গোলাম সামদানী কোরায়শী
অমনি ওরা বললো এসে, ‘মানুষ’ তুমি,
গলায় মালা দেবো তোমাকেই।
শুনে ওদের কথা
বুকের মাঝে প্রশ্ন হয়ে বাড়লো নীরবতা।
তাহলে কী পেরিয়ে অনেক গলি
ঝেরে ঝুরে পুরনো সব কথামালার থলি
যে মানুষের খোঁজে আমি এখনো পথ চলি
সেই মানুষই আছে আমার মাঝে?
ষাটটি বছর বৃথাই গেলো মানুষ খোঁজার কাজে?
বললো ওরা, নয় তা বৃথা নয়
মানুষ খোঁজো বলেই তোমার ‘মানুষ’ পরিচয়।
এই না বলে পরিয়ে দিলে মালা
মনে মনে বুঝতে পেলাম মানুষ হবার জ্বালা।
‘মানুষ’ সেতো পরশমণি ভাই
আমি আজো মানুষ খুঁজি তাই।
(মানুষ )
সাহিত্যিক-শিক্ষাবিদ গোলাম সামদানী কোরায়শী ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বীরআহাম্মদপুর গ্রামে জন্ম ৫ এপ্রিল ১৯২৯ - তার মাতুলালয়ে। নেত্রকোনার চন্দ্রনাথ হাই স্কুলে ছাত্র হিসেবে এক বছর পর ফিরে আসেন গৌরীপুরে; অতপর নেত্রকোনার মদন উপজেলার বাস্তায় মাদ্রাসা জীবন শুরু; ময়মনসিংহে ও ঢাকায় শিক্ষাগ্রহণ এবং টাইটেল ডিগ্রি লাভ; টাইটেলে তিনি মোমতাজুল মোহাদ্দেসীন এবং স্বর্ণপদক লাভ করেন। মাদ্রাসার ছাত্রজীবনে তিনি মাঠের রাখালের দায়িত্বও পালন করেন। শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন; নিজেকে প্রস্তুত করে নেন মুক্তচিন্তার একজন মানুষ হিসেবে। মানুষের মুক্তিচিন্তায় জীবন উৎসর্গ করেন। ।পড়াশোনার হাতেখড়ি পরিবারে। তারপর ঘাটুরকোনা প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাঠালিয়া মিডল ইংলিশ স্কুল থেকে ১৯৩৫-৩৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর ১৯৩৭–৪১ সাল পর্যন্ত লেখাপড়া করেন নেত্রকোণার চন্দ্রনাথ হাই স্কুল ও বীর আহাম্মদপুর হাই স্কুলে। এরপর ১৯৪৫-৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাস্তা জুনিয়র মাদ্রাসা (নেত্রকোণা) ও কাৎলাসেন মাদ্রাসায় পড়েন (ময়মনসিংহ)। কাৎলাসেন মাদ্রাসা থেকে ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের আলিম ১ম শ্রেণিতে অষ্টম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৯৫২ সালে জামাতে উলা (ফাজিল) ১ম শ্রেণিতে তৃতীয় স্থান ও ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে এম. এ (কামিল) ১ম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেন। ১৯৫৫-৫৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নাসিরাবাদ ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (ময়মনসিংহ) থেকে আই. এ ১ম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করে বাংলায় ভর্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ বাংলায় (অনার্স) ২য় শ্রেণিতে পঞ্চম ও ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে এম. এ. বাংলা ২য় শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। সামরিক শিক্ষা (ইউ ও টি সি) ২০ দিনের মিলিটারি ট্রেনিং, বার্ষিক ক্যাম্প, ময়নামতি, কুমিল্লা (১৯৫৩) হাই মাদ্রাসা শিক্ষা অঙ্ক ও ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষা (১৯৫৫) দেন।
কর্ম জীবন
আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে ৩ বছর ধরে রাখাল (১৯৪২-৪৫) ছিলেন। তারপর ধানীখোলা বাজার, ঈদগাহ্ মাঠ মসজিদের ইমাম ছিলেন। তিনি ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ধানীখোলা হাই মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। এরপর তিনি ড. মুঃ শহীদুল্লার সম্পাদনা সহকারী, পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান প্রকল্প ও পান্ডুলিপি ও সংকলন বিভাগ, বাংলা একাডেমীতে (১৯৬১-৬৮) কাজ করেন। বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নাসিরাবাদ কলেজ, ময়মনসিংহ (১৯৬৮-৯১) যুক্ত ছিলেন।
সাহিত্য কর্ম
অধ্যাপক গোলাম সামদানী কোরায়শী’র সাহিত্য কর্ম বিশাল। তার মৌলিক রচনার পাশাপাশি অনুবাদ ও সম্পাদনার পরিমাণ বিশাল।
প্রবন্ধ
আরবি সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, বাংলা একাডেমী,
সাহিত্য ও ঐতিহ্য (মুক্তধারা),
ইসলাম ও আমেরিকা, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী,
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ইসলাম,
আসামীর কাঠগড়ায়;
পিতৃভাষা,
ঐতিহ্য অন্বেষা।
এছাড়া সম্পাদকীয় উপ-সম্পাদকীয় প্রবন্ধ হলোঃ আজকের বাংলাদেশ (অক্টোবর’৮৫ - জুন’৮৬), সপ্তাহে ৪টি, স্বনামে ও ছদ্মনামে, সাপ্তাহিক ময়মনসিংহ বার্তা, জেলা বোর্ড (১৯৭৮-৮৮)। এছাড়াও অসংখ্য প্রবন্ধ অগ্রন্থিত আকারে পত্র-পত্রিকা, সাময়িকী ও সংকলনে প্রকাশিত এবং অসংখ্য অপ্রকাশিত অরক্ষিত রয়েছে।
জীবনী ও আত্মজীবিনী
ছোটদের দুদুমিয়া,
ছোটদের বঙ্গবন্ধু (শিশু একাডেমী১৯৯০)।
যখন একাকী,
দিনলিপি (১লা জৈষ্ঠ্য ১০ চৈত্র ১৩৮০),
সিন্ধুর এক বিন্দু,
শিক্ষা ও কর্ম জীবন, দুই খন্ড (১৯৮৩-৯০)।
উপন্যাস
ষষ্ঠীমায়া (সেমেটিক মিথলজী ভিত্তিক রচনা, শুরু ১৯৭৯ অসম্পূর্ণ)
স্বর্গীয় অশ্রু (১৩৮০),
পুত্রোৎসর্গ (১৩৮১),
মহাপ্লাবন,
চন্দ্রাতপ(১৩৮৩) এগুলো তার সেমেটিক মিথলজী ভিত্তিক রচনা।
গল্প ও গল্প সংকলন
শ্রী গোলের আত্মকাহিনী প্রথম গদ্য রচনা (১৯৪৩),
লেখার দোকান,
কালকেতু উপাখ্যান,
কারূণের উট,
শাদ্দাদের বেহেস্ত,
কাল নাগিনী,
কোরবাণী,
দুর্ভিক্ষ,
কল্পনা ও বাস্তব,
এক যে ছিল কুল গাছ,
একুশের কড়চা,
কান্না,
শয়তানের দোকন,
জ্ঞানের ঘাট,
বাঁশী,
জায়দার বাপের বেহেস্ত,
হজ্জ্ব,
অভিনেত্রী,
ভাগ্যরেখা,
রক্ত চোষার ফরিয়াদ,
থার্ড ক্লাশ,
বিসমিল্লাহ,
বিশ্বাসঘাতকতা,
সাধু,
দাদা ইত্যাদি।
গল্প সংকলন
আদি,
অভিসার,
নরম গরম,
দুই ভাই,
দুই বোন,
দুই মা,
দুই বন্ধু,
গল্প শুনো ,
মেঘলা রাতের কাব্য,
বুড়া ঘুমালো পাড়া জুরালো,
তিন দিন তিন রাত প্রভৃতি।
নাটক
টুপিচোর,
আমাদের দেশ (নাটিকা),
গাধার কলজে,
সাতটি নক্শা,
সাপের ছোবল,
উটের মাংস,
শিয়ালের সাফাই, নাটিকা
সবুজ পাতা
ক্ষুধিত সিংহাসন,
হেমলক (নাটিকা), শেষের তিনটি শিশুতোষ নাটক।
উপন্যাস
প্রদীপের নিচে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক (রচনা শুরু ১৯৮৩ - অসম্পূর্ণ)
দেব না জানন্তি নাগরিক উপন্যাস (১৯৮৫),
রূপ ও রূপা পারিবারিক উপন্যাস (অসম্পূর্ণ)।
সংলাপ সম্পূর্ণ সংলাপে রচিত (১৯৯১)
কামিনী উপাখ্যান।
কবিতা ও কবিতা সংকলন সম্পাদনা
খেয়ালের ঝুলি,
দুর্ঘটনা,
উটকোর জিভ,
বাদশাজাদা ও গল্পিকা (কিশোর কবিতা সংকলন),
মানুষ (১২টি সনেটের সংকলন)।
ছড়া
গোবদা সাধুর কোর্তা (৩৮টি ছড়ার সংকলন),
ওলোট পালট,
আগডুম বাগডুম (ছড়া সংকলন) (১৩৯৭)।
গান
গান (২৫টি গানের সংকলন),
গানের খাতা (৪০টি গানের সংকলন)।
অনুবাদ সম্পাদনা
কালিলা ও দিমনা (বাংলা একাডেমী-১৯৬৫),
হেজাজের সওগাত,
মুঝে ভি শেকায়েত নেহী (জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র, ঢাকা-১৯৬৫),
ভেজাল নাটক (নাসিরাবাদ কলেজ বার্ষিকীতে প্রকাশিত-১৯৭৮),
আল-মুকাদ্দিমা (দুই খণ্ডে বাংলা একাডেমী প্রকাশিত ১৯৮১-৮২),
তারিখ-ই-ফিরোজশাহী (বাংলা একাডেমী প্রকাশিত ১৯৮২),
তোহ্ফা,
ফতেহাবাদের আউলিয়া কাহিনী,
অশাস্ত্রীয় পুরাণ,
শব্দার্শ অধ্যায়ন,
আমার অভিযোগ এগুলো বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত প্রকাশিত হয়। এছাড়া
চাটনী,
ফিরনী,
করিমা,
রূপকথা,
দোলনা থেকে কবর
পথের সাথী
হাদিস সংকলন,
ইসলামের গৌরব ও লজ্জা,
দ্বিপদ ১০১টি কবিতার সংকলন,
অজানা দ্বীপের কাহিনী (অসম্পূর্ণ)।
সম্পাদনা
পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান প্রকল্প (১৯৬১-৬৮),
পদ্মাবতী, আলাওল, বাংলা একাডেমী (১৯৬৫),
তোহফা, আলাওল, বাংলা একাডেমী (১৯৭৫) ও
সাপ্তাহিক ময়মনসিংহ বার্তা সম্পাদনা করেন।
অন্যান্য
নেংটির সংসার সদা সত্য কথা বলিব,
মীরজাফর,
বিড়ালের ডাক,
গরুর শিং এগুলো তাঁর রস রচনা সংকলন।
সবুজ ঘাসের দেশে (টি.ভি. কাহিনী চিত্র),
লেখার খাতা(বিবিধ বিষয়ের সংকলন)
ফার্সি - বাংলা অভিধান (অসম্পূর্ণ)।
প্রাপ্ত পুরস্কার
কুমারদী মাদ্রাসা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৫০)
এম.এ. কামিল পরীক্ষায় স্বর্ণপদক (১৯৫৪)
আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৭)
অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯০)
স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৭)
সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড
অধ্যাপক গোলাম সামদানী কোরায়শী অসংখ্য রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন।
তার মধ্যে তিনি সভাপতি হিসেবে-
বঙ্গবন্ধু পরিষদ,
ময়মনসিংহ সাহিত্য পরিষদ,
আকুয়া জুনিয়র হাই স্কুল কমিটি,
আকুয়া প্রাইমারি স্কুল ম্যানেজিং কমিটি,
বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ময়মনসিংহ শাখা (১৯৮৪-৯১)
উজিরাবাদ সমবায় সমিতি,
আকুয়া পৌর কবরখানা, ময়মনসিংহ
ও সহ-সভাপতি হিসেব-
ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাব,
উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী (ময়মনসিংহ)
এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে-
মাদ্রাসায়ে আলীয়া,
বাংলা সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৫৮),
বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (১৯৮৪-৯১) দায়িত্বে ছিলেন।
এছাড়া তিনি বিভিন্ন সংগঠনের আহ্বায়ক, উপদেষ্টা ও সদস্য ছিলেন। তিনি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ময়মনসিংহের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সিনেট (১৯৮২-৮৫, ১৯৮৭-৮৮) সদস্য, বাংলা একাডেমীর (নং ৪৪৫) আজীবন সদস্য ছিলেন।
তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেন জীবনযুদ্ধের জন্য। আমাদের সাহিত্যাঙ্গনে গোলাম সামদানী কোরায়শী এমন এক নাম, যাকে আমরা সবসময়ই শিক্ষক হিসেবে মান্যতা দিই। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তার পদচারণা আমাদের মুগ্ধ করে- ঋদ্ধ করে। তিনি প্রবন্ধ লিখেছেন, গল্প লিখেছেন, উপন্যাস লিখেছেন, নাটক লিখেছেন, গান লিখেছেন এবং অনুবাদ করেছেন। বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে বলা যায়, একদিকে তার অনুবাদ কর্ম, প্রবন্ধ এবং সিমেটিক মিথভিত্তিক উপন্যাসগুলো আমাদের সাহিত্যে অমূল্য সম্পদ হয়ে আছে; সাথে যোগ হয়েছে অন্যান্য অনুষঙ্গ। গোলাম সামদানী কোরায়শীর আরো একটি বড় কাজ বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’ রচনায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সাথে দায়িত্ব পালন। আমাদের বাংলা ভাষায় প্রচুর আরবি-ফার্সি শব্দ একীভূত হয়ে আছে, প্রধানত আমাদের আঞ্চলিক ভাষা থেকে সেইসব প্রায় অচেনা শব্দকে খুঁজে নেবার প্রয়োজনে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ গোলাম সামদানী কোরায়শীর শরণাপন্ন হন; তার আরবি ও ফারসি ভাষার ওপর দখল তাকে এ কাজে সম্পৃক্ত হতে সহযোগিতা করেছে। তার প্রতি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর আস্থার বিষয়টি নিশ্চিত হই, তার আত্মজৈবনিক রচনা ‘সিন্ধুর এক বিন্দু’ পাঠে। গোলাম সামদানী কোরায়শী তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন বাংলা একাডেমিতে বহু ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর অধীনে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তখন বাংলা একাডেমিতে ‘আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’ সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করছেন। কবি সৈয়দ আলী আহসান তখন বাংলা একাডেমির পরিচালক (বর্তমানে পদবি মহাপরিচালক)। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ যখন সৈয়দ আলী আহসানকে প্রস্তাব করেন, সামদানী কোরায়শীকে সহকারী সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দিতে, তখনই ঘটে বিপর্যয়। আসুন আমরা গোলাম সামদানী কোরায়শীর বয়ানে শুনে নিই ঘটনাটি-
‘এর মধ্যে আবার রফিকের পোস্টকার্ড এসে উপস্থিত। সংবাদটি হলো, তোর চাকরি হয়ে গেছে।
আমার গাঁটরী বাঁধাই ছিল। পরদিনই ঢাকা গিয়ে উপস্থিত হলাম। সে দিনটি ছিল ২৬ ফেব্রুয়ারি। রফিককে সাথে নিয়ে বিকালে গেলাম ডক্টর সাহেবের ওখানে। তিনি দেখেই বললেন, কালই একাডেমিতে এসো, তোমার নিয়োগপত্র দেয়া হবে। আমি নীরবে সম্মতি জানিয়ে বেরিয়ে এলাম। পথে রফিককে বললাম, কী হয়েছিল রে? হঠাৎ এমন নিয়োগপত্র দেয়া হচ্ছে!
রফিক বললো, বুড়ো রাগ করে পদত্যাগপত্র দাখিল করেছিলেন। তাই সৈয়দ সাহেব বুড়োর রাগ থামানোর জন্য তোকে চাকরি দিতে বাধ্য হয়েছেন।
"" শ্রম বলতে শুধু গাধার মতো জীবনের বোঝা বওয়াকে বুঝায়না; বরং সেই জীবনের উৎপত্তি, তার বিকাশ ও পরিনতি সম্যক রূপে উপলব্ধি করে এক মহান উত্তরাধীকারের দায়িত্ব নিয়ে তার কর্তব্য পালন করাকে বুঝায়। কারণ আমার অস্তিত্বেও বহু পূর্বে মানুষের এই সমাজ গঠিত হয়েছে। যে পরিবেশে আমরা জন্ম নিয়েছি, যতো সামান্যই হোক, তাও গড়ে উঠতে কোটি কোটি মানুষের উদ্দেশ্য পূর্ণ মননশীল শ্রমের প্রয়োজন হয়েছে। কতো রক্ত কতো ঘামের পরিবর্তে মানুষ এমনি এক পরিবেশের সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছে, তা যদি আমাদের উপলব্ধিতে না থাকে, তাহলে কখনোই আমরা মনুষত্ব নামক এই উত্তরাধিকারের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে বহন করতে পারবো না। সুতরাং আমাদেরকে বুঝে শুনে পরিশ্রম করতে হবে। তবেই আমাদের পরিশ্রম সমাজ প্রগতির বাহক হয়ে আমাদের মনুষ্য জন্মকে ধন্য করবে।
কাজেই এমনি এক শ্রমের মাপকাঠি দিয়েই আমরা আদর্শ মানুষের অনুসন্ধান করতে পারি। যিনি যে পরিমাণে এই যথার্থ শ্রমের শ্রমিক, তিনিই ততো খানি আদর্শ মনুষ্য পদবাচ্য। যারা সমাজ প্রগতির ধারাবাহী এই শ্রমকে এড়িয়ে উপাসনা বা প্রতারণার দ্বারা মনুষ্যত্বের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চান, তারা শুধু সমাজকে প্রতারিত করেন না, বরং নিজেরাও প্রতারিত হন। অপরের শ্রমের ফসল ভোগ করে তারা যে কোনো পদবীই গ্রহণ করুন না কেনো, জীবন যাপনে তারা যতো ঐশ্বর্যের অধিকারীই হোন না কেনো, মানুষ হিসাবে তারা অবশ্যই নিকৃষ্ট। তাদের চাইতে সেই একজন শ্রমিক শ্রেষ্ঠতর - মনুষ্যত্বের অধিকারী, যে তার ক্ষমতা ও চেতনা অনুসারে জীবনের দায়িত্ব পালন করছে। হয়তো তার দেহে স্বাস্থ্যে চাকচিক্য নেই, হয়তো পরনে পোশাকের জৌলুস নেই, কিন্তু মানুষ হিসাবে সে শ্রেষ্ঠ’
========={{{{{{∆∆∆∆∆∆}}}}}}=========
No comments:
Post a Comment