১৩ মার্চ ১৮৬০ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালি গ্রামে (বর্তমানে বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলায়) তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হলধর সেন । ১৮৮১ সালে স্ত্রী, কন্যা ও মাতাকে হারিয়ে হিমালয়ে চলে যান।
১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে কুমারখালি থেকে তিনি এন্ট্রান্স পাস করেন এবং তারপর কলকাতার জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউসনে এল.এ পর্যন্ত পড়েন । এরপর গোয়ালন্দ বিদ্যালয়ে, দেরাদুনে এবং মহিষাদলে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন ।
১২৯৭ বঙ্গাব্দে তিনি হিমালয় বেড়াতে যান । তার ভ্রমণবিষয়ক বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রবাসচিত্র, হিমালয়। তার রচিত গল্পের বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নৈবেদ্য, কাঙ্গালের ঠাকুর, বড় মানুষ প্রভৃতি। তার রচিত উপন্যাস হল দুঃখিনী, অভাগী, উৎস প্রভৃতি। তার সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হরিনাথ গ্রন্থাবলী, ও প্রমথনাথের কাব্য গ্রন্থাবলী।
গ্রামবার্তা, সাপ্তাহিক বসুমতী, হিতবাদী, সুলভ সমাচার প্রভৃতি সাময়িক পত্রিকাতে তিনি সম্পাদক বা সহ-সম্পাদক হিসাবে যুক্ত ছিলেন । পরে ১৩২০ বঙ্গাব্দ থেকে ১৩৪৫ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৬ বছর তিনি ভারতবর্ষ মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন. তার সাহিত্যকর্মের জন্য ব্রিটিশ সরকার 'রায় বাহাদুর' উপাধি দেয়।
রচনাকর্ম :
ভ্রমণবিষয়ক বই
প্রবাসচিত্র
হিমালয়
হিমালয় পথিক
হিমাচল-বক্ষে
হিমাদ্রি
দশদিন
আমার য়ুরোপ ভ্রমণ (অনুবাদ)
মুসাফির মঞ্জিল
দক্ষিণাপথ
মধ্যভারত
গল্পের বই
নৈবেদ্য
কাঙ্গালের ঠাকুর
বড় মানুষ
গল্প
নৈবেদ্য, ছোটকাকী ও অন্যান্য গল্প, নূতন গিন্নী ও অন্যান্য গল্প, পুরাতন পঞ্জিকা (গল্প ও ভ্রমণ), আমার বর ও অন্যান্য গল্প, পরাণ মণ্ডল ও অন্যান্য গল্প, আশীর্ব্বাদ, এক পেয়ালা চা, কাঙালের ঠাকুর, মায়ের নাম, বড় মানুষ প্রভৃতি
উপন্যাস
দুঃখিনী
অভাগী
উৎস
ষোল-আনি
বিশুদাদা
করিম সেখ
আলাল কোয়াটারমেন (অনুবাদ)
বড়বাড়ি
হরিশ ভাণ্ডারী
ঈশানী
পাগল
চোখের জল
সোনার বাংলা
দানপত্র
পরশপাথর
ভবিতব্য
তিনপুরুষ
উৎস
চাহার
দরবেশ (উর্দু উপন্যাস, অনুবাদিত)
সম্পাদিত বই
হরিনাথ গ্রন্থাবলী
প্রমথনাথের কাব্যগ্রন্থাবলী
জাতীয় উচ্ছ্বাস
জীবন গ্রন্থ
কাঙাল হরিনা
পাঠ্যপুস্তক
বাঙলা দ্বিতীয় পাঠ, প্রথম শিক্ষা, শিশুবোধ, নবীন ইতিহাস, বঙ্গ গৌরব
সম্পাদিত পত্রিকা
‘বঙ্গবাসী’
‘বসুমতী’
‘সন্ধ্যা’
‘হিতবাদী’
‘সুলভ সমাচার’
‘ভারতবর্ষ
‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’
আত্মজীবনী
জলধর সেনের আত্মজীবনী।
তিনি ১৯৩৯ সালে কলকাতায় মারা যান।
বিদ্যাসাগর ও জলধর সেন
গণিতের দিকে বিশেষ ঝোঁক ছিল জলধরের। ইচ্ছে ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হবেন। কিন্তু কলকাতায় থেকে জীবনধারণ ও পড়াশুনো, এই দুইয়ের ব্যয়ভার বহন করা ছিল অসম্ভব। তা সত্ত্বেও পরীক্ষার পরে চার মাস বসেছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য। কলকাতায় বিদ্যাসাগরের সঙ্গে দেখা করে জলধর নিজের কথা জানালেন। সব শুনে বিদ্যাসাগর বললেন, “এ বছরটা অন্য কলেজে ভর্তি হ, আসছে বছর তোকে সেকেন্ড ইয়ারে নেবো। মাইনে-টাইনে কিছু দিতে হবে না।” তিনি আরও বললেন, “মনে কিছু করিস না, এ বছর তোর কলেজের মাইনে আমি দেবো। তারপর সেকেন্ড ইয়ারে তো এখানেই আসছিস।” জলধরের কথায়,“আমি তখন কেঁদে ফেলেছি। মানুষের হৃদয়ে যে এত দয়া থাকতে পারে, এ আমি জানতাম না। আমার সেই অবস্থা দেখে ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ উঠে এসে আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, ‘ওরে পাগল দারিদ্র অপরাধ নয়। আমিও তোর মতো দরিদ্র ছিলাম’।
রজনীকান্ত সেন ও জলধর সেন
তখন তিনি বসুমতী পত্রিকার সম্পাদক। ‘‘তখন স্বদেশীর বড় ধূম। এক দুপুরে আমি বসুমতী আফিসে বসে আছি, এমন সময় রজনী (রজনীকান্ত সেন) ও রাজশাহীর অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় এসে উপস্থিত। রজনী সেই দিনই দার্জিলিং মেলে বেলা এগারোটা নাগাদ কলকাতায় পৌঁছে অক্ষয়কুমারের মেসে উঠেছিলেন। মেসের ছেলেরা জেদ ধরেছেন একটি গান লিখে দেওয়ার জন্য। গানের নামে রজনী পাগল হয়ে যেতেন। গানের মুখরা ও একটি অন্তরা লিখে দাঁড়িয়ে পড়লেন। সকলে গান শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠল। বললেন, ‘এই তো গান হইয়াছে, এ বার জলদা’র কাছে যাই। একদিকে গান কম্পোজ হউক, আর একদিকে লেখা হউক।’ আমি দেখে বললাম, আর কই? রজনী বলিল, ‘এইটুকু কম্পোজ কর, বাকিটুকু হইয়া যাইবে।’ সত্যি কম্পোজ আরম্ভ হইল আর অন্য দিকে গান লেখাও শেষ। আমি আর অক্ষয় সুর দিলাম। গান ছাপা হয়ে এল। এই গান ঘিরে ছেলেদের মধ্যে সেকি উন্মাদনা! স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ গানটি সর্বজনমনে স্পর্শ করে গেল।” এটি জলধরের নিজের কলমেই লেখা। এবং ইতিহাস খ্যাত সেই গানটি হল, ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়...’।
সম্মান
• ১৯১৩ তে ভারতবর্ষ পত্রিকা সম্পাদনার কাজে যুক্ত হওয়ার ৯ বছর পরে ১৯২২-এর ৩ জুন ব্রিটিশ ভারতের গর্ভনর জেনারেল জলধর সেনকে ‘রায় বাহাদুর’ উপাধি দান করেন।
• ১৩৩৯-এর ১২ ভাদ্র, কলকাতার রামমোহন লাইব্রেরি হলে প্রথম জলধর সংবর্দ্ধনার আয়োজন করা হয়। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সে অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করেন।
যে সব প্রতিষ্ঠানে আসন অলঙ্কৃত করেন জলধর সেন—
• তৃতীয় বার্ষিক মেদিনীপুর সাহিত্য সম্মিলন, ১৩২২, সভাপতি
• বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ১৩২৯-৩০, ১৩৪৩-৪৫, সহ-সভাপতি
• সাহিত্য শাখার সভাপতি, বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মীলন, রাধানগর ১৩৩১
• সাহিত্য শাখার সভাপতি, প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মিলন, ইন্দৌর, ১৩৩৫
• সর্বাধ্যক্ষ, রবিবাসর, ১৩৩৮
• বিশিষ্ট সদস্য, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, ১৩৪১
• নিখিলবঙ্গ জলধর সংবর্দ্ধনা, ১৩৪১
• সংবর্দ্ধনা, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, ১৩৪২।
=========={{{{{{∆∆∆∆∆∆∆∆∆}}}}}}====
No comments:
Post a Comment