গোলাপকে পুনর্ব্যাখ্যা করবো তোমার জন্য
কেননা, তুমিই সেই বর্ণনাতীত গোলাপ
যথাশব্দের ব্যাকরণসম্মত বিন্যাসেও ফোটে না যার স্বরূপ
তুমি সেই গোলাপ, গোলাপ-বহির্ভূত শব্দাবলীই যার বর্ণনার ভাষা
ভাবাবিষ্ট ক্রন্দন আর ভয়ানক বিষন্নতা দিয়েই কেবল অনুবাদ সম্ভব যার
প্রণয়ের অতলগহ্বরের ওপরেও ফুটে থাকে আননন্দিত যে তারকাপুঞ্জ
সেখানে ব'সে পুনরার্থ করবো প্রণয়িনীর আঙুলে ধরা টাটকা গোলাপের
যেগুলোকে তাদের মুঠোয় জড়ানোর মুহূর্তে চক্রনাভী হয়ে ওঠে কিন্তু সহসাই ঝরে যায় পাঁপড়িগুলো
তোমার জন্য গোলাপের নতুন ব্যাখ্যা দেবো আমি
গোলাপ হলো ব্যালকনির ছায়ায় আশ্রিত ওইসব প্রেমিক-প্রেমিকা
পরস্পরের বাহুবন্ধন ছাড়া যাদের নেই কোনও প্রণয়-শয্যাও ....…
Louis Andrieux
মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি বিভিন্ন সাহিত্য আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সারা পৃথিবীতে যখন মন্দা অবস্থা, সমস্ত ইউরোপ জুড়ে অস্থিরতা তখন রাশিয়ার শ্রমিকরা বিপ্লবের ভেতর দিয়ে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন সমাজতন্ত্র। এই যুগসন্ধি কালে সচেতন কবি-সাহিত্যিকেরা পুরনো ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে নতুন এক বিস্ময়ের অনুসন্ধানে নিমগ্ন হন। এই অনুসন্ধান ছিল গভীরতম সত্যকে উপলব্ধির। এই সত্য উপলব্ধির অনুপ্রেরণায় তরুণ ফরাসি সাহিত্যিক আরাগঁ অতিক্রম করেছেন দাদাইজম, কিউবিজম, সুররিয়ালিজম, সিমবলিজম, রিয়ালিজম মতো সাহিত্য আন্দোলনের নানা স্তর।
আজন্ম বিদ্রোহী আরাগঁ মার্কসবাদী লেলিনের রুশ বিপ্লব দ্বারা সাম্যবাদের দিকে অনুরক্ত করে। ফলে ১৯২৭ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে কম্যুনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন।
১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে পার্টির পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৩০ সালে রাশিয়ার মস্কোতে অনুষ্ঠিত হয় বিপ্লবী লেখক সম্মেলন। সেই সম্মেলনে চির বিদ্রোহী আরাগঁ আমন্ত্রিত হয়ে প্রিয়তমা এলসা এবং বন্ধু ঝর্ঝ সাদুলকে সঙ্গী করে যোগ দেন। রাশিয়া দর্শন করে ফিরে এসে আরাগোঁ একটি কবিতা লেখেন যেটি ১৯৩১ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত পেরসেক্যুতে পেরসক্যতর কাব্যগ্রন্থে স্থান পায়। সংকলনটি প্রকাশ হওয়ার পর ১৯৩২ সালে জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রীয় গভীর ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ফরাসি সরকার গ্রেপ্তার করে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করেন। কিন্তু পৃথিবীর বড় বড় লেখক, রাজনৈতিক মনীষীদের প্রতিবাদ ও চাপ প্রয়োগের কারণে সরকার সেই দণ্ডাদেশ তুলে নিতে বাধ্য হন।
আরাগোঁ বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় রূপবন্ধে কবিতা লিখেছেন । প্রচলিত ঘরানার কবিতা এবং নিরীক্ষাধর্মিতা উভয়েরই সমান গুরুত্ব ছিল তাঁর কাছে। এ দুটি ধারাতেই তিনি নবপ্রাণ সঞ্চার করেছিলেন।
আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম পথিকৃৎ কবি বিষ্ণু দে লুই আরাগোঁর অনুরাগী ছিলেন; তাঁর কবিতা বাংলায় তর্জমা করেছেন; তাঁর বিষয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন। কবি লুই আরাগোঁর একটি প্রসিদ্ধ উক্তি হলো: “পুরুষের ভবিষ্যত হচ্ছে নারী।” ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে রুশ-বংশোদ্ভূত ফরাসি লেখিকা এলসা ত্রিওলে-র সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বহু কবিতায় আরাগোঁ তার স্ত্রী এলসা-র জয়গাথা রচনা করেছেন।
রচনা -
আইজ অ্যান্ড মেমারি’, ‘
গ্রেট ফান’,
‘দ্য বেল্স অব ব্যাসেল’,
‘রেসিডেন্সিয়াল কোয়ার্টার’,
‘দ্য সেঞ্চুরি ওয়াজ ইয়াং’, ‘
লা কমিউনিস্ট’,
‘হার্ট ব্রেক’ ইত্যাদি.
আরাগঁর রচনায় তার জীবন দর্শনের বিভিন্ন পর্বের মনস্তত্ব ইঙ্গিতময়। প্রথমদিককার রচনায় দেখা মেলে প্রচলিত সামাজিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিদ্রোহ, পরবর্তী সময়ে ব্যক্তিগত অনুভব আর সামাজিক দায়িত্ববোধ প্রাধান্য বিস্তার করে সেখানে, প্রাধান্য পায় দ্বন্দ্ব, সংঘাত আর বেদনার অভিজ্ঞতা। কিছু কিছু রচনায় বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে প্রেম। বিশ্বজুড়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় আরাগঁর ভূমিকা ছিল অক্লান্ত কর্মী ও বিপ্লবী সংগঠকের। এ সময় তিনি একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় তিনি পপুলার ফ্রন্টের সমর্থক হয়ে স্পেনে যান। রাজনৈতিক কারণে তাকে আত্মগোপনে থাকতে হয়, লিখতে হয় ছদ্মনামে। এ সময় প্রকাশিত হয় তাঁর বই ‘আরাগঁ : ফরাসি প্রতিরোধের কবি’। লুই আরাগঁ কবিতা, উপন্যাস ও স্মৃতিকথা রচনা করেছেন।
মৃত্যু - ২৪ ডিসেম্বর ১৯৮২ (বয়স ৮৫)
প্যারিস.
দম্পতি র ঘর -
রান্না ঘর থেকে শুরু করে দ্বিতল বাড়ীটির প্রতিটি কামরায় স্মৃতি আর শিল্পের সমারোহ।আমাদের গাইড তরুণটি যখন প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সুভেনির হাতে নিয়ে এগুলোর আদি বৃত্তান্ত ব্যাখ্যা করছিল তখন আরাগঁ এলসার উপস্থিতি মনের পটে ছবির মত ভেসে উঠছিল।ঘরের দেয়ালের তাকে সাজানো ৩০ হাজার বইয়ের সারির মাঝে ব্যবহার্য নানা আসবাস পত্র সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো গোছানো।প্রতিটি স্মৃতি চিহ্নের সাথে এক একটি গল্প জড়িয়ে রয়েছে, সেই গল্পেরই পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে আমাদের গাইড।দেয়ালে টাঙানো জগত বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পিকাসো’র শুভেচ্ছা স্বারক ছবি, খাবার টেবিল ও দেয়ালে ভিনসেন্ট ভ্যানগগের হাতের সৃষ্টি সিরামিক কর্ম, ভ্রমণ প্রিয় আরাগঁ’র বিভিন্ন দেশ থেকে সংগৃহীত সুভেনীরের সমাহারে সমস্ত ঘর যেন এক শিল্পের সমাহারে পরিণত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন তার বাড়ীর পাশ দিয়ে ফরাসি সৈনিকদের দল যেতো তখন আরাগঁ তাদের তামাক বিতরণ করত, সেই তামাকের ক্ষুদ্রাকৃতির কয়েকটি খণ্ডও সংগ্রহ রয়েছে এই স্মৃতি সংগ্রহশালায় ।মানুষের চিন্তার প্রকাশ হচ্ছে লেখা।সেই চিন্তার রস সৃষ্টি হয় পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি থেকে। আরাগঁ এলসার বাসগৃহ ও বাগান দেখে মনে হবে, চেয়ার টেবিল থেকে শুরু করে শোবার ঘর কিংবা উঠানের প্রতিটি ঘাসকে শৃঙ্খলায় আবদ্ধ করা হয়েছে চিন্তার রস বা আবেশ সৃষ্টির কথা চিন্তা করে।খাবার ঘরের পাশেই আরাগঁ’র লেখার ঘর।দেয়ালের চার পাশের তাকে সুসজ্জিত বইয়ের বেষ্টনীর মাঝে আরাগঁ’র লেখার চেয়ার টেবিল, রুমটি দেখতে কোন আইনজীবীর চেম্বার সদৃশ। লেখার টেবিলের সামনে কাঠের তৈরি প্রবেশ দরজা, দরজার মাঝে স্থাপিত স্বচ্ছ কাঁচ দিয়ে বাইরের প্রকৃতির দৃশ্য দেখা যায়, যা সত্যি মনোহর।অতিথিদের বৈঠকখানার ঘরটির মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম ঝর্না, এই ঝর্নার জলের আঁচড়ে পরার শব্দে কিছু সময় প্রকৃতির সংস্পর্শের অনুভূতিতে বুদ হয়ে থাকা যায়।বাড়ীর দ্বিতলে ছিমছাম গোছানো এলসার লেখার ঘর, সামনের জানালা খোলা, বিকেলের মিষ্টি রোদের আলো ছিটকে পড়ছে ঘরের মধ্যে, জানালার ফাঁক দিয়ে বাগানের সুউচ্চ সেঞ্চুরি গাছের বাতাসে দুলে যাওয়ার দৃশ্য।মনে হচ্ছিলো আমরা চলে যাওয়ার পরই হয়তো এলসা এসে তার চেয়ারে বসে এই নির্জন প্রকৃতিকে সামনে রেখে লিখবে কোন রোমান্টিক কবিতার পংক্তিমালা।
লুই আরাগঁ-র পরাবাস্তব কবিতা
অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী
সর্বনাশের মাঝে চিৎকারের কবিতা
চলো থুতু ফেলা যাক দুজনে মিলে থুতু ফেলি
যা আমরা ভালোবেসেছি তার গায়ে
যা আমরা দুজনে ভালোবেসেছি
হ্যাঁ কেননা এই কবিতা আমাদের দুজনের
ওয়াল্টজ সুর আর আমি কল্পনা করি
আমাদের মাঝে যে অন্ধকার আর যা অতুলনীয় ঘটে চলেছে
ফেলে দেয়া আয়নার সংলাপের মতন
মালপত্রের দাবির কোনো জায়গায় ধরা যাক ফোলিনোতে
কিংবা অভের্নুর বোরবুল-এ
কিছু নাম দূরে বজ্রপাতের মতন ভারপ্রাপ্ত
হ্যাঁ আমরা দুজনে থুতু ফেলি এই বিশাল উপত্যকায়
হ্যাঁ কেননা কিছু জিনিস স্হির
কিছু জিনিস
মিলিয়ে দেয় হ্যাঁ চলো থুতু ফেলি
দুজনে মিলে এটা একটা ওয়াল্টজ
এক ধরণের সুবিধাজনক ফোঁপানি
চলো থুতু ফেলি চলো থুতু ফেলি ছোটো মোটরগাড়ির গায়ে
চলো থুতু ফেলি এটা হল নির্দেশ
আয়নাসমূহের ওয়াল্টজ
শূন্যতায় এক সংলাপ
শোনো এই বিশাল উপত্যকায় যেখানে বাতাস
আমরা যা ভালোবেসেছি তা নিয়ে কাঁদে
তাদের একটা হল ঘোড়া পৃথিবীতে কনুই হেলান দিয়ে
অন্যটা একজন মৃত মানুষ চাদর ঝাড়ছে আরেকজন
তোমার পদচিহ্ণের ছাপ আমার মনে আছে এক জনশূন্য গ্রাম
এক পোড়া পাহাড়ের ওপরে
আমার মনে আছে তোমার কাঁধ
আমার মনে আছে তোমার কনুই তোমার চাদর তোমার পদচিহ্ন
আমার মনে আছে একটা শহর যেখানে কোনো ঘোড়া ছিল না
আমার মনে আছে তোমার চাউনি যা পুড়িয়েছিল
আমার ফাঁকা হৃদয়কে মৃত রোমান্টিক কবিতার মতন যাকে একটা ঘোড়া
পাহাড়ের ওপর সেই দিনের মতন তুলে নিয়ে যায়
শহিদ ওকগাছের মাঝ দিয়ে আমার মাতলামি দৌড়োলো
যাস ভবিষ্যবাণীর মতন রক্ত ঝরালো যখন দিনের
আলো নীল ট্রাকের ওপরে মূক পড়ে গিয়েছিল
আমার মনে আছে কতোকিছু
কতো সন্ধ্যা ঘর পায়চারি ক্রোধ
ফালতু জায়গায় থামা
যেখানে সবকিছু সত্বেও রহস্যের রোশনাই ওপরে উঠে গেলো
দূরের ট্রেন ডিপোয় অন্ধ বালকের কান্নার মতন
তাই আমি অতীতের ‘এগিয়ে যাও’-এর সঙ্গে কথা বলে হাসছি
আমার শব্দের আওয়াজে যদি তোমার তেমন অনুভব হয়
ও প্রেম করেছিল আর ছিল আর এলো আর আদর করল
আর আমি অপেক্ষা করলুম আর সিঁড়িতে লক্ষ্য রাখলুম যা ফেটে গেলো
ওফ হিংস্রতা হিংস্রতা আমি একজন ভুতে পাওয়া মানুষ
আর অপেক্ষা করলুম অপেক্ষা করলুম তলহীন কুয়ো
আমি ভাবলুম অপেক্ষা করতে করতে মরে যাবো
নৈঃশব্দ রাস্তায় পেনসিল ছুঁচোলো করছিল
অন্ধকারে মরার জন্য একটা কেসুড়ে ট্যাক্সি চলে গেল
আর অপেক্ষা করল অপেক্ষা করল রোধকরা কন্ঠ
দরোজার সামনে ভাষার দরোজাগুলো
বাড়িগুলোর হেঁচকি আর অপেক্ষা
একটার পর একটা পরিচিত জিনিস তাকিয়ে থাকে
আর অপেক্ষা করে ভুতের মতন দৃষ্টি আর অপেক্ষা করে
দণ্ডিত অপরাধিদের আর অপেক্ষা করে
আর অপেক্ষা করে ধ্যাৎতেরি
আধা-আলো জেল থেকে পালিয়েছে আর হঠাৎ
না মূর্খ না
বোকা
কম্বলের ঘুম ভাঙিয়ে দিলো জুতোটা
আমি ফিরি না সাধারণত
আর ভালোবেসেছি ভালোবেসেছি ভালোবেসেছি কিন্তু তুমি জানতে পারো না কতোটা
আর অতীতেও ভালোবেসেছি
ভালোবেসেছি ভালোবেসেছি ভালোবেসেছি ভালোবেসেছি
ওফ হিংস্রতা
এটা ইয়ার্কি ছাড়া কিছুই নয় ওনাদের বিষয়ে
যারা এমনভাবে কথা বলে যেন প্রেম এক আমোদের কাহিনি
ভান করার ওপরে হেগে দাও
তুমি কি জানো কখন এটা সত্যিকার গল্প হয়ে ওঠে
প্রেম
তুমি জানো
যখন প্রতিটি শ্বাস বিয়োগান্তক হয়ে যায়
যখন দিনের রঙগুলোও হাস্যকর
ছায়ায় এক প্রতিচ্ছায়াকে ওড়াও একটা নাম ছুঁড়ে দেয়া
যে সবকিছুই পোড়ে তুমি জানো অন্তরে
যে সবকিছুই পোড়ে
আর তুমি বলো যে সবকিছু পুড়তে দাও
আর আকাশ হল ছড়িয়ে দেয়া বালির স্বাদ
প্রেম করো জারজ কোথাকার তোমাদের জন্য প্রেম
যখন একসঙ্গে শোয়ার ব্যবস্হা করে ফেলবে
ব্যবস্হা করে ফেলবে
আর তারপর হা হা যাবতীয় ভালোবাসা তার মধ্যে
আর তারপর
আমরা ব্যাপারটা কি তা আলোচনা করি
বহু বছর একসঙ্গে শোবার জন্য বুঝতে পারছ তুমি
বছরের পর বছর
নৌকোর পালের ডিগবাজির মতন
কুষ্ঠরোগিতে ঠাশা জাহাজের ডেকের ওপরে
সম্প্রতি একটা ফিল্মে দেখেছিলুম
শাদা গোলাপটা লাল গোলাপের মতন মরে যায়
তাহলে সেটা কি যা আমাকে এই উত্তেজনা পর্যন্ত তুলে আনে
এই শেষ কথাগুলোয়
শেষ কথা হয়তো একটা কথা যাতে
সবকিছু নিষ্ঠুর মেরামতের অতীত নিষ্ঠুর
ছিঁড়ে কুচুকুচি করা শব্দ জাগুয়ার শব্দ বিদ্যুৎ
চেয়ার
প্রেমের শেষ কথা কল্পনা করো
আর শেষ চুমু আর শেষ
প্রশান্তি
আর শেষ ঘুম ইয়ার্কি নয় এটা মজার
গত রাতের কথা ভাবছি
আহ সবকিছু জঘন্য অর্থময়তার চেহারা নেয়
আমি বলতে চাইছি শেষ মুহূর্ত
শেষ বিদায় আর শেষ মরণশ্বাস
শেষ চাউনি
আতঙ্ককর আতঙ্ককর আতঙ্ককর
বহু বছর যাবত আতঙ্ককর
চলো থুতু ফেলা যাক
যা একসঙ্গে ভালোবেসেছে তার গায়ে
ভালোবাসায় থুতু ফেলা যাক
আমাদের অগোছালো বিছানায়
আমাদের মৌনতায় আর আমাদের আধো-আধো কথায়
নক্ষত্রের গায়ে তারা হলেই বা
তোমার চোখ দুটি
সূর্যের গায়ে হলেই বা
তা তোমার দাঁত
অনন্তকালের ওপরে হলেই বা
তা তোমার হাঁ-মুখ
আর আমাদের ভালোবাসার গা্য়ে
হলেই বা তা
তোমার প্রেম
হ্যাঁ থুতু ফেলা যাক
এলসার হাতদুটি
অস্হিরতার জন্য তোমার হাত দুটি দাও । তোমার হাত দুটি আমাকে দাও যাতে আমি স্বপ্ন দেখি, আমি স্বপ্ন দেখি আমার নিঃসঙ্গতায় । তোমার হাত দুটি দাও, তাহলে আমি রক্ষা পাবো । যখন আমি তাদের আমার দুর্বল হাতের মুঠোয় নিই আর ভয়, বিভ্রম আর তাড়াতাড়ি । যখন আমি পরাজয়কে তুষারের মতন মেনে নিই, যা তোমার আঙুলের ফাঁক দিয়ে সর্বত্র চলে যায় । তুমি কি ককনও জানবে না কি আমাকে বেঁধে, আর আমি প্রথম থেকেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। গভীর ভাষা বলে এটা কী ভাবে, জান্তব সংবেদনের এই বোবা কথাবার্তা । কোনো মুখ নেই আর চোখ নেই, আয়নায় প্রতিফলন নেই । প্রেমের এই শিহরণ কোনো শব্দ প্রয়োগ করে না । তুমি জানতে পারবে না তোমার আঙুলগুলো কি চিন্তা করে, তাৎক্ষণিক সিলমোহরের শিকার । তুমি কখনও জানতে পারবে না কি তাদের নৈঃশব্দ, এক ঝলকানি তা জানবে না । তোমার হাতদুটি আমাকে দাও, কেননা আমার হৃদয় মানবে না । কিছুক্ষণের জন্য অন্তত পৃথিবীকে আড়াল করে দাও । তোমার হাতদুটি আমায় দাও, কেননা আমার আত্মা ঘুমোতে যাবে, কেননা আমার আত্মা অনন্তকালের জন্য ঘুমিয়ে পড়বে ।
শান্তির কথা বলো
আমি শান্তির কথা বলি ফ্যাকাশে আর হঠাৎ
বহুকাল আগে দেখা স্বপ্নের আনন্দের মতন
সেই স্বপ্নের মতন যা তুমি বড়োজোর
মনে করবে পেয়েছো
আমি একজন নারীর মতন শান্তির কথা বলি
আমি দরোজা খুলে ধরব আর তক্ষুনি
আমার আত্মাকে ঘিরে তার দুই বাহু আর
আমার গলা জড়িয়ে
আমি পুরোনো জানালায় শান্তির কথা বলি
যা সুন্দর সকালে পাল্লা ঝাপটায়
যখন সমগ্র দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে কেবল
গুল্মের সুগন্ধ
আমি শান্তির কথা বলি যাতে তা আলোকিত করতে পারে
নতুন ঋতুতে তোমার পদক্ষেপ
কিন্তু সাধারণ ব্যাপারের মতন
যে কোনও বাসায়
পাখিদের জন্য আর ঝোপঝাড়ের জন্য
জলের ওপরে সবুজ আর কালো
আর ছোটো ব্যস্ত মাছটার খাতিরে
স্রোতের মধ্যে
আমি সমস্ত নক্ষত্রের জন্য শান্তির কথা বলি
দিনের প্রতিটি ঘণ্টার জন্য
প্রতিটি ছাদের টালির আর তোমার জন্য
ছায়া ও ভালোবাসা
আমি শৈশবের খেলার জন্য শান্তির কথা বলি
যেখানে তুমি দৌড়োও আর লাফাওম হাসো আর কাঁদো
যেখানে তুমি চিন্তার প্রবাহ হারিয়ে ফ্যালো
বিশাল ঘাসভূমিতে
আমি শান্তির কথা বলি কিন্তু এটা অদ্ভুত
ভয়ের এই বোধ যা আমার রয়েছে
কেননা আমার হৃদয় নিজেই পালটে যায়
আস্তে আস্তে
আমি শান্তির কথা বলি যাই হোক না কেন
অনিশ্চিত ঠুনকো কন্ঠস্বরহীন
কেননা ব্যাপারটা মৌমাছির মতন যে কাজ করে চলে
যদিও তা দেখা যায় না
নিছক পাতার মাঝে হঠাৎ মৃদুমন্দ বাতাস
নিছক সরল ইতস্ততভাব
চৌকাঠে সূর্যরশ্মি
আমাদের কামনার
শান্তি থমকে যায় যেন অনিশ্চিত
সম্প্রতি রোগমুক্ত লোকের পদক্ষেপের মতন
তখনও পঙ্গু-করা জখমে আটক
আর কেমন করে তাদের রক্ত বেরিয়েছিল
যুদ্ধ নিজের শক্ত লাগামকে ঢিলে করে
যুদ্ধ এমনকি নিজের লড়াই হেরে গেছে
যা টিকে আছে তা বিষণ্ণ স্তব্ধতা
মামুলি গদি-বসানো
গাড়িগুলো ব্যারাকে ফিরে যাচ্ছে
আর তবু যৎসামান্য আওয়াজ করছে
আমরা আলফালফা গাছের মাঝে নাচবো
যতক্ষণ না রাত নামে
তুমি কাল দেখতে পাবে তুমি পাবে
খেলার মাঠে স্কুলের বাচ্চাদের
আর সুন্দর আবহাওয়া যদিও তেমনটা নয়
যা বলা হয়েছিল
এবার আমরা নতুন যৌবনের জন্য লড়ব
বাড়িঘরের আর আনন্দের দিনকালের জন্য
আর প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য যারা চায়
একাধিক বাচ্চা
আমরা আগেকার মতন একত্রিত করব
আমাদের পৃথিবীর পোড়া বিস্ময়ের মাঝে
জীবন ফিরে পাওয়া যাবে তোমার
মিনতি করার দরকার হবে না
তাযাতাড়িই তুমি চাইবে আমি নামকরণ করি
আমরা যে নতুন প্রাসাদ গড়ব তাদের
মানুষের মনের সুর
আর আমাদের অবাস্তব পরিকল্পনা
আর বিশাল রসায়ানাগার
যেখানকার অলৌকিক ঘটনাগুলো মানুষের
আর ইতিহাসের স্তম্ভ
আমাদের আয়ত্তে
আমি জানি আমি জানি এগুলো করতে হবে
এই শতকে যেখানে মৃত্য ডেরা বেঁধেছে
আর শান্তির জন্য সর্বত্র সন্ধান করতে হবে
তা বেশ দূরে
ছড়ানো ছোটো আগুনগুলো মিইয়ে নিভে যায়
যে কেউ দেখতে পারে তা কেমন
কেউ একজন সব সময় নেকড়েকে দেবে
থাকার জায়গা
কেউ কোথাও সব সময় স্বপ্ন দেখবে
টেবিলে ঠোকা ঘুসি হয়ে ওঠার
আর সন্ধির কাপড়ের তলায়
কিছুই ঘটে না
আমি জানি আমি জানি একজন যা বলতে পারে
আর ঘুমিয়ে পড়ার বিপদাশঙ্কা
মানুষ কেমন করে সবচেয়ে ভালো আর সবচেয়ে খারাপ অবস্হায়
এক সমস্যা
আমি জানি কিন্তু তা সত্বেও শান্তি
দানবটা আমাদের সামনে থেকে পিছিয়ে যায়
এই যা আমি প্রতিরোধ করি যে আমি ভালোবাসি
চিরকাল বেঁচে থাকে
শান্তির কথা যা জনগণ জানে
কমবেশি সবকিছুই অস্পষ্টভাবে
ক্রীতদাসের মালিকের বিরুদ্ধে
সাক্ষী হবার জন্য
এ হল জনগণের শান্তি
গভীর মুক্তির গর্জনে কালা
এ হল দামামা বাজানোর স্তব্ধতা
যখন মে মাস আরম্ভ হয়েছে
এ হল প্রমাণে রাঙানো শান্তি
যেখানে খুনি তার নাম রেখে গেছে
যার কাছে বিধবার অবগুন্ঠন
চিৎকার করে বালে না !
এ হল শান্তি যা হত্যা করতে বাধ্য করে
হাঁটুমুড়ে স্বীকৃতি দেবার জন্য
আর বলির প্রাণীর সঙ্গে চিৎকার করে বলে
হত্যা বন্ধ করো !
স্তবগান
ওরা মানুষকে পৃথিবীতে পুনরধিষ্ঠিত করেছে
ওরা বলেছে তুমি খেতে পাবে
এবং তুমি খাবে
ওরে পৃথিবীতে স্বর্গ বসিয়েছে
ওরা বলেছে দেবতারা বিনষ্ট হয়ে যাবে
এবং দেবতারা বিনষ্ট হয়ে যাবে
ওরা পৃথিবীর একটা অট্টালিকাগৃহ তৈরি করেছে
ওরা বলেছে আবহাওয়া খুব সুন্দর হবে
এবং আবহাওয়া সুন্দর হবে
ওরা পৃথিবীতে একটা গর্ত খুঁড়েছে
ওরা বলেছে আগুন বিস্ফোরণ ঘটাবে
এবং আগুন বিসজফোরণ ঘটাবে
পৃথিবীর মালিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে
ওরা বলেছে তুমি পথ করে দেবে
এবং তুমি পথ করে দেবে
ওরা পৃথিবীকে নিজের কবজায় নিয়েছে
ওরা বলেছে কালো হয়ে উঠবে শাদা
এবং কালো হয়ে উঠবে শাদা
দেশগুলো আর পৃথিবীর গৌরব হোক
বলশেভিক দিনগুলোর সূর্যের গৌরব হোক
বলশেভিকদের গৌরব হোক
আনন্দময় ভালোবাসা বলে কিছু নেই
মানুষ কখনও কোনোকিছু সত্যিই আয়ত্তে নিতে পারে না
তার শক্তিক্ষমতা নয়, তার দুর্বলতা নয়, তার হৃদয়ও নয়
আর যখন সে দুই হাত মেলে ধরে তার ছায়া হয়ে যায় একটা ক্রুসচিহ্ণের
আর আখন সে আনন্দকে আলিঙ্গন করতে চায়ে সে তাকে পিষে ফ্যালে
তার জীবন এক অদ্ভুত ও মর্মান্তিক বিবাহবিচ্ছেদ
আনন্দময় ভালোবাসা বলে কিছু নেই
ওর জীবন সে সৈন্যদের মতন যাদের হাতে অস্ত্র নেই
আমাদের অন্য ভাগ্যের পোশাক পরানো হয়েছে
কেন ওদের ভোরবেলায় উঠতে হবে
যখন রাত তাদের অলস হিসাবে পায়, অনিশ্চিত
এই কথাগুলো বলে, আমার জীবন, আর চোখের জল সামলে রাখো
আনন্দময় ভালোবাসা বলে কিছু নেই
আমার সুন্দর প্রেমিকা, আমার প্রিয়তমা, আমার অশ্রুবিন্দু
আমি এক আহত পাখির মতন নিজের ভেতরে তোমাকে বয়ে বেড়াই
আর যারা তা জানে না আমাদের দেখে পাশ দিয়ে চলে যায়
এই কথাগুলো আমার সঙ্গে বলো যাদের আমি বিনুনিতে বেঁধেছি
যা তোমার বড়ো চোখের জন্য সরাসরি মারা গেলো
আনন্দময় ভালোবাসা বলে কিছু নেই
যতোদিনে আমরা শিখে নেবো তার আর সময় থাকবে না
আমাদের হৃদয় রাতে একসঙ্গে কাঁদুক
ন্যনতম গানের জন্য কতোটা নিরানন্দ প্রয়োজন
মৌজমস্তির দাম দিতে কতোটা পশ্চাত্তাপ চাই
গিটারের বাজনার জন্যে কতোগুলো অশ্রুবিন্দু দরকার
আনন্দময় ভালোবাসা বলে কিছু নেই
ব্যথা ছাড়া ভালোবাসা হয় না
আঘাত ছাড়া ভালোবাসা হয় না
ফুরিয়ে যাওয়া ছাড়া ভালোবাসা হয় না
দেশকে ভালোবাসা তোমাকে ভালোবাসার চেয়ে বড়ো
ফোঁপানিতে টিকে থাকা ছাড়া ভালোবাসা হয় না
আনন্দময় ভালোবাসা বলে কিছু নেই
কিন্তু আমাদের দুজনার প্রতি আমাদের ভালোবাসা.
================{{{==============={
No comments:
Post a Comment