"তাঁর অমর সৃষ্টিকর্মের মধ্যে রয়েছে শিশু সাহিত্য
দ্য জাঙ্গল বুক, জাস্ট টু স্টরিস, পাক অফ পুক্স হিল, কিম; উপন্যাস কিম; কবিতা ম্যান্ডালে, গুঙ্গা ডিন ইত্যাদি। এছাড়াও ১৮৯৫ সালে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় কবিতা ইফ - রচনা করেন। ছোটগল্প রচনার আধুনিক শিল্প নির্দেশনার একজন অন্যতম উদ্ভাবক হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে। "
জন্ম ডিসেম্বর ৩০, ১৮৬৫ মুম্বাই, ভারত। কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ গাছালির মধ্যেই বাগান দিয়ে ঘেরা শান্ত বাড়িটা তার ভগ্ন দশাতেও চুপচাপ অতীতের স্মৃতি বহন করছে। রুডইয়ার্ডের বাবা জন লকউড কিপলিং জে জে আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। এক সময় রুডইয়ার্ড ও তার ভাই বোনেরা মাতিয়ে রাখত এই বাড়ি।
জন্মের পর প্রথম পাঁচ বছর তার এই বাড়িতেই কাটে। এই পাঁচ বছরের বেশির ভাগ সময়টাই কাটে তার বাড়ির আয়ার সঙ্গে। সে সময় আয়ারা বেশির ভাগই গোয়ার নেটিভ ক্যাথলিক পরিবার থেকে আসত। রুডইয়ার্ডের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তার সঙ্গে আর এক জন সব সময়ের সঙ্গী ছিল লাল সোনালি পাগড়ি পরিহিত সুরাতের ছেলে মিতা। আয়া ও মিতা রূপকথার গল্প শুনিয়ে তার মনের মধ্যে কল্পনার নানা জাল বুনতেন। রুডইয়ার্ডের লেখায় তাই বারে বারে ফিরে এসেছে ভারতীয় আয়াদের কথা। পাঞ্চ ও জুডি এ রকমই তার জীবন থেকে উঠে আসা চরিত্র।
তার মা চেয়েছিলেন তাকে খাঁটি সাহেবি কায়দায় বড় করে তুলতে। তাই তিনি তাকে পাঠিয়ে দেন ইংল্যান্ডে পড়াশুনোর জন্য, ছ’বছর বয়েসেই। সে সময় এ রকম চল ছিল। চল্লিশের দশক থেকে এই রেওয়াজ শুরু হয়। সে সময়ের বম্বে টাইমসের পাতা উল্টোলে প্রায়ই বিজ্ঞাপন থাকত অমুক গভর্নেস তার নিজের দায়িত্বে ব্রিটিশ সন্তানদের নিয়ে যেতে চান ইংল্যান্ডে লেখা পড়া ও ইংরাজি আদবকায়দা শেখাবার জন্য। ইংলান্ডে ওয়েস্টওয়ার্ড হো তে পড়াকালীন তার সাহিত্যিক প্রতিভার বিকাশ হয়। প্রধান শিক্ষক তার লেখা কবিতার প্রশংসা করতেন। কলেজের পত্রিকার সম্পাদনা করার কাজ তাকে প্রধান শিক্ষকই দিতেন। এই সময়ের লেখা কবিতাগুলো রুডইয়ার্ড তার বাবার কাছে ভারতবর্ষে পাঠিয়ে দিতেন। জন লকউড কিপলিং তা ‘স্কুলবয় লিরিক’ নামে ১৮৮১ সালে প্রকাশ করেন।
১৮৮২ সালে তিনি ভারতে ফিরে আসেন। তার বাবা তখন লাহৌরে। সংগ্রহালয় কিউরেটর। রুডইয়ার্ড যান বম্বে প্রেসিডেন্সির আর এক শহর সেই লাহৌরেই। সেখানে তিনি একটি সংবাদপত্র সম্পাদনার কাজ পান। ক’বছর পরে এলাহাবাদের সংবাদপত্র পায়োনিয়ার থেকে ডাক আসে। এই সংস্থায় তার ব্যক্তিগত সাহিত্যের কাজ অনেক স্বতঃস্ফূর্ত, স্বাধীন ছিল। এ সময়ে তিনি নানা ব্যঙ্গাত্মক কবিতা, ৭০টি ছোট গল্প লেখেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন তার এই রচনাগুলোয় এডগার এ্যালেন পো, মোপাসঁ, ব্রেট হার্টের প্রভাব স্পষ্ট। রুডইয়ার্ডের প্রথম উপন্যাস ‘দ্যা লাইট দ্যাট ফেইল্ড’ তেমন সফলতা পায়নি। কিন্তু তার ‘লাইফ'স হ্যান্ডিক্যাপ’, কবিতা ‘ব্যারাকরুম ব্যালাডস’এ অ্যালফ্রেড, লর্ড টেনিসনের জায়গাতে নিজেকে তিনি প্রতিস্থাপন করেছিলেন। ‘ড্যানি ডিভের’, ‘টমি’, ‘ফাজি-উজি’ এবং ‘গঙ্গাদিন’-এ তিনি এক নতুন রচনা শৈলীর জন্ম দেন।
সাহিত্য-কর্ম
The Story of the Gadsbys (১৮৮৮)
Plain Tales from the Hills (১৮৮৮)
The Phantom Rickshaw and other Eerie Tales (১৮৮৮)
The Light That Failed (১৮৯০)
Mandalay (১৮৯০) (কবিতা)
Gunga Din (১৮৯০) (কবিতা)
The Jungle Book (১৮৯৪) (ছোট গল্প)
The Second Jungle Book (১৮৯৫) (ছোট গল্প)
If— (১৮৯৫) (poetry)
Captains Courageous (১৮৯৭)
The Day's Work (১৮৯৮)
Stalky & Co. (১৮৯৯)
Kim (১৯০১)
Just So Stories (১৯০২)
Puck of Pook's Hill (১৯০৬)
Life's Handicap (১৯১৫) (ছোট গল্প)
রুডইয়ার্ডের কিম এককথায় দুটোই আইরিশ এবং তাই খাঁটি ব্রিটিশয়ের থেকে সামাজিক মর্যাদায় অনেক নিচু —এটাই রুডইয়ার্ডের চোখে তাকে সার্ভিস দেওয়ার উপযুক্ত করে। কিম, ক্রেইগটন, মেহেবুব এবং বাবু এমনকী লামা ইত্যাদি চরিত্রগুলো পৃথিবীটা দেখে সেই চোখে, যে চোখে রুডইয়ার্ড কিপলিং দেখেছিলেন। রুডইয়ার্ডের চোখে ভারতবর্ষ সাম্রাজ্যবাদের কাছে অবদমিত একটি দেশ। তার কাছে ভারতবর্ষের পক্ষে এটাই সমীচীন যে ইংল্যান্ডের শাসন মেনে নেওয়া। কিপলিং-এর লেখার যারা ভক্ত, বিশেষ করে মার্কিনি, ইংলিশরা তার রচনায় ভারতবর্ষের বর্ণনা একটা ভৌগলিক পরিসীমার পরিবর্তে—‘একটা সময় সীমাহীন, পরিবর্তনহীন পরিবেশ’ হিসাবে পান যা তাদের চোখে অনেক বেশি কাব্যিক রচনা মনে হয়েছে। কিন্তু তা মনে করলে ভুল হবে। কিপলিং এর লেখায় দুটো বিশেষ ভাব লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে ‘কিম’ পড়লে — এটা এক শ্বেত মানুষের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের বর্ণনা। অন্যটা হল, একটি বিস্তারিত ঔপনিবেশিক শাসনপদ্ধতি —যার অর্থনীতি, কর্মপদ্ধতি ও ইতিহাস একটা স্বাভাবিক সত্যের মর্যাদায় উঠে এসেছে। যার বৃহত্তর অর্থ হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ঔপনিবেশিক বিভাজনের এক দিকে ইউরোপের বেশির ভাগ সাম্রাজ্যবাদী দেশ যেমন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, হল্যান্ড, জার্মানি, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, স্পেন, ইটালি, রাশিয়া। অন্য দিকে সাম্রাজ্যের প্রাচুর্য, বিভিন্ন বর্ণ, যাদের মনে করা হয় নিচু, পর নির্ভরশীল প্রজা।
কিপলিংএর ভারত পরিবর্তনহীন ভারতবর্ষ। এই চিন্তাধারার মধ্যে প্রাচ্য বাদী উইলিয়াম জোন্স, এডমুন্ড বার্কি, কোলব্রুক, হেনরি মেইন, জেরেমি বেন্থাম, জেমস মিল, জন স্টুয়ার্ট মিলের রাজনৈতিক দর্শনের প্রভাব পরিষ্কার। যে দর্শনে মনে করা হয় ভারতবর্ষের এবং ইউরোপীয়দের উদ্ভবের আকর একই। তাই প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও তার সংস্কৃতি অনেকটাই উন্নত। কিন্তু যুগের অগ্রগতির সঙ্গে ভারতীয় সভ্যতার অগ্রগতি হয়নি। ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি একই জায়গায় এসে থেমে রয়েছে। তাই পরবর্তী কালে জেরেমি বেন্থাম ও তার অনুসরণকারী জেমস মিল, জন স্টুয়ার্ট মিল মনে করেন যে ভারতবর্ষকে একটা সুন্দর শাসন ব্যবস্থা দিতে হবে, দিতে হবে একটা সুন্দর আইন। সেটা দিতে একমাত্র ব্রিটিশরাই পারে। তাই ব্রিটিশদের দায়িত্ব তাদের আধুনিক শাসন ব্যবস্থা দিয়ে নতুন আইনকানুনের মাধ্যমে তাদের সভ্য করে তোলা। পরিবর্তন আনতে হবে ভারতীয়দের রুচি এবং সংস্কৃতিতে। সে সময় বম্বেতে জে জে স্কুল অফ আর্ট বা বম্বে স্কুল অফ আর্ট অনেকটা সেই উদ্দেশ্যেই স্থাপনা করা হয় যে, এই ভারতীয়দের রুচিশীল শিল্পকলার সঙ্গে পরিচয় করাতে হবে। এক কথায় বলা যায় ভারতবর্ষে যখন সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ তুঙ্গে তখন রুডইয়ার্ড কিপলিংএর কলম থেকে এমন লেখা বেরিয়ে এসেছে যেগুলো পরবর্তী কালে মানুষ ফিরিয়ে দিয়েছে।
স্ত্রী: Caroline Starr Balestier Kipling (বিবাহ. ১৮৯২–১৯৩৬)। সন্তান: জন কিপলিং, জোসেফাইন কিপলিং, এলসি ব্যামব্রিজ।
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার -সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (১৯০৭).
মৃত্যু - ১৮ জানুয়ারি ১৯৩৬ (বয়স ৭০)
মিড্লসেক্স হাসপাতাল, লন্ডন, ইংল্যান্ড।
No comments:
Post a Comment