Tuesday, 30 August 2022

স্মরণীয় প্রয়াণ দিবস। ফরাসি কবি শার্ল বোদলেয়ার। Vol -844. Dt - 31.08.2022. . ১৪ ই ভাদ্র,১৪২৯ । বুধবার। The blogger in literature e-magazine.


শার্ল বোদলেয়ার 

Who among us has not dreamt, in moments of ambition, of the miracle of a poetic prose, musical without rhythm and rhyme, supple and staccato enough to adapt to the lyrical stirrings of the soul, the undulations of dreams, and sudden leaps of consciousness. This obsessive idea is above all a child of giant cities, of the intersecting of their myriad relations.

— Dedication of Le Spleen de Paris


চারটি কবিতা

বিষাদ

(১)
ফেব্রুয়ারি, বিরক্তিকর প্যারিস, দাপুটে বৃষ্টি
অবিরত ঝরে বিষণ্ণ মুষলধারায় কাছের গোরস্তানে শুয়ে থাকা
ফ্যাকাসে ইজারাদারদের চাতালে আর এক বিনাশক গভীর শৈত্য
ছড়ায় কুয়াশাক্রান্ত শহরতলির ভাড়াটিয়াদের আবাসে।

আমার বিড়ালটা আয়েশ পায় না ওই টালির উপর শুয়ে
ওর কাদামাখা শরীরে ওম মেলেনা একটুও;
প্রেতাহত ক'জন বয়সী কবির আত্মা নর্দমায় ঘুরে ফেরে
গুমরায়, যেনো হিমেল হাওয়ার কাছে প্রেতের তীব্র ফরিয়াদ।

গির্জার ঘন্টার আর্তনাদ, পোড়া কাঠখড়ির ধোঁয়া ফায়ারপ্লেসে
ঘড়ির শ্লেষ্মাময় ভুতুড়ে গুনগুন
আর তারই সাথে বদগন্ধ তাসের আসর

এ এক শোথরোগী বৃদ্ধা চাকরানীর উত্তরাধিকার,
হরতনের ঠগী ফুলবাবু আর ইস্কাবনের বিবি
খুঁড়ে তোলে তাদের উদ্দাম কামাচার।

(২)
স্মরণিক?
আমার হাজার বছর বাঁচার চাইতেও বেশি!

দেরাজের ড্রয়ারে ঠেসে রাখা কোনো নথি নয়,
প্রেম-পত্র, বিয়ের-নিমন্ত্রণ, দলিল,
কিম্বা কাগজে মোড়ানো কোনো কেশগুচ্ছ নয়,
কিছুই নেই দেরাজে যা আছে লুকানো আমার এই মাথার ভেতর।
এই অন্ধকার সমাধিবিন্যাসে, এই পিরামিডে
শব আছে যত, ঐ আসল সমাধিস্থানে নেই তত:
আমি কবরস্থান এক, জ্যোৎস্নার ঘৃণা,
এখানে ক্লেদাক্ত দানব পোকারা সব বেঁচে থাকে
আমারই প্রিয় মরদেহগুলো নির্লজ্জ্য খুটে-খুটে খেয়ে।
তাকে তাকে সাজানো মেয়েলী পোশাকের আমি এক শীর্ণ মহিলা-গোঁসাঘর
মরা গোলাপের সুবাস মাখা, ধুলার আস্তরে ঢাকা;
এখানে শুধু বিবর্ণ প্যাস্টেল আর পাণ্ডুর নিষ্ঠুরতা
বেঁচে থাকা ফাঁপা সুদীর্ঘ শ্বাসাধারে নিঃশ্বাস নিয়ে।

দিনগুলো খুড়িয়ে চলে ধীরতর লয়ে
বছরের সেই ভারী আবহাওয়ার মৌসুমে
বিষাদ, নিঃসঙ্গ বৈরাগ্যের পরিণাম,
অনন্তকালের মাত্রায় নেয় রূপ . . .
অনন্তর, নশ্বর কাদামাটি, তুমি তো শুধু
নামহীন আতঙ্কে ঘেরা পাথরের টুকরো ছাড়া কিছু নও,
মানচিত্রে অবলুপ্ত এক পুরাকালের স্ফিংস
বিশ্বে বিস্মৃত, উগ্র মেজাজ তার
ডুবন্ত সূর্যরশ্মিকে শোনায় গান।


৩)
আমি যেন ঘোর বর্ষা-রাজ্যের বাদশা, ঐশ্বর্যবান
কিন্তু অসহায়, জরাজীর্ণ অথচ এখনও যুবক
যে তার সেবায়েত শিক্ষকদের করে অবজ্ঞা, সময় নষ্ট করে
সারমেয় আর জানোয়ার নিয়ে, কিন্তু আনন্দ পায়না কিছুতে;
কিছুতেই মন কাড়ে না তার, বাজপাখি কিম্বা শিকার
অথবা রাজ-তোরণে অপেক্ষমান অনাহারী।
তার প্রিয় ভাঁড়ের রগরগে অশ্লীলতা মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে
–রাজ-পঙ্গুত্বকে মুছে ফেলে পারে না আমোদে মাতাতে—
আর ওই সৌখিন রমণীরা রাজকীয় অনুমোদনে
পরে না তো খোলামেলা পোশাক আর
অস্থিসার যুবকের মিষ্টি হাসির আশায়।
রাজশয্যা হয়ে যায় রাজসমাধি।
সেই যে জাদুকর যে স্পর্শে গড়ে সোনা, সেও অক্ষম
তার অন্তর্গত গভীরের অশুদ্ধতাকে শুদ্ধ করতে,
রোমের রক্তস্নাত পুরুষানুক্রমিক বংশসূত্র
আর তাদের পাতশাহী পতন সময়কালের ইতিবৃত্তও
সক্ষম নয় আজ এই রক্তশূন্য জীবদেহ পুনরুজ্জীবনে
যে দেহ থেকে চুইয়ে পড়ে না রক্ত কোনো বৈতরণীর লোনা জল ছাড়া।

(৪)
যখন যন্ত্রণাকাতর মনের আকাশটা বিরক্তিতে
অবনমিত জগদ্দল আবরণে ঢেকে যায়,
বিষাদ মোড়া সূর্যের গনগনে আগুন ঝরে পড়ে
আমাদের উপর, সে এক দিবালোক, আঁধারের দ্বিগুণ মলিন;

যখন ধরিত্রী হয়ে যায় ক্ষরিত বন্দিশালা, যেখানে
অস্থির আশা বাদুড়ের মতো বাতাস কাটে,
দেয়ালে-দেয়ালে ঝাপটায় অলীক ডানা
মাথা খোঁড়ে ঘুনেধরা কড়িকাঠে;

যখন বৃষ্টি ঝরে অঝোরে ক্ষান্তিহীন মেঘ গলে,
চুইয়ে পড়ে চুপিসারে বিশাল কারাগারের গারদের শিক বেয়ে,
আর চলে নিঃশব্দ বীভৎস মাকড়-দলের
জালবোনা আমাদের মাথার অতল ভিতে;

তখনই অকস্মাৎ বেজে উঠে ঘণ্টাগুলো উচ্চনিনাদে,
সেই গা-ছমছম কর্কশ ঘণ্টাধ্বনি উছ্রিত হয় আকাশে,
যেন বাস্তুছাড়া হতচ্ছাড়া প্রেতেরা সব
জানাচ্ছে তাদের অসীম দুঃখবিলাপ।

–এবং এক দীর্ঘ শবযাত্রা, বিনাশোকগাথায়, বিনাশোকবাদ্যে,
আমার আত্মার ভেতরে দ্বিধান্বিত মিছিল করে, যেখানে আশা,
পরাভূত কান্নায় আপ্লুত, এবং সেই বিনাশী মৃত্যু
তার কালো নিশানা পুঁতে দেয় আমার অবনত মস্তকে.
(Les Fleurs du Mal থেকে Spleen et Ideal-এর কবিতা )




ফরাসী সাহিত্য অঙ্গনে বোদলেয়ার একটি উজ্জ্বল নাম। ফ্রান্সের সমাজে উনিশ শতকের শুরুর দিকে যেরকম কবিতা লেখা হত শার্ল বোদলেয়ার ওগুলো থেকেই কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। একজন মানুষের মধ্যে আসা রোমান্টিকতাকে কিভাবে আরো ব্যাপ্তিময় এবং সৌন্দর্যমন্ডিত করা যায় সেটা শার্ল ভাবতেন। তার কবিতায় শৈল্পিকতা পাওয়া যায়, তিনি প্যারিস নগরীকে তার কবিতায় অনেকবার স্থান দিয়েছেন, ফরাসী কবিতা পাঠকেরা তার কবিতা পড়ে এক অন্য জগতে চলে যেত।

১৮২১ সালের এপ্রিল মাসের ৯ তারিখে প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন বোদলেয়ার। তাঁর পিতা ফ্রাঁসোয়া বোদলেয়ার একজন উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারী ছিলেন এবং আনাড়ি চিত্রশিল্পী ছিলেন, এই ব্যক্তির পত্নী ক্যারোলিন তার দ্বিতীয় বিয়ে ছিলো, শার্ল বোদলেয়ার এই ক্যারোলিনের পেটেই জন্ম নেন। শার্লের বয়স যখন ৬ (১৮২৭ সাল) তখন ফ্রাঁসোয়া মারা যান। ঐ বছর ক্যারোলিন জ্যাক অপিক নামের ফরাসী সেনাবাহিনীর এক কর্নেলকে বিয়ে করেন। এই ঘটনার পর ক্যারোলিন শার্লকে ভুলে যান, তাকে ভালোবাসা-আদর-যত্ন দেওয়া বাদ দিয়ে দেন, শার্লের জীবনে এটা ছিল একটা গুরুত্বপূর্ণ এবং করুণ অধ্যায়। কিন্তু তারপরেও শার্ল তার মা'কে অনেক পছন্দ করতেন।

বোদলেয়ারকে কর্নেল জ্যাক অপিক একটি বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করে দেন, সেখানেই টিন-এজ বয়সে বোদলেয়ার কবিতা লেখা শুরু করেন। বোদলেয়ার পরে আইন নিয়ে পড়া শুরু করেন, এবং ১৮৩৯ সালে তিনি পাশ করে বের হন। তিনি তার সৎ-ভাইকে বলেন, "আমি আমার সৎ বাবার উপদেশ অনুযায়ী আইন পড়েছি এবং পাশ করেছি, কিন্তু আমি আইনি পেশায় জড়াবোনা"। ক্যারোলিন তার এই কথার সমালোচনা করেছিলেন কারণ তিনি জ্যাক অপিককে খুবই পছন্দ করতেন।

বোদলেয়ার পতিতা সঙ্গমে লিপ্ত হতেন, এটি জ্যাক জেনে যান, এরপর তাকে বিদেশ পাঠাবেন বলে মনস্থির করেন, ১৮৪১ সালে শার্লকে জ্যাক ভারতের উদ্দেশ্যে সমুদ্র যাত্রায় পাঠিয়ে দেন। ভারতে যেয়ে শার্ল কবিতা লেখায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন এবং ভারতে অনেক ভালো অভিজ্ঞতা হয় তার যেমন হাতীর পিঠে চড়া।


বোদলেয়ার বলেছেন, একজন আধুনিক কবির সাথে গতানুগতিক কবির পার্থক্যটা হলো, আধুনিক কবি সুন্দরকে পতিত ও বীভৎস থেকে খুঁজে বের করতে সক্ষম কিন্তু পূর্ববর্তী কবি তাঁর গতানুগতিক নান্দনিক চিন্তাচেতনাকেই লালন করে। আধুনিক কবি আসলে একজন অপরসায়নবিদ (alchemist) যে পাঁককে সোনা বানাতে সক্ষম—অর্থাৎ কুৎসিতকে, অসুন্দরকে নান্দনিক ও সুন্দর করে তোলাটাই হলো আধুনিকতা বা, তাঁর নিজ সংজ্ঞায়, শহুরে যান্ত্রিক কুৎসিত জীবনের গভীরে এক অভূতপূর্ব নান্দনিকতাকে আবিষ্কার করা। মনে রাখা জরুরি যে গোটা ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিল্পবিপ্লবের উন্মেষ শার্ল বোদলেয়ার-এর জীবনকালে আর তারই সাথে নগরজীবনের সকল মন্দত্বের উৎসারণ। বোদলেয়ার এই কুৎসিত, মন্দ এবং যাকিছু নোংরা এবং পতিত তাকে স্বীকৃতি দিয়েই তার ভেতর থেকে সুন্দরকে উদ্ঘাটন করার কথা বলেছেন এবং সেই নন্দনচেতনাকে চিহ্নিত করেছেন আধুনিকতা বা মডার্নিটি রূপে।


Salon de 1845, 1845
Salon de 1846, 1846
La Fanfarlo, 1847
Les Fleurs du mal, 1857
Les paradis artificiels, 1860
Réflexions sur Quelques-uns de mes Contemporains, 1861
Le Peintre de la Vie Moderne, 1863
Curiosités Esthétiques, 1868
L'art romantique, 1868
Le Spleen de Paris, 1869. Paris Spleen (Contra Mundum Press: 2021)
Translations from Charles Baudelaire, 1869 (Early English translation of several of Baudelaire's poems, by Richard Herne Shepherd)
Oeuvres Posthumes et Correspondance Générale, 1887–1907
Fusées, 1897
Mon Coeur Mis à Nu, 1897. My Heart Laid Bare & Other Texts (Contra Mundum Press: 2017; 2020)
Oeuvres Complètes, 1922–53 (19 vols.)
Mirror of Art, 1955
The Essence of Laughter, 1956
Curiosités Esthétiques, 1962
The Painter of Modern Life and Other Essays, 1964
Baudelaire as a Literary Critic, 1964
Arts in Paris 1845–1862, 1965
Selected Writings on Art and Artists, 1972
Selected Letters of Charles Baudelaire, 1986
Twenty Prose Poems, 1988
Critique d'art; Critique musicale, 1992
Belgium Stripped Bare (Contra Mundum Press: 2019)।
Musical adaptations
Edit
French composer Claude Debussy set five of Baudelaire's poems to music in 1890: Cinq poèmes de Charles Baudelaire (Le Balcon, Harmonie du soir, Le Jet d'eau, Recueillement and La Mort des amants).
French composer Henri Duparc set two of Baudelaire's poems to music: "L'Invitation au voyage" in 1870, and "La vie antérieure" in 1884.
English composer Mark-Anthony Turnage composed settings of two of Baudelaire's poems, "Harmonie du soir" and "L'Invitation au voyage", for soprano and seven instruments.[60]
American electronic musician Ruth White (composer) recorded some of Baudelaire's poems in Les Fleurs du Mal as chants over electronic music in a 1969 recording, Flowers of Evil.
French singer-songwriter Léo Ferré devoted himself to set Baudelaire's poetry into music in three albums: Les Fleurs du mal in 1957 (12 poems), Léo Ferré chante Baudelaire in 1967 (24 poems, including one from Le Spleen de Paris), and the posthumous Les Fleurs du mal (suite et fin) (21 poems), recorded in 1977 but released in 2008.
Soviet/Russian composer David Tukhmanov has set Baudelaire's poem to music (cult album On a Wave of My Memory, 1975).[61]
American avant-garde composer, vocalist and performer Diamanda Galás made an interpretation in original French of Les Litanies de Satan from Les Fleurs du mal, in her debut album titled The Litanies of Satan, which consists of tape and electronics effects with layers of her voice.
French singer David TMX recorded the poems "Lesbos" and "Une Charogne" from The Flowers of Evil.
French metal/shoegaze groups Alcest and Amesoeurs used his poetry for the lyrics of the tracks "Élévation" (on Le Secret) and "Recueillement" (on Amesoeurs), respectively. Celtic Frost used his poem Tristesses de la lune as a lyrics for song on album Into the Pandemonium.
French Black Metal bands Mortifera and Peste Noire used Baudelaire's poems as lyrics for the songs "Le revenant" and "Ciel brouillé" (on Vastiia Tenebrd Mortifera by Mortifera) and "Le mort joyeux" and "Spleen" (on La Sanie des siècles – Panégyrique de la dégénérescence by Peste Noire)
Israeli singer Maor Cohen's 2005 album, the Hebrew name of which translates to French as "Les Fleurs du Mal", is a compilation of songs from Baudelaire's book of the same name. The texts were translated to Hebrew by Israeli poet Dori Manor, and the music was composed by Cohen.
Italian singer Franco Battiato set Invitation au voyage to music as Invito Al Viaggio on his 1999 album Fleurs (Esempi Affini Di Scritture E Simili).
American composer Gérard Pape set Tristesses de la lune/Sorrows of the Moon from Fleurs du Mal for voice and electronic tape.
French band Marc Seberg wrote an adaptation of Recueillement for their 1985 album Le Chant Des Terres.
Dutch composer Marjo Tal set several of Baudelaire’s poems to music.
Russian heavy metal band Black Obelisk used Russian translations of several Baudelaire poems as lyrics for their songs.
French singer Mylène Farmer performed "L'Horloge" to music by Laurent Boutonnat on the album Ainsi soit je and the opening number of her 1989 concert tour. On her latest album "Désobéissance" (2018) she recorded Baudelaire's preface to "Les Fleurs du Mal", "Au lecteur". The French journalist Hugues Royer mentioned several allusions and interpretations of Baudelaire's poems and quotations used by Farmer in various songs in his book "Mylène" [62] (published in 2008).
In 2009 the Italian rock band C.F.F. e il Nomade Venerabile released Un jour noir, a song inspired by Spleen, contained in the album Lucidinervi (Otium Records / Compagnia Nuove Indye). The video clip is available on YouTube.
German aggrotech band C-Drone-Defect used the translation of "Le Rebelle" by Roy Campbell as lyrics for the song "Rebellis" on their 2009 album Dystopia.
English rock band The Cure used the translation of "Les yeux des pauvres" as lyrics for the song "How Beautiful You Are".
French singer-songwriter and musician Serge Gainsbourg has set Baudelaire's poem "Dancing Snake" (Le serpent qui danse) to music in his 1964song "Baudelaire".
Greek black metal band Rotting Christ adapted Baudelaire's poem "Les Litanies De Satan" from Fleurs du Mal for a song of the same name in their 2016 album Rituals.
Belgian female-fronted band Exsangue released the debut video for the single "A une Malabaraise", and the lyrics are based on Baudelaire's same-named sonnet in 2016.[63]
Belgian electronic music band Modern Cubism has released two albums where poems of Baudelaire are used as lyrics, Les Plaintes d’un Icare in 2008, and live album Live Complaints in 2010.[64]
American rapper Tyler, the Creator released his album Call Me If You Get Lost in 2021. Throughout the album, Tyler, the Creator refers to himself as "Tyler Baudelaire".
Canadian singer-songwriter Pierre Lapointe set Baudelaire's poem "Le serpent qui danse" to music on his 2022 album L'heure mauve.।



বোদলেয়ার তাঁর প্রথম জীবনে শিল্প-সমালোচক এবং অনুবাদক হিসেবেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তাঁর সবচাইতে উল্লেখযোগ্য অনুবাদকর্ম হলো মার্কিন সাহিত্যিক এডগার অ্যালান পো-র বেশ কিছু সাহিত্যকর্মের ফরাসি ভাষাতে ভাষান্তর। সমালোচকরা মনে করেন পো-র এই অনুবাদকর্ম বোদলেয়ারকে দারুণভাবে প্রাণিত করে এবং তাঁরই সাহিত্যতত্ত্ব দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পরবর্তীতে বোদলেয়ার কবিতা রচনাতে লিপ্ত হন। তাঁর বিখ্যাত বা সমসাময়িক এবং মতান্তরে কুখ্যাত কাব্যগ্রন্থ লা ফ্ল্যর দ্যু মাল প্রকাশিত হয় ১৮৫৭ সালে। এর আগে পর্যন্ত তিনি মূলত শিল্প সমালোচনা এবং অনুবাদ কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সঠিকভাবে বলতে গেলে ১৮৫৬ সাল পর্যন্ত বোদলেয়ারকে মুকুলিত-কবি রূপে নির্দিষ্ট করেছেন সাহিত্যবোদ্ধারা। ঐ লা ফ্ল্যর দ্যু মাল-এ সংকলিত ছটি কবিতা তাঁর সময়কালে (১৮৫৭ সালেই) নিষিদ্ধতার ছাপ পায় অশ্লীলতার গন্ধ পাবার অজুহাতে।

আমরা সবাই জানি শার্ল বোদলেয়ারকে বাঙালি পাঠকের কাছে বিস্তারিতভাবে পরিচিত করেছেন বুদ্ধদেব বসু ১৯৬০ সালে প্রকাশিত তাঁর শার্ল বোদলেয়ার তাঁর কবিতা গ্রন্থের মাধ্যমে যে গ্রন্থে তিনি প্রকাশ করেছিলেন তাঁর অনূদিত বোদলেয়ার-এর ফরাসি ভাষাতে রচিত ১১২টি কবিতা যার ভেতর বর্তমানে আমার অনূদিত চারটি কবিতাও ছিল। মূল ভাষা থেকে অনুবাদ করতে পারলে ভাল হতো কিন্তু আমি যেহেতু ফরাসি ভাষা জানি না, আমাকে ইংরেজি অনুবাদের আশ্রয়ী হতে হয়েছে। বুদ্ধেদেব বসু-র অনুবাদের পর কবিতাগুলো আবার অনুবাদের কোনো প্রয়োজন আছে কিনা শে প্রশ্ন অনেকেই তুলতে পারেন। ১৯৬০ থেকে ২০২২—দীর্ঘ বাষট্টি বছর পেরিয়ে গেছে—এর ভেতর আমাদের অনুভূতি, বোধ, চিন্তাচেতনার অনেক পরিবর্তন হয়েছে, এবং একথা আমরা স্বীকার করতে বাধ্য যে যেকোনো শিল্পকর্মের ব্যাখ্যা একাধিক যেমন হতে পারে তেমনি সেই শিল্পের উপলব্ধিও ভিন্নতর হতে পারে। সেইসাথে রয়েছে ভাষার সদাপরিবর্তশীলতা। ।
===={{{{{{{========{{{{{{==}}}}}}}}}}====}}=


Monday, 29 August 2022

স্মরণীয় প্রয়াণ দিবস। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ সাহিত্য সমালোচক পন্ডিত নীহাররঞ্জন রায়। Vol -843. dt - 30.08.2022. ১৩ ই ভাদ্র ১৪২৯. মঙ্গলবার। The bolgger in litareture e-magazine


নীহাররঞ্জন রায়


মৃত্যু - ১৯৮১ সালের ৩০শে আগস্ট কলকাতায় তার বাসভবনে লোকান্তরিত হন।



রচনা কর্ম 
বাঙ্গালীর ইতিহাস : আদি পর্ব (১৯৪১) (১৯৫০ সালে রবীন্দ্র পুরস্কারপ্রাপ্ত)
রবীন্দ্র-সাহিত্যের ভূমিকা (১৯৪১)
কৃষ্টি কালচার সংস্কৃতি (১৯৭৯)
বাংলার নদ-নদী (১৩৫৪)
বাঙালী হিন্দুর বর্ণভেদ (১৩৫৪)
প্রাচীন বাংলার দৈনন্দিন জীবন (১৩৫৪)
Brahminical Gods in Burma (1932)
Sanskrit Buddhism in Burma (1936)
Maurya and Sunga Art (1947)
Theravada Buddhism in Burma (1946)
An Artist in Life (1967) (১৯৬৯ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত)
Idea and Image in Indian Art (1973)
An Approach to Indian Art (1974)
Mughal Court Painting (1974)
The Sikh Gurus and The Sikh Society (1975)
Maurya and Post-Maurya Art (1976)
Eastern Indian Bronzes (1986)



সম্মাননা 
১৯২৮ সালে প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি প্রাপক গবেষক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৩০ সালে মোয়াট স্বর্ণপদক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
রবীন্দ্র পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ১৯৫০।
সরোজিনী স্বর্ণপদক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৬০।
১৯৬৯ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।
তার কর্ম কুশলতা ও সাংস্কৃতিক অবদানের স্বীকৃতিতে ভারত সরকার তাকে ১৯৬৯ সালে পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত করেন।[১]
বিমলাচরণ লাহা স্বর্ণপদক, এশিয়াটিক সোসাইটি, কলকাতা, ১৯৭০।
প্রফুল্লকুমার সরকার (আনন্দ) পুরস্কার, কলকাতা, ১৯৮০।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে ভূমিকা জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ২০১২ সালে 'বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা' প্রদান করা হয়।

ছাত্রবস্থা থেকেই তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এক সময়ে রাজনীতি ও সাংবাদিকতা করেছেন : আকৃষ্ট হয়েছিলেন অনুশীলন সমিতির প্রতি, অসহযোগ আন্দোলন-এ অংশ নিয়েছিলেন, সুভাষচন্দ্র বসু প্রতিষ্ঠিত ইংরেজি লিবার্টি পত্রিকার সাহিত্য বিভাগ পরিচালনা করেছেন। আর এস পি (রিভ্যলুশনারী সোশ্যালিস্ট পার্টি) দলের সঙ্গে যুক্ত হন এবং দলের মুখপত্র ক্রান্তির পরিচালনা মণ্ডলীতে ছিলেন। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলন-এ অংশ নেওয়ায় কারাবরণ করেন।
প্রাচীন ভারতে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৩৭ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গ্রন্থাগারিক নিযুক্ত হন। ১৯৪৬ সালে শিল্পকলা বিষয়ে রানী বাগেশ্বরী অধ্যাপক পদে বৃত হন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েই। ১৯৬৫ সালে অবসর গ্রহণের পর ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তাকে প্রফেসর এমিরেটস করা হয়। সিমলায় প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্স স্টাডিজ প্রতিষ্ঠানের প্রথম পরিচালক হয়ে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ঐ পদ অলঙ্কৃত করে ছিলেন। ইউনেস্কো-এর প্রতিনিধিরূপে ব্রহ্মদেশ সরকারের সংস্কৃতি ও ইতিহাস-বিষয়ক উপদেশক ছিলেন ১৯৭৩-৭৬ সাল পর্যন্ত।

এছাড়াও, বিভিন্ন সময়ে -- লাইব্রেরি অ্যাসোশিয়েশন অফ গ্রেট ব্রিটেন, লন্ডন; রয়েল এশিয়াটিক সোসাইটি অফ গ্রেট ব্রিটেন, লন্ডন; রয়েল সোসাইটি অফ আর্টস, লন্ডন; ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোশিয়েশন অফ আর্টস, জুরিখ; এশিয়াটিক সোসাইটি, কলকাতা'র ফেলো নির্বাচিত হন।

সম্পাদক : এশিয়াটিক সোসাইটি, কলকাতা, ১৯৪৮-৫০।[২]
মূল সভাপতি : নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন, লখনউ অধিবেশন, ১৯৫৩ ও জামশেদপুর অধিবেশন, ১৯৮০।
সদস্য : উপদেষ্টা পরিষদ, ভারতীয় পুরাতত্ত্ব আধিকারিক।
মূল সভাপতি : ভারতীয় ইতিহাস কংগ্রেস, পাটিয়ালা, ১৯৬৭।
মূল সভাপতি : ভারতীয় পি-ই-এন কংগ্রেস, পাটিয়ালা, ১৯৬৯।
সভাপতি : অল ইন্ডিয়া ওরিয়েন্টাল কনফারেন্স, শান্তিনিকেতন, ১৯৮০।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অধ্যাপক : কেরল বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিবান্দাম, ১৯৬৩; মহারাজা সয়াজীরাও বিশ্ববিদ্যালয়, বরোদা, ১৯৬৬ ও পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, চণ্ডীগড়, ১৯৭২।

১৯০৩ সালের ১৪ জানুয়ারি ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মহেন্দ্রচন্দ্র রায়। তিনি মণিকা রায় নামীয় এক রমণীকে বিয়ে করেন। রায় দম্পতির সংসারে দুই পুত্র এবং এক কন্যা রয়েছে।


প্রাথমিক শিক্ষা ময়মনসিংহে সম্পন্ন হয়। সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্সসহ বি.এ পাস করেন ১৯২৪ সালে। পরে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৬ সালে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের শিল্পকলা শাখায় এম.এ পাস করে রেকর্ড মার্ক-সহ প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯২৭ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ ফেলো হিসাবে নিযুক্ত হয়ে গবেষণায় ব্রতী হন। বৃত্তি নিয়ে ১৯৩৫ সালে ইউরোপ যান এবং হল্যান্ড-এর লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি এবং লন্ডন থেকে গ্রন্থাগার পরিচালনা বিষয়ে ডিপ্লোমা নেন। 
=={======{={{===========}=====}}=====

মহাপ্রয়াণ দিবস। কাজী নজরুল ইসলাম। Vol -842. Dt - 29.08.2022. ১২ ভাদ্র,১৪২৯. সোমবার। The bolgger in litareture e-magazine

কাজী নজরুল ইসলাম


মৃত্যু - ২৯ আগস্ট ১৯৭৬সাল (১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ)

১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তার অসুস্থতা সম্বন্ধে সুষ্পষ্টরূপে জানা যায় ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে। এরপর তাকে মূলত হোমিওপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু এতে তার অবস্থার তেমন কোন উন্নতি হয়নি। সেই সময় তাকে ইউরোপে পাঠানো সম্ভব হলে নিউরো সার্জারি করা হত। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। ১৯৪২ সালের শেষের দিকে তিনি মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন। এরপর নজরুল পরিবার ভারতে নিভৃত সময় কাটাতে থাকে। ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তারা নিভৃতে ছিলেন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে কবি ও কবিপত্নীকে রাঁচির এক মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই উদ্যোগে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল নজরুলের আরোগ্যের জন্য গঠিত একটি সংগঠন যার নাম ছিল নজরুল চিকিৎসা কমিটি, এছাড়া তৎকালীন ভারতের বিখ্যাত রাজনীতিবিদ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সহযোগিতা করেছিলেন। কবি চার মাস রাঁচিতে ছিলেন।

এরপর ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে নজরুল ও প্রমীলা দেবীকে চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাঠানো হয়। মে ১০ তারিখে লন্ডনের উদ্দেশ্যে হাওড়া রেলওয়ে স্টেশন ছাড়েন। লন্ডন পৌঁছানোর পর বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তার রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। এদের মধ্যে ছিলেন: রাসেল ব্রেইন, উইলিয়াম সেজিয়েন্ট এবং ম্যাককিস্ক- তারা তিনবার নজরুলের সাথে দেখা করেন। প্রতিটি সেশনের সময় তারা ২৫০ পাউন্ড করে পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন। রাসেল ব্রেইনের মতে নজরুলের রোগটি ছিল দুরারোগ্য বলতে গেলে আরোগ্য করা ছিল অসম্ভব। একটি গ্রুপ নির্ণয় করেছিল যে নজরুল "ইনভল্যুশনাল সাইকোসিস" রোগে ভুগছেন। এছাড়া কলকাতায় বসবাসরত ভারতীয় চিকিৎসকরাও আলাদা একটি গ্রুপ তৈরি করেছিলেন। উভয় গ্রুপই এই ব্যাপারে একমত হয়েছিল যে, রোগের প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা ছিল খুবই অপ্রতুল ও অপর্যাপ্ত। লন্ডনে অবস্থিত লন্ডন ক্লিনিকে কবির এয়ার এনসেফালোগ্রাফি নামক এক্স-রে করানো হয়। এতে দেখা যায় তার মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। ড: ম্যাককিস্কের মত বেশ কয়েকজন চিকিৎসক একটি পদ্ধতি প্রয়োগকে যথোপযুক্ত মনে করেন যার নাম ছিল ম্যাককিস্ক অপারেশন। অবশ্য ড: ব্রেইন এর বিরোধিতা করেছিলেন।

এই সময় নজরুলের মেডিকেল রিপোর্ট ভিয়েনার বিখ্যাত চিকিৎসকদের কাছে পাঠানো হয়। এছাড়া ইউরোপের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও পাঠানো হয়েছিল। জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জন অধ্যাপক রোঁয়েন্টগেন ম্যাককিস্ক অপারেশনের বিরোধিতা করেন। ভিয়েনার চিকিৎসকরাও এই অপারেশনের ব্যাপারে আপত্তি জানান। তারা সবাই এক্ষেত্রে অন্য আরেকটি পরীক্ষার কথা বলেন যাতে মস্তিষ্কের রক্তবাহগুলির মধ্যে এক্স-রেতে দৃশ্যমান রং ভরে রক্তবাহগুলির ছবি তোলা হয় (সেরিব্রাল অ্যানজিওগ্রাফি)- কবির শুভাকাঙ্খীদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে ভিয়েনার চিকিৎসক ডঃ হ্যান্স হফের অধীনে ভর্তি করানো হয়। এই চিকিৎসক নোবেল বিজয়ী চিকিৎসক জুলিয়াস ওয়েগনার-জাউরেগের অন্যতম ছাত্র। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর কবিকে পরীক্ষা করানো হয়। এর ফলাফল থেকে ড. হফ বলেন যে, কবি নিশ্চিতভাবে পিক্‌স ডিজিজ নামক একটি নিউরনঘটিত সমস্যায় ভুগছেন। এই রোগে আক্রান্তদের মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল ও পার্শ্বীয় লোব সঙ্কুচিত হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন বর্তমান অবস্থা থেকে কবিকে আরোগ্য করে তোলা অসম্ভব। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর তারিখে কলকাতার দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা ভিয়েনায় নজরুল নামে একটি প্রবন্ধ ছাপায় যার লেখক ছিলেন ডঃ অশোক বাগচি- তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ভিয়েনায় অবস্থান করছিলেন এবং নজরুলের চিকিৎসা সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। যাহোক, ব্রিটিশ চিকিৎসকরা নজরুলের চিকিৎসার জন্য বড় অঙ্কের ফি চেয়েছিল যেখানে ইউরোপের অন্য অংশের কোন চিকিৎসকই ফি নেননি। অচিরেই নজরুল ইউরোপ থেকে দেশে ফিরে আসেন। এর পরপরই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধান চন্দ্র রায় ভিয়েনা যান এবং ড. হ্যান্স হফের কাছে বিস্তারিত শোনেন। নজরুলের সাথে যারা ইউরোপ গিয়েছিলেন তারা সবাই ১৯৫৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর রোম থেকে দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মে তারিখে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কবির বাকি জীবন বাংলাদেশেই কাটে। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে নজরুলকে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদানের সরকারি আদেশ জারী করা হয়।
এরপর যথেষ্ট চিকিৎসা সত্ত্বেও নজরুলের স্বাস্থ্যের বিশেষ কোন উন্নতি হয়নি। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে কবির সবচেয়ে ছোট ছেলে এবং বিখ্যাত গিটারবাদক কাজী অনিরুদ্ধ মৃত্যুবরণ করে। ১৯৭৬ সালে নজরুলের স্বাস্থ্যেরও অবনতি হতে শুরু করে। জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে ঢাকার পিজি হাসপাতালে। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। 

"মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিয়ো ভাই
যেন গোরের থেকে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই""

 কবির এই ইচ্ছার বিষয়টি বিবেচনা করে কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং সে অনুযায়ী তার সমাধি রচিত হয়। তবে প্রমিলা দেবীর শেষ ইচ্ছা ছিল তার স্বামীকে যেন তার কবরের পাশে (চুরুলিয়ায় নজরুলের পৈতৃক বাড়িতে) সমাধিস্থ করা হয়। কিন্তু প্রমিলার শেষ ইচ্ছাটি আর পূরণ হয়ে উঠে নি।
জাতীয় পতাকামণ্ডিত নজরুলের মরদেহ বহন করে সোহরাওয়ার্দী ময়দান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে যান। বাংলাদেশে তাঁর মৃত্যু উপলক্ষ্য দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালিত হয় এবং ভারতের আইনসভায় কবির সম্মানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

গানের জলসায় নিরব কেন কবি ! 
বা
কাটিতে চাহেনা মোর এ কাল রাতি।

১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা থেকে কলকাতা ফেরার পথে নজরুল দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্মের জন্ম দেন। এই দুটি হচ্ছে বিদ্রোহী কবিতা ও ভাঙ্গার গান সঙ্গীত। এগুলো বাংলা কবিতা ও গানের ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল। বিদ্রোহী কবিতার জন্য নজরুল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। একই সময় রচিত আরেকটি বিখ্যাত কবিতা হচ্ছে কামাল পাশা- এতে ভারতীয় মুসলিমদের খিলাফত আন্দোলনের অসারতা সম্বন্ধে নজরুলে দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমকালীন আন্তর্জাতিক ইতিহাস-চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯২২ সালে তার বিখ্যাত কবিতা-সংকলন অগ্নিবীণা প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থ বাংলা কবিতায় একটি নতুনত্ব সৃষ্টিতে সমর্থ হয়, এর মাধ্যমেই বাংলা কাব্যের জগতে পালাবদল ঘটে। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরপর এর কয়েকটি নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থের সবচেয়ে সাড়া জাগানো কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে: "প্রলয়োল্লাস, আগমনী, খেয়াপারের তরণী, শাত-ইল্‌-আরব, বিদ্রোহী, কামাল পাশা" ইত্যাদি। এগুলো বাংলা কবিতার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তার শিশুতোষ কবিতা বাংলা কবিতায় এনেছে নান্দনিকতা খুকী ও কাঠবিড়ালি, লিচু-চোর, খাঁদু-দাদু ইত্যাদি তারই প্রমাণ। কবি তার মানুষ কবিতায় বলেছিলেন:

“ 
পূজিছে গ্রন্থ ভণ্ডের দল মূর্খরা সব শোন/ মানুষ এনেছে গ্রন্থ, গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোন

তিনি কালী দেবিকে নিয়ে অনেক শ্যামা সঙ্গিত রচনা করেন, ইসলামী গজলও রচনা করেন।

তখন দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলন বিপুল উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। নজরুল কুমিল্লা থেকে কিছুদিনের জন্য দৌলতপুরে আলী আকবর খানের বাড়িতে থেকে আবার কুমিল্লা ফিরে যান ১৯ জুনে- এখানে যতদিন ছিলেন ততদিনে তিনি পরিণত হন একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীতে। তার মূল কাজ ছিল শোভাযাত্রা ও সভায় যোগ দিয়ে গান গাওয়া। তখনকার সময়ে তার রচিত ও সুরারোপিত গানগুলির মধ্যে রয়েছে "এ কোন পাগল পথিক ছুটে এলো বন্দিনী মার আঙ্গিনায়, আজি রক্ত-নিশি ভোরে/ একি এ শুনি ওরে/ মুক্তি-কোলাহল বন্দী-শৃঙ্খলে" প্রভৃতি। এখানে ১৭ দিন থেকে তিনি স্থান পরিবর্তন করেছিলেন। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে আবার কুমিল্লায় ফিরে যান। ২১ নভেম্বর ছিল সমগ্র ভারতব্যাপী হরতাল- এ উপলক্ষে নজরুল আবার পথে নেমে আসেন; অসহযোগ মিছিলের সাথে শহর প্রদক্ষিণ করেন আর গান করেন, "ভিক্ষা দাও! ভিক্ষা দাও! ফিরে চাও ওগো পুরবাসী"- নজরুলের এ সময়কার কবিতা, গান ও প্রবন্ধের মধ্যে বিদ্রোহের ভাব প্রকাশিত হয়েছে। এর সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে বিদ্রোহী নামক কবিতাটি। বিদ্রোহী কবিতাটি ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় এবং সারা ভারতের সাহিত্য সমাজে খ্যাতিলাভ করে। এই কবিতায় নজরুল নিজেকে বর্ণনা করেন:-

“ 
আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির গৃহহারা যত পথিকের,

আমি অবমানিতের মরম বেদনা, বিষ জ্বালা, চির লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের

আমি অভিমানী চির ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,

চিত চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম প্রকাশ কুমারীর!

আমি গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল করে দেখা অনুখন,

আমি চপল মেয়ের ভালবাসা তার কাকন চুড়ির কন-কন।

...

মহা-বিদ্রোহী রণক্লান্ত

আমি সেই দিন হব শান্ত।

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,

অত্যাচারীর খড়ুগ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না-

বিদ্রোহী রণক্লান্ত

আমি সেই দিন হব শান্ত।

..........................

আমি চির বিদ্রোহী বীর –

বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির!
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই আগস্ট নজরুল ধূমকেতু পত্রিকা প্রকাশ করেন। এটি সপ্তাহে দুবার প্রকাশিত হতো। ১৯২০-এর দশকে অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন এক সময় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এর পরপর স্বরাজ গঠনে যে সশস্ত্র বিপ্লববাদের আবির্ভাব ঘটে তাতে ধূমকেতু পত্রিকার বিশেষ অবদান ছিল। এই পত্রিকাকে আশীর্বাদ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন,

“ 
কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু।

আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।

পত্রিকার প্রথম পাতার শীর্ষে এই বাণী লিখা থাকতো। পত্রিকার ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২২ সংখ্যায় নজরুলের কবিতা আনন্দময়ীর আগমনে প্রকাশিত হয়। এই রাজনৈতিক কবিতা প্রকাশিত হওয়ায় ৮ নভেম্বর পত্রিকার উক্ত সংখ্যাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। একই বছরের ২৩ নভেম্বর তার যুগবাণী প্রবন্ধগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং একই দিনে তাকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে কুমিল্লা থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জানুয়ারি নজরুল বিচারাধীন বন্দী হিসেবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে এক জবানবন্দি প্রদান করেন। চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে এই জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তার এই জবানবন্দি বাংলা সাহিত্যে রাজবন্দীর জবানবন্দী নামে বিশেষ সাহিত্যিক মর্যাদা লাভ করেছে। এই জবানবন্দীতে নজরুল বলেছেন:

“ 
আমার উপর অভিযোগ, আমি রাজবিদ্রোহী। তাই আমি আজ রাজকারাগারে বন্দি এবং রাজদ্বারে অভিযুক্ত।... আমি কবি,আমি অপ্রকাশ সত্যকে প্রকাশ করার জন্য, অমূর্ত সৃষ্টিকে মূর্তিদানের জন্য ভগবান কর্তৃক প্রেরিত। কবির কণ্ঠে ভগবান সাড়া দেন, আমার বাণী সত্যের প্রকাশিকা ভগবানের বাণী। সেবাণী রাজবিচারে রাজদ্রোহী হতে পারে, কিন্তু ন্যায়বিচারে সে বাণী ন্যায়দ্রোহী নয়, সত্যাদ্রোহী নয়। সত্যের প্রকাশ নিরুদ্ধ হবে না। আমার হাতের ধূমকেতু এবার ভগবানের হাতের অগ্নি-মশাল হয়ে অন্যায় অত্যাচার দগ্ধ করবে...।

১৬ জানুয়ারি বিচারের পর নজরুলকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। নজরুলকে আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে যখন বন্দী জীবন কাটাচ্ছিলেন তখন (১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি ২২) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তার বসন্ত গীতিনাট্য গ্রন্থটি নজরুলকে উৎসর্গ করেন। এতে নজরুল বিশেষ উল্লসিত হন। এই আনন্দে জেলে বসে আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কবিতাটি রচনা করেন। 

১৯২১ সালের এপ্রিল-জুন মাসের দিকে নজরুল মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে গ্রন্থ প্রকাশক আলী আকবর খানের সাথে পরিচিত হন। তার সাথেই তিনি প্রথম কুমিল্লার বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে আসেন। আর এখানেই পরিচিত হন প্রমীলা দেবীর সাথে যার সাথে তার প্রথমে প্রণয় ও পরে বিয়ে হয়েছিল।

তবে এর আগে নজরুলের বিয়ে ঠিক হয় আলী আকবর খানের ভগ্নী নার্গিস আসার খানমের সাথে। বিয়ের আখত সম্পন্ন হবার পরে কাবিনের নজরুলের ঘর জামাই থাকার শর্ত নিয়ে বিরোধ বাধে। নজরুল ঘর জামাই থাকতে অস্বীকার করেন এবং বাসর সম্পন্ন হবার আগেই নার্গিসকে রেখে কুমিল্লা শহরে বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে চলে যান। তখন নজরুল খুব অসুস্থ ছিলেন এবং প্রমিলা দেবী নজরুলের পরিচর্যা করেন। এক পর্যায়ে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[৭]

নজরুল সাম্যবাদের একজন অগ্রদূত ছিলেন। তিনি মুসলিম হয়েও চার সন্তানের নাম বাংলা এবং আরবি/ফারসি উভয় ভাষাতেই নামকরণ করেন। যেমন: কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ (বুলবুল), কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধ।

১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মে (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম।[১] চুরুলিয়া গ্রামটি আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া ব্লকে অবস্থিত। পিতামহ কাজী আমিন উল্লাহর পুত্র কাজী ফকির আহমদের দ্বিতীয় স্ত্রী জাহেদা খাতুনের ষষ্ঠ সন্তান তিনি। তার বাবা ফকির আহমদ ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং মাযারের খাদেম। নজরুলের তিন ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ কাজী আলী হোসেন এবং দুই বোনের মধ্যে সবার বড় কাজী সাহেবজান ও কনিষ্ঠ উম্মে কুলসুম। কাজী নজরুল ইসলামের ডাক নাম ছিল "দুখু মিয়া"। নজরুল গ্রামের স্থানীয় মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। মক্তবে (মসজিদ পরিচালিত মুসলিমদের ধর্মীয় স্কুল) কুরআন, ইসলাম ধর্ম, দর্শন এবং ইসলামী ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন শুরু করেন। ১৯০৮ সালে তার পিতার মৃত্যু হয়, তখন তার বয়স মাত্র নয় বছর। পিতার মৃত্যুর পর পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে তার শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয় এবং মাত্র দশ বছর বয়সে জীবিকা অর্জনের জন্য কাজে নামতে হয় তাকে।[৪] এসময় নজরুল মক্তব থেকে নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উক্ত মক্তবেই শিক্ষকতা শুরু করেন। একই সাথে হাজি পালোয়ানের কবরের সেবক এবং মসজিদের মুয়াযযিন (আযান দাতা) হিসেবে কাজ শুরু করেন। এইসব কাজের মাধ্যমে তিনি অল্প বয়সেই ইসলামের মৌলিক আচার-অনুষ্ঠানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হবার সুযোগ পান যা পরবর্তীকালে তার সাহিত্যকর্মে বিপুলভাবে প্রভাবিত করে।[১] তিনিই বাংলা সাহিত্যে ইসলামী চেতনার চর্চা শুরু করেছেন বলা যায়।[১]

মক্তব, মসজিদ ও মাজারের কাজে নজরুল বেশি দিন ছিলেন না। বাল্য বয়সেই লোকশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে একটি লেটো (বাংলার রাঢ় অঞ্চলের কবিতা, গান ও নৃত্যের মিশ্র আঙ্গিক চর্চার ভ্রাম্যমাণ নাট্যদল)[৫] দলে যোগ দেন। তার চাচা কাজী বজলে করিম চুরুলিয়া অঞ্চলের লেটো দলের বিশিষ্ট উস্তাদ ছিলেন এবং আরবি, ফার্সি ও উর্দূ ভাষায় তার দখল ছিল। এছাড়া বজলে করিম মিশ্র ভাষায় গান রচনা করতেন। ধারণা করা হয়, বজলে করিমের প্রভাবেই নজরুল লেটো দলে যোগ দিয়েছিলেন। এছাড়া ঐ অঞ্চলের জনপ্রিয় লেটো কবি শেখ চকোর (গোদা কবি) এবং কবিয়া বাসুদেবের লেটো ও কবিগানের আসরে নজরুল নিয়মিত অংশ নিতেন। লেটো দলেই সাহিত্য চর্চা শুরু হয়। এই দলের সাথে তিনি বিভিন্ন স্থানে যেতেন, তাদের সাথে অভিনয় শিখতেন এবং তাদের নাটকের জন্য গান ও কবিতা লিখতেন। নিজ কর্ম এবং অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বাংলা এবং সংস্কৃত সাহিত্য অধ্যয়ন শুরু করেন। একইসাথে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অর্থাৎ পুরাণসমূহ অধ্যয়ন করতে থাকেন। সেই অল্প বয়সেই তার নাট্যদলের জন্য বেশকিছু লোকসঙ্গীত রচনা করেন। এর মধ্যে রয়েছে চাষার সঙ, শকুনীবধ, রাজা যুধিষ্ঠিরের সঙ, দাতা কর্ণ, আকবর বাদশাহ, কবি কালিদাস, বিদ্যাভূতুম, রাজপুত্রের গান, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ এবং মেঘনাদ বধ।[১] একদিকে মসজিদ, মাজার ও মক্তব জীবন, অপর দিকে লেটো দলের বিচিত্র অভিজ্ঞতা নজরুলের সাহিত্যিক জীবনের অনেক উপাদান সরবরাহ করেছে। নজরুল কালীদেবীকে নিয়ে প্রচুর শ্যামা সঙ্গীত ও রচনা করেন, নজরুল তার শেষ ভাষনে উল্লেখ্য করেন - “কেউ বলেন আমার বানী যবন কেউ বলেন কাফের। আমি বলি ও দুটোর কোনটাই না। আমি শুধু হিন্দু মুসলিমকে এক জায়গায় ধরে নিয়ে হ্যান্ডশেক করানোর চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি।”

১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের শেষদিকে নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। প্রথমে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে এবং পরবর্তীতে প্রশিক্ষণের জন্য সীমান্ত প্রদেশের নওশেরায় যান। প্রশিক্ষণ শেষে করাচি সেনানিবাসে সৈনিক জীবন কাটাতে শুরু করেন। তিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের শেষভাগ থেকে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় আড়াই বছর। এই সময়ের মধ্যে তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক কর্পোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পর্যন্ত হয়েছিলেন। উক্ত রেজিমেন্টের পাঞ্জাবী মৌলবির কাছে তিনি ফার্সি ভাষা শিখেন। এছাড়া সহ-সৈনিকদের সাথে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে সঙ্গীতের চর্চা অব্যাহত রাখেন, আর গদ্য-পদ্যের চর্চাও চলতে থাকে একই সাথে। করাচি সেনানিবাসে বসে নজরুল যে রচনাগুলো সম্পন্ন করেন তার মধ্যে রয়েছে, বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী (প্রথম গদ্য রচনা), মুক্তি (প্রথম প্রকাশিত কবিতা); গল্প: হেনা, ব্যথার দান, মেহের নেগার, ঘুমের ঘোরে, কবিতা সমাধি ইত্যাদি। এই করাচি সেনানিবাসে থাকা সত্ত্বেও তিনি কলকাতার বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে প্রবাসী, ভারতবর্ষ, ভারতী, মানসী, মর্ম্মবাণী, সবুজপত্র, সওগাত এবং বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা। এই সময় তার কাছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং ফার্সি কবি হাফিজের কিছু বই ছিল। এ সূত্রে বলা যায় নজরুলের সাহিত্য চর্চার হাতেখড়ি এই করাচি সেনানিবাসেই। সৈনিক থাকা অবস্থায় তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। এ সময় নজরুলের বাহিনীর ইরাক যাবার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধ থেমে যাওয়ায় আর যাননি। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে যুদ্ধ শেষ হলে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙে দেয়া হয়।[৬] এরপর তিনি সৈনিক জীবন ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে আসেন।
যুদ্ধ শেষে কলকাতায় এসে নজরুল ৩২ নং কলেজ স্ট্রিটে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে বসবাস শুরু করেন। তার সাথে থাকতেন এই সমিতির অন্যতম কর্মকর্তা মুজফ্‌ফর আহমদ। এখান থেকেই তার সাহিত্য-সাংবাদিকতা জীবনের মূল কাজগুলো শুরু হয়। প্রথম দিকেই মোসলেম ভারত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, উপাসনা প্রভৃতি পত্রিকায় তার কিছু লেখা প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে উপন্যাস বাঁধন হারা এবং কবিতা বোধন, শাত-ইল-আরব, বাদল প্রাতের শরাব, আগমনী, খেয়া-পারের তরণী, কোরবানি, মোহরর্‌ম, ফাতেহা-ই-দোয়াজ্‌দম্‌, এই লেখাগুলো সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়। এর প্রেক্ষিতে কবি ও সমালোচক মোহিতলাল মজুমদার মোসলেম ভারত পত্রিকায় তার খেয়া-পারের তরণী এবং বাদল প্রাতের শরাব কবিতা দুটির প্রশংসা করে একটি সমালোচনা প্রবন্ধ লিখেন। এ থেকেই দেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সমালোচকদের সাথে নজরুলের ঘনিষ্ঠ পরিচয় শুরু হয়। বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে কাজী মোতাহার হোসেন, মোজাম্মেল হক, কাজী আবদুল ওদুদ, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌, আফজালুল হক প্রমুখের সাথে পরিচয় হয়। তৎকালীন কলকাতার দুটি জনপ্রিয় সাহিত্যিক আসর গজেনদার আড্ডা এবং ভারতীয় আড্ডায় অংশগ্রহণের সুবাদে পরিচিত হন অতুলপ্রসাদ সেন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, শিশিরকুমার ভাদুড়ী, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নির্মেলন্দু লাহিড়ী, ধুর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, হেমেন্দ্রকুমার রায়, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, ওস্তাদ করমতুল্লা খাঁ প্রমুখের সাথে। ১৯২১ সালের অক্টোবর মাসে তিনি শান্তিনিকেতনে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তখন থেকে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু পর্যন্ত তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় ছিল। কাজী মোতাহার হোসেনের সাথে নজরুলের বিশেষ বন্ধুত্ব গড়ে উঠে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের চুরুলিয়ায় "নজরুল অ্যাকাডেমি" নামে একটি বেসরকারি নজরুল-চর্চা কেন্দ্র আছে। চুরুলিয়ার কাছে আসানসোল মহানগরে ২০১২ সালে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে।[১৭][১৮] আসানসোলের কাছেই দুর্গাপুর মহানগরের লাগোয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির নাম রাখা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।[১৯] উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় অবস্থিত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাজধানী কলকাতার যোগাযোগ-রক্ষাকারী প্রধান সড়কটির নাম রাখা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম সরণি। কলকাতা মেট্রোর গড়িয়া বাজার মেট্রো স্টেশনটির নাম রাখা হয়েছে "কবি নজরুল মেট্রো স্টেশন"।

১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বাংলা সাহিত্যের সর্বোচ্চ পুরস্কার জগত্তারিণী স্বর্ণপদক নজরুলকে প্রদান করা হয়। ১৯৬০ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণে ভূষিত করা হয়।[২০]

বাংলাদেশ
কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়।[২১][২২] তার রচিত "চল্‌ চল্‌ চল্‌, ঊর্ধগগনে বাজে মাদল" বাংলাদেশের রণসঙ্গীত হিসেবে গৃহীত। নজরুলের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী প্রতি বছর বিশেষভাবে উদযাপিত হয়। নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশালে (বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায়) ২০০৫ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় নামক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় কবির স্মৃতিতে নজরুল একাডেমি, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি ও শিশু সংগঠন বাংলাদেশ নজরুল সেনা স্থাপিত হয়। এছাড়া সরকারিভাবে স্থাপিত হয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান নজরুল ইন্সটিটিউট- ঢাকা শহরের একটি প্রধান সড়কের নাম রাখা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ।

বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে তার বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তনে তাকে এই উপাধি প্রদান করা হয়। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারিতে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।একুশে পদক বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মানসূচক পদক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

==============∆∆∆∆∆∆=============



Friday, 26 August 2022

স্মরণীয় প্রয়াণ দিবস। বাঙালি কবি ও গীতিকার অতুল প্রসাদ সেন, লেখক চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য, নাট্যকার মন্মথ রায় ও কথাসাহিত্যিক বিমল কর। vol -839. dt -26.08.3022. ৯ ই ভাদ্র,১৪২৯. শুক্রবার। The bolgger in litareture e-magazine


অতুল প্রসাদ সেন


"শেষে ফিরব যখন সন্ধা বেলা 
সাঙ্গ করে ভবের খেলা
জননী হয়ে তখন কোল বাড়ায়ে রবে
আমার যে শূন্য ডালা, তুমি ভরিয়ো
আর তুমি যে শিব তাহা বুঝিতে দিয়ো
"


ভারতের লক্ষ্ণৌতে বসবাসকালে তিনি ১৯৩৪ সালের ২৬ আগস্ট মারা যান। সেখানেই তার শেষকৃত্য হয়। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলাধীন কাওরাইদ (কাওরাদি) ব্রহ্ম মন্দিরের পাশে সমাধিস্থলে তার চিতাভস্ম সমাহিত করা হয়। এখানে একটি স্মৃতিফলক আছে। 
এতে লেখা ছিল
 ‘‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা! 
তোমার কোলে, তোমার বোলে, কতই শান্তি ভালবাসা!‘‘ 
 ১৯৭১ খিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের সময় তখনকার স্মৃতিফলকটি পাকিস্তানি সৈন্যদের গুলিতে ভেঙ্গে যায়। পরে নতুন করে করা হয়। নতুন স্মৃতিফলকে লেখা হয় । 

১৮৭১ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকায় তার মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের আদি নিবাস শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মগর গ্রামে। অতি অল্পবয়সেই অতুলপ্রসাদ পিতৃহারা হন। বাল্য কালে পিতৃহীন হয়ে অতুল প্রসাদ ভগবদ্ভক্ত, সুকন্ঠ গায়ক ও ভক্তিগীতিরচয়িতা মাতামহ কালীনারায়ণ গুপ্তের আশ্রয়ে প্রতিপালিত হন। পরবর্তীকালে মাতামহের এসব গুণ তার মাঝেও সঞ্চালিত হয়। মাতামহের নিকটই সঙ্গীত ও ভক্তিমূলক গানে তার হাতেখড়ি। অতুল প্রসাদ ১৮৯০ সালে প্রবেশিকা পাশের পর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে (অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন ও কিছুদিন অধ্যয়ন করেন। পরে লন্ডনে গিয়ে আইন শিক্ষা করেন। ইংল্যাণ্ড যাবার পথে ভেনিসের কাছে জাহাজে বসেই একটা বিদেশি গানের সুরে মোহিত হয়ে ঐ সুরকে মাথায় রেখে অতুলপ্রসাদ প্রথম লিখে ফেলেন একটি বিখ্যাত গান – ‘উঠ গো ভারতলক্ষ্মী’। লণ্ডনের মিডল টেম্পলে ব্যারিস্টারি পড়াকালীন ব্রিটিশ মিউজিয়াম ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হয় তাঁর। চিত্তরঞ্জন দাশ, সরোজিনী নাইডু, অরবিন্দ ঘোষ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রমুখদের সঙ্গে লণ্ডনেই সাক্ষাৎ ঘটে তাঁর। ব্যারিস্টারি পড়ার পাশাপাশি পাশ্চাত্য সঙ্গীত, নাটক, অর্কেস্ট্রা ইত্যাদি শুনতে শুনতে গানের ভিত তৈরি হয় তাঁর মনে।

আইন পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে ১৮৯৪ সালে তিনি বাংলায় ফিরে আসেন এবং রংপুর ও কলকাতায় অনুশীলন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি লখনউ চলে যান এবং সেখানে অউধ বার অ্যাসোসিয়েশন ও অউধ বার কাউন্সিলের সভাপতি হন। লক্ষ্মৌতে তিনি যেখানে বাস করতেন তার জীবনকালেই তার নামে ঐ রাস্তার নামকরণ করা হয়। তার উপার্জিত অর্থের একটি বড়ো অংশ তিনি স্থানীয় জনসাধারণের সেবায় ব্যয় করেন। তার বাড়ি এবং গ্রন্থস্বত্বও তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান করে গেছেন।বাংলা ভাষা সাহিত্যে ও সঙ্গীতের এক অতি পরিচিত নাম অতুল প্রসাদ সেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার ও গায়ক। বাংলাভাষীদের নিকট অতুল প্রসাদ সেন প্রধানত একজন সঙ্গীতজ্ঞ ও সুরকার হিসেবেই পরিচিত। তার গানগুলি মূলত স্বদেশি সঙ্গীত, ভক্তিগীতি ও প্রেমের গান; এই তিন ধারায় বিভক্ত। তবে তার ব্যক্তি জীবনের বেদনা সকল ধরনের গানেই কম-বেশি প্রভাব ফেলেছে। এজন্য তার অধিকাংশ গানই হয়ে উঠেছে করুণ-রস প্রধান।
১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে ব্যারিস্টারী ডিগ্রী লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে আইন পড়তে অতুলপ্রসাদ লণ্ডনে গমন করেন। কিছুদিন পর বড়মামা কৃষ্ণগোবিন্দ গুপ্ত সেখানে গেলে মামাতো বোন হেমকুসুমের সঙ্গে অতুলপ্রসাদের প্রেম হয় ।
স্কটল্যান্ডে গিয়ে ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে মামাতো বোন হেমকুসুমকে বিয়ে করেন অতুলপ্রসাদ।
১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জীবিত সন্তান দিলীপকুমারকে নিয়ে ভারতে তথা কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন।
বিয়ে শেষাবধি সুখের হয় নি। লখনউ বসবাস কালে অতুলপ্রসাদের মা হেমন্তশশীর দ্বিতীয় স্বামী দুর্গামোহনের মৃত্যু হয়। দুর্গামোহনের মৃত্যুর পর হেমন্তশশী লখনউ চলে আসের পুত্রের সংসারে। এসময় শ্বাশুড়ি বৌমার বিসম্বাদ শুরু হয়। পরিণতিতে স্বামী-স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি। ছাড়াছাড়ি মিটিয়ে একসঙ্গে থাকার চেষ্টাও সফল হয় নি। হেমন্তশশী ও হেমকুসুমের দ্বন্দ্ব মেটেনি কখনো। হেমন্তশশীর মৃত্যুর পর ঘরে তার ফটো টাঙানো ছিল। তা সরিয়ে ফেলার দাবী তোলেন হেমকুসুম। কিন্তু মায়ের ছবিকে এভাবে অসম্মান করতে নারাজ অতুলপ্রসাদ। এবার হেমকুসুম চিরকালের জন্য স্বামীর ঘর ছেড়ে গেলেন, আর প্রত্যাবর্তন করেন নি।
অতঃপর বিলেত থেকে ব্যারিষ্টারি পাশ করে তিনি কলকাতা ও রংপুরে আইন ব্যবসা শুরু করেন। সেখান থেকে তিনি পরে লক্ষ্ণৌতে চলে যান। সেখানে তিনি একজন শ্রেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন এবং আউধ বার এ্যাসোসিয়েশন ও আউধ বার কাউন্সিলরের সভাপতি নির্বাচিত হন। লক্ষ্ণৌ নগরীর সংস্কৃতি ও জীবনধারার সঙ্গেও তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে পড়েন। ১৯০২ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত অতুল প্রসাদ আইন ব্যবসা উপলক্ষে লক্ষ্ণৌতে অতিবাহিত করেন। 
বাংলা ভাষা সাহিত্যে ও সঙ্গীতের এক অতি পরিচিত নাম অতুল প্রসাদ সেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার ও গায়ক। বাংলাভাষীদের নিকট অতুল প্রসাদ সেন প্রধানত একজন সঙ্গীতজ্ঞ ও সুরকার হিসেবেই পরিচিত। তার গানগুলি মূলত স্বদেশি সঙ্গীত, ভক্তিগীতি ও প্রেমের গান; এই তিন ধারায় বিভক্ত। তবে তার ব্যক্তি জীবনের বেদনা সকল ধরনের গানেই কম-বেশি প্রভাব ফেলেছে। এজন্য তার অধিকাংশ গানই হয়ে উঠেছে করুণ-রস প্রধান।

উনিশ শতকের শেষ থেকে বিশ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত রবীন্দ্র প্রতিভার প্রভাববলয়ের মধ্যে বিচরণ করেও যাঁরা বাংলা কাব্যগীতি রচনায় নিজেদের বিশেষত্ব প্রকাশ করতে সক্ষম হন, অতুল প্রসাদ ছিলেন তাদের অন্যতম। সমকালীন গীতিকারদের তুলনায় তার সঙ্গীত সংখ্যা সীমিত হলেও অতুল প্রসাদের অনেক গানে সাঙ্গীতিক মৌলিকত্ব পরিলক্ষিত হয়; আর সে কারণেই তিনি বাংলা সঙ্গীত জগতে এক স্বতন্ত্র আসন লাভ করেছেন। তার গানগুলি অতুল প্রসাদের গান নামে বিশেষ ভাবে প্রতিষ্ঠিত।

অতুলপ্রসাদ বাংলা গানে ঠুংরি ধারার প্রবর্তক।[১] তিনিই প্রথম বাংলায় গজল রচনা করেন। তার রচিত বাংলা গজলের সংখ্যা ৬-৭টি।[২]গীতিগুঞ্জ (১৯৩১) গ্রন্থে তার সমুদয় গান সংকলিত হয়।[৬] এই গ্রন্থের সর্বশেষ সংস্করণে (১৯৫৭) অনেকগুলি অপ্রকাশিত গান প্রকাশিত হয়।[৩] অতুলপ্রসাদের গানের সংখ্যা ২০৮।[৭] অতুলপ্রসাদ সেনের কয়েকটি বিখ্যাত গান হল মিছে তুই ভাবিস মন, সবারে বাস রে ভালো,বঁধুয়া, নিঁদ নাহি আঁখিপাতে, একা মোর গানের তরী, কে আবার বাজায় বাঁশি, ক্রন্দসী পথচারিণী ইত্যাদি। তার রচিত দেশাত্মবোধক গানগুলির মধ্যে প্রসিদ্ধ উঠ গো ভারত-লক্ষ্মী, বলো বলো বলো সবে, হও ধরমেতে ধীর। তার মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা! গানটি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অণুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। অতুলপ্রসাদের গানগুলি দেবতা, প্রকৃতি, স্বদেশ, মানব ও বিবিধ নামে পাঁচটি পর্যায়ে বিভক্ত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গানের বিশেষ গুণগ্রাহী ছিলেন। অতুলপ্রসাদী গান নামে পরিচিত এই ধারার একজন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী হলেন কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়।

তার সর্বমোট গানের সংখ্যা মাত্র ২০৬টি এবং সে সবের মধ্যে মাত্র ৫০-৬০টি গান গীত হিসেবে প্রাধান্য পায়। অতুল প্রসাদের মামাতো বোন সাহানা দেবীর সম্পাদনায় ৭১টি গান স্বরলিপিসহ কাকলি (১৯৩০) নামে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়। তার অপর গানগুলিও গীতিপুঞ্জ এবং কয়েকটি গান নামে দুটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত হয়। ১৯২২-২৩ সালের দিকে কলকাতা থেকে প্রথম অতুল প্রসাদের গানের রেকর্ড বের হয় সাহানা দেবী ও হরেন চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে।
ভারতবর্ষে ঊনবিংশ শতাব্দীতে আবির্ভুত একজন বিশিষ্ট বাঙালি গীতিকার, সুরকার ও গায়ক। তিনি একজন বিশিষ্ট সঙ্গীতবিদও ছিলেন। তার রচিত গানগুলির মূল উপজীব্য বিষয় ছিল দেশপ্রেম, ভক্তি ও প্রেম। তার জীবনের দুঃখ ও যন্ত্রণাগুলি তার গানের ভাষায় বাঙ্ময় মূর্তি ধারণ করেছিল; "বেদনা অতুলপ্রসাদের গানের প্রধান অবলম্বন"।

==============={{{{{{======{{{======



চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য

চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ২৬ শে আগস্ট প্রয়াত হন ।


গ্রন্থগুলি হল -

'আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু'(১৯৩৮)
'বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার কাহিনী' (১৯৫৩)
'নব্যবিজ্ঞান'
'বাঙালির খাদ্য'
'বিশ্বের উপাদান'(১৯৪৩)
'তড়িতের অভ্যুত্থান' (১৯৪৯)
'ব্যাধির পরাজয়'(১৯৪৯)
'পদার্ধবিদ্যার নবযুগ'(১৯৫১)

সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রতিষ্ঠিত বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের পক্ষ থেকে তিনি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রচার চেষ্টার সূচনা করেন 'বিজ্ঞান প্রবেশ' ও পদার্থবিদ্যা' গ্রন্থ রচনার মধ্য দিয়ে । নানা বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি জগদীশচন্দ্রের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে সাধারণের মধ্যে পরিচিত করান। তার রচিত 'কবিস্মরণে' একখানি রসমধুর স্মৃতিচারণ গ্রন্থ তিনি ছদ্মনামে রচনা করেন । কয়েক বছর তিনি সমবায় সমিতির 'ভাণ্ডার' পত্রিকা এবং আমৃত্যু 'বসুধারা' পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন । বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদে প্রথম রাজশেখর বসু স্মৃতি বক্তৃতা "পরমাণু নিউক্লিয়াস "বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনার অন্যতম মূল্যবান সংযোজন (১৯৬২)।

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণীর জন্য দুটি বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তক ও রচনা করেন । বিজ্ঞানে ব্যবহারের জন্য বহু বাংলা প্রতিশব্দ নির্ধারণ করেছেন। এ বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিযুক্ত কমিটিতে তিনি সচিব ছিলেন এবং সভাপতি ছিলেন রাজশেখর বসু । তিনি পরিমাপ ও বৈজ্ঞানিক প্রতিশব্দ চয়ন ও নির্ধারণে ভারত সরকারকেও সহায়তা করেন।

তিনি ২৯ জুন, ১৮৮৩ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার হরিনাভিতে জন্ম গ্রহণ করেন । পিতার নাম বসন্ত কুমার ভট্টাচার্য ও মাতার নাম মেনকা দেবী। অতিশয় মেধাবি ছিলেন তিনি । কলকাতার মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন থেকে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে । ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে এফ. এ পরীক্ষায় দ্বাদশ স্থান অর্জন করেন । ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হন এবং ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এম.এ পাশ করেন ।


এম. এ পাশের পর পরই তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং দীর্ঘ ৩৫ বৎসর তিনি সেখানে অধ্যাপনা করেছেন । আর এ প্রসঙ্গে তিনি বলতেন-

"বাংলার পাঁচজন এফ.আর.এস - এর মধ্যে একজন আমার শিক্ষক, বাকি চারজন ছাত্র ।"

শিক্ষক হচ্ছেন আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু এবং ছাত্ররা হচ্ছেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু , মেঘনাদ সাহা, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ ও শিশিরকুমার মিত্র। তার আর এক ছাত্র প্রতুল চন্দ্র গুপ্ত বলতেন - "কত কঠিন বিষয় তিনি অত্যন্ত সহজে ব্যাখ্যা করতে পারতেন"।


চারুচন্দ্র ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দেই শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর গ্রন্থন বিভাগে যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেই সময়ে গ্রন্থন বিভাগের আর্থিক দূরাবস্থার মধ্যে বাংলার সাহিত্যক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের বাংলা রচনাসমূহের সংগ্রহ গ্রন্থ - রবীন্দ্র-রচনাবলী র (প্রথম প্রকাশ-১৯৩৯) প্রকাশ করে অমর অবদান রেখে গেছেন । শিক্ষাবিস্তারের জন্য রবীন্দ্রনাথের পরিকল্পনায় তারই দক্ষতায় বিশ্বভারতী "বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহ গ্রন্থমালা" ও লোকশিক্ষার বই প্রকাশের ব্যবস্থা করে । প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য লোকশিক্ষার প্রথম পুস্তক "বিশ্ব-পরিচয়: রবীন্দ্রনাথ সত্যেন্দ্রনাথ বসুকেই উৎসর্গ করেন। রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের দুবছর পর চারুচন্দ্র বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহের পুস্তক রচনা করতে থাকেন । সহজ সরল ও হৃদয়গ্রাহী বাংলা ভাষায় লেখা ।
======{}={{{}{={{{}{={{{}}{{}}============



মন্মথ রায়

মৃত্যু ২৬ আগস্ট ১৯৮৮।



উল্লেখযোগ্য নাটকঃ

মুক্তির ডাক (১৯২৩)
সেমিরেমিস (১৯২৫)
কাজল রেখা (১৯২৬)
চাঁদ সদাগর (১৯২৭)
দেবাসুর (১৯২৮)
মহুয়া (১৯২৯)
কারাগার (১৯৩০)
একাঙ্কিকা (১৯৩১)
সাবিত্রী (১৯৩১)
অশোক (১৯৩৩)
খনা (১৯৩৫)
বিদ্যুপর্না (১৯৩৭)
সতী (১৯৩৭)
মীরকাশিম (১৯৩৮)
রূপকথা (১৯৩৮)
রাজনটী (১৯৩৮)
ভাঙাগড়া (১৯৫০)
মহাভারতী (১৯৫০)
মমতাময়ী হাসপাতাল (১৯৫২)
উর্ব্বশী (১৯৫৩)
নিরুদ্দেশ (১৯৫৩)
পথে বিপথ (১৯৫৩)
মীরাবাঈ (১৯৫৪)
গুপ্তধন (১৯৫৫)
জীবন মরন (১৯৫৫)
লাঙ্গল (১৯৫৫)
জটাগঙ্গাধর বাঁদ (১৯৫৫)
রঘু ডাকাত (১৯৫৫)
শ্রীশ্রী মা (১৯৫৫)
ছোটোদের একাঙ্কিকা (১৯৫৬)
মরা হাতি লাখ টাকা (১৯৫৭)
নব একাঙ্কিকা (১৯৫৮)
সাঁওতাল বিদ্রোহ (১৯৫৮)
কোটিপতি নিরুদ্দেশ (১৯৫৯)
ফকিরের পাথার ও নাট্যগুচ্ছ (১৯৫৯)
বন্দিতা (১৯৫৯)
মহাপ্রেম (১৯৫৯)
অমৃত অতীত (১৯৬০)
কৃষাণ (১৯৬১)
দুই আঙিনাঃ এক আকাশ (১৯৬১
বিচিত্র একাঙ্ক (১৯৬১)
স্বর্ণকীট ও জওয়ান (১৯৬২)
মহা উদ্বোধন (১৯৬৩)
মহা অভিসার (১৯৬৩)
দুর্গেশনন্দিনীর জন্ম (১৯৬৫)
তারাস শেভচেঙ্কা (১৯৬৫)
দিগ্বিজয় (১৯৬৯)
দ্বিচারিণী (১৯৭০)
লালন ফকির (১৯৭০)

১৮৯৯ সালের ১৬ জুন টাঙ্গাইল জেলার গালা গ্রামে তার জন্ম। তাদের স্থায়ী নিবাস ছিল পশ্চিম দিনাজপুরের বালুর ঘাট। সেখানেই তার বাল্যজীবন অতিবাহিত হয়। তিনি পশ্চিম দিনাজপুর স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, রাজশাহী কলেজ থেকে আইএ, স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএ (১৯২২) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ পাস করেন। ১৯২৫ সালে বিএল পাস করে তিনি বালুর ঘাটে ওকালতি শুরু করেন এবং একই সঙ্গে সরকারি দায়িত্বও পালন করেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মন্মথ রায় নাট্যচর্চাও করতেন।


পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মন্মথ রায় নাট্যচর্চাও করতেন। স্বদেশপ্রীতি তার নাট্য রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য নাটকের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ। সেগুলির মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে মুক্তির ডাক (১৯২৩)। ১৯২৭ সালে পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে রচিত তার প্রথম নাটক চাঁদ সওদাগর প্রকাশিত হয়। নাটকটি পৌরাণিক হলেও এতে আধুনিক জীবন-সমস্যা প্রতিফলিত হয়েছে। পরে তিনি মহুয়া (১৯২৯), কারাগার (১৯৩০) ও সাবিত্রী (১৯৩১) নাটকত্রয় লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মন্মথ রায় ধর্মঘট (১৯৫৩), সাঁওতাল বিদ্রোহ (১৯৫৮), অমৃত অতীত (১৯৬০), লালন ফকির (১৯৬৯) ইত্যাদি নাটক রচনা করেন। পাবলিক থিয়েটারে মঞ্চস্থ তার নাটকগুলির মধ্যে অশোক (১৯৩৩), খনা (১৯৩৫), মীর কাশিম (১৯৩৮) ও জীবনটাই নাটক (১৯৫৩) উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালে তিনি রচনা করেন আমি মুজিব নই। তিনি বহু সংখ্যক একাঙ্ক নাটকও রচনা করেন। বাংলা ভাষায় যথার্থ একাঙ্ক নাটক রচনার কৃতিত্ব তারই।।

======{{{{{{{{{{}}}{==}{=}{{={}={{{}=}{===={=

বিমল কর

 ৮২ বছর বয়েসে তার বিধাননগরের বাসভবনে মারা যান ২৬ আগষ্ট ২০০৩  । তিনি মৃত্যুকালে স্ত্রী তিন মেয়ে এবং এক ছেলে রেখে গিয়েছেন। 


তিনি অসময় উপন্যাসের জন্য ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্য একাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন । এছাড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎচন্দ্র পুরস্কার, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংহ দাস পুরস্কার পান । তিনি দুবার আনন্দ পুরস্কার লাভ করেছিলেন । তিনি বহু ছোটগল্প এবং কিশোর উপন্যাসও লিখেছিলেন। 

বিমল কর জব্বলপুর, হাজারিবাগ, ধানবাদ, আসানসোল প্রভৃতি জায়গায় ছোটবেলা কাটিয়েছেন । তিনি বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে বিএ পাস করেন । তারপর আসানসোল অ্যামিউনেশন প্রোডাকশন ডিপোয় এআরপি হিসাবে কর্মজীবনের শুরু হয়।


১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে তার রচিত প্রথম ছোটগল্প অম্বিকানাথের মুক্তি প্রবর্তক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় । ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত পরাগ পত্রিকায় সহ সম্পাদকের কাজ পান । সহ সম্পাদক হিসাবে তিনি পশ্চিমবঙ্গ ও সত্যযুগ পত্রিকায় কাজ করেন । ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তার রচিত প্রথম ছোটগল্প সংকলন বরফ সাহেবের মেয়ে প্রকাশিত হয় । সেই বছরেই দেশ পত্রিকার বিভাগীয় প্রধান হিসাবে যোগ দেন । এই পদে তিনি ১৯৮২ সাল অবধি ছিলেন। এছাড়া তিনি শিলাদিত্য এবং গল্পপত্র পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।

ছোটদের জন্য তার রচিত একটি চরিত্র অবসরপ্রাপ্ত ম্যাজিসিয়ান কিঙ্কর কিশোর রায় বা কিকিরা । কিকিরার উপন্যাস পূজাবার্ষিকী আনন্দমেলায় প্রকাশিত হত।

তার রচিত বেশ কয়েকটি কাহিনীতে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে । যেমন বসন্ত বিলাপ, হ্রদ ( চলচ্চিত্র), বালিকা বধূ, (যেটি হিন্দিতেও নির্মিত হয়েছিল) যদুবংশ, ছুটি (এটি তৈরি হয়েছিল তার খড়কুটো উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে)।

রচনা কর্ম: 

নিম ফুলের গন্ধ ওয়ান্ডার মামা এক ভৌতিক মালগাড়ী আর গার্ড সাহেব কিকিরা সমগ্র ১ ঘুঘু
কুশীলব গজপতি ভেজিটেবল সু কোম্পানী কেউ কি এসেছিলো কিকিরা সমগ্র ২
অসময় অলৌকিক ম্যাজিশিয়ান কিকিরা সমগ্র ৩
সান্নিধ্য শীষের আংটি ভুনি কাকা'র চৌরশতম
দংশন হারানো জীপের রহস্য মজাদার এক ফুটবল ম্যাচ আর দানাপুরি
খড়কুটো কিশোর ফিরে এসেছিলো বন বিড়াল
মোহ মন্দাগড়'এর রহস্যময় জোৎস্না একটি ভুতের ঘড়ি
দ্বীপ হারানো ডাইরীর খোঁজে
প্রচ্ছন্য কালবৈশাখের রাত্রে
এ আবরণ রাবণের মুখোশ
স্বপ্নে একটি ফটো চুরির রহস্য
নিরস্র নীল বানরের হার
অশেষ একটি অভিশপ্ত পুঁথি ও অষ্ট ধাতু
বালিকা বধূ পাখী ঘর
দেয়াল বাঘের থাবা
মল্লিকা জাদুকরের রহস্যময় মৃত্যু
যদুবংশ সার্কাস থেকে পালিয়ে
পূর্ণ অপূর্ণ হলুদ পালক বাধা তীর
ভুলের ফাদে নবকুমার
তুরুপের শেষ তাস
সোনার ঘড়ির খোঁজে
হায়দার লেনের ১৩ নাম্বার বাড়ীর কফিন বাক্স
ঝিলের ধারে একদিন
ফুলদানী ক্লাব
সোনালী সাপের ছোবল
আজব দেশের গজব রাজা।

=========={={}={{=}={{==}={={{{========




Wednesday, 24 August 2022

স্মরণীয় প্রয়াণ দিবস। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক কবি রম্য রচনাকার ও সম্পাদক তারাপদ রায়। vol -838. Dt - 25.08.2022. ৮ ই ভাদ্র, ১৪২৯. বৃহস্পতিবার। The bolgger in litareture e-magazine

তারাপদ রায় 

তিনি ২০০৭ সালের আগস্ট মাসের ২৫ তারিখে প্রয়াত হন।


দক্ষিণ কলকাতায় কালীঘাট মন্দিরের কাছেই মহিম হালদার স্ট্রিট। সেখানেই পঞ্চাশ-ষাটের দশক থেকে আড্ডা মারতে আসতেন কয়েকজন তরুণ। সবার চোখে স্বপ্ন, বাংলা ভাষার সমুদ্রে তরী ভেসে আছে তাঁদের। ভরসা বলতে তাঁদের যাপন, এবং কলম। কবিতা, গল্প, আড্ডা এবং হুল্লোড়ে জমে থাকত সেই রাস্তা। সেখানেই যে ছিল আরেক ‘কৃত্তিবাসী’র বাড়ি। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কাছে যিনি ছিলেন ‘টর্পেডো’। তারাপদ রায় মানে কেবল কবিতা আর রম্য রচনাই নয়, সঙ্গে তৈরি হয় অসংখ্য গল্পের… 

কবিতার শব্দ আর যাপন নয় খানিক পরে আসুক। স্বয়ং তারাপদই বলেছিলেন, তাঁর জীবন কোনো কবির জীবন নয়। বরং আর পাঁচজনের মতোই সামান্য গৃহস্থের সংসার। তবে সে তো পরের কথা। ষাটের দশকে যখন বেশ কিছু তরুণ বাংলা সাহিত্য, কবিতাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে, তখন সেই স্বপ্নের নদীতে ভিড়েছিলেন তিনিও। সুনীল, শক্তি, শরৎকুমার, সন্দীপনের সঙ্গে শুরু হল উত্তাল যাপন। আর সেসব হুল্লোড়ের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন তারাপদ রায় নিজে। যেমন গলার স্বর, তেমন তাঁর গল্পের ভাঁড়ার। একটা সময় তারাপদ রায়ের বাড়িতেই বসত বন্ধুদের আড্ডার আসর। তাঁদের ‘দৌরাত্ম্যে’ টেঁকা দায় হয়ে যেত পাড়ার বাকিদের। 

সেই সঙ্গে চলত কবিতার চর্চাও। নিজের মধ্যেই একটা আলাদা জীবনের বৃত্ত তৈরি করেছিলেন তারাপদ। সহজ, সাবলীল সেই ভাষা; তার মধ্যেও নিজস্ব দর্শন, যাপনের ভিড়। আড্ডাছলে কাটতে কাটতেই প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘তোমার প্রতিমা’। তখনও মহিম হালদার স্ট্রিটেই থাকতেন তারাপদ রায়। প্রথম কবিতার বইয়ের ভেতরেই থেকে যায় মুদ্রণ প্রমাদ। ‘মহিম হালদার স্ট্রিট’-এর ‘মহিম’ বদলে যায় ‘মহিষ’-এ। যা নিয়ে পরে ঠাট্টা করতেও ছাড়েননি অনেকে। এসবের ভেতর দিয়েই স্বতন্ত্র জায়গা করে নিয়েছিল তাঁর কবিতা, সেই প্রথম দিন থেকেই…


রচনাসমূহ

ক খ গ ঘ (১৯৯৬),
কাণ্ডজ্ঞান,
বিদ্যাবুদ্ধি,
জ্ঞানগম্যি,
বুদ্ধিশুদ্ধি,
শোধবোধ (১৯৯৩),
জলভাত,
এবং গঙ্গারাম,
পটললাল,
সর্বাণী এবং,
বলা বাহুল্য (২০০০),
বালিশ,
কী খবর,
ধারদেনা,
ঘুষ,
রস ও রমণী,
শেষমেষ,
সরসী,
জলাঞ্জলি,
সন্দেহজনক,
বাঁচাবার,
স্ত্রী রত্ন,
মেলামেশা,
মারাত্মক,
ভদ্রলোক,
বানরেরা মানুষ হচ্ছে,
ডোডো তাতাই পালাকাহিনী,
ছাড়াবাড়ী পোড়াবাড়ী,
টমটমপুরের গল্প,
দুই মাতালের গল্প ও অন্যান্য,
ভাগাভাগি (১৯৯৭,
সর্বনাশ (২০০১)
রম্যরচনা ৩৬৫

কবিতার বই


তোমার প্রতিমা (১৯৬০),
ছিলাম ভালবাসার নীল পতাকাতে স্বাধীন (১৯৬৭),
কোথায় যাচ্ছেন তারাপদবাবু (১৯৭০),
নীল দিগন্তে এখন ম্যাজিক (১৯৭৪),
পাতা ও পাখিদের আলোচনা (১৯৭৫),
ভালোবাসার কবিতা (১৯৭৭),
দারিদ্র্যরেখা (১৯৮৬),
দুর্ভিক্ষের কবিতা,
জলের মত কবিতা (১৯৯২),
দিন আপনি দিন খাই (১৯৯৪),
টিউবশিশুর বাবা (১৯৯৫,
ভালো আছো গরীব মানুষ (২০০১),
কবি ও পরশিনী (২০০২)


তিনি শিরোমণি পুরস্কার ও কথা পুরস্কার (১৯৯৫) এ ভূষিত হয়েছেন।

 জন্ম ১৯৩৬ সালের নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখে অবিভক্ত বাংলায় বর্তমান বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে। সেখানকার বিন্দুবাসিনী হাই ইংলিশ স্কুল হতে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় কলেজে পড়তে আসেন। মৌলানা আজাদ কলেজ থেকে পড়াশোনা করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্থনীতিতে স্নাতক উপাধি লাভ করেন। ওই সময়েই কলকাতার কৃত্তিবাস পত্রিকাগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ কবি হিসাবে পরিচিতির সাথে অজস্র গদ্য রচনাও লিখেছেন।


কর্মজীবনের শুরুতে তিনি কিছুদিন উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায় শিক্ষকতা করেন। তারপরে ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৯৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের অধিকর্তার পদ থেকে অবসর নেন। সম্পাদনা করেছেন দুটি লিটল ম্যাগাজিন- 'পূর্ব মেঘ' ও 'কয়েকজন'।


বাল্য অবস্থা থেকেই কবিতা রচনা করে গেছেন তিনি। তার প্রথম কবিতার বই 'তোমার প্রতিমা' প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে। তার প্রকাশিত কবিতা সহস্রাধিক। কবিতার পাশাপাশি লিখতেন রম্যরচনা। তাছাড়াও লিখেছেন অজস্র গল্প, ছোট উপন্যাস ও শিশু সাহিত্য। তিনি রসসাহিত্যে ও শিশু সাহিত্যে বেশ গতিশীল ছিলেন। তার 'ডোডো-তাতাই' বিখ্যাত শিশু চরিত্র। বাংলা সাহিত্যে সার্থক রম্যরচয়িতাদের মধ্যে পাঠক পাঠিকাদের মধ্যে তিনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি নক্ষত্র রায় এবং 'গ্রন্থকীট ছদ্মনামেও লিখতেন। সরকারি অতিথি হয়ে ঘুরেছেন ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ বহু দেশে। শতাধিক গ্রন্থের রচয়িতা তিনি।



ভেতরে ভেতরে বেশ মজার মানুষ ছিলেন তিনি। তা না হলে অমন দুর্দান্ত রম্য রচনাগুলো লিখতে পারতেন! বন্ধুদের লেখা চিঠির ভেতরেও ভরে দিতেন মজার কথা। সেই লেখাও হয়ে উঠত পড়ার মতো। হাসির মধ্যেও কেমন একটা কাব্যময়তা ছড়িয়ে আছে সেখানে। ১৯৬৫ সালে টাঙ্গাইল থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে লেখা চিঠিতেই মেলে তার ইঙ্গিত। আগে তারাপদ রায় বেশ অসুস্থ ছিলেন, চিঠি থেকে সেসব বোঝা যায়। তিনি সুনীলকে লিখছেন ‘এখন দুএকটা নীরস সংবাদ দিতে পারি। মধ্যে চৌদ্দদিন যাকে বলে মনে হচ্ছিল সারা শরীরে যেন পঁচিশটা মৌমাছির চাক বসেছে। বর্তমানে ভালো হয়ে গেছি তবে একেবারে চিতাবাঘের মতো, পাকা কাঁঠালের মতো চিত্রবিচিত্র হয়ে গেছি। ইচ্ছে হলে নিজেকে এখন সচিত্র তারাপদ রায় বলে বিজ্ঞাপিত করতে পারি।’ নিজের শরীরের অবস্থার এমন ‘সচিত্র’ বর্ণনা দিতে একমাত্র তারাপদই পারতেন… 
দিনের শেষে সমস্ত জায়গায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ছিল ‘কৃত্তিবাস’। ‘কয়েকজন’ নামে তারাপদ’র নিজেরও একটি পত্রিকা ছিল; কিন্তু কৃত্তিবাসের জায়গা যেন অন্য কোনো খানে। এমনকি নিজের সন্তানের নামও রেখেছিলেন ‘কৃত্তিবাস’। আর রম্য সত্তার পাশে নির্জন পাহাড়ি নদীর মতো বয়ে যেত কবিতা। নিজের জীবন দিয়ে যা বুঝতেন, যা দেখতেন তাকেই সহজ ভাষায় হাজির করতেন। ‘এক জন্ম’-এর মতো এক অদ্ভুত জীবনদর্শনের পাশাপাশি রাখা যায় ‘কাঁসার গেলাস’ কবিতাটি। যেখানে অতীতের দিকে ফিরে দেখা নিজেকে; তার সঙ্গেই মিলিয়ে দেখা বর্তমান ‘আমি’-কে। কবিতার হাত ধরেই যেন নিজেকে খুঁজতেন তিনি। জোর করে কাঠিন্য নয়; বরং নিজের সাধারণ জীবনের মতোই আনন্দ করে লেখা প্রতিটি লাইন। সেই পথেই হাজির হন আরও একজন— মিনতি রায়।   

==============={{{{{{{{{{{{{={=========