Friday, 17 September 2021

জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য। বিনয় মজুমদার। ১৭.০৯.২০২১. Vol -498. The blogger in literature e-magazine.

বিনয় মজুমদার।


"ফিরে এসো,ফিরে এসো,চাকা,
রথ হয়ে,জয় হয়ে,চিরন্তন কাব্য হয়ে এসো।"

ছেলেকে ‘টু’ বলে ডাকতেন বিনয় মজুমদারের বাবা। ওটাই ছিল ডাকনাম। বিনয় তখন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে দুর্গাপুরে স্টিল প্রোজেক্টে ট্রেনি হিসেবে যোগ দিয়েছেন। থাকেন ট্রেনিদের হস্টেলে, রুম নম্বর চারে। সরকারি চাকরি, সকাল আটটার মধ্যে পৌঁছতে হয়, খাওয়াদাওয়ার অসুবিধা। চাকরিতে মন বসছে না। মাইনেটাও বেশ কম, কলকাতার কবিতার জগৎ থেকে দূরে, ফলে প্রাইভেট কোম্পানির চাকরি খুঁজছেন যাতে কলকাতা চলে আসতে পারেন। চাকরির দরখাস্ত দিয়েছেন সেই সময়ের বিখ্যাত তেলের কোম্পানি ‘এসো’-তে (Esso), আবার পড়ানোর কাজ চেয়ে জ্ঞান ঘোষ পলিটেকনিকেও। কিন্তু বাবা-দাদাদের ইচ্ছে নয় যে বিনয় সরকারি চাকরি ছেড়ে কলকাতায় ফিরে আসুন। প্রাইভেট কোম্পানির চাকরি যে আরও কত কষ্টের ও অনিশ্চিতির, সেই কথা জানিয়ে চিঠি দিচ্ছেন তাঁরা। বাবা লিখছেন, ‘সরকারি চাকরিতে শান্তি আছে, পেনশন আছে, ভবিষ্যৎ আছে। আমার ইচ্ছে তোর ট্রেনিং শেষ হলেই তোকে বিয়ে দেব। ঐখানেই ৩২৫ টাকা পাবি, ওই টাকাতে তোর চলে যাবে। তখন শান্তিতে থাকতে পারবি।’ চিঠির তারিখ ৯ জুন ১৯৬২। তার ক’দিন পরেই, ১৪ জুন বিনয়ের দাদা তাঁকে লিখছেন, ‘চাকরি করতে হলে যতটা তেল মারার ক্ষমতা ও পরিশ্রম করার ক্ষমতা দরকার, তা তোর নেই। উড়ু উড়ু মন নিয়ে সেটা কোনো ক্রমেই সম্ভব নয়। মাইনের লোভে প্রাইভেট ফার্মে না যাওয়াই ভালো।’ এমনকি বিনয় কয়েকদিনের জন্য কলকাতায় আসতে চাইলে দাদা লিখছেন, ‘এখানে বৌদি থাকবে, তাই তোমার এখানে থাকা সম্ভব হবে না।’
১৯৪২ সালে তাকে বাংলাদেশের একটি স্কুলে ভর্তি করা হয়। ১৯৪৪ সালে তিনি প্রথম বিভাগে ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় পাশ করেন। ১৯৪৬ সালে তাকে বৌলতলী উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়। ১৯৪৮ সালে দেশভাগের সময় তারা সপরিবারে ভারতের কলকাতায় চলে আসেন। এখানে, ১৯৪৯ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে ক্রিক রো-রতে অবস্থিত মেট্রপলিটন ইনস্টিটিউট (বউবাজার ব্রাঞ্চ)-এ নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হবার পরে, ১৯৫১ সালে আইএসসি (গণিত) পড়ার জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৭ সালে তিনি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে পাশ করেন। শোনা যায়, তার পাওয়া নম্বর আজও কেউ নাকি ভাঙতে পারেন নি। ১৯৫৭ সালে শিবপুর বি.ই.কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। ১৯৫৮ সালের জানুয়ারি মাসে, অর্থাৎ ছাত্রজীবন সমাপ্ত হবার কয়েকমাস পরেই এনবিএ থেকে প্রকাশিত হয় "অতীতের পৃথিবী" নামক একটি অনুবাদ গ্রন্থ। এই বছরেই গ্রন্থজগৎ থেকে বের হয় তার প্রথম কাব্য গ্রন্থ 'নক্ষত্রের আলোয়'। ১৯৫৩-৫৭ সাল পর্যন্ত রুশ ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করে কিছু রুশ সাহিত্য বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন।

ইঞ্জিনিয়ারিং পাশের পর চাকরি করেছেন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট, ত্রিপুরা গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। 

বৌলতলি হাই-ইংলিশ স্কুলের ম্যাগাজিনে প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। ত্রিপুরা গভর্নমেন্ট কলেজে অল্পকিছুদিন শিক্ষকতা করার পর স্থির করেন শুধুই কবিতা লিখবেন। লেখা শুরু করেন 'ফিরে এসো চাকা'। এই সময় তিনি দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টেও কিছুদিন কাজ করেন। তখন থেকেই মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ দেখা যায়। ১৯৬৬ সালে লিখতে শুরু করেন 'আঘ্রানের অনুভূতিমালা' ও 'ঈশ্বরীর স্বরচিত নিবন্ধ'। বিশটি কাছাকাছি কাব্যগ্রন্থ লিখেছিলেন। যার মধ্যে "ফিরে এসো চাকা" তাকে সবচেয়ে বেশি খ্যাতি দিয়েছে। এছাড়াও নক্ষত্রের আলোয়, গায়ত্রীকে, অধিকন্তু,ঈশ্বরীর,বাল্মীকির কবিতা, আমাদের বাগানে, আমি এই সভায়, এক পংক্তির কবিতা, আমাকেও মনে রেখো-ইত্যাদি রচনা করেছিলেন। রহস্যময়তা, প্রতীকের সন্ধান, জড় ও প্রাণের সম্পর্কে ব্যাখ্যা ছিল তার কবিতার মর্মবস্তু। এরসাথে মৌলিক প্রতিমা নির্মাণ,বিশিষ্ট অন্বয় এবং ভাবের ও আবেগের তীব্রতা নিবিড়তা স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে। ১৯৬২-৬৩ সালে বিনয় মজুমদার হাংরি আন্দোলন-এ যোগ দেন এবং তার কয়েকটি কবিতা হাংরি বুলেটিনে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে, অর্থাৎ ১৯৬৩ সালের শেষ দিকে তিনি শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়-এর কার্যকলাপে বিরক্ত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে একটি হাংরি বুলেটিন প্রকাশ করে কলকাতা কফিহাউসে বিলি করার পর হাংরি আন্দোলন ত্যাগ করেন।

কাব্যগ্রন্থ 
নক্ষত্রের আলোয় (১৯৫৮)
গায়ত্রীকে (১৯৬১)
ফিরে এসো চাকা (১৯৬২)
ঈশ্বরীর (১৯৬৪)
অধিকন্তু (১৯৭২)
অঘ্রাণের অনুভূতিমালা (১৯৭৪)
বাল্মীকির কবিতা (১৯৭৬)
শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৮২)
আমাদের বাগানে (১৯৮৫)
আমি এই সভায় (১৯৮৫)
এক পঙক্তির কবিতা (১৯৮৮)
কাব্যসমগ্র (১ম) (১৯৯৩)
আমাদের মনে রেখো (১৯৯৫)
আমিই গণিতের শূন্য (১৯৯৬)
স্বনির্বাচিত ১৬ (১৯৯৭)
এখন দ্বিতীয় শৈশবে (১৯৯৯)
কবিতা বুঝিনি আমি (২০০১)
কাব্যসমগ্র (২য়) [২০০২]
হাসপাতালে লেখা কবিতাগুচ্ছ (২০০৩, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার প্রাপ্ত গ্রন্থ-২০০৫)
সমান সমগ্র সীমাহীন (২০০৪)
শিমুলপুরে লেখা কবিতা (২০০৫)
পৃথিবীর মানচিত্র (২০০৬)
বিনোদিনী কুঠী (২০০৬)
একা একা কথা বলি (২০০৬)
নির্বাচিত কবিতা (২০০৬)
ছোটো ছোটো গদ্য ও পদ্য (২০০৬)
আকাশে চাঁদ নেই অথচ আজিকে পূর্ণিমা [যুগ্ম প্রেমের কবিতা গ্রন্থ] (২০০৬)
দুপুরে রচিত কবিতা (২০০৬)
নির্মাণের খসড়া (২০১৭)


কবিতার জগতে তার স্বকীয়তা এবং বিজ্ঞানে, বিশেষত গণিতে প্রগাঢ় আগ্রহ নিয়ে প্রথম থেকেই প্রথা ভেঙ্গে এগোচ্ছিলেন তিনি। ফলে সমকালীন কাব্যজগত হতে পৃথক জায়গায় ছিলেন। এর সাথে তার নিজের কিছুটা অসুস্থতা ,কিছুটা সচেতন বিচ্ছিন্নতা তাঁকে কষ্ট দিয়েছে। ফলে দীর্ঘ সময় ঠাকুরনগরে নিজের বাড়িতে একা থাকতেন। ১৯৮৭ সাল নাগাদ বিনয় মানসিক ব্যাধির কারণে দীর্ঘ দিন কলকাতা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শিরোনাম=কথা দিচ্ছি গায়ত্রীর ঠিকানা পাবে|ওয়েবসাইট=anandabazar.com|ভাষা=bn। আর্থিক অনটনে ভুগেছেন। প্রতিবেশীরাই তার দেখাশোনা করতেন। শেষে তিনি দীর্ঘ দিন রোগেভোগের পর ২০০৬ সালের ১১ই ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পুরস্কার
তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর আগে তাকে দুটি বড় পুরস্কার দেওয়া হয়, রবীন্দ্র পুরস্কার এবং সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার।

তাঁর সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারের পদক তার বাসভবনের পাশে বিনয় মজুমদার স্মৃতি রক্ষা কমিটি গ্রন্থাগারে রাখা ছিল। সেখান থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চুরি হয়ে যায় পদকটি। এখনও এটির কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।


ফিরে এসো,ফিরে এসো,চাকা,
রথ হয়ে,জয় হয়ে,চিরন্তন কাব্য হয়ে এসো।
 
 তিনি বিশ্বের সেই বিরল কবিদের অন্যতম যিনি নিজের জীবনকেই কবিতার বিষয় করে তুলেছেন। একটা গভীর বেদনাবোধ রক্তচোষার মতো কবিকে নিরন্তর শুষেছে, বিনয়ের কবিতা সেই চরম ও পরম শোষণের সাক্ষী হয়ে আছে।এই বেদনা শুধু এক নারীকে না পাওয়ার বেদনা নয়, আসলে তা শিল্পীর চিরবিরহী আত্মার ক্রন্দন।

অতিবিখ্যাত কবির উক্তিকেই সপ্রমাণ করে “Our sweetest songs are those that tales of saddest thought”. বেদনাহত বিরহী কবির অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উঠে আসা বোবা বেদনার মধুরতম সঙ্গীত। “ফিরে এসো চাকা” কাব্যগ্রন্থের ৬নং কবিতার শেষ ছয় পংক্তি


“হে আলেখ্য,অপচয় চিরকাল পৃথিবীতে আছে;
এই যে অমেয় জল—মেঘে মেঘে তনুভূত জল
এর কতটুকু আর ফসলের দেহে আসে বলো?
ফসলের ঋতুতেও অধিকাংশ শুষে নেয় মাটি।
তবু কি আশ্চর্য দেখো,উপবিষ্ট মশা উড়ে গেলে
তার এই উড়ে যাওয়া ঈষৎ সঙ্গীতময় হয়।”

মশা উপবিষ্ট হয়,রক্ত শোষণ করে,তবু মশা যখন উড়ে যায় তখন ঈষৎ সঙ্গীত সৃষ্টি হয়।চেনা দৃশ্যাবলীর ভেতর থেকে এই ভাবে কবি আবিষ্কার করেন এক অতিরিক্ত সত্যকে। বিনয় জানেন,

নিষ্পেষণে ক্রমেক্রমে অঙ্গারের মতন সংযমে
হীরকের জন্ম হয়,দ্যুতিময়,আত্মসমাহিত।”

যে চাকাকে অর্থাৎ চক্রবর্তীকে(গায়ত্রী চক্রবর্তী) বিনয় মজুমদার ফিরে পেতে চেয়েছিলেন,যাকে ঘিরে প্রতিদিন একটি করে কবিতা লিখতেন ও শোনাতেন, কলকাতার বিখ্যাত এক ব্যারিস্টারের অতীব সুন্দরী আদরের দুলালি সেই মেয়েটি উচ্চশিক্ষার্থে আমেরিকায় গিয়ে এক আমেরিকান অধ্যাপককে বিয়ে করে বিনয়ের বুকে যে শেল হেনেছিলেন তিনি কখন যেন তাঁর কাব্যের মানসপ্রতিমা হয়ে উঠেছেন। ‘ফিরে এসো চাকা’ কাব্যগ্রন্থের ৭০ সংখ্যক কবিতায় তাই কবি লিখেছেন,

ফিরে এসো,ফিরে এসো,চাকা,
রথ হয়ে,জয় হয়ে,চিরন্তন কাব্য হয়ে এসো।

আমরা বিশুদ্ধ দেশে গান হবো, প্রেম হবো, অবয়বহীন সুর হয়ে লিপ্ত হবো পৃথিবীর সকল আকাশে। ”
‘ফিরে এসো চাকা’য় মোট ৭৭টি কবিতা আছে।কবিতাগুলি কালানুক্রমে দিনপঞ্জিরূপে লেখা হয়েছে। প্রত্যেকটি কবিতা স্বয়ংসম্পূর্ণ অথচ পরস্পর সম্পর্কিত। ফলত কবিতাগুলি একযোগে একখানি পূর্ণাঙ্গ কাব্য হয়ে উঠতে পেরেছে।বিনয় নিজেই এই কাব্যগ্রন্থখানিকে ”বান্ধবকেন্দ্রিক শুধুমাত্র প্রেমার্তির কাব্য” বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই প্রেম ও প্রেমের বঞ্চনা কবির হৃদয়কে শুধু নয়, তাঁর মস্তিষ্ককেও আক্রান্ত করে তুলেছে। তাই তাঁর স্থান হয়েছে কখনও জেলখানা, কখনো হাসপাতাল, কখনোবা পাগলাগারদে।

বিনয় মজুমদার ঠিক পাগল ছিলেন না,ছিলেন কাব্যোন্মাদ,আত্মভোলা এক শিশু এবং সাধক।১৯৬১ সালের ২৩ জুলাই যে কবিতাটি রচনার পরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন সেটি এ প্রসঙ্গে স্মর্তব্য :


তিন পা পেছনে হেঁটে পদাহত হয়ে ফিরে আসি।
আবার তোমার কথা মনে আসে; ধূমকেতুর মতো
দীর্ঘকাল মনে রবে তোমাকে;পূর্ণাঙ্গ জীবনের
জটিলতা,প্রতিঘাত বালকের মতোন সাগ্রহে
ভালোবাসি; হৃদয়ের গুরুভার জলে নিমজ্জিত
অবস্থায় লঘু ক’রে নেবার পিচ্ছিল সাধ ক’রে
পদাহত হয়ে ফিরি;অজ্ঞাত পূর্ণাঙ্গ জীবনের
জটিলতা, প্রতিঘাত বালকের মতো ভালোবাসি।”
(২৬ সংখ্যক,ফিরে এসো চাকা)

দীর্ঘ ছ’মাস পরে (১৯৬২ সালের ২৭ জানুয়ারি) হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই তিনি লেখেন,

“মুক্ত বলে মনে হয়; হে অদৃশ্য তারকা,দেখেছো
কারাগারে দীর্ঘকাল কীভাবে অতিবাহিত হলো!
অথচ বাতাস ছিল;আবদ্ধ বৃক্ষের পাতাগুলি
ভাষাহীন শব্দে,ছন্দে এতকাল আন্দোলিত ছিলো।
অদৃশ্য তারকা,আজ মুক্ত বলে মনে হয়; ভাবি,
বালিশে সুন্দর কিছু ফুল তোলা নিয়ে এত ক্লেশ।
ইতিমধ্যে কতিপয় অতি অল্প পরিচিত,নীল
নীল নয়,মনে হয়,নীলাভ কচুরিফুল মৃত।
অদর্শনে মরে গেছে; অন্ধকার, ক্ষুব্ধ অন্ধকার।
জীবনে ব্যর্থতা থাকে;অশ্রুপূর্ণ মেঘমালা থাকে;
বেদনাতল মোরগের নিদ্রাহীন জীবন ফুরালো।
মশাগুলি কি নিঃসঙ্গ, তবুও বিষণ্ণ আশা নিয়ে
আর কোনো ফুল নয়,রৌদ্রতপ্ত সূর্যমুখী নয়,
তপ্ত সমাহিত মাংস,রক্তের সন্ধানে ঘুরে ফেরে।”
(ঐ ২৭ সংখ্যক কবিতা)

এই গভীর জীবনবোধ কি কোনো পাগলের কাছে প্রত্যাশিত?’জ্ঞান’ এখানে এক নিশ্চুপ আর্তনাদ। আর উপমা! সে যেন দৃশ্য থেকে সত্য ছিঁড়ে আনবার নগ্নতা।তারও আগে ৬ নং কবিতায় এক নগ্ন সত্যকে উদ্ঘাটন করে কবি লিখেছিলেন,

সকল ফুলের কাছে এতো মোহময় মনে যাবার পরেও
মানুষেরা কিন্তু মাংসরন্ধনকালীন ঘ্রাণ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।”

কবিতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিনয় মজুমদার একদা বলেছিলেন, “কবিতার একটি প্রধান শর্ত হল বাক্যটিকে অবিস্মরণীয় হতে হবে; একবার শুনলেই যাতে তাকে আর ভোলা না যায়।”বিনয়ের কবিতায় এমন অসংখ্য বাক্য রয়েছে যা অবিস্মরণীয়- 


১)বিপন্ন মরাল ওড়ে,অবিরাম পলায়ন করে,
যেহেতু সকলে জানে তার শাদা পালকের নিচে
রয়েছে উদগ্র উষ্ণ মাংস আর মেদ;
স্বল্পায়ু বিশ্রাম নেয় পরিশ্রান্ত পাহাড়ে-পাহাড়ে।

২)মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়।

৩)আকাশ আশ্রয়ী জল বিস্তৃত মুক্তির স্বাদ পায়,

৪)স্রোতপৃষ্ঠে চূর্ণ -চূর্ণ লোহিত সূর্যাস্ত ভেসে আছে;

৫)কেবল নির্ভুল ভাবে সম্পর্ক স্থাপন করা যায় না এখনো।

৬) শয়নভঙ্গীর মতো স্বাভাবিক, সহজ জীবন
পেতে হলে ঘ্রাণ নাও,হৃদয়ের অন্তর্গত ঘ্রাণ।
===={======={========={{===========





No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। পশুপতি ভট্টাচার্য । খ্যাতনামা চিকিৎসক ও সাহিত্যিক। Dt -15.11.2024. Vol -1053. Friday. The blogger post in literary e magazine

পশুপতি ভট্টাচার্য  ১৫ নভেম্বর ১৮৯১ -  ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৮   একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক ও সাহিত্যিক। জন্ম  বিহার রাজ্যে পিতার কর্মস্থল আরায়। তাদ...