্রমেই অস্বীকার করা যায় না। এক পর্যায়ে বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখক-লেখিকাদের স্মরণীয় লেখা ‘শনিবারের চিঠি’র পাতায় ছাপা হয়েছিল। সজনীকান্তের চরিত্রের ব্যঙ্গ নিপুণ প্যারোডি পারঙ্গমতার পরিচয় বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে বড় করে দেখা দিলেও  বাস্তবে একান্ত তিনি ‘শুধুমাত্র ব্যঙ্গ বিদ্রƒপ বিশারদই ছিলেন না। তাঁর মধ্যে নিষ্ঠাবান গবেষক, সৃজনশীল সৃষ্টি কর্মের সুনিপুণ সাহিত্যিকের গুণাবলীও বর্তমান ছিল। তাঁর চরিত্রের মন মানসিকতায় পরিহাস প্রিয়তার দিকটি বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে বড় করে পরিস্ফুট হয়ে উঠার কারণে তাঁর চরিত্রের ইতিবাচক গুণাবলী পর্দার অন্তরালেই থেকে যায়। এইটি তাঁর জন্যে বড় ধরনের একটা ট্রাজেডি। সাহিত্য বিষয়ে সজনীকান্তের গবেষণা, অনুসন্ধিৎসা, নিষ্ঠা ও দক্ষতা জলন্ত প্রমাণ হিসাবে তাঁর রচিত দু’টি আকর গ্রন্থের কথা উল্লেখ করলে বোঝা যাবে তিনি বাংলা সাহিত্যে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবার মতো কী কাজ করে গেছেন। তাঁর নিরলস গবেষণালব্ধ গ্রন্থ দুটোর নাম (১) রবীন্দ্রনাথ : জীবন ও সাহিত্য (২) বাংলা গদ্য সাহিত্যের ইতিহাস। প্রথম গ্রন্থ রবীন্দ্রজন্ম শতবর্ষ উৎসবের প্রাক্কালে প্রকাশিত হয়। তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ বাংলা গদ্য সাহিত্যের ইতিহাস প্রথম যুগ ও দ্বিতীয় যুগ এই দুটি পর্যায়ে বিভক্ত। এই গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যের অমূল্য দলিল হিসেবে চিহ্নিত।  প্রখ্যাত গবেষক সুশীল কুমার দে বাংলা গদ্য সাহিত্যের ইতিহাস গ্রন্থ ভূমিকায় লিখেছেন, সজনীকান্ত তথ্য নিষ্ঠার সহিত বাংলা গদ্যের এই মগ্ন ভিত্তিমূলের যতদূর সম্ভব নিখুঁত ও নিরপেক্ষ বিবরণ দিয়েছেন। তাঁহার রস পিপাসা কোথাও তত্ত¡ জিজ্ঞাসাকে ক্ষুণœ করে নাই। সজনীকান্ত তাঁর জীবনের কথা লেখেন আত্মস্মৃতি গ্রন্থে অকপটে জীবন সত্যের কথাগুলো তুলে ধরেছেন তাঁর স্মৃতিচারণামূলক গ্রন্থ আত্মস্ম¥ৃতিতে। তাঁর জীবন বৈচিত্রময়। শনিবারের চিঠি তে উদ্ভট কামস্কাটকীয় ছন্দচর্চার দ¦ারা ব্যঙ্গ বিদ্রƒপাত্মক লেখক হিসাবে নিজে জাহির না করলে হয়তো তিনি অন্য ধারার সাহিত্যিক হতে পারতেন। তাঁর জীবনের প্রথম পূর্বে তিনি জীবনময় রায়ের সহযোগিতায় কলকাতার কর্নওয়ালিশ স্ট্রিটে সদ্য স্থাপিত বিশ্ব ভারতীয় অফিস ও লাইব্রেরির চারতলায় একটা ক্ষুদ্র রুমে থাকবার সুযোগ পান। ওখান থেকেই তিনি রবীন্দ্র সাহিত্য ও ব্যক্তিগতভাবে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ ঘটে। কিন্তু বিধি বাম! বিশ্বভারতীয় সে সময়ের প্রধান ব্যক্তি প্রখ্যাত পরিসংখ্যানবিদ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ তাঁকে স্থায়ী ভাবে রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে গবেষণায় আত্মনিয়োগের অনুরোধ জানালেও তিনি সেদিকে যাননি। প্রশান্ত মহলানবিশের আহŸানে কেন সাড়া দেননি তার অন্তনির্হিত দিকের আভাস পাওয়া যায় সজনীকান্তের ‘আত্মস্মৃতি’ গ্রন্থের পাতা থেকে। সৌভাগক্রমে কাব্য সরস্বতী জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আমার স্কন্ধে ভর করিয়াছেন, ছন্দের বন্ধনে অগোচর ও অধরা ক্ষণে ক্ষণে বাধা পড়িয়াছেন-মহাজীবন জলতরঙ্গে আমার নগণ্য জীবনও ঢেউয়ের শীর্ষে উঠিয়া উদ্ভাসিত হইয়াছে। ...(মহাজীবন জলটি ব্যাণিয়া ঢেউয়ের উপর ঢেউ, তরঙ্গের উপর তরঙ্গ, কোনটি উত্তাল হইয়া গগন স্পর্শ করিবার স্পর্ধা করিতেছে, কোনটি নীরবে নিভৃতে ভালো করিয়া মাথা তুলিবার পূর্বেই ভাঙিয়া গুঁড়া হইয়া যাইতেছে, রায় ব্যাঘাতে উচ্ছিত কেন পুঞ্জে কোনটি আত্মহারা কোনটি মুহুর্মুহু বীচিভঙ্গে বর্ণাঢ্যে প্রতিবিম্বমালায় সমুজ্জ্বল । 

সজনীকান্তের স্মৃতিচারণার কথাগুলোর রেশ ধরে বলা যায় বিশ শতকের বিশ দশকে প্রাককাল থেকে পরবর্তী তিরিশ বছর সজনীকান্তের সাহিত্য মহাজীবন জলধি সত্যি সত্যিই বিক্ষুব্ধ। সজনীকান্তের সাহিত্য সাধনার মূলে ছিল কবিতার প্রতি অনুরাগ। পরিহাস, রঙ্গরসিকতা থেকে রোমান্টিক রসসিক্ত রচনা তিনি যাই লিখেছিলেন তারই মধ্যে ছিল কাব্যময়তা। তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন কবিতার ছন্দে তাঁর অন্তর্লোকের অভিব্যক্তিকে প্রকাশ করতে। শনিবারের চিঠি বিরহ সংখ্যা আষাঢ় ১৩৩৩ এ প্রকাশিত তাঁর বিবাহের তিন বছর পর স্ত্রীকে লেখা সকাব্য প্রণয় পত্রে সজনীকান্তের কবিমনের উন্মন অবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়। প্রথমে গ্রদ্য লেখা চিঠির শেষে কবিতাংশে স্ত্রী বিরহী স্বামীর হাহাকার ধ্বনিত হতে দেখা যায়। এখানে কিছুটা উদ্ধৃতি করলে বিসদৃশ হবে না বলে আশা করি : ‘বাদল বাতাসে তোমারে ভাবিয়া প্রিয়া/ খনে খনে মোর ঘটিছে মনের ভুল/ বিজলী চমক চমকিয়া যায় মেঘে/ ঘন গর্জন শূন্য শিহরি উঠে/ আমি ভাবি হায় ত্রাসে  কেঁপে ওঠে প্রিয়া/ লতাইবে কার অধীর বক্ষপুটে বিরহ দিবসে ভরম রজনী যব/ এমনি করিয়া কাটিবে কি হাহাকারে শতেক যুগের বিরহীকুলের ব্যথা/  ঘিরিছে আমার নিশীত অন্ধকারে-/ জলে পড়ে জল, করে ছল ছল আঁখি / দূর খেয়াঘাটে দৃষ্টি চলে নারে-/ মিলন যুজিয়া বিরহের ব্যাথা মনে/ বরষা নিশীথে জাগিতেছে ধারে ধারে। সজনীকান্ত কিশোর বয়স থেকে বাংলা উপন্যাসে, ভ্রমণকাহিনি, কবিতা এবং সাময়িক পত্রপত্রিকা কত যে পড়েছিলেন তার হিসাব নিকাশ ছিল না। দিনাজপুরে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুলের হাতে লেখা পত্রিকায় তার প্রথম ‘স্বপ্নভঙ্গ’ নামে একটি রম্যগল্প বের হয়। বাংলা সাহিত্যেও গবেষকদের মতে, তার জীবনের স্মৃতি চারণামূলক গ্রন্থ ‘আত্মস্মৃতি’র পাতায় উদ্ধৃত করে ছিলেন অসংখ্য স্বরচিত কবিতার অংশ নানা প্রসঙ্গের অবতারণা উপলক্ষে। সজনীকান্তের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ আত্মজৈবিক উপন্যাস ‘অজয়’। উপন্যাসের নায়ক বয়ঃসন্ধি কাল থেকে মনে যে গোপন জিজ্ঞাসা লালন করেছে, কবিতা। সাদা পাতায় কালো অক্ষর একটির পর একটিকে গাথিয়া যায় অদৃশ্য জগতের ইতিহাস রচনা করে। এগুলো সজনীকান্তের একান্ত নিজেরই কথা। লেখক সজনীকান্ত ও সম্পাদক সজনীকান্তের মধ্যে একই সত্তার প্রকাশ সব ক্ষেত্রে ঘটেছে একথা বলা কষ্টকর। তিনি শুধুমাত্র ‘শনিবারের চিঠি’র সম্পাদক ছিলেন না। তিনি বিভিন্ন সময়ে বনশ্রী, চিত্রলেখা, বিজলী, যুগবাণী, নতুন পত্রিকা, অলকা, যুগান্তর, আনন্দবাজার পত্রিকা, শারদীয়া  এবং সাহিত্য পরিষদ পত্রিকার সম্পাদনার কাজে ব্রতী ছিলেন। শনিবারের চিঠির সম্পাদক ও বঙ্গশ্রী পত্রিকার সম্পাদক একই সজনীকান্ত হলেও উভয় ক্ষেত্রেই একই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন তাঁর মধ্যে ছিল না গবেষকদের মতে বঙ্গশ্রী সম্পাদনাকে সজনীকান্তের স্বরূপ ভিন্ন। সজনীকান্ত দাসই বিশিষ্ট অধ্যাপক সুকুমার সেনকে উৎসাহিত করেন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লিখতে। নিঃসন্দেহে সজনীকান্তের এটা একটা বড় কাজ। শনিবারের চিঠিতে বিভিন্ন লেখকদের উদ্দেশ্যে খিস্তিখেউড় জাতীয় পরিহাসেই যে তিনি শুধুমাত্র পারঙ্গম ছিলেন। সাহিত্যের অন্য ক্ষেত্রে পারঙ্গমতা ছিল না একথা বিশ শতকের কোনো গোষ্ঠীর সাহিত্যিকদের বলার যুক্তি সঙ্গত কারণ ছিল না, আজও নেই। সজনীকান্তের শক্তিধর লেখনী ও ব্যক্তিত্বের কথা অকপটে তুলে ধরেছেন সে যুগের প্রখ্যাত সাহিত্যিকদের মধ্যে অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, তারাশঙ্কর বন্দ্যেপাধ্যায়, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা সুখ্যাত সুরেশচন্দ্র সমাজপতির যোগ্য উওরাধিকার হিসেবে সজনীকান্ত সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ এবং সাহিত্য পরিষদ পত্রিকাকে একটা নতুন ধারার স্রোতে চালিত করার অসীম সাহস, মেধা মননের জন্য সজনীকান্ত ধন্যবাদ দেই। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের মতে, সজনীকান্তের আয়ত্তে তথ্যভাÐের সঙ্গে সুধাপাত্রও ছিল বলে কল্লোল বৈরীতায় বিরোধীদের মধ্যে থেকে একে একে সবাই দলে টেনে নিতে পেরেছিলেন। কালের ব্যবধানে প্রেমেন্দ্র তাঁর বন্ধু হয়েছিলেন। ক্রমে শৈলজানন্দ, নজরুল ইসলামের সঙ্গেও তার সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। প্রেমেন্দ্র মিত্রের স্মৃতিচারণা থেকে সজনীকান্তের চরিত্রের পরিচয় মেলে। প্রেমেন্দ্র মিত্র বলেন, সমালোচক সজনী আর বন্ধু সজনী যেন দুই আলাদা মানুষ। তাঁর বন্ধুত্বে ভেজাল ছিল না। শনিবারের চিঠির সজনীকান্তকে ভালোভাবে বোঝার জন্য আবারো ফিরে যেতে হয় অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের কথায়, ‘আসলে সজনীকান্ত তো কল্লোলেরই লোক, ভুল করে অন্য পাড়ায় ঘর নিয়েছে। এই রোয়াকে না বসে বসেছে অন্য রোয়াকে।’ এক পর্যায়ে বাংলা সাহিত্যাঙ্গনের প্রধান মুখপাত্র কল্লোলে কালিকলম, নতুনধারার সাহিত্যেকে বেআব্রæ ও অশ্লীল বলে অভিযুক্ত করে শনিবারের চিঠি প্রধান পুরোটা সজনীকান্ত দাস যে যুদ্ধংদেহী মনোভাবের প্রকাশ ঘাটয়েছিলেন তা এক পার্যায়ে এসে স্থিমিত হয়ে যায়। শনিবারের চিঠির পাতায় তারাশঙ্কর, বনফুল, গোপাল হালদার, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রমথনাথ বিশী, জগদীশ ভট্টাচার্য প্রমুখ। সজনীকান্তের আমন্ত্রণেই লেখা দেন এবং সজনীকান্ত নিজ উদ্যোগে তা প্রকাশ করেন। অতি আধুনিক ধারার সাহিত্যিকদের প্রতি সজনীকান্তের ক্রোধ প্রশমিত হলেও বিশ শতকের তিরিশ দশকে প্রকাশিত পরিচয় ও কবিতা এই দু’টো পত্রিকার প্রতি তরি মনোভাব ভালো ছিল না। প্রগতি পত্রিকার প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশকে আক্রমণ করার ধরন পরিচয় ও  কবিতা কাল পঠে আরো তীব্র হয়েছিল। এখানে মজার একটা কথা হচ্ছে তিনি জীবনানন্দের কবিতার কঠোর সমালোচক হলেও তিনি কিন্তু জীবনানন্দের কবিতার অনুরাগী পাঠক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সজনীকান্ত জীবনানন্দের অকাল প্রয়াণের পর জীবনানন্দের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে ‘শনিবারের চিঠি’তে লিখেছিলেন, কবি জীবনানন্দের কাব্যের প্রতি আমরা যৌবনে যথেষ্ট বিরূপতা দেখাইয়াছি, তাহার দুর্বোধ্যতাকে ব্যঙ্গ করিয়া বহু পঙ্ক্তি উদ্ধৃত করিয়া তাহাকে হাস্যষ্পদ করিবার চেষ্টা করিতেও ছাড়ি নাই। তিনি ‘কল্লোল, ‘প্রগতি’ গোষ্ঠীর লেখক ছিলেন, সুতরাং তাহলে বিপথ দলে কেলিয়া লড়াইয়ের ধর্ম অনুযায়ী আক্রমণেই আমাদের আনন্দ ছিল। অশ্লীল ও বেআব্রæ গল্প ছাপার অভিযোগে খাঁড়া করে কল্লোলকে অভিযুক্ত করলেও শনিবারের চিঠিতেও ওই ধরনের গল্প কিন্তু সজনীকান্ত ছাপিয়েছেন অবলীলাক্রমে। আধুনিক ও অতি আধুনিক ধারার কল্লোল, কালি কলম, প্রগতি, পরিচয় ইত্যাদি পত্রিকার যে সব কবি ও সাহিত্যিকদের লেখার ওপর সজনীকান্ত তীব্র ব্যঙ্গ বিদ্রƒপ করেছিলেন তাদের সাহিত্যকর্ম পরবর্তীকাল বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন লাভ করতে সমর্থ হয়। সজনীকান্তের তীব্র সমালোচনায় ‘শনিবারের চিঠি’র বিপরীত ধারায় প্রগতিবাদী লেখকেরা তাঁদের সৃষ্টি কর্মে বেশি বেশি উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে শনিবারের চিঠিতে সজনীকান্তের সাহিত্য সমালোচনা তা যতই ব্যঙ্গ বিদ্রƒপের ভাষায় হোক না কেন তাঁকে কোন ক্রমেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। সজনীকান্ত সাহিত্যিক হিসাবে কোন অংশেই ছোট নয় তার প্রমাণ তাঁর অন্যান্য সাহিত্য সৃষ্টির মধ্যে নিহিত আছে। উপন্যাস তেমন লেখেননি। তিনি শতাধিক গল্প লিখেছেন। তাঁর লেখা গল্পগ্রন্থেও মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘স্বনির্বাচিত গল্প’, ‘কলিকাল’, ‘আকাশ-বাসর’। ‘মধু ও গুল’ ব্যঙ্গ রসাত্মক গল্প ও নিবন্ধের গ্রন্থ। ‘বঙ্গরণভূমে’, ‘মনোদর্পণ’, অঙ্গুষ্ঠ’ প্রভৃতি ব্যঙ্গ কবিতার রচয়িতা সজনীকান্ত দাস। অন্যদিকে ‘রাজহংস’, ‘আলোর আঁধারী’, ‘পঁচিশে বৈশাখ’ আর মানস সরোবর’ তাঁর অন্যধারার কবিতা। গীতি কবিতা রচনাতেও সজনীকান্ত সিদ্ধ হস্ত ছিলেন তার জলন্ত স্বাক্ষর ‘মুক্তি’ ছায়াচিত্রের তাঁর লেখা ‘ওগো সুন্দর’ মনের গহনে তোমার মুরতি খানি, মেজদিদি ছায়াছবির ‘প্রণাম তোমার ঘনশ্যাম’ কিংবা ‘কুচবরণ রাজকন্যা’ গানগুলো পুরানো দিনের দর্শকদের কাছে আজও অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। পরিশেষে নিঃসন্দেহে একথা বলা চলে সজনীকান্ত দাস বাংলা সাহিত্য জগতে উজ্জ্বল মহিমায় সুপ্রতিষ্ঠিত একজন সফল সম্পাদক, সুলেখক ও যোগ্য সাহিত্য সমালোচক।

=======∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆========


তসলিমা নাসরিন। 


তসলিমা নাসরিন, বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে উদীয়মান কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। নব্বই শতকের দিকে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন তাঁর মুক্তচিন্তক, ধর্মীয় সমালোচনা এবং লিঙ্গ সমতায় বিভিন্ন ভাষণ ও লেখার মাধ্যমে। ধর্মবিরোধী উগ্র লেখার জন্য তিনি মৌলবাদীদের রোষানলে পড়ে ১৯৯৪ সালে দেশ ত্যাগে বাধ্য হন। নারীবাদী লেখক তাসলিমা নাসরিন ২৫ আগস্ট ১৯৬২ সালে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন ২০২০.

তসলিমা নাসরিনের বিতর্কিত কবিতা সমূহ

নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন, সময়ের পালাবদলে জন্ম দিয়েছেন অসংখ্য আলোচিত এবং বিতর্কিত কবিতার। সে জন্য তিনি হয়েছেন নিষিদ্ধ এবং দেশছাড়া। সেই সাথে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি। তাঁর অতি বিতর্কিত কবিতাগুলো প্রকাশ করা সম্ভব না হলেও প্রকাশিত আলোচিত কবিতাগুলো উপস্থাপন করা হলো। 

বড় ভয়ে গোপনে গোপনে বাঁচি – তসলিমা নাসরিন 

“মানুষের চরিত্রই এমন
বসলে বলবে না, বসো না
দাঁড়ালে, কি ব্যাপার হাঁটো
আর হাঁটলে, ছি: বসো।
শুয়ে পড়লে ও তাড়া – নাও উঠো,
না শুলে ও স্বষ্তি নেই, একটু তো শুবে !
ওঠ বস করে করে নষ্ঠ হচ্ছে দিন
এখনো মরতে গেলে বলে ওঠে – বাঁচো
না জানি কখন ও বাঁচতে দেখলে বলে উঠবে – ছি: মরো
বড় ভয়ে গোপনে গোপনে বাঁচি।”

দ্বিখন্ডিত – তসলিমা নাসরিন

সে তোমার বাবা, আসলে সে তোমার কেউ নয়
সে তোমার ভাই, আসলে সে তোমার কেউ নয়
সে তোমার বোন, আসলে সে তোমার কেউ নয়
সে তোমার মা, আসলে সে তোমার কেউ নয় ।
তুমি একা।

যে তোমাকে বন্ধু বলে, সেও তোমার কেউ নয় ।
তুমি একা।
তুমি যখন কাঁদো, তোমার আঙুল
তোমার চোখের জল মুছে দেয়,
সেই আঙুলই তোমার আত্মীয়।
তুমি যখন হাঁটো, তোমার পা
তুমি যখন কথা বলো, তোমার জিভ
তুমি যখন হাসো, তোমার আনন্দিত চোখই তোমার বন্ধু।
তুমি ছাড়া তোমার কেউ নেই
কোন প্রানী বা উদ্ভিদ নেই।
তবু এত যে বলো তুমি তোমার,
তুমিও কি আসলে তোমার ?

হাত – তসলিমা নাসরিন 

আবার আমি তোমার হাতে রাখবো বলে হাত
গুছিয়ে নিয়ে জীবনখানি উজান ডিঙি বেয়ে
এসেছি সেই উঠোনটিতে গভীর করে রাত
দেখছ না কি চাঁদের নীচে দাঁড়িয়ে কাঁদি দুঃখবতী মেয়ে !
আঙুলগুলো কাঁপছে দেখ, হাত বাড়াবে কখন ?
কুয়াশা ভিজে শরীরখানা পাথর হয়ে গেলে ?
হাত ছাড়িয়ে নিয়েছিলাম বর্ষা ছিল তখন,
তখন তুমি ছিঁড়ে খেতে আস্ত কোনও নারী নাগাল পেলে।
শীতের ভারে ন্যুব্জ বাহু স্পর্শ করে দেখি
ভালবাসার মন মরেছে, শরীর জবুথবু,
যেদিকে যাই, সেদিকে এত ভীষণ লাগে মেকি।
এখনও তুমি তেমন আছ। বয়স গেল, বছর গেল, তবু।
নিজের কাঁধে নিজের হাত নিজেই রেখে বলি :
এসেছিলাম পাশের বাড়ি, এবার তবে চলি।

যদি মানুষ হয়ে না পারি, পাখি হয়েও ফিরব একদিন – তসলিমা নাসরিন

আমার জন্য অপেক্ষা করো মধুপুর নেত্রকোনা
অপেক্ষা করো জয়দেবপুরের চৌরাস্তা
আমি ফিরব। ফিরব ভিড়ে হট্টগোল, খরায় বন্যায়
অপেক্ষা করো চৌচালা ঘর, উঠোন, লেবুতলা, গোল্লাছুটের মাঠ
আমি ফিরব। পূর্ণিমায় গান গাইতে, দোলনায় দুলতে, ছিপ ফেলতে বাঁশবনের পুকুরে-
অপেক্ষা করো আফজাল হোসেন, খায়রুননেসা, অপেক্ষা করো ঈদুল আরা,
আমি ফিরব। ফিরব ভালবাসতে, হাসতে, জীবনের সুতোয় আবার স্বপ্ন গাঁথতে-
অপেক্ষা করো মতিঝিল, শান্তিনগর, অপেক্ষা করো ফেব্রুয়ারি বইমেলা আমি ফিরব।
মেঘ উড়ে যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, তাকে কফোটা জল দিয়ে দিচ্ছি চোখের,
যেন গোলপুকুর পাড়ের বাড়ির টিনের চালে বৃষ্টি হয়ে ঝরে।
শীতের পাখিরা যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, ওরা একটি করে পালক ফেলে আসবে
শাপলা পুকুরে, শীতলক্ষায়, বঙ্গোপসাগরে।
ব্রহ্মপুত্র শোনো, আমি ফিরব।
শোনো শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, সীতাকুণ্ড- পাহাড়-আমি ফিরব।
যদি মানুষ হয়ে না পারি, পাখি হয়েও ফিরব একদিন।

আমার সময় – তসলিমা নাসরিন

সময় এভাবেই হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে থাকবে আরো কয়েক বছর
সময় ঠিক এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে ঠাঁয়
মুখ-মাথা ঢেকে, চোখ বুজে, পাথর চোখগুলো।
ধীরে ধীরে স্তব্ধতার গা ঘেসে দাঁড়াবে নৈঃশব্দ,
দৈর্ঘৈ আকাশ ছোবে, প্রস্থে দিগন্ত,
সময়ের সন্তান তারা; নিরাকার নির্বিকার উত্তরাধিকার।
কখনো আমার নিভৃত নিঃশ্বাসে বাসা বাঁধে পরাশ্রয়ী সময়,
কখনো তার ঠাণ্ডা কাঁধ থেকে কবন্ধের মতো হামাগুড়ি দিতে দিতে
তার জানুতে এসে ঝুলে থাকি একা, একা একা ব্রহ্মাণ্ডের সাত পাক
দেখে বিস্মিত হতে হতে ইচ্ছে করে আরও বেচেঁ থাকি,
আরও দীর্ঘ দীর্ঘ দিন। জন্ম থেকে শুরু করি জীবন, অথবা মৃত্যুর গায়ে ধাক্কা খেয়ে পিছু হঠতে হঠতে নতুন কোনো জন্মে গিয়ে ঠেকি।
কে আমাকে বাঁচতে দেবে আর!
সূক্ষ্ম সব সুতোয় কে জানে কোন ভোরে
নিজের সন্তান ভেবে, চোখের আড়াল হলে চোখের-জল ফেলা আত্মীয় ভেবে, বেঁধেছে, আমাকে আমার সময়।
কে যে দিয়েছিলো, কার হাতে কবে দিয়েছিলো আমার জন্ম মৃত্যু!
সময় সময় করে, আর কার কাছে, সময়ের কাছেই দিনভর দৌড়োই
আলোয় মেলে,ভালোবাসে তাকে জীবন্ত করে দেখি চোখ থেকে পাথর খসে যায়,
শরীর থেকে শুধু তার দুটো মুহূর্ত খসে না।
চোখে সে আবার দ্রুত পরে নেয় কুড়িয়ে পাওয়া কালো কাপড়।
উলঙ্গ রাত্তির জুড়ে নৈঃশব্দের হাওয়ায় সাঁতার কাটে বিষাদ,
দিনগুলো মুঠোয় নিয়ে স্তব্ধতা আমার চত্তরে চরকির মতো ঘোরে,
সময় দাঁড়িয়ে থাকে, কোনো কথা নেই। সময় দাঁড়িয়ে থাকে, কষ্ট নেই,
কাঁপন নেই। সময় দাঁড়িয়ে থাকে, পিছুটান নেই।
ঈশ্বরের মতো চলৎশক্তিহীন। সময়।
আমার সময়।
আমি তাকে ভালোবেসে,ঘৃণা করে, তাকে সসম্মানে, গোপনে,
তাকে হৃৎপিণ্ডে, রক্তচলাচলে বহন করি, বাঁচাই।
আমার সময়। আমার আততায়ী, আমি জন্মে তাকে জন্ম দিই।

টোপ – তসলিমা নাসরিন

যেরকম ছিলে, সেরকমই তুমি আছ
কেবল আমাকে মাঝপথে ডুবিয়েছ
স্বপ্নের জলে উলটো ভাসান এত
আমি ছাড়া আর ভাগ্যে জুটেছে কার!

আগাগোড়া তুমি অবিকল সেই তুমি

বড়শিতে শুধু গেঁথেছ দু’চার খেলা
অলস বিকেল খেলে খেলে পার হলে
রাত্তিরে ভাল নিদ্রাযাপন হয়।

তুমি তো কেবলই নিদ্রার সুখ চেনো
একশো একর জমি নিজস্ব রেখে
এক কাঠা খোঁজো বর্গার তাড়নায়
বর্গার চাষ পৃথক স্বাদের কিনা!

স্বাদ ভিন্নতা পুরুষ মাত্র চায়
তুমি তো পুরুষই, অধিক কিছু নও।
পুরুষেরা ভাল চোখ খেতে জানে চোখ
আমার আবার কাজলের শখ নেই।

বড়শিতে গাঁথা হৃদপিন্ডের আঁশ
ছিঁড়ে খেতে চাও, তুমি তো পুরুষই খাবে।
সাঁতার জানি না, মধ্যনদীতে ডুবি
অন্ধকে টোপ দেবার মানুষ নেই।

আবৃত্তির জন্য তসলিমা নাসরিনের ‘টোপ’ কবিতার ছবি ডাউনলোড বা সেইভ করে নিতে পারেন।

চরিত্র – তসলিমা নাসরিন (আলোচিত কবিতা)

তুমি মেয়ে,
তুমি খুব ভাল করে মনে রেখো
তুমি যখন ঘরের চৌকাঠ ডিঙোবে
লোকে তোমাকে আড়চোখে দেখবে।
তুমি যখন গলি ধরে হাঁটতে থাকবে
লোকে তোমার পিছু নেবে, শিস দেবে।
তুমি যখন গলি পেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠবে
লোকে তোমাকে চরিত্রহীন বলে গাল দেবে।
যদি তুমি অপদার্থ হও
তুমি পিছু ফিরবে
আর তা না হলে
যেভাবে যাচ্ছ, যাবে।

তসলিমা নাসরিনের কবিতার জীবন শুরু সেই তের বছর বয়স থেকে। ১৯৮৬ সালে শিকড়ে বিপুল ক্ষুধা নামক কাব্যগ্রন্থ বের হয়। এর পর একে একে বেশ কিছু কাব্যগ্রন্থ ও উপন্যাস উপহার দেন। ১৯৯৩ সালে লজ্জা উপন্যাসের জন্য তিনি সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও নির্যাতিত হন। তাঁর লেখায় বিতর্ক বাদ দিলে তিনি অনবদ্য এক লেখক।


No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...