আশুতোষ মুখোপাধ্যায়(লেখক)
- আশুতোষ মুখোপাধ্যায় একজন লেখক,ঔপনাসিক ছিলেন।
- জন্মদিন- ৭ই সেপ্টেম্বর ১৯২০ সাল।
- জন্মস্হান- বজ্রযোগীনি, ঢাকা,বাংলাদেশ।
- পিতার নাম- পরেশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়।.
- মায়ের নাম-তরুবলা দেবী।
- তাঁর ভাই ও বোন- তাঁর ৯ ভাই ও বোন। পিতা মাতার ১০ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম।
- শিক্ষা-আশুোতোষ মুখোপাধ্যায় হুগলী মহসিন কলেজ থেকে স্নাতক হয়েছিলেন।
- তাঁর জীবিকা- ১৯৬৫ সালে তিনি বিখ্যাত যুগান্তর কাগজে যোগদান করেন। পরবর্তী কালে তিনি এই খবরের কাগজের রবিবাসরীয় স্পেশাল বিভাগের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন।
- তার সারা জীবনের সৃষ্ঠি- সারা জীবনে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের ১০০ টি উপন্যাস ও ছোটো গল্প সংকলন ছাপিয়ে বের হয়।
- তাঁর প্রথম গল্প- তাঁর প্রথম গল্প নার্স মিত্র। যা থেকে পরবর্তী কালে সিনেমা তৈরী হয় দীপ জ্বেলে যাই।।
- তাঁর প্রথম উপন্যাস- তাঁর প্রথম উপন্যাস স্বাহা। তাঁর প্রথম ছাপা আকারে প্রকাশিত উপন্যাস-কালচক্র।
- ভাষা-বাংলা।
- তাঁর লেখনী বিষয়- তাঁর সৃষ্ঠ উপন্যাস ও ছোটো গল্প মানুষের মধ্যেকার সম্পর্ক ও ভালবাসার কথা লেখা আছে। বিশেষ করে তিনি তাঁর অধিকাংশ উপন্যাসে নারী চরিত্রকে একটি শক্তিশালী বুনেটের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
- পুরষ্কার ও সম্মান-তাঁর নাম একবার সেরা গল্পকার হিসেবে ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ডের জন্য বিবেচিত হয়েছিল।
- মৃত্যু-১৯৮৯ সালের ৪ই মে। .
তাঁর কিছু বিখ্যাত উপন্যাস
- চরাচর
- বলাকার মন
- সাত পাঁকে বাধা
- পঞ্চতপা
- বাজিকর
- বকুল বাসার
- মানুষের দরবারে
- সে অজান খোঁজে
- পায়ে পায়ে প্রতিধ্বনী
- লীলাবতি
- নগরপারে রূপনগর
- কাল তুমি আলেয়া
- যাবার বদলে
- শতরূপে দেখা
- নগরপারে রূপনগর
- সোনার হরিন নেই
- একাল ওকাল
- তিন পুরুষ
- এক রমণীর যুদ্ধ
- আমি সে ও সখা
- যার যেথা ঘর
- দিনকাল
- চেনা মুখের মিছিল
- পরকপালে রাজা রানী
- সূর্যস্নান
- মিন ও রাখি
- রক্ত আগুন প্রেম
- সবুজ তোরণ ছাড়িয়ে
- আলোর ঠিকানা
- প্রণয় পাশা
- হঠাৎ সেদিন
- হিসাব মেলাতে
- আজ এক সাঁজে
- আশ্রয়
- তবু কোকিল ডাকে
- মালবি মালঞ্চ
কিছু ছোটো গল্প সংকলন
- নব নায়িকা
- মহুয়া কথা
- সাঁজের মল্লিকা
- বিদেশিণী
- রাত্রির ডাক,
- জানলার ধারে
- প্রতিহরিণী
- কুমারী মাতা,
- মনমধুচন্দ্রিকা
- প্রতিবিম্ব
- রোশনাই
- পিকপয়েন্ট
- উত্তর বসন্তে
- মুখোমুখি
- দুজনার ঘর
- ফেরাই অতীত
- চলো জঙ্গলে যাই
- মডেল
- রূপসী বাংলার মুখ
- সোনালি রেখা
- ত্রিবর্ণ
- একজন মিসেস নন্দী
- কথামালা
- মীনা রাখি সাধিকা
- সন্দেশ
তাঁর গল্প ও উপন্যাস থেকে যেগুলি সিনমা হয়েছে
- চলাচল(হিন্দিতে সফর)
- পঞ্চতপা
- আমি সে ও সখা(হিন্দিতে বেমিসল)
- কাল তুমি আলেয়া
- অমর কন্টক
- সাত পাকে বাধা( হিন্দিতে কোরা কাগজ)
- আলোর ঠিকানা
- আরো একজন
- নবরাগ
- শঙ্খবেলা(১৯৬৬) সন্দেশ নামক ছোটো গল্প থেকে সিনেমাটি তৈরী হয়।
বাঙালি শিক্ষাবিদ এবং সাহিত্যিক।
১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই সেপ্টেম্বর চবিবশ পরগণা জেলার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতার নাম ছিল নন্দকিশোর রামমোহন রায়। গ্রামের স্কুলে কিছুদিন লেখাপড়া করে তিনি কলকাতায় আসেন এবং কলকাতার হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন।
১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি হিন্দু কলেজ-এর [কলকাতা] উচ্চতর বৃত্তি লাভ করেন। বিশেষ করে ইংরেজি ভাষা এবং সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন তিনি। তবে ছাত্র জীবনে একবার তিনি পানাসক্ত হয়ে পড়েন। ফলে অসুস্থ হয়ে আগেই কলেজ ছাড়তে বাধ্য হন।
১৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দে ডিসেম্বর মাসে তাঁর পিতা মৃত্যুবরণ করেন। ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন। এ সময়ে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে উপনিষদের ইংরেজি অনুবাদের দায়িত্ব দেন।
১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সংস্কৃত কলেজে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি মেদিনীপুর জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে অসুস্থতার কারণে তিনি এই কাজ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
ব্রাহ্মসমাজের উপাসনার সময়ে প্রকাশ্যে পুরুষদের সঙ্গে মহিলাদের একত্রে বসা উচিত কিনা, এ প্রশ্নে ব্রাহ্মসমাজ যখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই সূত্রে কেশব সেন-পরিচালিত অংশ নববিধান ব্রাহ্মসমাজ নামে পরিচিত হয়। আর দেবেন্দ্রনাথের নেতৃত্বাধীন মূল রক্ষণশীল অংশের নাম হয় আদি ব্রাহ্মসমাজ। আদি ব্রাহ্মসমাজে রাজনারায়ণ কিছুকাল প্রধান আচার্য হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
দেশাত্মবোধ এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী চিন্তায় আগাগোড়া নিমজ্জিত রাজনারায়ণ বসু মেদিনীপুরে 'জাতীয় গৌরব সম্পাদনী সভা' এবং বেশ কয়েক বছর পরে কলকাতায় সঞ্জীবনী সভা নামে দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। স্বাজাত্যবোধ এবং জাতীয়তাবোধ উদ্রেক করার জন্যে নবগোপাল মিত্র কর্তৃক স্থাপিত হিন্দু মেলাতেও তিনি সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। তরুণ রবীন্দ্রনাথসহ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্য পুত্ররাও এ সভার সঙ্গে যুক্ত হন।
বক্তৃতার মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর শ্রোতাদের অনেককেই জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিলেন।
১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠতা নামক বক্তৃতায়, তিনি হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করেন। উল্লেখ্য দেবেন্দ্রনাথ সাধারণত কোনো জনসভায় না গেলেও তিনি এই বক্তৃতায় সভাপতিত্ব করেন।
১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অনুষ্ঠিত হিন্দু মেলার উদ্বোধক ছিলেন।
১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে লিটনের দেশীয় ভাষা সংক্রান্ত আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগদান করেন।
১৮৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে রাজনারায়ণ 'বৃদ্ধ হিন্দুর আশা' নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। তাতে তিনি সমগ্র ভারতবর্ষের হিন্দুদের একত্রিত করে একটি সংগঠনের অধীনে আনার আবেদন জানিয়েছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় এ প্রতিষ্ঠান গঠিত না হলেও, হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা তাঁর মৃত্যুর পরে মোটামুটি একই উদ্দেশ্য নিয়ে, ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দু মহাসভা স্থাপিত হয়েছিল।
১৮৫০-এর দশকে তিনি বিধবাবিবাহের উৎসাহী একজন সমর্থক ছিলেন। তাছাড়া, ১৮৬০-এর দশকে তিনি 'মদ্যপান নিবারণী সভা' গঠন করেন। মেদিনীপুরে তিনি একটি বালিকা বিদ্যালয়, একটি গ্রন্থাগার, একটি বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র এবং একটি বির্তক সভা স্থাপন করেন।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঞ্জীবনী সভার তিনি সভাপতি ছিলেন। এই সভার প্রতিষ্ঠার সুনির্দিষ্ট তারিখ জানা যায় না। প্রশান্তকুমার পাল তাঁর রবিজীবনী প্রথম খণ্ডে (ভূর্জপত্র, ১৩৮৯, ১ বৈশাখ। পৃষ্ঠা ৩০৫) 'সঞ্জীবনী সভা' আয়ুষ্কাল সম্পর্কে লিখেছেন '...অনুমান করা যায় সঞ্জীবনী সভার আয়ুষ্কাল মোটামুটি ছ'মাস -পৌষ ১২৮৩ থেকে জ্যৈষ্ঠ ১২৮৪ পর্যন্ত বিস্তৃত।'
তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ
- হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠতা (১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দ)
- সে কাল আর এ কাল (১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দ)
- হিন্দু অথবা প্রেসিডেন্সী কলেজের ইতিবৃত্ত (১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দ)
- বাঙ্গলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক বক্তৃতা (১৮৭৮ খ্রিষ্টাবব্দ)
- বিবিধ প্রবন্ধ (১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দ)।
বৃদ্ধ হিন্দুর আশা (১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দ) প্রধান।
তাঁর মৃত্যুর দশ বছর পরে তাঁর আত্মজীবনী 'রাজনারায়ণ বসুর আত্মচরিত' প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থে তিনি তাঁর জীবন এবং সময়ের নির্ভরশীল বর্ণনা দেন। এসব গ্রন্থ ছাড়াও, তিনি ব্রাহ্মধর্ম নিয়ে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এগুলির মধ্যে কয়েকটি ইংরেজি ভাষায় রচিত ছিল।
১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যবরণ করেন।
। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ।
ত্রিপুরার রাজা ছিলেন বীরচন্দ্র মাণিক্য। ভালোবাসতেন ফটোগ্রাফি, কবিতা, গান, নাচ আর বহু পত্নী-উপপত্নী পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতে। অসংখ্য পত্নী-উপপত্নীর মধ্যে ভানুমতী দেবীই ছিলেন তার সবচেয়ে প্রিয়। ভানুমতী দেবীকে তাই তিনি বসিয়েছিলেন মহারানীর আসনে। অথচ তার উপরে অভিমান করেই একসময় ভানুমতী দেবী আত্মহত্যা করেন। হঠাৎ ভানুমতী দেবীকে হারিয়ে রাজা কাতর হয়ে পড়েন, রাজকার্য পরিচালনায় সব উৎসাহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলেন, হয়ে পড়েন জীবনবিমুখ। এমন সময় তার হাতে আসে কলকাতার এক উঠতি কবির একটি কাব্য। নাম 'ভগ্ন হৃদয়', লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
"অরুণালোকে খুলিয়া হৃদয় প্রাণ
এ পারে দাঁড়ায়ে, দেবি, গাহিনু যে শেষ গান
তোমারি মনের ছায় সে গান আশ্রয় চায়–
একটি নয়নজল তাহারে করিও দান।
আজিকে বিদায় তবে, আবার কি দেখা হবে–
পাইয়া স্নেহের আলো হৃদয় গাহিবে গান"
কাব্যটি পড়েই বীরচন্দ্র একটি স্বর্গীয় সান্ত্বনা অনুভব করেন। প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যুতে কাতর মন হঠাৎ প্রশান্ত হয়ে ওঠে।
যে কবির কবিতা রাজাকে এমন অপার্থিব প্রশান্তি এনে দিয়েছিল, সে কবিকে কোনো উপহার না পাঠিয়ে, সে কবির সাথে দেখা করার তাৎক্ষণিক মনোবাসনা ব্যক্ত না করে রাজা আর থাকতে পারছিলেন না। তাই রাজা তার সচিব রাধারমণ ঘোষকে দিয়ে দ্রুত কবিকে উপঢৌকন পাঠান, রবীন্দ্রনাথও তা সানন্দে গ্রহণ করেন। এভাবেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে একটি মধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে ত্রিপুরার রাজা বীরচন্দ্র মাণিক্যের। রাজার মৃত্যুর পর তার পুত্র রাধাকিশোরের সাথেও রবীন্দ্রনাথের এ সম্পর্ক অব্যাহত ছিল। বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধিতে ত্রিপুরার রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতাও পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ গ্রহণ করেছিলেন নির্দ্বিধায়।
এ উপন্যাসে ত্রিপুরার রাজপরিবার থেকেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বের করে আনেন 'ভরত' নামক একটি কাল্পনিক চরিত্র। আর ভরতকে কেন্দ্র করেই সন্নিবেশিত হতে থাকে উপন্যাসের প্লট। প্লটের সাথে সাথে জুড়ে দেয়া হয় একেকটি ঐতিহাসিক চরিত্র। ভরত সময়ের প্রতিনিধি হয়ে ঘুরতে থাকে ভারতবর্ষের নানা প্রান্তরে, ইতিহাসের দ্বারে দ্বারে। ভরতের পাশাপাশি উপন্যাসেটির গল্পের সাথে ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোর সংযোগ তৈরিতে কাজ করেছে ভূমিসুতা নামক আরেকটি নারী চরিত্রও। সময়ের অন্যায্য দাবির সাথে আপোসহীন ভূমিসুতা একসময় নয়নমণি নামে বিখ্যাত হয়ে আবার ভূমিতেই নেমে আসে, আবার ভূমিসূতা হয়ে উঠে। ভরত আর ভূমিসুতাই তাই হয়ে উঠেছে উপন্যাসের প্রধান নায়ক ও নায়িকা।
প্রথম জীবনে রবীন্দ্রনাথের কবি হয়ে উঠার পেছনে সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী কাদম্বরী দেবীর ভূমিকা। রবীন্দ্রনাথের সাথে কাদম্বরী দেবীর ছিল অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। তিনিই ছিলেন রবীন্দ্রনাথের প্রথম জীবনের কাব্যলক্ষ্মী, তার কবি হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা। তাদের দু'জনের সম্পর্কের ইতিবৃত্ত এবং রবীন্দ্রনাথের বিবাহের অব্যবহিত পরেই কাদম্বরী দেবীর আত্মহত্যার ঘটনা 'প্রথম আলো উপন্যাসে' গল্পচ্ছলে অসাধারণ নাটকীয়তায় ফুটে উঠেছে। মৃত্যুর পরও রবীন্দ্রনাথের কাব্যচেতনায় ছায়া হয়ে ছিলেন কাদম্বরী, ছায়া হয়ে ছিলেন প্রথম আলো উপন্যাস জুড়েও।
উঠে এসেছে সমসাময়িক বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, বিবেকানন্দের ধর্মীয় পুনর্জাগরণ আন্দোলন, কলকাতাকেন্দ্রিক বাংলা থিয়েটারের উত্থান ও অন্তর্কোন্দলের নানা চিত্র।
"মুসলমানরা প্রায় সকলেই এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে রাতারাতি ইংরেজভক্ত হয়ে গেছে।"
অথচ সমসাময়িক ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে হুমায়ূন আহমেদের লেখা 'মধ্যাহ্ন' উপন্যাসে বঙ্গভঙ্গের মূল্যায়নটি ছিল এমন,
''তিনি (লর্ড কার্জন) বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা দিয়েছেন... আসাম, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী নিয়ে হবে পূর্ববঙ্গ। ঢাকা হবে রাজধানী আর চট্টগ্রাম হবে বিকল্প রাজধানী। ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। এতে ভারতবর্ষের হিন্দু সমাজ ফুঁসে উঠে। বাংলা ভাগ করা যাবে না। ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় হবে এটিও হিন্দুসমাজ নিতে পারছিল না। পূর্ববাংলা হলো চাষার দেশ তারা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে কী করবে।"
এই জায়গাটিতে পূর্ব ও পশ্চিম বঙ্গের সাহিত্যিকদের চিন্তার ব্যবধান ফুটে ওঠে।
প্রথম আলোর প্রায় পুরোটা জুড়ে রবীন্দ্রনাথ আর বিবেকানন্দের বিচরণ মুখ্য হয়ে থাকলেও গিরিশচন্দ্র ঘোষ, ক্ষুদিরাম বসু, মহাত্মা গান্ধী, জগদীশ চন্দ্র বসু, স্বামী বিবেকানন্দ, সুরেন ব্যানার্জির মতো অসংখ্য ঐতিহাসিক চরিত্র উপন্যাসটির পাতায় পাতায় জীবন্ত হয়ে আছেm
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পক্ষে প্রথমদিকে রবীন্দ্রনাথ সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু আন্দোলনটি যখন ক্রমেই বিতর্কিত এবং সহিংস হয়ে ওঠে, তখন রবীন্দ্রনাথ এ আন্দোলন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। সুনীলও ঠিক এ জায়গাটি থেকে 'প্রথম আলো' উপন্যাসটিকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন। উপন্যাসের নায়ক-নায়িকা ভরত আর ভূমি ছিল পুরো উপন্যাসে বিচ্ছেদবেদনায় ভারাক্রান্ত। দীর্ঘ এক যুগ পর তাদের সামনে হাজির হয় মিলনের বহুল কাঙ্ক্ষিত রাত, কিন্তু সেটি আট-দশটি বাসর রাতের মতো প্রণয়-রোমাঞ্চে ভরপুর ছিল না। তবে কেমন ছিল সে রাত? বইয়ের ভাষায়,
"প্রথম রাত্রেই ভূমিসুতার অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিল। এই প্রথম সে একজন পুরুষের সাথে এক কক্ষে রাত্রিবাস করছে... এই রাত্রিই তো তার বাসর রাত। কিন্তু এ কেমন বাসর রাত? ফুল নেই, মালা নেই, চন্দনের সুবাস নেই। এমনকি মনের মানুষটি থেকেও নেই। সে ভূমিসুতার অস্তিত্বের কথাই জানে না। স্পর্শ টের পায় না। এ যেন বেহুলা-লখিন্দরের লৌহবাসরের মতন। এ যেন মিলন হয়েও মিলন থেকে বহুদূরে।"
তবুও একটি জায়গায় এসে তাদের সম্পর্ক সত্যিকারের মিলনাত্মক পরিণতির দিকে এগুতে থাকে। তারপর,
"তারপর ওরা হাত ধরে চুপ করে বসে রইল। ঘাট ক্রমশ নির্জন হয়ে আসছে। বাতাস বইছে বেশ জোরে। বজরাগুলো ফিরে যাচ্ছে। সবাই ঘরে ফিরছে। এই দু'জনের যেন কোনো ঘর বাড়ি নেই, কোথাও ফিরতে হবে না। এরকম একটি অনন্তকালের দৃশ্য হয়ে ওরা বসেই থাকবে।"
এভাবেই শেষ হয় 'প্রথম আলো'।
========={∆∆∆∆∆∆∆∆}=========
No comments:
Post a Comment