মৃত্যু -- ১০ মে, ১৯৮৫ কলকাতা ,পশ্চিমবঙ্গ
"খুদে পড়ুয়াটি নাকি কবিতা লেখে। শুনেই তলব। সারা দুপুর বসে চলল কবিতা লেখা। বিকেলে যিনি ডেকে পাঠিয়েছেন, তাঁর কাছে চলল ছাত্রটি। কবিতা শোনানো হল। কিন্তু প্রতিক্রিয়া মেলে না। বদলে মিলল এক প্লেট পুডিং ও এক প্লেট আনারস। খাওয়া শেষে যিনি ডেকেছিলেন, তাঁকে প্রণাম করল ছাত্রটি। আদর করে খুদেটির চুলে একটু টান মারলেন উনি। উনি অর্থাৎ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।"
জন্ম - ১৯০১ খ্রীষ্টাব্দের ১১ই জুন নাটোর জেলার জোয়াড়ি গ্রামে জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা নলিনীনাথ বিশী ও মাতা সরোজবাসিনী দেবী, স্ত্রী সুরুচি দেবী।
১৯১০ সালে শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মবিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। সেখানে তিনি অভিভাবক, শিক্ষক ও প্রেরণাদাতারূপে পান রবীন্দ্রনাথকে। সেখানে এক নাগাড়ে সতের বছর অধ্যয়ন করেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক পাস করেন। মেধা, প্রখর বুদ্ধি, অধ্যয়ননিষ্ঠা, কবি-প্রতিভা ইত্যাদি গুণাবলির জন্য রবীন্দ্রনাথের স্নেহ লাভ করেন। পরে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসাবে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে বাংলায় এম.এ পাশ করেন।
১৯২৪ সালে শান্তিনিকেতনের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি প্রথম উপন্যাস লিখেন "দেশের শত্রু"। এরপর পদ্মা (১৯৩৫), জোড়াদিঘীর চৌধুরী পরিবার (১৯৩৮), কেশবতী (১৯৪১), নীলমণির স্বর্গ (১৯৫৪), সিন্ধুদেশের প্রহরী (১৯৫৫) উপন্যাসগুলো রচনা করেন। তবে তার শ্রেষ্ঠ উপন্যাস "কেরী সাহেবের মুন্সি" (১৯৫৮)। এই উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৬০ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। তার আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস "লাল কেল্লা" (১৯৬৩)। এছাড়া তিনি একজন ছোটগল্পকার ও নাট্যকারও ছিলেন।
নাটক
পূর্ণাঙ্গ নাটক
ঋণং কৃত্যা
ঘৃতং পিবেৎ (সানিভিলা)
ডিনামাইট
সাবিত্রীর স্বয়ম্বর
দক্ষিণপাড়ার মেয়েরা
মৌচাকে ঢিল
গভর্মেন্ট-ইন্সপেক্টর (নিকোলাই গোগোল রচিত একই নামের একটি নাটকের অনুবাদ[১])
পারমিট
ভূতপূর্ব স্বামী
হিন্দী উইদাউট টিয়ার্স
জাতীয় উন্মাদাশ্রম
একাঙ্ক নাটক
পশ্চাতের আমি
পরিহাস-বিজল্পিতম্
বেনিফিট অব ডাউট
কে লিখিল মেঘনাদবধ কাব্য
অসম্পূর্ণ নাটক
স্বর্গ
আফিঙের ফুল
কাব্য সংগ্রহে
‘হংসমিথুন’,
‘যুক্তবেণী’, ‘
বসন্তসেনা ও অন্যান্য কবিতা’
, উপন্যাসে
‘কেরী সাহেবের মুন্সী’, ‘
কোপবতী’, ‘
পনেরোই আগস্ট’, গ
ল্পগ্রন্থে ‘ব্রহ্মার হাসি’, ‘
গল্পের মতো’, ‘
অলৌকিক’ প্রভৃতি রয়েছে,
.গদ্যগ্রন্থ
‘রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন’,
‘বাঙালি ও বাংলা সাহিত্য’,
‘কমলাকান্তের জল্পনা’,
‘বঙ্কিম সরণী’র মতো গদ্যগ্রন্থ।
১৯৬০ সালে কেরী সাহেবের মুন্সী উপন্যাসের জন্য প্রমথনাথ বিশী রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮২) ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত জগত্তারিণী স্বর্ণপদকও (১৯৮৩) লাভ করেছিলেন।
নীহাররঞ্জন রায় ও প্রমথনাথ বিশী
এমএ পরীক্ষায় নজরকাড়া সাফল্যের জন্য বিশী ডাক পেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপনার। কিন্তু সেই সময়ে ঢাকায় সাম্প্রদায়িক হিংসার কারণে তিনি কলকাতায় ফিরলেন। যোগ দিলেন রামতনু লাহিড়ী গবেষক হিসেবে। গবেষণার ফসল, ‘রবীন্দ্রকাব্যপ্রবাহ’। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তা ‘ডক্টরেট’ তকমার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হল না। কিন্তু এ নিয়ে কোনও আক্ষেপ ছিল না তাঁর। তাঁর বক্তব্য, ‘আমি যা বই লিখেছি, তার ওজন এক মণ হবে। ভারেই কেটে যাবে।’
আসলে এমন রসিকতা প্রমথনাথের কর্ম ও ব্যক্তিজীবনে চিরকালের সঙ্গী। ১৯৩৬-এ রিপন কলেজে (বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) চাকরির ইন্টারভিউতে ঘটল ফের মজার ঘটনা। সে কালে শান্তিনিকেতনের ফুটবল দলের বিরাট নাম। তাতে প্রমথনাথের অবশ্য ভূমিকা ছিল দলকে ‘চিয়ার আপ’ করার জন্য মাঠের ধার থেকে বাজনা বাজানো। কিন্তু ইন্টারভিউ বোর্ডের ও পারে থাকা বিলেত ফেরত অধ্যাপক তা জানলে তো! তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘এক জন টেনিস খেলোয়াড়ের নাম বলুন’। মুহূর্তে বিশীর উত্তর, ‘লর্ড টেনিসন।’ আনন্দে বিশীকে প্রায় জড়িয়ে ধরেন প্রশ্নকর্তা।
বিষয়টা কী? কবি টেনিসনের নাতি, উত্তরাধিকার সূত্রে তিনিও লর্ড টেনিসন। তিনি সেই সময়ে সবে টেনিস খেলতে শুরু করেছেন! এই উত্তরেই কলেজে চাকরি পাকা।
কিন্তু বছরখানেকের বেশি সে চাকরিতে মন টিকল না। যোগ দিলেন ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র সম্পাদকীয় বিভাগে। এই পত্রিকাতেই তিনি ধারাবাহিক লিখবেন, ‘কমলাকান্তের আসর’। সেখানে কয়েক বছর কাজের পরে অধ্যাপনার ডাক এল। এমন আমন্ত্রণ দিল্লি, যাদবপুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ নানা জায়গা থেকে এসেছিল। সবই প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু শেষমেশ এড়াতে পারলেন না কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বান। যে বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডক্টরেট দেয়নি, সেখানেই তিনি হবেন প্রথম রবীন্দ্র-অধ্যাপক। পরে সামলাবেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিভাষা কমিটির সহ-সম্পাদকের দায়িত্বও।
=========={{{{{{{{{{{{∆∆∆∆∆∆∆∆{}}}}}}}}}
No comments:
Post a Comment