রামকমল সেন.
জন্ম ১৫ মার্চ ১৭৮৩ সালে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হুগলি নদীর তীরবর্তী গরিফা গ্রামে । পিতার নাম গোকুল চন্দ্র সেন। গ্রামেরই এক পাদরির স্কুলে ও কলকাতায় রামজয় দত্তের স্কুলে ইংরাজী ও বাড়িতে সংস্কৃত শেখেন । ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার চিফ ম্যাজিসেট্রট মি. নেমির অধীনে এবং ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে গভর্নমেন্টের আর্কিটেক্টর অধীনে শিক্ষানবিশি করেন।
শিক্ষানবিশির পর ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে ডা. উইলিয়াম হান্টারের হিন্দুস্থানী প্রিন্টিং প্রেসে কম্পোজিটর ও পরে তত্ত্বাবধায়ক হন। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে এশিয়াটিক সোসাইটির কেরানির কাজে নিযুক্ত হয়ে নিজ কর্মকুশলতায় ক্রমে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ভারতীয় হিসাবে সম্পাদকের পদ লাভ করেন । বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চার উদ্দেশ্যে স্কুল বুক সোসাইটির পক্ষ থেকে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি তারিণীচরণ মিত্রের সহযোগে ১৩১ টি কাহিনী সংবলিত 'নীতিকথা' প্রথম খণ্ড ও ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে 'হিতোপদেশ' গ্রন্থ দুটি সংকলন ও অনুবাদ করেন। 'ফার্মাকোপিয়া' গ্রন্থে'র অনুবাদ করেন 'ঔষধসার সংগ্রহ' নামে । ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু কলেজর অধ্যক্ষ ছিলেন রামকমল সেন। ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ডা. উইলসনের অধীনে ট্যাঁকশালের দেওয়ান হন। এরপর ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ই নভেম্বর ব্যাঙ্ক অব বেঙ্গলের (পূর্বতন ব্যাঙ্ক অব ক্যালকাটা ) দেওয়ান নির্বাচিত হয়ে আমৃত্যু ওই পদে ছিলেন। এরই সাথে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে র জুন মাস থেকে ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সংস্কৃত কলেজের সম্পাদক ছিলেন তিনি। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সুপারিশ কমিটির সদস্য, ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে সরকারি বিমা কোম্পানির সাব কমিটির একমাত্র বাঙালি সভ্য, সেভিংস ব্যাঙ্ক কমিটির সদস্য ছিলেন ।
রামকমল সেই সময় বহু সামাজিক কাজকর্মে লিপ্ত ছিলেন । ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে তারই উদ্যোগে গৌড়ীয় সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয় । এছাড়া সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যেমন ডিস্ট্রিক্ট চ্যারিটেবল সোসাইটি'র সভ্য, সোসাইটির হাসপাতালের অধ্যক্ষ, জমিদার-সভার প্রতিষ্ঠাতা ও নিয়মাবলীর রচয়িতা ছিলেন । পাদরি কেরির সহযোগিতায় ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড হর্টিকালচারাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে তার সহকারী সভাপতি হন। ডা. ওয়ালিচ নামে জনৈক দিনেমার উদ্ভিদতত্ত্ববিদ রামকমলের সহায়তায় কলকাতা জাদুঘরের সূচনা করেন । তার চেষ্টায় মুমূর্ষু ব্যক্তিদের গঙ্গায় ডুবিয়ে মারা, চড়কে শূলে বিদ্ধ হওয়া ইত্যাদি কুপ্রথা নিবারিত হয়েছিল। তিনি ডিরোজিও ও তার ছাত্র 'ইয়ং বেঙ্গল' দলের বিরোধী ছিলেন । ডিরোজিও অপসারণে তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। তার সংকলিত ' ইংরাজী-বাংলা অভিধান' দেশীয় লোকের সম্পাদিত প্রথম অভিধান । ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে সংকলনের কাজ শুরু হয় এবং এই কাজে কিছুদিন তিনি ফেলিক্স কেরির সহায়তা পেয়েছিলেন । তিনিই দেশে প্রথম শিল্পমেলার অন্যতম উদ্যোক্তা। জয়পুররাজের মন্ত্রী হরিমোহন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেন তার পৌত্র।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে রামকমলের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ১৮১৭ থেকে ১৮৩৪ সাল পর্যন্ত সতেরো বছর যাবৎ দেশীয় পন্ডিতদের দ্বারা দুই খন্ডে ইংরেজি-বাংলা অভিধান সংকলন করানো তাঁর এক অসাধারণ অবদান। তিনিই প্রথম এ কৃতিত্বের অধিকারী হন। এ কাজে তিনি ফেলিক্স কেরীর সহায়তা পেয়েছিলেন। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ: নীতিকথা (১ম ভাগ, ১৮১৮), ঔষধসার-সংগ্রহ (১৮১৯), হিতোপদেশ (১৮২০) ইত্যাদি।
রামকমলের সন্তানাদি
হরিমোহন [জন্ম: ৭ আগষ্ট ১৮১২]
প্যারীমোঝন [জন্ম: ১৭ মার্চ, ১৮১৪]
বংশীধর [জন্ম: অজ্ঞাত]
মুরলীধর [জন্ম: অজ্ঞাত]
রামকমল সেন ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে র ২ রা আগস্ট প্রয়াত হন ।
========={{{{{{{∆∆∆∆∆∆}}}}}}}}}=======
No comments:
Post a Comment