আর্থার কোনান ডয়েল।
স্যার আর্থার কনান ডয়েল লেখক হিসেবে পরিচিত হলেও খেলাধুলা করতে ভালোবাসতেন৷ সাউথ সি তে থাকাকালীন তিনি পোর্টসমাউথ অ্যসোসিয়েসন ফুটবল ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলতেন৷ ১৮৯৯-১৯০৭ সালের মধ্যে তিনি মের্লবোন ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট খেলতেন৷ ডয়েল শখের বক্সিংও করেছেন৷ ১৯১০ সালে তিনি ক্রোবারো বেকন গল্ফ ক্লাবের ক্যাপ্টেন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন৷
তাঁর রচিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল, ‘দ্য সাইন অফ দ্য ফোর'(১৮৯০), ‘দ্য ফার্ম অফ গ্রিডেল স্টোন’ ( ১৮৯০), ‘দ্য হোয়াইট কোম্পানি'( ১৮৯১) , ‘দ্য গ্রে শ্যাডো'( ১৮৯২), ‘দ্য রিফিউজি’ ( ১৮৯৩) , ‘রডনি স্টোন’ ( ১৮৯৬), ‘দ্য ট্র্যাজেডি অফ কোরস্কো'( ১৮৯৮), ‘দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড'( ১৯১২), ‘দ্য ল্যন্ড অফ মিস্ট’ (১৯২৬) প্রভৃতি। তাঁর লেখা ছোটো গল্পগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘দ্য অ্যডভেঞ্চার অফ শার্লক হোমস'( ১৮৯২) , ‘দ্য মেমরী অফ শার্লক হোমস'( ১৮৯৪), ‘রাউন্ড অফ ফায়ার স্টোরিস'( ১৯০৮), ‘হিস লাস্ট বো'( ১৯১৭) প্রভৃতি।
তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে পরিবর্তন আসে নানান ভাবে ৷ তাঁর স্ত্রী লুসিয়া ৪ জুলাই ১৯০৬ সালে টি.বি রোগে মারা যান। ১৯০৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন৷ ইতিমধ্যে ডয়েল নাটক রচনার দিকে মন দেন। তাঁর লেখা ‘ব্রিগেডিয়ার জেরা্রড'(Brigadier Gerard) এবং ‘দ্য ট্রাজেডি অব করস্কো'(The Tragedy of the Korosko) কোনটিই তেমন সাফল্য পায়নি। হতাশ না হয়ে তিনি তৃতীয় নাটক লেখেন৷ বক্সিংয়ের উপর ভিত্তি করে ‘দ্য হাউস অব টেম্পারলে’ (The House of Temperley)নাটকটিও সফলতা পায় নি৷ তাঁর চতুর্থ নাটক ‘দ্য স্পেকল্ড ব্যান্ড'(The Speckled Band) সফলতার মুখ দেখে৷ এই নাটকের সফলতার পর তিনি নাটক লেখা থেকে বিরতি টানেন। নাটক লেখা থেকে তাঁর এই স্বেচ্ছাবসর সম্পর্কে তিনি বলেন,”Not because it doesn’t interest me, but because it interests me too much”
১৮৫৯ সালের ২২ মে স্কটল্যান্ডের ইডেনবার্গে স্যার আর্থার কনান ডয়েলের জন্ম হয় ৷ তাঁর বাবার নাম চার্লস আল্টামন্ট ডয়েল (Charles Altamont Doyle) এবং মায়ের নাম মেরী। তাঁর বাবা পেশায় ছিলেন একজন শিল্পী ১৮৯৩ সালে মারা যান৷
নয় বছর বয়সে স্যার আর্থার কনান ডয়েলের প্রাথমিক পড়াশুনা শুরু হয় ইংল্যান্ডের জেসুইট প্রিপেটরি স্কুলে (Jesuit preparatory school)। এরপর ১৮৭৫ সালে তিনি স্টোনিহার্সট কলেজে (Stonyhurst College) ভর্তি হন৷ ১৮৭৫ – ৭৬ সালে তিনি জেসুইট স্কুল স্টিলা ম্যাটুটিনা(Stella Matutina)তে ভর্তি হন। ১৮৭৬ সালে সতেরো বছর বয়সে তিনি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন। ১৮৭৬ থেকে ১৮৮১ সাল পর্যন্ত তিনি মেডিকেল নিয়ে পড়াশোনা করেন ইউনিভার্সিটি অফ ইডেনবার্গ মেডিক্যাল স্কুলে ( University of Edinburgh Medical School)।এই একই সময়ে তিনি প্র্যাকটিকাল বোটানির পাঠও নেন রয়াল বোটানিক গার্ডেন থেকে৷
স্যার আর্থার কনান ডয়েলের কর্মজীবন শুরু হয় ১৮৮০ সালে মাত্র কুড়ি বছর বয়সে মেডিক্যালে তৃতীয় বর্ষের পড়াশোনা চলাকালীন স্কটল্যান্ডের পিটারহেডে অবস্থিত গ্রীনল্যান্ড হোয়েলার হোপ(Greenland whaler Hope ) -এ চিকিৎসক হিসেবে। এটি আসলে ছিল ‘ হোপ’ নামক একটি জাহাজ যেখানে তিনি সার্জেনের চাকরী পেয়েছিলেন৷ পড়াশোনা চলাকালীন তিনি ছোটোগল্প লেখা শুরু করেন৷ তাঁর প্রথমদিকের লেখা একটি গল্প ‘The Haunted Grange of Goresthorpe’ ব্ল্যাকউড’স ম্যগাজিনে পাঠিয়ে ছিলেন কিন্তু সেটি ছাপা হয় নি৷ তাঁর প্রথম প্রকাশিত গল্প হল ‘দ্য মিস্ট্রী অব সাসাসা ভ্যালি'(The Mystery of Sasassa Valley) যেটি ৬ ই সেপ্টেম্বর ১৮৮৯ সালে Chambers’s Edinburgh Journal – এ প্রকাশ পায়৷এডগার অ্যলান পো এবং ব্রেট হার্টে ছিলেন তাঁর প্রিয় লেখক৷ প্রথম লেখা প্রকাশ পাওয়ায় তিনি উৎসাহিত হয়ে লেখালিখির দিকে মনোযোগ দেন। ১৮৮৯ সালেই ডয়েলের লেখা দ্বিতীয় গল্প ‘দ্য আমেরিকান টেল’ (The American Tale) লন্ডন সোসাইটি থেকে প্রকাশিত হয়৷ জাহাজে সার্জেন্টের চাকরির অভিজ্ঞতায় তিনি সমুদ্র নিয়ে তাঁর প্রথম অ্যডভেঞ্চারের কাহিনী লিপিবদ্ধ করেন ‘ক্যাপ্টেন অব পোল স্টার’ (Captain of the Pole-Star) নামে। কনান ডয়েল মেডিকেলে স্নাতক হয়ে যাওয়ার পর মায়ুম্বা ‘Mayumba’ নামের একটি স্টিমারে মেডিকেল অফিসার হিসাবে নিযুক্ত হন৷ এই চাকরিটি তাঁর পছন্দ না হওয়ায় স্টিমার ইংল্যান্ডে পৌঁছলে তিনি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন৷ চাকরি ছেড়ে তিনি নিজস্ব প্র্যাকটিস শুরু করেন৷ চিকিৎসার পাশাপাশি একজন লেখক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যও এই সময় তিনি লেখালিখি চালিয়ে যান।
১৮৮৬ সালের মার্চ মাস থেকে তিনি একটি উপন্যাস লেখা শুরু করেন৷ এই উপন্যাস তাঁকে পরিচিতি দিতে শুরু করে। তাঁর এই উপন্যাসে দুটি প্রধান চরিত্র ছিল একজন ‘সেরিদান হোপ’ আরেকজন ‘অর্মন্ড সেকার’। দুই বছর পর ১৮৮৭ সালে উপন্যাস টি বিটন’স ক্রিসমাস অ্যানুয়াল (Beeton’s Christmas Annual) ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটির নাম ছিল ‘আ স্টাডি ইন স্কারলেট'(A Study in Scarlet) এই উপন্যাসেই শার্লক হোমস এবং ডঃ ওয়াটসন এর প্রথম দেখা পাওয়া যায়। এরপর ডয়েলের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকটি আসে। যে সমস্ত উপন্যাসে শার্লক হোমসের উপস্থিতি ছিল সেগুলির জন্য লেখকের পরিচিতি বাড়তে থাকে। বাণিজ্যিক ভাবে সফল হয়ে ওঠে তাঁর লেখা উপন্যাসগুলি। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু ঐতিহাসিক উপন্যাস, কবিতা এবং নাটক লিখে ছিলেন।
১৮৮৮ সালে তিনি ‘দ্য মিস্ট্রি অফ ক্লোম্বার’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন যার বিষয়বস্তু ছিল তিনটি বৌদ্ধ ভিক্ষুকের জীবনী৷ এই গল্পটিতে কনান ডয়েল তাঁর আধ্যাত্মিকতার প্রতি মুগ্ধতার কথা বর্ণনা করেছেন ৷ ১৮৮৮ – ১৯০৬ সাল পর্যন্ত তিনি সাতটি ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখেছিলেন যেগুলির জন্য তিনি সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছিলেন৷ ডয়েলের মতে ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘দ্য হোয়াইট কম্পানি'(The White Company) লেখার সময়ে তিনি সবথেকে বেশী আনন্দ পেয়েছিলেন৷ তিনি নয়টি উপন্যাস ছাড়াও পাঁচটি আখ্যান এবং’প্রফেসার চ্যালেঞ্জার’এর নামে একটি গল্পের সিরিজ লিখেছিলেন। শার্লক হোমসের সিরিজের পর এটিই তাঁর সর্বাধিক পরিচিত ও সেরা লেখা হিসেবে গন্য হয়৷ প্রফেসর চ্যালেঞ্জারের চরিত্রটি ছিল শার্লক হোমসের সম্পূর্ণ বিপরীত। স্যার আর্থার কনান ডয়েল ইংল্যান্ডের তুলনায় আমেরিকাতে লেখক হিসেবে বেশী খ্যাতি পেয়েছিলেন৷
সুইজারল্যান্ডে ঘুরতে গিয়ে কনান ডয়েল একটি জলপ্রপাত দেখে ঠিক করেন তাঁর গোয়েন্দা গল্পের মূল চরিত্রকে এখানেই তিনি শেষ করে দেবেন৷ ১৮৯৩ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত ‘দ্য ফাইনাল প্রবলেম ‘ গল্পে শার্লক হোমস জলপ্রপাতের উপর থেকে পড়ে নিখোঁজ হয়ে যায়৷ গল্পটি প্রকাশের পর ‘দ্য স্ট্র্যাণ্ড ম্যাগাজিনের’ (যেখানে শার্লক হোমসের গল্পগুলি প্রকাশিত হত) প্রায় কুড়ি হাজার গ্রাহক তাদের সাবস্ক্রিপশন তুলে নেয়৷ জনতার মধ্যে প্রবল বিক্ষোভ দেখা যায়। সেই বিক্ষোভের ফলে ১৯০২ সালে ‘দ্য হাউণ্ড অব দ্য বাস্কারভিলস’ গল্পে তিনি আবার শার্লক হোমসকে ফিরিয়ে আনেন৷ গল্পটি সাফল্য পায় এবং ম্যাগাজিনের গ্রাহক সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পায়৷
={=={{=[{{{{{{[{{{]==[[[[[=======[{{{{{======
No comments:
Post a Comment