Wednesday, 6 October 2021

জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য। আলোক রঞ্জন দাসগুপ্ত। ০৬.১০.২১. Vol -516. The blogger in literature e-magazine


আলোক রঞ্জন দাসগুপ্ত

শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা শেষ করে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে সাহিত্য নিয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। ভারতীয় কবিতার শব্দমালা নিয়ে পিএইচডি করেন। দাম্পত্যসঙ্গী
ট্রুডবার্টা (মৃ.২০০৫)। 
তার পিএইচডি শেষ করার পরে, দাশগুপ্ত ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে (বুদ্ধদেব বসু প্রতিষ্ঠিত) তুলনামূলক সাহিত্য ও বাংলা পড়িয়েছিলেন। এরপরে তিনি হাম্বোলড ফাউন্ডেশন ফেলোশিপে জার্মানি যান। ১৯৭১ সাল থেকে তিনি জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ইনসিটিটিউট অনুষদে শিক্ষকতা করছেন। তিনি ভারত ও জার্মানির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংযোগ প্রচারের জন্য প্রধান একটি প্রতিষ্ঠান, ডয়চে-ইন্দিসচে গেসেলশ্যাফ্টের (ডিআইজি) সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
জন্ম ৬ অক্টোবর ১৯৩৩ । তিনি ২০টিরও বেশি কবিতার বই লিখেছেন, বাংলা এবং সাঁওতালি কবিতা ও নাটক ইংরেজি এবং জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেছেন, এবং জার্মান ও ফরাসি সাহিত্য থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন। তিনি বেশ কয়েকটি বই প্রবন্ধের প্রকাশ করেছেন। তার স্বতন্ত্র গদ্যশৈলীর জন্য তিনি সুপরিচিত দাশগুপ্ত শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে পড়াশোনা করেছেন, ও তারপরে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে, প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়েন এবং অবশেষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ভারতীয় কবিতায় গীতি নিয়ে তার পড়াশুনার জন্য পিএইচডিপ্রাপ্ত হন। তিনি লিটল ম্যাগাজিনসমূহের সাথে ভীষণভাবে যুক্ত হয়ে মূল জার্মান কাজগুলিকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করতে থাকেন।

দাশগুপ্ত এমন একজন কবি, যিনি তার সহকর্মী এবং ভক্তদের দ্বারা অনেক প্রশংসিত, তার কবিতা মূলভাব এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্য পরিচিত। জার্মান সরকার তাঁকে গ্যোটে পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে দুটি ভিন্ন সংস্কৃতিকে একত্রিত করার কাজে তার অবদানের জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছে। তার ছন্দনৈপুণ্য ভাষার কারুকার্য যেমন কাব্য-অবয়বকে একটি স্বকীয়তা দিয়েছে তেমনই বৈদগ্ধ্য বিপ্লবমনস্কতা এবং ঐতিহ্যের পুনরাবিষ্কারের ক্ষমতা তার কাব্য জগতকে দিয়েছে বিশালতা এবং নান্দনিক সৌন্দর্য। এরপর তিনি যে প্রবন্ধ রচনা করেছেন ও জার্মান ভাষা থেকে অনুবাদ করেছেন সেখানে তার ভাষান্তর কুশলতা বাংলা সাহিত্যে বিশেষ ভাবে স্মরণীয়। তার নিজস্ব গদ্যরীতি বর্ণাঢ়্য, প্রতিমাবহুল এবং শব্দের নবায়নে চিহ্নিত।
গ্রন্থপঞ্জী 
তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল -

'যৌবনবাউল' (১৯৫৯)
'নিষিদ্ধ কোজাগরী'
'রক্তাক্ত ঝরোখা' (১৯৬৯)
'ছৌ-কাবুকির মুখোশ' (১৯৭৩)
'গিলোটিনে আলপনা'(১৯৭৭)
'দেবীকে স্নানের ঘরে নগ্ন দেখে'(১৯৮৩)
'মরমী করাত' (১৯৯০)
'আলো আরো আলো' (২০০৯)
'সে কি খুঁজে পেল ঈশ্বরকণা'(২০১২)
'নিরীশ্বর পাখীদের উপাসনালয়ে'(২০১৩)
'এখন নভোনীল আমার তহবিল' (২০১৪)
'পাহাড়তলীর বাস্তুহারা'
প্রবন্ধগ্রন্থ-

'শিল্পিত সমাজ' (১৯৬৯)
'স্থির বিষয়ের দিকে' (১৯৭৬)
অনুবাদ ও সংকলন গ্রন্থসমূহ -

'সপ্তসিন্ধু দশদিগন্ত'
'প্রাচী-প্রতীচীর মিলনমেলার পুঁথি'
'প্রেমে পরবাসে' (১৯৮৩)
'হাইনের কবিতা'
'অঙ্গীকারের কবিতা'(১৯৭৭)


তার রচিত অন্যান্য গ্রন্থগুলির মধ্যে আছে -

শরণার্থীর ঋতু ও শিল্প ভাবনা , আনন্দ পাবলিশার্স, ১৯৯৩। আইএসবিএন ৮১-৭২১৫-১৫৯-৪, ভ্রমনে নয় ভুবনে , আনন্দ পাবলিশার্স। আইএসবিএন ৮১-৭০৬৬-১৪৫-৫, ছায়াপথেরা সান্দ্র সমলাপিকা , আনন্দ পাবলিশার্স। আইএসবিএন ৮১-৭২১৫-২৭৭-৯, এখনো নামেনি, বন্ধু, নিউক্লিয়ারা শীতের গোধূলি , আনন্দ পাবলিশার্স। আইএসবিএন ৮১-৭২১৫-৯৯৬-X, জ্বরের ঘোরে তরাজু কেঁপে আয়, সমবায়ী শিল্পেরা গরজে, তুষার জুড়ে ত্রিশূলচিহ্ন, দক্ষিণ এশীয় ভাষাগুলি থেকে অনুবাদে সমস্যা , (ইউনিভার্সিটিট হাইডেলবার্গ, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত দ্বারা), ভারতীয় কবিতায় লিরিক (১৯৬২), দ্য মিস্টিক্যাল স অ্যান্ড আদার পোয়েমস (রোল্যান্ড হিন্দ্মার্শ, সাহিত্য আকাদেমি, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত দ্বারা) (১৯৯৬)
দাশগুপ্ত অনেক পুরস্কার এবং সম্মান পেয়েছেন। তার মধ্যে আছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সুধা বসু পুরস্কার (১৯৮৩), জার্মানিতে গ্যয়ঠে পুরস্কার (১৯৮৫), আনন্দ পুরস্কার (১৯৮৫), প্রবাসী ভারতীয় সম্মান (১৯৮৫), রবীন্দ্র পুরস্কার (২০০৪), তার কবিতার বই মরমী করাত (অনুবাদ করেছেন দ্য মিস্টিক্যাল স অ্যান্ড আদার পোয়েমস) এর জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৯২)[৩] এবং প্রবাসী ভারতীয় সম্মান (২০০৫)।

 মৃত্যু ১৭ নভেম্বর ২০২০। বয়স ৮৭।
হির্শবার্গ জার্মানি 

কবিতা পাঠ।

বধুবরণ 

পানের তলায় তােমার মুখ ঢাকা,
বাইরে আমি দাঁড়িয়ে,
পানে ঢাকা তােমার মৌন মুখ,
মুখর আমি বাইরে বাইরে ঘুরছি।

গােধুলি এলাে গােখুররেণু মাখা,
হাত-বাড়ানাে একটি ভিক্ষুক
চৌকাঠ মাড়িয়ে ;
ফিকির খুঁজে আমি তােমার দয়া কুড়ােচ্ছি।

আমি তাে এক শখের নিছক শব্দব্যবসায়ী,
আনন্দের ক্লান্তি আনে আমার চোখে ঘুম,
পানের তলায় ঢাকা তােমার মুখ
স্তব্ধকল্পদ্রুম ।

জানলা ভেঙে চোখে পড়ল, এখনও সেই বেঁচে
পার্শিদের গােরস্থান – নিষ্ফলা পাষাণ,
চোখ ফেরালাম, দুটি পানের মন্দিরায় বেজে

  তােমার মুখ বাঁচা-মরার অতল ঐকতান!




বুধুয়ার পাখি।

জানাে এটা কার বাড়ি? শহুরে বাবুরা ছিল কাল, 

ভীষণ শ্যাওলা এসে আজ তার জানালা দেয়াল 

ঢেকে গেছে, যেন ওর ভয়ানক বেড়ে গেছে দেনা, 

তাই কোনাে পাখিও বসে না! 

এর চেয়ে আমাদের কুঁড়েঘর ঢের ভালাে, ঢের

দলে-দলে নীল পাখি নিকোনাে নরম উঠোনের 

ধান খায়, ধান খেয়ে যাবে-

বুধুয়া অবাক হয়ে ভাবে।

 

এবার রিখিয়া ছেড়ে বাবুডির মাঠে 

বুধুয়া অবাক হয়ে হাঁটে, 

দেহাতি পথের নাম ভুলে 

হঠাৎ পাহাড়ে উঠে পাহাড়ের মতাে মুখ তুলে 

ভাবে : ওটা কার বাড়ি, কার অত নীল, 

আমার ঘরের চেয়ে আরাে ভালাে, আরাে 

নিকোনাে উঠোন তার, পাখিবসা বিরাট পাঁচিল! 

ওখানে আমিও যাব, কে আমায় নিয়ে যেতে পারাে?

 

এইভাবে প্রতিদিন বুধুয়ার ডাকে 

কানায় কানায় আলাে পথের কলসে ভরা থাকে, 

ঝাঁকে-ঝাঁকে পাখি আসে, কেউ তার দিদি, কেউ মাসি, 

রুপােলি ডানায় যারা নিয়ে যায় বুধুয়ার হাসি।।


মুক্তি 

১.

তুমি এসাে বার্লিনের দুদিক থেকে

 অবিভক্ত সাদা-কালাে খঞ্জন আমার

 ছৌ-কাবুকির ছদ্মবেশে

 চূর্ণ করে দাও যত অলীক সীমান্ত

 আমি যদি কৃত্তিম প্রাচীর গড়ি

 মৃদু পক্ষাপাতে ভেঙে দিয়াে

 ডানার অটুট রাখাে ভাঙে যদি আমাদের প্রেম ।

২.

উত্তর অতলান্তিকে বৃষ্টি হলে

 তােমার-এখানে কেন রৌদ্র হবে

 জানি তুমি ডােরাকাটা স্বাতন্ত্র কায়েম রাখবে বলে

 থেকে-থেকে কীরকম অচেনাসমান হয়ে যাও

 এমন কি কেঁপে ওঠো তােমার ডানায় যদি হাত রাখি ।।

অপূর্ণ 

দ্বিতীয় ভুবন রচনার অধিকার


দিয়েছ আমার হাতে-


এই ভেবে আমি যত খেয়াপারাপার


করেছি গভীর রাতে, 


প্রতিবার তরী কান্নায় শুরু হয় 


কান্নায় ডোবে জলে, 


হাসিমুখে তবু কেন হে বিশ্বময় 


তােমার তরণী চলে ? 


তারপর তীরে ফিরে আসি নিরালায়, 


মূর্খনেশায় ভাবি, 


দূর থেকে তুমি আসবে অধীর পায়ে 


বলবে : ‘আমার দেশে 


তাের সেই খেয়া উজানে গিয়েছে ভেসে, 


ফিরিয়ে আনতে যাবি?’


 


উত্তর দেব : সেই তরী তুমি নাও, 


ছিন্ন সে-পাল তুলে, 


আজ তুমি শুধু একবার পাড়ি দাও 


এ নদীর কালাে চুলে ; 


দেখি কোন্ ফুলে প্রফুল্ল কর তার 


শােকার্ত শর্বরী, 


এই পারে আমি বাসী ফুল তুলি আর 


বালির পসরা করি।



=================={={{====={======={=


No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...